প্রবৃদ্ধি মেরু বলতে কি বোঝায় ? পেরোক্সের প্রবৃদ্ধি মেরুর ধারণা সম্বন্ধে লিখুন।


 প্রবৃদ্ধি মেরুর প্রয়োজনীয়তা।
প্রবৃদ্ধি মেরু বা প্রবৃদ্ধি কেদ্র (এৎড়ঃিয চড়ষব ড়ৎ এৎড়ঃিয ঈবহঃৎব)
প্রবৃদ্ধি মেরু বা প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র ধারণা দুটি প্রায় সমার্থক এবং সমানভাবে ব্যবহার করা হয়। প্রবৃদ্ধি মেরু
(এৎড়ঃিয চড়ষব) ধারণাটি ১৯৫৫ সালে প্রথম উপস্থাপন করেন ফ্রান্সের অর্থনীতিবিদ এফ. পেরোক্স
(ঋৎধহপড়রং চবৎৎড়ীঁ)। প্রবৃদ্ধি মেরুর ধারণটি সুনির্দিষ্ট পারিসরিক বা স্থানিক কাঠামোয় রূপ দেন জে.আর.
বদেভিল (ঔ. জ. ইড়ঁফবারষষব)। পেরোক্সের মৌলিক প্রবৃদ্ধি মেরুর কোন সুনির্দিষ্ট ভৌগোলিক ব্যাপ্তি নেই।
তবে প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র বা প্রবৃদ্ধি বিন্দু পারিসরিক বা স্থানিক অবস্থান নির্দেশ করে।
প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র ধারণাটি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে আঞ্চলিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যেমন
উন্নয়ন মেরু (উবাবষড়ঢ়সবহঃ চড়ষব), কেন্দ্রীয় বা গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল (ঈড়ৎব জবমরড়হ), আঞ্চলিক কেন্দ্র
(জবমরড়হধষ ঈবহঃৎব), আঞ্চলিক শহর (জবমরড়হধষ ঞড়হি), বাজার কেন্দ্র (গধৎশবঃ ঈবহঃৎব)
ইত্যাদি। উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রের মূল ধারণা থেকে এগুলো
খুব বেশি বিচ্যুত হয়নি।
পেরোক্স প্রবৃদ্ধি মেরুকে অর্থনৈতিকভাবে সক্রিয় বেগমান একটি শক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পেরোক্সের
মতে প্রবৃদ্ধি মেরু একটি প্রধান প্রচালক শিল্প (চৎড়ঢ়ঁষংরাব খবধফরহম ওহফঁংঃৎু) নিয়ে গঠিত হবে এবং
এর অন্তর্ভুক্ত আন্ত-শিল্প পরস্পর সংযুক্তির (খরহশধমব) মাধ্যমে একটি জটিল শিল্প কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত
হবে যা উৎপাদন ও অন্যান্য কর্মকান্ডের উপর প্রভাব বিস্তার করবে। আন্ত-সংযুক্ত শিল্প সেই শিল্পগুলোকে বলা
হয়েছে যেগুলোর মধ্যে কাঁচামাল, পণ্য, তথ্য ইত্যাদির চলাচল রয়েছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সংযুক্তি
তখনই স্থাপিত হয় যখন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো একই প্রক্রিয়াজাত পণ্যদ্রব্য উৎপাদন করে অথবা উৎপাদনের মধ্যে
ধারাবাহিকতা থাকে যা কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে হয়ে থাকে। উদাহরণ হিসেবে গাড়ী প্রস্তুত শিল্পের
উল্লেখ করা যেতে পারে। গাড়ীর বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত হয়ে একটি প্রধান শিল্প প্রতিষ্ঠানে
গাড়ীর বিভিন্ন অংশগুলো জোড়া লাগানো হয় এবং একটি গাড়ী হিসাবে বেরিয়ে আসে। এখানে প্রধান শিল্প
প্রতিষ্ঠানটি একটি প্রচালক শিল্প।
পেরোক্সের প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রের প্রচালক শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং এর অন্তর্ভুক্ত আন্ত-সম্পর্কযুক্ত শাখা শিল্প প্রতিষ্ঠানের
অবস্থান একটি বিমূর্ত (অনংঃৎধপঃ) আদর্শ অর্থনৈতিক পরিসরে চিন্তা করা হয় যা একটি শক্তি কেন্দ্র হিসেবে
কাজ করবে এবং গতিসম্পন্ন হবে। অর্থনৈতিক পরিসরের কেন্দ্র থেকে কেন্দ্রাভিক শক্তি (ঈবহঃৎরঢ়বঃধষ
ঋড়ৎপব) এবং কেন্দ্রাতিগ শক্তির (ঈবহঃৎরভঁমধষ ঋড়ৎপব) প্রভাবে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড যথাক্রমে প্রবৃদ্ধি
কেন্দ্রের দিকে আকর্ষিত হবে এবং প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র থেকে আশেপাশে ছড়িয়ে পড়বে। এর ফলে প্রবৃদ্ধি মেরু দ্রæত
প্রবৃদ্ধি আনতে সক্ষম হবে এবং এই প্রবৃদ্ধির বহুধা প্রভাব অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রে সঞ্চারিত হবে। প্রবৃদ্ধি
কেন্দ্রগুলোকে এক একটি মন্ডল হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায়, যার মধ্যে অর্থনীতি বা শিল্পের প্রতিটি ক্ষেত্র পরস্পর
নির্ভরশীল এবং প্রবৃদ্ধি অনুভূমিক এবং উলম্ব উভয় প্রক্রিয়ায় সঞ্চারিত হয়। তবে পেরোক্সের মতে পারিসরিক বা
স্থানিক এবং শিল্প উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি মেরুর প্রভাবে প্রবৃদ্ধি সব জায়গায় একই সময়ে দৃশ্যমান হয় না।
প্রবৃদ্ধির তীব্রতা বিভিন্ন মাত্রায় উন্নয়ন কেন্দ্র বা উন্নয়ন মেরুতে দৃশ্যমান হয় এবং বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন
দিকে সমগ্র অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে।
বদেভিলের মতে আঞ্চলিক প্রবৃদ্ধি মেরু নগরাঞ্চলে অবস্থিত এক প্রকারের সম্পূরক প্রসারণশীল শিল্প যেগুলো
প্রভাব বলয়ে অতিরিক্ত অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বিকাশে বা উন্নয়নে প্রভাব ফেলে।
প্রচালক এবং আন্ত:সম্পর্কযুক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো কোন অঞ্চলের বিশেষ কয়েকটি কেন্দ্রীয় স্থানে অবস্থিত হবে,
যেখানে
(ক) প্রাকৃতিক সম্পদের কেন্দ্রীকরণ রয়েছে, যেমন পানি, জ্বালানি ইত্যাদি।
(খ) মানব সৃষ্ট সুযোগ সুবিধার কেন্দ্রীকরণ, যেমন যোগাযোগ ব্যবস্থা, সেবা স্থল, অবকাঠামো, শ্রমিক সরবরাহ
ইত্যাদি।
দৈব ঘটনাচক্রেও শিল্প প্রতিষ্ঠানের অবস্থান হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি মেরু ধারণাটিকে
বদেভিল সুস্পষ্ট পারিসরিক বা কাঠামোগত রূপদান করেন। তিনি বলেন প্রবৃদ্ধি মেরুতে বহিস্থ এবং অভ্যন্তরীণ
অর্থনীতির (ঊীঃবৎহধষ ধহফ ওহঃবৎহধষ ঊপড়হড়সরপং) প্রভাবে কর্মকান্ড মেরুকরণ প্রক্রিয়ায় ভৌগোলিকভাবে
গুচ্ছাকারে পুঞ্জিভূত হবে এবং এই মেরুকরণ প্রক্রিয়ায় পুঞ্জিভবন অর্থনীতিতে অভ্যন্তরীণ ও বহি:স্থ অর্থনৈতিক
সাশ্রয় (ঊপড়হড়সরপং ড়ভ ঝপধষব) ক্রিয়াশীল থাকবে।
বহিস্থ ও অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি, পুঞ্জিভবন অর্থনীতি এবং অর্থনৈতিক সাশ্রয় সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার।
পাঠোদ্ধারের সুবিধার্থে এগুলো নিচে বিশ্লেষণ করা হলোবহি:স্থ অর্থনীতি (ঊীঃবৎহধষ ঊপড়হড়সরপং) : শিল্প প্রতিষ্ঠানের বাইরে বিভিন্ন প্রকারের সুযোগ-সুবিধা,
যেমন শ্রমিকের সরবরাহ, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের একটির সাথে অন্যটির সম্পর্কিত অবস্থান ইত্যাদির প্রভাবে
শিল্প উৎপাদন খরচ কমে আসে। ফলে অর্থনৈতিক ভাবে সাশ্রয় হয়।
অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি (ওহঃবৎহধষ ঊপড়হড়সরপং) : অধিক পরিমাণে উৎপাদন করলে প্রতি একক উৎপাদন
খরচ কমে, এবং আর্থিক সাশ্রয় হয়। ফলে গড় উৎপাদন খরচ কমে আসে।
পুঞ্জিভবন অর্থনীতি (অমমষড়সবৎধঃরড়হ ঊপড়হড়সরপং) : কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানের সর্বপ্রকার বহিস্থ এবং
অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা যা বৃহৎ আকারের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের স্থানীয় গুচ্ছবদ্ধতার ফলে
অবস্থানিক সংযোগের কারণে যে অর্থনৈতিক সাশ্রয় দেয়।
অর্থনৈতিক সাশ্রয় বিভিন্নভাবে হয়ে থাকে-
(ক) শাখা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরীণ সাশ্রয় (ঊপড়হড়সরপং ওহঃবৎহধষ ঃড় ঃযব ঋরৎস) : অধিক
পরিমাণে উৎপাদন গড় উৎপাদন খরচ কমায় এবং প্রযুক্তিগত সাশ্রয় আনে, যেমন কাজে দক্ষতা বাড়ে, থোকে
থোকে উৎপাদনের বদলে ধারাবাহিক উৎপাদন উৎপাদন খরচ কমায়, বাজারজাতকরণ ও ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা
আর্থিক সাশ্রয় আনে।
(খ) শাখা শিল্প প্রতিষ্ঠানে বহিস্থ অর্থনৈতিক সাশ্রয় এবং প্রধান শিল্প প্রতিষ্ঠানে অভ্যন্তরীণ সাশ্রয়
(ঊপড়হড়সরপং ঊীঃবৎহধষ ঃড় ঃযব ঋরৎস নঁঃ ওহঃবৎহধষ ঃড় ঃযব ওহফঁংঃৎু) : যখন কোন বিশেষ
অবস্থানে প্রধান শিল্প প্রতিষ্ঠানের স¤প্রসারণ ঘটে তখন নির্ভরশীল ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর একক প্রতি
উৎপাদন খরচ কমে যায়। কোন প্রধান শিল্পের অধীনে পরস্পর নির্ভরশীল ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো কাছাকাছি
অবস্থান অবস্থানিক অর্থনৈতিক (খড়পধষরুধঃরড়হ ঊপড়হড়সরপং) সাশ্রয় আনে। এর ফলে একটি বৃহৎ শ্রমিক
বাজার তৈরি হয়। কাঁচামাল ও পণ্য বিনিময় সহজ হয় এবং শিল্প বর্জ্য পুনঃ প্রক্রিয়াজাতকরণ সম্ভব হয়। সংশ্লিষ্ট
শিল্প সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় স্থাপিত হয় সেগুলো শিল্পের উন্নতি এবং সেবার ক্ষেত্রে কার্যকরী
ভূমিকা রাখে। ফলে শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষ সেবা সহজ ও সুলভ হয়।
(গ) শিল্প প্রতিষ্ঠানের বাইরে অর্থনৈতিক সাশ্রয় যা নগর অভ্যন্তরে অর্থনৈতিক সাশ্রয় আনে
(ঊপড়হড়সরপং ঊীঃবৎহধষ ঃড় ঃযব ওহফঁংঃৎু নঁঃ ওহঃবৎহধষ ঃড় ঃযব টৎনধহ অৎবধ) : যেহেতু বহু শিল্প
প্রতিষ্ঠানের একটি স্থানে পুঞ্জিভবন ঘটে ফলে প্রত্যেকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের গড় খরচ কমে আসে যার প্রভাব পড়ে
নগরের অর্থনীতিতে এবং বিভিন্নভাবে নগরে অর্থনৈতিক সাশ্রয় (টৎনধহরুধঃরড়হ ঊপড়হড়সরপং) আনে।
নগরায়ণ অর্থনীতির প্রভাবে উন্নত শ্রমিক বাজার, বৃহৎ বাজারে প্রবেশাধিকার, ব্যক্তিগত ও সরকারী পর্যায়ে
জনগণ ও শিল্পের জন্য ব্যাপক সেবার সংস্থান করা সম্ভব হয়। এছাড়াও উন্নত পরিবহন, বাণিজ্যিক ও আর্থিক
সুযোগ-সুবিধা, সমাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অবসর ও বিনোদন ইত্যাদি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার সৃষ্টি হয়। ফলে
হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, মিউজিয়াম, থিয়েটার, সিনেমা, ইত্যাদির ব্যাপক প্রসার ঘটে। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রের
নগর অবস্থানে সামগ্রিকভাবে সর্বপ্রকার সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পায়। নগর এলাকায় প্রবৃদ্ধি স্বতঃস্ফূর্ত এবং অব্যাহত
ধারায় প্রবাহিত হয় এবং চতুর্দিকের এলাকাকে প্রভাবিত করে। প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র এক বা একাধিক নগর অঞ্চল নিয়ে
গঠিত হতে পারে।
এই সমস্ত কিছুই ঘটবে প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রের ছড়িয়ে পড়ার প্রভাবের (ঝঢ়ৎবধফ ঊভভবপঃ) ফলে। শিল্পের গতিশীল
প্রচালন ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণ অবস্থা থেকে প্রবৃদ্ধিকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে দেবে। প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রের প্রভাবে আস্তে আস্তে
প্রবৃদ্ধি ছড়িয়ে পড়ার এই প্রক্রিয়া আঞ্চলিক পরিকল্পনাবিদদের আঞ্চলিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে খুবই জনপ্রিয়তা
পেয়েছে। তবে আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রয়োগের জন্য প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রের ধারণাটির আরও উৎকর্ষতা সাধন
করা হয়। অঞ্চলভিত্তিক প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র স্থাপন করে আঞ্চলিক পরিকল্পনাবিদগণ আঞ্চলিক প্রবৃদ্ধির মধ্যে প্রবৃদ্ধির
পার্থক্য সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে স্থানীয় পরিকল্পনা কৌশল উদ্ভাবন করেন। অনগ্রসর অঞ্চলের জন্য আঞ্চলিক
কোন নির্দিষ্ট কেন্দ্রে প্রচালক শিল্প স্থাপন করার সুপারিশ করা হয়। তবে এক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। প্রচালক
শিল্প চিহ্নিত বা নির্ধারণ করা অত্যন্ত জটিল কাজ। এছাড়াও প্রচালক শিল্পের প্রয়োজনে অবকাঠামোগত ভিত্তি
নির্ধারণ করাও কঠিন ব্যাপার।
অধিকন্তু প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রের কার্যকারিতা সম্বন্ধে কিছু প্রশ্ন রয়েছে, যেমন প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র থেকে প্রবৃদ্ধি ছড়িয়ে পড়তে
কত সময়ের প্রয়োজন? বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র থেকে প্রবৃদ্ধির ব্যাপ্তি পারিসরিক বা
স্থানিকভাবে প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকাতেই হয় এবং এর মাধ্যমে নগর উচ্চক্রমের উচ্চ পর্যায়ের কেন্দ্রগুলোই
বেশি উপকৃত হয়। এছাড়াও প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র এমন পর্যায়ে যেতে পারে যখন উৎপাদন ব্যয় সংকোচনের
(ঊপড়হড়সরপং ড়ভ ঝপধষব) এর পরিবর্তে প্রচালক শিল্পের মুনাফা কমতে থাকে, ফলে অর্থনৈতিক ব্যয়
(উরংবপড়হড়সরপং ড়ভ ঝপধষব) বৃদ্ধি পায়।
নগরায়ণ অর্থনীতির সাশ্রয়ের ফলে নগর এলাকায় জনসংখ্যা বেড়ে যায়। ফলে জমির মূল্য বৃদ্ধি পায়, যানজট
সৃষ্টি হয় এবং নগরে বিভিন্ন ধরনের দূষণ শুরু হয়। এছাড়াও প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র কি অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি ছড়াতে
পারবে?
যাই হোক, প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র আঞ্চলিক গঠন বোঝা এবং আঞ্চলিক গঠনের পরিবর্তন সম্বন্ধে পূর্বাহ্নে কিছু বলার
একটি পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে, এই তত্ত¡টি আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানের একটি
অন্যতম প্রধান পন্থা হিসেবে গণ্য করা হয়।
নিচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত উত্তর দিন :
১. প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র ধারণাটি কে উপস্থাপন করেন?
২. প্রবৃদ্ধি মেরুর ধারণাটি পারিসরিক বা স্থানিক কাঠামোয় কে রূপ দেন?
৩. প্রচালক শিল্প কাকে বলা হয়েছে?
৪. প্রচালক শিল্পের অন্তর্গত আন্ত-শিল্পগুলি কি?
৫. কেন্দ্রাভিক শক্তি এবং কেন্দ্রাতিগ শক্তি কি ভাবে প্রবৃদ্ধি আনবে?
৬. প্রবৃদ্ধি মেরুর অবস্থানে কি কি নিয়ামক কাজ করে?
৭. প্রবৃদ্ধি মেরুতে কি কি অর্থনীতির প্রভাবে কর্মকান্ড গুচ্ছাকারে পুঞ্জিভবন হবে?
৮. প্রবৃদ্ধি মেরুতে কর্মকান্ডের/শিল্প প্রতিষ্ঠানের পুঞ্জিভবনের ফলে কি কি ধরনের অর্থনৈতিক সাশ্রয় হয়?
৯. প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র থেকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কি প্রকারে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়বে?
নিচের সারাংশটি পড়ে প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র সম্বন্ধে আপনার ধারণাটি স্পষ্ট করে নিন।
পাঠসংক্ষেপ :
প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রের ধারণাটি আঞ্চলিক উন্নয়ন ও পরিকল্পনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রের
ধারণাটি সুনির্দিষ্ট পারিসরিক বা স্থানিক কাঠামোয় রূপদান করেন জে.আর. বদেভিল। প্রবৃদ্ধি মেরু মূলত
অর্থনৈতিকভাবে বেগবান সক্রিয় একটি শক্তি যা বিভিন্ন কর্মকান্ডকে পুঞ্জিভূত করবে এবং পরবর্তীতে প্রবৃদ্ধি
কেন্দ্রের চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে অর্থনৈতিক উন্নতি আনবে।
প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রটি একটি প্রধান প্রচালক শিল্প এবং এই শিল্পের অন্তর্ভুক্ত পরস্পর ধারাবাহিকভাবে সংশ্লিট কতগুলো
আন্ত:শিল্পের সমন্বয়ে একটি জটিল শিল্প কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং উৎপাদন ও অন্যান্য কর্মকান্ডে প্রভাব
বিস্তার করবে। এই প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রে কেন্দ্রাভিক শক্তি এবং কেন্দ্রাতিগ শক্তির প্রভাবে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড প্রবৃদ্ধি
কেন্দ্রের দিকে আকর্ষিত হবে এবং প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র থেকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়বে- যার বহুধা প্রভাব অর্থনীতির
বিভিন্ন ক্ষেত্রে পড়বে। বদেভিলের মতে প্রবৃদ্ধি মেরু নগরাঞ্চলে অবস্থিত এক জাতীয় সম্পূরক স¤প্রসারণশীল
শিল্প যেগুলো প্রভাব বলয়ে অতিরিক্ত অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বিকাশে সহায়তা করে।
প্রচালক শিল্প এবং আন্ত:সম্পর্ক শিল্পের অবস্থান কিছু প্রাকৃতিক এবং মানুষের সৃষ্টি কিছু সুযোগ সুবিধার কারণে
নির্ধারিত হয়, দৈবাৎ ঘটনাচক্রেও হতে পারে। বদেভিলের মতে বহি:স্থ, অভ্যন্তরীণ এবং পুঞ্জিভবন অর্থনীতির
প্রভাবে কর্মকান্ড মেরুকরণ প্রক্রিয়ায় পুঞ্জিভূত হবে। ফলে বিভিন্নভাবে অর্থনৈতিক সাশ্রয় আসবে- যেমন শাখা
শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সাশ্রয় ও বহিস্থ সাশ্রয়, প্রধানশিল্প প্রতিষ্ঠানে অভ্যন্তরীণ সাশ্রয়,
শিল্প প্রতিষ্ঠান অবস্থানের নগরে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সাশ্রয়। এই সমস্ত সাশ্রয় ঘটবে প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রের ছড়িয়ে
পড়ার প্রভাবে। তবে এই সমস্ত অর্থনৈতিক সাশ্রয় এক পর্যায়ে উৎপাদন ব্যয় সংকোচনের পরিবর্তে অর্থনৈতিক
ব্যয় বৃদ্ধি করতে পারে। এছাড়াও নগরায়ণ অর্থনীতির সাশ্রয়ের ফলে নগরের জনসংখ্যার অতি বৃদ্ধির কারণে
নগরের অর্থনৈতিক ব্যয় বৃদ্ধি এবং অতি নগরায়ণের ক্ষতিকর প্রভাব বৃদ্ধি পেতে পারে।
যাইহোক, প্রবৃদ্ধি মেরু ধারণাটি নগর গঠন এবং আঞ্চলিক পরিকল্পনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অনুশীলনী :
১. প্রবৃদ্ধি মেরু বা প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র বলতে কি বোঝায়? পেরোক্সের প্রবৃদ্ধি মেরুর ধারণাটি কি? প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রের
প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে লিখুন।
২. প্রবৃদ্ধি মেরুতে বদেভিলের মতে কোন অর্থনীতির প্রভাবে কর্মকান্ডের পুঞ্জিভবন হবে এবং এই প্রক্রিয়ায়
কোন কোন অর্থনীতি সক্রিয় থাকে?
৩. অর্থনৈতিক সাশ্রয় কি কি প্রকারে হয়ে থাকে? অর্থনৈতিক বিভিন্ন সাশ্রয়ের প্রক্রিয়াগুলো লিখুন।
৪. অর্থনৈতিক সাশ্রয় কিভাবে অর্থনৈতিক ব্যয়ে পরিণত হয়? অতি-নগরায়ণের প্রভাবে অর্থনৈতিক ব্যয় কিভাবে
বৃদ্ধি পায় এবং কিভাবে ক্ষতিকর প্রভাব পেলে?
পাঠোত্তর মূল্যায়ন : ৪.৯
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন :
১.সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন ( সময় ৪ মিনিট) :
১.১ প্রবৃদ্ধি মেরু ধারণাটি প্রথম কোন সালে উপস্থাপিত হয় ?
ক. ১৯৬৫ খ. ১৯৩০ গ. ১৯৫৫
১.২ প্রবৃদ্ধি মেরুর ধারণাটিকে পারিসরিক রূপদান কে করেন ?
ক. এফ. পেরোক্স খ. জে. আর. বদেভিল গ. খ্রিস্টলার
১.৩ প্রবৃদ্ধির তীব্রতা কোথায় দৃশ্যমান হয় ?
ক. উন্নয়ন মেরু বা কেন্দ্রে খ. কেন্দ্রের বাইরে গ. নগরে
১.৪ প্রবৃদ্ধি মেরুতে কর্মকান্ড মেরুকরণ কি কি প্রভাবে হবে ?
ক. শুধুমাত্র বহিস্থ অর্থনীতির প্রভাবে
খ. শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির প্রভাবে
গ. বহি:স্থ ও অভ্যন্তরীণ উভয় অর্থনীতির প্রভাবে
২. শূন্যস্থান পুরণ করুন (সময় ৫ মিনিট) :
২.১ প্রবৃদ্ধি মেরু ধারণাটি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে.... ......... ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
২.২ পেরোক্সের মতে প্রবৃদ্ধি মেরু একটি ............ ............. শিল্প নিয়ে গঠিত হবে।
২.৩ বদেভিলের মতে আঞ্চলিক প্রবৃদ্ধি মেরু নগরাঞ্চলে অবস্থিত এক প্রকারের ........ ...... শিল্প ।
২.৪ অধিক পরিমাণে উৎপাদন করলে প্রতি একক উৎপাদন খরচ ........ এবং আর্থিক .........হয়।
২.৫ শিল্পের গতিশীল ..............ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণ অবস্থা থেকে প্রবৃদ্ধিকে ...........ছড়িয়ে দেবে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ( সময় ১০ মিনিট) :
১. প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র ধারণাটি কে প্রথম উপস্থাপন করেন ?
২. প্রচালক শিল্প কোনটি?
৩. আন্তসংযুক্ত শিল্প কোনগুলি ?
৪. প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রে কেন্দ্রাতিক ও কেন্দ্রাভিগ শক্তির প্রভাব কি ?
৫. প্রবৃদ্ধি মেরুতে বহিস্থ ও অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির প্রভাবে কি হবে?
রচনামূলক প্রশ্ন :
২. প্রবৃদ্ধি মেরু বলতে কি বোঝায় ? পেরোক্সের প্রবৃদ্ধি মেরুর ধারণা সম্বন্ধে লিখুন।
৩. বদেভিল অনুসারে প্রবৃদ্ধি মেরু ধারণা বিশ্লেষণ করুন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]