দ্বৈত শাসন

দ্বৈত শাসন

দ্বৈত শাসন [Implication of Diarchy in Bengal]: ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ক্লাইভ মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করার পর কোম্পানির পক্ষে লর্ড ক্লাইভ বাংলার নবাব নজম-উদ্-দৌলাকে কাঙ্ক্ষিত ৫৩ লক্ষ টাকা দেবার বিনিময়ে রাজস্ব আদায় এবং দেওয়ানি মামলার ভার গ্রহন করলেন । দেশ শাসনের দায়িত্ব আগের মতোই নবাবের হাতে রইলো । এই ব্যবস্থা ইতিহাসে দ্বৈতশাসন নামে পরিচিত । এই ব্যবস্থায় বাংলার নবাব সামান্য বৃত্তিভোগী কর্মচারীতে পরিণত হলেন । আর প্রচুর অর্থনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ইংরেজ কোম্পানি এদেশের প্রকৃত প্রভু হয়ে বসলেন । নবাব ও কোম্পানির মধ্যে এই ক্ষমতা ভাগাভাগির ফলে দেশশাসন ও প্রজাসাধারনের মঙ্গল বিধানের দায়িত্ব কেউই পালন করত না । ফলে বাংলায় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা ও গোলযোগ দেখা দেয় । ক্ষমতাহীন নবাব সেই বিশৃঙ্খলা দমনে ব্যর্থ হন । কোম্পানি নিযুক্ত রাজস্ব বিভাগের দুই সহকারী রেজা খাঁসিতাব রায়ের শোষণ ও অত্যাচারে প্রজাদের দুর্দশার অন্ত ছিল না । পরিণতিতে ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে বা ১১৭৬ বঙ্গাব্দে বাংলায় ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় । এটি ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত ।

যে সমস্ত কারণে ব্রিটিশরা ভারতের শাসনব্যবস্থার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী ছিলেন:-

১) বাংলায় দ্বৈতশাসনের ফলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা ও গোলযোগ দেখা দিলে, দায়িত্বজ্ঞানহীন শাসনব্যবস্থা, শোষণ ও অত্যাচার প্রভৃতির কথা ইংল্যান্ডে প্রচারিত হলে ইংল্যান্ডের ব্রিটিশ সমাজে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাজেকর্মে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হয় ।

২) বাংলার ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের বিভীষিকাময় খবরে ইংল্যান্ডের শাসকবর্গ বিচলিত হয়ে পড়েন এবং উপলব্ধি করেন যে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তখন আর নিছক একটি বাণিজ্যক প্রতিষ্ঠান নয়, তখন তা একটি সাম্রাজ্য পরিচালনা করে, যা আরও সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করা দরকার ।

৩) ইংল্যান্ডের শাসকবর্গের কাছে আরও খবর এসে পৌছায় যে, দ্বৈতশাসন বাংলার বিশৃঙ্খল শাসনব্যবস্থাকে আরও বিশৃঙ্খল এবং দূর্নীতিগ্রস্থ করে তুলেছে । কারণ কোম্পানির ‘নায়েব-দেওয়ান’ ও কর্মচারীরা কোম্পানির স্বার্থরক্ষার পরিবর্তে নিজেদের স্বার্থরক্ষাতেই ব্যস্ত থাকেন ।

৪) পলাশির যুদ্ধে ইংরেজদের জয়লাভের পর থেকেই কোম্পানির কর্মচারীরা দুর্নীতি, ঘুষ, ভেট এবং ব্যক্তিগত বাণিজ্যসহ নানান অবৈধ উপায়ে লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার করে দেশে ফিরে গিয়ে মহা আড়ম্বরের সঙ্গে বাস করতে থাকেন । ভারত থেকে আগত এইসব কর্মচারীদের দেখে ব্রিটিশরা ভারতের শাসনব্যবস্থার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী হয়ে পড়েন, এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের নিয়ন্ত্রনে এনে এই সব অসৎ কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ করার সু্যোগ খুঁজতে থাকেন । ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অনেক সদস্য নৈতিকতার প্রশ্ন তুলে বলেন যে, ‘কোম্পানির কার্যকলাপ ব্রিটিশ জাতির নামে কলঙ্ক লেপন করেছে, সুতরাং এখনই কিছু করা প্রয়োজন’ ।

৫) বাংলা তথা ভারত থেকে বিপুল পরিমাণে সম্পদ লুট করেও কোম্পানির আর্থিক অবস্থার বিশেষ কোনও উন্নতি হয়নি, বরং তাদের আর্থিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটতে থাকে । এই অবস্থায় কোম্পানিকে ‘ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড’ লোন দিতে অস্বীকার করে । কোম্পানি ব্রিটিশ সরকারের কাছে ১০ লক্ষ পাউন্ড ঋণের আবেদন জানায় । তাদের ঋণ দেওয়া যুক্তিযুক্ত হবে কিনা তা খতিয়ে দেখবার জন্য ব্রিটিশ সরকার একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে । তখন বাংলায় কোম্পানির শাসনের প্রকৃত চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে । এই কমিশনের রিপোর্ট থেকে ইংল্যান্ডের লোক জানতে পারে যে, কোম্পানি তথা বাংলার দুর্দশা বৃদ্ধির জন্য দায়ী ছিল কোম্পানির নায়েব-দেওয়ান ও অন্যান্য কর্মচারীদের সীমাহীন লাভের আকাঙ্খা ।

এই অবস্থায়ঃ-

১) ব্রিটিশরা ভারতের শানব্যবস্থার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে ।

২) বাংলার দৈত্ব শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ।

ব্রিটিশ জনগণের এই কোম্পানিবিরোধী মনভাবের ফলশ্রুতি হিসাবে:-

১) ১৭৭২ সালে বাংলায় দ্বৈতশাসনের অবসান ঘটানো হয়,

২) ১৭৭৩ সালের রেগুলেটিং আইন এবং ১৭৮৪ সালের পিট -এর ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে এবং কোম্পানির কর্মচারীদের দুর্নীতি দমনে উদ্যোগ নেয় ।


সমাজ সংস্কার, সামাজিক উন্নয়ন এবং অন্যান্য

সমাজ সংস্কার, সামাজিক উন্নয়ন এবং অন্যান্য


বাংলায় ইংরেজ শাসন

লর্ড ক্লাইভ (১৭৬৫-১৭৬৭)

বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের পর লর্ড ক্লাইভ বাংলার প্রকৃত প্রভু হয়ে বসেন। বক্সারের যু্দ্ধে মীর কাসিম পরাজয়ের পর লর্ড ক্লাইভ বাংলার গভর্ন র নিযুক্ত হন। তিনি ভারতবর্ষে ইংরেজ সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন।

গভর্নর কার্টিয়ার (১৭৬৯-১৭৭২)

১৭৬৯ সালে কর্টিয়ার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী কর্তৃক বাংলার গভর্নর নিযুক্ত হন। এ সময়ে সমগ্র বাংলায় দ্বৈত শাসনের প্রভাব পড়তে থাকে। দ্বৈত শাসনের প্রভাবে জনগণ ব্যাপক অর্থকষ্টের সম্মুখীন হয়।

ছিয়াত্তরের মন্বন্তর

১১৭৬ সালে অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে খাদ্যসংকট দেখা দেয়। পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে বাংলা ১১৭৬ সালে (ইংরেজি ১৭৬৯-১৭৭০) বাংলায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ সংঘটিত হয়। ইতিহাসে এই দুর্ভিক্ষ ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’ নামে খ্যাত। ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে’ ইংরেজদের হিসেব অনুযায়ী বাংলার এক-তৃতীয়াংশ লোক প্রাণ হারায় এবং রাজস্ব আদায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। ব্রিটিশদের রাজস্ব আদায় না হওয়ায় দ্বৈত শাসনব্যবস্থা প্রশ্নের সম্মুখীন হয় এবং এ ব্যবস্থা বাতিলের সপক্ষে মতামত দৃঢ় হয়।

 

ওয়ারেন হেস্টিংস (১৭৭২-’৭৪- ’৭৪-’৮৪)

১৭৭২ সলে তিনি বাংলার গভর্নর নিযুক্ত হন। কোম্পনির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি প্রথমেই দ্বৈত শাসনব্যবস্থা বিলুপ্ত করেন।

রাজস্ব বোর্ড গঠনঃ

কোম্পানির রাজস্ব আদায়ে গতি সৃষ্টি এবং রাজস্ব উদ্ধৃত্ত দেখানোর জন্য তিনি রাজস্ব বোর্ড গঠন করেন। উপমহাদেশে তিনি প্রথম রাজস্ব বোর্ড গঠন করেন। তিনি মুঘল সম্রাটের কর্তৃত্ব অস্বীকার করে মুঘল সম্রাট কে বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকা কর প্রদান বন্ধ করে দেন। তিনি বাংলার নবারের বৃ্ত্তি অর্ধেক করে দেন। প্রজাসাধারণের উপর জুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় জোরদার করেন এবং ১৭৭৪ সালের মধ্যে কোম্পানির রাজস্ব উদ্ধৃত্ত দেখাতে সক্ষম হলেন।

রেগুলেটিং অ্যাক্ট-১৭৭৩ঃ

দ্বৈত শাসনের নানা কুফল এবং নির্যাতন ও নিপীড়নের কারণে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য রেগুলেটিং অ্যাক্ট-১৭৭৩ (নিয়ামক আইন-১৭৭৩)পাস করে এবং গভর্নর পদকে গভর্নর জেনারেল পদে উন্নীত করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ওয়ারেন হেস্টিংসকে ১৭৭৪ সালে গভর্নর জেনারেল পদে উন্নীত করেন।

পাঁচশালা বন্দোবস্তঃ

ভূমি রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে জমিদার শ্রেনী সৃষ্টির উদ্ধেশ্যে তিনি পাঁচশালা ভূমি বন্দোবস্ত প্রথা চালূ করেন। তিনি মারাঠা, নিযাম ও হায়দার আলীর শক্তির বিরুদ্ধে ইংরেজদের শক্তি সমুন্নত রাখেন।

ভারত শাসন আইন-১৭৮৪ঃ

ওয়ারেন হেস্টিং-এ শাসনামলে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট রেগুলেটিং অ্যাক্টের দোষত্রুটি দূর করে ১৭৮৪ সালে ভারত শাসন আইন পাস করে। আইনটি প্রণয়নকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন উইলিয়াম পিট।

 

লর্ড কর্নওয়ালিশ (১৭৮৬-১৭৯৩)

১৭৮৬ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী লর্ড কর্নওয়ালিশকে বাংলার গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত করেন। তিনি মারাঠা, নিযাম ও টিপু সুলতানের শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে সফল হন।

দশশালা পরিকল্পনা ও চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথাঃ

রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি এবং স্থায়ী অনুরক্ত শ্রেনী সৃষ্টির মানসে তিনি ১৭৮৯ সালে দশশালা ভূমি বন্দোবস্ত প্রথা চালু করেন। ১৭৯৩ সালের ২২ মার্চ তিনি দশশালা বন্দোবস্তকে ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ ঘোষণা করেন। নিয়মিত খাজনা আদায়ে জন্য তিনি ‘সূযাস্ত আইন’ বলবৎ করেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থায় কোম্পনির রাজস্ব একটি নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের পূর্বে দিতে অসমর্থ হলে কোম্পানী জমিদারি নিলামে বিক্রি করতো। এটি সূর্যাস্ত আইন।

ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসঃ

তিনি সরকারি কর্মচারীদের জন্য যে বিধিবিধান চালু করেন পরবর্তীকালে তা ‘ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস’ নামে প্রচলিত হয়।

লর্ড ওয়েলেসলী (১৭৯৮-১৮০৫)

ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারে উগ্র প্রচেষ্টার জন্য

তিনি সবিশেষ পরিচিতি লাভ করেন। তিনি ছিলেন প্রথম সাম্রাজ্যবাদী বড়লাট।

অধীনতামূলক মিত্রতা নীতিঃ

‘অধীনতামূলক মিত্রতা’ নীতি প্রবর্তন করে তিনি হায়দ্রাবাদের নিযাম ও পেশোয়া দ্বিতীয় বাজীরাওকে বশীভূত করেন। অধীনতামূলক নীতির মাধ্যমে তিনি তাঞ্জোর, সুরাট, কর্নাটক,ও অযোধ্যার স্বাধীনতা হরণ করেন।

টিপু সুলতানের সংগ্রামঃ

লর্ড ওয়েলেসলীর অধীনতামূলক মিত্রতার আহবান প্রত্যাখ্যান করেন মহীশূরের বীর টিপু সুলতান। ইংরেজগণ ১৭৯৯ সালে চতুর্থ মহীশূর যুদ্ধের মাধ্যমে টিপু সুলতানের পতন ঘটান। এ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন লর্ড ওয়েলেসলীর ভ্রাতা আর্থার ওয়েলেসলি। টিপু বীরের ন্যায় যুদ্ধ করে নিহত হন। এভাবে বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি বিনষ্ট করে তিনি ব্রিটিশকে উপমহাদেশে প্রধান শক্তিতে পরিণত করেন।

লর্ড হোস্টিং (১৮১৩-১৮২৩)

প্রায় দশ বছর তিনি বাংলার গভর্নর জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে বিভিন্ন গোত্র ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে খন্ডযুদ্ধে লিপ্ত হয়। তার শাসনামলে ভিন্ন আঞ্চলিক ও দেশীয় শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তিনি ২০টি দুর্গ দখল করেন। তিনি মারাঠা শক্তি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সীমা বৃদ্ধি করেন। এ সময়ে রাজা রামমোহন রায় কলকাতায় হিন্দু কলেজ, প্রতিষ্ঠা করেন।

 

লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক (১৮২৮-১৮৩৫)

তিনি বড়লাট হয়ে এসে ভারতে বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। বেন্টিঙ্ক এর শাসনামল উপমহাদেশে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষা সংস্কারের জন্য বিখ্যাত। সংস্কারের অংশ হিসেবে তিনি ভারতীয়দের জন্য ‘সাব জজ’ ও ‘মুন্সেফ’ পদ সৃষ্টি করেন। রাজা রামমোহন ও দ্বারকানাথ ঠাকুরের সহয়তায় ১৮২৯ সালের ৪ ডিসেম্বর তিনি ‘সতীদাহ প্রথা’ বাতিল করেন। ১৮৩৩ সালে বড়লাটের পদবী ‘বাংলার গভর্নর জেনারেল’ এর পরিবর্তে ‘ভারতবর্ষের গভর্নর জেনারেল’ করা হয়। ১৮৩৫ সালে তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। একই সালে তিনি ‘ম্যাকলে শিক্ষানীতি’ প্রণয়ন করেন; যদিও পরবর্তীকালে এটিকে কেরানী তৈরির প্রজেক্ট হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। তার শাসনামলে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট স্পষ্টভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকার্যে হস্তক্ষেপ করে।

 

লর্ড হেনরি হার্ডিঞ্জ (১৮৪৪-১৮৪৮)

ভারতবর্ষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিশেষত রেল যোগাযোগে তিনি ব্যাপক অবদান রাখেন। মূলত রাজস্ব আদায় ও প্রশাসনিক কাজের সুবিধার জন্য ব্রিটিশরা ভারতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটায়। তিনি শিখদের যুদ্ধে পরাজিত করেন এবং এক কোটি টাকা জরিমানা আদায়ের জন্য গোলাপ সিং নামে এক ব্যব্ক্তির নিকট ৭৫ লক্ষ টাকায় জম্মু ও কাশ্মীর বিক্রয় করেন। সেই থেকে ভারত বিভাগ পর্যন্ত জম্মু ও কাশ্মীরে ব্রিটিশ শাসনাধীন বিশেষ শাসিত অঞ্চলের মর্যাদা ভোগ করছিল।

লর্ড ডালহৌসী (১৮৪৮-১৮৫৬)

সাম্রাজ্যবাদী গভর্নর হিসেবে তিনি ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিলেন।

স্বত্ব বিলোপ নীতিঃ

তিনি স্বত্ব বিলোপ নীতির কঠোর প্রয়োগ করেন। এর মাধ্যমে তিনি সাতারা, ঝাসি, নাগপুর, সম্বলপুর রাজ্য ব্রিটিশদের অদীনে আনেন। তার উগ্র সাম্রাজ্যবাদী নীতির কারণে দেশীয় বিভিন্ন গোত্র ও আঞ্চলিক শক্তি ইংরেজদের উচ্ছেদ করার সংকল্প করতে থাকেন যা পরবর্তীতে সিপাহী বিপ্লবের দিকে ভারতবর্ষকে ঠেলে দেয়।

রেল যোগাযোগ চালুঃ

১৮৫৩ সালে তিনি উপমহাদেশে রেল যোগাযোগ চালু করেন।

ডাক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠাঃ

তিনি টেলিগ্রাফ ও ডাকটিকিটের মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন স্থানে চিঠিপত্র আদানপ্রদানের ব্যবস্থা করেন।

বিধবা বিবাহ আইন প্রণয়নঃ

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সহায়তায় ১৮৫৪ সালে তিনি বিধবা বিবাহ আইন প্রণয়ন করেন। ১৮৫৬ সালের ২৬ জুলাই বিধবা বিবাহ আইন পাস হয়।

লর্ড ক্যানিং (১৮৫৬,’৫৭-৬২)

তিনি শেষ গভর্নর জেনারেল। এসময় ইংরেজদের দাসত্ব হতে মুক্তিলাভের জন্য বিখ্যাত সিপাহী বিপ্লব, (১৮৫৭ সাল) সংঘটিত হয়। সিপাহী বিপ্লব দমনের পর ব্রিটিশ সরকার ভরতের শাসনভার মহারানী ভিক্টোরিয়ার হাতে অর্পন করেন। এর মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটে।

কাগজের মুদ্রা চালুঃ

তার শাসনামলে উপমহাদেশে কাগজের মুদ্রা চালু হয়। এটি উপমহাদেশে উল্লেখযোগ্য মুদ্রা সংস্কার। এছাড়া পুলিশী ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে তার উল্লেখযোগ্র ভূমিকা রয়েছে।

 

লর্ড মেয়ো (১৮৬৯-’৭২)

১৮৭২ সালে ভারতবর্ষে প্রথম আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হয়। লর্ড মেয়ো আদমশুমারি ছাড়াও কৃষি ও বাণিজ্য বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন।

লর্ড রিপন (১৮৮০-’৮৪)

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রদানঃ

তিনি ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট বাতিল করে দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করেন।

হান্টার কমিশন গঠনঃ

১৮৮২ সালে তিনি হান্টার কমিশন গঠন করেন এবং কমিশনের সুপারিশক্রমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করেন।

ইলবার্ট বিলঃ

তিনি ‘ইলবার্ট বিল’ এর মাধ্যমে ভারতীয় বিচারকদের দ্বারা ইউরোপীয় অপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করেন। তবে ব্রিটিশ নাগরিকগণ এ বিলের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

৮ ঘন্টা কাজের নিয়মঃ

১৮৮১ সালে ফ্যাক্টরি আইন প্রবর্তনের মাধ্যমে শ্রমিকদের ৮ ঘন্টা কাজের নিয়ম নিশ্চিত করেন। এর মাধ্যমে সমাজের নিম্নস্তরে তার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।

মিউনিসিপ্যাল অ্যাক্ট আইন প্রণয়নঃ

লর্ড রিপনের সেরা কীর্তি বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল অ্যাক্ট আইন প্রণয়ন। এর মাধ্যমে তিনি স্থানীয় সরকার কাঠামো তৈরী করেন। অর্থাৎ স্থানীয় শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন।

লর্ড কার্জন (১৮৯৯-’০৫)

তিনি কলকাতায় বৃহত্তম লাইব্রেরী ইম্পেরিয়াল লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করেন। তার সময়ের উল্লেখযোগ্য প্রশাসনিক সংস্কার হল বঙ্গভঙ্গ। তিনি ভারতবর্ষে প্রত্মতত্ত্ববিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গবিভাগ করায় তিনি হিন্দুদের নিকট অজনপ্রিয় হয়ে পড়েন।

লর্ড হার্ডিঞ্জ (১৯১০-১৯১৬)

বঙ্গভঙ্গ রদে সুপারিশঃ

তিনি বঙ্গভঙ্গ রদ করার জন্য সুপারিশ করেন। তার সময়ে ১১ ডিসেম্বর’ ১৯১১ তে বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষিত হয় এবং ২০ জানুয়ারি ১৯১২-তে কার্যকর হয়।

রাজধানী স্থানান্তরঃ

তিনি ১৯১২ সালে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লী স্থানান্তরিত করেন।

তিনি রেল যোগাযোগের ভূমিকা পালন করেন। পূর্ব বঙ্গের প্রধান রেলসেতু হার্ডিঞ্জ ব্রীজ তার নামানুসারে হয়।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]