বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থা
পৃথিবীর বিখ্যাত নদী ব্যবস্থা গঙ্গা-পদ্মা, যমুনা-ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা-বরাক সহ অসংখ্যক নদ-নদীর দেশ (প্রকৃত নদী সংখ্যা
বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন সঠিক তথ্য নেই। তবে কেউ কেউ বলেন, নদীর সংখ্যা ৭০০ থেকে ১০০০ এর মত, আবার
কেউ কেউ বলেন, ২৫৩টি। অর্থাৎ মতান্তর থাকলেও যাদের সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ২৪০০০ কিলোমিটার) হিসেবে পৃথিবীর
রাজনৈতিক মানচিত্রে বাংলাদেশ বেশ সুপরিচিত এবং তার মোট ভ‚ভাগের ৮০ ভাগেরও বেশি ভ‚মি এসব নদ-নদী দ্বারা
বাহিত পলল অবক্ষেপনের প্রতিদান। ফলে এদেশের শিক্ষা, আর্থ-সামাজিক, রাজনীতি, ইতিহাস, সাহিত্য ও সংস্কৃতি,
কৃষি, ব্যবসা বাণিজ্য, যোগাযোগ ইত্যাদিসহ বিবিধ কর্মকান্ড আবর্তিত হচ্ছে এসব নদ-নদীকে কেন্দ্র করে। তাই নদ-নদীই
এক কথায় অস্তিত্ব ও প্রাণ।
কোন উৎস হতে (পার্বত্য ভ‚মি, হ্রদ, বৃষ্টিবহুল স্থান, বরফ স্তুপ ইত্যাদি) নেমে আসা যে জলধারা সুদীর্ঘ খাতের মধ্যদিয়ে
এঁকে বেঁকে নিয়ত প্রবাহমান, তাই নদী নামে পরিচিত। যে খাতের মধ্য দিয়ে জলধারা প্রবাহিত হয়, তাকে নদী উপত্যকা
এবং উপত্যকার তলদেশ নদীগর্ভ নামে অভিহিত। অপেক্ষাকৃত ছোট নদী স্রোতস্বিনী, কোন একটি নদী অপর একটি
নদীতে মিলিত হলে প্রথম নদীটিকে অপর নদীটির উপনদী এবং একটি নদী হতে অপর একটি নদীর উৎপত্তি/বিকাশ/সৃষ্টি
হলে সৃষ্ট নদীটিকে মূল নদীর শাখা নদী বলে। উদাহরণস্বরূপ, মহানন্দা পদ্মা নদীর উপনদী আর গড়াই পদ্মার শাখা নদী।
নদী যে স্থান থেকে উৎপত্তি বা সৃষ্টি হয় তাকে নদীর উৎস এবং যেখানে মিলিত হয় তাকে মোহনা বলে। একটি নদী ও
তার উপনদীসমূহ একত্রে একটি নদী প্রণালী বা নদী ব্যবস্থা গঠন করে। নদী গঠনের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত আয়তন ও
গতিবেগ সম্পন্ন একাধিক প্রবাহের মিলিত ধারা যা অন্তস্থ ভ‚মি ও শিলার ক্ষয় সাধনের মাধ্যমে খাত সৃষ্টি তথা এগিয়ে চলে
থাকে। একটি উৎস আধার নদীর নিয়মিত প্রবাহ সচল রাখতে সদা সচেষ্ট থাকে। উদাহরণস্বরূপ গঙ্গোত্রী হিমবাহ গঙ্গা
নদীর উৎস হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের অধিকাংশ নদ-নদীই বার্ধক্য পর্যায়ে উপনীত হয়ে বঙ্গোপসাগরের পতিত হয়ে
থাকে। তাছাড়া, উচ্চ ভ‚মি, ভ‚মির ঢাল ইত্যাদিও নদীর উৎপত্তিতে ভ‚মিকা রেখে থাকে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে,
বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাহাড়ী ছড়া, সর্পিল মৌসুমী খাড়ি, স্বল্প পানি সমেত কর্দমাক্ত খাল-বিল ও নালা
এবং প্রধান প্রধান নদী ও এদের উপনদী, শাখানদী, সম্মিলিতভাবে বিশাল নদী ব্যবস্থার গোড়া পত্তনে ভ‚মিকা রাখছে।
সুন্দরবন, বরিশাল, খুলনা ও পটুয়াখালী অঞ্চলে প্রচুর নদীনালা সত্যিকার অর্থে মনোরম জালের ন্যায় ছড়িয়ে আছে। তবে
সার্বিকভাবে বাংলাদেশের সর্বত্র এ নদ-নদীগুলো সমভাবে বন্টিত নয়।
এই ইউনিটের পাঠগুলো হচেছপাঠ ২.১ঃ বাংলাদেশের নদ-নদী ব্যবস্থাঃ একটি প্রেক্ষিত
পাঠ ২.২ঃ গঙ্গা-পদ্মা নদী ব্যবস্থা
পাঠ ২.৩ঃ ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদী ব্যবস্থা
পাঠ ২.৪ঃ মেঘনা-সুরমা নদী ব্যবস্থা
পাঠ ২.৫ঃ বাংলাদেশে বন্যা
বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাঃ একটি প্রেক্ষিত
এই পাঠ পড়ে আপনি-
◆ ভিত্তি অনুযায়ী নদী ব্যবস্থার শ্রেণীবিভাগ ও সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিতে পারবেন।
ভিত্তি অনুযায়ী নদী ব্যবস্থার শ্রেণীবিভাগ ও সংক্ষিপ্ত বিবরণ
বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাকে মূলতঃ ৫টি মৌলিক ভিত্তির আলোকে ভাগ করা যায়, যা নি¤েœ প্রদত্ত হলোঃ
নদী ব্যবস্থা
উৎপত্তিগত স্থান নদী দৈর্ঘ্য খাত প্রণালী অববাহিকা পানিতাত্তি¡ক নিষ্কাশন প্রণালী
নি¤েœ ভিত্তি অনুসারে নদী ব্যবস্থার বর্ণনা করা হলোঃ
১. উৎপত্তি অনুসারেঃ পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, নদীর উৎপত্তির জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ও ঢাল
বিশিষ্ট উৎস ভ‚মি। সাধারণতঃ পাহাড়িয়া অঞ্চলে যেখানে বৃষ্টিপাত, বরফগলন, সরোবর, বা হ্রদ ইত্যাদির অবস্থানসমূহ
স্বাভাবিক ভাবেই নদ-নদীর উৎপত্তি স্থল হিসেবে পরিচিত। যেমন- গঙ্গা বা পদ্মা নদী হিমালয় পর্বতের বৃষ্টি, বরফগলা পানি
ও প্রস্রবন একত্রে মিলিত হয়ে উৎপত্তি লাভ করেছে। এ ছাড়া আরো অনেক নদ-নদীর সূতিকাগার হিসেবেও পরিচিত।
উৎপত্তি অনুসারে (ক) পার্বত্য নদী ও (খ) আঞ্চলিক এ দুভাগে বিভক্ত করা যায়। যেমনক) পার্বত্য নদ-নদীঃ
পার্বত্য অঞ্চল থেকে প্রবাহিত নদীকে পার্বত্য নদী হিসেবে অভিহিত করা হয়। বাংলাদেশের বেশিরভাগ পার্বত্য নদীগুলো
হিমবাহ, সরোবর বা বহুল পরিমাণে বৃষ্টির পানির স্থানসমূহ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। যেমন- গঙ্গা বা পদ্মা, তিস্তা (হিমবাহ
থেকে), ব্রহ্মপুত্র (মানস সরোবর থেকে) মেঘনা-বরাক (আসামের নাগমনিপুর পাহাড় থেকে) ইত্যাদি।
খ) আঞ্চলিক নদীঃ
দেশের অভ্যন্তরস্থ কোন বড় বিল বা জলাশয় থেকে উৎপত্তি লাভ করে স্বল্প দুরত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তাদেরকে
আঞ্চলিক নদী বলা হয়। এ নদীগুলো স্থানীয়ভাবে উৎপন্ন, আকারে অনেক ছোট এবং সারা বছর পানি নাও থাকতে পারে,
তবে বর্ষার সময় বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং মাঝে মাঝে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে প্রভাবিত করতে পারে। যেমন- বড়াল, তুরাগ,
ইছামতি, দেউলী, কুলীক ইত্যাদি।
গ) জাতীয় নদীঃ
দেশের অভ্যন্তরে উৎপত্তি লাভ করে প্রবাহধারা ঐ দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে, তাকে জাতীয় নদী বলে। এ নদীগুলো
আকারে ছোট হলেও সারা বছর পানি থাকে, যেমন- আত্রাই, কপোতাক্ষ ইতাাদি।
ঘ) আন্তর্জাতিক নদী
একাধিক দেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত জলধারা আন্তর্জাতিক নদী নামে অভিহিত। এ নদীগুলোর উৎপত্তিস্থলও প্রবাহপথ
সীমাবদ্ধ নয়, প্রবাহের পরিমাণ বেশ বেশি, সারা বছর প্রবাহ বজায় থাকে। যেমন- পদ্মা (গঙ্গা), ব্রহ্মপুত্র/যমুনা ইত্যাদি।
এদেরকে আবার সীমান্তবর্তী নদীও বলা হয়।
২. নদীখাতের ধরন অনুযায়ী শ্রেণীবিভাগঃ
নদীতে নিয়মিত পানি সরবরাহ, ঋতুভেদে পানি সরবরাহের হ্রাসবৃদ্ধি, ভ‚মিরূপ, মাটির গঠন ও বুনন এবং ভ‚মির ঢালের
তারতম্যের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশসহ বাংলাদেশে প্রধানতঃ তিন প্রকার নদী ব্যবস্থা গড়ে উঠে, যেমন- ক) সরল
নদীখাত, খ) সর্পিল নদীখাত এবং গ) বিনুনী নদীখাত।
বিএ/বিএসএস প্রোগ্রাম এসএসএইচএল
বাংলাদেশ ভ‚গোল ও সংখ্যাতাত্তি¡ক ভ‚গোল পৃষ্ঠা- ৩২
চিত্র ২.১.১
ক) সর্পিল নদীখাত
সমভ‚মি বিশেষ করে পলি গঠিত সমভ‚মি অঞ্চলে বাক বহুল নদী দৃষ্টিগোচর হয়। এ সব নদীর প্রবাহ পথ বেশ গভীর,
আঁকাবাঁকা প্রবাহপথ, পুনঃপুনঃ খাতের দিক পরিবর্তন, বাঁকে ভাঙ্গন ক্রিয়া বিপরীতে চর গঠন এবং প্রবাহ পথ এক খাতে
প্রবাহিত হয়। যেমন- পদ্মা।
খ) বিনুনী নদীখাত/চরোৎপাদী নদী
যে সকল নদী একাধিক শাখায় বিভক্ত হয়ে প্রবাহিত হয় তাদেরকে বিনুনী বা চরোৎপাদী নদী বলা হয়। বিনুনী সদৃশ বলে
একে বিনুনী এবং প্রবাহ পথে চর উৎপাদিত হয় বলে চরোৎপাদিত নদী বলা হয়। নদীতে শেষ পর্যায়ে অতিরিক্ত সঞ্চয়জাত
পললের কারণে চর পড়ে মূল স্রোত ধারাকে দ্বিধা বা বহুধা খাতে বিভক্ত করে প্রবাহিত হয়। এসব নদীর প্রশস্ততা বেশি,
গভীরতা কম, প্রবাহ পথে চর গঠন এবং পরিশেষে একাধিক খাতে প্রবাহিত হয়ে থাকে। যেমন- যমুনা নদী।
গ) সরল নদী
যে সব নদ-নদী প্রবাহ পথে কোন বাধা বা প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই মোটামুটি সোজাপথে প্রবাহিত হয় তাদেরকে সরল নদী
বলা হয়। কঠিন শিলায় গঠিত অঞ্চল ভ‚ অভ্যন্তরে ভৌত পানি প্রবাহ এবং নদীতীর বাঁধা দিয়ে নদী খাত সরল করা হয়।
যেমন- তিস্তা।
৩. অববাহিকা অনুসারে শ্রেণীবিভাগ
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের ভ‚ভাগের ৮০ ভাগের বেশি অংশ বিখ্যাত তিনটি নদী ব্যবস্থা ও তাদের
অসংখ্যক শাখা ও উপনদীর সম্মিলিত কার্যকলাপ তথা বাহিত পলল দ্বারা গঠিত হয়েছে সেহেতু এসব নদী ব্যবস্থা
প্রত্যেকেই স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে বলীয়ান হয়ে অববাহিকা গঠন করেছে। অববাহিকার ভিত্তিতে বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাকে ৪টি
ভাগে ভাগ করা হয়, যেমন- ক) গঙ্গা-পদ্মা নদী ব্যবস্থা, খ) ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদী ব্যবস্থা গ) মেঘনা-বরাক নদী ব্যবস্থা এবং
ঘ) দক্ষিণ পূর্বাংশের নদী ব্যবস্থা বা পাহাড়ী নদী ব্যবস্থা।
গঙ্গা-পদ্মা নদী ব্যবস্থা
গঙ্গা বা পদ্মানদী ও এর শাখা প্রশাখা গাঙ্গেয় বদ্বীপ নদীমালার অন্তর্গত। এ নদীমালার প্রধান নদী পদ্মা। পদ্মা এর উৎস
থেকে মোহনা পর্যন্ত কয়েকবার গতিপথ পরিবর্তন করেছে। গঙ্গার অসংখ্য শাখা নদী আছে। বাংলাদেশে গঙ্গার অধিকাংশ
শাখা নদীই দক্ষিণে বদ্বীপ ভ‚মির মধ্য দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। নি¤েœ পদ্মা ব্যতীত অন্যান্যগুলোর বিবরণ দেয়া হলোঃ
গঙ্গা বা পদ্মাঃ গঙ্গা হিমালয়ের গাঙ্গেত্রী নামক হিমবাহ হতে উৎপন্ন হয়ে ভারতের উপর দিয়ে গঙ্গা নামে প্রবাহিত হয়ে
বাংলাদেশের রাজশাহী জেলা দিয়ে গঙ্গা-পদ্মা নামে প্রবাহিত হচ্ছে। এর সর্বমোট দৈর্ঘ্য ২ হাজার ৬ শত কিলোমিটার।
বাংলাদেশ অংশে এর দৈর্ঘ্য ৩৮০ কিমি। রাজশাহী থেকে দক্ষিণ পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে গোয়ালন্দের কাছে পদ্মা নদী
যমুনার সাথে মিশে চাঁদপুর পর্যন্ত প্রবাহিত হচ্ছে। সেখানে মেঘনার সাথে মিলিত হয়েছে। সেকালে পদ্মা ছিল প্রমত্তানদী।
এখন শুষ্ক মৌসুমে এ নদী শুকিয়ে যায়। কারণ নদীর উজানে ফারাক্কা নামক স্থানে বাধ দিয়ে মূল নদীর পানি প্রবাহে বাধার
সৃষ্টি করা হয়েছে।
ভৈরবঃ নিস্ক্রিয় বদ্বীপ অঞ্চলের এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। ভৈরব নদী কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনা জেলার মধ্য দিয়ে
প্রবাহিত। এর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬০ কিমি। খুলনায় এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮ কিমি। ইছামতি ও কপোতাক্ষ ইহার দুটি প্রধান
শাখানদী। ভৈরব নদী কোথাও কোথাও তার নাব্যতা হারিয়েছে।
কপোতাক্ষঃ যশোর ও খুলনার প্রায় ২৫৭ কিমি দীর্ঘ কপোতাক্ষ নদী দক্ষিণে সুন্দরবনের ধার ঘেঁষে বয়ে চলেছে। যশোরে
এই নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৮ কিমি। এই নদী খুলনার দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমে ভৈরবের সাথে মিশেছে। ফারাক্কা বাঁধের
প্রতিক্রিয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সব নদীই স্রোতহীন জীর্ণশীর্ণ মৃতপ্রায়।
গড়াইঃ কুষ্টিয়া শহরের কাছ দিয়ে বয়ে চলা পদ্মার শাখা নদী গড়াই কুষ্টিয়ার দক্ষিণ পূর্ব দিক হয়ে রাজবাড়ি, ফরিদপুর এবং
নড়াইল জেলার সীমানা ঘেষে প্রবাহিত হচ্ছে দুই শাখায় বিভক্ত হয়ে এ নদী মধুখালী থানার কাছে আবার এক সাথে
মিলেছে। এরপর থেকে গড়াই নাম পরিবর্তন করে মধুমতি হয়েছে। মোল্লাহাট থানার কাছে এ নদীর সাথে কুমার, নবগঙ্গা,
ও চিত্রা নদী মিশেছে। সুন্দরবনের কাছে এ নদী হরিনঘাটা নামে পরিচিত।
আড়িয়াল খাঁঃ গোয়ালন্দের সাড়ে ১০ কিমি দক্ষিণে টেপাখোলা সীমানায় ফরিদপুর খাল পদ্মার ডানতীর থেকে নির্গত
হয়েছে এবং কুমার নদীর সাথে মিশেছে। এ নদী এঁকেবেঁকে ফরিদপুর জেলার উত্তরাংশে প্রবাহিত হয়ে মাদারীপুর জেলার
শিবচরের কাছে আড়িয়াল খাঁ নদীতে পড়েছে। উনিশ শতাব্দীর শেষের দিকে আড়িয়াল খাঁ পদ্মার প্রধান ধারা ছিল। কিন্তু
বর্তমানে এর শেষ প্রান্তে বালি ভরাট হয়ে চর পড়েছে। মাদারীপুরের কাছে আড়িয়াল খাঁ দুটো শাখায় বিভক্ত হয়েছে। বাম
দিকে নিজ নামেই এবং ডানদিকে টরকি নামে প্রবাহিত হচ্ছে।
পশুর রূপসাঃ পশুর নদী রূপসা নদীরই অব্যাহত অংশ। এখন গড়াই নদীর স্থলে এ নদী নাব্য। বটিয়াঘাটার কাছে রূপসা
নাম পরিবর্তন করে ‘কাজিবাচা’ নাম ধারণ করেছে। পরে অবশ্য চালনার কাছে তা পশুর নামে পরিচিত। মংলা বন্দরের
কাছে পশুর নদীতে মংলা নদী মিশেছে।
ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদী ব্যবস্থা
ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদী ও এদের শাখা প্রশাখা নিয়ে ব্রহ্মপুত্র যমুনা নদী ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। ইহা দেশের প্রধান নদী ব্যবস্থা।
ক) পুরাতন ব্রহ্মপুত্রঃ বাহাদুরাবাদ ঘাটের উত্তর মূল ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে এ নদী জামালপুর, ময়মনসিংহ, জেলার দক্ষিণ
পূর্বদিক দিয়ে ভৈরব বাজারের কাছে মেঘনার সাথে মিশেছে। শুকনো মৌসুমে এ নদীতে জলপ্রবাহ তেমন একটা হয় না
বললেই চলে। বর্ষা মৌসুমে সীমান্তের ওপার থেকে আসা অতিরিক্ত পানি উপচে পুরাতন ব্রহ্মপুত্রে প্রবেশ করে। তখনই এ
নদী পরিপূর্ণ থাকে।
খ) যমুনাঃ তিব্বতের মানস সরোবর থেকে উৎপত্তি লাভ করে গারো পাহাড় দিয়ে ধুবড়ীর কাছে ব্রহ্মপুত্র বাংলাদেশে প্রবেশ
করেছে। ব্রহ্মপুত্র নদীই দক্ষিণে কিছুদুর এগিয়ে পশ্চিমে তিস্তার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। তিস্তা ব্রহ্মপুত্রের মিলিত স্রোতধারা
যমুনা নামে দক্ষিণে প্রবাহিত হচ্ছে এবং গোয়ালন্দের কাছে এসে পদ্মার সাথে মিশেছে। এখন পুরাতন ব্রহ্মপুত্র যমুনার
একটি শাখা নদী।
গ) ধলেশ্বরীঃ টাঙ্গাইল জেলার উত্তরে যমুনা নদী থেকে ধলেশ্বরীর উৎপত্তি এবং সাভারের কাছে এর নাম ধলেশ্বরী হয়েছে।
এটি দুটি শাখায় বিভক্ত। প্রধান শাখা মানিকগঞ্জের উত্তর ও দক্ষিণ পূর্বে ৪৮ কিমি দীর্ঘপথ বয়ে চলেছে। দক্ষিণাংশ
কালিগঙ্গা নামে পরিচিত, লৌহজং এর কাছে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে উত্তরে বুড়িগঙ্গা এবং দক্ষিণে ধলেশ্বরী নামে প্রবাহিত
হয়েছে। বুড়িগঙ্গা ঢাকার দক্ষিণ দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ফতুল্লার কাছে ধলেশ্বরীতে মিশেছে। আবার ধলেশ্বরী
নারায়নগঞ্জের কাছে শীতলক্ষার সাথে মিলিত হয়েছে।
সুরমা-মেঘনা নদী ব্যবস্থা
চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের পূর্ব ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের সুরমা-মেঘনা নদী ব্যবস্থার অন্তর্গত। প্রধানত সুরমা
কুশিয়ারা ও মেঘনা এবং এদের শাখা প্রশাখা নিয়ে এই নদী ব্যবস্থা গঠিত।
ক) সুরমাঃ আসামের বরাক নদী কদরপুরের কয়েক কিমি পশ্চিমে দুই শাখায় বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশের সিলেট জেলায়
প্রবেশ করেছে। দক্ষিণের শাখা কুশিয়ারা নামে সিলেটের মধ্যদিয়ে দক্ষিণ পুর্বদিকে প্রবাহিত হয়েছে। উত্তরের শাখা সুরমা
প্রথমে পশ্চিমে এবং পরে দক্ষিণ পশ্চিমে সিলেট শহরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
খ) কুশিয়ারাঃ ভারতের মিজোরাম প্রদেশের পাহাড় থেকে উৎপন্ন ধলেশ্বরী নদী ও আসামের শিলাচরের পাশ দিয়ে বয়ে
যাওয়া আর একটি নদী পরস্পর আসামের বদরপুরে মিলিত হয়ে যৌথপ্রবাহ সিলেটের করিমগঞ্জের উপর দিয়ে কুশিয়ারা
নামে বাংলাদেশে প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদীর মূল প্রবাহ সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ বালাগঞ্জ হয়ে মৌলভীবাজারের মনু নদীর সাথে
মিশেছে এবং বরাক নদীর দক্ষিণে প্রবাহিত হচ্ছে। বরাক নদী হবিগঞ্জে খোয়াই নদীতে মিশেছে এবং দক্ষিণ পশ্চিমে
প্রবাহিত হয়ে মদনার কাছে কালনি নদীতে মিলিত হয়েছে। এ মিলিত স্রোত ভৈরববাজারের কাছে মেঘনা নদীতে পড়েছে।
গ) মেঘনাঃ মদনার কাছে কালনী এবং হবিগঞ্জে বরাক ও খোয়াই নদীর মিলিত স্রোত মেঘনা নদী নামে দক্ষিণ পশ্চিমে
প্রবাহিত হচ্ছে। ভৈরববাজারের কাছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী মেঘনা নদীতে মিশেছে। বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষার
মিলিত ধারা মুন্সিগঞ্জের কাছে মেঘনার সাথে মিলিত হয়েছে। মেঘনা নদী দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে পদ্মার সাথে এক হয়ে আরো
দক্ষিণে চাঁদপুরের কাছে প্রশস্ত মেঘনা নদীর রূপ নিয়েছে। মেঘনা নদীর মোট দৈর্ঘ্য ৪১৬ কিমি (প্রায়)।
ঘ) গোমতীঃ কুমিল্লার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গোমতী নদী দাউদকান্দির কাছে মেঘনা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এই
অঞ্চলের অন্যান্য নদী হচ্ছে ফেনী নদী ও ডাকাতিয়া নদী। ডাকাতিয়া নদী নোয়াখালীর দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হচ্ছে।
খরস্রোতা নদী ফেনী দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে মেঘনা মোহনার কাছে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
পাহাড়ী নদী ব্যবস্থা
বাংলাদেশের দক্ষিণ পুর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার জেলার নদী ব্যবস্থা সমূহকে পাহাড়ী নদী ব্যবস্থা বলে।
এই অঞ্চলের নদীগুলি অপ্রশস্ত, খরস্রোতা ও মোটামুটি সমান্তরাল। নি¤েœ এই অঞ্চলের নদী ব্যবস্থা আলোচিত হলোঃ
ক) কর্ণফুলীঃ পাহাড়ী নদী হিসেবে কর্ণফ‚লী নদী বিখ্যাত। লুসাই পাহাড়ের লংলেহ নামক স্থানে এ নদীর উৎপত্তি। উৎস
থেকে কর্ণফুলীর মোহনা পতেঙ্গা পর্যন্ত দৈর্ঘ্য প্রায় ২৭২ কিমি পাহাড়ের উপত্যকার মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে বলে এ নদী
খুবই খরস্রোতা। নদীর গতিবেগ উপত্যকার ঢালের সমানুপাতিক। এই নদী ভারত বাংলাদেশের প্রায় ৫ কিমি সীমা নির্দেশ
করে। এ নদী সীমান্ত থেকে প্রবেশ করে রাঙামাটির সমভ‚মিতে প্রবাহিত হয় এবং পরে কাপ্তাই হ্রদে মিশে। কাপ্তাই হ্রদের
দক্ষিণ পশ্চিম দিক থেকে বেরিয়ে পতেঙ্গার কাছে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
খ) সাংগুঃ বান্দরবনের দক্ষিণে মউডাক পর্বতমালায় এ নদীর উৎপত্তি এ নদী এঁকেবেঁকে উত্তর পশ্চিম দিকে প্রবাহিত
হচ্ছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৪৪ কিমি। কর্ণফুলী নদীর মোহনা থেকে কয়েক কিমি দক্ষিণে সাংগু নদী বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
এ নদীর উচু পাহাড়ী অংশে ছোট ছোট জলপ্রপাত ও নদীপ্রপাত দেখা যায়।
গ) হালদা ঃ হালদা নদী পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার বাদনা তলী পর্বতশৃঙ্গে উৎপন্ন হয়েছে এবং ফকিটছড়ি থানার উত্তর পূর্ব
কোন দিয়ে চট্টগ্রাম জেলায় প্রবেশ করেছে। এ নদী উত্তর দক্ষিণে বিভক্ত হয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বিবিরহাট, নাজিরহাট,
সাতারহাট, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান ও চট্টগ্রামের পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে। এ নদী চট্টগ্রামের কালুর ঘাটের কাছে
কর্ণফুলী নদীতে পড়েছে।
ঘ) মাতামুহুরীঃ পার্বত্য বান্দরবন জেলার মইনভার পর্বতে এই নদীর উৎপত্তি। উৎপত্তি স্থল থেকে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিম
দিকে এসে মহেশখালী ঘাটের সাথে মিশেছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১২০ কিমি।
ঙ) নাফঃ বাংলাদেশের একেবারে দক্ষিণ সীমা বরাবর যে নদী মায়ানমার ও কক্সবাজারের টেকনাফ সীমা নির্দেশ করছে
সেটি হচ্ছে খরস্রোতা নাফ নদী। পাহাড়ী কয়েকটি স্রোতস্বিনী নাফ নদী সৃষ্টির হয়েছে। এ নদী বঙ্গোপসাগেরে পতিত
হয়েছে। নাফ নদীর দৈর্ঘ্য মাত্র ৫৬ কিমি।
৪) পানিতাত্তি¡ক ও নিষ্কাশন প্রণালী অনুযায়ী শ্রেণীবিভাগ
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড মূলত উপরোক্ত পানিতাত্তি¡ক ও নিষ্কাশন প্রণালীর বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ৪টি ভাগে বিভক্ত
করেন, যেমন- ক) উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদীমালা, খ) উত্তর পূর্বাঞ্চলের নদীমালা, গ) দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদীমালা ও ঘ)
দক্ষিণ পূর্বাংশের নদীমালা।
৪.১) উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের নদীমালা
রাজশাহী বিভাগের সমস্ত জেলাই এ অঞ্চলের অন্তর্গত। পশ্চিম ও উত্তর ভারতীয় সীমান্ত এলাকা, পূর্বদিকে যমুনা নদী এবং
দক্ষিণে পদ্মা নদী দ্বারা ইহা পরিবেষ্টিত। ভ‚-প্রকৃতিগতভাবে এটি হিমালয়ের পাদদেশীয় ভ‚মি প্লায়োস্টোসিন যুগের চত্বর
সমূহের অবস্থান ও বেশ কিছু নি¤œ জলাভ‚মির অবস্থান রয়েছে। আর ভ‚মির ঢাল তুলনামূলকভাবে খাড়া প্রকৃতির, নদীগুলো
দীর্ঘ প্রকৃতির, গভীরতা বেশি। অববাহিকায় অধিক বৃষ্টি হয় এবং পানি প্রবাহিত হয়। উদাহরণস্বরূপ মহানন্দা, চপা,
পূণর্ভবা, টাঙন, কুলিক, তালমা, করতোয়া, আত্রাই, গুর, গুমানী, দিওনাই, চাতালকাটা, যমুনেশ্বরী, বাঙালী, নাগর, তিস্তা,
মানস, দুধকুমার, ঘাঘট, হুরাসাগর, ধরলা ইত্যাদি।
ক) তিস্তা নদীঃ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে তিস্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। ১৭৮৭ সালে এক ভ‚-আলোড়নের বা ভ‚মিকম্পের
ফলে এর গতি পরিবর্তন হয়ে যায়। বর্তমানে প্রবাহিত জীর্ন করতোয়া, আত্রাই, যমুনেশ্বরী, নদীর উৎস হচ্ছে এই তিস্তা
নদী। তিস্তা নদী প্রায় ১৭৬ কিমি দীর্ঘ। চিলমারীর দক্ষিণে তিস্তা ব্রহ্মপুত্রে গিয়ে মিশেছে।
খ) ঘাঘটঃ তিস্তার শাখা নদী হচ্ছে ঘাঘট। এই নদী গাইবান্ধা জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ফুলছড়ি ঘাটের কাছে
ব্রহ্মপুত্রের সাথে মিশেছে।
গ) করতোয়াঃ করতোয়ার উত্তরাংশকে দিনাজপুরের করতোয়া বলে। খানসামার কাছে বুড়িতিস্তার সাথে মিশে এটি আত্রাই
নাম ধারণ করেছে। আবার দক্ষিণে গাইবান্দার কাছে করতোয়া নামে প্রবাহিত হচ্ছে। ইহাকে অবশ্য ব্রহ্মপুত্রের উপশাখা
নদী হিসেবে গণ্য করা হয়।
ঘ) আত্রাইঃ তিস্তার শাখা নদী আত্রাই। খানসামার উত্তরে করতোয়া নামে প্রবাহিত হচ্ছে। এ নদী ছোট যমুনার সাথে মিশে
এবং দক্ষিণ পূর্বে প্রবাহিত হয়ে পাবনার বেড়া থানার কাছে মূল যমুনা নদীতে পড়ে।
ঙ) ধরলা ও দুধকুমারঃ তিস্তার সমান্তরালে একেবারে উত্তরের এই নদী দুটি ব্রহ্মপুত্রের উপনদী। দুধকুমার খরস্রোতা নদী।
ধরলা বর্ষার সময় খুবই খরস্রোতা হয়। কিন্তু শুকনো মৌসুমে এই নদী দুটি শান্ত থাকে।
চ) পূনর্ভবাঃ এটি তিস্তার শাখা নদী। রাজশাহী চাপাইনবাগঞ্জ জেলার উত্তরে এ নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। দিনাজপুর
শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিম ও পশ্চিম কেন্দ্রীয় বরেন্দ্র অঞ্চলের মধ্যদিয়ে সরাসরি দক্ষিণে এগিয়ে রাজশাহীর
মোহনপুরে মহানন্দার সাথে মিশেছে।
ছ) বাংগালীঃ তিস্তার শাখা ঘাঘট নদী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাঙালী নদী ব্রহ্মপুত্র নদীতে পড়েছে। যমুনা নদীর সাথে এর
সংযোগ রয়েছে।
৪.২) উত্তর পূর্বাঞ্চলের নদী ব্যবস্থা
ফরিদপুর জেলা ছাড়া ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলা, সিলেট ও গোমতী নদীর উত্তরে কুমিল্লার কিয়দংশ এ অঞ্চলের
অন্তভর্‚ক্ত। প্রায় সমস্ত পলল ভ‚মি সমেত উত্তর পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব সীমানায় কিছু পাহাড়, সিলেট ও ময়মনসিংহের হাওড়,
নি¤œভ‚মি এবং ময়মনসিংহ টাঙ্গাইল ও ঢাকা জেলার মধুপুর ও ভাওয়ালের উচ্চভ‚মি এই অঞ্চলের মধ্যে বিদ্যমান। বড়
আঙ্গিকে এ অঞ্চলে দুটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। যেমনক) শাখা নদী যেগুলো পাহাড় থেকে নেমে এসে মেঘনা নদী ব্যবস্থার সঙ্গে মিলিত হচ্ছে যেমন খোজাই, সুতাং, তিতাস
এবং হালদা ইতাাদি।
খ) ব্রহ্মপুত্র যমুনার উপনদী বিভিন্ন নামে মেঘনাতে পতিত হচ্ছে যেমন বংশী, বানার, ধলেশ্বরী, সারি, যদুকা এবং
সোমেশ্বরী ইত্যাদি। তাছাড়া সুরমা, কুশিয়ারা, গোমতী, মনু, সালদা, পিয়ান, ছোট ফেনী এবং ডাকাতিয়া ইত্যাদি রয়েছে।
৪.৩) দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের নদী ব্যবস্থাঃ
বৃহত্তর খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়াসহ ফরিদপুর, বরিশাল, এ অঞ্চলের অন্তর্গত। এর উত্তরে পদ্মা নদী, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর,
পশ্চিমে ভারতীয় সীমান্ত এবং পূর্বে মেঘনা নদী অবস্থিত। ভ‚প্রাকৃতিক দিক থেকে সমগ্র অঞ্চলটি মৃতপ্রায় বদ্বীপ ভ‚মির
অন্তর্গত এবং ভ‚মির ঢাল সাধারণত উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রতি কিলোমিটারে ৮ সেন্টিমিটার। পূর্ব ও দক্ষিণে পূর্বাংশ বন্যা,
সাইক্লোন, লবণাক্ততা ছাড়াও জোয়ার ভাটা সহ অসংখ্যক নদীখাত এ অঞ্চলে বিদ্যমান। উল্লেখযোগ্য নদীগুলোর মধ্যে
গড়াই মধুমতি, আড়িয়ালখা, কপোতাক্ষ, বিশখালী, রূপসা, পশুর, শিবসা, মাথাভাঙ্গা, বেতনাএ চন্দনা, চিত্রা ভদ্রা ধলেম্বর,
গোমনিত এবং নবগঙ্গা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
৪.৪) দক্ষিণ পুর্বাংশের নদী ব্যবস্থাঃ
এ অঞ্চলের পূর্বে ভারত ও মায়ানমার, উত্তরে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার অংশ পশ্চিমে মেঘনা নদী এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে
বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। এখানকার নদীগুলো অধিকাংশ পাহাড় থেকে আসে বলে একে পাহাড়ীয়া নদী ব্যবস্থা বলা হয়ে
থাকে। ক্ষয়গঠন ও সঞ্চয় প্রক্রিয়া নিত্য কর্মকান্ড, স্বাভাবিক বন্যা ও পাহাড়ী বন্যার আওতাধীন। নদীগুলো খরস্রোতা এবং
জোয়ারভাটা ইত্যাদি এ অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য। উল্লেখযোগ্য, নদীগুলো হচ্ছে ফেনী, মাতামহুরী, সাংগু, কাসালং, কাপ্তাই, নাফ
এবং জাফলং ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
৫) দৈর্ঘ্যভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ
মোটামুটিভাবে এ বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ৮ টি ভাগে ভাগ করা হয়, যেমনঃ
ক) অতি দীর্ঘনদীঃ যে সকল নদী ২৫০০ কিমি বা তার চেয়ে বেশি দীর্ঘ এ প্রকৃতির নদী বাংলাদেশে নেই।
খ) দীর্ঘ নদীঃ যে সকল নদী ২৫০০-১৫০০ কিমি এর মধ্যে তারাই এর প্রকৃতির এবং বাংলাদেশে এ ধরনের কোন নদী
নেই।
গ) মধ্যম দীর্ঘ নদীঃ ১৫০০-১০০০ কিমি দীর্ঘ বিশিষ্ট নদীই দীর্ঘ প্রকৃতির নদী। বাংলাদেশে এ ধরনের কোন নদী নেই।
ঘ) মধ্যম নদীঃ ৫০০-১০০০ কিমি দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট নদীকে বুঝানো হয়েছে। যেমন- ভৈরব (৫৫৯) করতোয়া, আত্রাই,
হুরাসাগর, গোমানী (৮৪১) ইত্যাদি।
ঙ) নি¤œ মধ্যম নদীঃ ২৫০-৫০০ কিমি দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট নদীকে বুঝায়। যেমন- ইছামতি, কুমার, তিস্তা সাংগু ইত্যাদি।
চ) নি¤œ দৈর্ঘ্যরে নদীঃ ১০০-২৫০ কিমি বিশিষ্ট নদীকে বুঝানো হয়েছে। যেমন- কর্ণফুলী, মাথাভাঙা, নবডাঙা, নাগর
ইত্যাদি।
ছ) অতি নি¤œ দৈর্ঘ্যরে নদীঃ ৫০-১০০ কিমি দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট নদীকে বুঝায়। যেমন- মহানন্দা, ধরলা ইত্যাদি।
জ) ক্ষুদ্রাকৃতিক নদীঃ ৫০-১০০ কিমি দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট নদী যেমন- বড়াল, বুড়িগঙ্গা।
উপরোক্ত শ্রেণীবিভাজনের ভিওি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক উল্লিখিত ৪টি নদী ব্যবস্থা নি¤েœ সংক্ষিপ্তাকারে আলোচিত
হলো।
পাঠসংক্ষেপঃ
এই পাঠ পড়ে আপনি ভিত্তি অনুযায়ী নদী ব্যবস্থার শ্রেণীবিভাগ ও সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিতে পারবেন।
১. শূন্যস্থান পূরণ করুনঃ
১.১. নদীর উৎপত্তির জন্য প্রয়োজন .... পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ও ... উৎস ....।
১.২. বাংলাদেশের বেশির ভাগ .... নদীগুলো হিমবাহ, .... বা বহুল পরিমাণে .... .... পানির স্থানসমূহ থেকে
.... হয়েছে।
১.৩. একাধিক দেশের মধ্যে দিয়ে ....আন্তর্জাতিক .... নামে অভিহিত।
১.৪. কঠিন শিলায় গঠিত .... ভৌত পানি প্রবাহ এবং .... বাঁধা দিয়ে নদী .... সরল করা হয়।
১.৫. নদীর .... উপত্যকার .... সমানুপাতিক।
১.৬. বাংলাদেশের একেবারে... সীমা বরাবর যে নদী .... ও কক্সবাজারের.... সীমা নির্দেশ করছে সেটি হচ্ছে
খরস্রোতা .... নদী।
১.৭. এখানকার নদীগুলো .... পাহাড় থেকে আসে বলে ইহাকে .... বলা হয়ে থাকে।
২. সঠিক উত্তরের পার্শে¦ ‘স’ এবং মিথ্যা উত্তরের পার্শ্বে ‘মি’ লিখুনঃ
২.১. একাধিক দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত জলধারা আন্তর্জাতিক নদী নামে অভিহিত।
২.২. সমভ‚মি বিশেষ করে পলি গঠিত সমভ‚মি অঞ্চলে বাক বহুল নদী দৃষ্টিগোচর হয়।
২.৩. পাহাড়ী নদী হিসেবে কর্ণফুলী নদী বিখ্যাত।
২.৪. বান্দরবনের দক্ষিণে মউডাক পর্বতমালায় সাংগু নদীর উৎপত্তি।
২.৫. হালদা নদী পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার বাদনা তলী পর্বতশৃঙ্গে উৎপন্ন হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত বিবরণ লিখুনঃ
১. উৎপত্তি অনুসারে বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থার শ্রেণীবিভাগের বিবরণ দিন।
২. নদী খাতের ধরন অনুযায়ী বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থার শ্রেণীবিভাগ আলোচনা করুন।
৩. অববাহিকা ভিত্তিক বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থার শ্রেণীবিভাগ আলোচনা করুন।
৪. পানিতাত্তি¡ক ও নদী নিষ্কাশন প্রণালীভিত্তিক বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থার শ্রেণীবিভাগ আলোচনা করুন।
৫. দৈর্ঘ্যভিত্তিক বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থার শ্রেণীবিভাগ আলোচনা করুন।
৬. উত্তর পশ্চিমাঞ্চল/উত্তরাঞ্চল/পাহাড়ী/দক্ষিণ পশ্চিামঞ্চল/দক্ষিণ পূর্বাংশের নদী বাবস্থার শ্রেণীবিভাগ
আলোচনা করুন।
রচনামূলক প্রশ্নঃ
১. ভিত্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থার শ্রেণীবিভাজন ও তাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিন।
২. ‘বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাঃ একটি প্রেক্ষিত’, আলোচনা করুন।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ