বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকা
উপমহাদেশে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে দিগ্দর্শন নামে বাংলা ভাষায় প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। এই মাসিক পত্রিকাটি প্রকাশ করে শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন। একই বছর মে মাসে শ্রীরামপুরের খ্রিস্টান মিশনারিরা আরেকটি বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশ করে। এটি ছিল জন ক্লার্ক মার্শম্যান সম্পাদিত সাপ্তাহিক সমাচার দর্পণ। এটি প্রায় ২০ বছর চালু ছিল। ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দেই বাঙালি মালিকানায় প্রথম সংবাদপত্র বাঙ্গাল গেজেটি প্রকাশিত হয়, প্রকাশক ছিলেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য্য, কারো কারো মতে গঙ্গাধর ভট্টাচার্য্য। মাঝে মধ্যে এতে ইংরেজি ও হিন্দিতে কিছু নিবন্ধ মুদ্রিত হলেও সাধারণভাবে এর ভাষা ছিল বাংলা। হরচন্দ্র রায় ছিলেন বাঙ্গাল গেজেটি-র সম্পাদনাকার্যে গঙ্গাকিশোরের অন্যতম সহযোগী। ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দের ১ মে জেমস সিল্ক বাকিংহাম সম্পাদিত ক্যালকাটা জার্নাল অর্ধ-সাপ্তাহিক থেকে দৈনিক-এ রূপান্তরিত হয়। ক্যালকাটা জার্নালই ছিল উপমহাদেশের প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের মুহূর্তে বাংলাদেশে দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ছিল ১০। স্বাধীনতার পরপর কয়েকটি পত্রিকার পরিচালনার ভার সরকারকে বহন করতে হয়েছিল। পাকিস্তান প্রেস ট্রাস্টের পত্রিকা দৈনিক পাকিস্তান (দৈনিক বাংলা) ও দ্য মর্নিং নিউজ এবং মালিকের অনুপস্থিতিতে দ্য পাকিস্তান অবজারভার (দ্য বাংলাদেশ অবজারভার), পূর্বদেশ এবং চিত্রালী সংবাদপত্র ব্যবস্থাপনা বোর্ডের মাধ্যমে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত হতো। ১৯৭৪ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইন জারির মাধ্যমে সংবাদপত্রের নিয়ন্ত্রণে সরকারকে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়। ১৯৭২ সালে সংবাদনির্ভর সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন বিচিত্রা-র প্রকাশনা শুরু হয় দৈনিক বাংলা প্রকাশনী থেকে। ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংবাদপত্রে নিয়োজিত কর্মচারী-কর্মকর্তাদের জন্য আইন প্রণীত হয়। ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন সরকারিভাবে প্রকাশিত চারটি পত্রিকা ছাড়া সরকার অন্যসব পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ ঘোষণা করে। পত্রিকা চারটি ছিল দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা, দ্য বাংলাদেশ অবজারভার ও দ্য বাংলাদেশ টাইমস।
১৯৭৫ সালের পর থেকে পুরানো পত্রিকাগুলি একে একে আবার প্রকাশিত হতে থাকে। প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত সংবাদপত্র ছিল নিয়ন্ত্রিত। সরকারের সমালোচনামূলক খবর ছাপানোর অভিযোগে এ সময় প্রায় ৫০টি দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৮৪ সালে যায় যায় দিন নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। পাঠক জনপ্রিয়তার শীর্ষে থেকে এ পত্রিকাটি সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রকাশনাকে মেকআপ ও পরিবেশনার ভঙ্গিসহ বিভিন্ন দিক দিয়ে প্রভাবিত করেছে।
১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ সরকারের পতনের পর বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিশেষ ক্ষমতা আইন-এর ১৬, ১৭, এবং ১৮নং ধারা অবলুপ্ত করে সেন্সরশিপ ও প্রকাশনা নিষিদ্ধ সংক্রান্ত কালো আইনের বিলুপ্তি ঘটায়। এছাড়া এ সময় প্রিন্টিং প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাক্ট-এরও সংশোধনী আনা হয়। বিশ শতকের নববইয়ের দশকে বিভিন্ন মতের রেকর্ড সংখ্যক পত্র-পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এ সময়ের উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ১৯৯৭ সালে সরকারি মালিকানাধীন দৈনিক বাংলা, দ্য বাংলাদেশ টাইমস এবং সাপ্তাহিক বিচিত্রা-র প্রকাশনা বন্ধ করে দিয়ে টাইমস-বাংলা ট্রাস্টকে অবলুপ্ত ঘোষণা করা।
বাংলাদেশে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকাগুলির মধ্যে ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রধান সকল পত্রিকা নিয়মিত সাইজের, আর দেশের বিভিন্ন জেলা শহর থেকে প্রকাশিত অধিকাংশ পত্রিকাই ট্যাবলয়েড আকারের। আশির দশকের মাঝামাঝি থেকেই ডেস্কটপ পাবলিকেশন প্রযুক্তি বিকশিত হতে থাকে। দৈনিক পত্রিকাগুলি সাধারণত ছাপা হয় অফসেট মেশিনে। ১৯৯৫ সাল থেকে সংবাদপত্রে রঙিন ছবি মুদ্রণও চালু হয়েছে।
নববইয়ের দশকের বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য দৈনিক পত্রিকার মধ্যে ছিল ইত্তেফাক, জনকণ্ঠ, ইনকিলাব, আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ, বাংলাবাজার পত্রিকা, মুক্তকণ্ঠ, প্রথম আলো, সংবাদ, মানবজমিন, সংগ্রাম, দ্য বাংলাদেশ অবজার্ভার, দ্য ডেইলি স্টার, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ইন্ডিপেন্ডেন্ট এবং নিউ নেশন। ২০০০-এর দশকে সংবাদপত্র জগতে উল্লেখযোগ্য নতুন সংযোজন ছিল: যুগান্তর, সমকাল, যায়যায়দিন, আমারদেশ, নয়াদিগন্ত, কালেরকণ্ঠ, দি নিউজ টুডে, নিউ এজ এবং আমাদের সময়। বিভিন্ন জেলা শহর থেকে প্রকাশিত দৈনিকসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত আজাদী ও পূর্বকোণ, বগুড়া থেকে করতোয়া, খুলনা থেকে পূর্বাঞ্চল এবং সিলেট থেকে যুগভেরী।
স্বাধীনতার পর যে সকল সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়েছে তাদের মধ্যে বিচিত্রা ও যায় যায় দিন ছাড়া উল্লেখযোগ্য হলো হলিডে, রোববার, সচিত্র সন্ধানী, পূর্ণিমা, ঢাকা কুরিয়ার, খবরের কাগজ, আগামী, সাপ্তাহিক ২০০০, সাপ্তাহিক এখন, সাপ্তাহিক প্রতিচিত্র, শীর্ষকাগজ ও শৈলী। মহিলা পাঠকের পত্রিকা সাপ্তাহিক বেগম পাকিস্তান আমল থেকেই প্রকাশিত হচ্ছে। বেগম-এর অনুপ্রেরণায় ১৯৮৭ সাল থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে পাক্ষিক অনন্যা।
সাংবাদিকতার প্রধান স্রোতের বাইরে বিশেষ বিষয়ের পত্রিকা প্রকাশের ধারা স্বাধীনতার পর থেকে গড়ে উঠেছে। এ ধারার উল্লেখযোগ্য বিষয়সমূহ হলো চলচ্চিত্র, বিনোদন, ক্রীড়া, সাহিত্য, ব্যবসাবাণিজ্য, প্রযুক্তি, উন্নয়ন, সমাজ, অর্থনীতি, গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, অপরাধ ও কার্টুন।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ