জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার ও জনসংখ্যা আকারের বিশ্ব পর্যায়ের সম্পর্ক নির্দেশ কর।
জনমিতিক পরিবৃত্তিকাল তত্ত¡টি


১৬৫০ থেকে ১৭৫০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে বিশ্ব জনসংখ্যার বার্ষিক বৃদ্ধিহার ছিল ০.৩ শতাংশ।
পরবর্তী একশত বৎসর অর্থাৎ, ১৭৫০ থেকে ১৮৭০ সালে এই হার ০.৫ শতাংশ ছিল। এই সময়
ইউরোপ মহাদেশের জনসংখ্যা দ্বিগুন হয়। পূর্বে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, এর পেছনে দ্রæত কৃষি প্রযুক্তি
ও ব্যবস্থাপনার উন্নতি, শিল্প বিপ্লবের ফলে পারিবারিক পর্যায়ে ইতিবাচক আর্থ-সামাজিক প্রভাব এবং
এই সময়কালের শেষের দিকে গুটি বসন্ত রোগের প্রতিশেধক আবিষ্কারসহ সামগ্রিক স্বাস্থ্য-সেবা ও
চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নতি সমষ্টিগতভাবে ক্রিয়াশীল ছিল। একই সাথে আঞ্চলিক জনসংখ্যার চাপ কমাতে
আন্ত:মহাদেশীয় অভিগমন, বিশেষ করে আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির উপর ইতিবাচক
প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল। এই দুই মহাদেশের (নতুন বিশ্ব) জনসংখ্যা ১৭৫০ থেকে ১৮৫০ সালের
মধ্যে ১২ মিলিয়ন থেকে ৬০ মিলিয়নে দাঁড়ায়। এশিয়া মহাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি ইউরোপের চাইতে
ধীর গতি সম্পন্ন ছিলÑ প্রায় ০.২৫ শতাংশ হারে। এই হার ইউরোপীয় পর্যায়ে পৌঁছাতে এশীয়
দেশসমূহের আরও ৫০ থেকে ৭০ বৎসর লেগেছিল।
আফ্রিকার জনসংখ্যা বৃদ্ধি সম্পর্কে তথ্যের অভাব রয়েছে। তবে মনে করা হয় যে, পরিবেশগত কারণে
রোগ-শোকের প্রকোপ, খাদ্যাভাব এবং অনুন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কারণে ১৬৫০ থেকে ১৮৫০ সময়কালে
জনসংখ্যা স্থির অবস্থায়, প্রায় ১০০ থেকে ১১০ মিলিয়নের মধ্যে ছিল। ইউরোপীয়দের সংস্পর্শে এবং
উপনিবেশ স্থাপনের ফলে ১৮৫০ সাল থেকে জনসংখ্যা ধীর গতিতে বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৫০ সালে ২০০
মিলিয়নে পৌঁছে।
সারনী ৩.৮.১: বিশ্ব জনসংখ্যার মহাদেশীয় বিবর্তন ধারা
বিশ্ব জনসংখ্যার (মিলিয়নে) মহাদেশীয় বিবর্তন ধারা, ১৮৫০-২০১০
সাল বিশ্ব আফ্রি
কা
উ: আমেরিকা লেটিন
আমেরিকা ও
ক্যারিবিয়ান
এশিয়া ইউরো

ওশানি
য়া
১৮৫০ ১১৩ ৯৭ ২৬ ৩৩ ৭০০ ২৭৪ ২
১৯৫০ ২৫১ ২০০ ১৬৭ ১৬৩ ১৩৭৮ ৫৭৬ ১৩
১৯৯৫ ৫৭০ ৭২০ ২৯৩ ৪৮১ ৩৪৫১ ৭২৯ ২৮
২০১০ ৬৯০

১০৩৩ ৩৫১.৭ ৫৮৮.৬ ৪১৬৬.

৭৩২

৩৫.৮
১৮৫০ থেকে ১৯৫০ সালের সময়কালে বিশ্ব জনসংখ্যার বার্ষিক বৃদ্ধিহার ছিল ০.৮ শতাংশ। জনসংখ্যার
আকার প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১ বিলিয়ন থেকে প্রায় ২.৫ বিলিয়নে দাঁড়ায়। লক্ষ্যণীয় যে, একমাত্র
এশিয়া মহাদেশের জনসংখ্যা এই সময় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায় নাই (ছকে দ্রষ্টব্য)। কিন্তু অন্যান্য মহাদেশে
দ্বিগুণ (যেমন আফ্রিকা) থেকে ছয়গুণেরও বেশী (যেমন উত্তর আমেরিকা) জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটেছে। এই
সমস্ত দেশে আন্ত:মহাদেশীয় অভিগমন ছাড়াও অর্থনৈতিক উন্নতি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিকাশ এবং মহামারী
দমন প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়।
উপরোক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা পরবর্তী সময়কালে বিশ্বব্যাপী লক্ষ্য করা যায়। ১৯৫০-৬০
দশকে প্রথম বারের মত বিশ্ব জনসংখ্যার বার্ষিক বৃদ্ধি হার ১.৮ শতাংশে দাঁড়ায়। বিশ্বে এই শতাব্দীর
জনসংখ্যার বৃদ্ধি পায়, যা মধ্য ১৭শ' শতাব্দীর জনসংখ্যার সমান। বর্তমানে প্রতি বৎসর ৬০ মিলিয়ন
হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে ৬.৮ বিলিয়ন এবং ২০১৫ সালে ৮ বিলিয়নেরও বেশি বিশ্ব
জনসংখ্যা দাঁড়াবে।
সারনি ৩.৮.২: বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধির ধারা
জাতিসংঘের সূত্র অনুযায়ী বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধির ধারা, ১৯৩০-২০২৫
সাল জনসংখ্যা (বিলিয়ন)
১৯৩০ ১.৮১
১৯৪০ ২.০১
১৯৫০ ২.৫১
১৯৬০ ৩.০১
১৯৭০ ৩.৪০
১৯৮০ ৪.৫০
১৯৯৫ ৫.৭০
২০১০ ৬.৮৯২
২০২৫ ৮.৩১
প্রাক্কলিত জনসংখ্যা।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির পর্যায়সমূহের একটি তত্ত¡ীয় কাঠামো :
বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, জনমিতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে একটি পর্যায়ক্রম
(ঝঃধমবং) বা স্তর রয়েছে, যার সাথে প্রধানত: জন্ম ও মৃত্যু হারে হ্রাস-বৃদ্ধি জনিত ধারা জড়িত। আবার
জন্ম ও মৃত্যু হারে হ্রাস-বৃদ্ধি কোন দেশের বা কোন অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নতির পর্যায়ের সাথে
সম্পৃক্ত। এই জনমিতিক প্রক্রিয়ার পরিক্রম অবশ্য ইউরোপীয় জনসংখ্যা বৃদ্ধির আলোকে রচিত হলেও
বর্তমানে ইউরোপীয় অবস্থা ৫০ থেকে ৭০ বছর বিরতিতে এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার
অনেক দেশের জন্য প্রযোজ্য। জনসংখ্যার এই পর্যায়ক্রমিক বৃদ্ধিকে ‘জনমিতিক পরিবৃদ্ধিকাল তত্ত¡ বা
ধারা' বলা হয়। এই তত্ত¡ অনুযায়ী বিশ্ব জনসংখ্যা বিবর্তন ধারার প্রাথমিক পর্যায়ে উচ্চ কিন্তু অস্থিতিশীল
জন্ম হার ও মৃত্যু হার লক্ষ্য করা যায়। ফলে জনসংখ্যার প্রাকৃতিক বৃদ্ধিহার খুব কম হয় বা স্থবিরতা
দেখা যায়। অনুন্নত অর্থনৈতিক অবস্থা, নি¤œ আয়ুষ্কাল, জন্ম ও মৃত্যুর নিয়ন্ত্রণহীনতা এবং নি¤œ পর্যায়ের
স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এই পর্যায়ের জনমিতিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে প্রতিফলিত হয়। ১৬৫০ বা কোন দেশে ১৭৫০
সালে পর্যন্ত ইউরোপ মহাদেশে এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এমন কি কয়েক দশক পূর্বেও আফ্রিকা,
দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্য আমেরিকার দেশসমূহের জনসংখ্যা বা জনমিতিক অবস্থা এই
পর্যায়ে ছিল। স্থূল জন্ম হার ও স্থূল মৃত‚্য হার উভয়ই এই স্তরে ৪০ থেকে ৫০ এর মধ্যে বিরাজ করে
দ্বিতীয় পর্যায়ে জনমিতিক বৈশিষ্ট্য জনসংখ্যার উচ্চ বৃদ্ধির সাথে জড়িত। অর্থাৎ উচ্চ ও অপরিবর্তিত জন্ম
হার এবং দ্রæত হ্রাসমান মৃত্যু হার এই পর্যায়ের বৈশিষ্ট্য, ফলে জনসংখ্যার স্বাভাবিক বয়:কাঠামো অর্থাৎ
জনসংখ্যার বয়:কাঠামোর নি¤œ পর্যায় সুপ্রশস্থ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হয়।
ঈষ্ট

\লল্ড ঝ ড়ঙ ভপ্সয়ুঔৎ
ড়রয়ড়
কল’

১৭০০ ১৮০০ ১৯০০ ২০০০
˙ঘঁ

\লল্ডুঔৎ
˙ঘঁ ড়ঙভপ্সয়ুঔৎ
ঞঔঁ



চিত্র ৩.৮.১: জনমিতিক পরিবৃত্তিকাল তত্তে¡র পর্যায় বা স্তরসমূহ
এতে শিশু জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ হয়ে থাকে এবং উচ্চ জনসংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাব্যতা
প্রকাশ করে। ১৯ শতকের শেষের দিকে ইউরোপ ও আমেরিকার জনসংখ্যা পর্যায় এই স্তরে ছিল।
বর্তমানে উত্তর ল্যাটিন আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অংশ বিশেষ, দক্ষিণ এশিয়া
এবং প্রায় পশ্চিম এশীয় মুসলিম দেশসমূহকে জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য বিচারে জনমিতিক পরিবৃত্তিকালের
দ্বিতীয় স্তরে ফেলা যায়। এই পর্যায়ে স্থূল জন্ম হার ৩০ থেকে ৪০ এবং স্থূল মৃত্যু হার ২০ থেকে ৩০-
এর মধ্যে অবস্থান করে। ফলে, জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধিহার অতি উচ্চ হয়-৩.০ থেকে ৪.০
শতাংশের মধ্যে।
দ্বিতীয় স্তরের শেষের দিকে কিছু কিছু দেশে মৃত্যু ও জন্ম হারের দ্রæত নি¤œগতি লাভ করতে পারে।
সেক্ষেত্রে জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধি হার কিছুটা হ্রাস পায়। এরূপ দেশে স্থূল জন্ম ও মৃত্যু হার যথাক্রমে
৩০ এবং ১৫ হয়ে থাকে। ফলে স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার ২.০০ থেকে ২.৫ হয়ে থাকে। ষাট
দশকে দক্ষিণ ইউরোপীয় দেশসমূহ, যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজল্যান্ড এবং (সোভিয়েত) রাশিয়া
এই জনমিতিক স্তরে অবস্থান করছিল। বর্তমানে থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, ভারত, চীন প্রভৃতি
দেশসমূহ এই জনমিতিক স্তরে রয়েছে।
সারণী ৩.৮.৩: জনমিত্তিক পরিবৃত্তিকাল তত্তে¡র পর্যায়সমূহ
জনমিতিক পরিবৃত্তিকাল তত্তে¡ পর্যায়সমূহের বৈশিষ্ট্য
পর্যায়-১ : উচ্চ জন্ম হার ও উচ্চ মৃত্যু হার স্থূল জন্ম হার প্রায় ৪০ এবং স্থূল মৃত্যু হার
৩০-এর উর্ধ্বে।
পর্যায়-২: (ক) উচ্চ জন্ম হার এবং ক্রম হ্রাস মান
মৃত্যু হার
(খ) মধ্যম-উচ্চ জন্ম হার এবং দ্রæত
হ্রাসমান মৃত্যু হার
স্থূল জন্ম হার ৩০-৪০ এবং স্থূল মৃত্যু হার
১৫-২০।
স্থূল জন্ম হার ৩০-এর নিচে এবং স্থূল মৃত্যু
হার ১৫-এর নিচে।
পর্যায়-৩: নি¤œ জন্ম হার এবং নি¤œ মৃত্যু হার স্থূল জন্ম হার ২০-২৫ এবং স্থূল মৃত্যু হার
১০-১৫।
প্রায় সকল ইউরোপীয় দেশ এবং এশিয়া মহাদেশের জাপান ও সিঙ্গাপুর জনমিতিক পরিবৃত্তিকালের
তৃতীয় স্তরে অবস্থান করছে। এই সমস্ত অঞ্চলে নি¤œ জন্ম ও মৃত্যু হার লক্ষ্য করা যায়, ফলে জনসংখ্যার
স্বাভাবিক বৃদ্ধি হারও অতি নি¤œ-প্রায় ১.০ শতাংশ এমন কি কোন কোন দেশে (যেমন, সিঙ্গাপুর,
অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি) ঋনাÍক জনসংখ্যা বৃদ্ধি ধারাও লক্ষ্য করা গেছে। অতি উন্নত স্বাস্থ্য ও প্রজননশীলতা
নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ক্ষুদ্র পরিবার আকার রক্ষার প্রবণতা, উচ্চ জীবনযাত্রা পর্যায়, বিলম্বিত বিবাহ প্রথা এমন
কি বিবাহ পরিহার করার প্রবণতা এবং জনসংখ্যার বর্হিগমন এরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে ক্রিয়াশীল।
এই আলোচনায় বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে, জনমিতিক পরিবৃত্তিকাল তত্তে¡ বিভিন্ন স্তরের স্থানিক ও
কালীক ভিন্নতা বিভিন্ন দেশ বা অঞ্চলভেদে বিরাজ করে থাকে। নির্দিষ্ট স্তর বিশেষে জনসংখ্যার বৃদ্ধিগত
ব্যাখ্যার এই স্থান ও কাল প্রেক্ষিতকে অবশ্যই গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।
ওকভ ঈষ্ট èলীঞ্জটয়ঔ

শকৎসঙকক্সঞ

ওলগঢ়ঔল
কসকূঁল \লীঞ্জটয়ঔ
যং∆ভ \লীঞ্জটয়ঔ শকৎসঙ কক্সঞ ওলগড়ঔল
াব্ধম \লীঞ্জটয়ঔ শকৎসঙ কক্সঞ ওলগড়ঔল
১৫ ১৫
১০



১০

১৯০০ ১৯২৫ ১৯৫০ ১৯৭৫ ২০০০
ীঔঁ
২০২৫ ২০৫০ ২০৭৫ ২১০০

চিত্র ৩.৮.২: ফ্রেজাকার বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধির (১৯০০-২১০০) তিন ধরণের পরিবৃত্তিক প্রাক্কলন।
উপরেরটি ছাড়াও জনসংখ্যা বৃদ্ধি সংক্রান্ত আরও তত্ত¡ রয়েছে। এর মধ্যে ম্যালথাস-এর ‘অপ্রতিরোধ্য
জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া, হাং লিয়াং চি'র, অপ্রতিরোধ্য জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সামাজিক-রাজনৈতিক
ব্যবস্থা তত্ত¡' ‘ই≈িত জনসংখ্যা তত্ত¡' এবং ‘আশাবাদী-নিরাশাবাদী তত্ত¡' উল্লেখযোগ্য। এই পর্যায়ে পাঠ
বহির্ভূত বিধায় এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো না।
বর্তমানে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি বিকাশশীল অঞ্চলে ঘটছে সে হারে ইউরোপীয় জনসংখ্যার কখনও
বৃদ্ধি হয় নাই। এর অবশ্য প্রধান কারণ ঐতিহাসিকভাবে প্রথমবস্থায় উচ্চ জন্ম ও মৃত্যু হার এবং যখন
মৃত্যু হার কমতে শুরু করে ঠিক তখনই আন্ত: মহাদেশীয় অভিগমন প্রক্রিয়া দ্রæত প্রসার লাভ করে। এই
ধারা বর্তমানকাল পর্যন্ত চলতে থাকে। ফলে যুক্তরাজ্যে জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধিহার এককালীন
সর্বোচ্চ ১.৪ শতাংশ ছিল। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশে এই হার ছিল ১.৩ শতাংশ। পক্ষান্তরে প্রায়
বিকাশশীল দেশে এই হার দ্বিগুনেরও অধিক। এর প্রধান কারণ, মৃত্যু হার দ্রæত হ্রাস প্রাপ্তি ।
উদাহরণস্বরূপ, শ্রীলঙ্কায় ১৯৪৫ ও ১৯৫২ সালের মধ্যে মৃত্যু হার ২২ থেকে ১০-এ নেমে আসে। এর
প্রধান কারণ ম্যালেরিয়া রোগের নির্মূল। প্রায় দক্ষিণ এশীয় দেশে এই পরিস্থিতি ১৯৫০ ও ১৯৭০-এর
মধ্যে ঘটে।
যদিও সাধারণভাবে আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্র ও স্বাস্থ্য প্রযুক্তিকে মরণশীলতা হ্রাসের প্রধান কারণ বলে
মনে করা অর্থনৈতিক উন্নতি এবং সামাজিক ও শিক্ষাগত বিকাশ এর জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী। এ কারণে
বিশ্বের প্রায় অঞ্চলে, যেমন, ল্যাটিন আমেরিকা ও পূর্ব এশিয়ায়, জনমিতিক বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক
বিকাশের মধ্যে একটা পরিষ্কার সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়। তবে কৃষি নির্ভর কিছু দেশে এরূপ পরিবর্তন
ধীরগতিতে ঘটছে। আফ্রিকা ও এশিয়ায়ও এরূপ উদাহরণ পাওয়া যায় (জন সংখ্যা বৃদ্ধিহার সংক্রান্ত ছক
দ্রষ্টব্য)। ইউরোপের বাইরে পাশ্চাত্য ধারার জনসংখ্যা বৃদ্ধি কেবল জাপান ও সিঙ্গাপুরে দেখা যায়। দ্রæত
শিল্পোন্নয়ন এবং অকৃষি অর্থনীতি বিকাশের সাথে সাথে সামাজিক উন্নয়ন ধারা এই পরিস্থিতির পেছনে
ক্রিয়াশীল ছিল। অতি সম্প্রতি, তাইওয়ান, চীন এবং আরও কিছু দেশ এই ধারা অনুসরণ করছে। তবুও
প্রায় বিকাশশীল অঞ্চলে ধনী ও দরিদ্র জনসংখ্যার মধ্যে অর্থনৈতিক দূরত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেননা, এ সব
অঞ্চলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সমতা রক্ষা করতে পারছেনা। কোন কোন ধনী দেশের
জন্য অর্থনৈতিক স্থবিরতা জনসংখ্যা ও উন্নয়ন ধারার মধ্যে অসামঞ্জস্য সৃষ্টি করছে। জনসংখ্যা পরিস্থিতি
যেমনই হোক না কেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি মোকাবেলার জন্য
যথেষ্ট নয়। বর্তমান যুগে অভিগমন প্রক্রিয়ায় জনসংখ্যা চাপ বৃদ্ধি বা কমানো সম্ভব নয় পূর্বেই উল্লেখ
করা হয়েছে। এমতাবস্থায় বিশ্বের অঞ্চলসমূহের দীর্ঘমেয়াদী জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং উন্নয়ন ধারা
পু´খানুপু´খভাবে বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। এইরূপ বিশ্লেষণে দেখা যাবে যে,
জনসংখ্যা বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব একমাত্র বৃদ্ধি-হার হ্রাসের প্রচেষ্টার মধ্যেই নিহিত। এজন্য
জনসংখ্যার আকার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা একমাত্র উপায়। এই ব্যবস্থা সম্ভব একমাত্র বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর
পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থা সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পৃক্ত করা।
এই ব্যবস্থাপনার অগ্রগতি পাশ্চাত্য দেশসমূহে গ্রহণীয় হলেও অনেক দেশে গ্রহণযোগ্য হয় নাই (যেমন,
পশ্চিম এশীয় মুসলিম দেশসমূহ) অথবা ধীর গতিতে ঘটছে (যেমন, পাকিস্তান ব্যতীত দক্ষিণ এশিয়ায়)
এবং কোন কোন দেশে দ্রæত ঘটেছে (যেমন, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া)। পরিবার সীমিতকরণের এ
ধরনের বিভিন্নতর সাথে শিক্ষিতের হার, শ্রম শক্তিতে মহিলাদের অংশ গ্রহণ হার, মহিলাদের ক্ষমতায়নে
সামাজিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি এবং পরিবার পরিকল্পনা উপকরণের সহজলভ্যতা বা উপকরণ প্রাপ্যতাকে
সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রভৃতি বিষয় জড়িত। এসমস্তের যথাযথ সমন¦য়সাধণ দ্রæত
জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং এই বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়াকে রোধ করতে পারে।
সারণী ৩.৮.৪: বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হার
বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হার, ১৯৯০-২১০০
জনসংখ্যা (মিলিয়ন) অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিহার (বার্ষিক শতাংশ)
অঞ্চল ১৯৯

২০২

২০৫

২১০

১৯৫০-
৯০
১৯৯০-
২০০০
২০০০-
৫০
২০৫০-
২১০০
বিশ্ব ৫২৬

৭৯২

১০০
৬৫
১০৭
৬১
৪.০ ২.৯ ২.৯ ২.৪
উপ-সাহারা
আফ্রিকা
৪৮৮ ১০৮

১৬৯

১৯২

২.৭ ৪.৩ ৫.২ ৪.২
পশ্চিম
ইউরোপ
৪৩৪ ৪৭৫ ৪৬১ ৩৯৫ ৩.৭ ২.০ ১.৪ ১.০
মধ্য-পূর্ব
ইউরোপ
১২৪ ১২৩ ১১৬ ৯৭ ৩.৯ ১.৮ ৫.০ ২.০
পূর্ব এশিয়া ১২৪

১৬৫

১৮১

১৭৭

৬.১ ৮.৪ ৩.৮ ২.২
দক্ষিণ এশিয়া ১১২

১৮৫

২৪০

২৩২

৪.৫ ২.৮ ৫.২ ৪.২
রাশিয়া ২৮৯ ৩১১ ৩৩০ ৩৫০ ৫.২ ০.৪ ৫.৪ ২.৮
ল্যা,
আমেরিকাও
ক্যারিবীয়
অঞ্চল
৪৩৪ ৬৯৮ ৯২০ ১০৮

৪.২ ৩.৭ ৩.৮ ২.৭
মধ্যপ্রাচ্য ও
উত্তর
আফ্রিকা
২৭০ ৫৮৫ ৯৮৫ ১৪২

৪.৬ ৪.৮ ৩.৬ ৩.৬
উত্তর
আমেরিকা
২৮১ ৩৫৮ ৪০৩ ৪৬০ ৩.৩ ২.৩ ১.৯ ১.৬
ওশানিয়া ৫৭২ ৭৮০ ৯২৯ ৯২৭ ৮.০ ৩.৯ ২.৮ ১.৬
উৎস : ওওঅঝঅ, অঁংঃৎরধ, ১৯৯৯ অবলম্বনে
পাঠসংক্ষেপ:
এই পাঠে জনসংখ্যা বৃদ্ধি সংক্রান্ত নির্বাচিত কিছু বিষয় আলোচনা করা হবে। লক্ষ্য করুন যে, জনসংখ্যা
‘পরিবর্তন' ও ‘বৃদ্ধি' বাক্যদ্বয়ের মধ্যে সূ² পার্থক্য রয়েছে। এই পাঠে ‘বৃদ্ধি' কথাটি ব্যবহার হলেও
বিষয়টি তত্ত¡ীয়ভাবে জনসংখ্যা পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কীয়, কেননা, খুব কম দেশ বা জনগোষ্ঠীর
জনসংখ্যার হ্রাস বা নেতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। সাধারণভাবে, ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক ও
জনমিতিক দৃষ্টিকোণ থেকে জনসংখ্যা ‘বৃদ্ধি'-এর প্রবণতা সর্বদা লক্ষ্য করা যায়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন: ৩.৮
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন:
১. শূন্যস্থান পূরণ করুন:
১.১. ১৬৫০ থেকে ১৭৫০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে বিশ্ব জনসংখ্যার বার্ষিক বৃদ্ধিহার ছিল ----------
শতাংশ।
১.২. ১৯৫০-৬০ দশকে প্রথম বারের মত বিশ্ব জনসংখ্যার বার্ষিক বৃদ্ধি হার --------শতাংশে দাঁড়ায়।
১.৩. ‘জনমিতিক পরিবৃদ্ধিকাল তত্ত¡ বা ধারা' অনুযায়ী বিশ্ব জনসংখ্যা বিবর্তন ধারার প্রাথমিক পর্যায়ে--
-----কিন্তু অস্থিতিশীল জন্ম হার ও মৃত্যু হার লক্ষ্য করা যায়।
১.৪. জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধিহার অতি উচ্চ হয়-৩.০ থেকে ----------শতাংশের মধ্যে।
১.৫. দ্বিতীয় স্তরের শেষের দিকে কিছু কিছু দেশ মৃত্যু ও জন্ম হারের দ্রæত --------লাভ করতে পারে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন:
১. জনমিতিক পরিবৃদ্ধিকাল তত্ত¡ বা ধারা কাকে বলা হয়?
২. জনমিতিক পরিবৃদ্ধিকাল তত্ত¡ পর্যায় সমূহের বৈশিষ্ট্য কি কি?
রচনামূলক প্রশ্ন:
১. জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার ও জনসংখ্যা আকারের বিশ্ব পর্যায়ের সম্পর্ক নির্দেশ কর।
২. জনমিতিক পরিবৃত্তিকাল তত্ত¡টি আলোচনা কর।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]