মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য প্রাপ্ত খেতাব

মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য প্রাপ্ত খেতাব

বীরত্বসূচক খেতাব  বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসম সাহসিকতা প্রদর্শন এবং আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধাদের প্রদত্ত খেতাব। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিদান এবং তাদের মধ্যে আত্মত্যাগের প্রেরণা সৃষ্টির লক্ষে বীরত্বসূচক খেতাব প্রদানের একটি প্রস্তাব মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি  এম এ জি ওসমানী মে মাসের প্রথমদিকে মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিপরিষদে উপস্থাপন করেন। ১৬ মে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে বীরত্বসূচক খেতাবের প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়। এ পরিকল্পে চার পর্যায়ের খেতাব প্রদানের বিধান ছিল:

(ক) সর্বোচ্চ পদ, (খ) উচ্চ পদ, (গ) প্রশংসনীয় পদ, (ঘ) বীরত্বসূচক প্রশংসাপত্র।

খেতাব প্রাপ্তির জন্য মর্যাদার ক্রমানুসারে নিম্নোক্ত যোগ্যতা অর্জন করতে হতো:

সর্বোচ্চ পদ  অত্যন্ত প্রতিকূল অবস্থার মোকাবেলায় মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ের বীরত্বপূর্ণ কাজ, যে কাজ না করলে শত্রু বাংলাদেশ বাহিনীর ব্যাপক ক্ষতিসাধন করতে পারত। উপরন্তু ঐ বীরত্বপূর্ণ কাজের ফলে শত্রুর ব্যাপক ক্ষতি সাধনের মাধ্যমে যুদ্ধের গতি প্রকৃতিকে সপক্ষে প্রভাবিত করেছে।

উচ্চ পদ  পূর্ব বর্ণিত খেতাবের মত যোগ্যতা অর্জন করতে হবে, তবে তা অপেক্ষাকৃত কম মাত্রায়।

প্রশংসনীয় পদ  পূর্ব বর্ণিত খেতাবের মত যোগ্যতা অর্জন করতে হবে, তবে তা অপেক্ষাকৃত আরও কম মাত্রায়।

বীরত্বসূচক প্রশংসাপত্র  উপরিউক্ত তিন প্রকার খেতাবের যোগ্যতা অর্জন করে না অথচ বীরত্বপূর্ণ কাজের  জন্য  প্রশংসাপত্র প্রদান করা বিধেয়।

খেতাব প্রদানের ক্ষেত্রে বীরত্বপূর্ণ কাজের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সর্বোচ্চ পদের জন্য তিনজন সাক্ষী, উচ্চ পদের জন্য দুই জন সাক্ষী, প্রশংসনীয় পদের জন্য একজন সাক্ষীর প্রয়োজন হতো। বীরত্বসূচক প্রশংসাপত্রের জন্য কোনও সাক্ষীর প্রয়োজন হতো না।

বীরত্বসূচক খেতাবের সঙ্গে এককালীন আর্থিক পুরস্কার প্রদান করা হতো। সর্বোচ্চ পদের জন্য দশ হাজার টাকা (বর্তমানে এক লক্ষ টাকা), উচ্চ পদের জন্য পাঁচ হাজার টাকা (বর্তমানে পঞ্চাশ হাজার টাকা), প্রশংসনীয় পদের জন্য দুই হাজার টাকা (বর্তমানে বিশ হাজার টাকা)। বীরত্বসূচক প্রশংসাপত্রের জন্য কোনো আর্থিক পুরস্কারের বিধান ছিল না। বর্তমানে দশ হাজার টাকা প্রদানের বিধান রাখা হয়েছে। এখন খেতাব প্রাপ্তদের মাসিক ভাতাও প্রদান করা হয়।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ সভায় বীরত্বসূচক খেতাবের নতুন নামকরণ হয়:

সর্বোচ্চ পদমর্যাদার খেতাব                                   বীরশ্রেষ্ঠ

উচ্চ পদমর্যাদার খেতাব                                      বীর উত্তম

প্রশংসনীয় পদমর্যাদার খেতাব                               বীর বিক্রম

বীরত্বসূচক প্রশংসাপত্রের খেতাব                           বীর প্রতীক

১৯৭২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ৪৩ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বীরত্বসূচক খেতাবের জন্য নির্বাচন করা হয়। ১৯৭৩ সালের ২৬ মার্চ পূর্বের ৪৩ জনসহ মোট ৫৪৬ জন মুক্তিযোদ্ধা খেতাবের জন্য নির্বাচিত হন। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে বা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ইউনিট, সেক্টর, ব্রিগেড থেকে পাওয়া খেতাবের জন্য সুপারিশসমূহ এয়ার ভাইস মার্শাল এ. কে খন্দকারের নেতৃত্বে্ একটি কমিটি দ্বারা নিরীক্ষা করা হয়। এরপর ১৯৭৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খেতাব তালিকায় স্বাক্ষর করেন।

১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর পূর্বে নির্বাচিত সকল মুক্তিযোদ্ধার নামসহ মোট ৬৭৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নিম্নোক্ত খেতাব প্রদান করা হয়:

বীরশ্রেষ্ঠ                                                               - ৭ জন

বীর উত্তম                                                            - ৬৮ জন

বীর বিক্রম                                                            - ১৭৫ জন

বীর প্রতীক                                                            - ৪২৬ জন

১৯৯২ সালের ১৫ ডিসেম্বর জাতীয়ভাবে বীরত্বসূচক খেতাব প্রাপ্তদের পদক ও রিবন প্রদান করা হয়। ২০০১ সালের ৭ মার্চ খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক পুরস্কার এবং সনদপত্র প্রদান করা হয়।

বাহিনীভিত্তিক খেতাবপ্রাপ্তদের সংখ্যা নিম্নরূপ:

সেনাবাহিনী                   -                            ২৮৮ জন

নৌবাহিনী                     -                              ২৪  জন

বিমান বাহিনী                 -                              ২১  জন

বাংলাদেশ রাইফেল্স        -                             ১৪৯ জন

পুলিশ                         -                                 ৫ জন

মুজাহিদ/ আনসার            -                               ১৪ জন

গণবাহিনী                       -                             ১৭৫ জন

খেতাবপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন দু’জন মহিলা। পাঁচজন অবাঙালিও বীরত্বসূচক খেতাব পান, যাদের মধ্যে একজন বিদেশী।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বীরত্বসূচক খেতাব সামরিক বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্যও প্রযোজ্য আছে। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও অন্যান্য স্থানে পরিচালিত অপারেশনে সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ রাইফেল্সের ১২৬ জন বীরত্বসূচক খেতাব পেয়েছেন। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্তরা সমাজে উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন।

বিস্তারিত

বিভিন্ন দেশ কতৃ্ক বাংলাদেশের স্বীকৃতি

মুক্তিযুদ্ধ কালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে ভারত ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]