জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার ও জনসংখ্যা আকারে বিশ্ব পর্যায়ের সম্পর্ক নির্দেশ কর।
জনমিতিক পরিবৃত্তিকাল তত্ত¡টি আলোচনা কর।


অর্থনৈতিকভাবে কর্মক্ষম জনসংখ্যা বা শ্রমশক্তি নানাভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়:
(ক) কর্মক্ষম বয়সসীমা জনসংখ্যা: ব্যহত বয়স্ক জনসংখ্যা (১৫-৫৯ বৎসর);
(খ) কর্মী জনসংখ্যা: নারী ও পুরুষ জনসংখ্যা যারা সাধারণত কর্মে নিয়োজিত থাকে কিন্তু
সাময়িকভাবে কর্মহীন থাকতে পারে;
(গ) কর্মে নিয়োজিত জনসংখ্যা: নির্দিষ্ট সময়ে প্রকৃতপক্ষে উৎপাদনশীল কর্মপ্রক্রিয়া জড়িত জনসংখ্যা।
সাময়িকভাবে কর্মহীন বা বেকার জনসংখ্যাসহ এই শ্রেণী কর্মী জনসংখ্যায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে।
জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী একটি জনসংখ্যায় অর্থনৈতিক কাঠামো ব্যাখ্যায় কর্মী জনসংখ্যা বলতে নি¤œ
বর্ণিত ব্যক্তিবর্গকে বুঝায়:
(ক) পারিশ্রমিকহীন পরিবার ভিত্তিক কর্মীসহ নিয়োগকর্তা, কর্মে নিয়োজিত এবং স্বনিয়োজিত শ্রমিক বা
কর্মী;
(খ) বেসামরিক এবং সামরিক বাহিনীর সদস্যবৃন্দ;
(গ) কর্মে নিয়োজিত, কর্মহীন বা বেকার ব্যক্তিবর্গ এবং প্রথম কর্মসন্ধানী জনসংখ্যা;
(ঘ) খন্ডকালীন অর্থনীতিক কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ; এবং
(ঙ) গৃহ পরিচারকগণ।
কাজেই অকর্মী জনসংখ্যা কেবল কর্মক্ষম বয়সীমার নিচে (০-১৪ বৎসর) এবং অবসর প্রাপ্ত সদস্যদেরই
বুঝায় না, শিক্ষার্থী, গৃহবধূ, কারাগার বন্দী, পেনসন ভোগী, অনুদান বা ভাতা ভোগকারীদেরও বুঝায়।
সাধারণভাবে অকর্মী এবং কর্মী জনসংখ্যা পার্থক্যকরণ করা হয়ে থাকে পেশা দ্বারা।
পেশা
অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের গুরুত্বপূর্ণ সূচক হচ্ছে পেশা। পেশার সুদূর প্রসারী জনমিতিক তাৎপর্যও রয়েছে।
উচ্চতর পেশাজীবিদের মধ্যে জন্ম ও মৃত্যু হার সাধারণত: কম দেখা যায়। পক্ষান্তরে কৃষক, শ্রমিক,
মৎস্যজীবী প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর মধ্যে জন্ম ও মৃত্যু হার অপেক্ষাকৃত বেশী দেখা যায়। পেশাভেদে
কর্মপরিমন্ডল, স্বাস্থ্যগত পরিবেশ, শ্রমবিনিয়োগ, আবাসিকতা, শ্রমও বিশ্রামের নিয়মানুবর্তিতা প্রভৃতি
বিষয়ে যে তারতম্য হয় সে সমস্ত কারণেই বিভিন্ন পেশাজীবীদের মধ্যে জন্ম ও মৃত্যু হারের তারতম্য
হয়ে থাকে (তাহা, ১৯৮৯)। স্বাভাবতই জনসংখ্যার উপাদান বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে পেশাগত বৈশিষ্ট্য
মূল্যায়নের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। উল্লেখ্য, মানুষের পেশা অত্যন্ত বিচিত্রধর্মী ও বিভিন্ন মুখী। আধুনিক
শিল্পোন্নত একটি দেশে প্রায় ১০ থেকে ৫০ হাজার বিভিন্ন পেশা দেখা যায়। শ্রেণীবিভাজন ও বিশ্লেষণের
সুবিধার্থে এই ব্যাপক সংখ্যা কমিয়ে এনে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ওখঙ) পেশার সরলীকৃত বিন্যাস
করেছে।
এগুলো নিচে প্রকাশ করা হলো:
১. বৃত্তিমূলক ও কারিগরী পেশা;
২. ব্যবস্থাপনা, প্রশাসনিক ও কারণিকের পেশা;
৩. বিপণন পেশা;
৪. কৃষক, মৎস্যজীবী, কাঠুরিয়া, পশু-পাখী শিকারী;
৫. খনি শ্রমিক, খনি খনক ও অনুরূপ পেশা;
৬. পরিবহন সংক্রান্ত পেশা;
৭. মিস্ত্রি, উৎপাদনকর্মী, শিল্প শ্রমিক ইত্যাদি পেশা;
৮. পরিচর্যামূলক পেশা;
৯. সৈনিক ও প্রতিরক্ষা সংশ্লিষ্ট পেশা: এবং
১০. অন্যান্য/বিবিধ।
এই বিন্যাস অনুযায়ী বিশ্বের প্রায় সকল দেশে আদমশুমারীতে পেশাভিত্তিক জনসংখ্যা বিধৃত হয়। তবুও
উপরে প্রদত্ত পেশার শ্রেণীবিন্যাস সম্পর্কে অনেকে ভিন্নমত পোষণ করেন। তাঁদের মতে এই শ্রেণী
বিন্যাস পেশা ও কর্মক্ষেত্র বা শিল্পের সংমিশ্রণ ঘটেছে (তাহা ১৯৮৯)। উল্লেখ্য, পেশা বলতে কর্মের
বৈশিষ্ট্যকে বুঝায়। অন্যদিকে কর্ম যে স্থানে বা পরিমন্ডলে ঘটে তাকে কর্মক্ষেত্র বা শিল্প বলে। একজন
শ্রমিক কৃষি ক্ষেত্র কিংবা শিল্প ক্ষেত্রেও কাজ করতে পারে। লক্ষ্যণীয় যে কর্মক্ষেত্রের চেয়ে পেশারই
জনমিতিক গুরুত্ব সমধিক। তবে বিশুদ্ধ পেশাগত তথ্যের বিশেষ অভাব রয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে
কর্মক্ষেত্রের ভিত্তিতেও পেশাগত তথ্যাদি প্রকাশ করা হয়ে থাকে। তথ্যের সীমাদ্ধতা সত্বেও মোটামুটি
লক্ষ্য করা যায় যে, উন্নত বিশ্বে মোট শ্রমশক্তির প্রায় ১০.৩ শতাংশ কৃষিতে, ২১.৭ শতাংশ শিল্প ও
ব্যবসায় এবং ৪১ শতাংশ পরিচর্যা বা সেবামূলক পেশায় নিয়োজিত। উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম
ইউরোপের কতিপয় দেশে কৃষিখাতে নিয়োজিত শ্রমশক্তির হার ৫ শতাংশের কম। এ সমস্ত দেশের
মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানী। ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যে
কৃষিখাতে নিয়োজিত শ্রম শক্তির হার ছিল মাত্র ১.৫ শতাংশ। বেলজিয়ামে এই হার ছিল ৩ শতাংশ,
যুক্তরাষ্ট্রে ৩ শতাংশ, নেদারল্যান্ডে এবং জার্মানীতে ৫ শতাংশ।
উন্নত বিশ্বে কৃষিকাজে নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যা খুব কম এবং জিডিপিতে কৃষিখাতের অবদান খুবই
সামান্য (সারণী ৩.১২.১)। অন্যদিকে আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ায় জিডিপিতে কৃষিখাতের
অবদান উন্নত বিশ্বের তুলনায় বেশি। উন্নত বিশ্বে (যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপিতে সেবাখাতের অবদান ৭৭
শতাংশ) শিল্প ও সেবা খাতে নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেশি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে
গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করছে। প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ দেশগুলোতে (সৌদি আরবের অর্থনীতিতে
শিল্প খাতের অবদান ৭০ শতাংশ) শিল্প খাতে নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেশি। বর্তমানে
বৈষয়িক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে এর
নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অন্যদিকে শিল্প ও সেবাখাতের দ্রæত প্রসারের ফলে এ খাতে নিয়োজিত
শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সারণী ৩.১২.১: বিভিন্ন দেশে অর্থনীতিতে বিভিন্ন ঘাতের অবদান ২০১০
দেশের নাম কৃষিখাত শিল্প খাত সেবা খাত দেশের নাম কৃষি খাত শিল্প খাত সেবা খাত
চীন ১১ ৪৯ ৪০ দক্ষিণ আফ্রিকা ৩ ৩১ ৬৬
ভারত ১৮ ২৯ ৫৩ জাম্বিয়া ২১ ৪৬ ৩৩
বাংলাদেশ ১৯ ২৯ ৫২ সুইডেন ২ ২৯ ৭০
জাপান ১ ৩০ ৬৮ জার্মানী ১ ৩০ ৬৯
সৌদি আরব ২ ৭০ ২৭ বেলজিয়াম ১ ২৪ ৭৫
উজবেকিস্তান ২৩ ৩৩ ৪৩ মালি ৩৭ ২৪ ৩৯
ইন্দোনেশিয়া ১৪ ৪৮ ৩৭ যুক্তরাষ্ট্র ১ ২২ ৭৭
মিশর ১৪ ৩৬ ৫০ মেক্সিকো ৪ ৩৭ ৫৯
সুদান ২৬ ৩৪ ৪০ ব্রাজিল ৭ ২৮ ৬৫
নাইজেরিয়া ৩১ ৪১ ২৮ আর্জেন্টিনা ৯ ৩৪ ৫৭
ঘানা ৩২ ২৬ ৪২ বলিভিয়া ১৪ ৪২ ৪৪
কেনিয়া ২১ ১৩ ৬৫ পেরু ৭ ৩৮ ৫৫
উৎস : ডড়ৎষফ উবাবষড়ঢ়সবহঃ জবঢ়ড়ৎঃ ২০১০
পেশাগত বৈশিষ্ট্য অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের বৈচিত্রই শুধু প্রকাশ করে না, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাও
নির্দেশ করে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে পেশাগত বন্টনের বিশেষ পরিবর্তন ঘটে। এ ধরনের
পরিবর্তনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কৃষি ও অন্যান্য প্রাথমিক কর্মকান্ডে শ্রম হারের হ্রাস এবং
বৃত্তিমূলক, কারিগরী ও কারনিক পেশায় আপেক্ষিক বৃদ্ধি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে অদক্ষ গৃহ
পরিচর্যামূলক পেশার ক্ষেত্রেও ধনাÍক পরিবর্তন ঘটে (তাহা, ১৯৮৯)।
পাঠসংক্ষেপ:
এই পাঠে আমরা জনসংখ্যা কাঠামোর অন্তর্গত অর্থনৈতিক কাঠামো সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছি।
অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের গুরুত্বপূর্ণ সূচক হচ্ছে পেশা। জনসংখ্যার উপাদান বিশ্বেষণের ক্ষেত্রে পেশাগত
বৈশিষ্ট্য মূল্যায়নের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। পেশাগত বৈশিষ্ট্য অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের বৈচিত্রই শুধু প্রকাশ
করে না, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাও নির্দেশ করে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন: ৩.১২
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন:
১. সত্য হলে ‘স' মিথ্যা হলে ‘মি' লিখুন:
১.১. অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের গুরুত্বপূর্ণ সূচক হচ্ছে পেশা।
১.২. আধুনিক শিল্পোন্নত একটি দেশে প্রায় ৫ থেকে ৫০ হাজার বিভিন্ন পেশা দেখা যায়।
১.৩. উন্নত বিশ্বে মোট শ্রমশক্তির প্রায় ১০ শতাংশ কৃষিতে, ৪০ শতাংশ শিল্প ও ব্যবসায় এবং ৫০
শতাংশ পরিচর্যা বা সেবামূলক পেশায় নিয়োজিত।
১.৪. অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে পেশাগত বন্টনের বিশেষ পরিবর্তন ঘটে।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন:
১. জনমিতিক পরিবৃদ্ধিকাল তত্ত¡ বা ধারা কাকে বলা হয়?
২. জনমিতিক পরিবৃদ্ধিকাল তত্ত¡ পর্যায় সমূহের বৈশিষ্ট্য কি কি?
রচনামূলক প্রশ্ন:
১. জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার ও জনসংখ্যা আকারে বিশ্ব পর্যায়ের সম্পর্ক নির্দেশ কর।
২. জনমিতিক পরিবৃত্তিকাল তত্ত¡টি আলোচনা কর।
৩. সংক্ষেপে বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভবিষ্যত সম্পর্কে আলোচনা কর।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]