জাতিসংঘ গঠনের জন্য অনুষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন

জাতিসংঘ গঠনের জন্য অনুষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন

জাতিসংঘ গঠনের প্রেক্ষাপট ও ইতিহাস

লন্ডন ঘোষনা: সাম্রাজ্যবাদী জার্মানির ক্রমবর্ধমান আক্রমণে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ ভূখন্ড হারিয়ে প্রবাসী সরকার গঠন করে। ১২ জুন’ ৪১ লন্ডনের জেমস প্রাসাদে ইউরোপীয় নয়টি প্রবাসী সরকার, নিউজিল্যান্ড, ইউনিয়ন অব সাউথ আফ্রিকা এবং  যুক্তরাজ্য যুদ্ধ বন্ধ এবং যুদ্ধোত্তর বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে ঘোষণা দেন, তাই লন্ডন ঘোষণা, এটি জাতিসংঘ গঠনের প্রথম পদক্ষেপ।

 

আটলান্টিক সনদ: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডেলানো রুজভেল্ট এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল ১৪ আগস্ট ’৪১ আটলান্টিক মহাসাগরে ব্রিটিশ রণতরী প্রিন্সেস অব ওয়েলস’-এ এক বৈঠকে মিলিত হয় বৈঠক শেষে এই দুই নেতা যুদ্ধোত্তর পৃথিবীতে শান্তিও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে ঘোষণা দেন তাকে ‘আটলান্টিক সনদ’ নামে অভিহিত করা হয়।

 

তেহরান সম্মেলন: এটি যুদ্ধকালীন মিত্র বাহিনীর প্রথম শীর্ষ সম্মেলন। নভেম্বর ৪৩ তেহরানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট, সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট স্ট্যালিন এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল তেহরানে শীর্ষ সম্মেলনে মিলিত হন। সম্মেলন শেষে তিন নেতা আন্তর্জাতিক সংগঠন গঠনের ঘোষণা দেন এবং স্থায়ী শান্তিপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

 

ব্রিটন উডস সম্মেলন: জুলাই ৪৪ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারের ব্রিটন উডস শহরে ৪৪টি রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অর্থনীতির অস্থির অবস্থার অবসানের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (IMF), পুনর্গঠন ও উন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাংক গঠনের সিদ্দান্ত গৃহীত হয়। মার্কিন ডলারকে আন্তর্জাতিক মুদ্রায় রুপান্তর করা হয়।

 

ডাম্বরটন ওকস সম্মেলন: ২১ আগস্ট থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর ’৪৪ ওয়াশিংটনের ডাম্বরটন ওকস ভবনে জাতিসংঘ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের প্রতিনিধিসহ মিত্রশক্তি বৈঠকে মিলিত হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর। এ আলোটনায় যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও চীনের প্রতিনিধি যোগ দেয়। এই সম্মেলনের উল্লেখযোগ্য কার্যাবলী:

ক. সংগঠনের রুপরেখা গ্রহণ।

খ. নিরাপত্তা পরিষদ গঠন এবং ৫টি স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র নির্ধরণ।

গ. কঙ্খিত সংগঠনের নামকরণ।

এ সম্মেলনে জাতিসংঘের চারটি অঙ্গসংগঠন গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়।

 

ইয়াল্টা সম্মেলন: বর্তমান ইউক্রেনের সাবেক রাজধানী ইয়াল্টায় ১১ ফেব্রুয়ারি ৪৫ শীর্ষ তিন নেতা দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলনে মিলিত হন। সম্মেলনে ৫টি স্থায়ী সদস্যকে ভেটো ক্ষমতা প্রদান করা হয়  এবং এপ্রিল ৪৫ মিত্রশক্তি সানফ্রান্সিসকোতে বৈঠকে মিলিত হবে বলে সিদ্ধান্তগ্রহণ করা হয়।

 

সানফ্রান্সিসকো সম্মেলন: ২৫ এপ্রিল থেকে ২৬ জুন ৪৫ সানফ্রান্সিসকোতে মিত্রশক্তির দেশসমুহ এক বৈঠকে মিলিত হয়। দীর্ঘ আলোচনা শেষে জাতিসংঘ সনদ গৃহীত হয। ১টি প্রস্তাবনা ও ১১টি ধারা এবং ১৯টি অধ্যায় এর সমন্নয়ে জাতিসংঘ সনদ তৈরি করা হয়। ২৬ জুন, ১৯৪৫ উপস্থিত ৫০টি দেশ/জাতির সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘের জন্ম হয়। ১৫ অক্টোবর পোল্যান্ড সনদে স্বাক্ষর করে এবং ২৪ অক্টোবর ৪৫ জাতিসংঘ আনুষ্ঠনিক ভাবে যাত্রা শুরু করে।


সাধারন পরিষদ

সাধারণ/আলোচনা পরিষদ (The General Assembly):

সকল সদস্য রাষ্ট্রসমুহ নিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ গঠিত । ১০ জানুয়ারি, ১৯৪৬ থেকে সাধারণ পরিষদ কাজ করছে। সদস্যরাষ্ট্রর প্রতিটি দেশের একটি ভোট রয়েছে। জাতিসংঘ সনদের ২০নং ধারা সনদ অনুযায়ী প্রতিটি রাষ্ট্র সাধারণ সভায় ৫ জন প্রতিনিধি পাঠাতে পারে। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় মঙ্গলবার সাধারণ সভায় বার্ষিক অধিবেশন শুরু হয়। এ পরিষদ সদস্যদের যে কোন বিষয় আলোচনার সুযোগ নেয় এবং আলোচনা শেষে সে ব্যাপারে সুপারিশ করে। জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থার কার্যাবলী পরীক্ষা ও পর্যালোচনা ছাড়াও এটি জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদের ১০ জন অস্থায়ী সদস্য এবং ECOSOC-এর সদস্য নির্বাচন করে থাকে।


নিরাপত্তা পরিষদ

নিরাপত্তা/স্বস্তি পরিষদ (the Security Council):

প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য: ১১

বর্তমান সদস্যসংখ্যা: ১৫

অভিধা: এ পরিষদকে জাতিসংঘ মহাসচিব প্যারেজ দ্য কুয়েলার The Safety Net বলে অভিহিত করেছেন।

১৯৬৩ সালে সনদের ২৩ ধারা সংশোধন করে অস্থায়ী সদস্য ৬ থেকে ১০ এ উন্নীত করা হয় যা কার্যকর হয় ১৯৬৫ সাল থেকে।

অস্থায়ী সদস্য নির্বাচন: নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক দুই বছর মেয়াদে নির্বাচিত হয়।

স্থায়ী সদস্যগুলোর নাম: জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী তৎকালীন পাঁচটি বৃহৎ শক্তি নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলো হল-যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ফ্রান্স ও চীন। নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিমাসে সভাপতি নির্বাচিত হয় সদস্য ১৫ টি দেশের ইংরেজি মাসের অদ্যাক্ষরের ক্রমানুযায়ী।

অস্থায়ী সদস্য দেশগুলোর আঞ্চলিক বন্টন: অঞ্চল ভিত্তিতে অস্থায়ী সদস্যরাষ্ট্রগুলো নির্বাচিত হয়ে থাকে। অঞ্চল ভিত্তিতে অস্থায়ী সদস্য নির্বাচিত হয়-আফ্রিকা থেকে ৩টি দেশ, এশিয়া থেকে ২টি দেশ, ল্যাটিন আমেরিকা থেকে ২টি দেশ , পূর্ব ইউরোপ থেকে ১টি দেশ, পশ্চিম ইউরোপ ও অন্যান্য থেকে ২টি দেশ।

ভেটো: ল্যাটিন ভেটো শব্দের অর্থ ‘আমি মানি না’। এটি নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের জন্য বিশেষ ক্ষততা। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী যে কোন সদস্য পরিষদের কোন প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিলে তা বাতিল বলে গণ্য হয় এবং প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোটদানের এই ক্ষমতাই হলো ভেটো।

ভেটো অধিকারী দেশ:

জাতিসংঘ ভেটো ক্ষমতা অধিকারী দেশ পাঁচটি। যথা-যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও চীন।

সোভিয়েত ইউনিয়ন//রাশিয়া: মোট ১২০ বার ভেটো প্রদান করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ২ বার ভেটো প্রয়োগ করে।

চীন: সবচেয়ে কম সংখ্যকবার ভেটো ক্ষমতা প্রদান করেছে। এ পর্যন্ত চীনের প্রয়োগকৃত ভেটো সংখ্যা ৫।

যুক্তরাজ্য: এ পর্যন্ত মোট ৩২ বার ভেটো ক্ষততা প্রদান করেছে। ২৩ বার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। একক ভেটোগুলো সব জিম্বাবুয়ে সংক্রান্ত।

যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্র ভেটো প্রদান করে মোট ৮৪ বার। এ পর্যন্ত ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিন্দাসূচক ৪৭ টি প্রস্তাব আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

ফ্রান্স: মোট ১৮ বার ভোটো ক্ষমতা প্রদান করেছে। ১৩ বার যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে।


FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]