জনমিতিক পরিবৃদ্ধিকাল তত্ত¡
জনমিতিক পরিবৃদ্ধিকাল তত্ত¡ পর্যায় সমূহের বৈশিষ্ট্য কি কি?


এই ইউনিটের বিভিন্ন পাঠে আমরা দেখেছি যে, প্রজননশীলতা, মরণশীলতা, এবং অভিগমনের
জনমিতিক প্রক্রিয়া একটি জনসংখ্যা বা দেশের জৈবিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, ভৌগোলিক, রাজনৈতিক
এবং সামাজিক উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়। এই সমস্ত উপাদান বা নিয়ামক জনমিতিক প্রক্রিয়াকে
সরাসরি বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে। এ ধরণের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার কারণে বিশ্ব জনসংখ্যা বিশেষ
আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হয়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে। ফলে বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে প্রায় ২ বিলিয়ন
জনসংখ্যা শতাব্দীর শেষে ৬ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে ১ বিলিয়ন
জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটেছে। বিশ্ব জনসংখ্যা আরো ১ বিলিয়ন কত দ্রæত বৃদ্ধি পাবে তা নির্ভর করবে বর্তমান
দশকের জনসংখ্যা পরিকল্পনা সংক্রান্ত নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থাৎ এ সম্পর্কে গৃহীত ব্যবস্থার
উপর।
উপরোক্তের পরিপেক্ষিতে এই পাঠে আমরা জনসংখ্যা পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন প্রচেষ্টার প্রেক্ষিতে
নিন্মোক্ত বিষয়াদির উপর আলোকপাত করবো:
- বিংশ শতাব্দীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পর্যালোচনা;
- জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া; এবং
- জনসংখ্যা ও উন্নয়ন: বিশ্ব কৌশল অনুসন্ধান।
উপরোক্ত তিনটি বিষয় অনুধাবনের জন্য আমরা প্রধানত: জাতিসংঘ প্রকাশিত তথ্যাদি ব্যবহার করবো।
বিংশ শতাব্দীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি : একটি পর্যালোচনা
এই শতকে বিশ্ব জনসংখ্যা ৪ গুন বেড়েছে; ইতিহাসের যে কোন সময়ের চেয়ে এই বৃদ্ধি দ্রæততম। ২০
শতকের গোড়ার দিকে বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১.৫ বিলিয়ন। ১৯২৭ সালে ইহা পৌছায় ২
বিলিয়নে, তারপর ১৯৬০ সালে ৩ বিলিয়নে, ১৯৭৪ সালে ৪ বিলিয়ন, ১৯৯৯ সালে ৬ বিলিয়ন এবং
২০১০ সালে ৬.৯ বিলিয়নে পেীঁছে। (সারণী ৩.১৬.১) এবং চিত্র ৩.১৬.১।
সারণী: ৩.১৬.১ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের জনসংখ্যা বৃদ্ধি ১৭০০-২০০০
অঞ্চল জনসংখ্যা (মিলিয়ন) শতকরা হার
১৭০০ ১৮০০ ১৯০০ ১৯৫০ ২০০০ ১৭০০ ১৮০০ ১৯০০ ১৯৫০ ২০০০
বিশ্ব ৭৯১ ৯৭৮ ১৬৫০ ২৫২১ ৬০৫৫ ১০০ ১০০ ১০০ ১০০ ১০০
উন্নত বিশ্ব ১৯১ ২৩৬ ৫৩৯ ৮১৩ ১১৮৮ ২৪ ২৪ ৩৩ ৩২ ২০
উত্তর
আমেরিকা
২ ৭ ৮২ ১৭২ ৩১০ - ১ ৫ ৭ ৫
ইউরোপ ১৬৩ ২০৩ ৪০৮ ৫৪৭ ৭২৯ ২১ ২১ ২৫ ২২ ১২
ওশানিয়া ২৬ ২৬ ৪৯ ৯৫ ১৪৯ ৩ ৩ ৩ ৪ ২
বিকাশশীল
বিশ্ব
৬০০ ৭৪২ ১১১১ ১৭০৯ ৪৮৬

৭৬ ৭৬ ৬৭ ৬৮ ৮০
আফ্রিকা ১০৬ ১০৭ ১৩৩ ২২১ ৭৮৪ ১৩ ১১ ৮ ৯ ১৩
এশিয়া ৪৭৮ ৬১১ ৯০৪ ১৩২১ ৩৫৬

৬০ ৬২ ৫৫ ৫২ ৫৯
ল্যাটিন
আমেরিকা ও
ক্যরিবিয়ান
১৬ ২৪ ৭৪ ১৬৭ ৫১৯ ২ ২ ৪ ৭ ৯
উৎস : চজই: ২০০০. চড়ঢ়ঁষধঃরড়হ ইঁষবঃরড়হ, ৫৪(১), ডধংযরহমঃরড়হ, উ.ঈ:চজই.
আজকের দিনে মানুষ অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় দীর্ঘ ও স্বাস্থ্যকর জীবন লাভ করেছে।
আধুনিক চিকিৎসা এবং জীবন যাত্রার উচ্চ মান বিশ্ব জুড়ে মৃত্যুর, বিশেষ করে শিশু ও নবজাতক মৃত্যুর
হার নাটকীয়ভাবে কমিয়ে দিয়েছে। ১৯৫০ সালের পর থেকে গড় আয়ু ৪৬ থেকে বেড়ে ৬৬ হয়েছে।
ছেলেমেয়ের সংখ্যা এবং সন্তানের মাঝে বিরতি দেয়ার ব্যাপারে নিজের পছন্দ কার্যকর করার ক্ষেত্রে
প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপকরণ অধিক সংখ্যক নারী ও পুরুষের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। কিন্তু সব কিছূর
পরও এখনও ১০০ কোটি মানুষ প্রতি ৬ জন থেকে ১ জন দারিদ্রের মধ্যে বসবাস করছে।








১৭৫০ ১৮০০ ১৮৫০ ১৯০০ ১৯৫০ ২০০০
কসঞঔাাখঁ ওহুঁ
ঈলúভ ওহুঁ
সতৎ
চিত্র ৩.১৬.১: উন্নত ও বিকাশশীল অঞ্চলের জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ১৭৫০-২০০০ (টঘঙ.১৯৯৮)
জন্ম হার কমার কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমলেও মানুষের প্রকৃত বৃদ্ধির সংখ্যা এখনো ঐতিহাসিক
সর্বোচ্চ পর্যায়ের কাছাকাছি ৬.৯ বিলিয়ন। এর কারণ হচ্ছে সন্তান উৎপাদনক্ষম নারীও পুরুষের সংখ্যা
এখন অনেক। জনসংখ্যা সবচাইতে বেশী বাড়ছে সাহারা সংলগ্ন আফ্রিকায়। এখানে নারীপিছু সন্তান
সংখ্যা ৫.৫। অন্যদিকে ইউরোপ উত্তর আমেরিকা ও জাপানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি কমে গেছে বা প্রায়
থেমে গেছে। শিল্পোন্নত দেশেগুলোর মধ্যে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে এখনও ব্যাপক জনসংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা
রয়েছে। তবে সেই বৃদ্ধির অধিকাংশই অভিগমনের ফল।
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী বিশ্ব জনসংখ্যা ২০১০ সালে ৬.৯ বিলিয়ন
থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে ১০.৭ বিলিয়নের মধ্যে কোন এক স্থানে পৌঁছাবে। এর অর্থ বিশ্ব জনসংখ্যা
বৃদ্ধির হার বিগত ৫০ বছরের মতো আগামী ৫০ বছরও অব্যাহত থাকবে। এ অবস্থায় এখনকার বার্ষিক
৭০.৮ মিলিয়ন বৃদ্ধি পর্যায়ক্রমে ২০২০-৫০ সাল নাগাদ ৬০.৪ মিলিয়নে নেমে আসবে। তারপর
২০৪৫-৫০ সাল নাগাদ ৩.৩ বিলিয়ন দাঁড়াবে (টঘঙ.১৯৯৯) চিত্র ৩.১৬.২।
৩ কসকূঁল (১৯৬০) ৪ কসকূঁল (১৯৯৯)
ঈষ্ট

ড়রয়ড়
কল’

চিত্র ৩.১৬.২: বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধি: প্রকৃত এবং প্রাক্কলিত, ১৯৫০-২০৫০।
(সূত্র: টঘঙ, ১৯৯৯)।
জনসংখ্যা পরিবর্তনের সাম্প্রতিক ধারা
স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি এবং পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থা সহজলভ্য হওয়ার কারণে এশিয়া,
আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার নারীরা এখন কম সংখ্যক সন্তানের মা হচ্ছেন এবং পরিবারের আকার
অতীতের যে কোন সময়ের চাইতে ছোট হচ্ছে। ১৯৬৯ সালে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল
(টঘঋচঅ) গঠনের পর থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সামগ্রিক জন্ম হার অর্ধেকে নেমে এসেছে,
নারীপিছু সন্তান গতি কমে এসেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সর্বোচ্চ হার তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোতে
যারা ক্রমবর্ধমান তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য মৌলিক সেবার ব্যবস্থা এবং কর্মসংস্থানের জন্য আদৌ তৈরী
নয়। এ রকম দেশ দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকাতেই বেশী তবে, প্রতিটি বিকাশশীল অঞ্চলেই একটি বা
দুটি আছে। আফ্রিকা এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার ৬২ টি দেশের ৪০ শতাংশের বেশী মানুষের বয়স
১৫ এর নীচে। আফ্রিকা একই সঙ্গে দ্রæততম জনসংখ্যা বৃদ্ধির অঞ্চল এবং একই সঙ্গে বয়সের বিন্যাসে
কনিষ্ঠতমও। আফ্রিকানদের গড় বয়স এখন ১৮। সারা বিশ্বে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীর সংখ্যা ১
বিলিয়নেরও বেশী, যারা আগামী প্রজন্মের বাবা-মা।
একই সময় দেখা যাচ্ছে, ৬১টি দেশে জন্ম হার প্রতিস্থাপন স্তরের সমান বা কম। একটা দীর্ঘ সময় পর
তাদের জনসংখ্যা কমে যেতে পারে। নি¤œ জন্মহারের দেশের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এই প্রবণতা মোট
যত সংখ্যক দেশে দেখা যাচ্ছে বিশ্ব জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের বাস। অবশ্য বিশ্বের কোথাও এখনও
জন্ম হার প্রতিস্থাপন স্তরে নামার তেমন কোনো লক্ষণ দেখা দেয়নি। বছরে ১ বিলিয়ন হারে শিশু জন্ম
আগামী আরো ৫০ বছর ধরে চলতে থাকবে। আর বৃদ্ধদের সংখ্যাও বাড়তে থাকায় মৃত্যু হারও উচ্চ
থাকবে। এই অবস্থা এখনই শিল্পোন্নত দেশগুলোতে শুরু হয়েছে। বিশ্বে এখন বৃদ্ধের সংখ্যা অতীতের
যে কোন সময়ের চাইতে বেশী। ইউএনএফপি এর প্রতিবেদনে জনসংখ্যার এই পরিবর্তন উল্লেখ করে
এ ব্যাপারে নাীতিমালা পরিবর্তনেরও আহবান জানিয়েছে। বিশ্বজুড়ে বিশেষত উন্নত দেশগুলো বৃদ্ধ হতে
থাকা জনসংখ্যার জন্য অর্থনৈতিক সহায়তা এবং স্বাস্থ্য পরিচর্যা নিশ্চিত করার এক চ্যালেঞ্জের মধ্যে
রয়েছে। তুলনামূলক ভাবে কম সংখ্যক তরুণ নিয়ে তারা এখন বৃদ্ধদের মধ্যেই কর্মক্ষম মানুষ খুঁজছে
এবং কর্মশক্তির অর্থনৈতিক প্রয়োজনে অভিবাসনকারীদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যে সব দেশে
এখন জন্ম হার বেশী তারা যদি কর্মক্ষম প্রজন্মের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান করতে পারে, তাহলে উৎপাদন
বৃদ্ধি এবং উন্নয়নের একটি সুযোগ সামনের দিন গুলোতে পাবে।
বিশেষজ্ঞরা যে রকম অনুমান করেছিলেন এইচ আইভি এইডস তার চাইতেও ভয়াবহ প্রভাব বিস্তার
করছে। অবস্থা সবচাইতে খারাপ সাহারা সংলগ্ন আফ্রিকায়। এ অঞ্চলে মৃত্যুর সব চাইতে বড় কারণ
হচ্ছে এইডস। শিশু মৃত্যু হার হ্রাস এবং গড় আয়ু বাড়ার ফলে যে অগ্রগতি হয়েছিল তা ধ্বংস করে
ফেলার উপক্রম করেছে এই রোগটি। আফ্রিকার ২৯টি দেশে বর্তমান গড় আয়ু এইডস বিহীন অবস্থার
যা হতে পারতো তার চেয়ে ৭ বছর কম। অবশ্য উচ্চ জন্মহারের কারণে ঐ সব দেশের জনসংখ্যা কমে
যাওয়ার আশঙ্কা নেই।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া
ভারসাম্যহীন ভোগ বিন্যাস এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বিশেষ করে শহরাঞ্চলে পানি ও জমি সম্পদের
ওপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করেছে। শতাব্দীর শেষ প্রান্তে এসে দেখা যাচ্ছে বিশ্বের ধনীতম এক পঞ্চমাংশ
মানুষ, দরিদ্রতম এক-পঞ্চমাংশের তুলনায় ৬৬ গুন বেশী সম্পদ ও পণ্য ভোগ করেছে। বর্ধিত জনসংখ্যা
ইতিমধ্যেই মাথাপিছু জমির পরিমাণ ১৯৫০ এর তুলনায় অর্ধেক নামিয়ে এনেছে। বিশ্বের মাথাপিছু
খাদ্যশস্য উৎপাদন গত এক দশক ধরে স্থির রয়েছে। পানি সংকট আর একটি বড় উদ্বেগের কারণ।
সাম্প্রতিক এক জরিপে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে যে ২০৫০ সাল নাগাদ পৃথিবীর এক-চতুর্থাংশ
মানুষ এমন সব দেশে বসবাস করবে, যেসব দেশে অব্যাহত পানি সঙ্কট লেগেই আছে অথবা বরাবর
সঙ্কটের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
জনসংখ্যার এই ক্রমবৃদ্ধি এবং ভারসাম্যহীন ভোগ সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাওয়া, বন উজাড় হওয়া,
তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং অন্যান্য গাছপালা ও পশুপাখি বিলুপ্তির মত পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব
ফেলবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে একুশ শতকে আমাদের প্রকৃতই এই সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হতে হবে
যে, বর্ধিত মানুষের জায়গা করে দিতে আমরা আর কত উদ্ভিদ, জীব প্রজাতি এবং পরিবেশের
ভারসাম্যকে ধ্বংস করব। অব্যাহত নগরায়ন এবং আন্তজার্তিক অভিগমন এ সংক্রান্ত নীতিমালা
সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সামনে নিয়ে এসেছে। এখন বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ শহরাঞ্চলে বাস করে।
১৯৬০ সালে এই সংখ্যা ছিল বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক। বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর শহরবাসীর সংখ্যা
৬ মিলিয়ন হারে বাড়ছে। অনুমান করা হচ্ছে ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ অর্থাৎ
৫ বিলিয়ন হবে শহরাঞ্চলের বাসিন্দা। যাদের বেশীর ভাগেরই বাস হবে মেগাসিটিতে যে গুলোর
লোকসংখ্যা ১ মিলিয়নের উর্দ্ধে। আজকের দিনে মেগা সিটির সংখ্যা ২৪ টি, ১৯৬০ সালে এ সংখ্যা ছিল
মাত্র ২ টি আর ২০১৫ সাল নাগাদ বাড়তে পারে ২৬ টিতে, যার মধ্যে ২২টিই হবে উন্নয়নশীল
দেশগুলোতে। এদের ১৮ টি হবে এশিয়ায়। ১৯৯৪ সালে কায়রোতে অনুষ্ঠিত জনসংখ্যা ও উন্নয়ন
বিষয়ক আন্তজার্তিক সম্মেলনে ২০ বছর মেয়াদি যে কর্ম পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়নে
তহবিল সংকট রয়েছে। প্রজনন স্বাস্থ্য সেবায় আরো তহবিল সংস্থানের প্রয়োজন রয়েছে।
ইউএনএফপি-এর প্রতিবেদনে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে, সরকারগুলো যদি আরো পদক্ষেপ এবং তহবিল
সংস্থানের উদ্যোগ না নেয়, তাহলে অব্যাহত দারিদ্র্য, লিঙ্গ বৈষম্য, এইডসের মত নতুন হুমকি পরিবেশ
বদলে যাওয়া এবং উন্নয়ন ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্পদ কমে যাওয়ার মত পরিস্থিতি নি¤œ জন্মহারের
কারণে অর্জিত অগ্রগতিকে নস্যাৎ করে দিতে পারে।
জনসংখ্যা ও উন্নয়ন: বিশ্ব কৌশল অনুসন্ধান
জনসংখ্যা বৃদ্ধির বেশীর ভাগই ঘটছে বিশ্বের দরিদ্রতম ও স্বল্প উন্নত দেশগুলোতে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির
গতি ধীর রাখা হবে কি না তারা ক্রমশ: ভালো সময়ের দিকে নাকি কঠিন সময়ের দিকে এগোবে,
এসবই নির্ভর করছে আগামী দশকে বিশেষত শিক্ষিতের হার বৃদ্ধি, লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠা এবং প্রজনন
স্বাস্থ্যসহ সামগ্রীক স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করতে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তার উপর। জনসংখ্যা
সবচাইতে বেশী হারে বাড়ছে সাহারা সংলগ্ন আফ্রিকায় এবং দক্ষিণ ও পশ্চিম এশিয়ার কিছু অংশে।
আর এই দিকে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও জাপানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি কমে গেছে বা প্রায় থেমে
গেছে। শিল্পোন্নত দেশ গুলোর মধ্যে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে এখনো ব্যাপক জনসংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা
রয়েছে। তবে সেই বৃদ্ধির বেশীর ভাগই অভিগমনের ফলে।
আমরা এমন এক অবস্থা নিয়ে ২১ শতকে প্রবেশ করছি, যাতে এখনো বিশ্বের ৪.৮ বিলিয়ন মানুষের
তিন-পঞ্চমাংশই মৌলিক পরিচ্ছন্নতা থেকে বঞ্চিত। প্রায় এক-তৃতীয়াংশই নিরাপদ পানি পায় না। এক
চতুর্থাংশেরই উপযুক্ত বাসগৃহ নেই আর আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত প্রায় এক-পঞ্চমাংশ মানুষ।
স্বল্পোন্নত অঞ্চলের এক-পঞ্চমাংশ শিশু স্কুলে যেতে পারে না।
অপচয়ী ও ভারসাম্যহীন ভোগ এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাবার ও পানির চাহিদা এই বসুন্ধরাকে
বর্ধিত চাপের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে উষ্ণতা বৃদ্ধির কুফল। উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্র
পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং ঘন ঘন ঝড় ও বন্যা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলবে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমায় যে সুফল পাওয়ার কথা ছিল দারিদ্র্য, লিঙ্গ বৈষম্য, এইডস, উন্নয়নের জন্য
সম্পদের সীমাবদ্ধতা প্রভৃতির সমষ্ঠিগত প্রভাব, সেটাকে নষ্ট করে দেয়ার উপক্রম করেছে।
কায়রোর মতৈক্য
সৌভাগ্যের বিষয় হচ্ছে করণীয় সম্পর্কে বিশ্বে একটি মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৯৪ সালে
কায়রোতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক জনসংখ্যা ও উন্নয়ন সম্মেলনে উপস্থিত ১৭৯টি দেশ একমত হয়েছিল
যে, উন্নয়ন ও জনসংখ্যা অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। তারা এ নিয়েও মতৈক্যে পৌঁছেছিল যে নারীর
ক্ষমতায়ন এবং শিক্ষা ও প্রজনন স্বাস্থ্য সহ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার চাহিদা মেটানো, ব্যক্তির বিকাশ ও
সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। লিঙ্গগত সমতা প্রতিষ্ঠা, নারীর প্রতি সহিংসতা নির্মূল এবং তার
প্রজনন ক্ষমতার উপর তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাই হলো জনসংখ্যা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত নীতিমালার মৌলিক
বিষয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে সার্বজনীন শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনাসহ প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা ও সাধারণ
স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং নবজাতক, শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার কমানো।
কায়রো সম্মেলনের পর থেকে এ পর্যন্ত এ সব বিষয়ের অগ্রগতি পর্যালোচনায় দেখা যায় আইসিপিডির
এজেন্ডাগুলো বাস্তবভিত্তিক এবং বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা সত্তে¡ও এগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে। অগ্রগতি
পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে বস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের উদ্যেগের উপর প্রতিবেদন
বিশ্বজুড়ে বিশেজ্ঞদের বৈঠক এবং হেগে ইউএনএফপিএ আয়োজিত একটি আন্তজার্তিক ফোরাম। এ
সবের সূত্র ধরে আরো অগ্রগতির জন্য করণীয় নির্ধারণে সবশেষে ১৯৯৯ এর ৩০জুন থেকে ২ জুলাই
পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশন।
দারিদ্র দূরীকরণ, মৌলিক ও সামাজিক প্রয়োজনগুলো মেটানো, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, সম্পদ ও
বনাঞ্চল সংরক্ষণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে পরিকল্পনা নির্ধারণে কতগুলো জনতাত্তি¡ক উপাদান যেমন -কম বয়সী ও
বৃদ্ধ বয়সীদের নজির বিহীন সংখ্যা নগরায়ন এবং আন্তজার্তিক অভিগমন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অহিসিপিডির
পর গত ৫ বছরে অনেক দেশই জনসংখ্যা সংক্রান্ত বিষয়গুলো সন্নিবেশিত করে নতুন উন্নয়ন পরিকল্পনা
গ্রহণ করেছে। প্রায় অর্ধেক দেশ তাদের জনসংখ্যা সংক্রান্ত তাদের নীতিমালাগুলো পুনর্বিবেচনা করছে
এবং এক-তৃতীয়াংশেরও বেশী দেশ আইসিপিডির লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে মিলিয়ে তাদের নীতি পুননির্ধারন
করেছে।
লিঙ্গগত সমতা প্রতিষ্ঠা এবং নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ দেশ নতুন নীতি বা
আইন চালু করেছে। নারীর অধিকার রক্ষায় ল্যাটিন আমেরিকার সবগুলো দেশ হয় নতুন আইন বা নীতি
প্রবর্তন করেছে অথবা প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন সূচিত করেছে। বাংলাদেশসহ অর্ধেকেরও বেশী এশীয়
দেশ এবং বেশ কয়েকটি আফ্রিকান দেশ উত্তরাধিকার, সম্পত্তি ও কর্মসংস্থান প্রভৃতি ক্ষেত্রে নারীর
অধিকার নিশ্চিত করতে আইন প্রনয়ন করেছে। যৌন ও প্রজনন আচরণ এবং পারিবারিক ও সামাজিক
ভ‚মিকায় পুরুষের দায়দায়িত্ব বাড়াতেও পদক্ষেপ নিয়েছে বেশ কিছু দেশ।
লিঙ্গগত সহিংসতা এবং অন্যান্য ক্ষতিকর সনাতন রীতিনীতি বিলোপের ব্যাপারে উদ্যোগ বেড়েছে।
নারীর খাৎনা, ধর্ষন, জোর করে বিয়ে, গার্হস্থ্য সহিংসতা, যৌতুকের কারণে হত্যা ও সহ মরণ প্রথা
প্রভৃতি বন্ধ করতে অনেক দেশই বা পারিবারিক কোড সংশোধন করেছে। ১৫ টি আফ্রিকান দেশে নারীর
খাৎনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
প্রজননশীলতা, মরণশীলতা, এবং অভিগমনের জনমিতিক প্রক্রিয়া একটি জনসংখ্যা বা দেশের জৈবিক,
সাংস্কৃতিক, সামাজিক, ভৌগোলিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়। এই সমস্ত
উপাদান বা নিয়ামক জনমিতিক প্রক্রিয়াকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে। এ ধরণের ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়ার কারণে বিশ্ব জনসংখ্যা বিশেষ আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হয়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে।
এই পাঠে আমরা জনসংখ্যা পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন প্রচেষ্টার প্রেক্ষিতে নিন্মোক্ত বিষয়াদির উপর
আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি।
- বিংশ শতাব্দীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পর্যালোচনা; এবং
#NAME?
পাঠোত্তর মূল্যায়ন: ৩.১৬
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন:
১. শূন্যস্থান পূরণ করুন:
১.১. বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে প্রায় ২ মিলিয়ন জনসংখ্যা শতাব্দীর শেষে ------ মিলিয়নে
দাঁড়িয়েছে।
১.২. ১৯৯৯ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ------- মিলিয়ন জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটেছে।
১.৩. ১৯৫০ সালের পর থেকে গড় আয়ু ৪৬ থেকে বেড়ে ------- হয়েছে।
১.৪. জনসংখ্যা সবচাইতে বেশী বাড়ছে ------ সংলগ্ন আফ্রিকায়।
১.৫. আফ্রিকা ------ ও ল্যাটিন আমেরিকার ৬২ টি দেশের ৪০ শতাংশের বেশী মানুষের বয়স ১৫
এর নীচে।
২. সত্য হলে ‘স' মিথ্যা হলে ‘মি' লিখুন:
২.১. বিশ্বে এখন বৃদ্ধের সংখ্যা অতীতের যে কোন সময়ের চাইতে বেশী।
২.২. সাহারা সংলগ্ন আফ্রিকা অঞ্চলে মৃত্যুর সব চাইতে বড় কারণ হচ্ছে ক্যান্সার।
২.৩. বিশ্বের মাথাপিছু খাদ্যশস্য উৎপাদন গত এক দশক ধরে স্থির রয়েছে।
২.৪. বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর শহরবাসীর সংখ্যা ৬ মিলিয়ন হারে বাড়ছে।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন:
১. জনমিতিক পরিবৃদ্ধিকাল তত্ত¡ বা ধারা কাকে বলা হয়?
২. জনমিতিক পরিবৃদ্ধিকাল তত্ত¡ পর্যায় সমূহের বৈশিষ্ট্য কি কি?
রচনামূলক প্রশ্ন:
১. বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে উন্নয়ন সমম্বয় কৌশল সমূহ নির্দেশ কর।
২. জনসংখ্যা পরিবর্তনের সাম্প্রতিক ধারা বর্ণনা করুন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া কি?
৩. জনসংখ্যা ও উন্নয়ন বিষয়ক বিশ্ব কৌশল অনুসন্ধান সম্পর্কিত কায়রোর মতৈক্য সম্পর্কে বর্ণনা
দিন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]