পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশ(ছয় দফা আন্দোলন-১৯৬৬)
১৯৫৬ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় পূর্ববাংলার নিরাপত্তাহীনতার অনুভুতি বাংলার জনগণকে কিছুটা অবাক করে। ফলে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের জন্য বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়। মূলত ১৯৪৭ সালের পরবর্তী সময়কালে পূর্ববাংলার প্রতি সামাজিক, ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের ভিত প্রতিষ্ঠার জন্যই শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা প্রণয়ন করেন।
ছয় দফা
১. পাকিস্তানের সংবিধান হবে যুক্তরাষ্ট্রীয় এবং সরকার ব্যবস্থা হবে সংসদীয় যাতে আইন সভার বিষয়সমূহ প্রদেশগুলোর হাতে ন্যস্ত থাকে।
২. যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের হাতে কেবল দুটি বিষয় থাকবে। দেশরক্ষা এবং পররাষ্ট্র। অবশিষ্ট বিষয়গুলো প্রাদেশিক সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকবে।
৩. দেশের দুই অংশের দুটি পৃথক অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা প্রচলিত থাকবে অথবা উভয় অংশে রিজার্ভ ব্যাংকসহ একটি মুদ্রা থাকবে।
৪. কর ও শুল্ক ধার্য করবার দায়িত্ব অঙ্গরাজ্যগুলোর উপর ন্যস্ত থাকবে।
৫. প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের বহির্বাণিজ্যের জন্য পৃথক হিসাব রক্ষা করতে হবে।
৬. প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের অধীনে আঞ্চলিক সেনাবহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী থাকবে।
শেখ মুজিবের সম্মতিতে ১৯৬৮ সালে অনুষ্ঠিত এক গোপন সভায় সিদ্ধান্ত হয়, চট্টগ্রাম ইস্ট বেঙ্গল আগরতলা রেজিমেন্ট আক্রমণের মাধ্যমে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বর্ষপুর্তি উৎসবে আগত সেনাপ্রধানসহ বিশিষ্ট অতিথিদের জিম্মি করে স্বাধীনতাকামীগণ বাংলার ক্ষমতা দখল করবেন এবং শেষ মুজিব জেল থেকে বেরিয়ে বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন। সম্ভাব্য পাকিস্তানি হামলা মোকাবেলার জন্য এবং পাকিস্তানি আক্রমণকে কমপক্ষে তিনদিন ঠেকিয়ে রাখার জন্য ভারতের সহযোগিতা কামনা করা হয়। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের পক্ষে জনাব আলী রেজা এবং ভারতের পক্ষে ব্রিগেডিয়ার মেনন ও মেজর মিশ্র আগরতলায় এ বৈঠকে মিলিত হয়। এটাই আগরতলা ষড়যন্ত্র পরিকল্পনা ।আগরতলা মামলা দায়ের করা হয় ঢাকায়।এ মামলার আসামী ছিল ৩৫ জন , প্রধান আসামী শেখ মুজিবুর রহমান। ২২ ফেব্রুয়ারি, ৬৯ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করা হয়।
পাকিস্তানি গোয়েন্দারা পরিকল্পনাকারীদের একজন আমির হোসেন মিয়ার মাধ্যমে পরিকল্পনার কথা জেনে শেখ মুজিবকে প্রধান আসামী করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়ের করা হয়। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ছিলেন বিচারপতি এস এ রব। ৫ জানুয়ারি’ ৬৯ বিচারকার্য শুরু হয়। মামলার শিরোনাম ছিল ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য।
বিদেশি আইনজীবীদের পরামর্শক্রমে আওয়ামী লীগ সারা দেশে গণআন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ৫ জানুয়ারি ’৬৯ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় এবং ১১ দফা কর্মসূটি ঘোষিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০ জানুয়ারি ’৬৯ কিশোর মতিউর (ঢাকার নবকুমার ইনস্টিটিউশনের ছাত্র) গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন। ১৫ ফেব্রুয়ারি ’৬৯ সার্জেন্ট জহুরুল হককে সামরিক হাজতে বন্দী থাকা অবস্থায় হত্যা করা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি ’৬৯ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে জনৈক সামরিক অফিসার কর্তৃক নিহত হন। ১৬ ফেব্রূয়ারি মাওলানা ভাসানী গণআন্দোলনে একাত্ম হন। শেখ মুজিবকে মুক্ত করার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। দেশব্যাপী শুরু হয় প্রচন্ড গণআন্দোলন।
ভয়াবহ অবস্থার প্রেক্ষিতে ২২ ফেব্রুয়ারি ’৬৯ পাকিস্তান সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে নেয় এবং ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবকে মুক্তি দেয়া হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি ’৬৯ ছাত্র-জনতা শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করে। ২৪ মার্চ ’৬৯ আইয়ুব খান পদত্যাগ করেন। ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ ’৬৯ ক্ষমতা গ্রহন করেন।
মার্চ-’৬৯ আইয়ুব সরকারের পতন হলে ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা দখল করেন। সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্দোলনের ফলে তিনি নির্বাচন দিতে সম্মত হন। এ লক্ষ্যে লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার গ্রহণ করা হয়। ৭ ডিসেম্বর, ১৯৭০ জাতীয় পরিষদ এবং ১৭ জানুয়ারি, ’৭১ প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়।জাতীয় পরিষদে মোট আসন ৩১৩ টি। এর মধ্যে ৩০০টি নির্বাচিত আসন এবং ১৩টি সংরক্ষিত মহিলা আসন। আসন বন্টিত হয়েছিল জনসংখ্যার ভিত্তিতে।
পূর্ব পাকিস্তান
নির্বাচিত আসন ১৬২টি
মহিলা আসন ৭টি
মোট ১৬৯টি
পশ্চিম পাকিস্তান
নির্বাচিত আসন ১৩৮টি
মহিলা আসন ৬টি
মোট ১৪৪টি
নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ নির্বাচিত ১৬০ টি এবং সংরক্ষিত মহিলা ৭টি সহ মোট ১৬৭টি আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পাকিস্তান পিপলস পার্টি নির্বাচিত ৮৪টি এবং সংরক্ষিত মহিলা ৪টি সহ মোট ৮৮টি আসন লাভ করে।
প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের ৩০০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৮৮ টি আসন পেয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে।
নির্বাচনে বিপুল বিজয় সত্ত্বেও পাকিস্তানী শাসকেরা মুজিবের হাতে ক্ষমতা বুঝিয়ে দেয়ার টালবাহানা শুরু করে। ভুট্টো মাত্র ৮৪টি আসন পেয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং শেখ মুজিবকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী করার দাবি তুলে রাজনৈতিক অঙ্গনে সমস্যা গাড় করালেন। ফলে ১ মার্চ, ’৭১ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করলেন ইয়াহিয়া খান। ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্রনেতা আ.স.ম আবদুর রব বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা প্রথম উত্তোলন করেন।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ