বয়:কাঠামো কাকে বলে? বয়:কাঠামোর প্রধান উপাদানসমূহ
বয়:কাঠামো ব্যাখ্যায় বয়:সূচক সমূহ উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করুন।


জনসংখ্যা কাঠামো বলতে কোন দেশের জনসংখ্যা বা কোন জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যসমূহকে বুঝায়।
বস্তুত: এ সমস্ত বৈশিষ্ট্য জনসংখ্যার গাঠনিক চরিত্রমাত্র। স্বাভাবিকভাবে একটি জনসংখ্যার বিভিন্ন
বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষ থাকে, যেমন, নারী, পুরুষ, বিবাহিত, অবিবাহিত, বিভিন্ন বয়শ্রেণী সম্পন্ন, শিক্ষিত,
অশিক্ষিত, বিভিন্ন পেশা ইত্যাদি। এই ধরণের বৈশিষ্ট্য জনসংখ্যার কাঠামোগত অবয়ব সৃষ্টি করে থাকে।
এ সম্পর্কে জনসংখ্যার উপাদানের সাথে জনসংখ্যা কাঠামোর মূল বিভিন্নতা স্মরণ রাখতে হবে।
উপাদান প্রধানত: জনসংখ্যার পরিবর্তনকারী বৈশিষ্ট্য, যেমন, জন্ম, মৃত্যু, অভিগমন এবং সম্পর্কীয়
বিষয়াদি। জনসংখ্যা কাঠামো হচ্ছে একটি দেশের জনসংখ্যা বা জনগোষ্ঠীর বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য বা অবয়ব;
জনসংখ্যা উপাদান হচ্ছে এর অন্ত:স্থ বৈশিষ্ট্য যা জনসংখ্যা পরিবর্তনে সরাসরি ভ‚মিকা পালন করে।
জনসংখ্যার কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য
জৈব বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কাঠামো : এ সমস্ত বৈশিষ্ট্য মানুষ জন্মসূত্রে অর্জন করে এবং জীবদ্দশায় অপরিবর্তিত
থাকে। এই ধরনের বৈশিষ্ট্য প্রধানত: সাংস্কৃতিকভাবে অর্জন করা সম্ভব নয়। জনসংখ্যার নারী-পুরুষ
কাঠামো, বয়:কাঠামো, বিভিন্ন নৃ-তাত্বিক বৈশিষ্ট্য যেমন, চুল বা গায়ের রং, বর্ণ/ জাতিগত বৈশিষ্ট্য
ইত্যাদি। এই বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন জনসংখ্যা কাঠামোকে অনেক সময় অনার্জিত বা জৈব (ঘড়হ-ধংৎরনবফ ড়ৎ
ইরড়ষড়মরপধষ) বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কাঠামো বলে।
অজৈব বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কাঠামো : জনসংখ্যার যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য মানুষ জন্মের পর সাংস্কৃতিকভাবে গ্রহণ বা
অর্জন করে তাকে অজৈব বা অর্জিত (ঘড়হ-নরড়ষড়মরপধষ ড়ৎ অংপৎরনবফ) বৈশিষ্ট্য/কাঠামো বলে। এই
কাঠামোভুক্ত জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো ভাষা, ধর্ম, পেশা বা কর্ম, শিক্ষা এবং বৈবাহিক অবস্থা।
লক্ষ্যণীয় যে উভয় শ্রেণীগত বিন্যাস জনসংখ্যার গুণগত বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে এবং পরোক্ষভাবে
জনসংখ্যার পরিবর্তন প্রক্রিয়া বা উপাদান সমূহকে প্রভাবিত করে থাকে। এ কারণে জনমিতিক প্রক্রিয়ার
যথার্থ অনুধাবনে জনসংখ্যা কাঠামোর পর্যালোচনার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।
জনসংখ্যার কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য
জৈব/অনার্জিত অজৈব/অর্জিত
বয়:কাঠামো শিক্ষা
লিঙ্গ কাঠামো পেশা ও অর্থনৈতিক কাঠামো
বর্ণ বা জাতিগোষ্ঠী বৈবাহিক অবস্থা
ভাষা
ধর্ম
আবাসিকতা (গ্রাম ও শহর)
এ কারণে এই পাঠে জনসংখ্যা কাঠামো পর্যালোচনায় বিশ্ব পর্যায়ে বিভিন্নতার প্রতি গুরুত্ব অধিক প্রদান
না করে বৈশিষ্ট্যের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হবে। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে ছকে তারকা চিহ্নিত জনসংখ্যা
কাঠামোগুলো আলোচনা করা হবে।
এসএসএইচএল বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
ইউনিট-১: ভ‚গোল: একটি মানবিকী দৃষ্টিভঙ্গি পৃষ্ঠা-১৩৯
বয়:কাঠামো
জনসংখ্যার বয়:কাঠামো (অনেক সময় বয়:সংগঠন বা বয়:বিন্যাস বলে পরিচিত) তিনটি প্রধান কারণে
জনসংখ্যা বিশ্লেষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ: প্রথমত, বয়স মানুষের জন্মের সাথে সাথে ব্যক্তি সম্পর্কীয় একটি
বৈশিষ্ট্য যার পরিবর্তন সমগ্র জীবদ্দশায় বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে; দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন
বয়:শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত জনসংখ্যা নানাভাবে একটি দেশের জনমিতিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থাকে
প্রভাবিত করে; তৃতীয়ত, উপরোক্ত দুইটি কারণ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের জন্য বয়:কাঠামোর তথ্যকে বিভিন্ন
সূচক বা অনুপাতে পরিবর্তিত করে জনসংখ্যার গঠন পর্যালোচনার প্রয়োজন হয়।
একটি দেশের বা জনগোষ্ঠীর বয়:কাঠামো সরাসরি তিনটি জনমিতিক উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয় : মৃত্যু
হার, জন্ম হার এবং অভিগমন। এই উপাদানগুলি প্রধানত বয়:কাঠামোর বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে যৌথভাবে
কাজ করে এবং নির্দিষ্ট জনসংখ্যা বা দেশের আর্থ-সামাজিক পর্যায়ের উপর নির্ভরশীলও বটে।
জনসংখ্যার বয়:কাঠামো সংক্রান্ত তথ্য আদমশুমারী উৎস থেকে প্রধানত পাওয়া যায়। এই তথ্য অনেক
সময় নির্দিষ্ট বয়স বা বয়স-সীমার অবগননা বা অতিগননার কারণে ভ্রান্তিপূর্ণ হতে পারে। নি¤œ শিক্ষার
হার, শুমারীর গুরুত্ব সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং কোন কোন সমাজে রক্ষণশীলতা এর প্রধান কারণ। ফলে
নির্দিষ্ট বয়স কেন্দ্রিক (যেমন- ২০, ৩০, ৪০, ৫০ ইত্যাদি) জনসংখ্যায় অতিগণনা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে
অবগণনা হতে পারে। সামাজিক কারণে পুরুষদের চাইতে মহিলাদের বয়স প্রকাশে ভ্রান্তি অধিক হয়ে
থাকে। সাধারণত: অবিবাহিতাগনের বয়স কম বলতে এবং সন্তান জন্মের পর বা সাংসারিক জীবনের
শেষের দিকে বয়স বাড়ানোর প্রবণতা দেখা যায়। তবে জনমিতিবিদগণ এ ধরনের ভ্রান্তি নিরসণের
একাধিক পরিসংখ্যানগত উপায় বের করেছেন যার দ্বারা জনসংখ্যার বয়:কাঠামোর মধ্যের অসঙ্গতি দূর
করা সম্ভব। বয়:কাঠামো বিশ্লেষণে বেশ কিছু প্রচলিত সূচক এবং সূত্র রয়েছে। এখানে উল্লেখযোগ্য
এবং প্রচলিত কিছু পদ্ধতি পর্যালোচনা করা হলো।
বয়স গুচ্ছ বা বয়:শ্রেণী
বয়সগত বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যার সুবিধার জন্য জনসংখ্যাকে কতিপয় প্রধান বয়স শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়।
তুলনামূলক বিশ্লেষণের জন্য এ ধরনের বিভাজিত তথ্য সাধারণত: শতকরা হারে প্রকাশ করা হয়ে
থাকে। এর দ্বারা প্রজনন বৈশিষ্ট্য এবং জনসংখ্যার কর্মক্ষমতা বা কর্মী জনসংখ্যার চরিত্রও প্রকাশ পায়।
এই দৃষ্টিভঙ্গিতে জনসংখ্যাকে সাধারণভাবে তিনটি বয়স শ্রেণীতে ভাগ করা হয়ে থাকে
শিশু ও নবীন বয়স্ক - সাধারণত ০-১৪ অথবা ০-১৮ (যেমন উন্নত দেশে) বয়স্কদের এই শ্রেণীভুক্ত করা
হয়ে থাকে। এই শ্রেণীভুক্ত জনসংখ্যা প্রধানত অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে অনুৎপাদনশীল, কেননা এরা
প্রধানত স্কুলগামী বা শিক্ষার্থী এবং বয়স্কদের উপর অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে নির্ভরশীল।
প্রাপ্ত বয়স্ক- ১৫-৫৯ বা ১৫-৬৪ অথবা, যেমন উন্নতদেশে ১৯-৬০ বা ৬৪ বয়সসীমার জনসংখ্যাকে প্রাপ্ত
বয়স্ক ধরা হয়ে থাকে। এই শ্রেণীর উচ্চ বয়স সীমা প্রধানত সামগ্রিক বয়:কাঠামোর উপর নির্ভর করে।
যে সমস্ত দেশে উচ্চ মরণশীলতা দেখা যায়, অর্থাৎ উচ্চ মৃত্যু হার বিরাজ করে সেখানে জনসংখ্যার বয়স
বৃদ্ধির সাথে সাথে স্বাভাবিক মৃত্যু হারও বৃদ্ধি পায়। ফলে ৬০ বৎসর বয়সের উর্ধ্বে জনসংখ্যার
পরিমাণও কমে যেতে থাকে। সেক্ষেত্রে প্রাপ্ত বয়স্ক শ্রেণীর শেষ বয়স সীমা ৬০ বৎসর ধরা হয়ে থাকে।
এই পরিস্থিতি প্রধানত বিকাশশীল দেশে দেখা যায়। এর বিপরীত চিত্র উন্নত দেশে বিরাজ করে বলে
এই বয়স সীমা ৬৫ বৎসর ধরা হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক জনসংখ্যা একটি দেশের সবচাইতে প্রজননশীল এবং
উৎপাদনশীল জনগোষ্ঠী। এই শ্রেণীর জনগোষ্ঠী অভিগমন প্রবণও বটে।
উন্নত দেশসমূহ এই বয়স শ্রেণীভুক্ত জনসংখ্যার হারের তেমন কোন পরিবর্তন সাম্প্রতিককালে লক্ষ্য
করা যায় না। কেননা, বৃদ্ধ বয়স্ক জনসংখ্যা নি¤œগামী শিশু জনসংখ্যা দ্বারা পরিপূরণ হয়ে যায়।
অপরদিকে, শিশু বা অপ্রাপ্ত বয়স্কদের উচ্চ হারের কারণে বিকাশশীল দেশে প্রাপ্ত বয়স্ক জনসংখ্যার হার
অপেক্ষাকৃত কম দেখা যায়।
বৃদ্ধ বা প্রবীন বয়স্ক - ৬০ বা ৬৫ বৎসর ও তদুর্ধ্ব বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধ বা প্রবীন বয়স্ক শ্রেণীর
অন্তর্ভুক্ত। এই বয়স শ্রেণীতে সকল জনগোষ্ঠীতে মহিলার আধিক্য দেখা যায়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে,
মহিলাদের সন্তান ধারন বয়স অতিক্রান্ত হলে মাতৃ মৃত্যু হার যথেষ্ট হ্রাস পায়, ফলে সাধারণত ৪৫
বৎসরের পর এদের আয়ুষ্কাল পুরুষ অপেক্ষা বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে এই শ্রেণীর পুরুষদের জীবনব্যাপী
অর্থনৈতিক কর্মকান্ড জড়িত থাকার ফলে মানসিক ও শারীরিক চাপ এবং স্বাভাবিক বার্ধক্যজনিত রোগ-
শোকের কারণে মৃত্যু হার বৃদ্ধি পায়। এ কারণে এই বয়স শ্রেণীতে উচ্চ বিধবা জনসংখ্যা হারও কোন
কোন জনগোষ্ঠীতে দেখা যায়।
জনসংখ্যা এই তিন বয়:শ্রেণীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া এবং বিন্যাসের ভৌগোলিক বিভিন্নতা
নানান কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত: এই বিভিন্নতা ব্যাখ্যায় তৃতীয় শ্রেণীটি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে
দ্বিতীয়টির উপর নির্ভরশীল। এ করণে শ্রেণীত্রয়ের আপেক্ষিক গুরুত্বের ক্ষেত্রে পরিমাপক ব্যবহারে
বিশেষ যতœবান হওয়া প্রয়োজন। বস্তুত: প্রাপ্ত বয়স্ক জনসংখ্যা হারের মধ্যে ভৌগোলিক বিভিন্নতা তেমন
ব্যাপক নয় এবং এই হারের প্রজননশীলতা ও মরণশীলতার সাথে নেতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে।
সারণী-৩.৯.১: জনসংখ্যার বয়:কাঠামোর বিশ্ব বিন্যাস, ২০০৮
অঞ্চল শতকরা জনসংখ্যা অঞ্চল শতকরা জনসংখ্যা
শিশু/
নবীন
বয়স্ক বৃদ্ধ/
প্রবীন
শিশু/নব
ীন
বয়স্ক বৃদ্ধ/প্রব
ীন
বিশ্ব : ৩২ ৬২ ৬ এশিয়া : ৩৩ ৬২ ৫
উন্নত বিশ্ব ১৫ ৬০ ২৩ পশ্চিম এশিয়া ৩৯ ৫৭ ৪
বিকাশশীল বিশ্ব ৩৫ ৫৫ ১০ দক্ষিণ এশিয়া ৩৮ ৫৮ ৪
আফ্রিকা : ৪৫ ৫২ ৩ দক্ষিণ পূর্ব
এশিয়া
৩৭ ৫৯ ৪
উত্তর আফ্রিকা ৪১ ৫৬ ৩ পূর্ব এশিয়া ২৬ ৬৭ ৭
পশ্চিম আফ্রিকা ৪৬ ৫১ ৩ ইউরোপ : ২০ ৬৭ ১৩
পূর্ব আফ্রিকা ৪৭ ৫০ ৩ উত্তর ইউরোপ ২০ ৬৫ ১৫
এসএসএইচএল বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
ইউনিট-১: ভ‚গোল: একটি মানবিকী দৃষ্টিভঙ্গি পৃষ্ঠা-১৪১
মধ্য আফ্রিকা ৪৬ ৫১ ৩ পশ্চিম
ইউরোপ
১৮ ৬৭ ১৫
দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৮ ৫৮ ৪ পূর্ব ইউরোপ ২২ ৬৬ ১২
উত্তর আমেরিকা
:
১২ ৬০ ২৮ দক্ষিণ ইউরোপ ১৮ ৬৮ ১৪
ল্যাটিন আমেরিকা : ৩৪ ৬১ ৫ ওশানিয়া : ২৬ ৬৪ ১০
মধ্য আমেরিকা ৩৭ ৫৯ ৪ অস্ট্রেলিয়া ২২ ৬৬ ১২
ক্যারিবীয়
আমেরিকা
৩১ ৬২ ৭ নিউজল্যান্ড ২৩ ৬৫ ১২
দক্ষিণ আমেরিকা ৩৩ ৬২ ৫ বাংলাদেশ ৪২ ৫৫ ৩
[ শিশু/নবীন ১৫ বৎসর বয়স; প্রাপ্ত বয়স্ক, ১৫-৬৪ বৎসর বৃদ্ধ/প্রবীন ৬৫ বৎসরের উর্দ্ধে]
উৎস : চড়ঢ়ঁষধঃরড়হ জবভবৎবহপব ইঁৎবধঁ, ২০০৮, ডড়ৎষফ চড়ঢ়ঁষধঃরড়হ উধঃধ ঝযববঃ, ২০০৮.
ডধংযরহমঃড়হ উঈ.
তবে এই সস্পর্ক ব্যাপক অভিগমন হার দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। বিশ্বে উল্লেখযোগ্য ভৌগোলিক
বিভিন্নতা শিশু ও নবীন বয়স্ক এবং বৃদ্ধ বা প্রবীন জনসংখ্যা হারের বিন্যাসের মধ্যে দেখা যায়। আবার
দুই শ্রেণীর হারের মধ্যে নেতিবাচক সম্পর্ক বিরাজ করে থাকে।
নি¤œ শিশু জনসংখ্যার হার পশ্চিম ইউরোপের অতি নি¤œ জন্ম হারের কারণে দেখা যায়। এর বিপরীত
ধারা আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দেখা যায়। এ সমস্ত অঞ্চলে মোট
জনসংখ্যার ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ শিশু ও নবীন জনসংখ্যা অন্তর্ভুক্ত। আবার এ সমস্ত অঞ্চলে উচ্চ
মৃত্যুহারের কারণে বৃদ্ধ ও প্রবীন জনসংখ্যা হার অতি নি¤œ ৫ শতাংশেরও কম। বস্তুত: বিশ্বের প্রায়
অর্ধেক জনসংখ্যা প্রাপ্ত বয়স্ক জনসংখ্যা শ্রেণীর উপর নির্ভরশীল। অতি উচ্চবৃদ্ধি হারের জনসংখ্যা সম্পন্ন
দশসমূহ ইউরোপ মহাদেশে দেখা যায়। চিত্র ৩.৯.১-এ বিশ্বের নির্বাচিত বয়:কাঠামোর এরূপ চিত্র তুলে
ধরা হয়েছে।
যকব্দব অঈচৎঔশ সূন্ড (১৫-৫৯)
ড়রয় অঈচৎঔশ
ঈক্সৎ ওঔচড়কৎঞঔ ঈক্সৎ-শকজ্ঞড় অঈচৎঔশ
শ´সখব (৬০>)
যকব্দব ঋকাূঔীড়ঠ´ কসাষ্ফ

শঘসঃ ঋকাূঔ
ঈক্সৎ ওঔকষ∑ ঞঔ
ড়রয় ওঔচড়কৎঞঔ
যকব্দব-শঘ সঃ ঋকাূঔ
কাণ্ড (<১৫)
যকব্দব ওঔচড়কৎঞঔ
শকজ্ঞড় ঋকাূঔ
৩০% ২০ ৭০%
৫০.০০%
১০ ২০
৫০.০০%
৪০
চিত্র ৩.৯.২: ত্রিকোন লেখ চিত্রে বিশ্বের কতিপয় নির্বাচিত দেশের বয়:কাঠামোর অবস্থান (১৯৫৪-৫৫) (ঈষধৎশব,
১৯৮০)
সাম্প্রতিককালে জনসংখ্যার বয়স ভিত্তিক অনুপাতের গতিধারা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে,
পৃথিবীর উন্নত অঞ্চলে শিশু ও বৃদ্ধদের অনুপাত কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। উন্নত অঞ্চলে জন্ম হার হ্রাস ও
আয়ুষ্কাল বৃদ্ধির ফলেই এরূপ ঘটেছে (সারণী-৩.৯.২)।
সারণী-৩.৯.১ জনসংখ্যার বয়:কাঠামোর বিশ্ব আঞ্চলিক বন্টনের শতকরা পরিবর্তন, ১৯৮৪-২০০৫।
১৯৮৪ ১৯৯৫ ২০০৫
অঞ্চল শিশু/নবী

বয়স্ক বৃদ্ধ/
প্রবীন
শিশু/নবী

বয়স্ক বৃদ্ধ/
প্রবীন
শিশু/নবী

বয়স্ক বৃদ্ধ/
প্রবীন
বিশ্ব ৩৪ ৬০ ৬ ৩২ ৬২ ৬ ২৮ ৬৪ ৮
উন্নত বিশ্ব ২২ ৬৭ ১১ ২০ ৬৭ ১৩ ২০ ৭০ ১০
বিকাশশীল বিশ্ব ৩৮ ৫৮ ৪ ৩৫ ৬০ ৫ ৩৮ ৫৫ ৭
দক্ষিণ এশিয়া ৩৯ ৫৮ ৩ ৩৮ ৫৮ ৪ ৪০ ৫৫ ৫
বাংলাদেশ ৪৬ ৫১ ৩ ৪২ ৫৫ ৩ ৪৫ ৫২ ২
উৎস: চড়ঢ়ঁষধঃরড়হ জবভবৎবহপব ইঁৎবধব, ১৯৯৫, ডড়ৎষফ চড়ঢ়ঁষধঃরড়হ উধঃধ ঝযববঃ, ২০০৫.
ডধংযরহমঃড়হ উঈ এবং তাহা, আ. ১৯৯৮। “জনসংখ্যা ও জনপদ ভ‚গোল।” রাজশাহী: রাজশাহী
বিশ্ববিদ্যালয়।
বিগত প্রায় চার দশকে বিশ্বের বিকাশশীল অঞ্চলে বিভিন্ন বয়স শ্রেণীতে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারের
বিশেষ কোন পরিবর্তন ঘটে নাই। ফলে উন্নত অঞ্চলের সাথে এই অঞ্চলের জনসংখ্যার বয়:কাঠামো
জনমিতিক বৈশিষ্ট্যের ব্যবধান বৃদ্ধি পেয়েছে।
বয়:সূচক
ইতিপূর্বে আলোচিত তিনটি প্রধান বয়:শ্রেণীর সম্পর্ক এবং ধরন নিন্মে বর্ণিত সূচক দ্বারা প্রকাশ করা
হয়ে থাকে। এই সমস্ত সূচক আন্ত-দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বয়:কাঠামোর তুলনামূলক ব্যাখ্যায় বিশেষ
সহায়ক।
(ক) নবীনতা সূচক :
-১
শিশু জনসংখ্যা
প্রাপ্ত বয়স্ক জনসংখ্যা (২)
বৃদ্ধ জনসংখ্যা
প্রাপ্ত বয়স্ক জনসংখ্যা
-৩
শিশু জনসংখ্যা
প্রাপ্ত বয়স্ক + বৃদ্ধ জনসংখ্যা
(খ) প্রবীনতা সূচক :
-১
বৃদ্ধ জনসংখ্যা
শিশু প্রাপ্ত বয়স্ক জনসংখ্যা ; (২)
বৃদ্ধ জনসংখ্যা
প্রাপ্ত বয়স্ক জনসংখ্যা ; (৩)
বৃদ্ধ জনসংখ্যা
শিশু জনসংখ্যা
গ) মোট নির্ভরশীলতা সূচক : শিশু + বৃদ্ধ জনসংখ্যা
প্রাপ্ত বয়স্ক জনসংখ্যা
অনেক সময় এ সমস্ত সমীকরণকে ১০০ দ্বারা গুণন করে প্রমিতিকরণ করা হয়ে থাকে। এ সমস্ত সূচকের
মধ্যে খ-(৩) এবং গ জনসংখ্যার বয়:কাঠামো বিশ্লেষণে বহুল প্রচলিত সূচক।
প্রবীনতা সূচক দ্বারা একটি জনসংখ্যার জনমিতিক ধারার পরিপক্কতা বা জরাগ্রস্ততা সম্পর্কে মন্তব্য করা
যায়। একটি জনসংখ্যায় বৃদ্ধ জনসংখ্যার আনুপাতিক হার বেশী হলে প্রবীনতা হারও উচ্চ হবে। এই
হার সরাসরি নির্ভরশীলতা হারকে প্রভাবিত করে থাকে। অপরদিকে বিভিন্ন জনসংখ্যার বয়:কাঠামোর
তুলনামূলক বিশ্লেষণে সাধারণত: নির্ভরশীলতা সূচক ব্যবহার হয়ে থাকে। এই সূচক ব্যবহারের প্রধান
সুবিধা হচ্ছে যে, এর দ্বারা বিভিন্ন দেশের বা জনসংখ্যার সক্ষম বা প্রাপ্ত বয়স্ক জনসংখ্যার উপর শিশু ও
বৃদ্ধ নির্ভরশীল জনসংখ্যার চাপের মাত্রা অনুমান করা যায়। জাতিসংঘের সূত্র অনুসারে ২০১০ সালে
বিশ্বে গড় নির্ভরশীলতার হার ছিল ০.৫৪ (অথবা প্রতি ১০০ জনে ৫৪ জন)। উন্নত অঞ্চলে এই হার
০.৪৯। বাংলাদেশে এই হার প্রায় ০.৫৩ (সারণি ৩.৯.৩)
সারণি ৩.৯ মোট নির্ভরশীলতা হারের আঞ্চলিক ধারার পরিবর্তন, ১৯৫০-২০১০
অঞ্চল ১৯৫০ ১৯৮০ ১৯৮৪ ১৯৯৫ ২০১০
বিশ্ব ০.৬৮ ০.৭১ ০.৬৭ ০.৬১ ০.৫৪
উন্নত বিশ্ব ০.৫৫ ০.৫৩ ০.৪৯ ০.৪৯ ০.৪৯
বিকাশশীল বিশ্ব ০.৭৫ ০.৭৮ ০.৭২ ০.৬৬ ০.৪২
দক্ষিণ এশিয়া ০.৮৩ ০.৭৯ ০.৭২ ০.৭২ ০.৫৬
বাংলাদেশ ০.৯৯ ০.৮৬ ০.৯৬ ০.৮২ ০.৫৩
উৎস: সারণী ৩.৯.১ অনুরূপ।
একটি দেশের অর্থনৈতিক পর্যায়ে এবং সম্পদ প্রাপ্তির অবস্থার আলোক জনসংখ্যার মোট নির্ভরশীলতা
হার (এবং অনেক সময় বয়:কাঠামোর মধ্যমা মানসহ) ‘জনাধিক্য' (ঙাবৎ-চড়ঢ়ঁষধঃরড়হ) সূচক হিসাবে
ধরা যেতে পারে। ক্যামেরশেন (১৯৬৫)-এর মত অনুযায়ী মোট নির্ভরশীলতা হার ১.০০-এর উপরে
হলে একটি দেশকে কার্যত: জনাধিক্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বলা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে জনসংখ্যার মাধ্যম বয়স
নি¤œ হয়ে থাকে এবং এরূপ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দেশে ধীর গতিতে আর্থ-সামাজিক বিকাশ লক্ষ্য করা যায়।
সূচকটি অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণে জনাধিক্যতা পরিমাপের একটি সুচারু নির্ণয়ক না হলেও এটি একটি
জনসংখ্যার বয়:কাঠামো ও শ্রম শক্তির ভারসাম্যহীনতার মাত্রা ও আকার নির্দেশ করে, যা বস্তুত:
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, সম্পদ ব্যবহারের উপর জনসংখ্যার চাপ এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাহিদা
পূরণের ব্যর্থতার সাথে জড়িত। বাংলাদেশসহ প্রায় বিকাশশীল দেশে মোট নির্ভরশীলতার হার ০.৬৫-
এর উপরে। এ সমস্ত দেশে নানাভাবে জনসংখ্যার চাপ অনুভ‚ত হচ্ছে, যা নি¤œ মাথাপিছু মোট জাতীয়
সম্পদ প্রাপ্তিতে প্রকাশিত হচ্ছে। ফলে, বিকাশশীল দেশসমূহে নি¤œ বা অতি ধীর আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধি
লক্ষ্য করা গেছে। সাম্প্রতিককালে মোট নির্ভরশীলতা হারের গতিধারা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে,
বিশ্বের উন্নত অঞ্চলে নির্ভরশীল জনসংখ্যার পরিমাণ ক্রমাম্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। অপরদিকে, বিকাশশীল
অঞ্চলে এই হারের পরিবর্তন তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। ফলে এই দুই অঞ্চলের মধ্যে নির্ভরশীলতা হারের
ব্যবধান লক্ষ্য করা যায়।
পাঠসংক্ষেপ:
জনসংখ্যা কাঠামো বলতে কোন দেশের জনসংখ্যা বা কোন জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যসমূহকে বুঝায়।
বস্তুত: এ সমস্ত বৈশিষ্ট্য জনসংখ্যার গাঠনিক চরিত্রমাত্র। স্বাভাবিকভাবে একটি জনসংখ্যার বিভিন্ন
বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষ থাকে, যেমন, নারী, পুরুষ, বিবাহিত, অবিবাহিত, বিভিন্ন বয়:শ্রেণী সম্পন্ন,
শিক্ষিত, অশিক্ষিত, বিভিন্ন পেশা ইত্যাদি। জনসংখ্যার কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য দুই ধরনের হতে পারে-
(ক) জৈব বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কাঠামো (খ) অজৈব বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কাঠামো
এপাঠে বয়::কাঠামোর বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন: ৩.৯
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন:
১. শূন্যস্থান পূরণ করুন:
১.১. -------- বয়স্ক জনসংখ্যা একটি দেশের সবচাইতে প্রজননশীল এবং উৎপাদনশীল জনগোষ্ঠী।
১.২. বৃদ্ধ বা প্রবীন বয়স শ্রেণীতে সকল জনগোষ্ঠীতে -------- আধিক্য দেখা যায়।
১.৩. ভৌগোলিক বিভিন্নতা শিশু ও নবীন বয়স্ক এবং বৃদ্ধ বা প্রবীন জনসংখ্যা হারের বিন্যাসের মধ্যে
দেখা যায়। আবার দুই শ্রেণীর হারের মধ্যে -------- সম্পর্ক বিরাজ করে থাকে।
১.৪. সাম্প্রতিককালে জনসংখ্যার বয়স ভিত্তিক অনুপাতের গতিধারা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে,
পৃথিবীর উন্নত অঞ্চলে শিশু ও বৃদ্ধদের অনুপাত কিছুটা -------- পেয়েছে।
১.৫. -------- সূচক দ্বারা একটি জনসংখ্যার জনমিতিক ধারার পরিপক্কতা বা জরাগ্রস্ততা সম্পর্কে
মন্তব্য করা যায়।
২. সত্য হলে ‘স' মিথ্যা হলে ‘মি' লিখুন:
২.১. জনসংখ্যা কাঠামো বলতে কোন দেশের জনসংখ্যা বা কোন জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যসমূহকে
বুঝায়।
২.২. জনসংখ্যার যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য মানুষ জন্মের পর সাংস্কৃতিকভাবে গ্রহণ বা অর্জন করে তাকে অজৈব
বা অর্জিত (ঘড়হ-নরড়ষড়মরপধষ ড়ৎ অংপৎরনবফ) বৈশিষ্ট্য/কাঠামো বলে।
২.৩. একটি দেশের বা জনগোষ্ঠীর বয়:কাঠামো সরাসরি দুইটি জনমিতিক উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়।
২.৪. সামাজিক কারণে পুরুষদের চাইতে মহিলাদের বয়স প্রকাশে ভ্রান্তি অধিক হয়ে থাকে।
২.৫. দৃষ্টিভঙ্গিতে জনসংখ্যাকে সাধারণভাবে দুইটি বয়স শ্রেণীতে ভাগ করা হয়ে থাকে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন:
১. জনমিতিক পরিবৃদ্ধিকাল তত্ত¡ বা ধারা কাকে বলা হয়?
২. জনমিতিক পরিবৃদ্ধিকাল তত্ত¡ পর্যায় সমূহের বৈশিষ্ট্য কি কি?
রচনামূলক প্রশ্ন:
১. জনসংখ্যার কাঠামো বলতে কি বুঝ? অনার্জিত ও অর্জিত জনসংখ্যা কাঠামোর পার্থক্যকরণ
করুন।
২. বয়:কাঠামো কাকে বলে? বয়:কাঠামোর প্রধান উপাদানসমূহ আলোচনা করুন।
৩. বয়:কাঠামোকে কেন বয়:শ্রেণীতে ব্যাখ্যা করা হয়। বয়:কাঠামোর প্রধান শ্রেণীগুলি আলোচনা
করুন।
৪. বয়:কাঠামো ব্যাখ্যায় বয়:সূচক সমূহ উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]