নগরের প্রধান পরিবেশগত সমস্যাগুলো উল্লেখ করে সমস্যার প্রকৃতি ও কারণসমূহ আলোচনা করুন।
বায়ু দূষণ কি কি কারণে হয় ?
শহরে যানজট কেন সৃষ্টি হয় ?


নগরের পরিবেশগত সমস্যা (ঊহারৎড়হসবহঃধষ চৎড়নষবসং রহ ঈরঃরবং) :
নগর মূলত কোন স্থানে জনসংখ্যা, বাড়িঘর, যোগাযোগ জাল, বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের
পুঞ্জিভবন। শিল্প বিপ্লবের পূর্ব পর্যন্ত নগরীয় পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে ভারসাম্যতা বজায় ছিল। ফলে
নগরীর পরিবেশ বসবাসযোগ্য ছিল। কিন্তু শিল্প বিপ্লবের পরবর্তীতে নগরাঞ্চলে বিভিন্ন প্রকার শিল্প ও ব্যবসাবাণিজ্যের বিকাশ ও প্রসারের ফলে গ্রাম থেকে মানুষের শহরে অভিগমনের হার বৃদ্ধি পায় এবং এই বৃদ্ধি
অব্যাহত থাকে। ১৯৫০ সালে বিশ্বের নগর জনসংখ্যা ছিল ২৯ শতাংশ। ১৯৮৫ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৪১
শতাংশ হয় এবং বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৫০ শতাংশ লোক নগরে বাস করে। ২০২৫ সালে গণনাকৃত
বিশ্বজনসংখ্যার ৮.৪ বিলিয়নের ৬০ শতাংশই শহরে বাস করবে বলে ধারণা করা হয়। নগর জনসংখ্যা বৃদ্ধির
এই উচ্চ হারের সাথে নগরের বিভিন্ন উপাদান এবং অবকাঠামোর মধ্যে সমন্বয় রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে
এবং বর্তমানে ভারসাম্যহীন অবস্থায় পৌঁছেছে। এই অবস্থা বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয় তৃতীয় বিশ্বের বড় বড়
নগরগুলোতে। কারণ বিশ্বের নগর জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই বাস করে তৃতীয় বিশ্বের কিছু বিরাট আকারের
নগরীতে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সার্বিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় নগর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অতি উচ্চ। এই
সমস্ত দেশে নগর জনসংখ্যা বৃদ্ধির বাৎসরিক হার ৩.৬ শতাংশ যা শিল্পোন্নত দেশগুলো থেকে সাড়ে চারগুণ এবং
গ্রামাঞ্চল থেকে ৬০ শতাংশ দ্রæত হারে বাড়ছে। উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোতে নগর জনসংখ্যা ১৯৫০ সালে
২৮৫ মিলিয়ন থেকে ১৯৯১ সালে ১৩৮৪ মিলিয়ন হয়েছে এবং ২০২৫ সালে এই নগর জনসংখ্যা ৪০৫০
মিলিয়নে পৌঁছবে।
নগরাঞ্চলে পরিবেশগত সমস্যার অধিকাংশই নগরের অতি দ্রæত জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত কারণে হয়ে থাকে।
নগরের আকার বৃদ্ধির কারণে নগর পরিবেশের কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি হলেও অন্যভাবে পরিবেশকে ধ্বংস করে
একটি আধুনিক সভ্যতার জঙ্গলে রূপান্তরিত করেছে।
উন্নত বিশ্ব এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোতে নগর পরিবেশের সমস্যার প্রকৃতির মধ্যে কিছুটা পার্থক্য
রয়েছে। উন্নত বিশ্বে নগর পরিবেশ দূষণের মূলে রয়েছে প্রাচুর্য বা পর্যাপ্ত সম্পদ। পর্যাপ্ত সম্পদের মূল উৎস শিল্প
কারখানা। এই সমস্ত দেশে শিল্পজাত দ্রব্যের উৎপাদন অনেক বেশি হয় এবং মানুষ অনেক বেশি পরিমাণে ভোগ
করে। ফলে শিল্প কারখানা থেকে উৎপন্ন গ্যাস ও বর্জ্য পদার্থ বায়ু ও পরিবেশ দূষণে বিশেষ ভূমিকা রাখে যা বড়
বড় শহরের অন্যতম পরিবেশ সমস্যা। অন্যদিকে অনুন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে নগর পরিবেশ সমস্যার মূলে
রয়েছে সম্পদের তুলনায় অত্যধিক জনসংখ্যা, নগর জনসংখ্যার অতি দ্রæত বৃদ্ধি হার, স্বল্পসংখ্যক বৃহৎ আকারের
শহরে অতি দ্রæত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং জনসংখ্যার কেন্দ্রীকরণ। সম্পদ স্বল্পতার কারণে নগরাঞ্চলে অতি দ্রæত
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সেবা এবং অন্যান্য পৌর সুবিধাদি বিকাশ লাভ করেনি।
ফলে নগরের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে ভারসাম্যতা নষ্ট হয়েছে যা সামগ্রিকভাবে নগর পরিবেশের উপর প্রভাব
ফেলছে।
নিচে নগর পরিবেশের প্রধান কিছু সমস্যা সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো।
বায়ু দূষণ (অরৎ চড়ষষঁঃরড়হ) : দূষণযুক্ত বাতাস বিশ্বের বড় বড় শহরের অন্যতম প্রধান সমস্যা। বড় বড়
শহরে যান্ত্রিক পরিবহনের সংখ্যা নগরায়ণের সাথে সাথে দ্রæত হারে বেড়েছে। সারা বিশ্বে ১৯৫০ সালে
মোটরযানের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪০ মিলিয়ন (৪কোটি), যা ১৯৯০ সালে বেড়ে আনুমানিক ৪০০ মিলিয়নে (৪০
কোটি) দাঁড়িয়েছে। ফলে মোটরজনিত বায়ুদূষণও অনুরূপ হারে বেড়েছে।
মোটর যান থেকে উদগত ধোঁয়ায় আকাশে ধোঁয়ার মেঘের আস্তরণ পড়ে। শীত প্রধান দেশের বড় বড় শহরে
ধোঁয়া এবং কুয়াশা মিলে ‘স্মগ’ (ঝসড়ম=ঝসড়শব ধহফ ঋড়ম) এর সৃষ্টি হয়। যার ফলে সূর্যের আলো
বাধাপ্রাপ্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেস (খড়ং অহমবষবং) শহরের আকাশ স্মগের কম্বলে প্রায় সর্বদাই ঢাকা
থাকে। মোটরযানজনিত দূষণ শিল্পোন্নত দেশগুলোর অন্যতম পরিবেশ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হলেও কমপক্ষে
১০ মিলিয়ন (১ কোটি) জনসংখ্যার অধিকাংশ নগরপুঞ্জের মধ্যে অধিকাংশই অবস্থিত উন্নয়নশীল দেশে। ফলে
আনুমানিক প্রায় ৩০০ মিলিয়ন (৩০ কোটি) লোক এই সকল নাগরীয় পরিবেশের বায়ু দূষণের প্রভাবাধীন।
উন্নয়নশীল দেশের নগরগুলোর মধ্যে ঢাকায় মোটরযান জনিত বায়ুদূষণমাত্রা ইতোমধ্যেই আশংকাজনক পর্যায়ে
পৌঁছেছে। বাতাসে লেডের (খবধফ) পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত যা খুবই আশংকাজনক। মোটরযান থেকে বায়ুতে যে
সমস্ত দূষক বায়ুতে নির্গত হচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছে কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইডসমূহ , সালফার
অক্সাইডসমূহ, হাইড্রোকার্বন, ভাসমান বস্তুকণাসমূহ এবং সীসা। এই সমস্ত দূষক মানুষ, উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য
অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং বিভিন্ন মারাত্মক ধরনের রোগ ব্যাধির প্রকোপ ঘটায়। কার্বন মনোক্সাইড মানবদেহে
রক্তের লোহিত কণিকায় অক্সিজেন বিশোধন বিঘিœত করে এবং ¯œায়ুবিক ও হৃদযন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করে।
নাইট্রোজেন ও সালফার অক্সাইডসমূহ ফুসফুসের ক্ষমতা হ্রাস করে এবং শ্বাসনালীর বিভিন্ন রোগ ব্যাধির প্রকোপ
ঘটায়। সীসা দূষণের ফলে রক্ত সঞ্চালন, প্রজনন ও মুত্রগ্রন্থির কার্যক্ষমতায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং
শিশুদের শিক্ষণ ক্ষমতাও হ্রাস করে। এছাড়াও মোটরযান নির্গত বিষাক্ত পদার্থে ক্যান্সারও হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের অত্যধিক মাত্রায় বায়ু দূষণ শহর লন্ডন, গøাসগো, লিড্স, ম্যানচেষ্টার, বার্মিংহামে বায়ু দূষণজনিত
ব্যাধির প্রকোপের উপর এক সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। এই সমীক্ষায় প্রমাণিত হয় যে, নগরের আকার বৃদ্ধির
সাথে সাথে শ্বাস প্রশ্বাসজনিত রোগের কারণে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৬৮ সালে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন
শহরের উপর এক জরিপে দেখা গেছে যে, লন্ডন শহরে ফুসফুসের ক্যান্সার ও ব্রঙ্কাইটিসে মৃত্যুর হার ইংল্যান্ড ও
ওয়েলসের অন্যান্য শহর অপেক্ষা বেশি।
নিচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত উত্তর দিন :
১. নগরের পরিবেশগত সমস্যার প্রধান কারণ কি কি?
২. নগরের বায়ু দূষণের প্রধান নিয়ামক কি ?
৩. বায়ু দূষণের কারণে কি কি রোগ হতে পারে ?
যানজট (ঞৎধভভরপ লধস) : বড় বড় শহরে যানজট বর্তমান নগর সভ্যতার একটি ক্ষতিকর অবদান। জনসংখ্যা
বৃদ্ধির সাথে সাথে নগর পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। বহুদূর থেকে মানুষ শহরস্থিত কর্মক্ষেত্রে আসে। শহরের
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে শহরে বিভিন্ন ধরনের পরিবহনের সংখ্যা ও চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই তুলনায়
রাস্তার পরিসর এবং পরিমাণ বৃদ্ধি পায়নি। ফলে যানজটের সৃষ্টি হচেছ। এর ফলে নগর আর্থিক ও সামাজিক
দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচেছ। যানজটের ফলে বর্তমানে শহরের অধিবাসীদের অধিক সময় রাস্তার অতিবাহিত
করতে হয়। ফলে মানুষের কর্মক্ষেত্রে এবং পরিবার পরিজনদের সাথে থাকার সময় কমে গিয়েছে। এতে নগর
অর্থনীতির উপর যেমন প্রভাব পড়ছে তেমনি সুস্থ সামাজিক ও পারিবারিক পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও
একই স্থানে ঘন্টার পর ঘন্টা বাধ্য হয়ে অতিবাহিত করার জন্য¯œায়ুতন্ত্রের উপর চাপ পড়ছে যা বিভিন্ন শারীরিক
ও মানসিক রোগের সৃষ্টি করছে।
নিচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত উত্তর দিন :
১. যানজট সৃষ্টির কারণ কি ?
২. যানজটের ফলে কি ধরনের রোগ হতে পারে ?
কঠিন বর্জ্য নিষ্কাশন (জবসড়াধষ ড়ভ ঝড়ষরফ ডধংঃব) : বড় বড় শহরে শিল্প, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাজার,
গৃহস্থালী এবং বিভিন্নভাবে উৎপন্ন নিত্যদিনের বর্জ্যরে পরিমাণ এত বেশি হয় যে তা সুষ্ঠুভাবে নিষ্কাশন করে
শহরের পরিবেশকে পরিষ্কার রাখা যেমন ব্যয়সাধ্য হয়েছে তেমনি একটি কঠিন সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
উন্নত বিশ্বের শহরগুলোতে বিত্তশালী সমাজে বৈভব ও প্রাচুর্যের কারণে বস্তুগত সুখ-স্বাচ্ছন্দের পরিমাণ বহুগুণে
বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে কঠিন বর্জ্যরে পরিমাণ এত বেশি পরিমাণে বেড়েছে যা অনেক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণে রাখা
রীতিমত একটি কষ্টসাধ্য ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এই সমস্ত দেশে কঠিন বর্জ্য ধ্বংস করার বিভিন্ন
বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ফলে শহর আপাতদৃষ্টিতে পরিষ্কার দেখালেও জঞ্জাল ধ্বংস প্রক্রিয়ায়
শহরের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিভিন্নভাবে দূষিত হয়। জঞ্জাল পোড়ানোর জন্য চুল্লি (ওহপরহবৎধঃড়ৎ) ব্যবহার করা
হলে তা থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন বায়ু দূষক স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। সাগর বা নদীতে ফেললেও পানি দূষিত করে
এবং মাটিতে পুঁতে ফেললেও মাটির উপাদানকে নষ্ট করে বিভিন্নভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর প্রতিক্রিয়া
ফেলে। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে উন্নত বিশ্বের দেশসমূহে কঠিন বর্জ্য পদার্থ পুনব্যবহারের
জন্য প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। যার ফলে নগর পরিবেশ বর্জ্য দূষণ প্রতিক্রিয়া থেকে কিছুটা হলেও
মুক্তি পাবে। তবে তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ শহরে বর্জ্য নিষ্কাশন ও ধ্বংস করে ফেলার আধুনিক ব্যবস্থা ও সুষ্ঠু
ব্যবস্থাপনা না থাকায় প্রতিদিনের জমাকৃত বর্জ্যরে অধিকাংশ রয়ে যায়। ফলে পূতিগন্ধময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
ঢাকা পৌর এলাকায় প্রতিদিন প্রায় ৩০০০ টন বর্জ্য জমে। কিন্তু পৌরসভা মাত্র ৫০ শতাংশ পরিষ্কার করার
ক্ষমতা রাখে। এই পঞ্চাশ শতাংশই আবার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে সম্পূর্ণরূপে অপসারিত হয় না।
নিচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত উত্তর দিন :
১. উন্নত বিশ্বের শহরগুলোতে কঠিন বর্জ্য বাড়ার কারণ কি?
২. কঠিন বর্জ্য¯œারা কিভাবে দূষণ হয়?
৩. অনুন্নত বা তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহে কঠিন বর্জ্য অপসারণের ক্ষেত্রে প্রধানত কিসের অভাব?
পয়ঃপ্রণালী (ঝববিৎধমব) : তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ বড় শহরেই পয়ঃপ্রণালী জাল জনসংখ্যার তুলনায় নগণ্য
বলা চলে। দুর্বল পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণের অন্যতম একটি কারণ। অনুন্নত দেশের
শহরতলীর অধিকাংশ এলাকায় আধুনিক পয়ঃপ্রণালী স¤প্রসারিত না হওয়ায় দূষিত পরিবেশ বিরাজ করে।
এছাড়াও শহরের অভ্যন্তরে নিæ ও নিæবিত্ত অনেক বাড়ি আধুনিক পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থার সাথে যুক্ত নয়। ফলে
দূষিত পরিবেশের সৃষ্টি করে এবং এই সমস্ত এলাকা বিভিন্ন রোগজীবাণুর উৎস। বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রামের
মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাড়ি স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃপ্রণালীর সাথে যুক্ত।
পানি সরবরাহ (ডধঃবৎ ঝঁঢ়ঢ়ষু) : তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ বৃহৎ শহরগুলোতে পেয় ও নিত্য ব্যবহার্য
পানির অপ্রতুলতা রয়েছে। এছাড়াও পানি সরবরাহ পদ্ধতিতে ক্রটি-বিচ্যুতি থাকার কারণে গৃহজাত ও অন্যান্য
ময়লা এবং শিল্প বর্জ্য পানির সাথে মিশে পানিকে দূষিত করে ফেলে। পানি শোধন যন্ত্রপাতির (ডধঃবৎ
ঞৎবধঃসবহঃ চষধহঃ) অভাব এবং পানি শোধন প্রক্রিয়ায় ক্রটি থাকায় নগরবাসী অনেক ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ পানি
থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে নগরবাসী পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশে ১৯৯১ সালের এক
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে নগরবাসীর দরিদ্রপীড়িত ৪০ শতাংশ অধিবাসী স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পানি পায় না। উন্নত
বিশ্বের শহরগুলোতে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহৃত পানি শোধনের সাহায্যে বিশুদ্ধ করে খাবার পানি হিসেবে ব্যবহারের
ফলে হেপাটাইটিস রোগের বিস্তার ঘটেছে। পানি ক্লোরিনায়ন প্রক্রিয়ায় কিছু ক্লোরিন মিশ্রণ সৃষ্টি হয় যা পানির
বিকার ঘটায়।
অন্যান্য পরিবেশগত সমস্যা : উন্নয়নশীল দেশগুলোর শহরগুলোতে গৃহায়ন সমস্যা একটি বড় সমস্যা যা
থেকে শহরাঞ্চলে বিভিন্ন পরিবেশগত সমস্যার সৃষ্টি হয়। উন্নয়নশীল দেশের শহরগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির
তুলনায় স্থায়ী বাসগৃহের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি। ১৯৮৫-৮৯ অন্তবর্তী বছরগুলোর প্রতি বছর ১০০টি নতুন
পরিবারের জন্য মাত্র ৩৮টি স্থায়ী বাসস্থান নির্মিত হয়েছে। এর ফলে অধিকাংশ শহরে বস্তি গড়ে উঠেছে যেগুলো
শহরের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ এলাকা দখল করে রেখেছে। এছাড়াও ভাসমান জনসংখ্যা আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি
পেয়েছে। ফলে শহরের বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করছে এবং বিভিন্নভাবে রোগব্যাধি
ছড়িয়ে শহরের পরিবেশকে নষ্ট করছে।
নগরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ একটি আর একটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিশ্বের বড় বড়
শহরের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনসংখ্যা বেকার, আংশিক বেকার অথবা নি¤œবিত্ত শ্রেণীর। এরা বিভিন্নভাবে জীবন
ধারণ করে এবং বস্তি বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করে। এরা নাগরিক সর্বপ্রকার সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে
নগরের বস্তিগুলো বিভিন্ন প্রকার অপরাধ জগতের আশ্রয় কেন্দ্র। বড় বড় শহর মানেই বিভিন্ন অঞ্চল থেকে
জনসংখ্যার সমাবেশ। ফলে সামাজিক বিধি নিষেধ ততটা কার্যকর না হওয়ায় অপরাধ জগত খুবই সক্রিয়।
উন্নত দেশের বড় বড় শহরগুলোতে পরিবার কাঠামো অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে শিশুদের মধ্যে অপরাধ
প্রবণতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
নিচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত উত্তর দিন :
১. তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহে সরবরাহকৃত পানি কিভাবে দূষিত হয়?
২. উন্নত বিশ্বের দেশসমূহে ব্যবহৃত পানি বিশুদ্ধ করে ব্যবহারের ফলে কি রোগ হয়ে থাকে?
৩. ক্লোরিনায়ন প্রক্রিয়ায় কিভাবে পানির বিকার ঘটে?
৪. শহরে বস্তি কেন গড়ে উঠেছে?
৫. বড় বড় শহরের অপরাধ জগতের আশ্রয় কেন্দ্র কোথায় অবস্থিত?
৬. অপরাধের আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে উঠার কারণ কি?
নিচে পাঠটির একটি সারাংশ দেওয়া হয়েছে। সারাংশটি পাঠ করে পাঠটি সম্বন্ধে আপনার ধারণা আরও পরিষ্কার
করে নিন।
পাঠসংক্ষেপ :
পৃথিবীর অধিকাংশ বৃহৎ আকারের নগরগুলো বিভিন্ন পরিবেশগত সমস্যায় জর্জরিত। শিল্প বিপ্লবের পরবর্তীতে
শিল্পায়ন ও অন্যান্য বিভিন্ন কারণে শহরের জনসংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এই সমস্ত শহরগুলোর
অধিকাংশই ভারসাম্যহীন হয়ে বিভিন্ন পরিবেশগত সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এই সমস্ত পরিবেশগত সমস্যার মধ্যে
বায়ু দূষণ, যানজট, কঠিন বর্জ্য নিষ্কাশন অব্যবস্থা, অপর্যাপ্ত ও ক্রটিযুক্ত পয়ঃপ্রণালী ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা,
গৃহের অপ্রতুলতা, অধঃপতিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ অন্যতম।
বায়ু দূষণ বর্তমানে বড় বড় শহরগুলোর অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে বিবেচিত। বায়ু দূষণ মূলত বিভিন্ন
মোটরযানের ধোঁয়া থেকে উৎপন্ন গ্যাসের¯œারা হয়ে থাকে। বায়ু দূষণের ফলে বিভিন্ন মারাত্মক রোগ ব্যাপক
আকারে বিস্তার লাভ করছে। উন্নত বিশ্বে জন প্রতি মোটরযান ও অন্যান্য পরিবহনের সংখ্যা বৃদ্ধি বায়ু দূষণের
অন্যতম কারণ। অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশসমূহে অপ্রশস্ত রাস্তাঘাট, রাস্তা অনুপাতে বিভিন্ন যানবাহনের সংখ্যা
বৃদ্ধির কারণে যানজট এই দেশসমূহের শহরগুলোর নিত্য নৈমিত্তিক সমস্যা। বড় বড় শহরগুলোতে কঠিন বর্জ্যরে
পরিমাণ আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে যা নিয়মিত নিষ্কাশন করে শহরের পরিবেশকে পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত
দুরূহ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়াও ক্রটিযুক্ত ও অপ্রতুল পয়ঃপ্রণালী ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা,
সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের মানবেতর জীবনযাপন, সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে অপরাধ প্রবণতার হার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি
নগরের পরিবেশকে নষ্ট করছে। এই সমস্ত পরিবেশগত সমস্যা নিরসনে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
অনুশীলনী :
পাঠটি কয়েকবার ভালভাবে পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন১. নগরের প্রধান পরিবেশগত সমস্যাগুলো উল্লেখ করে সমস্যার প্রকৃতি ও কারণসমূহ আলোচনা করুন।
২. বায়ু দূষণ কি কি কারণে হয়? বায়ু দূষণের প্রকৃতি ও বায়ু দূষণজনিত রোগব্যাধিগুলোর নাম লিখুন।
৩. শহরে যানজট কেন সৃষ্টি হয়? যানজটের ফলে কিভাবে পরিবেশের ক্ষতি হয়?
৪. কঠিন বর্জ্য¯œারা কিভাবে পরিবেশ দূষণ হয়? কঠিন বর্জ্য¯œারা পরিবেশ দূষণের প্রকৃতি বর্ণনা করুন।
৫. নগরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থার সমস্যা সম্বন্ধে লিখুন।
৬. নগরের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশগত সমস্যা সম্বন্ধে লিখুন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন :
১.সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন (সময় ৩ মিনিট):
১. ১. কখন পর্যন্ত নগরীয় পরিবেশের উপাদানের মধ্যে ভারসাম্যতা বজায় ছিল ?
ক. শিল্প বিপ্লবের পূর্বে খ. শিল্প বিপ্লবের পরে গ. উপনিবেশ স্থাপনের পর
১.২. গ্রাম থেকে শহরে মানুষের অভিগমনের হার কখন থেকে বৃদ্ধি পায় ?
ক. কৃষি বিপ্লবের পর খ. শিল্প বিপ্লবের পর গ. শিল্প বিপ্লবের পূর্বে
১.৩. কোন সালে বিশ্ব জনসংখ্যার ৬০ শতাংশই শহরে বাস করবে ?
ক. ২০২৫ খ. ১৯০৭ গ. ১৯১০
২. শূন্যস্থান পূরণ করুন ( সময় ৩ মিনিট) :
২.১ উন্নত বিশ্বে পরিবেশ দূষণের মূলে রয়েছে .......................বা ......................সম্পদ।
২.২ ......................বাতাস বিশ্বের বড় বড় শহরের অন্যতম প্রধাণ সমস্যা।
২.৩ বড় বড় শহরে ...................বর্তমান নগর সভ্যতার একটি ক্ষতিকর অবদান।
সংক্ষিপ্ত উত্তর দিন ( সময় ৮ মিনিট) :
১. বায়ু দূষণের কারণে কি কি রোগ হতে পারে ?
২. যানজট সৃষ্টির কারণ কি ?
৩. অনুন্নত বিশ্বের দেশসমূহে কঠিণ বর্জ্য অপসারণের ক্ষেত্রে প্রধানত কিসের অভাব?
৪. ক্লোরিনায়ন প্রক্রিয়ায় কিভাবে পানির বিকার ঘটে?
রচনামূলক প্রশ্ন :
১. নগরের প্রধান পরিবেশগত সমস্যাগুলো উল্লেখ করে সমস্যার প্রকৃতি ও কারণসমূহ আলোচনা করুন।
২. বায়ু দূষণ কি কি কারণে হয় ? বায়ু দূষণজনিত ব্যাধিসমূহের নাম লিখুন।
৩. শহরে যানজট কেন সৃষ্টি হয় ? যানজটের ফলে কিভাবে পরিবেশের ক্ষতি হয় ?
৪. কঠিন বর্জ্য¯œারা পরিবেশ দূষণের প্রকৃতি বর্ণনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]