বিশ্ব জনসংখ্যার প্রবণতা কেমন?
প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার কি?
অংশীদারিত্ব ও ক্ষমতায়নের আত্ম সম্পর্ক কি?


উচ্চ জন্ম ও মৃত্যু হার থেকে নি¤œ জন্ম ও মৃত্যুহারের দিকে ক্রান্তিকাল চলছে এবং অনেক দেশই এটা
অর্জন করেছে। প্রতিষেধক ব্যবস্থা স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি মৃত্যু হার বিশেষত শিশু মৃত্যু হার (দুইতৃতীয়াংশ) নাটকীয়ভাবে হ্রাস করেছে। ফলে গত অর্ধশতকে বিশ্বে গড় আয়ু ৪৫ থেকে বেড়ে ৬৬
হয়েছে। অবশ্য এটা অগ্রগতিহীন অঞ্চল ও দেশভেদে অন্যরকম।
উর্বরতাও কমেছে তবে সমহারে নয়। বিশ্বের ৬১ টি দেশে যেখানে জনসংখ্যার ৪৪ শতাংশের বাস,
দম্পতিরা তাদের প্রতিস্থাপন সংখ্যাও কম অর্থ্যাৎ দুই এর কম সন্তানের বাবা-মা। কিন্তু এই মুহ‚র্তেও
যদি প্রতিস্থাপন হার অর্জন করা যায় তারপরও বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধি আগামী কয়েক দশক অব্যাহত
থাকবে, কারণ বিপুল সংখ্যক ছেলে মেয়ে এখন সন্তান উৎপাদনের চূড়ান্ত বয়সে উপনীত হচ্ছে। বিশ্ব
জনসংখ্যার সম্ভাব্য বৃদ্ধির দুই-তৃতীয়াংশ হবে এই গতির কারণে। যেসব দেশে উর্বরতা হ্রাস হয়েছে দ্রæত
গতিতে, সেখানেই এটা ঘটবে বেশী। নারীর প্রথম জন্ম দেবার বয়স ১৮ থেকে বাড়িয়ে ২৩শে উন্নীত
করার মাধ্যমে এই গতি ৪০ শতাংশেরও বেশী কমানো সম্ভব।
৫০ দশকের গোড়ার দিকে উন্নত দেশ গুলোতে দম্পত্তিপিছু সন্তানের সংখ্যা ছিল ২.৮ জন। আজ সেটা
হয়েছে ১.৬ জন। স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে ৫০ দশকে নারীপিছু সন্তান সংখ্যা যেখানে ছিল ৬.২, আজ
সেটা দাড়িয়েছে এরও কম। ২০৪৫ সাল নাগাদ এটা ২.১ এরও কম হবে বলে ধারণা করা হয়েছে। গত
৫০ বছর উর্বরতা সবচাইতে দ্রæত গতিতে কমেছে ল্যাটিন আমেরিকায় (৫.৯ থেকে ২.৭) ও এশিয়ায়
(৫.৯ থেকে ২.৬), মধ্য গতিতে কমেছে উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে (৬.৬ থেকে ৩.৫) এবং আরো
ধীর গতিতে কমেছে সাহারা সংলগ্ন আফ্রিকায় (৬.৫ থেকে ৫.৫)।
হ্রাসমান জন্ম হার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরী করে। কারণ একদিকে বেড়ে উঠা যুবক বয়সীরা
কর্মশক্তিতে যুক্ত হচ্ছে আর অন্যদিকে শিশু জন্মের হার কমে যাচ্ছে। পূর্ব এশিয়া ইতিমধ্যেই জনসংখ্যার
এই বোনাসের ফসল ঘরে তুলতে শুরু করেছে। তাদের গার্হস্থ্য ও জাতীয় সঞ্চয় ও বিনিয়োগ এবং
সামাজিক খাতে ব্যয় বেড়েছে। আগামী দুএক দশকে দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকাও অনুরূপ সৌভাগ্যের
অধিকারী হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটা অর্জন করতে হলে শিক্ষা ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা
শক্তিশালী করতে হবে এবং অন্যান্য সহায়ক কার্যক্রম হাতে নিতে হবে।
অবশ্য বিশ্বজুড়ে চলতে থাকা একটি আর্থিক বিপর্যয় সামাজিক খাতে বিনিময়ের মাধ্যমে এই অর্জনকে
ব্যাহত করতে পারে। ইউএনএপপি-এ পরিচালিত এক জরিপ থেকে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় যে আর্থিক সঙ্কট শুরু হয়েছে তার ফলে লাখ লাখ মানুষ দারিদ্র ও দৈন্যদশায় নিক্ষিপ্ত
হয়েছে। সামাজিক খাতে ব্যয় হ্রাস পাওয়ায় এক্ষেত্রে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, বিশেষ
করে নারীর অধিকার ও তার প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার খর্ব হয়েছে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, এইডস
এবং এসটিডি নিরোধ কর্মসূচীতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে।
উন্নত স্বাস্থ্যসেবা এবং পছন্দের সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়ার বিশ্ব জুড়ে উর্বরতার হার প্রত্যাশার চেয়েও দ্রæত
হ্রাস পেয়েছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক দপ্তরের জনসংখ্যা শাখার হিসাব মতে ২০৫০ সাল
নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা হবে ৮.৯ বিলিয়ন। অথচ ১৯৯৬ সালে ইহা অনুমান করা হয়েছিল ৯.৪
বিলিয়ন। তবে এর সবটুকুই সুখবর নয়; জনসংখ্যায় এই হ্রাসের এক-তৃতীয়াংশ ঘটবে সাহারা সংলগ্ন
এবং ভারতীয় উপমহাদেশের কিছু কিছু অংশে দ্রæত ছড়িয়ে পড়া এইডস ছাড়া যা হওয়ার কথা ছিল তার
চেয়ে ৭ বছর কম। অবশ্য এই দেশ গুলোতে উচ্চ জন্ম হার অব্যাহত থাকায় জনসংখ্যা হ্রাস পাবে না।
বতসোয়ানায় প্রতি ৪ জন প্রাপ্ত বয়স্কের একজন এইডস আক্রান্ত এবং সেখানে ৮০ দশকের শেষে
যেখানে গড় আয়ু ছিল ৬১ বছর আজ সেখানে দাঁড়িয়েছে ৪৭ বছর। ধারণা করা হচ্ছে ২০০৫-১০ সাল
নাগাদ সেটা দাঁড়াবে ৩৮ এ। তারপরও ২০৫০ সাল নাগাদ সেখানকার জনসংখ্যা এখনকার প্রায় দ্বিগুন
হবে। এইডস সংক্রামণ হ্রাস বা একেবারে বন্ধ করতে হলে দরকার প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন
ও এই সংক্রামণের পরিণতি সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি। যেহেতু সংক্রমণের অর্ধেকেরও
বেশী ঘটে অনুর্ধ্ব ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে, তাই জরুরী ভিত্তিতে তাদের এ সংক্রান্ত চাহিদা মেটানোর
ব্যবস্থা করা উচিত।
জনবিন্যাসে পরিবর্তন
অঞ্চলভেদে বৃদ্ধির হারে ভিন্নতা, বর্ধিত নগরায়ন এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন লক্ষনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে
উঠায় বিশ্ব জনবিন্যাসে পরিবর্তন ঘটছে। যেমন ১৯৬০ সালে বিশ্ব জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ বাস করত
উন্নয়নশীল দেশ গুলোতে। এখন এটা ৮০ শতাংশ। আর জনসংখ্যা বৃদ্ধির ৯৫ শতাংশ ঘটে এসব
দেশে।
১৯৬০ সালের তুলনায় আফ্রিকার জনসংখ্যা বেড়ে দ্বিগুন হয়েছে এবং দ্রæততম হারে বাড়ছে। ১৯৬০
সালে ইউরোপের জনসংখ্যা ছিল আফ্রিকার দ্বিগুন অথচ অনুমান করা হচ্ছে ২৯৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে
আফ্রিকানের সংখ্যা হবে ইউরোপিয়ানদের ৩ গুন। বিশ্বের সবচাইতে জনবহুল অঞ্চল এশিয়ার জনসংখ্যা
১৯৬০ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দ্বিগুন হয়েছে। ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় দেশ গুলোতেও
তাই হয়েছে। অন্যদিকে উত্তর আমেরিকার জনসংখ্যা বেড়েছে ৫০ শতাংশ আর ইউরোপের মাত্র ২০
শতাংশ। এই দুই অঞ্চলের জনসংখ্যা এখন মোটামুটি স্থির। সামাজিক পরিবর্তনের চালিকা শক্তি হচ্ছে
নগরগুলো আর উন্নয়নশীল দেশ গুলোতে এ গুলো ক্রমাম্বয়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে। ১৯৬০ সালে প্রতি ৩
জন মানুষের একজন ছিলেন নগরবাসী, বর্তমানে এই অনুপাত প্রায় অর্ধেক। অনুমান করা হচ্ছে ২০৩০
সাল নাগাদ ৬০ শতাংশেরও বেশী মানুষ হবেন নগরবাসী। এই সময়ে ১ মিলিয়নের বেশী জনসংখ্যার
মেগাসিটির সংখ্যাও বাড়বে। ১৯৬০ সালে বিশ্বে মেগাসিটি ছিল মোটে দুটি। আজ এই সংখ্যা ২৪টি
আর ২০১৫ সাল নাগাদ এইসংখ্যা হবে ২৬ টি। এর মধ্যে ২২টির অবস্থান হবে স্বল্পোন্নত অঞ্চলে। এর
১৮ টিই এশিয়ায়।
চিত্র: ৩.১৭.১: বিশ্ব জনসংখ্যার আঞ্চলিক বিন্যাস, ১৯৫০-২০৫০, (সূত্র: টঘঙ, ১৯৯৯)।
অভিবাসীর সংখ্যা এবং তাদের কারণে তৈরী হওয়া ইস্যু দুটোই বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্বের সকল অঞ্চলেই
আন্তজার্তিক অভিগমন এখন নীতিনির্ধারণী এজেন্ডার উপরে স্থান পাচ্ছে। ১৯৬৫ থেকে ১৯৯০ এর
মধ্যে অভিবাসীর সংখ্যা গড়ে ৭৪ মিলিয়নের স্থলে ১.২ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। অভিবাসী শ্রমিকরা তাদের
নিজ দেশে প্রতি বছর গড়ে ৭০০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আকারে পাঠাচ্ছে। শিল্পোন্নত অনেক দেশই
এসব শ্রমিকের শ্রম ও দক্ষতার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। নারী অভিগমনকারীর সংখ্যাও বাড়ছে।
২০১০ সালের হিসাবে মোট অভিগামীর অর্ধেকই নারী। এরা আবার শোষণ ও নির্যাতনেরও শিকার
হচ্ছে।
ক্রমবর্ধমান মানুষের জন্য খাদ্য ও পানির ব্যবস্থা করা এখন একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। এক দশকেরও
বেশী সময় ধরে বিশ্বে খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ স্থির হয়ে পড়ছে। সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুযায়ী
২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ এমন দেশগুলোর বাসিন্দা হবে, যেসব দেশে
পরিষ্কার পানির অভাব লেগেই থাকবে।
প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার
কায়রো সম্মেলনে প্রজনন অধিকারের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে তাতে রয়েছে বিয়ে, সন্তান
গ্রহণ দুই সন্তানের মধ্যেকার বিরতি ইত্যাদি ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার:
যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যের সর্বোচ্চ মান অর্জনের অধিকার এবং যৌন নির্যাতন ও বলপ্রয়োগ থেকে মুক্তি।
মানসম্মত প্রজনন স্বাস্থ্য সেবার চাহিদা আগের যে কোন সময়ের চাইতে বেশী। সুতরাং এমন একটি
সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি গুরত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যেখানে নারী ও পুরুষ
তাদের জীবন সম্পর্কে স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। গর্ভধারণ সংক্রান্ত জটিলতায় বিকাশশীল
দেশগুলোতে প্রতিবছর ০.৬ মিলিয়ন নারী মৃত্যুবরণ করে এবং আরো প্রায় ১ মিলিয়ন নারী সংক্রমণ বা
অন্য কোন রোগে আক্রান্ত হন। অনিরাপদ প্রক্রিয়ায় গর্ভপাত করাতে গিয়ে প্রতিবছর প্রায় মারা যায় ৭০
হাজার নারী। বিশ্বে প্রতিবছর নিরাময়যোগ্য যৌনবাহিত রোগে আক্রান্ত হন ত্রিশ মিলিয়নেরও বেশী
মানুষ। প্রতি মিনিটে নতুন করে ১১ জনের মধ্যে এইচআইভি সংক্রামণ ঘটেছে। প্রতি বছর বিশ্বে ১৭
মিলিয়ন নারী গর্ভধারন করছেন এবং এর অর্ধেকই হয় অবাঞ্চিত না হয় অসময়োচিত। ৩৫ মিলিয়নেরও
বেশী নারী নিরাপদ ও কার্যকর জন্মনিরোধক পদ্ধতি লাভে বঞ্চিত থাকেন। প্রতি বছর ১৩ কোটি শিশু
জম্মের মধ্যে অর্ধেক ক্ষেত্রেই প্রশিক্ষিত সহায়তাকারী থাকেন না। নারীদের মধ্যে অর্ধেকের বেশির ভাগই
জীবনে কোন না কোনো ধরনের লিঙ্গগত সন্ত্রাসের শিকার হন। প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ বালিকা বা
তরুণী এফজিএম এর ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করে। বিশ্বে মোট ১ বিলিয়ন মানুষ লিখতে বা পড়তে পারে
না। এদের অর্ধেকই নারী।
কায়রোতে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে বিভিন্ন দেশ প্রজনন স্বাস্থ্যে সেবা উন্নত করতে এবং সেবা গ্রহণকারী
কেন্দ্রিক সেবা প্রদান এবং নতুন নতুন তথ্য দিয়ে তাদের পছন্দের অবকাশ সৃষ্টির জন্য নানান পদক্ষেপ
নিয়েছে।
২০০৫ থেকে ২০১০ এর মধ্যে উন্নয়নশীল দেশ গুলোতে জন্মনিরোধক ব্যবহার বছরে ৩.৫ শতাংশ
হারে বেড়েছে। তবে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ সক্ষম দম্পত্তির জন্মনিরোধক চাহিদা এখনও অপূরিত থেকে
যাচ্ছে। চাহিদা অপূরিত থাকার এ হার সাহারা সংলগ্ন আফ্রিকায় সর্বোচ্চ (২৯ শতাংশ) আর সর্বনি¤œ
উত্তর আমেরিকা ও ক্যারিবীয়ায় (১৮ থেকে ২০ শতাংশ)। পাশাপাশি যৌনবাহিত সংক্রমণ প্রতিরোধ
এবং গর্ভধারন রোধে নারী ও পুরুষের জন্য আরো উন্নত জন্মশাসন পদ্ধতি বের করতে আরো গবেষণা
দরকার হয়ে পড়েছে।
এখন যে সমস্যাটি মোকাবেলা করা কঠিন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে তা হলো মাতৃমৃত্যুর হার কমানো।
পরিচালিত সমীক্ষা ও অর্জিত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, উন্নত প্রসূতি স্বাস্থ্যসেবার জন্য দরকার উন্নত
সাধারণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, জরুরী সেবা দান ব্যবস্থা এবং কার্যকর সেবা নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী।
এগুলো সবই নীতিগত ভাবে অগ্রাধিকার প্রদান ও প্রয়োজনীয় সম্পদ সংকুলান সাপেক্ষে। অবিবাহিত
কিশোর কিশোরী এবং বিবাহিত বা অবিবাহিত প্রাপ্ত বয়স্ক নারী পুরুষের কাছে উপযুক্ত তথ্য এবং সেবা
পৌঁছে দেওয়া অনেক দেশেই একটি সমস্যা।
১৯৯৯ সালে আইসিপিডির পঞ্চম বার্ষিক পর্যালোচনায় প্রতি-প্রসবের সময় দক্ষ ও সুপ্রশিক্ষিত
সেবাদানকারীর সেবা নিশ্চিত করতে প্রজনন সংক্রান্ত আইন সংস্কার করতে ও এই খাতে বরাদ্দ বাড়াতে:
এ সব কর্মসূচীতে বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও বেসরকারী খাতকে জড়িত করতে: পুরুষের
দায়দায়িত্ব বাড়াতে, সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা হিসাবে এইচআইভি
এইডসসহ যৌনবাহিত রোগ নির্ণয় ব্যবস্থা ও এ ব্যাপারে পরামর্শ সেবা নিশ্চিত করতে আহবান
জানিয়েছে।
ঐ পর্যালোচনায় সরকার গুলোর প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে দায়িত্বশীল যৌন আচরণ উৎসাহিত
করতে, শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন বন্ধ করতে, শরণার্থীদের জন্যও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা ও পরামর্শ
নিশ্চিত করতে এফজিএম এর মত ক্ষতিকর সনাতন আচার বিলোপ করতে এবং কিশোর বয়সীরা যাতে
স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও দায়িত্বশীল জীবন নির্বাহ করতে পারে সেজন্য তথ্য ও সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করারও
আহবান জানানো হয়।
অংশীদারিত্ব ও ক্ষমতায়ন
কায়রো এজেন্ডাকে এগিয়ে নেবার ক্ষেত্রে এনজিও, সংসদ সদস্য, ধর্মীয় নেতা, বেসরকারী খাত ও
সামাজিক শক্তিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করতে পারে। অনেক সরকারই বিশেষত পৌছানো এমন
সব জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসূচী প্রনয়ন ও সেবা প্রদানে সুশীল সমাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
আইসিপিডির পর গত ক'বছরে সুশীল সমাজ ও সরকারের মধ্যে সম্পর্ক উত্তরোত্তর বেড়েছে। প্রজনন
স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার এনজিওর সংখ্যা বেড়েছে এবং তাদের বর্ধিত উপস্থিতি এক্ষেত্রে শক্তিশালী
প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। অনেক দেশেই এনজিওগুলো কেবল যে প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার
এবং লিঙ্গগত সমতা প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভ‚মিকা রাখছে তাই নয়, পাশাপাশি নারীর সামাজিক মর্যাদা
প্রতিষ্ঠাতে অবদান রাখছে। আইসিপিডি কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের কার্যক্রম তদারকিতেও
গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করছে।
তবে সাফল্য নির্ভর করছে পারস্পরিক সহায়তা পুষ্ট অংশীদারিত্ব, অংশীদারিত্বের বিষয়টি কার্যকরভাবে
এগিয়ে নেয়া এবং যৌথ অংশী দারিত্বের ব্যাপারে সরকারী কর্মকর্তাদের সমর্থন পাওয়ার উপরে। ১৯৯৮
সালে চালানো এক জরিপে দেখা যায়, ১১৪ টি দেশের মধ্যে মাত্র ৪৯ টি দেশ নীতি-নির্ধারন ও প্রকল্প
বাস্তবায়নে এনজিওগুলোকে জড়িত করার ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কোন ব্যবস্থা নিয়েছে (টঘঙ,১৯৯০)।
কায়রো সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সরকারগুলো একমত হয়েছিল যে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর
মধ্যেমেই পরিবার পরিকল্পনা সহ প্রজনন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং সম্পদের সীমাবদ্ধতার মধ্যে এ ধরনের
একীভ‚ত ব্যবস্থা চালু করা অনেক দেশের জন্যই একটি চ্যালেঞ্জ। অনেক উন্নয়নশীল দেশই স্বাস্থ্যসেবা
এবং পরিবার পরিকল্পনা সেবা সম্পূর্ণ আলাদাভাবে দেয়া হয়। এই দুই ক্ষেত্রের প্রশাসন, কর্মী, সেবা
সরবরাহ ব্যবস্থা সবই আলাদা। সুতরাং একই ছাদের নীচে থেকে একই কর্মী বাহিনী নিয়ে এই দুটির
সমম্বিত ব্যবস্থা চালু করা একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। সম্পদের সীমাবদ্ধতা একে আরো কঠিন করে তুলছে।
অবশ্য অনেক দেশই এ ধরনের সমম্বিত ব্যবস্থা চালুর ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। সবগুলো
দেশকেই এটা করতে সক্ষম করে তোলা একটি অগ্রাধিকার (টঘঙ.১৯৯৯)।
১৯৯৪ সালে কায়রোয় এবং নিউইয়র্কে পঞ্চম বার্ষিক মূল্যায়নে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য
দরকার আরো রাজনৈতিক অঙ্গীকার, জাতীয় সক্ষমতা তৈরী, বর্ধিত আন্তর্জাতিক সাহায্যে ও বর্ধিত
জাতীয় সম্পদ সৃষ্টি। তাছাড়া এনজিও, ধর্মীয় গ্রæপ, সংসদীয় নেতা, প্রশিক্ষক ও বেসরকারী খাতের সঙ্গে
কার্যকর ও স্বচ্ছ অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার উপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
কায়রোতে সরকারগুলো একমত হয়েছে যে, জনসংখ্যা ও প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কর্মকান্ডের জন্য
২০০০ সালের মধ্যে প্রতিবছর ১৭০০ কোটি ডলার প্রয়োজন হবে। এর দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ১১৩০
বিলিয়ন ডলারের সংস্থান করবে উন্নয়নশীল দেশগুলো নিজেরাই এবং বাকী ৫৭০ বিলিয়ন ডলার আসবে
দাতাদের কাছ থেকে।
এ সময়ের মধ্যে বিকাশশীল দেশগুলো আভ্যন্তরীণভাবে ৭৭০ বিলিয়ন টাকা বিনিয়াগের অঙ্গীঁকার
করেছে। এটা তাদের লক্ষমাত্রার দুই-তৃতীয়াশ। অবশ্য এ অঙ্গীঁকার বড় কয়েকটি দেশের মধ্যে সীমিত।
শীর্ষস্থানীয় দাতাদের মধ্যে নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে ও ডেনমার্ক জনসংখ্যা সহ অন্যান্য উন্নয়ন সাহায্য
খাতে তাদের মোট জাতীয় আয়ের একটা বড় অংশ বরাদ্দ করেছে। অন্যদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া,
ফিনল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য জনসংখ্যা খাতে তাদের অংশীদারিত্ব উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে শুরু করেছে।
আর যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে তাদের সহায়তার মাত্রা হ্রাস করেছে, যদিও তারা এখনো এক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয়
দাতা (টঘঙ.১৯৯৯) দেশ।
পাঠসংক্ষেপ:
উচ্চ জন্ম ও মৃত্যু হার থেকে নি¤œ জন্ম ও মৃত্যুহারের দিকে ক্রান্তিকাল চলছে এবং অনেক দেশই এটা
অর্জন করেছে। প্রতিষেধক ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি মৃত্যু হার বিশেষত শিশু মৃত্যু হার (দুইতৃতীয়াংশ) নাটকীয়ভাবে হ্রাস করেছে। ফলে গত অর্ধশতকে বিশ্বে গড় আয়ু ৪৫ থেকে বেড়ে ৬৬
হয়েছে।
হ্রাসমান জন্ম হার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরী করে। কারণ একদিকে বেড়ে উঠা যুবক বয়সীরা
কর্মশক্তিতে যুক্ত হচ্ছে আর অন্যদিকে শিশু জন্মের হার কমে যাচ্ছে। পূর্ব এশিয়া ইতিমধ্যেই জনসংখ্যার
এই বোনাসের ফসল ঘরে তুলতে শুরু করেছে। তাদের গার্হস্থ্য ও জাতীয় সঞ্চয় ও বিনিয়োগ এবং
সামাজিক খাতে ব্যয় বেড়েছে। আগামী দুএক দশকে দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকাও অনুরূপ সৌভাগ্যের
অধিকারী হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটা অর্জন করতে হলে শিক্ষা ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা
শক্তিশালী করতে হবে এবং অন্যান্য সহায়ক কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। এই পাঠে জনসংখ্যা পরিকল্পনা
এবং উন্নয়নের আলোকে জনসংখ্যার প্রবণতা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন: ৩.১৭
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন:
১. শূন্যস্থান পূরণ করুন:
১.১. হ্রাসমান জন্ম হার ------- সমৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরী করে।
১.২. জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক দপ্তরের জনসংখ্যা শাখার হিসাব মতো ২০৫০ সাল নাগাদ
বিশ্বের জনসংখ্যা হবে ------- বিলিয়ন।
১.৩. ১৯৯০ সালের হিসাবে মোট অভিগামীর ------- নারী।
১.৪. ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫ এর মধ্যে উন্নয়নশীল দেশ গুলোতে জন্মনিরোধক ব্যবহার বছরে -------
শতাংশ হারে বেড়েছে।
১.৫. ১১৪ টি দেশের মধ্যে মাত্র ------- টি দেশ নীতি-নির্ধারন ও প্রকল্প বাস্তবায়নে এনজিওগুলোকে
জড়িত করার ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কোন ব্যবস্থা নিয়েছে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন:
১. বিশ্ব জনসংখ্যার প্রবণতা কেমন?
২. প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার কি?
৩. অংশীদারিত্ব ও ক্ষমতায়নের আত্ম সম্পর্ক কি?
রচনামূলক প্রশ্ন:
১. বিশ্ব জনসংখ্যার প্রবণতার ধারা বর্ণনা করুন।
২. প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার এবং অংশীদারিত্ব ও ক্ষমতায়ন সম্পর্কে বর্ণনা দিন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]