খনিজ আহরণ মানুষের প্রাচীন কর্মকান্ডগুলোর মধ্যে একটি। মানুষ প্রাচীনকাল থেকে ভৃপৃষ্ঠ এবং এর সংলগ্ন স্তর
থেকে বিভিন্ন খনিজ সম্পদ আহরণ করে থাকে। প্রাচীন যুগে খনিজ সম্পদের ব্যবহার ছোট হাতিয়ার তৈরী,
অস্ত্র, দালান-কোঠা ও রাস্তাঘাট তৈরীতে সীমাবদ্ধ ছিল ।
খনিজ আহরণ :
সাধারণত ভ‚পৃষ্ঠ ও ভ‚ অভ্যন্তর ভাগ হতে ব্যবহার উপযোগী খনিজ উপাদান (যেমন-কয়লা, পেট্রোলিয়াম,
গ্যাস, চুনাপাথর, প্রভৃতি) উত্তোলনকে খনিজ আহরণ বলে।
খনিজ আহরণের ঐতিহাসিক ধারা ও রীতি প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। নিচে বিভিন্ন যুগে এ আহরণ
কৌশলের বর্ণনা দেয়া হলো।
প্রাচীন যুগ : খনিজ আহরণের ও তার ব্যবহার প্রাচীন প্রস্তরযুগ, নব্য প্রস্তর যুগ , তাম্র যুগ, ব্রোঞ্জ যুগ ও লৌহ
যুগ থেকেই চলে আসছে। প্রতœতত্ত¡বিদদের মতে খনিজ আহরণ বা উত্তোলন প্রাক ঐতিহাসিককালে শুরু হয়েছে।
প্রথম খনিজ সম্পদ আহরণ করা হত চকমকি বা উজ্বল পাথর ব্যবহারের জন্য।
ইতিহাসবিদদের মতে, ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বের দিকে মিশরীয়রা সিনাই পেনিনসুলা লেকে খনিজ হিসাবে তাম্র/তামা
উত্তোলন করত। প্রাচীন ট্রয় রাজ্যের শাসনামলে অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০-এ প্রকৃতি থেকে সীসা আহরণ করা
হত। মিশরের পিরামিড পাথর নির্মিত, যা খনিজ আহরণের একটি উদাহরণ। খ্রিস্টপূর্ব ২৬০০ দিকে মিশরীয়রা
নীল নদীর তীর থেকে বিভিন্ন পাথর (যেমন- চুনা পাথর) উত্তোলন করত।
মধ্য যুগ :
মধ্যযুগে প্রথম খনিজ আহরণের জন্য ব্যাপকভাবে অনুসন্ধান পর্যবেক্ষণ ও ব্যবহার শুরু হয়। জার্মানরা এ বিষয়ে
অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করে। এ সময় খনিজ উত্তোলন পদ্ধতির পূর্ণাঙ্গ ও বৈজ্ঞানিক বিবরণ জানা যায়।
আধুনিক যুগ :
মধ্যযুগের শেষে সম্ভবত চীন থেকে কৃষ্ণ পাউডার ইউরোপে পৌঁছে তখন থেকেই উত্তোলনের ব্যাপক প্রসারলাভ
করে। এ দ্রব্য উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বিস্ফোরক হিসাবে স্থানান্তরিত হয়েছিল। তাছাড়া ১৯৫৬ সালে
এমোনিয়াম নাইট্রেট জ্বালানী এবং úারিস পানি, জ্বালানী দ্রব্য এবং অক্সিডাইজারস এর মিশ্রণ- এর যখন ব্যাপক
বাবহার শুরু হয় তখন এ জাতীয় খনিজ উত্তোলনের মাত্রা বেড়ে যায়। সঙ্কুচিত বাতাস চালিত যন্ত্রের উদ্ভাবন
খনির কঠিন শিলার মূল্য বৃদ্ধি করে এবং ফলে এর উত্তোলনের সময় ও এর মূল্য অনেক কমে যায়। সুতরাং
ড্রিলস এর উন্নয়ন ভ‚পৃষ্ঠস্থ খনিজের উত্তোলনের ভলিউম বৃদ্ধি করেছিল এবং মেটালিক ও নন-মেটালিক খনিজ
দ্রব্যেরও ব্যাপক হ্রাস করেছিল।
খনিজ আহরণের ভৌগোলিক বিস্তার:
বিশ্বব্যাপী খনিজ সম্পদ অবস্থানের একটি চিত্র ৫.৪.১ দেয়া হলো। এ প্রসঙ্গে অঞ্চল ভিত্তিক এর বর্ণনা দেয়া
হলো। আমেরিকা: প্রকৃতপক্ষে ১৫৫৪ সালে কলম্বাসের পরে আমেরিকার কিউবাতে ইউরোপীয়রা প্রথম তামা
উত্তোলন করেছিল। আমেরিকার ১৩টি কলোনিতে ছোট ছোট অনেক লৌহ ও তামার খনি আবিষ্কৃত হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষে এসব খনিজ ক্ষুদ্র পরিসরে উত্তোলিত হতো। ১৮৪৬ সালে প্রথম আয়রন
সুপিরিয়র হ্রদ এলাকা থেকে উত্তোলিত হয়েছে। উত্তর আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে এ সময়
সোনা পাওয়া গিয়েছিল। নেভাদায় ১৮৫৯ সালে সর্ববৃহৎ রৌপ্যের মজুদ আবিষ্কার হয় যার কাছেই ভার্জিনিয়া
শহর গড়ে উঠে। সবচেযে বেশি ধাতব খনিজের সন্ধান পাওয়া যায় মিসৌরী অঞ্চলে। এখানে ১৬৮৭ সালে
সর্বপ্রথম সীসা উত্তোলন করা হয়।
অস্ট্রেলিয়া : ১৮৫১ সালে নিউ সাউথ ওয়েলসে সোনা পাওয়া যায়। এখানে তামা, রুপা, জিংক, টিন, প্রভৃতি
ধাতু প্রচুর পরিমাণে মজুদ রয়েছে।
ইউরোপ : ফ্রান্সে প্রচুর পরিমাণে আকরিক লৌহ আছে। পশ্চিম ইউরোপে ভ‚পৃষ্ঠস্থ সোনা, চুনাপাথর মার্বেল,
বেলেপাথর প্রভৃতির অস্তিত্ব রয়েছে। ফ্রান্সে সর্বপ্রথম ক‚প খনন করে লৌহ আকরিক উত্তোলন করা হয়।
ইউরোপে সর্বপ্রথম খনিজ তৈল উত্তোলন করা হয়।
আফ্রিকা: আফ্রিকায় বিশ্বের হীরক মজুদের ৮৪% অবস্থিত। বিশ্বের ৫০% স্বর্ণ মজুদ রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়।
পশ্চিম আফ্রিকায় প্রচুর লৌহ আকরিকের মজুদ রয়েছে।
এশিয়া : সাইবেরিয়া অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ, দস্তা, সীসা, তামা, টিন, প্রভৃতির মজুদ রয়েছে। চীন ও
ভারতে কয়লা, লৌহ ও অন্যান্য ভ‚পৃষ্ঠস্থ খনিজের (যেমন চুনাপাথর) মজুদ রয়েছে। এছাড়া ৬০% পেট্রোলিয়াম
এশিয়াতে সঞ্চিত রয়েছে এর মধ্যে ৫৫% মধ্যপ্রাচ্যে সঞ্চিত।
খনিজ উত্তোলনে নিয়োজিত লোকবল (ঊসঢ়ষড়ুসবহঃ রহ গরহরহম):
পেশা হিসাবে খনিজ উত্তোলন বিশ্বের একটি গৌণ পেশা। মোট শ্রমের ২% খনিজ উত্তোলন পেশার সাথে
নিয়োজিত যেখানে ১০% লোক উৎপাদিত শিল্পের সাথে জড়িত। ইউরোপের খনিজ সমৃদ্ধ দেশ সমূহে ৩.৩%,
কানাডায় ৩.৩%, যুক্তরাষ্ট্রে ২.২%, জাপানে ২% জনশক্তি খনিজ সম্পর্কিত পেশায় নিয়োজিত।
খনিজ সম্পদের শ্রেণ বিভাগ:
মানুষ ভ‚পৃষ্ঠ ও ভ‚অভ্যন্তর থেকে যেসব খনিজ সম্পদ আহরণ করে সেগুলোকে কয়েকটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা
যায়।
খনিজ সম্পদের শ্রেণী বিভাগ:
ধাতব খনিজ অধাতব খনিজ জ্বালানী খনিজ
১. লৌহ বর্গীয় : লৌহ, ম্যাঙ্গানিজ,
নিকেল, ক্রোমিয়াম, টাংস্টেন,
কোবাল্ট, ভেনেডিয়াম, লিবডেনাম
প্রভৃতি।
১. গৃহ ও নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত :
গ্রানাইট, বেলেপাথর, কর্দম,
চুনাপাথর, এ্যাসবেসটস প্রভৃতি।
১. কয়লা
২. প্রেট্রোলিয়াম
৩. প্রাকৃতিক গ্যাস
২) অ-লৌহবর্গীয় : তামা, টিন,
এ্যালুমিনিয়াম, সীসা, দস্তা, প্রভৃতি
২) রাসায়নিক শিল্পে ব্যবহৃত খনিজ:
বিভিন্ন ধরণের লবণ, পটাশ,
গন্ধক।
৩) মূল্যবান খনিজ : স্বর্ণ, রৌপ্য,
প্লাটিনাম, ইউরেনিয়াম প্রভৃতি।
৩) মূল্যবান খনিজ : হিরক ও অন্যান্য
মূল্যবান পাথর।
পাঠ সংক্ষেপ :
প্রাচীন যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত খনিজের নানাবিধ ব্যবহার হয়ে আসছে। সভ্যতার আদি যুগে খনিজ মূলত:
ব্যবহৃত হত চকমকি পাথর শোভা বর্ধক হিসাবে। পরবর্তীতে হাতিয়ার নির্মানে এর ব্যবহার শুরু হয়। মধ্য যুগে
খনিজের ব্যবহার নির্মাণ কাজে শুরু হয়। যেমন -মিশরের পিরামিড। তাছাড়া, চুনাপাথর মার্বেল পাথরের
উল্লেখযোগ্য ব্যবহার হতে থাকে। শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে কপার, দস্তা, লোহা, সীসা, টিন, কয়লা, স্বর্ণ,
চুনাপাথর, প্রভৃতি খনিজ ব্যবহার হয়। ভৌগোলিকভাবে, খনিজের বণ্টন বিশ্বব্যাপী বি¯তৃত। তবে কোন কোন
খনিজ বিশ্বের নির্দিষ্ট কিছু কিছু জায়গায় অধিক মাত্রায় পাওয়া যায়। যেমন- এশিয়ায় বিশ্বের মোট খনিজ তেল
এর ৫৫ শতাংশ সন্ধান পাওয়া গেছে। একইভাবে বিশ্বের মোট হীরক সম্পদের পরিমাণের প্রায় ৮০% দক্ষিণ
আফ্রিকায় অবস্থিত। পেশা হিসাবে খনিজ আহরণের সাথে বিশ্বের মাত্র শতকরা ২% লোক নিয়োজিত আছে।
খনিজ পরিশোধন শিল্পে প্রচুর জনশক্তি নিয়োজিত। অন্যান্য প্রাথমিক পেশার তুলনায় খনিজ প্রযুক্তির ব্যবহার
অনেক বেশি হওয়াতে জনশক্তি নিয়োজিতের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন : ৫.৪
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন:
১.১. বিশ্বের শতকরা কতভাগ লোক খনিজ উত্তোলন সম্পর্কিত কাজে নিয়োজিত ?
ক) ১০% খ) ৫% গ) ২%
১.২. বিশ্বের কোথায় প্রথম কপার উত্তোলন শুরু হয় ?
ক) কিউবায় খ) ক্যারালাইনায় গ) ফ্লোরিডায়
১.৩. অস্ট্রেলিয়ার কোথায় প্রথম সোনার সন্ধান পাওয়া যায় ?
ক) কুইন্সল্যান্ডে খ) নিউ সাউথ ওয়েলস্ গ) মোলবোর্ন
১.৪. খনিজ তৈল সর্বপ্রথম কোথায় উত্তোলন শুরু হয়?
ক) ইউরোপ খ) উ. আমেরিকায় গ) অস্ট্রেলিয়ায়
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন ( সময় ৮ মিনিট):
১. খনিজ আহরণ বলতে কি বুঝায়?
২. প্রধান খনিজের একটি তালিকা দিন।
৩. এশিয়ায় কি কি খনিজ অধিক হারে পাওয়া যায়?
৪. খনিজ আহরণের গুরুত্ব কি?
রচনামূলক প্রশ্ন:
১. খনিজ আহরণের ভৌগোলিক বিবরণ দিন।
২. খনিজ সম্পদের গুরুত্ব কি? খনিজের প্রকারভেদ কর এবং মানব সভ্যতার বিভিন্ন পর্যায়ে এর ব্যবহারের
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ