জনপদ প্যাটার্ন বলতে কি বোঝায় ? বিক্ষিপ্ত এবং গুচছবদ্ধ জনপদ প্যাটার্ন সম্বন্ধে আলোচনা করুন।


জনপদ প্যাটার্ন
কোন অঞ্চলে একটি জনপদের সাথে অপর জনপদের অবস্থানিক সম্পর্ক জনপদ প্যাটার্নের সৃষ্টি করে। জনপদ
প্যাটার্ন কোন অঞ্চলের জনপদের বিভিন্ন প্রকার একক, যেমন খামার, হ্যামলেট, গ্রাম, শহর ইত্যাদির বিন্যাস বা
ইত্যাদির বিভিন্ন সংমিশ্রণের বিন্যাসকে বোঝায়। প্রকৃতপক্ষে জনপদ প্যাটার্ন বিভিন্ন আকারের জনসংখ্যার
স্থানিক বিন্যাস নির্দেশ করে যা জনপদ আকারে ভূপৃষ্ঠে প্রকাশ পায়। জনপদ এককগুলো মানচিত্রে বিন্দু হিসেবে
চিহ্নিত করা হয়। আবদ্ধহীন একত্রিত কতকগুলো বিন্দুর বিন্যাসের মধ্যে পাটার্ন প্রকাশ পায় (প্রত্যেকটি বিন্দু
এক একটি জনপদ নির্দেশ করে)। মানচিত্রে অনেকগুলো বিন্দুর অবস্থান বিশেষ নকশা বা প্যাটার্নরূপে দৃশ্যমান
হয়। বিন্দু শূন্য মাত্রা নির্দেশ করে এবং বিন্দুগুলোর একটির সাথে অন্যটির আপেক্ষিক দূরত্ব বা ব্যবধান প্যাটার্ন
নির্ধারণ করে।
সমীক্ষা এলাকার স্কেল বা আয়তন ভেদে জনপদ প্যাটার্ন নির্ধারণের একক ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। হ্যামলেট বা
গ্রামের জনপদ প্যাটার্ন নির্ধারণের জন্য খামারবাড়ি হবে প্যাটার্ন নির্ধারণ একক। আবার বাংলাদেশের যে কোন
থানার মত অঞ্চলে গ্রাম জনপদ প্যাটার্ন নির্ধারণের একক হবে। তবে প্যাটার্ন নির্ধারণের জন্য ক্ষুদ্র স্কেল সমীক্ষা
এলাকার প্রয়োজন। ক্ষুদ্র স্কেল ম্যাপ বৃহৎ এলাকা প্রক্ষেপ করে যেখানে জনপদের এককের সংখ্যা অধিক
থাকে। কারণ জনপদ প্যাটার্ন বৃহৎ অঞ্চলের মানচিত্রে যেখানে অধিক সংখ্যক জনপদ একক রয়েছে,
পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় বা পরিষ্ফুট হয়।
গ্রামীণ জনপদ প্যাটার্নের প্রকার (ঞুঢ়বং ড়ভ জঁৎধষ ঝবঃঃষবসবহঃ চধঃঃবৎহ) :
গ্রামীণ জনপদ প্যাটার্ন মূলত দুই প্রকারের:
ক. বিক্ষিপ্ত বা এলোমেলো বা ছড়ানো (উরংঢ়বৎংবফ ড়ৎ জধহফড়স ড়ৎ ঝপধঃঃবৎবফ)
খ. গুচ্ছবদ্ধ বা ঘন বিন্যাস্ত বা কেন্দ্রীভূত (ঈষঁংঃবৎবফ ড়ৎ ঈড়সঢ়ধপঃ ড়ৎ ঘঁপষবধঃবফ)
বিক্ষিপ্ত বা এলোমেলো বা ছড়ানো প্যাটার্ন (উরংঢ়বৎংবফ ড়ৎ জধহফড়স ড়ৎ ঝপধঃঃবৎবফ চধঃঃবৎহ):
বিক্ষিপ্ত বা ছড়ানো জনপদ প্যাটার্ন তখনই বলে যখন জনপদের এককগুলো অক্রমভাবে বা এলোমেলো বিন্যস্ত
থাকে। গ্রাম যদি জনপদ প্যাটার্ন সমীক্ষার অঞ্চল হয় তাবে খামারবাড়ীগুলো গ্রামের প্যাটার্ন নির্ধারণের একক
হবে এবং খামারবাড়িগুলো একটি অন্যটি থেকে আলাদা বা বিচ্ছিন্নভাবে বেশ দূরত্বে অবস্থিত হবে। এই
প্যাটার্নে মূলত নির্জন খামারবাড়ি প্রাধান্য পায়।
গুচ্ছবদ্ধ বা ঘন বিন্যাস্ত বা কেন্দ্রীভূত প্যাটার্ন (ঈষঁংঃবৎবফ ড়ৎ ঈড়সঢ়ধপঃ ড়ৎ ঘঁপষবধঃবফ
চধঃঃবৎহ): যখন জনপদের এককগুলো, যেমন গ্রামের ক্ষেত্রে খামারবাড়িগুলো একটি অন্যটির সংলগ্ন থাকে
তখন গুচ্ছবদ্ধ জনপদ প্যাটার্ন প্রকাশ পায়। অন্য কথায় খামারবাড়িগুলোর মধ্যে ব্যবধান থাকে না বললেই
চলে।
পাঠ-৪.৩
প্রকৃতপক্ষে পুরোপুরি বিক্ষিপ্ত বা পুরোপুরি কেন্দ্রীভূত জনপদ খুব কমই দেখা যায়। কারণ বিক্ষিপ্ত ও কেন্দ্রীভূত
জনপদের শেষ ও শুরু নির্ধারণ করা প্রায় অসম্ভব। বিক্ষিপ্ত প্যাটার্নেও কিছু কিছু কেন্দ্রীয় বা গুচ্ছবদ্ধ বাজার
কেন্দ্রসহ হ্যামলেট বা গ্রাম থাকে। অতএব গুচ্ছবদ্ধ ও বিক্ষিপ্ত উভয় প্যাটার্নের সংমিশ্রিত প্যাটার্ন রয়েছে।
গুচ্ছবদ্ধ জনপদ প্যাটার্ন কোন রেখাকার বা লম্বাকৃতি প্রাকৃতিক অথবা সাংস্কৃতিক উপাদান, যেমন নদী বা রাস্তা
অনুসরণ করে রৈখিক আকারে বিকাশ লাভ করলে রৈখিক (খরহবধৎ) জনপদ প্যাটার্ণ বলা হয়। বাংলাদেশ
নদীবহুল দেশ। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ প্লাবন সমভূমি যা বৎসরের বেশ কিছু সময় বন্যা কবলিত থাকে।
নদীর প্রাকৃতিক পাড় বন্যা সমতল অপেক্ষা উঁচু হওয়ার কারণে নদীর পাড় ধরে রৈখিক আকারে সংঘবদ্ধভাবে
জনপদ প্যাটার্ন বিকাশ লাভ করেছে।
জনপদ এককগুলো যখন নিয়মিত ব্যবধানে বিন্যস্ত হয় তখন জনপদ প্যাটার্ন নিয়মিত বা সুষম (জবমঁষধৎ)
হয়। এই ধরনের প্যাটার্ন গুচ্ছকার ও বিক্ষিপ্ত উভয় প্রকার জনপদে দেখা যায়। তবে সম্পূর্ণরূপে নিয়মিত
প্যাটার্ন একমাত্র তত্ত¡ীয়ভাবেই সম্ভব। খুবই পরিকল্পিত গ্রামীণ জনপদের বিন্যাসই সম্পূর্ণরূপে সুষম হতে পারে।
পৃথিবীর অধিকাংশ গ্রামীণ জনপদ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কালক্রমে বিকাশ লাভ করেছে। তবে প্রায়-সুষম জনপদ
প্যাটার্নের অনেক উদাহরণ রয়েছে।
নিচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত উত্তর দিন :
১. জনপদ প্যাটার্ন বলতে কি বোঝায়?
২. মানচিত্রে জনপদ এককগুলো কি?
৩. জনপদ প্যাটার্নের একক কি ভাবে ভিন্ন ভিন্ন হয়?
৪. জনপদ প্যাটার্ন প্রধানত কয় প্রকারের ও কি কি ?
৫. বিক্ষিপ্ত জনপদ প্যাটার্ন কাকে বলে?
৬. গুচ্ছবদ্ধ জনপদ প্যাটার্ন কাকে বলে?
৭. অন্যান্য জনপদ প্যাটার্নগুলো কি কি?
গ্রামীণ জনপদ প্যাটার্ন বিকাশের নিয়ামক বা কারণ (ঈধঁংবং ড়ভ ঃযব উবাবষড়ঢ়সবহঃ ড়ভ জঁৎধষ
ঝবঃঃষবসবহঃ চধঃঃবৎহ)
গ্রামীণ জনপদ প্যাটার্ন বিকাশের পিছনে বিভিন্ন নিয়ামক কাজ করছে। সাধারণভাবে নিয়ামকগুলোকে প্রাকৃতিক,
সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদিতে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়। তবে গ্রামীণ জনপদ প্যাটার্ন বিকাশে
প্রাকৃতিক নিয়ামকসমূহের মূখ্য ভূমিকা রয়েছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রধান কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়। ক্ষুদ্র
স্কেল সমীক্ষায় অনেক বড় অঞ্চল জুড়ে যখন জনপদ প্যাটার্ন নির্ণয় করা হয় তখন প্রাকৃতিক নিয়ামকেরই
প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায় অর্থাৎ বিভিন্ন প্রাকৃতিক অনুকূল ও প্রতিকূল পরিবেশ অনুসারে জনপদ বিন্যস্ত হয়।
স্থানীয়ভাবে জনপদ প্যাটার্ন বিকাশে আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কারণসমূহ প্রভাব ফেলে। তবে গ্রামীণ জনপদ
বিকাশ ও বিন্যাসের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক নিয়ামকসমূহ যা পরস্পর সম্পর্কিত বিশেষ ভূমিকা
রাখে। পরবর্তী পর্যায়ে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নিয়ামক সমূহের ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। তবে অধিকাংশ
ক্ষেত্রেই কোন বিশেষ প্যাটার্ন বিকাশে একাধিক নিয়ামক কাজ করে। হাডসনের (ঐঁফংড়হ, ১৯৬৯) গ্রামীণ
জনপদ অবস্থান তত্তে¡ জনপদ বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রাকৃতিক নিয়ামকের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রাকৃতিক কারণসমূহের মধ্যে ভূমিরূপ, মাটির বৈশিষ্ট্য, পানির সহজলভ্যতা বা অপ্রতুলতা গ্রামীণ জনপদ প্যাটার্ন
বিকাশে বিশেষ প্রভাব ফেলে। যে সমস্ত অঞ্চলে ভূমি সমবৈশিষ্ট্য সম্পন্ন নয়, বিচ্ছিন্ন বা অধিক ঢালযুক্ত,
কৃষিভূমি ছড়ানো ছিটানোভাবে বিন্যস্ত ও পরিমাণে কম থাকে, সেই সমস্ত অঞ্চলের জনপদ বিক্ষিপ্ত প্যাটার্নের
হয়। এজন্য পার্বত্য এলাকায় জনপদ প্যাটার্ন প্রধানত বিক্ষিপ্ত হয়। আবার কৃষিভূমি অবিচ্ছিন্ন এবং ব্যবহার
একই প্রকার হলে জনপদ সাধারণত ঘন সন্নিবদ্ধ বা গুচ্ছবদ্ধ হয়। ভূমি সমতল হলেও জনপদ গুচ্ছবদ্ধ হয়।
আবার ভূমি সমতল ও উর্বর হলে জনপদ প্যাটার্ন সাধারণত গুচ্ছবদ্ধ সুষম হয়।
কৃষি কাঠামো ও অর্থনীতির প্রকারভেদে জনপদ গুচ্ছবদ্ধ অথবা বিক্ষিপ্ত হতে পারে। গুচ্ছবদ্ধ জনপদ প্যাটার্ন ক্ষুদ্র
ক্ষুদ্র খামার এলাকায় অথবা যৌথ বা গোষ্ঠী ভিত্তিক চাষ পদ্ধতি প্রচলিত এলাকায় দেখা যায়। দেয়াল দিয়ে ঘেরা
সম-অর্থনৈতিক সঙ্গতির বৃহৎ আয়তনের সংহত বা সংঘবদ্ধ খামারবাড়ি বিক্ষিপ্ত জনপদ প্যাটার্নের হয়। আবার
সম-অর্থনৈতিক সঙ্গতির বৃহৎ আয়তনের খামারবাড়ি যদি সমব্যবধানে অবস্থিত হয় তবে সুষম জনপদ প্যাটার্ন
ধারণ করে (হাডসনের তত্ত¡ অনুসারে)। উন্নত বিশ্বে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে বৃহৎ আয়তনের খামার বাড়িগুলোর
বিন্যাস অনেকটা এই ধরনের। ঘন সন্নিবদ্ধ জনপদ ধান চাষ এলাকার বৈশিষ্ট্য। এ ধরণের চাষে শস্য বপন,
সেচ ও কাটার সময় বিপুল পরিমাণ শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ে। স্বনির্ভর (ঝবষভ-ৎবষরধহঃ) চাষ পদ্ধতিও গুচ্ছবদ্ধ
জনপদ প্যাটার্নের কারণ। সুস্থিত (ঝঃধনষব) কৃষি সর্বদাই গুচ্ছবদ্ধ সুষম প্যাটার্ন জনপদের সৃষ্টি করে।
গ্রামভিত্তিক সংঘবদ্ধতা বিভিন্ন প্রাকৃতিক, প্রযুক্তি, কৃষি, রাজনীতি ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা থেকে উদ্ভুত হয়। মানুষ
সংঘবদ্ধ হয় যখন মানুষের প্রকৃতিকে বশে আনার মত প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব থাকে। আবার যন্ত্রপাতির
প্রকৃতির কারণেও প্রচুর লোকের প্রয়োজন হয়। কৃষির শস্যাবর্তের কারণেও অনেক লোকের দরকার হয়। আবার
সামাজিক, রাজনৈতিক কারণ মানুষকে সংঘবদ্ধ বসবাসে বাধ্য করে। ইউরোপে মধ্যযুগে সামন্তপ্রথা কৃষি
শ্রমিকদেরকে কৃষিকাজের সুবিধার জন্য সংঘবদ্ধ বসবাসে বাধ্য করতো। পরিবারভিত্তিক সংঘবদ্ধতা প্রাচীন গ্রাম
সমাজের কাঠামো বলা যেতে পারে। সামাজিক সংলগ্নতা যা প্রাথমিক গ্রামীণ সমাজের বৈশিষ্ট্য পরবর্তীতে
গুচ্ছবদ্ধ জনপদ প্যাটার্নে রূপ নিয়েছে। বাইলান্ড (ইুষঁহফ, ১৯৬০) তাঁর মডেলে পরিবার কেন্দ্রিক জনপদ
বিন্যাস দেখিয়েছেন। তাঁর মতে কোন একটি পরিবারের প্রথম উপনিবেশ স্থাপনের পর পরবর্তী বংশধরদের
ঝোঁক থাকে ‘জননী’ (গড়ঃযবৎ ঝবঃষবসবহঃ) বসতের আশে পাশেই বসত গড়ে তোলার দিকে এবং ‘জননী’
বসতের নিকটবর্তী স্থান বংশধরদের¯œারা পরিপূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে।
স্থানীয়ভাবে সাংস্কৃতিক উপাদানকে কেন্দ্র করে জনপদ সংঘবদ্ধ হয়। আবার রাস্তা অনুসরণ করে জনপদ
আঞ্চলিকভাবে রৈখিক প্যাটার্নে বিকাশ লাভ করে। নিরাপত্তার অভাব দেখা দিলে মানুষ সংঘবদ্ধ হয় যা গুচ্ছবদ্ধ
জনপদ প্যাটার্নে রূপ নেয়। আবার মানুষ নিরাপদ বোধ করলে বিক্ষিপ্তভাবে বসবাস করে। উল্লেখিত
নিয়ামকসমূহ জনপদ প্যাটার্ন বিকাশের সাধারণ নিয়ামক বলা যেতে পারে। তবে প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক,
সামাজিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদির পরিবেশ ও প্রকারভেদে জনপদ প্যাটার্ন বিভিন্ন হয়ে থাকে।
নিচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত উত্তর দিন :
১. গ্রামীণ জনপদ প্যাটার্ন বিকাশে প্রধান নিয়ামক কি এবং কোন স্কেল সমীক্ষায় প্রধানত দেখা যায়?
২. আর্থ-সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক নিয়ামক কখন কার্যকর ?
৩. জনপদ প্যাটার্নের প্রাকৃতিক নিয়ামকসমূহ কি কি ?
৪. ‘মা’ বসত কি ধরণের জনপদ বিকাশে ভূমিকা রাখে ?
গ্রামীণ জনপদ প্যাটার্ন বিশ্লেষণ : পরিমাত্রিক পদ্ধতি (অহধষুংরং ড়ভ জঁৎধষ ঝবঃঃষবসবহঃ
চধঃঃবৎহ: ঝঃধঃরংঃরপধষ ঞবপযহরয়ঁব) :
মানচিত্রে জনপদ এককের বিন্দুবিন্যাস দেখে জনপদ প্যাটার্ন নির্ণয় ও বর্ণনা করা খুবই কঠিন। ব্যক্তিবিশেষে
প্যাটার্ণ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে পার্থক্য দেখা দিতে পারে। তবে পরিমাত্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করে জনপদ প্যাটার্ন নির্ণয়
ও বর্ণনার সমস্যা অতিক্রম করা সম্ভব। জনপদ প্যাটার্ন নির্ণয়ের জন্য নিকটকম প্রতিবেশী বিশ্লেষণ (ঘবধৎবংঃ
ঘবরমযনড়ঁৎ অহধষুংরং) খুবই নির্ভরযোগ্য এবং ব্যাখ্যাযোগ্য পদ্ধতি। মানচিত্রে জনপদ এককের প্রতিটি বিন্দু ও
এদের প্রতিবেশী বিন্দুর মধ্যে ব্যবধান পরিমাপের মধ্যেই পদ্ধতিটি নিহিত। এই জন্যই এই পদ্ধতিটিকে
ঘবধৎবংঃ ঘবরমযনড়ঁৎ অহধষুংরং বলা হয়। ক্লার্ক এবং ইভান্স (ঈষধৎশ ধহফ ঊাধহং, ১৯৫৪) নামে দুইজন বাস্তব্য
বিজ্ঞানী এই বিশ্লেষণ পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেন। পরে তাঁদের উদ্ভাবিত সূত্রটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গবেষকরা
নিজেদের প্রয়োজনে প্রয়োজনমত পরিবর্তন করে ব্যবহার করেছেন। এখানে টিডসওয়েল ও বার্কার (ঞরফংবিষষ
ধহফ ইধৎশবৎ, ১৯৭১) প্রণীত একটি সূত্র দেওয়া হলো। এই পদ্ধতিটিতে জনপদ এককের অক্রমতা বা
বিক্ষিপ্ততার মাত্রা পরিমাপ করে জনপদ প্যাটার্ন (জহ) নির্ধারণ করা হয়। সূত্রটি নিæরূপ-
যখন, জহ = নিকটতম প্রতিবেশী সূচক, ড়নং ফ
= নিকটতম প্রতিবেশীর দৃশ্যমান গড় দূরত্ব, এবং ৎধহ ফ
=
নিকতম প্রতিবেশীর অক্রম বিন্যাসের প্রত্যাশিত গড় দূরত্ব।
নিকটতম প্রতিবেশী বিশ্লেষণ (ঘবধৎবংঃ-ঘবরমযনড়ঁৎ অহধষুংরং) পদ্ধতিতে জনপদের তিনটি প্রধান প্যাটার্ন -
গুচ্ছবদ্ধ (ঈষঁংঃবৎবফ), অক্রম (জধহফড়স) ও নিয়মিত (জবমঁষধৎ) পাওয়া যায়। এদের জহ মান
যথাক্রমে ০.০, ১.০ এবং ২.১৫ (চিত্র ৪.৩.১)। জনপদ বিন্দুগুলো কোন অবস্থানে গুচ্ছবদ্ধভাবে কেন্দ্রীভূত হলে
জহ মান ০.০ হয়, অক্রম বা বিক্ষিপ্তভাবে বিন্যস্ত থাকলে ১.০ হয়, এবং নিয়মিতভাবে থাকলে ২.১৫ হবে।
যেহেতু জহ মান ০.০ থেকে ২.১৫ পর্যন্ত বিস্তৃত, ফলে গুচ্ছ, অক্রম এবং নিয়মিত মান ছাড়াও ০.০ থেকে
২.১৫ এর মধ্যস্থিত মানের একটি অবিচ্ছিন্ন বর্ণনা সম্ভবপর। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি জহ ২.০ হয়,
তবে জনপদ প্যাটার্ন প্রায় নিয়মিত বলা চলে কিন্তু সম্পূর্ণরূপে নিয়মিত নয়।
চিত্র ৪.৩.১
জনপদ প্যাটার্নের উপর কিছু মডেল ও তত্ত¡ রয়েছে। জনপদের স্থানিক ব্যাপন প্রক্রিয়ার উপর মডেল (ইুষঁহফ,
১৯৬০), কোন নতুন ভূখন্ডে উপনিবেশ প্রক্রিয়ার ফলে উদ্ভূত জনপদ প্যাটার্ন (ঐঁফংড়হ, ১৯৬৯) এবং
খ্রিষ্টলারের কেন্দ্রীয় অবস্থান তত্ত¡ (ঈযৎরংঃধষষবৎ, ১৯৩৩) উল্লেখযোগ্য। খ্রিষ্টলার তাঁর কেন্দ্রীয় অবস্থান তত্তে¡
জনপদের মধ্যে ব্যবধান, আয়তন ও কার্যক্রমের বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে জনপদ প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করেন। পৃথিবীর
বিভিন্ন স্থানে জনপদের প্যাটার্ন নির্ধারণে কেন্দ্রীয় অবস্থান তত্ত¡ ব্যবহার করা হয়েছে।
কোন অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদ পরিকল্পনার জন্য জনপদের প্যাটার্ন জানা দরকার। বিভিন্ন প্যাটার্নের পরিপ্রেক্ষিতে
রাস্তাঘাট নির্মাণ, শিল্প প্রতিষ্ঠান, সেবা কেন্দ্র ও সেবা এলাকা নির্ধারণ করা যায়। কোন বিশেষ এলাকা উন্নয়ন
পরিকল্পনার আওতায় আনতে গেলে জনপদ প্যাটার্ন জানা অত্যন্ত জরুরী।
নিচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত উত্তর দিন :
১. গ্রামীণ জনপদ প্যাটার্ন বিশ্লেষণের পরিমাত্রিক পদ্ধতিটির নাম কি?
২. এই পরিমাত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে কয় ধরনের জনপদ প্যাটার্ন পাওয়া যায়?
৩. পরিমাত্রিক পদ্ধতি¯œারা প্রাপ্ত জনপদ প্যাটার্ন তিনটির মান কত ?
নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার আগে সম্পূর্ণ পাঠটি কয়েকবার পড়ুন। নিচের সারাংশটি পড়ে পাঠটি সম্বন্ধে
আপনার ধারণা পরিষ্কার করে নিন।
পাঠসংক্ষেপ :
জনপদ প্যাটার্ন কোন অঞ্চলের জনপদের এককসমূহের বিন্যাস বা এককসমূহের সংমিশ্রিত বিন্যাসকে বোঝায়।
জনপদ এককসমূহ মানচিত্রে বিন্দু হিসেবে দেখানো হয় যার মধ্যে প্যাটার্ন প্রকাশ পায়। জনপদ প্যাটার্ন একটি
জনপদ বিন্দুর সাথে অন্য জনপদ বিন্দুর অবস্থানিক সম্পর্ককে নির্দেশ করে। সমীক্ষা অঞ্চলের আয়তন বা স্কেল
ভেদে প্যাটার্ন নির্ধারণের একক ভিন্ন ভিন্ন হয়।
গ্রামীণ জনপদ প্যাটার্ন প্রধানত দুই প্রকারের হয়ে থাকে: বিক্ষিপ্ত বা এলোমেলো বা ছড়ানো, গুচ্ছবদ্ধ বা ঘন
বিন্যস্ত বা কেন্দ্রীভূত। যখন জনপদের এককগুলো অক্রমভাবে বিন্যস্ত থাকে তখন জনপদ বিক্ষিপ্ত প্যাটার্নের
হয়। অন্যদিকে জনপদ এককসমূহ যখন পরস্পর সংলগ্ন বা খুব কাছাকাছি অবস্থান করে তখন গুচ্ছবদ্ধ জনপদ
প্যাটার্নের সৃষ্টি হয়। তবে গুচ্ছবদ্ধ ও বিক্ষিপ্ত উভয় প্যাটার্নের সংমিশ্রিত রূপও দেখা যায়। আবার প্রাকৃতিক বা
সাংস্কৃতিক উপাদান, যেমন নদী বা রাস্তা বরাবর জনপদ এককসমূহ বিন্যস্ত হলে রেখাকার এবং নিয়মিত
ব্যবধানে থাকলে নিয়মিত জনপদ প্যাটার্ন বলা হয়।
গ্রামীণ জনপদ প্যাটার্ন বিকাশে প্রাকৃতিক নিয়ামকের মূখ্য ভূমিকা থাকে। কারণ গ্রামীণ জনপদ প্যাটার্ন মূলত
স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সতঃস্ফুর্তভাবে বিভিন্ন প্রাকৃতিক নিয়ামকের পরিপ্রেক্ষিতে জন্ম ও বিকাশ লাভ করে এবং
প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যানুযায়ী অর্থনৈতিক কর্মকান্ড প্রসার লাভ করে যা প্যাটার্ন বিকাশে প্রভাব ফেলে। জনপদ প্যাটার্ন
নির্ণয়ের জন্য নিকটতম প্রতিবেশী বিশ্লেষণ খুবই নির্ভরযোগ্য এবং ব্যাখ্যাযোগ্য পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে প্রধানত
গুচ্ছবদ্ধ, অক্রম ও নিয়মিত এই তিন ধরনের প্যাটার্ন পাওয়া যায়। গ্রামীণ জনপদের বিভিন্ন পরিকল্পনার ফলপ্রসূ
বাস্তবায়নের জন্য জনপদ প্যাটার্ন জানা দরকার। জনপদের প্যাটার্নের পরিপ্রেক্ষিতে জনপদের বিভিন্ন উপাদানের
অবস্থান নির্ধারণ করা সম্ভবপর।
অনুশীলনী :
১. জনপদ প্যাটার্ন কাকে বলে? গ্রামীণ জনপদ প্যাটার্ন কত প্রকারের হয়?
২. বিক্ষিপ্ত বা ছড়ানো জনপদ প্যাটার্ন কেমন হয় ? বিক্ষিপ্ত জনপদ প্যাটার্ন বিকাশের কারণসমূহ লিখুন।
৩. গুচ্ছবদ্ধ জনপদ প্যাটার্ন কি ধরণের হয়। গুচ্ছবদ্ধ জনপদ প্যাটার্ন কি কি কারণে বিকাশ লাভ করে?
৪. নিকটতম প্রতিবেশী বিশ্লেষণ বলতে কি বোঝায়? নিকটতম প্রতিবেশী বিশ্লেষণের মাধ্যমে কয় ধরনের
জনপদ প্যাটার্ন পাওয়া যায় ? এই পদ্ধতিটি ব্যবহারের সুবিধা কি?
পাঠোত্তর মূল্যায়ন : ৪.৩
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন :
১. সঠিক উত্তরের পাশে টিক (  ) চিহ্ন দিন : ( সময় ৩ মিনিট) :
১.১ জনপদ এককগুলো মানচিত্রে কি হিসেবে চিহ্নত হয়?
ক. বিন্দু খ. ঘর গ. ভ‚দৃশ্য
১.২ হ্যামলেট বা গ্রামের জনপদ প্যাটার্নের একক কি হবে ?
ক. নদী খ. ক্ষেত গ. খামারবাড়ী
১.৩ জনপদ প্যাটার্ন মূলত কত প্রকারের ?
ক. তিন খ. দুই গ. চার
২. সত্য হলে ’স’ এবং মিথ্যা হলে ’মি’ লিখুন ( সময় ২ মিনিট):
২.১ যখন জনপদের এককগুলো অক্রম বা এলোমেলোভাবে বিন্যস্ত থাকে তখন তাকে গুচছবদ্ধ বা কেন্দ্রপ্যাটার্ন
বলে।
২.২ জনপদের এককগুলো যখন একটি অন্যটির সংলগ্ন থাকে তখন বিক্ষিপ্ত বা ছড়ানো জনপদ প্যাটার্ন বলে।
৩. শূন্যস্থান পূরণ করুন (সময় ৩ মিনিট) :
৩.১ কোন অঞ্চলে একটি ................সাথে অপর জনপদের .............সম্পর্ক জনপদ প্যাটার্নের সৃষ্টি করে।
৩.২ বাংলাদেশের যে কোন থানার মত অঞ্চলে ......................জনপদ প্যাটার্ন নির্ধারণের একক হবে।
৩.৩ গ্রামীণ জনপদ প্যাটার্ন বিকাশে.............................নিয়ামকসমূহের মূখ্য ভ‚মিকা রয়েছে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলী (সময় ৬ মিনিট) :
১. মানচিত্রে কিসের অবস্থান নকশা বা প্যাটার্নরূপে দৃশ্যমান হয় ?
২. কি ভেদে প্যাটার্ন নির্ধারণের একক ভিন্ন ভিন্ন হয় ?
৩. রৈখিক জনপদ প্যাটার্ন কখন বলা হয় ?
রচনামূলক প্রশ্ন :
১. জনপদ প্যাটার্ন বলতে কি বোঝায় ? বিক্ষিপ্ত এবং গুচছবদ্ধ জনপদ প্যাটার্ন সম্বন্ধে আলোচনা করুন।
২. নিকটতম প্রতিবেশী বিশ্লেষণ পদ্ধতি বলতে কি বোঝায় ? নিকটতম প্রতিবেশী বিশ্লেষণের মাধ্যমে কত
প্রকারের জনপদ প্যাটার্ন পাওয়া যায়? এই প্যাটার্নটি ব্যবহারের সুবিধা আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]