কঠিন বর্জ্য দূষণ
কঠিন বর্জ্য দূষণ নগর সভ্যতার একটি অবদান। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর শহরাঞ্চলের উন্মুক্ত প্রান্তরে অথবা
নিচু জমিতে কঠিন বর্জ্য পদার্থ ফেলা হয়। উন্নয়নশীল ক্রমবর্ধমান শহরগুলোতে বর্জ্য ধ্বংস করার সঠিক
পরিকল্পনার অভাবে কঠিন বর্জ্য পদার্থ যত্রতত্র ছড়ানো ছিটানো বা স্তুপাকার হয়ে থাকে। এই কঠিন বর্জ্য
পদার্থের অধিকাংশই গৃহজাত ব্যবহারের অনুপযুক্ত ব্যবহার্য দ্রব্যাদি বা গৃহজাত দ্রব্যাদির অংশবিশেষ। এছাড়াও
অনুন্নত বা উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোতে দ্রব্যাদি বহনকারী পলিথিন একটি প্রধানতম সমস্যা হিসেবে দেখা
দিয়েছে যা বিভিন্ন পরিবাহ ব্যবস্থাকে অনেক ক্ষেত্রে অচল করে ফেলে।
এই সমস্ত কঠিন বর্জ্য পদার্থ শহরের শুধু সৌন্দর্যহানিই ঘটায় না, এগুলো থেকে বায়ু দূষণ, পানি চুঁইয়ে ভূগর্ভস্থ
পানি দূষণ এবং বিভিন্ন অসুখ পরিবাহন উৎস, যেমন ইঁদুর, তেলাপোকা, মাছির জন্মস্থান হয়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি
বছর ৫৫ বিলিয়ন ক্যান, ২৬ বিলিয়ন বোতল ও পানির পাত্র (ঔধৎ), ৬৫ বিলিয়ন ধাতব এবং প্লাস্টিকের
বোতলের ছিপি এবং প্রায় অর্ধ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বিভিন্ন ধরনের প্যাকিং এর মোড়ক জমা হয়। এছাড়াও ৭
মিলিয়ন ভাঙ্গা মোটরগাড়ী আবর্জনাস্থলে (ঔঁহশুধৎফ) জমা হয়। এর উপরও আরও বিভিন্ন ধরনের কঠিন বর্জ্য
তো রয়েছেই।
শিল্পাঞ্চলে অথবা খনিজ অঞ্চলে স্টীল ও লোহার খন্ড, পাথরের খন্ড, বিভিন্ন ধাতু, ছাই ও অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ
প্রতিনিয়ত জমা হচ্ছে যা পরিবেশকে বিভিন্নভাবে দূষণ করছে।
নিচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত উত্তর দিন :
১. কঠিন বর্জ্য দূষক পদার্থগুলি কি কি?
২. কঠিন বর্জ্য পদার্থ দ্বারা কি ভাবে পরিবেশ দূষণ হয়?
শব্দ দূষণ (ঘড়রংব চড়ষষঁঃরড়হ)
পরিবেশ দূষণে শব্দ দূষণ একটি নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। পৃথিবীর অধিকাংশ বড় বড় শহরে শব্দ দূষণ একটি
সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। মোটর গাড়ি, ট্রাক, বাস, মিনিবাস, মোটরের হর্ণ, কলকারখানা ইত্যাদি থেকে
উৎপন্ন বিভিন্ন ধরনের আওয়াজ যখন মানুষের শ্রবণ ক্ষমতার উপর চাপ সৃষ্টি করে তখন তাকে শব্দ দূষণ বলে
অভিহিত করা হয়। দূষণ বলা হচ্ছে এই কারণে যে, শব্দের প্রচন্ডতায় মানুষের কান ও শ্রবণশক্তিজনিত বিভিন্ন
অসুখ ছাড়াও অন্যান্য অনেক মারাত্মক অসুখ হয়ে থাকে। শব্দ সাধারণত ডেসিবেলে (উবপরনবষং) মাপা হয়।
শব্দ দূষণ প্রথম একটি দূষণ সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয় এবং সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যখন কিছু
অপ্রাপ্তবয়স্ক উচ্চ ধ্বনিসম্পন্ন রক মিউজিক দীর্ঘদিন শোনার কারণে সম্পূর্ণেরূপে বধির হয়ে যায়। স্বল্প সময়ের
জন্য তীক্ষè শব্দও সাময়িক বধিরতা আনতে পারে। শব্দ দূষণ থেকে বিভিন্ন নার্ভের উপর চাপ সৃষ্টিকারী
রোগব্যাধির জন্ম হয়, যেমন øায়ুবিক দৌর্বল্য, উচ্চ রক্তচাপ, পেপটিক আলসার, এমনকি আত্মহত্যা করার
প্রবণতা ইত্যাদি। কাজেই দেখা যাচ্ছে শব্দ দূষণ মানুষের স্বাস্থ্য ও হাসিখুশি জীবনযাপনের জন্য একটি
ক্রমবর্ধমান হুমকি রূপে দেখা দিয়েছে। অনেকের হিসাব অনুযায়ী উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে প্রতি দশ
বছরে গড় শব্দের প্রচন্ডতা দ্বিগুণ হচ্ছে। শব্দ দূষণ তৃতীয় বিশ্বের শহরগুলোতে ক্রমাগত হারে বেড়ে চলেছে।
বাংলাদেশের অধিক লোকসংখ্যা অধ্যুষিত বড় বড় শহর এবং বাণিজ্যিক শহরগুলোতে শব্দ দূষণের মাত্রা
উত্তরোত্তর বাড়ছে। এ অবস্থায় শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সবিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে।
নিচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত উত্তর দিন:
১. শব্দ দূষণ কাকে বলে?
২. শব্দকে কেন দূষণ বলা হচ্ছে?
পলিথিন দূষণ
পলিথিন বর্তমান সভ্যতার একটি অন্যতম অবদান। পলিথিনের ব্যাগ গৃহস্থালী, ব্যবসা ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে দ্রব্যাদি
বহন এবং রক্ষণের জন্য অধিক মাত্রায় ব্যবহৃত হচ্ছে এবং লোকজনের কাছে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। কিন্তু
পলিথিন সহজে ধ্বংস হয় না এবং মাটির সাথে মিশেও যায় না।
পলিথিন বর্তমান পরিবেশকে বিভিন্নভাবে দূষণ করছে। মাটিতে পলিথিন সহজে মিশে না যাওয়ার কারণে যে
সমস্ত জায়গায় ব্যবহৃত পলিথিন ফেলা হচ্ছে সেই সমস্ত জায়গার মাটির দৃঢ়বদ্ধতা ব্যাহত হচ্ছে। এই সমস্ত
জমিতে ঘরবাড়ি নির্মাণ অনেক ক্ষেত্রে আশঙ্কাজনক। এছাড়াও পলিথিন মিশ্রিত মাটি পুষ্টি হারাচ্ছে।
নগর সভ্যতায় পলিথিন একটি মারাত্মক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে অনুন্নত বিশ্বের বড় বড়
শহরগুলোতে পলিথিন অপসারণের সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে পলিথিন নর্দমা, পয়:নিষ্কাশন নালীতে জমে। এই
সমস্ত পলিথিন ময়লা পানি নিষ্কাশনে বাঁধার সৃষ্টি করে। ফলে পয়:নিষ্কাশনে এবং নর্দমার পানি উপচে শহরে
দূষিত পানির জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বন্যার সময় পানি সহজে সরতে পারে না। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের ঢাকা
শহরে বন্যার পানি অপসারণের দীর্ঘসূত্রিতার অন্যতম কারণ নর্দমা এবং পয়:নালীতে পলিথিন জমে যাওয়া।
এছাড়াও পলিথিন ধ্বংস করার জন্য পলিথিন পোড়ালে পলিথিন পোড়ানো থেকে উত্থিত গ্যাস বায়ুকে দূষণ
করে। কাজেই পলিথিনকে বর্তমানে পরিবেশ দূষণের অন্যতম উপাদান হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।
সমগ্র পাঠটির উপর নিচে একটি সারাংশ দেওয়া হলো। সারাংশটি পড়ে পরিবেশ দূষণ সম্বন্ধে আপনার ধারণাটি
পরিষ্কার করে নিন।
নিচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত উত্তর দিন:
১. পলিথিন কি ভাবে মাটিকে দূষিত করছে?
২. শহরে পলিথিন কি সমস্যার সৃষ্টি করছে?
৩. পোড়ানো পলিথিন থেকে কি উৎপন্ন হয়?
পাঠসংক্ষেপ :
প্রকৃতিতে প্রাণী ও উদ্ভিজ্জ সম্বলিত যে সামগ্রিক বাহ্যিক অবস্থা তাকে সাধারণভাবে পরিবেশ বলে। তবে
ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবেশ বলতে বোঝায় প্রকৃতি ও প্রকৃতিতে মানুষের সমগ্র কর্মকান্ডের সমষ্টিগত
রূপ।
পরিবেশ মানুষের কর্মকান্ডের দ্বারা প্রতিনিয়ত দূষণ হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে
মানুষের কর্মকান্ড জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে, যার বিরূপ প্রতিক্রিয়া মানুষ ও অন্যান্য জীবের বসবাসকারী
পরিবেশের উপর পড়ছে এবং পরিবেশকে দূষণ করছে।
পরিবেশ দূষণ বিভিন্নভাবে হয়ে থাকে। বায়ু, পানি, মৃত্তিকা ইত্যাদি প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানসমূহ বিভিন্ন
প্রক্রিয়ায় দূষণ হচ্ছে। কঠিন বর্জ্য দূষণ, শব্দ দূষণ, পলিথিন দূষণ বর্তমানে নগর সভ্যতার অন্যতম প্রধান
সমস্যা হিসেবে গণ্য হচ্ছে। বায়ু দূষণ মূলত যান্ত্রিক সভ্যতার অন্যতম ফসল। বিভিন্ন প্রকারের পরিবহন, শিল্পকারখানা ইত্যাদিতে ব্যবহৃত জ্বালানী দহন থেকে উত্থিত বিভিন্ন প্রকারের বিষাক্ত গ্যাস বায়ুকে প্রতিনিয়ত দূষিত
করছে। পানি দূষণ বিভিন্ন মাধ্যমে হয়ে থাকে। নর্দমায় নিষ্কাশিত আবর্জনা, কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন
রাসায়নিক নিষ্কাশন, শিল্প বর্জ্য দ্বারা পানি প্রধানত দূষণ হয়। এছাড়াও ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক দূষণ
বর্তমানে একটি প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। মৃত্তিকা দূষণ বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী একটি অন্যতম প্রধান
সমস্যা। কৃষি জমিতে রাসায়নিক সার, কীটপতঙ্গ ও আগাছা নাশকের ব্যবহার, অতি চাষ, ভূমির বৈশিষ্ট্য
অনুযায়ী ভূমি ব্যবহার না হওয়ায় মাটি তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলছে। এছাড়াও বিশ্বের অত্যধিক জনসংখ্যা
অধ্যুষিত বড় বড় শহরগুলোতে কঠিন বর্জ্য দূষণ, শব্দ দূষণ, পলিথিন দূষণ অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা
দিয়েছে। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব এই সমস্ত দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। কঠিন বর্জ্য দ্বারা মাটি, পানি ও
বায়ু দূষণ হচ্ছে। শব্দ দূষণ কানের বিভিন্ন ব্যধি ছাড়াও অন্যান্য অনেক মারাত্মক ব্যধির কারণ বলে গণ্য হচ্ছে।
পলিথিন দূষণে শহরে দূষিত পানির জলাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন রোগব্যাধির জন্মস্থান সৃষ্টি করে এবং রোগ
বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এছাড়াও যেখানে সেখানে নিক্ষিপ্ত পলিথিনের ব্যাগ শহরের শুধু সৌন্দর্যহানিই
করছে না, শহরের সামগ্রিক পরিবেশকে নষ্ট করছে। উল্লেখিত বিভিন্ন প্রকারের দূষণ মানুষের মধ্যে বিভিন্ন
ধরনের মারাত্মক রোগব্যাধি বিস্তারে নিয়ামক হিসাবে ভূমিকা রাখা ছাড়াও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী
অন্যান্য প্রাণী ও কীটপতঙ্গ ধ্বংস করছে যা সামগ্রিক পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
অনুশীলনী :
নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন। এর ফলে পাঠটির বিষয়বস্তু সম্বন্ধে আপনার ধারণা আরও স্পষ্ট হবে।
১. বায়ু দূষণ কি কি প্রকারে হয়ে থাকে? বায়ু দূষণ সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করুন।
২. পানি দূষণের প্রধান নিয়ামকসমূহ কি কি? পানি দূষণ সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করুন।
৩. মৃত্তিকা দূষণ কখন বলা হয়? মৃত্তিকা দূষণের নিয়ামকসমূহ সম্বন্ধে আলোচনা করুন।
৪. কঠিন বর্জ্য দ্বারা পরিবেশ দূষণ সম্বন্ধে লিখুন।
৫. আর্সেনিক দূষণ প্রক্রিয়া সম্বন্ধে লিখুন। বাংলাদেশে আর্সেনিক দূষণের কারণ কি? আর্সেনিক দূষণজনিত
রোগব্যাধিগুলোর নাম লিখুন।
৬. শব্দ দূষণ কাকে বলে? শব্দ দূষণ মাপার পরিমাপক কি ? শব্দ দূষণ সম্বন্ধে বিস্তারিত লিখুন।
৭. পলিথিন কিভাবে পরিবেশ দূষণ করে?
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন:
১. শূন্যস্থান পূরণ করুন:
১.১. উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর শহরাঞ্চলের -------- প্রান্তরে অথবা নিচু জমিতে কঠিন বর্জ্য পদার্থ ফেলা হয়।
১.২ পরিবেশ দূষণে ........................দূষণ একটি নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে।
১.৩ শব্দ দূষণ থেকে ..................... ওপর চাপ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন রোগব্যাধির জন্ম হয়।
১.৪ পলিথিন মিশ্রিত মাটি ---------- হারাচ্ছে।
সংক্ষিপ্ত উত্তর:
১. কঠিন বর্জ্য পদার্থ কোনগুলি?
২. উচ্চ ধ্বনিসম্পন্ন রক মিউজিক দীর্ঘদিন শোনার কারণে মানুষের কি রোগ হতে পারে ?
৩. ১৯৯৮ সালে ঢাকা শহরের বন্যার পানি অপসারণের ক্ষেত্রে সময় লাগার কারণ কি এবং কেন সময় লাগে?
রচনামূলক প্রশ্ন:
১. কঠিন বর্জ্য দ্বারা পরিবেশ কিভাবে দূষিত হয় আলোচনা করুন।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ