চর
চর সাগর, মহাসাগর, হ্রদ অথবা নদী দ্বারা বেষ্টিত ভূখন্ড। সাধারণত নদীর গতিপ্রবাহে অথবা মোহনায় পলি সঞ্চয়নের ফলে গড়ে ওঠা ভূভাগকে চর বলে আখ্যায়িত করা হয়। বাঁকের চর (point-bars) বা পার্শ্বীয় চর এবং মধ্য চরা (medial or braid bars) সহ সকল ধরনের চর সাধারণভাবে চর নামেই অভিহিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের নদনদীর ভাঙাগড়ার প্রক্রিয়ায় নদীর প্রবাহখাতে দ্বীপচর হিসেবে অথবা নদীতীরে সংযুক্ত ভূভাগ হিসেবে বালুচর গড়ে ওঠে। সীমিত ভূভাগের এ দেশে গড়ে ওঠা চরগুলি প্রায়ই নতুন বসতি স্থাপনের এবং নতুন কৃষিজমি তৈরির সুযোগে করে দেয়। দ্বীপচর এবং প্রধান ভূভাগের সঙ্গে সংযুক্ত চরের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। দ্বীপচরগুলি বছরের সব সময়ই পানিবেষ্টিত থাকে, আর সংযুক্ত চরগুলি নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকালীন সময়ে মূল ভূভাগের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। তবে উদ্ভিদ দ্বারা আচ্ছাদিত হয়ে পড়লে উভয় চরকেই সাধারণভাবে চর বলে আখ্যায়িত করা হয়।
বাংলাদেশে চরগুলিকে নদনদীর জল-অঙ্গসংস্থানিক (hydro-morphological) গতিশীলতার ফলে সৃষ্ট উপজাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এশিয়া ও নিকট প্রাচ্য অঞ্চলের জন্য সেচ সহায়তা প্রকল্প (The Irrigation Support Project for Asia and the Near East-ISPAN)- ইসপান নামক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যে সকল চর তাদের উৎপত্তির প্রথম চার বছরে ক্ষয়প্রাপ্ত বা ভাঙনের শিকার হয় না, সে সকল চরে এ চার বছরের শেষদিকে কৃষিকাজ কিংবা বসতি স্থাপন শুরু করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বি.বি.এস) এর ১৯৯৭ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, তুলনামূলকভাবে নদীর ভাটি অঞ্চলে সৃষ্ট চরগুলির মাটি অধিকতর উর্বর এবং এ সকল চরে শস্য নিবিড়তা ১৫০ থেকে ১৮৫-এর মধ্যে যা দেশের গড় শস্য নিবিড়তা ১৬৫-এর প্রায় কাছাকাছি। তা সত্ত্বেও দ্বীপচর এবং সংযুক্ত চরগুলি সংলগ্ন মূল ভূভাগ এলাকার তুলনায় কম উৎপাদনক্ষম। এর প্রধান কারণগুলি হচ্ছে চরভূমির মৃত্তিকা গুণাবলী শস্য উৎপাদনের জন্য তুলনামূলকভাবে কম অনুকূল হওয়া, ক্ষয়ীভবন এবং ঘন ঘন বন্যার ফলে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা প্রভৃতি।
যদিও চরে নদীর পানি এবং ভূগর্ভস্থ পানি দুইই সহজলভ্য, তবুও আপার মেঘনা নদীগঠিত চরগুলি ব্যতীত অন্যত্র চরগুলিতে সেচযোগ্য ফসল খুব কমই ফলানো হয়ে থাকে। কিছু কিছু চরে সফলভাবে বনায়ন সাধিত হয়েছে। চর সংলগ্ন নদীতে সারাবছর পানি থাকে বলে চরে বসবাসকারী অনেক সম্প্রদায়ই বছরের বেশিরভাগ সময় মৎস্য আহরণে নিয়োজিত থাকে।
বহু চরে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ঘাস জন্মায়। এ সকল তৃণভূমি গবাদিপশুর জন্য উত্তম চারণভূমি হিসেবে ব্যবহূত হয়ে থাকে। চরাঞ্চলে উদ্ভিজ্জ আবরণ গড়ে ওঠার প্রাথমিক পর্যায়ে প্রচুর পরিমাণে ক্যাটকিন জাতীয় ঘাস জন্মে থাকে যা গ্রামাঞ্চলে কুঁড়েঘরের চাল ছাওয়ার উপাদান হিসেবে ব্যবহূত হয়ে থাকে। কিছু কিছু চরে বালু আহরণের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে যা নির্মাণ উপকরণ হিসেবে বালুর চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
বাংলাদেশের চরগুলি অত্যধিক ক্ষয়কার্য এবং বন্যাপ্রবণ। ধারাবাহিক উপগ্রহ চিত্রের একটি সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকার ৯৯ শতাংশেরও বেশি ভূমি ছিল চর। গত ২৭ বছরে অর্থাৎ ১৯৭৩ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে একই বিশ্লেষণে আরও দেখা গিয়েছে যে, এ সকল চরের প্রায় ৭৫ ভাগই এক থেকে নয় বছরের মধ্যে বিলীন হয়ে গিয়েছে এবং প্রায় ১০ ভাগ চর ১৮ বছর কিংবা তার অধিক সময়কাল পর্যন্ত টিকে থাকতে সক্ষম হয়েছে। তবে কয়েকটি বিশেষ এলাকায় যেমন আপার মেঘনা এলাকায় গঠিত চরগুলি স্থিতিশীল হয়ে টিকে থাকতে সক্ষম হয়েছে।
১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত সময়কালে আপার মেঘনা ব্যতীত অন্যান্য সকল নদীতে চর এলাকার বিস্তৃতি ঘটেছে। উল্লিখিত সময়কালে চর এলাকার মোট প্রবর্ধনের পরিমাণ ছিল ৩৬,০০০ হেক্টর। নদীভাঙন এবং নদীখাতের বিস্তৃতির ফলে চর এলাকায় বসবাসকারী জনগণ অবর্ণনীয় ক্ষতির শিকার হয়। ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭,২৯,০০০ মানুষ নদীভাঙনের শিকার হয়ে বাস্ত্তভিটা চ্যুত হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকেরও বেশি মানুষ যমুনার ভাঙন কবলিত হয়ে গৃহহীন হয়েছে।
প্রতি বছর চরগুলির একটি বিরাট অংশ বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। আগাম বন্যা সংঘটিত হলে চরের জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চরের অধিবাসীরা সাধারণত সহজলভ্য উঁচু জমিতে তাদের বসত গড়ে তোলে এবং স্থায়ী বসত গড়ে তোলার বেলায় বার্ষিক প্লাবন থেকে ভিটিকে মুক্ত রাখার জন্য মাটি ভরাট করে ভিটিকে প্লাবনসীমার আওতামুক্ত করে নেয়। মূল ভূমির সঙ্গে সংযুক্ত চরের তুলনায় দ্বীপ চরগুলি অধিকতর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। আবার বিভিন্ন নদীখাতে গড়ে ওঠা চরগুলির মধ্যে গঙ্গা নদীখাতের বিভিন্ন অংশে গড়ে ওঠা চরগুলি সর্বাধিক বন্যা কবলিত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের চরগুলিকে পাঁচটি উপ-এলাকায় ভাগ করা হয়েছে, যথা: যমুনা নদী, গঙ্গা নদী, পদ্মা নদী, আপার মেঘনা এবং লোয়ার মেঘনা নদীর চরসমূহ। এ সকল চর ছাড়াও অন্যান্য চর রয়েছে যেমন, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী এবং তিস্তা নদীর চরসমূহ। তবে প্রধান প্রধান নদীর চরগুলির তুলনায় এ সকল চর খুবই সামান্য ভূমি নিয়ে গঠিত। ১৯৯৩ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে চরভূমির মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১,৭২২ বর্গ কিমি।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ