ভাষা পরিবার ও ভাষা গোষ্ঠীর পার্থক্যকরণ করুন।
বিশ্বের প্রধান ভাষা গোষ্ঠীসমূহ আলোচনা করুন।


মানব জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভাষা সার্বজনীন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ; কিন্তু ভাষার ব্যাপক বিভিন্নতা রয়েছে। এতদসত্বেও
ভাষা জনগোষ্ঠীর একটি প্রধান ও উল্লেখযোগ্য অর্জিত জনমিতিক বৈশিষ্ট্য। জনমিতিক প্রক্রিয়ায় ভাষার
প্রত্যক্ষ কোন ভ‚মিকা না থাকলেও জাতি বা বর্ণসত্ত¡ার আগে যেহেতু তা সম্পৃক্ত সেহেতু সাংস্কৃতিক ও
রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণে ভাষাগত বৈশিষ্ট্য জনসংখ্যার বিশেষ করে আর্থ-সামাজিক বৈশিষ্ট্যকে
প্রভাবিত করার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে জনমিতিক ধারার উপর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
ভাষা পরিবার ও ভাষা গোষ্ঠী
পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশ জুড়ে উৎপত্তিগতভাবে সম্পর্কীত বেশ কিছু ভাষা পরিবার রয়েছে। বর্তমান
বিশ্বে প্রচলিত ভাষাসমূহ এই সমস্ত ভাষা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। প্রধানত: সাংস্কৃতিক পার্থক্য ও দূরত্বের
ফলে ভাষাসমূহ উৎপত্তি ভাষা থেকে ক্রমে ক্রমে স্বকীয়তা বা ভিন্নতা লাভ করেছে। এগুলি ভাষা গোষ্ঠী
বলে পরিচিত। বিশ্বে প্রধান প্রায় ৫২ টি বিশ্ব ভাষা পরিবার (খরহমঁরংঃরপ ঋধসরষু) এবং প্রায় ১০ টি
প্রধান ভাষা গোষ্ঠী (খরহমঁরংঃরপ এৎড়ঁঢ়ং) রয়েছে।
অনুমান করা হয় যে পৃথিবীতে বর্তমানে প্রায় ২৫০০ থেকে ৩৫০০ ভাষার প্রচলন আছে এবং এর মধ্যে
প্রায় ১০০০ ভাষা কেবলমাত্র আফ্রিকা মহাদেশেই ব্যবহৃত হয় (রশীদ, ১৯৮২)। এই ব্যাপক সংখ্যক
ভাষা কোন না কোন ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।
অঞ্চল ভাষা পরিবার
এশিয়া ও ইউরোপ ২২
আফ্রিকা ৭
উত্তর আমেরিকা ৮
দক্ষিণ আমেরিকা ১৪
ওশানিয়া ১
মোট ৫২
অর্থাৎ ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ভাষাসমূহ সাধারণত এক ও অভিন্ন ভাষা পরিবার থেকে জন্মলাভ করে
ক্রমে ক্রমে পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের মাধ্যমে স্বতন্ত্র ভাষা রূপে প্রকাশ পেয়েছে।
প্রধান ভাষা গোষ্ঠী: পৃথিবীর ভাষাগোষ্ঠীর শ্রেণীবিভাজনের প্রধান অন্তরায় সকল ভাষা সম্বন্ধে পর্যাপ্ত
তথ্যের অভাব। প্রাপ্ত তথ্যের উপর নির্ভর করে ভাষাবিদগণ পৃথিবীর সকল ভাষাকে ১০টি প্রধান ভাষা
গোষ্ঠীতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। নিন্মে এগুলির তালিকা ও প্রতিটির প্রচলন এলাকা দেখানো হলো (চিত্র
৩.১৪.১)।
সারণী ৩.১৪.১: বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর প্রচলন অঞ্চল
ভাষা গোষ্টী প্রচলন অঞ্চল
১। ইন্দো-ইউরোপীয় উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ ও রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া,
নিউজিল্যান্ড,
দক্ষিণ আফ্রিকা, ইরান, দক্ষিণ এশিয়া।
২। হ্যামিটিক- সোমিটিক উত্তর ও পূর্ব-উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া।
৩। উরাল-আলতাই উত্তর রাশিয়া, মধ্য এশিয়া, তুরস্ক, হাঙ্গেরী, ফিনল্যান্ড।
৪। নাইজার -কঙ্গো-বান্টু পশ্চিম, মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
৫। চীনা-তিব্বতীয় চীন, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, পূর্বকাশ্মীর, উত্তর-পূর্বভারত।
৬। দ্রাবিড় দক্ষিণ ভারত, উত্তর শ্রীলঙ্কা।
৭। মালয়-পলিনেশীয় মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মালাগাসি।
৮। জাপানী-কোরীয় জাপান, কোরীয়ান, পেনিনসুলা।
৯। পাপুয়া-অস্ট্রেলিয়া পাপুয়া-নিউ গিনি, অস্ট্রেলিয়া।
১০। আমেরিন্ডীয় উত্তর কানাডা, মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা।
চিত্র ৩.১৪.১: বিশ্বের প্রধান ভাষা গোষ্ঠীর ভৌগলিক বিস্তৃতি
উপরোক্ত প্রতিটির গোষ্ঠীভুক্ত একাধিক ভাষা রয়েছে। রশীদ (১৯৮২) অনুযায়ী এ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত
আলোকপাত করা হলো।
ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠী: পৃথিবীর সকল ভাষা গোষ্ঠীর মধ্যে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর
ভৌগোলিক বিস্তৃতি সর্বাপেক্ষা অধিক। পৃথিবীর সকল মহাদেশেই এই গোষ্ঠীভুক্ত কোন না কোন ভাষার
প্রচলন রযেছে এবং পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক জনসাধারণ এই গোষ্ঠীর কোন এক ভাষায় কথা বলে।
ভাষাবিদের মতে প্রাগৈতিহাসিক যুগে পূর্ব-মধ্য ইউরোপে এক প্রাচীন ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার অস্তিত্ব
ছিল এবং বর্তমান যুগের ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাসমূহ সাধারণ সূত্র থেকে উদ্ভুত রয়েছে। ইন্দোইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ভাষা হচ্ছে ইংরেজী, যা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা,
সারণী: ৩.১৪.১: বিশ্বের শীর্ষ ভাষাসমূহের বিস্তার
ভাষা জনসংখ্যা (মিলিয়ন) ভাষাÑভাষী অঞ্চল
চীনা ১২১৩ চীন, তাইওয়ান।
ইংরেজী ৩২৮ উত্তর আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড।
হিন্দী ১৮২ ভারত।
স্প্যানিশ ৩২৯ স্পেন, ল্যাটিন আমেরিকা।
রুশ ১৪৪ রাশিয়া।
আরবী ২২১ পশ্চিম এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা।
বাংলা ১৮১ বাংলাদেশ, পূর্ব ভারত (প: বাংলাসহ)
পর্তুগীজ ১৭৮ পর্তুগাল, ব্রাজিল
উৎস : রশীদ ১৯৮২
অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান ভাষা রূপে ব্যবহৃত হয় এবং ব্রিটিশ কমনওয়েলথ
দেশসমূহেও এই ভাষার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীকে কয়েকটি উপগোষ্ঠীতে
বিভক্ত করা যায়; যথা (১) কেল্টিক (ঈবষঃরপ) : ফরাসী, স্প্যানিশ, পর্তুগীজ ও ইতালীয়, স্কটল্যান্ডের
গেইলিক (এধবষরপ) ও ওয়েলসের ওয়েলশ্ (ডবষংয); (২) রোমানস (জড়সধহপব): (৩) জার্মানিক
(এবৎসধহরপ): জার্মান, সুইডিশ, নরওয়েজীয়, ডেনীশ, ডাচ ও ইংরেজী; (৪) বাল্টিক (ইধষঃরপ):
ল্যাটভীয় ও লিথুয়েনীয়; (৫) ¯øাভিক (ঝষধারপ): পূর্ব ইউরোপের চেক, ¯েøাভাক, সার্বো-ক্রোশীয়,
¯øভেনীয়, ম্যাসিডনীয়, পোলিশ, বুলগেরীয় এবং ইউক্রেনীয় ও রুশ; (৭) গ্রীক (এৎববশ); (৮)
আলবেনীয় (অষনধহরধহ); এবং (৯) ইন্দো-ইরানীয় (ওহফড়-ওৎধহরধহ): ফার্সী, পশতু, কুর্দি, বালুচি, হিন্দী,
বাংলা, মারাঠি, গুজরাটি, উর্দু, পাঞ্জাবী, সিন্ধি, রাজস্থানী, উড়িয়া, অসমীয়, সিংহলী ইত্যাদি। ইতিহাসের
বিভিন্ন পর্যায়ে মানবজাতির প্রচলণ ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা সমূহের ব্যাপক
বিস্তৃতি ও ক্রমবিবর্ধন ঘটেছে।
হ্যামটিক-সেমিটিক ভাষাগোষ্ঠী: প্রধানত উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় সীমাবদ্ধ। এ গোষ্ঠীর
প্রধান প্রধান ভাষা হচ্ছে আরবী, ইসরাইলের হিব্রæ, উত্তর আফ্রিকার বর্বর (ইবৎনবৎ), সোমালিয়ার
সোমালী এবং ইথিওপিয়ার আমহারিক (অসযধৎরপ)। উরাল-আলতাই ভাষাগোষ্ঠী ভ‚তপূর্ব সোভিয়েত
ইউনিয়নের সাইবেরিয়া অঞ্চলে উৎপত্তি লাভ করার পর সম্প্রসারণের ফলে পরবর্তীকালে পশ্চিম
ইউরোপের কতিপয় অঞ্চলে প্রসার লাভ করে। উত্তর সাইবেরিয়ার সামোয়েদ (ঝধসড়ুবফ), ইয়াকুত
(ণধশঁঃ) ও ল্যাপ (খধঢ়ঢ়); ফিনল্যান্ডের ফিনিস (ঋরহরংয); তুরস্কের তুর্কী: এবং হাঙ্গেরীর মাগীয়ার
(গধমুধৎ) ভাষা উরাল-আলতাই ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। সাহরার দক্ষিণে প্রচলিত আফ্রিকার
অসংখ্য ভাষাকে মূলত: নাইজার কঙ্গো-বাল্ট ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ সকল ভাষা পশ্চিম
আফ্রিকা থেকে আফ্রিকার দক্ষিণ সীমান্ত পর্যন্ত প্রচলিত। এই ভাষাগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য সদস্য হচ্ছে
পশ্চিম আফ্রিকার হাউসা (ঐড়ঁংধ), ইউরুবা (ণড়ৎঁনধ). ইবো, ফুলানী, মোসি, অকোন; মধ্য আফ্রিকার
মোংগো, পূর্ব আফ্রিকার সোয়াহিলী (ঝধিযরষর); দক্ষিণ আফ্রিকার শোনো (ঝযড়হধ) ইত্যাদি চীনা,
তিব্বতী ভাষাগোষ্ঠী কেবলমাত্র পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সীমাবদ্ধ হলেও বহু লোকের মাতৃভাষা এই
গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। চীনা তিব্বতী ভাষাগোষ্ঠীর প্রধান ভাষা হচ্ছে চীনাভাষা যা গণচীন, তাইওয়ান ও
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চীনা সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত। তিব্বতী, বর্মী থাই এবং পূর্ব কাশ্মির ও উত্তর-পূর্ব
ভারতের কিছু উপজাতিয় সম্প্রদায়ের ভাষা চীনা তিব্বতী ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।
দক্ষিণ এশিয়ায় আর্যদের আগমণের পূর্বে সারা উপমহাদেশে দ্রাবিড় ভাষার প্রচলন ছিল বলে মনে করা
হয়। কিছু বর্তমানে দ্রাবিড় ভাষা সমূহের (তামিল, তেলেগু, কানাডা ও মালায়ালাম) প্রচলন কেবল
দক্ষিণ ভারতে সীমাবদ্ধ।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালয়-পলিনেশীয় ভাষাগোষ্ঠীতে মালয়েশীয় ইন্দোনেশীয় ও ফিলিপিনো ভাষা
উল্লেখযোগ্য। তবে আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপক‚লের নিকট অবস্থিত দ্বীপ মালাগাসীর ভাষাও
এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং তা প্রাচীনকালে মালাগাসীর সাথে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগের
সাক্ষ্য বহন করে। জাপানী ও কোরীয় ভাষাদ্বয়কে এক গোষ্ঠীভুক্ত করা হলেও ঐ দুটি ভাষার মধ্যে যথেষ্ট
ব্যবধান আছে। বস্তুতপক্ষে উভয় ভাষাই একটি সম্পূর্ণ পৃথক উপগোষ্ঠীরূপে বিবেচিত হতে পারে।
উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসী অর্থাৎ আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের বিভিন্ন ভাষাকে শ্রেণীবিভাজনের
সুবিধার্থে “আমেরিন্ডীয়” ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ সকল ভাষা উত্তর কানাডা: মধ্য
আমেরিকার মেক্সিকো ও গুয়েতেমালা; দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল, গাইয়ানা (এুঁধহধ), ভেনেজুয়েলা,
কলম্বিয়া, ইকুয়াডোর, পেরু, বলিভিয়া ও চিলির অধিবাসীদের মাতৃভাষা। অনুরূপভাবে, অষ্ট্রেলিয়ার
আদিবাসীদের ভাষা এবং পাপুয়া নিউগিনিতে প্রচলিত বিভিন্ন ভাষাকে যুক্তভাবে পাপুয়া অষ্ট্রেলিয়া ভাষা
গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উপরোক্ত প্রধান ভাষাগোষ্ঠীসমূহ ব্যতীত পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বেশ
কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ও স্বতন্ত্র ভাষার প্রচলন দেখা যায়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাষা হচ্ছে কাম্পুচিয়ার
মন্ খমের (গড়হ শযসবৎ); লাওসের লাও; উত্তর-পূর্ব ভারতের উপজাতীয় ভাষা মুন্ডা; ভারত
মহাসাগরের আন্দামানী; ভিয়েতনামের ভিয়েতনামী; মধ্য আফ্রিকার সাহারা ও সুদানী; দক্ষিণ-পশ্চিম
আফ্রিকার বুশম্যান -হটেনটটদের ভাষা খোইসান (কযড়রংধহ); ককেশাস পর্বত এলাকায় প্রচলিত
ককেশীয়: স্পেনের উত্তরাঞ্চলের বাস্ক্ এবং উত্তর কানাডা ও গ্রীনল্যান্ডের ইনুইটস।
ভাষা ও রাজনৈতিক সমস্যা
বিশ্বের প্রায় ৩ বিলিয়ন জনসংখ্যা (অর্থাৎ বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা) ৮ টি ভাষায় কথা বলে। এ
গুলি হলো চীনা, ইংরেজী, হিন্দী, স্প্যানিশ, রুশ, আরবী, বাংলা ও পর্তৃগীজ। উল্লেখ্য যে এ গুলিসহ
অপরাপর ভাষাসমূহ কোন রাষ্ট্রীয় গন্ডিতে গন্ডিভুক্ত নয়। অপর কথায় রাষ্ট্রীয় বা রাজনৈতিক সীমানা ও
ভাষা সীমানা এক নয়। এই বৈশিষ্ট্য বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাতময় পরিবেশ
সৃষ্টি করে থাকে। অপরদিকে নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদানের আন্দোলন অনেক
দেশেই ঘটেছে।
ভাষা জাতিসত্তার প্রধান উপাদান। স্বাভাবতই রাষ্ট্রীয় সংহতির প্রশ্নে ভাষাগত ঐক্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
পৃথিবীর অনেক অঞ্চলে বিশেষ করে ল্যাটিন আমেরিকা, মধ্য আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়
ভাষাগত বিভাজন ও জাতিগত সমস্যা রয়েছে। ল্যাটিন আমেরিকার মেক্সিকো, গুয়াতেমালা এবং
ব্রাজিলে বহুসংখ্যক লোক শ্রেণীয় ও পর্তুগীজ ছাড়া স্থানীয় আমেরিকীয় ভাষায় কথা বলে। উত্তর
আমেরিকার কানাডা একটি দ্বিভাষী রাষ্ট্র, ইংরেজী হচ্ছে প্রধান ভাষা, তবে কুইবেক প্রদেশে অধিকাংশ
জনগণ ফরাসী ভাষী বস্তুত : কানাডায় প্রায় ৩০% লোকের মাতৃভাষা ফরাসী। ইথিওপিয়া, সুদান,
জায়ারে এবং নাইজেরিয়ার ভাষাগত বিশেষ সমস্যা রয়েছে। ইথিওপিয়াতে কমপক্ষে ৭০টি ভাষা
প্রচলিত আছে। নাইজেরিয়ার প্রধান ভাষাগুলি হচ্ছে হাউসা, ইউরোবা, ইবো, ফুলা, এবং এর সাথে
ইংরেজীও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় পাকিস্তানে ৪ টি, ভারতে ১৫ টি,
শ্রীলংকায় ২টি এবং ইন্দোনেশিয়ার প্রায় ২৫ টি ভাষা প্রচলিত আছে। বহুভাষা সমস্যা ইউরোপ
মাহাদেশেও রয়েছে। বেলজিয়াম একটি দ্বিভাষী রাষ্ট্র; উত্তরাঞ্চলের প্রধান ভাষা হচ্ছে ফ্লেমীশ, দক্ষিণের
ওয়ালুনগণ (ডধষড়ড়হ) ফরাসী ভাষী।এ ছাড়াও সামান্য সংখ্যক জার্মানভাষীও রয়েছে।
চেক¯েøাভাকিয়াতেও অনুরূপ সমস্যা রয়েছে। এখানে পশ্চিমাঞ্চলের ভাষা হচ্ছে চেক, পূর্বাঞ্চলের প্রধান
ভাষা শ্লোভাক। সুইজারল্যান্ড, যুগোশ্লাভিয়া, রুমানিয়া ও রাশিয়াও বহুভাষী জাতি সত্তায় বিভক্ত। ভাষার
এ রূপ আভ্যন্তরীণ বিন্যাস বিশ্বে বিভিন্ন জনসংখ্যা কাঠামো বিশেষ করে শিক্ষা, পেশা, অভিগমন
প্রভাবিত করছে।
পাঠসংক্ষেপ:
মানব জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভাষা সার্বজনীন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ; কিন্তু ভাষার ব্যাপক বিভিন্নতা রয়েছে। এতদসত্বেও
ভাষা জনগোষ্ঠীর একটি প্রধান ও উল্লেখযোগ্য অর্জিত জনমিতিক বৈশিষ্ট্য। পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশ
জুড়ে উৎপত্তিগতভাবে সম্পর্কীত বেশ কিছু ভাষা পরিবার রয়েছে। পৃথিবীর সকল ভাষা সম্বন্ধে পর্যাপ্ত
তথ্যের অভাব ভাষা গোষ্ঠীর শ্রেণীবিভাজনের প্রধান অন্তরায়। প্রাপ্ত তথ্যের উপর নির্ভর করে ভাষাবিদগণ
পৃথিবীর সকল ভাষাকে ১০টি প্রধান ভাষা গোষ্ঠীতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। ভাষার বিভিন্ন আভ্যন্তরীণ
বিন্যাস বিশ্বে বিভিন্ন জনসংখ্যা কাঠামো বিশেষ করে শিক্ষা, পেশা, অভিগমনকে প্রভাবিত করছে।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন:
১. শূন্যস্থান পূরণ করুন:
১.১. পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশ জুড়ে উৎপত্তিগতভাবে সম্পর্কীত বেশ কিছু ভাষা ------ রয়েছে।
১.২. অনুমান করা হয় যে পৃথিবীতে বর্তমানে প্রায় ------- থেকে ৩৫০০ ভাষার প্রচলন আছে।
১.৩. প্রাপ্ত তথ্যের উপর নির্ভর করে ভাষাবিদগণ পৃথিবীর সকল ভাষাকে ------ প্রধান ভাষা গোষ্ঠীতে
অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
১.৪. পৃথিবীর সকল ভাষা গোষ্ঠীর মধ্যে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর ------- বিস্তৃতি সর্বাপেক্ষা
অধিক।
১.৫. ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে মানবজাতির প্রচলণ ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে ইন্দো------ ভাষা সমূহের
ব্যাপক বিস্তৃতি ও ক্রমবিবর্ধন ঘটেছে।

২. সত্য হলে ‘স' মিথ্যা হলে ‘মি' লিখুন:
২.১. হ্যামিটিক-সেমিটিক ভাষাগোষ্ঠী প্রধানত উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পশ্চিম আমেরিকায় সীমাবদ্ধ।
২.২. তিব্বতী, বর্মী, থাই এবং পূর্ব কাশ্মির ও উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু উপজাতীয় সম্প্রদায়ের ভাষা
চীনা তিব্বতী ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।
২.৩. বিশ্বের প্রায় ৩ বিলিয়ন জনসংখ্যা (অর্থাৎ বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা) ১০ টি ভাষায় কথা
বলে।
২.৪. দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার পাকিস্তানে ৪ টি, ভারতে ১৫ টি, শ্রীলংকায় ২টি এবং
ইন্দোনেশিয়ার প্রায় ২৫ টি ভাষা প্রচলিত।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন:
১. ভাষা পরিবার ও ভাষা গোষ্ঠী কি?
২. বিশ্বে প্রধান ভাষা গোষ্ঠীসমূহ কি কি?
৩. ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর সম্পর্কে ধারণা দিন।
৪. হ্যামিটিক -সেমিটিক ভাষাগোষ্ঠী সম্পর্কে ধারণা দিন।
রচনামূলক প্রশ্ন:
১. ভাষা পরিবার ও ভাষা গোষ্ঠীর পার্থক্যকরণ করুন।
২. বিশ্বের প্রধান ভাষা গোষ্ঠীসমূহ আলোচনা করুন।
৩. ভাষার সাথে রাজনীতির সম্পর্ক সংক্ষেপে আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]