প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংজ্ঞা দিন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকৃতি আলোচনা করুন।
. প্রাকৃতিক দুর্যোগের শ্রেণীবিভাগ করুন।


প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংজ্ঞা ও প্রকৃতি (উবভরহরঃরড়হ ধহফ ঘধঃঁৎব ড়ভ ঘধঃঁৎধষ ঐধুধৎফং)
সাধারণভাবে দুর্যোগ বলতে প্রাকৃতিকভাবে মানুষের ক্ষতির সম্ভাবনা, সম্পদ ধ্বংস, পরিবেশ ধ্বংস এবং এসবের
মিলিত অবস্থাকে বোঝায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রাকৃতিকভাবে সংঘটিত চরম ঘটনাবলী, যেমন বন্যা, খরা,
ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির উদগিরণ, তুষার ধস ইত্যাদিকে বলা হয়। এমনকি ছত্রাক ও ভাইরাসজনিত ব্যাপক
আকারে বি¯তৃত রোগব্যধিকেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলা হয়ে থাকে। তবে প্রাকৃতিক ঘটনাবলীকে তখনই দুর্যোগ
বলে অভিহিত করা হয় যখন প্রাকৃতিক ঘটনাবলী জীবন ও সম্পদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয় বা ক্ষতি করে। কাজেই
দুর্যোগ একটি হুমকিস্বরূপ। দুর্যোগসমূহ কোন জনগোষ্ঠীর উপর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না করলে তাকে দুর্যোগ বলা
যাবে না, যেমন বন্যাকে কখনোই দুর্যোগ বলা যাবে না যদি না কোন জনগোষ্ঠী প্লাবন ভূমিতে বসবাস করে বা
প্লাবন ভূমিকে ব্যবহার করে। দুর্যোগ থেকে বিভিন্ন দূর্ঘটনা, আকষ্মিক মহা দূর্ঘটনা, জরুরী অবস্থার সৃষ্টি হয়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ স্বল্প মেয়াদি হতে পারে, যেমন আকষ্মিক বজ্রপাত, আবার ধারাবাহিক বা একটানাও হতে
পারে, যেমন উত্তর অক্ষাংশের উচ্চ মাত্রার অতি বেগুনি রশ্মি। কাজেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রাকৃতিকভাবে সংঘটিত
সর্বসাধারণ স্বীকৃত প্রাকৃতিক ঘটনাবলী যা জীবন ও সম্পদের প্রভূত ক্ষতি করে।
প্রতি বছর আড়াই লক্ষেরও বেশি জীবন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়
তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহের দরিদ্র জনসাধারণ এবং ক্রান্তীয় ভূমিতে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী। প্রাকৃতিক দুর্যোগের
কারণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী মোট ক্ষতির পরিমাণ ৪০,০০০ মিলিয়ন ইউ.এস. ডলার। এর মধ্যে প্রত্যক্ষ ক্ষতির
পরিমাণ ২৫,০০০ মিলিয়ন ইউ.এস. ডলার। অবশিষ্টাংশ ব্যয় হয় দুর্যোগ প্রতিরোধে এবং দুর্যোগ প্রশমনে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহের মধ্যে বন্যার দ্বারা সর্বাপেক্ষা অধিক ক্ষতি হয় যার পরিমাণ মোট ক্ষতির ৪০ শতাংশ।
২০ শতাংশ ক্ষতি হয় গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় দ্বারা এবং ১৫ শতাংশ ক্ষতি হয় খরায়। তিন চতুর্থাংশ প্রাকৃতিক
দুর্যোগের উৎপত্তি হয় মূলত জলবায়ুগত কারণে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। ক্ষয়ক্ষতির এই বৃদ্ধি জনগোষ্ঠীর
সামাজিক, অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কযুক্ত। বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য
মানুষ পূর্বের তুলনায় অধিক হারে প্রকৃতি থেকে সম্পদ আহরণে সচেষ্ট। যার কারণে মানুষ শহরসহ অন্যান্য
সুবিধাজনক এলাকায় কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। ফলশ্রæতিতে সম্পদের প্রাচুর্যও কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। এই সমস্ত এলাকা যত
অধিক মাত্রায় প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত হচ্ছে, ধ্বংসের মাত্রাও তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও
জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও মোট জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বাড়ে। জনসংখ্যা
বৃদ্ধির কারণে মানুষ ক্রমাগত দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় বসবাসে বাধ্য হচ্ছে। এই কারণেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও
বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী নিশ্চিত দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় মানুষ দীর্ঘকাল ধরে বসবাস করে
আসলেও বর্তমানে উপকূলীয় অঞ্চলের জনসংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণ উপকূলীয় অঞ্চলের
উর্বরা কৃষি ভূমি এবং মূল ভূখন্ডে অত্যধিক জনসংখ্যার ঘনত্ব। ফলে উপকূল অদূরবর্তী নতুন জেগে উঠা অদৃঢ়
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপগুলোতে পর্যন্ত মানুষ অধিক পরিমাণে বসবাস শুরু করেছে। বাংলাদেশের দূর্বল অর্থনীতির কারণে
যথোপযুক্ত দুর্যোগ প্রতিরোধমূলক প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও ব্যবহার করা সম্ভব না হওয়ায় বাংলাদেশের উপকূলীয়
অঞ্চলে ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াসে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতীয়
উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে অধিক পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি হয়।
কাজেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকৃতি ও প্রভাব প্রকৃতির বিশেষ অবস্থা এবং সামাজিক বৈশিষ্ট্যের সাথে সম্পর্কিত।
প্রাকৃতিক ঘটনাবলী সমাজ ব্যবস্থার সাথে মিথস্ক্রিয়ায় ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। প্রাকৃতিক
দুর্যোগ সংঘটন অনেক ক্ষেত্রে নির্ভর করছে মানুষ কিভাবে প্রকৃতিকে ব্যবহার করছে তার উপর। যেমন খরা
প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও যথেচ্ছ বৃক্ষ নিধন খরার জন্য অনেকাংশে দায়ী। কারণ বৃক্ষ শিকড়ের মাধ্যমে পানি
মাটিতে ধরে রাখে এবং খরা প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখে। আবার যেখানে সেখানে বাঁধ নির্মাণ,
জলাশয়সমূহ ভরাট ও মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ডে নদী তলদেশ ভরাট হলেও বন্যা হতে পারে। উৎপত্তিগত কারণ
ও বৈশিষ্ট্যানুযায়ী বিশ্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ বেশ কিছু অঞ্চল রয়েছে।
নিচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত উত্তর দিন:
১. দুর্যোগ বলতে কি বোঝায়?
২. প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলতে কি বোঝায়?
৩. প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোন অঞ্চলের অধিবাসীরা বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়?
৪. প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশ্বের ক্ষতির পরিমাণ কত?
৫. প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশী ক্ষতি কিসের দ্বারা হয়?
৬. ঘূর্ণিঝড় দ্বারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির পরিমাণ কত?
৭. প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কি কি কারণে বাড়ছে?
৮. বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশী কেন?
৯. প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকৃতি ও প্রভাব কি কি বৈশিষ্ট্যের সাথে সম্পর্কিত এবং কি ভাবে?
প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকার (ঞুঢ়বং ড়ভ ঘধঃঁৎধষ ঐধুধৎফ)
ভূগোলবিদগণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলতে মূলত ভূপ্রাকৃতিক (জলবায়ু ও ভূতত্ত¡ বিষয়ক) ঘটনাসমূহকে গণ্য করেন।
তবে বার্টন এবং কেট্স (ইঁৎঃড়হ ধহফ কধঃবং, ১৯৬৪) প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহকে উৎসভিত্তিক ভূপ্রাকৃতিক ও
জৈবিক এই দুই প্রধান শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন।
বার্টন ও কেট্স অনুসারে উৎসভিত্তিক প্রধান সর্বজনীন প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহ
ভূ-প্রাকৃতিক জৈবিক
জলবায়ু ও
আবহাওয়া বিষয়ক
ভূতাত্তি¡ক ও
ভূমিকম্প বিষয়ক
উদ্ভিদকূলীয় প্রাণীকূলীয়
তুষার ঝড়, তুষার,
খরা, বন্যা,
কুয়াশা, তুহিন,
শিলাবৃষ্টি, তাপ
তরঙ্গ, সাইক্লোন,
বিদ্যুৎ প্রবাহ,
আঘাত ও
অগ্নিকান্ড,
টর্ণেডো।
হিমানী স¤প্রপাত
ভূমিকম্প, ভূমিক্ষয়,
ভূমিধস,
পরিবর্তনশীল
বালুকারাশি, সুনামী,
আগ্নেয়গিরি।
ছত্রাকজনিত রোগ,
এ্যাথলেটস ফুট, ডাচ
এল্ম, হুইট স্টেম রাস্ট,
ধসা বা খসা রোগ,
ইনফেস্টেশন, কচুরীপানা,
উদ্ভিদ থেকে সৃষ্টি বিভিন্ন
সর্দি কাশিজনিত জ্বর,
বিষাক্ত উদ্ভিদ।
ব্যাকটেরিয়া ও বিভিন্ন
ভাইরাসজনিত রোগ,
উদাহরণ: ইনফ্লুয়েঞ্জা,
ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড,
টাইফাস, বাবনিক প্লেগ,
রতিজ রোগ, খুর ও গালের
রোগ, টবাকো, মোসাইক।
ইনফেস্টেশন, উদাহরণ:
র‌্যাবিট্স, উইপোকা, পঙ্গপাল,
ফড়িং, বিষাক্ত প্রাণীর কামড়।
উৎস: ইসলাম, এম. আ.(১৯৯৮) “সম্পদ ব্যবস্থাপনা” বাংলা একাডেমি, ঢাকা।
দুর্যোগে মানুষের সমন্বয় কৌশল (ঘধঃঁৎধষ ঐধুধৎফং অফলঁংঃসবহঃ ঝঃৎধঃবমরবং)
প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের সমন্বয় কৌশলগুলোকে সময় অনুসারে প্রধানত দুটি পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়-
(ক) শিল্পপূর্ব
(খ) শিল্পোত্তর।
(ক) শিল্পপূর্ব সমন্বয় কৌশল (চৎব-রহফঁংঃৎরধষ অফলঁংঃসবহঃ ঝঃৎধঃবমরবং)
শিল্পপূর্ব সমাজে দুর্যোগ সমন্বয় কৌশল ছিল অতি সাধারণ। সে যুগে দুর্যোগ মোকাবেলায় পরিবেশ প্রত্যক্ষণের
বিশেষ ভূমিকা ছিল। এছাড়াও মানুষের জীবনাচরণ, দুর্যোগ মোকাবেলার অতীত এতিহ্য বা ইতিহাস, গোঁড়ামি,
অন্ধবিশ্বাস ইত্যাদিরও দুর্যোগ মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা ছিল। প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেয়ে নিজেদের
আচরণের পরিবর্তন করে মানুষ প্রকৃতির সাথে খাপ খাইয়ে বা সহাবস্থানের মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবেলা করতো।
এর ফলে বিভিন্ন প্রকার সমন্বয়নের উদ্ভব ঘটেছে যা এখনও পৃথিবীর বহু দেশে প্রচলিত রয়েছে, যেমন
বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, চীন প্রভৃতি দেশে। চীনে প্রায় আড়াই হাজার বছরেরও পূর্ব থেকে বন্যা প্রতিরোধে
জমিতে আইল বা উুশব নির্মাণ প্রচলিত রয়েছে। কৃষি প্রধান দক্ষিণ এশিয়ায় বহু ধরনের প্রাচীন সঞ্চয়ন পদ্ধতি
এখন পর্যন্ত প্রচলিত রয়েছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় প্লাবন সমভূমি এবং ভারতের গঙ্গা প্লাবন সমভূমিতে
দুর্যোগ সমন্বয়ন কৌশলসমূহের অধিকাংশই প্রতিরোধের পরিবর্তে সংশোধনমূলক। এই অঞ্চলে বন্যা ও ঘুর্ণিঝড়
মোকাবেলা কৌশল অতি প্রাচীন কালের যার উদ্ভাবন হয়েছে মানুষের প্রকৃতির সাথে অতি নিবিড় সম্পর্কের
ফলে। এখানকার মানুষ বন্যার সাথে বসবাস কৌশলে অভ্যস্ত। মধ্যযুগ থেকে ভারতে যে ৭৯টি নদী তীরবর্তী
নগর গড়ে উঠে তার ৩০ শতাংশ গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত এবং বন্যার সাথে বসবাস কৌশলে অভ্যস্ত।
বাংলাদেশের কৃষকরা বন্যা, খরা ও বিভিন্ন পরিবেশগত অবস্থার সাথে সমন্বয় রেখে কৃষিকাজ করে আসছে।
এক্ষেত্রে তাদের প্রকৃতির সাথে প্রত্যক্ষণই মূলত কাজ করছে। তবে মাঝে মাঝে চরম দুর্যোগ মানুষের এই
প্রকৃতির সাথে সমন্বয়কে বাধাগ্রস্ত করেছে। কারণ এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশকে রূপান্তর বা নিয়ন্ত্রণ করার
যথাযথ প্রযুক্তির অভাব রয়েছে।
(খ) শিল্পোত্তর আধুনিক প্রযুক্তি দ্বারা সমন্বয়ন (চড়ংঃ-রহফঁংঃৎরধষ অফলঁংঃসবহঃ ঝঃৎধঃবমরবং
রিঃয গড়ফবৎহ ঞবপযহড়ষড়মু) :
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ থেকে আধুনিক প্রযুক্তির দ্বারা দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রসার লাভ করে। বৈজ্ঞানিক
প্রযুক্তি দ্বারা প্রকৃতিকে অনেকখানি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। প্রযুক্তি দ্বারা দুর্যোগ মোকাবেলা প্রধানত বৃহৎ
আকারের কাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে হয়ে থাকে যা অনেক ক্ষেত্রে ব্যয় সাপেক্ষ। ফলে এই ধরনের সমন্বয়ন
প্রক্রিয়া প্রধানত উন্নত বিশ্বের দেশসমূহে দেখা যায় যারা আর্থিকভাবে উন্নত, বিজ্ঞানসম্মত বৃহৎ আকারের
নির্মাণশৈলিতে পারদর্শী এবং যেখানে স্থিতিশীল সমাজ ব্যবস্থা বিদ্যমান। কারণ এই ধরনের সমন্বয় কৌশল
বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন।
কাঠামোগত ব্যবস্থাসমূহ সাধারণত নিæরূপ হয়ে থাকে১. বিশেষ কৌশলে নির্মিত জলাধার- যা নদীর সর্বোচ্চ প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে;
২. বিভিন্ন প্রকারের বাঁধ: নদী খাতে বন্যা প্রতিরোধের নিমিত্তে পানি প্রবাহকে আবদ্ধ রাখার জন্য বাঁধ দেওয়া
হয়;
৩. নদী খাতের উন্নয়ন: যা নদী খাতের মধ্যদিয়ে পানি প্রবাহের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে পানির সর্বোচ্চ স্তরকে
হ্রাস করে;
৪. নদী শাসন : নদীর গতি পথকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নদীর উভয় তীর স্থায়ীকরণ;
৫. বন্যা উপপথ বা বন্যাপথ : যা বন্যা কবলিত বা বন্যা সম্ভাব্য মূল নদীর প্রবাহকে অন্য খাতে প্রবাহিত
করে।
এছাড়াও প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তির প্রয়োগ দেখা যায়, যেমন খরা প্রতিরোধের জন্য খরা পীড়িত
অঞ্চলে মেঘপবন (ঈষড়ঁফ ঝববফরহম) দ্বারা বৃষ্টিপাত ঘটানো যায়। ঝড়ের শক্তি ও গতিপথ নিয়ন্ত্রণ, শিলাবৃষ্টি
দমন, কুয়াশা বিচ্ছুরণ, হিমানি স¤প্রপাত ইত্যাদি বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করা। উন্নত দেশসমূহে উপকূলীয় বন্যা
প্রতিরোধে সমুদ্র প্রাচীর এবং গ্রোয়েন নির্মাণ প্রযুক্তি প্রচলিত রয়েছে। জৈবিক দুর্যোগ মোকাবেলায় কীটপতঙ্গ
নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার ব্যাপকভাবে প্রচলিত এবং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই সমস্ত প্রযুক্তি বিভিন্নভাবে মানুষের কল্যাণে অবদান রাখলেও বিভিন্ন প্রযুক্তির নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয়
তুলনামূলকভাবে ক্ষতি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাদির ব্যয় অপেক্ষা অনেক বেশি, যেমন বাঁধ, প্রাকৃতিক বাঁধ বা ড্যাম
ইত্যাদি প্রযুক্তির ব্যবহার। ফলে অর্থনেতিকভাবে দুর্বল অর্থনৈতিক অঞ্চলে উন্নত প্রযুক্তি ততটা পসার লাভ
করেনি। কাজেই দুর্যোগ প্রতিরোধে বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহারের ব্যয় যদি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাদির ব্যয়ের
তুলনায় কমিয়ে আনা যায় তবে দুর্যোগ প্রতিরোধে প্রযুক্তিগত বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি জনপ্রিয়তা পাবে। তবে
এক্ষেত্রে এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে, প্রযুক্তির ব্যবহার প্রকৃতির ভারসাম্য যেন নষ্ট না করে। অস্বাভাবিক চরম
দীর্ঘমেয়াদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনার তুলনায় পুন:পুন সংঘটনশীল দুর্যোগসমূহ কাঠমোগত প্রযুক্তি দ্বারা দুর্যোগ
নিয়ন্ত্রণ আর্থিক দিক থেকে অধিকতর লাভজনক।
শিল্পোত্তর সমন্বয় কৌশল মূলত লোকজ এবং আধুনিক প্রযুক্তিগত পদ্ধতিসমূহ একত্রিত করে একটি বৃহৎ
পরিসরের সমন্বয়নে সৃষ্টি করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও কার্যক্রম এই সমন্বয় প্রক্রিয়ায়
অন্তর্ভুক্ত করা হয় যা প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং মানব উন্নয়নের মধ্যে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে।
ফলে একটি সুষম বাস্তব্য অবস্থার সৃষ্টি করে।
দুর্যোগের মাত্রা তিনটি মৌলিক কৌশলের মাধ্যমে হ্রাস করা যেতে পারেক. দুর্যোগজনিত ক্ষতিকে স্বীকার করে অথবা ক্ষতির অংশীদার হয়ে;
খ. চরম ঘটনাকে পরিমিত অথবা প্রভাবকে নমনীয় করে;
গ. সম্পদ ব্যবহারের অথবা অবস্থানের পরিবর্তন করে। এছাড়াও দুর্যোগ পরবর্তী জরুরী অবস্থা ঘোষণা ও
দুর্যোগ প্রতিরোধ প্রস্তুতিকরণ দুর্যোগের মাত্রা হ্রাস করে।
(ক) ক্ষতি স্বীকার করে বা ক্ষতির অংশীদার হয়ে (ঞড় অফসরঃ ঃযব খড়ংং ড়ৎ ইবরহম ধ চধৎঃহবৎ ড়ভ
ঃযব খড়ংং) : গ্রামীণ কৃষি সমাজে প্রধানত দেখা যায় দুর্যোগ পরবর্তীকালে দুর্যোগ প্রতিরোধের সাড়া হিসেবে
গ্রামবাসীরা ক্ষতি স্বীকার করে নেয় বা ক্ষতির অংশীদার হয় যা বাংলাদেশের মতো গ্রামীণ সমাজের একটি
সাধারণ আচরণ। ছোট আকারের দুর্যোগের ক্ষতিকে স্বীকার করে নেওয়া অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে
লাভজনক। অস্বাভাবিক দুর্যোগে পরবর্তী সময়ে বন্যাপীড়িত নিচু অঞ্চলে অধিক উৎপাদনের জন্য অধিক হারে
কৃষি উপকরণ প্রয়োগ করা যেতে পারে। আবার যে সমস্ত জমি দীর্ঘদিন ধরে বন্যা প্লাবিত থাকে, সেই সমস্ত
জমিগুলো স্বল্পকালীন সময়ের জন্য পরিহার বা সীমিত মাত্রায় ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার খরা তীব্র
আকার ধারণ করলেও কৃষকরা শস্য উৎপাদন চালিয়ে যায়। ফলে শস্য উৎপাদন বিঘিœত হলেও সামগ্রিকভাবে
শস্যহানি হয় না। যখন কোন সমাজে ক্ষতির মাত্রা অত্যন্ত বেশি হয়, তখন ক্ষতি স্বীকার করে নেওয়ার প্রবণতা
দেখা যায়। এক্ষেত্রে বর্ধিত পরিবারসমূহ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে। ক্ষতির মাত্রা অধিক হলে বৃহত্তর
জনগোষ্ঠী পর্যন্ত সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে। উন্নত দেশসমূহে অপ্রথাগত ব্যবস্থাপনা, যেমন বীমা প্রকল্প,
দুর্যোগ ত্রাণ, সরকারী সাহায্য ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
(খ) চরম ঘটনাকে পরিমিত অথবা প্রভাবকে নমনীয় করে (গড়ফবৎধঃরহম ঃযব ওহপরফবহঃ ড়ৎ
গধশরহম ঃযব ওসঢ়ধপঃ খবংং) : ব্যক্তিগত উদ্যোগের পরিবর্তে সমবেতভাবে দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতি
নিবারণের মাধ্যমে চরম ঘটনা পরিমিত পর্যায়ে আনা সম্ভব। তবে এই ধরনের সমন্বয়নে পুঁজি ও সময়ের
প্রয়োজন। গণচীনের কমিউন ব্যবস্থা এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। কমিউনিটি ব্যবস্থাপনায় জনসাধারণ
সমবেতভাবে দুর্যোগ মোচনে অংশগ্রহণ করে। সমবেত প্রচেষ্টায় সাফল্য অর্জিত হওয়ায় জনসাধারণ দুর্যোগ
মোচনে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ হয়।
দুর্যোগ কবলিত এলাকায় দুর্দশা লাঘব সম্পর্কিত বিভিন্ন পরিকল্পনায় স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে
স্থানীয় চাহিদা, আশা-আকাংখা, দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে ধারণা লাভ করা যায় - ফলে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড সুষ্ঠভাবে
চাহিদা অনুযায়ী পরিচালনা করা সম্ভব। উন্নয়ন পরিকল্পনায় তৃণমূল পর্যায়ের সংগঠকদের অংশগ্রহণ আবশ্যক।
প্রকল্পের নকশা প্রণয়ন, পরিচালনা ও সংরক্ষণের কাজেও তাদের নিয়োজিত করতে হবে। এর ফলে দুর্যোগ
মোচন পরিকল্পনা সাফল্য অর্জনে সক্ষম হবে।
বিভিন্ন প্রযুক্তিগত নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কৌশল, যেমন ভূমি ব্যবহার আইন, অঞ্চলায়ন ধারা
অধ্যাদেশ, অট্ট্রালিকা নির্মাণ বিধি ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে
পারে। ভূমি ব্যবহার আইনের দ্বারা প্রায় সকল বন্যা পীড়িত অঞ্চলে ভূমির ব্যবহারকে প্রভাবান্বিত করা যায়।
চরম বিপজ্জনক অঞ্চলে পরিকল্পিত ভূমি ব্যবহার নীতি প্রণয়নের প্রতি অগ্রাধিকার দেওয়া আবশ্যক। এছাড়াও
ভূমিস্বত্ত¡ ব্যবস্থার পরিবর্তন করে, ভূমি ভোগ দখল ব্যবস্থার সংস্কার করে দুর্যোগের প্রতিকূল প্রভাবের তীব্রতাকে
হ্রাস করা সম্ভব। একইভাবে শহরে ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন করে দুর্যোগের ক্ষতিকর প্রভাবের তীব্রতা হ্রাস করা
সম্ভব। দুর্যোগের পরবর্তীকালে উন্নত ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা, নির্মাণ বিধি, বসতি আইন প্রণয়ন করে পরবর্তী
দুর্যোগের ঝুঁকি এবং ক্ষতি হ্রাস করা যায়।
অঞ্চলীকরণ অধ্যাদেশ দ্বারা দুর্যোগপীড়িত এলাকায় মুখ্য অবয়ব নির্মাণের জন্য নির্দেশাবলী প্রণয়ন করে ভূমি
উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দুর্যোগের প্রকোপ যেখানে বহুদূর বি¯তৃত সেখানে বিভিন্ন প্রকল্প কৌশলের
মাধ্যমে, যেমন অট্টালিকা নির্মাণ বিধি (ভূমিকম্প প্রতিরোধ গঠন কাঠামো), কৃষি প্রণালী বিধি (খরা অথবা
শিলাবৃষ্টির সাথে সমন্বয় করে কৃষি ব্যবস্থা) প্রবর্তন করা যেতে পারে।
এছাড়াও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে চরম দুর্যোগ ঘটনাকে পরিমিত পর্যায়ে রাখা সম্ভব। রাস্তার উন্নয়ন,
পর্যাপ্ত যানবাহনের ব্যবস্থা, আশ্রয়স্থল নির্মাণ অবকাঠামোগত উন্নতির অন্তর্ভুক্ত। রাস্তার উন্নয়ন দুর্যোগকালীন
সময়ে দ্রæত স্থান ত্যাগে ভূমিকা রাখে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের আওতায় আবহাওয়ার পূর্বাভাসের উন্নতি
অন্তর্ভুক্ত। আবাহাওয়া পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে দক্ষতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি পেলে আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী স্বল্প
বা দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করা সম্ভব। বন্যা নিয়ন্ত্রণ (খড়ড়ফ চৎড়ড়ভরহম) প্রোগ্রামের অধীনে অর্থনৈতিক
কর্মকান্ড প্লাবনে ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা সম্ভব। এই সমস্ত ব্যবস্থাদি গ্রহণে
সরকারের সাথে সর্বস্তরের জনগণের সহযোগিতার প্রয়োজন।
গ. সম্পদ ব্যবহারের অথবা অবস্থানের পরিবর্তন করে (ঈযধহমরহম ঃযব টংব ড়ভ জবংড়ঁৎপবং
ড়ৎ খড়পধঃরড়হ) : এর মধ্যে পড়ে সম্পদ পুনর্বিন্যাস বা তার ব্যবহার পরিবর্তন এবং স্থায়ী বা অস্থায়ী
অভিগমন। বিপদাপন্ন এলাকার ভূমি নিয়ন্ত্রণ করে ভূমি ব্যবহারের আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে ভূমি পুনর্বিন্যাস
করা যায়। দুর্যোগ এলাকায় মানুষের বসবাসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বনায়ন বা অন্য পরিবেশ অনুকূল ব্যবহারের
প্রবর্তন করা যায়। বিপজ্জনক এলাকা থেকে লোকজন স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে অপসারণ করে জীবনহানি রোধ
করা সম্ভব। খরা অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে গণ অভিগমন একটি কার্যকরী সমন্বয়ন পদ্ধতি। দক্ষিণ-পূর্ব ব্রাজিল,
উত্তর আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে এই ধরনের গণ অভিগমন পদ্ধতি প্রচলিত আছে।
দুর্যোগ পরবর্তীকালে জরুরী ব্যবস্থাসমূহ, যেমন খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করলে জীবন হানির
সম্ভাবনা হ্রাস পায়। জনসাধারণকে দুর্যোগ সম্বন্ধে সতর্ক রাখা দুর্যোগ মোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দুর্যোগ
প্রতিরোধ প্রস্তুতিকরণ হচ্ছে পূর্ব পরিকল্পিত জরুরী সচেতনতামূলক ব্যবস্থা। এই কর্মসূচীতে দুর্যোগ পূর্ব
পরিকল্পনা এবং দুর্যোগ পরবর্তী পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত। গণশিক্ষা, সচেতনতা, প্রচারণা, বিপদ সংকেত ইত্যাদির
ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াও এলাকা উন্নয়নের পরিকল্পনা, স্থানত্যাগী জনগণের জরুরী খাদ্য সরবরাহ ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা
অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও দুর্যোগ এলাকা চিহ্নিতকরণ, দুর্যোগ সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস দুর্যোগ প্রস্তুতির মধ্যে পড়ে।
দুর্যোগ প্রস্তুতির জন্য নির্দেশাবলী প্রণয়ন, জরুরী কার্যক্রম, দুর্যোগ ত্রাণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জনগণের
অংশগ্রহণ, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাদি পুনর্গঠন পরিকল্পনা দুর্যোগ পরবর্তী পরিকল্পনা ও পুনর্বাসনের অন্তর্ভুক্ত।
দুর্যোগ প্রস্তুতি পরিকল্পনা এমন হবে যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ একবার আঘাত হানলে দ্রæত কার্যকর পদক্ষেপ
নেওয়া সম্ভব। দুর্যোগ হ্রাসকরণ প্রক্রিয়ায় স্থানীয় কর্মসূচীর উন্নয়ন আবশ্যক। দুর্যোগ পূর্ব পরিকল্পনায় জনগণের
প্রয়োজনের উপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
নিচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত উত্তর দিন:
১. প্রাকৃতিক দুর্যোগে সমন্বয় কৌশলসমূহে সময় অনুসারে কয়ভাবে ভাগ করা যায় এবং কি কি ?
২. শিল্প পূর্ব যুগে মানুষের দুর্যোগ সমন্বয় কৌশল কেমন ছিল?
৩. শিল্প পূর্ব যুগে মানুষ কিভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতো?
৪. চীন বন্যা প্রতিরোধে কি করতো?
৫. বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে এবং ভারতের গঙ্গা প্লাবন সমভূমিতে দুর্যোগ সমন্বয় কৌশল কি ধরনের?
৬. বাংলাদেশের কৃষকরা খরা, বন্যা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকদের কোন বিষয়টি মূলত কাজ করে?
৭. শিল্পোত্তর যুগে মানুষের দুর্যোগ সমন্বয় কৌশলে কিসের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়?
৮. দুর্যোগ মোকাবেলায় বৃহৎ কাঠামো প্রধানত কোন দেশসমূহে দেখা যায়?
৯. কি ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় কাঠামোগত প্রযুক্তি আর্থিকভাবে অধিক লাভজনক?
১০. কাঠামোগত ব্যবস্থাসমূহ কি কি প্রকারের হয়ে থাকে?
১১. দুর্যোগের মাত্রা হ্রাস করার কৌশলসমূহ কি কি?
নিচের সারাংশটি পড়ে পাঠটি সম্বন্ধে আপনার ধারণাটি আরও পরিষ্কার করুন।
পাঠসংক্ষেপ :
প্রাকৃতিকভাবে সংঘটিত চরম ঘটনাবলীকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলা হয়। প্রাকৃতিক ঘটনাবলীকে তখনই দুর্যোগ
বলে অভিহিত করা হয় যখন এই ঘটনায় জীবন ও সম্পদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। বিশ্বে প্রতি বছর
প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রাকৃতিকভাবে সংঘটিত হলেও প্রকৃতি ও
মানুষের মিথস্ক্রিয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রধান কারণ পৃথিবীব্যাপী জনসংখ্য বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক
উন্নয়ন। ফলে মানুষ অধিক মাত্রায় প্রকৃতি থেকে সম্পদ আহরণে সচেষ্ট হয়েছে। সম্পদ আহরণ ও ভোগের জন্য
মানুষ অধিক মাত্রায় শহর ও অন্যান্য সুবিধাজনক এলাকায় কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। এই সমস্ত এলাকা যত বেশি
দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় অবস্থিত হচ্ছে ততই দুর্যোগের ঘটনা বাড়ছে। কারণ লোকসংখ্যা বৃদ্ধি মানুষকে ক্রমাগত
দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় বসবাসে বাধ্য করছে।
শিল্পপূর্ব যুগে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের সমন্বয় কৌশল গ্রহণে পরিবেশ প্রত্যক্ষণের বিশেষ ভূমিকা ছিল, যার
জন্য সমন্বয় কৌশল ছিল অতি সাধারণ। শিল্পোত্তর যুগে লোকজ ও আধুনিক কাঠামোগত ও অন্যান্য প্রযুক্তির
সমন্বয় লক্ষ্য করা যায়। দুর্যোগের মাত্রা কয়েকটি কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে হ্রাস করা সম্ভব। এগুলো হলো
দুর্যোগজনিত ক্ষতিকে স্বীকার অথবা ক্ষতির অংশীদার হয়ে, চরম ঘটনাকে পরিমিতকরণের মাধ্যমে, সম্পদ
ব্যবহার অথবা অবস্থানের পরিবর্তন করে। এছাড়াও দুর্যোগ পরবর্তী জরুরী অবস্থা ঘোষণা এবং দুর্যোগ
প্রতিরোধের প্রস্তুতি গ্রহণের মাধ্যমে দুর্যোগের মাত্রা হ্রাস করা সম্ভব।
অনুশীলনী
পাঠটি কয়েকবার ভালভাবে পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন।
১. প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংজ্ঞা দিন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে লিখুন।
২. শিল্পপূর্ব দুর্যোগ সমন্বয় কৌশল সম্বন্ধে বিস্তারিত লিখুন।
৩. শিল্পোত্তর দুর্যোগ সমন্বয় কৌশল সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করুন।
৪. দুর্যোগের মাত্রা কি কি কৌশলের মাধ্যমে হ্রাস করা সম্ভব? কৌশলগুলো সংক্ষেপে লিখুন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন : ৬.৫
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন:
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন:
১.১ প্রতিবছর কত লক্ষ লোক প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয় ?
ক. এক লক্ষের উপর খ. তিন লক্ষের উপর গ. আড়াই লক্ষের উপর
১.২ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী মোট ক্ষতির পরিমাণ কত?
ক. ৪০,০০০ মিলিয়ন ইউ.এস. ডলার
খ. ২০,০০০ মিলিয়ন ইউ.এস. ডলার
গ. ১০,০০০ মিলিয়ন ইউ.এস. ডলার
১.৩ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক ক্ষতি হয় কি দ্বারা?
ক. খরা খ. বন্যা গ. ঘূর্ণিঝড়
১.৪ বার্টন ও কেট্স প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহকে কয়টি শ্রেণিতে বিভক্ত করেন?
ক. চারটি খ. ছয়টি গ. দুটি
১.৫ কোন অঞ্চলের মানুষ বন্যার সাথে বসবাস কৌশলে অভ্যস্ত।
ক. আমেরিকার সমভ‚মি অঞ্চল
খ. মধ্যপ্রাচ্যের উপক‚লীয় অঞ্চল
গ.বাংলাদেশের উপক‚লীয় প্লাবণ সমভ‚মি ও ভারতের গঙ্গা প্লাবণ সমভ‚মি
২. শূন্যস্থান পূরণ করুন: (সময় ৫ মিনিট):
২.১ প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রাকৃতিকভাবে সংঘটিত সর্বসাধারণ স্বীকৃত প্রাকৃতিক ঘটনাবলী যা ................ও
...................প্রভ‚ত ক্ষতি করে।
২.২ প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ...................পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে।
২.৩ শিল্পপূর্ব সমাজে দুর্যোগ সমন্বয় কৌশল ছিল ..................... .......................।
২.৪ চীনে প্রায় আড়াই হাজার বছরেরও পূর্ব থেকে বন্যা প্রতিরোধে জমিতে ...................নির্মাণ প্রচলিত
রয়েছে।
২.৫ উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ থেকে ....................... .....................দ্বারা দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
প্রসার লাভ করে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (সময় ১৬ মিনিট):
১. প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোন অঞ্চলের অধিবাসীরা বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় ?
২. দুর্যোগকে কখন দুর্যোগ বলা যাবে না ?
৩. মানুষ শহরসহ অন্যান্য সুবিধাজনক এলাকায় কেন কেন্দ্রীভ‚ত হচেছ ?
৪. বাংলাদেশের উপক‚লীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় জলোচছ¡াসে কেন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে?
৫. কি কারণে মেঘপবন দ্বারা বৃষ্টি ঘটানো হয় ?
৬. কোন ধরনের দুর্যোগসমূহ কাঠামোগত প্রযুক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রণ আর্থিক দিক থেকে অধিক লাভজনক? ১ ২ ৩ ৪
৭. বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজ দুর্যোগ পরবর্তী কালে সাধারণত কি করে?
৮. কি ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করলে দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতি পরিমিত পর্যায়ে আনা সম্ভব? ৫ ৫ ৫ ..
রচনামূলক প্রশ্ন : ৫ ৫ ৫ ..
১. প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংজ্ঞা দিন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকৃতি আলোচনা করুন। ৫ ৫ ৫ ৫
২. প্রাকৃতিক দুর্যোগের শ্রেণীবিভাগ করুন। প্রত্যেক শে্িরণর অধীনস্থ প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহ উল্লেখ করুন। ৩ ৩ ৩ ৩
৩. শিল্পপূর্ব এবং শিল্পোত্তর দুর্যোগ সমন্বয় কৌশল সম্বন্ধে সংক্ষেপে লিখুন। ৩ .. .. ..
৪. প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রাকে কি কি কৌশলে হ্রাস করা যেতে পারে? সংক্ষেপে কৌশলসমূহ আলোচনা ৩ ৩ ৩ ৩
করুন। ৩ ৩ .. ৩

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]