পর্যাবৃত্ত বাজার কাকে বলে ?
কিভাবে বাজার চক্রের সৃষ্টি হয় ?


পর্যাবৃত্ত বাজার (চবৎরড়ফরপ গধৎশবঃ) :
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কোন নির্দিষ্ট স্থানে পণ্য ও সেবার যে খুচরা ক্রয়-বিক্রয় সপ্তাহের একটি অথবা কয়েকটি
নির্দিষ্ট দিনে সংঘটিত হয় তাকে পর্যাবৃত্ত বাজার বলে। পর্যাবৃত্ত বাজার পদ্ধতি প্রধানত পৃথিবীর সেই সমস্ত দেশে
দেখা যায় যে সমস্ত দেশে কৃষক স¤প্রদায় মূলত ক্ষুদ্র কৃষক এবং কৃষি শ্রমিক। তবে উন্নত বিশ্বে, বিশেষ করে,
পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন শহরে স্থায়ী বাজারের অতিরিক্ত পর্যাবৃত্ত বাজার বসে।
পর্যাবৃত্ত বাজার বিকাশের কারণ :
ক. বাজারে সরবরাহকৃত দ্রব্যের মাথাপিছু চাহিদা কম, কারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কম;
খ. পরিবহন ব্যবস্থা অনুন্নত বা অনেকটা আদিম প্রকৃতির হওয়ায় বাজার এলাকার পরিসর সীমাবদ্ধ হয়;
গ. দোকান পাঠ বা বাজার স্থায়ী ভিত্তিতে টিকে থাকার জন্য সামগ্রিক চাহিদার পরিমাণ যথেষ্ট নয়।
এই সমস্ত কারণে পণ্য বিক্রেতা বা ব্যবসায়ীরা পর্যাবৃত্ত বাজারের নির্দিষ্ট দিনে এক বাজার থেকে অন্য বাজারে
নিয়মিতভাবে চক্রাকারে ঘুরে টিকে থাকার জন্য ব্যবসা বাণিজ্য বা পণ্যের চাহিদা সংগ্রহ করে যাতে তাদের
প্রান্তিক চাহিদা মেটে। পর্যাবৃত্ত বাজারে পণ্য সরবরাহ নির্ভর করে প্রত্যেক স্বতন্ত্র ব্যবসায়ীর এক বাজার থেকে
অন্য বাজারে চলাচলের উপর। ব্যবসায়ীরা এক বাজার থেকে অন্য বাজারে পণ্য বহন করে বেড়ায়। পর্যাবৃত্ত
বাজারের দুটি বিশেষ দিক রয়েছে। ব্যবসায়ীর দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যাবৃত্ত বাজারে নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট স্থানে চাহিদা
কেন্দ্রীভূত হয় এবং ভোক্তার দৃষ্টিকোণ থেকে বাজারের পর্যাবৃত্ত একদিনে প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা পাওয়ার
দূরত্ব কমিয়ে দেয়। এছাড়াও পর্যাবৃত্ত বাজারের আর একটি বিশেষ দিক হলো স্বয়ংভোগী বা ক্ষুদ্র কৃষক পরিবার
তাদের উদ্ধৃত্ত উৎপাদন বাজারে বিক্রি করে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনতে পারে।
পর্যাবৃত্ত বাজারের ব্যবসায়ীর ন্যূনতম চাহিদা (ঞযৎবংযড়ষফ) পূরণের জন্য একবাজার থেকে অন্য বাজারে
ঘোরার ফলে এক ধরনের বাজার চক্রের সৃষ্টি হয়। পর্যাবৃত্ত বাজার চক্রে বিভিন্ন বাজারের স্থান এবং দিনের মধ্যে
একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ পরম্পরা লক্ষ্য করা যায়। কোন বিশেষ অঞ্চলে পর্যাবৃত্ত বাজারের স্থান ও দিন এমনভাবে
নির্ধারিত হয় যাতে ব্যবসায়ী বা বিক্রেতার এক বাজার থেকে অন্য বাজারে যাতায়াত খরচ ন্যূনতম হয় এবং
বিক্ষিপ্তভাবে বসবাসকারী গ্রামীণ অধিবাসীরা সারা সপ্তাহ ধরে কোন না কোন বাজারের সুবিধা পেয়ে থাকে।
তবে পর্যাবৃত্ত বাজারের অবস্থান এবং বাজারের দিন বন্টনের পিছনে এই দুটো ধারণা কাজ করছে মনে করা
হলেও প্রধান যে বিষয়টি কাজ করছে তা হলো পাশাপাশি বাজারগুলো ভিন্ন ভিন্ন দিনে ভিন্ন ভিন্ন পণ্য সরবরাহ
করে এবং বাজারগুলোর অবস্থান কেন্দ্রীয় স্থান মানানুক্রম বিভিন্ন পর্যায়ে থাকে। ফলে পর্যাবৃত্ত বাজারের একটি
উচ্চক্রম ধারা লক্ষ্য করা যায় যা পণ্যের সরবরাহ ও ক্রেতার সমাবেশ¯œারা প্রমাণিত হয়।
বিভিন্ন দেশে পর্যাবৃত্ত বাজারের এই পর্যায় বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। চীনে তিন পর্যায়ের পর্যাবৃত্ত বাজার
রয়েছে। যেমন নিয়মিত (ঝঃধহফধৎফ), মধ্যবর্তী (ওহঃবৎসবফরধঃব) ও কেন্দ্রীয়(ঈবহঃৎধষ)। আবার মরক্কোতে
স্থানীয় (খড়পধষ) ও আঞ্চলিক (জবমরড়হধষ) এই দুই পর্যায়ের পর্যাবৃত্ত বাজার দেখা যায়। স্থানীয় পর্যাবৃত্ত
বাজারের ১০ থেকে ১২ মাইল ব্যাসার্ধের বাণিজ্য অঞ্চল থাকে। এই বাণিজ্য অঞ্চলের কেন্দ্র বিক্ষিপ্তভাবে
বসবাসকারী স্বয়ংভোগী কৃষক স¤প্রদায়কে সেবা দান করে। আঞ্চলিক পর্যাবৃত্ত বাজারের ব্যাসার্ধ ২০ মাইলের
মতো হয় এবং আরও অধিক সংখ্যক লোকসংখ্যা এই আঞ্চলিক বাজারের সেবা পেয়ে থাকে। এই বাজার প্রধান
যোগাযোগ রাস্তার মিলিত স্থানে এবং পূরক উৎপাদন বলয়ের সীমান্ত বরাবর অবস্থিত হয়।
জনসংখ্যার ঘনত্ব বাজারের পর্যাবৃত্তকে প্রভাবিত করে। সাধারণত জনসংখ্যার ঘনত্ব যত বেশি হবে, সামগ্রিক
চাহিদা তত বৃদ্ধি পাবে এবং বাজারের সংঘটনের হারও তদানুসারে বৃদ্ধি পায়। অবশেষে দৈনন্দিন বাজারে
পরিণত হয়। মাথাপিছু চাহিদার ক্ষেত্রেও একই রকমভাবে বলা যায় যে, কৃষকের আয় বাড়লে অথবা বিক্রয়ের
জন্য উদ্বৃত্ত বাড়তে শুরু করলে মাথাপিছু চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং সাথে সাথে সামগ্রিক চাহিদাও বাড়ে।
ফলশ্রæতিতে পর্যাবৃত্তের হারও বৃদ্ধি পায়। অবশেষে পর্যাবৃত্ত বাজার স্থায়ী দৈনন্দিন বাজারে পরিণত হয়।
পর্যাবৃত্ত চক্র সাধারণত দুইভাবে নির্ধারিত হয়- মহাকাশের গ্রহ, নক্ষত্র ইত্যাদির চলাচলের সময়সূচী অনুসারেযাকে সহজাত বা প্রাকৃতিক বাজার চক্র বলে, আবার কোন প্রাকৃতিক বস্তুর চলাচল অনুসরণ না করে
উদ্দেশ্যমূলকভাবে নির্ধারণ করা হয়, যাকে কৃত্রিম বাজার চক্র বলে। ১০ দিনের বাজার চক্র চান্দ্র মাসের সাথে
সম্পৃক্ত এবং ৭ দিনের বাজার চক্র খ্রিষ্টান সময়সূচী অনুসরণ করে যা সম্পূর্ণরূপে কৃত্রিম।
নিচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত উত্তর দিন :
১. পর্যাবৃত্ত বাজার কাকে বলে?
২. কোন প্রকারের দেশসমূহে পর্যাবৃত্ত বাজার দেখা যায়?
৩. পর্যাবৃত্ত বাজার বিকাশের কারণ কি কি?
৪. পর্যাবৃত্ত বাজারের ব্যবসায়ীরা কি ভাবে পণ্যের চাহিদা সংগ্রহ করে?
৫. পর্যাবৃত্ত বাজারের পণ্য বিক্রেতাকে টিকে থাকার জন্য কি করতে হয়?
৬. পর্যাবৃত্ত বাজারের ব্যবসায়ী কেন এক বাজার থেকে অন্য বাজারে ঘুরে বেড়ায়?
৭. পর্যাবৃত্ত বাজারের বিশেষ তিনটি দিক কি কি?
৮. পর্যাবৃত্ত বাজারের স্থান ও দিন কিভাবে নির্ধারিত হয়?
৯. বাজারের পর্যাবৃত্তকে কি প্রভাবিত করে ?
১০. পর্যাবৃত্ত চক্র কিভাবে নির্ধারিত হয়?
মেলা (ঋধরৎ) :
বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র প্রদর্শনী ও আমোদ প্রমোদের ব্যবস্থাসহ পণ্য বিক্রয়ের জন্য যে লোক সমাবেশ ঘটে তাকে
মেলা বলে। মেলাকে পর্যাবৃত্ত বাজারের পরিপূরক বলা চলে। মেলার সাথে পর্যাবৃত্ত বাজারের পার্থক্য রয়েছে।
মেলা দীর্ঘদিনের ব্যবধানে বসে এবং এর অর্থনৈতিক কার্যক্রমে আঞ্চলিক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। মেলা ও
পর্যাবৃত্ত বাজারের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য থাকলেও মেলার সূচনা, বিকাশ, পণ্যের বৈশিষ্ট্য, সংঘটনের মধ্যে
ব্যবধান, পরিসর, চাহিদা ইত্যাদি পর্যাবৃত্ত বাজার থেকে ভিন্ন প্রকৃতির।
মেলার সূত্রপাত হয় প্রাগঐতিহাসিক যুগে কোন স্থানে লোক সমাবেশ থেকে। পরবর্তীতে ধর্মীয় কারণে কোন
পুণ্যস্থান বা তীর্থস্থানে অথবা সিদ্ধ ব্যক্তির স্মরণে যে ধর্মীয় সমাবেশ হতো, সেই সমস্ত সমাবেশ থেকেই মেলার
উৎপত্তি। ইউরোপে গীর্জা প্রাঙ্গণে সিদ্ধ ব্যক্তির স্মরণে যে ধর্মীয় সমাবেশ হতো, সেই সমস্ত সমাবেশ উপলক্ষ
করে স্বল্প দিনের ব্যবধানে মেলা বসতো। ‘মেলা’ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দের উৎপত্তি হয়েছে ল্যাটিন শব্দ থেকে
যার অর্থ সম্মান প্রদর্শনের জন্য উদ্যাপন বা উৎসব।
মেলার বাণিজ্যিক পরিসর বা পরিসীমা, মেলার পণ্যের বৈশিষ্ট্য এবং অনুষ্ঠানের তাৎপর্য অনুযায়ী বিভিন্ন হয়ে
থাকে। তবে সাধারণত মেলায় বিশেষ পণ্যদ্রব্য বেচাকেনা হয় বলে অনেক দূরবর্তী স্থান থেকে ক্রেতারা মেলায়
আসে। এই বিশেষত্বের কারণেই মেলার বাণিজ্যিক পরিসীমা অনেক বিস্তৃত হয়ে থাকে।
মেলার সময় নির্ধারণ করা অত্যন্ত জটিল ব্যাপার। কারণ মেলার সূত্রপাত অনুযায়ী বিভিন্ন মেলা বৎসরের বিভিন্ন
সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। তবে সাধারণভাবে মেলা ঋতুভিত্তিক হয়ে থাকে। ফলে ঋতু অনুযায়ী মেলা সংঘটনের
সংখ্যা নির্ধারিত হয় যা কৃষিভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় উৎপাদনের সাথে জড়িত। মেলার বিশেষত্ব এবং সময় ও
সংঘঠন মেলার চতুপার্শ্বের উৎপাদন এলাকার উৎপাদনের বিভিন্নতা আলোকপাত করে। ঋতুভিত্তিক কেনা-বেচার
জন্য মেলার কার্যক্রমে প্রায়ই স্থানীয় কৃষির ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা যায় যা বিভিন্ন ঋতু ও জলবায়ুর সাথে
সম্পৃক্ত। এই ধরনের মেলার স্থিতিকাল প্রধানত ঋতুভিত্তিক যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন সময়ে বিভক্ত থাকে
এবং বিশেষ উৎপাদন বা অর্থনৈতিক কর্মকান্ড প্রাধান্য পায়। আমেরিকার কৃষি মেলার প্রাচীনকালের ফসলকাটার
উৎসবের সাথে যোগসূত্র রয়েছে যা ঐতিহ্যগতভাবেই হেমন্তে অনুষ্ঠিত হয়।
মেলার পর্যাবৃত্তে ব্যবসায়ীদের ভ্রাম্যমানতা এবং তাদের পণ্যদ্রব্যের প্রকৃতির সাথে সম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে
মেলা অনুষ্ঠানের সময়ের মধ্যে ধারাবাহিকতা থাকে। ফলে ব্যবসায়ীদের পক্ষে এক মেলা থেকে অন্য মেলায়
অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয়। কাজেই মেলার ব্যবসায়ীদের মধ্যে পর্যাবৃত্ত বাজারের ফেরীওয়ালাদের আচরণেরই
পুনরাবৃত্তি লক্ষ্য করা যায়।
পর্যাবৃত্ত বাজারের মতো মেলাতেও পণ্যের অভ্যন্তরীণ শ্রেণীবিভাগ রয়েছে, বিশেষ করে সাধারণ পণ্যের মেলায়।
এ ধরনের মেলায় বিভিন্ন প্রকারের পণ্যের স্থানীয়করণ ঘটে। পশুমেলার ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। মেলার
অভ্যন্তরীণ বিভক্তিকরণ লেনদেনের জন্য সুবিধাজনক। এর ফলে ভোক্তার অযথা ঘোরাঘুরি ও বিভ্রান্তি লাঘব
হয়।
অতীতে মেলা সাধারণত নিরপেক্ষ ভূমিতে বসতো যেখানে প্রতিদ্ব›িদ্ব বা শক্র গোষ্ঠিগুলো ব্যবসা-বাণিজ্য ও
বেচাকেনার জন্য মিলতে পারতো। তবে মেলা অনুষ্ঠানের স্থান সম্বন্ধে কোন নিয়মসিদ্ধ আইন নেই। দেশ, ধর্ম,
অঞ্চলভেদে মেলার স্থান নির্ধারিত হয়।
মেলার শ্রেণীবিভাগ (ঞুঢ়বং ড়ভ ভধরৎং) :
প্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রধানত পাঁচ ধরনের মেলা দেখা যায় :
(১) ধর্মীয় মেলা (ঞযব জবষরমরড়ঁং ঋধরৎং);
(২) সাধারণ প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের মেলা (ঞযব এবহবৎধষ ঈড়সসড়ফরঃু ঋধরৎং);
(৩) গৃহপালিত পশুর মেলা (ঞযব খরাবংঃড়পশ ঋধরৎং);
(৪) দেশীয় বাজার (ঞযব ঈড়ঁহঃৎু গধৎশবঃং);
(৫) নমুনা মেলা (ঞযব ঝধসঢ়ষব ঋধরৎং)।
(১) ধর্মীয় মেলা (ঞযব জবষরমরড়ঁং ঋধরৎং) : সর্বাপেক্ষা প্রাচীন মেলা যা এখন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে ধর্মভিত্তিক
অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয়। মূলত অধিকাংশ মেলাই বিকাশ লাভ করেছে ধর্মভিত্তিক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র
করে। পরবর্তীতে এই সমস্ত মেলায় বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য, ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম যুক্ত হয়েছে।
(২) সাধারণ প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের মেলা (ঞযব এবহবৎধষ ঈড়সসড়ফরঃু ঋধরৎং) : সেই সমস্ত দেশে দেখা
যায় যেখানে নিয়মিত লেনদেনের কোন নিশ্চয়তা নেই এবং যেখানে পরিবহন ব্যবস্থা ও মাধ্যম খুবই সীমিত।
এই ধরনের মেলাই বৃহত্তর ব্যবসা বাণিজ্যের একমাত্র মাধ্যম।
অনেক সমাজে সাময়িক যুদ্ধবিরতির সময় কোন নিরপেক্ষ স্থানে এই পর্যায়ের লেনদেন অনুষ্ঠিত হয়।
ঐতিহাসিক সূত্রে এই ধরনের সমাজের অধিকাংশ বাণিজ্যই ছিল সীমান্তবর্তী বাণিজ্য। এই বাণিজ্যের উদ্ভবই হয়
সীমান্ত বাণিজ্য এবং কাফেলা (ঈধৎধাধহ) পরিবহন থেকে। উত্তর আফ্রিকায় কাফেলার সমাবেশ স্থলে ব্যবসাবাণিজ্যের জন্য সমাবেশ থেকে এই মেলার জন্ম হয়। মরুভ্রমণকারী কাফেলা দল নিজেদের প্রয়োজনে উৎসবের
সময়ে এক জায়গায় মিলিত হতো। পরবর্তীতে এই ধরনের মেলা ধর্মীয় ঘটনার সাথে জড়িত হয়ে যায়।
(৩) গৃহপালিত পশুর মেলা (ঞযব খরাবংঃড়পশ ঋধরৎং) : এই ধরনের মেলা সর্বাপেক্ষা প্রাচীণ এবং এখন
পর্যন্ত একইভাবে টিকে আছে। এই মেলার উৎস স্থল পল্লী অঞ্চল। বৎসরের অধিকাংশ সময় ব্যস্ত থাকতে হয়
এমন কৃষি অর্থনীতিতে অল্প সময়ের ব্যবধানে এই মেলা বসে। চারণভিত্তিক যাযাবর সমাজে মেলা অনুষ্ঠানের
মধ্যে ব্যবধান ঋতু পরিবর্তন এবং পশুর পালের বিচরণের সাথে সম্পর্কিত। বৎসরের একটি নির্দিষ্ট ঋতুতে পশুর
পাল নিয়ে জমায়েত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা থেকেই এই মেলার উদ্ভব। এই ধরনের মেলা প্রথমদিকে প্রায় সব
সময়ই উন্মুক্ত পল্লী এলাকায় অনুষ্ঠিত হতো। সময়ের পরিবর্তনে এই স্থানগুলো জনবসতির রাজস্ব কেন্দ্রে
পরিণত হয়।
(৪) দেশীয় বাজার (ঞযব ঈড়ঁহঃৎু গধৎশবঃং) : কৃষি পণ্যের লেনদেনের জন্য সমাবেশই মূলত দেশীয়
বাজার। এই সমাবেশই নগর জনপদ বিকাশের একটি কারণ। যখন নগর হিসেবে বিকাশ লাভ করে তখন এতে
ক্রমান্বয়ে নগরের কার্যক্রম যোগ হতে থাকে এবং সবশেষে এটি পল্লী অঞ্চলের সমস্ত উৎপাদনের সংগ্রাহক
কেন্দ্রে পরিণত হয়। এইভাবে শহর বাজার গড়ে উঠে।
(৫) নমুনা মেলা (ঞযব ঝধসঢ়ষব ঋধরৎং) : নমুনা মেলায় অভ্যাগত এবং ক্রেতারা শুধুমাত্র নমুনা কেনা-বেচা
করে এবং নমুনা দেখে পছন্দ অনুযায়ী পণ্যের ফরমায়েস দেয়। এইভাবে পণ্যদ্রব্য বিক্রেতা থেকে ক্রেতার কাছে
হস্তান্তর হয় মেলায় যার ভৌত উপস্থিতি নাও থাকতে পারে। আন্তর্জাতিক মেলায় পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে
ব্যবসায়ীরা নিজেদের দেশের উৎপাদন অথবা শিল্পজাত দ্রব্যের নমুনা নিয়ে উপস্থিত হয় এবং এই সমস্ত নমুনা
দেখে বিভিন্ন দেশ অন্যান্য দেশের উৎপাদিত পণ্যের ফরমায়েশ দেয়।
নিচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত উত্তর দিন :
১. মেলা কাকে বলে?
২. মেলাকে পর্যাবৃত্ত বাজারের কি বলা হয়?
৩. মেলার সাথে পর্যাবৃত্ত বাজারের প্রধান পার্থক্য কি?
৪. মেলার সূত্রপাত হয় কখন এবং কি ভাবে?
৫. মেলার বাণিজ্যিক পরিসীমা অনেক বিস্তৃত কেন?
৬. মেলা সংঘটিত হয় কি ভিত্তিক?
৭. মেলার সংঘটন ও সময় কি আলোকপাত করে?
৮. মেলা অনুষ্ঠানের সময়ের মধ্যে কেন ধারাবাহিকতা থাকে?
৯. মেলায় ভোক্তার ঘোরাঘুরি কিভাবে লাঘব হয়?
১০. মেলা অতীতে কোথায় বসতো?
১১. প্রাচ্যের দেশগুলোতে কয় ধরনের মেলা সাধারণত দেখা যায়?
নিচের সারাংশটি কয়েকবার পড়ে পর্যাবৃত্ত বাজার ও মেলা সম্বন্ধে আপনার ধারণাকে আরও স্পষ্ট করুন।
পাঠসংক্ষেপ :
কোন নির্দিষ্ট স্থানে সপ্তাহের কয়েকটি নির্দিষ্ট দিনে পণ্য ও সেবার ক্রয় বিক্রয়কে পর্যাবৃত্ত বাজার বলে। পর্যাবৃত্ত
বাজার প্রধানত স্বয়ংভোগী কৃষি প্রধান দেশে দেখা যায় যেখানে কৃষক স¤প্রদায় মূলত ক্ষুদ্র কৃষক ও কৃষি
শ্রমিক। তবে উন্নত বিশ্বের দেশসমূহেও স্থায়ী বাজারের অতিরিক্ত পর্যাবৃত্ত বাজার বসে, যেমন রবিবারের
বাজার। মাথাপিছু কম চাহিদা, অনুন্নত পরিবহন মাধ্যম, সামগ্রিক চাহিদার পরিমাণ কম থাকার কারণে পর্যাবৃত্ত
বাজার বিকাশ লাভ করেছে। একটি নির্দিষ্ট দিনে একটি নির্দিষ্ট স্থানে চাহিদা কেন্দ্রীভূত হওয়ার কারণে পর্যাবৃত্ত
বাজারের বিক্রেতারা তাদের প্রান্তিক চাহিদা মেটানোর জন্য এক বাজার থেকে অন্য বাজারে পরিভ্রমণ করে।
আবার ভোক্তারাও একটি নির্দিষ্ট দিনে তাদের উদ্বৃত্ত উৎপাদন বিক্রি করে প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা ক্রয়ের সুযোগ
পায়। বিক্রেতাদের এক বাজার থেকে অন্য বাজারে ঘোরার কারণে একটি বাজার চক্রের সৃষ্টি হয়। এই বাজার
চক্রে স্থান ও দিনের মধ্যে একটি সামঞ্জস্য লক্ষ্য করা যায়। বাজার চক্র এমনভাবে সংঘটিত হয় যে বিক্রেতার
ন্যূনতম যাতায়াত খরচ পড়ে এবং গ্রামবাসীরা সারা সপ্তাহ ধরে কোন না কোন বাজারের সুবিধা পায়। পাশাপাশি
পর্যাবৃত্ত বাজার ভিন্ন ভিন্ন দিনে ভিন্ন ভিন্ন পণ্য সরবরাহ করে। এর ফলে বিভিন্ন বাজারের মধ্যে একটি মানানুক্রম
বিন্যাস লক্ষ্য করা যায়।
বিভিন্ন দেশে পর্যাবৃত্ত বাজার বিভিন্ন পর্যায়ের হয়ে থাকে। কোন কোন দেশে নিয়মিত, মধ্যবর্তী ও কেন্দ্রীয়,
আবার কোথাও স্থানীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের হয়। জনসংখ্যার ঘনত্ব বাজারের পর্যাবৃত্তকে প্রভাবিত করে।
জনসংখ্যার ঘনত্ব বৃদ্ধি পেলে, কৃষকের মাথাপিছু ও সামগ্রিক আয় বাড়লে পর্যাবৃত্ত বাজারের সংঘটনের হার বৃদ্ধি
পায় এবং ক্রমে নিয়মিত বাজারে পরিণত হয়। পর্যাবৃত্ত বাজারের সংঘটন সাধারণত প্রাকৃতিক বস্তুর সময়সূচি
অনুযায়ী হয় যা সাধারণত ১০ দিনের চক্র হয়ে থাকে অথবা ৭ দিনের কৃত্রিম চক্রও হয়।
মেলা ও পর্যাবৃত্ত বাজারের প্রকৃতির মধ্যে অনেক সাদৃশ্য থাকলেও কিছু বৈশাদৃশ্যও রয়েছে। মেলাকে পর্যাবৃত্ত
বাজারের পরিপূরক বলা চলে। মেলায় বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র প্রদর্শনী, আমোদ-প্রমোদের ব্যবস্থাসহ পণ্য ক্রয়
বিক্রয় হয়ে থাকে। মেলার উৎপত্তি প্রধানত ধর্মীয় সমাবেশ থেকে। মেলার পরিসীমা, পণ্যের বৈশিষ্ট্য ও
অনুষ্ঠানের তাৎপর্য অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। তবে বিশেষ মেলায় বিশেষ পণ্য ক্রয়-বিক্রয় হয়।
ফলে বহু দূর দেশ থেকে মেলায় লোক সমাগম হয়ে থাকে। মেলা কৃষি ব্যবস্থার সাথে জড়িত বলে বৎসরের
বিভিন্ন সময়ে ঋতুভিত্তিক মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ফলে স্থানীয় কৃষির ধারাবাহিকতা ধরা পড়ে। মেলার পর্যাবৃত্তে
ব্যবসায়ীদের আচরণ পর্যাবৃত্ত ব্যবসায়ীদের ভ্রাম্যমান আচরণের অনুরূপ হয়ে থাকে। অতীতে মেলা সাধারণত
নিরপেক্ষ ভূমিতে অনুষ্ঠিত হতো। তবে দেশ, ধর্ম, অঞ্চলভেদে মেলার স্থান নির্ধারিত হয়। মেলা প্রধানত পাঁচ
প্রকারের- ধর্মীয় মেলা, সাধারণ পণ্যদ্রব্যের মেলা, গৃহপালিত পশুর মেলা, দেশীয় বাজার ও নমুনা মেলা।
অনুশীলনী :
১. পর্যাবৃত্ত বাজারের সংজ্ঞা লিখুন। পর্যাবৃত্ত বাজার বিকাশের কারণগুলো বর্ণনা করুন।
২. পর্যাবৃত্ত বাজারের বৈশিষ্ট্যসমূহ বিস্তারিত আলোচনা করুন।
৩. মেলার সংজ্ঞা দিন। মেলার বিকাশ ও বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে লিখুন।
৪. মেলা কয় প্রকারের ও কি কি? প্রত্যেক প্রকার মেলার বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করুন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন : ৪.৮
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন :
১. সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন ( সময় ৩ মিনিট):
১.১ পণ্য বিক্রেতারা পণ্য বিক্রয়ের জন্য কেন পর্যাবৃত্ত বাজারের নির্দিষ্ট দিনে এক বাজার থেকে অন্য বাজারে
নিয়মিত ঘুরে ?
ক. বাজার যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে
খ. পণ্য বিক্রয়ের জন্য
গ. ব্যবসায়ীর ন্যূনতম চাহিদা মেটানোর জন্য
১.২ পণ্যের সরবরাহ ও ক্রেতার সমাবেশ¯œারা কি প্রমাণিত হয় ?
ক. পর্যাবৃত্ত বাজারের একটি মানানুক্রম ধারা
খ. পর্যাবৃত্ত বাজারের গুরুত্ব
গ. পণ্যের চাহিদা
১.৩ চীনে কত পর্যায়ের পর্যাবৃত্ত বাজার রয়েছে ?
ক. দুই খ. তিন গ. চার
১.৪ মেলা শব্দটির ইংরেজী প্রতিশব্দের উৎপত্তি কোন ভাষা থেকে?
ক. জার্মানী খ. ফ্রেঞ্চ গ. ল্যাটিন :
২.১ পর্যাবৃত্ত বাজারে ব্যবসায়ীরা এক বাজার থেকে অন্য বাজারে ..............বহন করে বেড়ায়।
২.২ পর্যাবৃত্ত ব্যবসায়ীর এক বাজার থেকে অন্য বাজারে ঘোরার ফলে এক ধরনের বাজার ...........সৃষ্টি হয়।
২.৩ পর্যাবৃত্ত বাজারের ১০ দিনের বাজার চক্র ................মাসের সাথে সম্পৃক্ত।
২.৪ মেলার সাথে পর্যাবৃত্ত বাজারের ..................রয়েছে।
২.৫ মেলার সূত্রপাত হয় ...................যুগে কোন স্থানে লোক সমাবেশ থেকে।
২.৬ মেলার পর্যাবৃত্তে ব্যবসায়ীদের .....................এবং তাদের ...................প্রকৃতির সাথে সম্পর্ক
রয়েছে।
১. পর্যাবৃত্ত বাজার কাকে বলে ?
২. কিভাবে বাজার চক্রের সৃষ্টি হয় ?
৩. পর্যাবৃত্ত বাজারের ব্যবসায়ীরা কিভাবে পণ্যের চাহিদা সংগ্রহ করে?
৪. পর্যাবৃত্ত বাজার বিকাশের তিনটি কারণ কি কি ?
৫. পর্যাবৃত্ত চক্র কিভাবে নির্ধারিত হয় ?
৬. মেলা কাকে বলে?
৭. মেলাকে পর্যাবৃত্ত বাজারের কি বলা হয়?
৮. মেলার বাণিজ্যিক পরিসীমা পর্যাবৃত্ত বাজার অপেক্ষা অনেক বিস্তৃত কেন ?
৯. প্রাচ্যের দেশগুলোতে কয় ধরনের মেলা দেখা যায় ও কি কি?
রচনামূলক প্রশ্ন :
১ পর্যাবৃত্ত বাজারের সংজ্ঞা লিখুন। পর্যাবৃত্ত বাজার বিকাশের কারণ ও বৈশিষ্ট্যাবলী আলোচনা করুন।
২ মেলার সংজ্ঞা লিখুন। মেলার বিকাশ ও বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে লিখুন।
৩ প্রাচ্যের দেশসমূহে প্রধানত কত প্রকারের মেলা বসে? প্রত্যেক প্রকার মেলার বৈশিষ্ট্য লিখুন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]