বাংলাদেশের জলবায়ু ও তার বৈশিষ্ট্যাবলী আলোচনা করুন।


বাংলাদেশের জলবায়ু (ঈষরসধঃব ড়ভ ইধহমষধফবংয)ঃ
বাংলাদেশ ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ুর দেশ। কর্কট ক্রান্তি রেখা (২৩১
/২
০ উঃ) বাংলাদেশের প্রায় মধ্যভাগ দিয়ে
অতিক্রম করায় এদেশে ক্রান্তীয় জলবায়ুর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। উষ্ণ-আর্দ্র গ্রীষ্মকাল, শুষ্ক-শীতল শীতকাল
এবং বর্ষাকালে প্রচূর বৃষ্টিপাত বাংলাদেশের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলেও ষড়ঋতুর এই দেশের প্রতি ঋতু ভিন্ন
বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষির উপর নির্ভরশীল হওয়ায় এদেশের জলবায়ু, তথা প্রতিটি ঋতুর
তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাতের তারতম্য, আর্দ্রতা, ও ঝড়-ঝঞ্চা সম্পর্কে জানা অত্যন্ত প্রয়োজন। কোন
অঞ্চলের জলবায়ু বা তার যে কোন উপাদান একক বা সম্মিলিতভাবে সে অঞ্চলের জীবজন্তু, উদ্ভিদ, মানুষ,
ইত্যাদির কার্যকলাপের নিয়ন্ত্রক হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রেখে থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এর
ব্যতিক্রম নেই।
জলবায়ু (ঈষরসধঃব) ঃ
কোনো একটি বৃহৎ স্থান বা অঞ্চলের বায়ুর তাপ, চাপ, বায়ু প্রবাহ, আর্দ্রতা ও বারিপাত ইত্যাদি উপাদানগুলোর
দীর্ঘ দিনের (২০ বা ৩০ বছরের) গড় অবস্থাকে জলবায়ু বলা হয়।
জলবায়ুর উপাদান (বষবসবহঃং) ও নিয়ন্ত্রক (পড়হঃৎড়ষং) সমূহ ঃ
জলবায়ুর উপাদান বলতে কোন একটি নিদির্ষ্ট স্থান বা অঞ্চলের তাপমাত্রা (ঃধসঢ়ধৎধঃবৎব), বায়ুচাপ
(ঢ়ৎবংংঁৎব), বায়ু প্রবাহ (রিহফং) আর্দ্রতা (যঁসরফরঃু) এবং বারিপাত (ঢ়ৎবপরঢ়রঃধঃরড়হ) ইত্যাদি বোঝায়।
অন্যদিকে একটি নির্দিষ্ট স্থানের জলবায়ু নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে কতগুলো নিয়ন্ত্রকের দ্বারা। এই নিয়ন্ত্রক গুলো
(পড়হঃৎড়ষং) হলো, অক্ষাংশ বা অক্ষরেখা (ষধঃরঃঁফব), উচ্চতা (ধষঃরঃঁফব), সমুদ্র স্রোত (ড়পবধহ পঁৎৎবহঃং)
ভূমি বন্ধুরতা (ৎবষরবভ), বায়ুমন্ডলীয় গোলযোগ (ংঃড়ৎসং পুপষড়হবং), স্থল ও জলভাগের অবস্থান (ঢ়ড়ংরঃরড়হ
ৎবষধঃরাব ঃড় পড়হঃরহবহঃং), ইত্যাদি।
এই নিয়ন্ত্রকগুলো (পড়হঃৎড়ষং) আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদানগুলোর পারিসরিক বা স্থানিক (ংঢ়ধঃরধষ) ও
সময়গত (ঃবসঢ়ড়ৎধষ) বিস্তরন নির্ধারণ করে মূলতঃ বিভিন্ন ধরণের জলবায়ু অঞ্চলের সৃষ্টি করে।
জলবায়ুর উপাদানসমূহ (ঈষরসধঃরপ ঊষবসবহঃং) ঃ
কোন একটি বৃহৎ অঞ্চলের জলবায়ুর উপাদানসমূহ একক অথবা সম্মিলিতভাবে সে অঞ্চলের নানা প্রজাতির জীব
ও উদ্ভিদ, বিভিন্ন শ্রেণীর মৃত্তিকা, এবং সেই অঞ্চলে বসবাসরত মানবগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় এক ব্যাপক ও
শক্তিশালী ভূমিকা রেখে থাকে। অতএব, যে কোন একটি অঞ্চলের প্রাকৃতিক ও মানবীয় বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে
জানতে হলে, ঐ অঞ্চলের জলবায়ু সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। নিæে বাংলাদেশের জলবায়ুর উপাদান সমূহ
(বষবসবহঃং) সম্পর্কে ধারণা দেয়া হলো।
ক. তাপমাত্রা (ঞবসঢ়ধৎধঃঁৎব)ঃ
জলবায়ুর উপাদান হিসেবে তাপমাত্রা হলো, একটি স্থানের প্রকৃত তাপমাত্রা ও সেই স্থানের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ও
বায়ুপ্রবাহের ফলে অনুভূত উষ্ণতা বা শীতলতার (যবধঃ ড়ৎ পড়ষফ) পরিমাণ বা ডিগ্রী (অৎড়ৎধ, ১৯৯৫)।
বাংলাদেশের তাপমাত্রা ক্রান্তীয় থেকে উপক্রান্তীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এদেশে বার্ষিক গড় তাপমাত্রা
(সবধহ ধহহঁধষ ঃবসঢ়বৎধঃঁৎব) হচ্ছে ২৫০
সে. এবং গ্রীষ্ম কালে গড় তাপমাত্রা ৩০.৪০
সে. (কক্সবাজার ও
চট্টগ্রাম) থেকে ৩৬০
সে. (রাজশাহী) পর্যন্ত পৌঁছে। মার্চ থেকে মে পর্যন্ত বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে ও মৃতপ্রায়
বদ্বীপ (গড়ৎরনঁহফ) অঞ্চলে প্রায় প্রতিদিন শুষ্ক ও উষ্ণ পশ্চিমা (ঢ়ধংপযর) বায়ুপ্রবাহিত হয় (জধংযরফ,১৯৯১)।
কখনও কখনও বজ্রঝড় (ঞযঁহফবৎ ংঃড়ৎস) হয়। অন্যদিক, দেশের পূর্বাঞ্চলে এ ঋতুতে বজ্রঝড় অপেক্ষাকৃত
অধিক হলেও তাপমাত্রা কিঞ্চিত কম।
চিত্র ১.৩.১ ঃ বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা (জুলাই) চিত্র ১.৩.২ ঃ বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা (জানুয়ারী)
খ. বৃষ্টিপাত (জধরহভধষষ) ঃ
বাংলাদেশে বৃষ্টিপাতের উৎস্য মুলতঃ তিনটি। এই তিনটি হলোঃ (র) শীতকালীন পশ্চিমা নি¤œচাপ জনিত বৃষ্টিপাত
(বিংঃবৎহ ফবঢ়ৎবংংরড়হ ড়ভ রিহঃবৎ), (রর) গ্রীষ্মকালীন উত্তর পশ্চিমা বজ্রঝড় (বধৎষু ংঁসসবৎ
ঃযঁহফবৎংঃড়ৎস ড়ৎ ঘড়ৎবিংঃবৎ) (ররর) দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বৃষ্টিপাত (গড়হংড়ড়হ) (রশীদ, ১৯৯১)
(র) শীতকালীন বৃষ্টিপাতের উৎস্য পশ্চিম দিক হতে আগত শীতল ও ভারী বায়ু। এই বায়ু হিমালয় পাদদেশে
আসাম ও বাংলাদেশে শীতকালে অর্থাৎ মধ্য জানুয়ারি থেকে মধ্য ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৩০/৩৫ দিন
বৃষ্টিপাত ঘটায়। এ সময়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ১ সে.মি. (কক্সবাজার) থেকে উত্তরাঞ্চলে ৪ সে.মি.
(শ্রীমঙ্গল) বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে (রশীদ, ১৯৯১)
(রর) গ্রীষ্মের প্রারম্ভে বাংলাদেশে বজ্রঝড় ও বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। কালবৈশাখী নামে পরিচিত এই ঝড়ের
আগমন যে কোন দিক হতে সংঘটিত হলেও মূলতঃ উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিম দিক হতে আসে বলে একে
উত্তর-পশ্চিমা বজ্রঝড় অভিহিত করা হয়। কালবৈশাখী ঝড় নানা কারণে সংঘটিত হলেও প্রধানতঃ
উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত শীতল ও শুষ্ক বায়ুর সাথে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত
উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ুর সংঘর্ষের ফলে বজ্রঝড়সহ বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়।
উৎস ঃ হারুন-অর-রশিদ, ১৯৯১
চিত্র নং ঃ ১.৩.৩ : বাংলাদেশের গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত
উৎস ঃ হারুন-অর-রশিদ, ১৯৯১
কালবৈশাখী ঝড় -এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, স্বল্প সময়ে ভারী বৃষ্টিপাত। বজ্রপাত ও ঝড়ো বায়ুপ্রবাহ
(গড়ে ১০০ কি.মি. প্রতি ঘন্টায়) বিশিষ্ট এই কালবৈশাখী সাধারণত মার্চ মাসে আবির্ভূত হলেও কোন
কোন ক্ষেত্রে ফেব্রæয়ারী মাসেও আবির্ভূত হয় (চৌধুরী, ১৯৯৫)। আবার মে মাসের প্রথমার্ধ পর্যন্ত এই
বজ্রঝড় সংঘটিত হলেও জুন মাসে মৌসুমী বায়ুর আগমনের সাথে সাথে কালবৈশাখী অর্ন্তনিহিত হয়ে
যায়।
(ররর) জুন মাসে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বৃষ্টিপাত (গড়হংড়ড়হ জধরহ)-এর মাধ্যমে বাংলাদেশে বর্ষার আগমন
হয়। এ ঋতুতে উষ্ণ ও জলীয়বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ পশ্চিম বানিজ্য বায়ু (ংড়ঁঃয-বিংঃ ঃৎধফবং) অত্যন্ত
উত্তপ্ত ভারত মহাসাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপাসগরে পৌঁছে। এই উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু
পরিচলন প্রক্রিয়ার সাহায্যে কিছুটা উর্ধ্বে উঠে আরও উত্তর ও উত্তর র্পূব দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। এই
আর্দ্র বায়ু মায়ানমার সীমান্তে আরাকান-ইয়োমা পর্বত, উত্তরে মেঘালয় মালভূমি এবং হিমালয় পর্বত
গাত্রে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিক বৃষ্টিপাত ঘটায়। দেশের পূর্বদিক থেকে পশ্চিম
দিকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ক্রমশঃ হৃাস পেতে থাকে, যেমন, ব্রা²ণবাড়িয়ায় ১৯৮০ মিলিমিটার, ঢাকা
১৮৩০ মি.মি. এবং পাবনায় ১৫০০ মি.মি. (চৌধুরী, ১৯৯৫)। এ সময়ে পর্বতের পাদদেশে এবং
উপকূলবর্তী এলাকায় সর্বাধিক বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, কক্সবাজারে ৩৫৫৬ মি.মি.
এবং সিলেটে ৩৯৮৮ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের মোট বৃষ্টিপাতের পাঁচ ভাগের চারভাগ
বৃষ্টিপাত বর্ষাকালে সংঘটিত হয়। এ সময়ে বায়ুর আর্দ্রতা শতকরা ৮০ ভাগের উর্ধ্বে থাকে। বর্ষাকলে
প্রবাহিত দক্ষিণ পশ্চিম বাণিজ্য বায়ুর অপর নাম মৌসুমী বায়ু (ঝড়ঁঃয-ডবংঃ ঞৎধফবং)। মৌসুমী বায়ুর
প্রভাবে এ সময়ে বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয় বলে এই সময়ের জলবায়ুকে মৌসুমী জলবায়ু বলা হয়।
সারণী ১.৩.১ ঃ বাংলাদেশের বিভাগীয় শহরের মাসিক গড় তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত, ১৯৯৭
বিভাগীয় শহর তাপমাত্রা (সেমি) বৃষ্টিপাত (মিমি) সর্বোচ্চ সর্বনি¤œ
চট্টগ্রাম ৩২.৫ ১৪.১ ৩০৬৯
সিলেট ৩২.৭ ১২.১ -
ঢাকা ৩৩.৭ ১১.৫ ১৪৫৫
বরিশাল ৩৩.৪ ১০.৮ ১৭৬০
খুলনা ৩৪.২ ১০.৯ ১৮১৮
রাজশাহী ৩৬.৪ ৮.০ ২০০৬
উৎস ঃ বাংলাদেশ আবহাওয়া বিভাগ, ১৯৯৯
গ. কুয়াশা, কুজ্ঝটিকা, শিশির ও তুহিন (ঋড়ম, গরংঃ, উবি ধহফ ঐড়ধৎ-ঋৎড়ংঃ)
বাংলাদেশে নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত কুয়াশা ও কুজ্ঝটিকা এক সাধারণ চিত্র। এ সময়ে ঘন কুয়াশা ব্র²পুত্রযমুনা নদী, সিলেট জেলা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে বিরাজ করে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারী এই
দুইমাসে শিশির পাতের পরিমাণ ও অনেক বেশী। পার্বত্য চট্টগ্রামের উচ্চতম পর্বত শৃঙ্গে শীতকালে তুহিনপাত
হয়ে থাকে।
আর্দ্রতা (ঐঁসরফরঃু) ঃ
বাংলাদেশে প্রায় সারা বছর বায়ুতে আর্দ্রতার উপস্থিতি অনুভব করা যায়। মার্চ ও এপ্রিল মাসে এদেশের
পশ্চিমাঞ্চলে বায়ুতে আর্দ্রতার পরিমাণ সবচাইতে কম।তবে দেশের পূর্বাঞ্চলে সবচাইতে কম আর্দ্রতার উপস্থিতি
জানুয়ারি, ফ্রেব্রæয়ারি ও মার্চ মাসে (ব্রা²ণবাড়িয়ায় ৫৮.৫% ভাগ) দেখা যায়। বাংলাদেশে সারা বছরের গড়
আর্দ্রতা কক্সবাজারে ৭৮.১০% ভাগ ও পাবনায় ৭০.৫০% ভাগ (রশীদ, ১৯৯১)।
বায়ুপ্রবাহ (ডরহফং) ঃ
শীতকালে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে নভেম্বর থেকে ফেব্রæয়ারি মাস পর্যন্ত উত্তর পশ্চিম দিক থেকে, পূর্বাঞ্চলে
উত্তর দিক থেকে এবং উত্তরাঞ্চলে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়ে থাকে। মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত
দেশের পশ্চিমার্ধে পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়। অপর দিকে, এ সময়ে দেশের পূর্ব
দিকে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয়ে থাকে। এ সময়ে সংঘটিত কালবৈশাখী ঝড়
বায়ুপ্রবাহের গতি পরিবর্তন করে বিরাজমান উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় স্বস্তি দান করে। জুন থেকে নভেম্বর মাস
পর্যন্ত সময়কালে বায়ু দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক হতে প্রবাহিত হয়ে থাকে। অক্টোবরে বায়ুপ্রবাহের দিকে
পরিবর্তন পরিলক্ষিত হলেও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত বায়ু অপেক্ষা উত্তর দিক হতে প্রবাহিত বায়ুর
প্রাধান্য বেশী পরিলক্ষিত হয়। এ সময়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পায় এবং বায়ুর সর্বনি¤œ
আর্দ্রতা (৩৬% ভাগ) বজায় থাকে।
বাংলাদেশে প্রায় মধ্যভাগ বরাবর কর্কট ক্রান্তীয় রেখা (ঞৎড়ঢ়রপ ড়ভ ঈধহপবৎ) অতিক্রম করেছে। গ্রীষ্মকালে
ক্রান্তীয় রেখা বরাবর সূর্যরশ্মি খাড়া ভাবে পতিত হওয়ায় ঐ এলাকার বায়ু উষ্ণ, আর্দ্র ও হালকা হয়ে উর্ধ্ব দিকে
প্রবাহিত হলে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে আগত বায়ু অর্ন্তনিহিত হয়ে যায়। ফলে ঐ স্থানে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে
অপেক্ষাকৃত কম উষ্ণ আর্দ্র বায়ু প্রবাহিত হয়ে আসে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু নামে পরিচিত এই বায়ু প্রবাহ
মূলতঃ দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর স¤প্রসারিত অংশ, যা নিরক্ষরেখা অতিক্রম বরাবর সময়ে ফেরেলের সূত্রানুযায়ী
উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুতে পরিণত হয়ে
বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
বাংলাদেশে শীতকালে সাধারণতঃ উত্তর দিক হতে এবং গ্রীষ্মকাল ও বর্ষাকালে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণপূর্ব দিক হতে বায়ু প্রবাহিত হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালী বজ্রঝড় (বায়ুর গতিবেগ ৫০-১০০ কি.মি./ঘন্টা) ও প্রাক
বর্ষা ও বর্ষাকাল উত্তর সময়ে সৃষ্ট ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় এবং গ্রীষ্মকালে প্রায়শঃ সংঘটিত টর্নেডো ব্যতীত বাংলাদেশে
সারা বছর মৃদু বায়ুপ্রবাহ পরিলক্ষিত হয়।
বায়ুমন্ডলীয় চাপ (অঃসড়ংঢ়যবৎরপ চৎবংংঁৎব) ঃ
মধ্য নভেম্বর থেকে মধ্য ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত শীতকালে বাংলাদেশে বায়ুমন্ডল অত্যন্ত শীতল ও ভারী হয়ে থাকে।
জানুয়ারি মাসে বায়ুমন্ডলের গড় চাপ ১০২০ মিলিবার পর্যন্ত পৌঁছে। এই সময়ে উত্তর পূর্বে চীন ও সাইবেরিয়া
থেকে শীতলতর বায়ু প্রবাহ ব্র²পুত্র ও গঙ্গা অববাহিকা দিয়ে উত্তর দিক থেকে বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়। মার্চ
থেকে সেপ্টেম্বর মাসে অপেক্ষাকৃত উষ্ণতর আবহাওয়ার ফলে এ সময়ে বায়ুমন্ডল উষ্ণ ও হালকা (১০০৫
মিলিবার) হয়ে থাকে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত উষ্ণ বায়ু এ সময়ে বাংলাদেশের আবহাওয়াকে
উষ্ণ করে তোলে। মে-জুন ও অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বায়ুপ্রবাহের দিক ও সেই সঙ্গে বায়ুমন্ডলীয় চাপের
পরিবর্তন ঘটায় এ সময়ে প্রায়শঃ ঝড়ো আবহাওয়া পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। বজ্রঝড়, ক্রান্তীয় ঘুর্ণিঝড়, টর্নেডো
ইত্যাদি বায়ুমন্ডলীয় গোলযোগ এই সময়কালে পরিলক্ষিত হয়।
বাংলাদেশের জলবায়ু অঞ্চলের শ্রেণী বিভাগ ঃ
বাংলাদেশের জলবায়ু যথেষ্ট্য বৈচিত্র্যময়। এদেশে ছয়টি ঋতুর প্রত্যেকটি পৃথক বৈশিষ্ট্য মন্ডিত। এই পাঠে
আলোচনার সুবিধার্থে বাংলাদেশের জলবায়ুকে প্রধান তিনটি ঋতুতে বিভক্ত করা হয়। যেমনক) শীতকাল ঃ সূর্যের দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থানের ফলে, বাংলাদেশে প্রতি বছর নভেম্বর থেকে ফেব্রæয়ারি,
কোন কোন সময়ে মার্চ মাস পর্যন্ত শীতকাল বিরাজ করে। এ সময়ে গড়ে সর্বোচ্চ ২৯০
সে. থেকে
সর্বনি¤œ ১১০
সে. তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয়। আকাশ মেঘমুক্ত ও নির্মল থাকে, বাতাসের আর্দ্রতার
পরিমাণও কম থাকে। রাতের বেলা শিশিরপাত ও সকাল বেলায় কুয়াশাছন্ন আকাশ শীতকালের
বৈশিষ্ট্য। জানুয়ারি মাস শীতকালের শীতলতম মাস (গড় তাপমাত্রা ১৭.৭০ সে.)। জানুয়ারি মাসে
দেশের দক্ষিণাংশে চট্টগ্রামে ২০০
সে., মধ্যম অবস্থানে ঢাকায় ১৮.৩০
সে. এবং উত্তরাংশে দিনাজপুরে
১৭
সে. তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয়। তবে দেশের একেবারে উত্তরে তাপমাত্রা ৮০
সে. বা তারও
নীচে ৫০
সে. এ নেমে আসে। এ সময়ে রাজশাহীতে ৫০
সে. ও ইশ্বরদীতে ৬০
সে. তাপমাত্রা
পরিলক্ষিত হয় (সারনী ১.৩.১)। শীতকাল বেশ উপভোগ্য, শীতল ও আরামদায়ক হলেও কোন কোন
সময়ে তীব্র শীতের প্রকোপ জনজীবনে দূর্ভোগ বয়ে আনে।
খ) গ্রীষ্মকাল ঃ মার্চ মাসের মধ্যভাগ থেকে মে/জুন মাস সময়ে কালে সূর্য্য উত্তর গোলার্ধে অবস্থান করে।
ফলে এ সময়ে বাংলাদেশে সূর্যরশ্মি খাড়া ভাবে পতিত হয় এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এই
সময়কাল গ্রীষ্মকাল নামে পরিচিত। উষ্ণ আর্দ্র মেঘমুক্ত আবহাওয়া, কখনও কখনও তাপ প্রবাহ
(ঐবধঃ ধিাব), অপরাহ্নে বৃষ্টিপাত ও পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে কালবৈশাখী ঝড় এই ঋতুর বৈশিষ্ট্য।
এ সময়ে দেশের দক্ষিনাঞ্চলে (চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার) তাপমাত্রা গড়ে ৩০.৪

সে. হলেও তাপমাত্রা
উত্তরদিকে ক্রমশঃ বাড়তে থাকে। দেশের মধ্যভাগে ঢাকায় তাপমাত্রা ৩৪০ সে. এবং আরও উত্তরে
ঈশ্বরদী (৪৩০
সে.) ও রাজশাহী (৪৪০
সে.) তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
গ) বর্ষাকাল ঃ জুনের মধ্যভাগ হতে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের বর্ষাকাল। বছরের মোট বৃষ্টিপাতের
শতকরা ৮০ভাগ বৃষ্টি এই ঋতুতেই হয়ে থাকে। দক্ষিণ পশ্চিম দিকে হতে আগত মৌসুমী বায়ুর
প্রভাবে এই বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়। এই ঋতুতে গড় তাপত্রামা সর্বোচ্চ ৩১০
সে. নাতিশীতোষ্ণ
আবহাওয়া, আর্দ্র বাতাস, এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত এই ঋতুর প্রধান বৈশিষ্ট্য। কোনো কোনো বছরে
অতিবৃষ্টির কারণে বণ্যা সংঘটিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে তাপমত্রার সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে
দেখা যায় যে, প্রধানতঃ গ্রীষ্ম প্রধান এই দেশে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, জুলাই
থেকে সেপ্টেম্বর মধ্যম মাত্রার তাপমাত্রা এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তাপমাত্রা বেশ কম
থাকে অর্থাৎ এ সময়ে শীত কাল বিরাজ করে।
বাংলাদেশের জলবায়ু অঞ্চল সমূহ:
ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলে অবস্থিত বাংলাদেশের জলবায়ুর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সনাক্ত পূর্বক জলবায়ু
বিজ্ঞানীগণ এদেশেকে কতিপয় জলবায়ু অঞ্চলে বিভক্ত করেছেন। বিখ্যাত উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ভ াদিমির কোপেন -
স্বাভাবিক উদ্ভিজ্জ (ঘধঃঁৎধষ ঠবমবঃধঃরড়হ), মাসিক গড় তাপমাত্রা (সবধহ ঃবসঢ়বৎধঃঁৎব), গড় বারিপাত
(ঢ়ৎবপরঢ়রঃধঃরড়হ) ও বার্ষিক গড় তাপমাত্রা (সবধহ ধহহঁধষ ঃবসঢ়বৎধঃঁৎব)-এর ভিত্তিতে সমগ্র পৃথিবীকে
কতিপয় জলবায়ু অঞ্চলে বিভক্ত করেছেন। তন্মধ্যে,বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল শুষ্ক শীতকাল ও আর্দ্র
উপক্রান্তীয় (ঈধি) জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। অন্যদিকে, দেশের বাকী অংশ ক্রান্তীয় মৌসুমী (অস) জলবায়ুর
অন্তর্গত। নিæে বাংলাদেশের কতিপয় উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞানী জলবায়ুর শ্রেনীবিভাগ সম্পর্কে ধারণা দেয়া হ’লো।
১। প্রফেসর হারুন-অর-রশিদ ঃ তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশকে মোট সাতটি জলবায়ু
উপ-অঞ্চলে (ংঁন-ুড়হব) বিভক্ত করেছেন। এগুলো হলো ঃ (র) দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল (রর) উত্তর-পূর্বাঞ্চল (ররর)
উত্তরের উত্তরাঞ্চল (রা) উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল (া) পশ্চিমাঞ্চল (ার) দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল (ারর) দক্ষিণ মধ্যাঞ্চল।
২। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ঃ বাংলাদেশকে সাধারণভাবে ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত উল্লেখ
পূর্বক তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহ ও বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ইত্যাদির ভিত্তিতে সমগ্র দেশকে কতিপয় জলবায়ু অঞ্চলে
বিভক্ত করেছেন। এগুলো হলো ঃ
(র) ক্রান্তীয় উপক্রান্তীয় শুষ্কপ্রায় জলবায়ু (ঞৎড়ঢ়রপধষ- ঝঁনঃৎড়ঢ়রপধষ ঝবসর-ধৎরফ ঈষরসধঃব)
(রর) ক্রান্তীয় উপক্রান্তীয় আর্দ্রপ্রায় জলবায়ু (ঞৎড়ঢ়রপধষ- ঝঁন ঐঁসরফ ঈষরসধঃব)
(ররর) ক্রান্তীয় উপক্রান্তীয় আর্দ্র জলবায়ু (ঞৎড়ঢ়রপধষ- ঐঁসরফ ঈষরসধঃব)
(রা) ক্রান্তীয় উপক্রান্তীয় সামুদ্রিক জলবায়ু (ঞৎড়ঢ়রপধষ- গধৎরঃরসব ঈষরসধঃব)
(া) ক্রান্তীয় বৃষ্টিবহুল (ঞৎড়ঢ়রপধষ ডবঃ ঈষরসধঃব)
(ার) উপক্রান্তীয় বৃষ্টিবহুল (ঝঁনঃৎড়ঢ়রপধষ ডবঃ ঈষরসধঃব)
৩। প্রফেসর এম. আমিনুল ইসলাম ঃ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পানি ঘাটতির উপর নির্ভর করে
বাংলাদেশকে কতিপয় জলবায়ু অঞ্চলে বিভক্ত করেছেন। যেমন ঃ (র) আর্দ্র ও বৃষ্টিবহুল পূর্বাঞ্চল, (রর) শুষ্ক ও
বৃষ্টিহীন পশ্চিমাঞ্চল, (ররর) অপেক্ষাকৃত কম বৃষ্টি, কম তাপমাত্রা, ও কম পানি ঘাটতি সম্পন্ন মধ্য অঞ্চল।
৪। প্রফেসর নাফিস আহমেদ ঃ বাংলাদেশকে সাধারণভাবে কতিপয় জলবায়ু অঞ্চলে বিভক্ত করেছেন। যেমন ঃ
(র) মহাদেশীয় (রর) উন্নত মহাদেশীয় (ররর) নাতিশীতোষ্ণ (রা) সামুদ্রিক (া) শীতল বৃষ্টিবহুল ও (ার) পাহাড়ী
অঞ্চল।
জলবায়ুর উপরোক্ত সকল শ্রেনীবিভাগের মধ্যে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশিষ্ট ভূগোলবিদ প্রফেসর হারুন-অররশিদ কর্তৃক উপস্থাপিত জলবায়ুর অঞ্চল ভিত্তিক শ্রেনীবিভাগটি সর্বাধিক প্রযোজ্য হওয়ায় এখানে বিস্তারিতভাবে
উপস্থাপন করা হ’লো।
ক) দক্ষিন-পূর্বাঞ্চলীয় জলবায়ু অঞ্চল (ঝড়ঁঃয-ঊধংঃবৎহ ঈষরসধঃরপ জবমরড়হ): চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম,
নোয়াখালী, বরিশাল, খুলনা, পটুয়াখালী, দক্ষিণ-পশ্চিম সুন্দরবন ও তদসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকা এবং
কুমিল্লা জেলার দক্ষিনাংশ এই জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত। এই জলবাযু অঞ্চলে অবস্থিত, ৩০০
মিটারের অধিক উচ্চতর পাহাড়গুলো ‘খ’ ধরনের জলবায়ুর অন্তর্গত। বাকী অঞ্চলের তাপমাত্রা ১৩০
সে: থেকে ৩২০
সে: পর্যন্ত উঠানামা করে। পাহাড়ী অঞ্চল হওয়ায় অধিক পরিমানে বৃষ্টিপাত (২৫৪
সে. মি.) হয়ে থাকে। শীতকালে শিশিরপাতের পরিমানও বেশী হয়ে থাকে। কোপেন -এর
শ্রেনীবিভাজন অনুযায়ী এই অঞ্চলটি অগ শ্রেনীর অন্তর্গত।
(খ) উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জলবায়ু অঞ্চল (ঘড়ৎঃয-ঊধংঃবৎহ ঈষরসধঃরপ জবমরড়হ) ঃ সিলেটের পূর্ব ও দক্ষিণের
প্রায় সমগ্র অঞ্চল এবং উত্তরাংশে মেঘালয়ের দক্ষিণের একটি সংকীর্ণ অঞ্চল এ ধরনের জলবায়ুর
অন্তর্গত। এই অঞ্চলে সর্বাধিক তাপমাত্রা ৩২০
সে. পর্যন্ত পৌঁছালেও সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১০০
সে.
অথবা আরও নীচে নেমে যায়। গড় আর্দ্রতা ‘ক’ অঞ্চলের তুলনায় অধিক। বাংলাদেশের এই অঞ্চলের
বৃষ্টিপাতের পরিমান সর্বাধিক (গড়ে ৩৪০০ থেকে ৪৬০০ মিলিমিটার)। তবে সিলেটের উত্তর-পূর্বাংশে
বৃষ্টিপাত ৫৮০০ মিলিমিটার সমবর্ষণ রেখা (ওংড়যুবঃ খরহব) অতিক্রম করে। উঁচু পাহাড়ের অবস্থানের
কারণে এই অঞ্চলের আকাশ সারা বছরই মেঘাচ্ছন্ন থাকে। শীতকালীন বৃষ্টি ও কুয়াশার উপস্থিতি
উল্লেখযোগ্য। চট্টগ্রামে ৩০০ মিটারের অধিক উচ্চতার পাহাড়ী এলাকা এই জলবায়ুর অন্তর্গত।
(গ) উত্তরের উত্তরাঞ্চলীয় জলবায়ু অঞ্চল (ঘড়ৎঃযবৎহ চধৎঃ ড়ভ ঘড়ৎঃযবৎহ ঈষরসধঃরপ জবমরড়হ) ঃ
বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুরের উত্তরাংশ এই অঞ্চলের অন্তর্গত। এই উপ-অঞ্চলের তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালে
গড়ে ৩২০
সে. এর উর্ধ্বে পৌছায়। অন্যদিকে শীতকালে গড় তাপমাত্রা ১০০
সে.-এর নীচে নেমে
যায়। শুষ্ক ও তীব্র গরম পশ্চিমা বায়ু গ্রীষ্মকালের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলেও বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের পরিমান
অধিক (২০০ থেকে ৩০০ সে. মি.)। তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিমানে ঋতুভিত্তিক পার্থক্যের কারণে
এই অঞ্চলকে চরমভাবাপন্ন (বীঃৎবসব) জলবায়ুর অঞ্চল হিসেবে অভিহিত করা হয়।
চিত্র ১.৩.৪ ঃ বাংলাদেশের জলবায়ু অঞ্চল সমূহ
উৎস্য: হারুন অর রশীদ, ১৯৯৯
(ঘ) উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জলবায়ু অঞ্চল (ঘড়ৎঃয-ডবংঃবৎহ ঈষরসধঃরপ জবমরড়হ) দিনাজপুরের দক্ষিনাংশ,
বগুড়া, পাবনা ও কুষ্টিয়ার কিয়দংশ এই জলবায়ুর অন্তর্গত। এই উপ-অঞ্চলের জলবায়ু ‘গ’
উপঅঞ্চলের জলবায়ুর সাথে সথেষ্ট সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে এই উপ-অঞ্চলে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের
পরিমানে ঋতুভিত্তিক পার্থক্য অপেক্ষাকৃত কম। বৃষ্টিপাতের পরিমান কম হওয়ায় এই উপ-অঞ্চলটির
আবহাওয়া ও মৃত্তিকার ধরন শুষ্ক প্রকৃতির।
(ঙ) পশ্চিমাঞ্চলীয় জলবায়ু অঞ্চল (ডবংঃবৎহ ঈষরসধঃরপ জবমরড়হ): রাজশাহী ও তৎসংলগ্ন অন্যান্য
জেলার কিয়দংশ এই ধরনের জলবায়ু উপ অঞ্চলের অন্তর্গত। এই অঞ্চলটি সর্বাপেক্ষা উষ্ণ ও শুষ্ক
গ্রীষ্মকাল বিশিষ্ট উপ-অঞ্চল (ংঁনুড়হব) গ্রীষ্মকালে এখানকার তাপমাত্রা ৩৫০
সে. এর উর্ধ্বে
পৌঁছায়। বায়ুর আর্দ্রতার পরিমান শতকরা ৫০ ভাগের কম হয়ে থাকে। বর্ষাকালে ১৫০ সে. মি. নীচে
বৃষ্টিপাত বিশিষ্ট এই উপ-অঞ্চলটি বাংলাদেশের শুষ্কতম এলাকা।
(চ) দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জলবায়ু অঞ্চল (ঝড়ঁঃয-ডবংঃবৎহ ঈষরসধঃরপ জবমরড়হ) : যশোহর, নড়াইল,
সাতক্ষীরা, ও খুলনা জেলার কিয়দংশ এই অঞ্চলের অন্তর্ভূক্ত। এই উপঅঞ্চলের জলবায়ু উত্তরাঞ্চলের
অন্যান্য উপ-অঞ্চলগুলো অপেক্ষাকৃত কম চরমভাবাপন্ন (বীঃৎবসব)। গ্রীষ্মকালীন গড় তাপমাত্রা
৩৫০
সে. এবং বৃষ্টিপাত ১৫০-১৮০ সে.মি. পর্যন্ত হয়ে থাকে। পশ্চিমাঞ্চলীয় উপ-অঞ্চল অপেক্ষা এই
এলাকায় শীতকালে অধিক শিশিরপাত হয়ে থাকে।
(ছ) দক্ষিণ মধ্যাঞ্চলীয় জলবায়ু অঞ্চল (ঝড়ঁঃয ঈবহঃৎধষ ঈষরসধঃরপ জবমরড়হ) : ঢাকা বিভাগসহ কুমিল্লা,
ও বরিশালের অধিকাংশ স্থান এই উপঅঞ্চলের অন্তর্ভূক্ত। এখানে প্রচূর পরিমানে বৃষ্টিপাত (১৯০ সি.
মি.) হয়ে থাকে। তাপমাত্রা পশ্চিমাঞ্চলীয় উপঅঞ্চলসমূহের (ঘ, ঙ, চ) তুলনায় কম হলেও দক্ষিণ
পূর্বাঞ্চলীয় (ক) এলাকা অপেক্ষা অধিক। এই উপঅঞ্চলটি মূলতঃ ক, ঘ ও চ জলবায়ু
উপঅঞ্চলগুলোর মধ্যবর্তী অবস্থানে রয়েছে। এই অঞ্চলটির পশ্চিমাঞ্চল অপেক্ষাকৃত অধিক উষ্ণ ও
শুষ্ক এবং পূর্বাঞ্চল অপেক্ষাকৃত শীতল ও আর্দ্র প্রকৃতির জলবায়ু বিশিষ্ট। জলবায়ুর পরিবর্তনটি এই
অঞ্চলের মধ্য দিয়ে সংঘটিত হয় বলে এই অঞ্চলকে পরিবর্তনশীল অঞ্চল (ঞৎধহংরঃরড়হধষ তড়হব)
বলা হয়। দেশের পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলীয় পরস্পর বিপরীতধর্মী তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহ, ও বৃষ্টিপাত এই
উপঅঞ্চলে মিলিত হওয়ার ফলে শিলাবৃষ্টি (ঐধরষ-ঝঃড়ৎস), কালবৈশাখী ঝড় (ঘড়ৎ’বিংঃবৎং), এবং
টর্নেডো (ঞড়ৎহধফড়) জাতীয় প্রাকৃতিক দূর্যোগ সংঘটিত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যাবলী
বাংলাদেশের জলবায়ুতে উচ্চ তাপমাত্রা, প্রচুর বৃষ্টিপাত, অতিরিক্ত আর্দ্রতা এবং ঋতুগত উল্লেখযোগ্যভাবে
পরিলক্ষিত হয়। এদেশের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নি¤œরূপ ঃ
১) বাংলাদেশের জলবায়ু অনেকটা সমভাবাপন্ন।
২) বাংলাদেশের জলবায়ু ক্রান্তীয় জলবায়ু অথবা ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ু নামে পরিচিত।
৩) বাংলাদেশের জলবায়ুতে গ্রীষ্মকালে আর্দ্রতা ও শীতকালে শুষ্কতা পরিলক্ষিত।
৪) এখানকার জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত ও স্বাভাবিক বন্যার পাশাপাশি
কয়েক বছর পরপর অস্বাভাবিক বন্যা।
৫) বাংলাদেশের ৬টি ঋতু থাকলেও মূলতঃ শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষা এ তিনটি ঋতুর প্রভাব বেশি পরিলক্ষিত
হয়।
৬) বাংলাদেশে গ্রীষ্মকাল আর্দ্র হলেও স্বল্প বৃষ্টিপাত ও মাঝে মাঝে কাল-বৈশাখীর মত প্রলয়ংকারী ঝড়
সংঘটিত হয়।
পাঠ সংক্ষেপঃ
উপরের আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে বাংলাদেশের জলবায়ুতে বৈচিত্র্যতা পরিলক্ষিত হয় এবং ঋতু
পরিবর্তনের সঙ্গে এর ঘনিষ্ট সম্পর্ক বিদ্যমান। এখানকার জলবায়ুর আরো উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শুষ্ক
আরামদায়ক শীতকাল, উষ্ণ ও গুমোট গ্রীষ্মকাল আর আর্দ্র ও উষ্ণ বর্ষাকাল।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নঃ
১. শূন্যস্থান পুরণ করুনঃ
ক) কোন অঞ্চলের জলবায়ু বা তার যে কোন .... একক বা ......... সে অঞ্চলের জীবজন্তু, ...... মানুষ
ইত্যাদির কার্যকলাপের নিয়ন্ত্রক হিসাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রেখে থাকে।
খ) বাংলাদেশে বৃষ্টিপাতের মূল উৎস্য ................।
গ) গ্রীষ্মের প্রারম্ভে বাংলাদেশে .............. ও বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
ঘ) বাংলাদেশে ......... থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত কুয়াশা ও কুজ্ঝটিকা এক সাধারণ চিত্র।
ঙ) বাংলাদেশের সারা বছরের মোট বৃষ্টিপাতে শতকরা .......... ভাগ বর্ষাকাল-এ সংঘটিত হয়।
২. সঠিক বাক্যের পাশে ‘স’ ও অঠিক বাক্যে ‘মি’ লিখুনঃ
ক) কর্কটক্রান্তি রেখা বাংলাদেশের প্রায় মধ্যভাগ বরাবর অতিক্রম করেছে।
খ) বায়ুর চাপ, তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা ইত্যাদি জলবায়ুর উপাদান।
গ) শীতকালীন বৃষ্টিপাতের উৎস্য বঙ্গোপসাগরের থেকে আগত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম বায়ুপ্রবাহ।
ঘ) ফেরেলের সূত্রানুযায়ী বায়ু উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়।
ঙ) পশ্চিমাঞ্চলীয় জলবায়ু অঞ্চলের অপর নাম পরিবর্তনশীল অঞ্চল।
সংক্ষেপে উত্তর দিনঃ
১. জলবায়ু কি বা জলবায়ু বলতে কি বুঝেন? এর বিভিন্ন উপাদানসমূহ আলোচনা করুন।
২. বাংলাদেশের জলবায়ু অঞ্চলসমূহ আলোচনা করুন।
৩. বাংলাদেশের বৃষ্টিপাতের মূল উৎস্যসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করুন।
৪. বাংলাদেশের তাপমাত্রার বৈশিষ্ট্য নিরূপণ করুন।
৫. বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় জলবায়ু এলাকার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করুন।
৬. বাংলাদেশের দক্ষিণ মধ্যাঞ্চলীয় জলবায়ু বিশদভাবে আলোচনা করুন।
রচনামূলক প্রশ্নঃ
১. বাংলাদেশের জলবায়ু ও তার বৈশিষ্ট্যাবলী আলোচনা করুন।
২. বাংলাদেশের জলবায়ুর উপাদান ও নিয়ন্ত্রকসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করুন।
৩. বাংলাদেশের জলবায়ুর শ্রেণীবিভাজন (হারুন-অর-রশীদ অনুসরনে) করুন এবং যে কোন ২টি অঞ্চল
আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]