জনসংখ্যা কাঠামোর অন্তর্গত অর্থনৈতিক কাঠামোর বর্ণনা দিন।
পেশা কি? বিশ্ব শ্রম শক্তির সাধারণ বন্টন দেখান।


জনসংখ্যার সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হচ্ছে শিক্ষিতের হার এবং শিক্ষার
পর্যায়। আর্থ-সামাজিক আধুনিকায়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে শিক্ষা। কেননা প্রায় সকল জনমিতিক বৈশিষ্ট্য,
যেমন, বিবাহ, প্রজননশীলতা, মরণশীলতা, অভিগমন, শ্রমশক্তি প্রভৃতি বিষয় শিক্ষা দ্বারা প্রভাবিত হয়।
শিক্ষার প্রভাবের কারণেই উন্নত ও বিকাশশীল দেশ সমূহের মধ্যে উপরোক্ত জনমিতিক অবস্থার পার্থক্য
লক্ষণীয়ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, বিকাশশীল দেশে নারীদের নি¤œ গড় বিবাহ বয়স এবং
শ্রমশক্তিতে সীমিত অংশ গ্রহণ নি¤œ শিক্ষা হারের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এর বিপরীত অবস্থা উন্নত দেশে
দেখা যায়। একই কারণে বিকাশশীল দেশে উচ্চ শিশুমৃত্যু হার নারীদের নি¤œ শিক্ষা হারের সাথে
সম্পর্কযুক্ত। এই ধরণের সম্পর্ক নারীদের নি¤œ পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ হার, উচ্চ প্রজননশীলতা ও
মরণশীলতা বিকাশশীল দেশে দেখা যায়।
উল্লেখ্য যে, শিক্ষা ব্যবস্থার ভিন্নতার কারণে জনসংখ্যার শিক্ষাগত বৈশিষ্ট্যের আন্তর্জাতিক তুলনা করার
বিশেষ অসুবিধা রয়েছে। এ সমস্যার প্রধান কারণ হচ্ছে শিক্ষিতের সংজ্ঞার মধ্যে অসমতা এবং
শিক্ষিতের গণনায় শিশুদের অন্তর্ভুক্তির প্রশ্ন। শিক্ষিত বলতে আনুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তি বোঝানো হয়ে
থাকে। তবে আন্তর্জাতিক তুলনার সুবিধার্থে শিক্ষিত বা স্বাক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন (খরঃবৎধঃব) বলতে যে কোন
ভাষায় বোধগম্যতার সাথে লিখতে এবং পড়তে সক্ষম ব্যক্তিদের বুঝিয়ে থাকে। শিক্ষিতের গণনায়
সাধারণত: শিশু ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বাদ দেওয়া হয়ে থাকে। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বয়সসীমা সম্পর্কে
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যে যথেষ্ট তারতম্য রয়েছে। সাধারণত: এই সীমা ৫ থেকে ১৫ বৎসর পর্যন্ত
বিস্তৃত। উন্নত বহুদেশে শিক্ষিত গণনার ক্ষেত্রে ১৫ অথবা ১২ বৎসরের কম বয়স্ক শিশুদের বাদ রাখা
হয়। বিকাশশীলদেশে এই সীমা ৫ অথবা ১০ বৎসর পর্যন্ত ধরা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ৫ বৎসরের
কম বয়স্কদের শিক্ষিত গণনার বাইরে রাখা হয়েছে। আবার কখন কখন মোট জনসংখ্যা ধরেই
(শিশুসহ) শিক্ষিতের হার নির্ণয় করা হয়েছে।
শিক্ষিতের বিশ্ব বিন্যাস
বিশ্বব্যাপী শিক্ষিতের বিন্যাসে যথেষ্ট ভিন্নতা রয়েছে (সারণী ৩.১৩.১)। উন্নত বিশ্বে শিক্ষিতের হার ৯৮
থেকে ১০০% এর মধ্যে; দক্ষিণ ইউরোপের কয়েকটি দেশে এই হার কিছুটা কম। এই দেশগুলির মধ্যে
পর্তুগাল, যুগো¯øাভিয়া, আলবেনিয়া এবং মাল্টার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ২০১০ সালে
আলবেনিয়ায় শিক্ষিতের হার ছিল ৯৯%, উন্নত বিশ্বে সর্বনি¤œ হার। ২০১০ সালে পর্তুগালে শিক্ষিতের
হার ছিল প্রায় ৯৫% যুগোশ্লাভিয়ার ৯৯%, এবং মাল্টার ৯১%। বিকাশশীল অঞ্চলে ল্যাটিন আমেরিকা
এবং পূর্ব ও দক্ষিণ ইউরোপে শিক্ষিতের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। ২০১০ কিউবায় শিক্ষিতের হার
ছিল প্রায় ১০০%। এশিয়া মহাদেশে ২০১০ সালে উত্তর কোরিয়ায় শিক্ষিতের হার ছিল প্রায় ৯৮%,
ফিলিপাইনে ৯৩% এবং থাইল্যান্ডে ৯৪% সিংঙ্গাপুরে ৯৪%। বিকাশশীল অঞ্চলের মধ্যে মধ্য আফ্রিকা,
দক্ষিণ এশিয়া এবং ক্যারিবীয় কোন কোন দ্বীপে শিক্ষেতের হার নিতান্তই অল্প। এই সমস্ত দেশের মধ্যে
উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সেনেগাল, গাম্বিয়া, নাইজার, চাঁদ, সুদান, ইথিওপিয়া; আফগানিস্তান, পাকিস্তান,
নেপাল, ভ‚টান এবং হাইতি। মধ্য আফ্রিকার দেশসমূহে শিক্ষিতের হার ৩০% এর নীচে। সেনেগাল,
নাইজার, বুরকিনা ফাসো, বেনিন প্রভৃতি দেশে এই হার ২০ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে। এশিয়ায়
শিক্ষিতের হার ২৫ থেকে ৪০% এর মধ্যে। আফগানিস্তান, ভ‚টান ও শ্রীলংকা এর ব্যতিক্রম।
আফগানিস্তানে ২৮% এবং ভুটানে শিক্ষিতের হার প্রায় ৫৩ শতাংশ, শ্রীলংকায় শিক্ষিতের হার ২০১০
সালে ছিল ৯১%, বাংলাদেশে এই হার ৫৩% (সারণী ৩.১৩.১)।
সারণী ৩.১৩.১: নির্বাচিত দেশসমূহে শিক্ষিতের হার, ২০১০
দেশ শতাংশ দেশ শতাংশ
আফগানিস্তান ২৮ ভারত ৬৬
আলবেনিয়া ৯৯ ইরাক ৭৪
আর্জেন্টিনা ৯৮ জাপান ৯৯
বাংলাদেশ ৫৩ মাল্টা ৯১
বেনিন ৪০ নেপাল ৫৭
ভ‚টান ৫৩ পাকিস্তান ৫৪
বুরকিনা ফাসো ১৮ ফিলিপাইন্স ৯৩
চাঁদ ৬১ পর্তুগাল ৯৫
চিলি ৯৬ সেনেগাল ৪২
কিউবা ১০০ শ্রীলঙ্কা ৯১
ইথিওপিয়া ৩৬ সুদান ৬১
গাম্বিয়া ৩০ থাইল্যান্ড ৯৪
গ্রীস ৯৭ যুক্তরাজ্য ৯৯
হাইতি ৬২ যুক্তরাষ্ট্র ৯৯
যুগো¯øাভিয়া ৯৯ অস্ট্রেলিয়া ৯৯
উৎস : ডড়ৎষফ ইধহশ উবাবষড়ঢ়সবহঃ জবঢ়ড়ৎঃ ২০১০
শিক্ষার বিষয়ে নারী ও পুরুষ এবং শহর ও গ্রামের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। আফ্রিকার বহুদেশে
গ্রামীন নারীদের মধ্যে শিক্ষার সামান্যই বিস্তার ঘটেছে। বাংলাদেশে ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী দেখা
যায় যে, পুরুষদের মধ্যে শিক্ষিতের হার হচ্ছে প্রায় ৩৯% নারীদের মধ্যে ২৬%। শহরে শিক্ষিতের হার
৫১%, গ্রামাঞ্চলে ২২%, শহরে পুরুষদের মধ্যে শিক্ষিতের হার সর্বাধিক প্রায় ৬০%। শহরে নারীদের
মধ্যে এই হার প্রায় ৩৫%। গ্রামাঞ্চলে পুরুষদের মধ্যে শিক্ষিতের হার প্রায় ৩০% নারীদের মধ্যে মাত্র
২০%। ২০১০ সালে ভারতে পুরুষদের মধ্যে শিক্ষিতের হার ছিল প্রায় ৫০% নারীদের মধ্যে এই হার
ছিল প্রায় ৩০%।
উন্নত বিশ্বে, দক্ষিণ ইউরোপ ব্যতিত শিক্ষিতের লিঙ্গগত পার্থক্য সামান্যই রযেছে। ২০১০ সালে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রে ২% এর নীচে লোক অশিক্ষিত ছিল; পুরুষদের মধ্যেই অশিক্ষিতের হার বেশী ছিল প্রায় ২.০,
নারীদের মধ্যে অশিক্ষিতের হার ছিল ১.৫ মাত্র। দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলিতে পুরুষ ও নারীদের মধ্যে
শিক্ষাগত বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য এখনও রয়েছে। ২০১০ সালে গ্রীসে পুরুষদের মধ্যে শিক্ষিতের হার ছিল
প্রায় ৯৮%, কিন্তু নারীদের মধ্যে এই হার ছিল প্রায় ৯১ শতাংশ।
পাঠসংক্ষেপ:
জনসংখ্যার সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হচ্ছে শিক্ষিতের হার এবং শিক্ষার
পর্যায়। শিক্ষা ব্যবস্থার ভিন্নতার কারণে জনসংখ্যার শিক্ষাগত বৈশিষ্ট্যের আন্তর্জাতিক তুলনা করার
বিশেষ অসুবিধা রয়েছে। বিশ্বব্যাপী শিক্ষিতের বিন্যাসে যথেষ্ট ভিন্নতা রয়েছে। শিক্ষার বিষয়ে নারী ও
পুরুষ এবং শহর ও গ্রামের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন: ৩.১৩
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন:
১. শূন্যস্থান পূরণ করুন:
১.১. শিক্ষা ব্যবস্থার ভিন্নতার কারণে জনসংখ্যার শিক্ষাগত বৈশিষ্ট্যের আন্তর্জাতিক ------- করার
বিশেষ অসুবিধা রয়েছে।
১.২. উন্নত বিশ্বে শিক্ষিতের হার -------- থেকে ১০০% এর মধ্যে।
১.৩. এশিয়ায় শিক্ষিতের হার -------- থেকে ৪০% এর মধ্যে।
১.৪. উন্নত বিশ্বে, দক্ষিণ -------- ব্যতিত শিক্ষিতের লিঙ্গগত পার্থক্য সামান্যই রয়েছে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন:
১. সূচক কি?
২. উন্নত বিশ্বে শিক্ষিতের বিশ্ববিন্যাস কেমন?
৩. বিকাশশীল অঞ্চলে শিক্ষিতের বিশ্ববিন্যাস কেমন?
৪. মধ্য আফ্রিকায় শিক্ষিতের বিশ্ববিন্যাস কেমন?
৫. বাংলাদেশের ২০০১ সালের গণনা অনুযায়ী শিক্ষার ধারা কেমন?
রচনামূলক প্রশ্ন:
১. জনসংখ্যা কাঠামোর অন্তর্গত অর্থনৈতিক কাঠামোর বর্ণনা দিন।
২. পেশা কি? বিশ্ব শ্রম শক্তির সাধারণ বন্টন দেখান।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]