বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শস্য সমূহ কি কি? জাতীয় উন্নয়নে অর্থকরী ফসলসমূহের অবদান


বাংলাদেশে নানা ধরণের ফসল উৎপাদিত হয়। এসব ফসলকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- ক) খাদ্য শস্য
খ) অর্থকরী শস্য। খাদ্যশস্যের মধ্যে ধান, গম, বার্লি, ডাল, তেলবীজ প্রভৃতি অন্যতম এবং অর্থকরী ফসলের
মধ্যে পাট, চা, তামাক, তুলা, ইক্ষু প্রভৃতি প্রধান। ১৯৯৬-৯৭ সালে জি.ডি.পি-তে খাদ্যশস্যের ২৪% অবদান
ছিল এবং জি.ডি. পি-তে ৭৩% অবদান ছিল অর্থকরী শস্যের। নিম্নে এদের সম্বন্ধে ধারনা দেয়া হলোঃ
১. খাদ্যশস্য (ঋড়ড়ফ ঈৎড়ঢ়ং)
ক) ধানঃ বাংলাদেশের খাদ্য শস্যের মধ্যে ধানই প্রধান। অতি প্রাচীনকাল হতে বাংলাদেশে ধানের চাষ হচ্ছে।
বাংলাদেশে কৃষিজ ফসল ও খাদ্যশস্য হিসেবে ধানের ব্যবহার ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব খুবই বেশী। দেশের ৯৯%
লোকের প্রধান খাদ্য ভাত হওয়ায় মোট আবাদী জমির শতকরা প্রায় ৭০% জমিতে ধানের চাষ হয় এবং ধান
উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ। ১৯৭০-৭২ থেকে ১৯৯৬-৯৭ সাল পর্যন্ত ধান উৎপাদনের পরিমাণ প্রায়
দ্বিগুন পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে যার উল্লেখযোগ্য হিসেবে রয়েছে উচ্চ ফলনশীল প্রজাতির (উফশী) প্রয়োগ।
ধানের শ্রেণী বিভাগ
বাংলাদেশে প্রায় ৫০০ ধরনের ধান দেখা যায়। এদেশে অতি প্রাচীনকাল থেকে ধানের চাষ হয়। চাষের সময়
অনুযায়ী ধানকে প্রধানত তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। যেমন- আউশ, আমন এবং বোরো ধান। বর্তমানে
বাংলাদেশে ইরি নামে এক প্রকার উচ্চ ফলনশীল ধানের চাষ হয়ে থাকে।
নিম্নে এদের বিবরণ দেয়া হলঃ
ক্স আউশ ধানঃ সাধারণত উচ্চ ভূমিতে আউশ ধানের চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু অপেক্ষাকৃত নীচু চরাঞ্চলের
নতুন উর্বর জমিতেও ব্যাপকভাবে এ ধানের চাষ হয়। এসব অঞ্চলে ফেব্রæয়ারী মাসে ধান চাষ করে মে ও
জুন মাসে ধান কাটা হয়। ২০০১-২০০২ সালে এ জাতীয় ধানের একর প্রতি ফলন প্রায় ০.৫৯ টন।
ক্স আমন ধানঃ দেশের উৎপাদিত ধানের মধ্যে আমন ধানের উৎপাদন সবচেয়ে বেশী। বাংলাদেশের নিম্ন
জমিতে আমন ধানের চাষ হয় সবচেয়ে বেশী। আমন ধান দু’ধরনের যথা- ১. রোপা আমন ২. বপন
আমন। বপন আমনের ধানের বীজ এপ্রিল- মে মাসে বপন করা হয় এবং নভেম্বর - ডিসেম্বর মাসে কাটা
হয় । কিন্তু রোপন করা ধানের চাষই আমাদের দেশে অধিক। ২০০১-২০০২ সালে আমন ধানের একর
প্রতি ফলন প্রায় ০.৭৭ টন।
ক্স বোরো ধানঃ এ শ্রেণীর ধান খাল, বিল ও নদীর তীরবর্তী নিচু উর্বর পলিযুক্ত মৃত্তিকায় উৎপন্ন হয়। নভেম্বর
থেকে জানুয়ারী মাসের মধ্যে চারা রোপন করা হয় এবং মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে কাটা হয়।
ময়মনসিংহ অঞ্চলের পূর্বদিকের বিলসমূহ, সিলেট অঞ্চলে হাওড়, ধলেশ্বরী, মেঘনা, এবং পদ্মা নদীর চর
অঞ্চল, গোপালগঞ্জের বিল, রাজশাহীর চলনবিল প্রভৃতি স্থান বোরা চাষের জন্য বিখ্যাত। ২০০১-২০০২
সালে এ ধানের একর প্রতি ফলন প্রায় ১.২৬ টন।
ক্স ইরি ধানঃ ইরি ধানের একর প্রতি ফলন প্রায় ৫০ হতে ১০০ মন। চারা রোপন করার মাত্র তিনমাসের
মধ্যে ধান কাটা হয়। ইরির ফলন অধিক বলে এর চাষ প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের ঢাকা,
ফরিদপুর, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, নোয়াখালী, প্রভৃতি অঞ্চলে ইরি ধানের চাষ দ্রæত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
খাদ্যশস্য উৎপাদন
খাদ্যশস্য উৎপাদন ব্যবস্থায় বিগত কয়েক বছর ধরে একটি উর্দ্ধমুখি ধারা বিদ্যমান রয়েছে। পরপর কয়েকবছর
ধরে ফসলের বাম্পার উৎপাদন হওয়ায় বাংলাদেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করে।
২০০১-২০০২ অর্থবছরের হিসেব অনুযায়ী, খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছিল ২৬০.৫৮ লক্ষ মেট্টিকটন। এর মধ্যে
আউশ ১৮.১ লক্ষ মেট্রিকটন, আমন ১০৭.৩ লক্ষ মেট্রিকটন, বোরো ১১৭.৭ লক্ষ মেট্রিকটন ও গম ১৫.১ লক্ষ
মেট্রিকটন।
সারণীঃ ৩.২.১ : খাদ্যশস্য উৎপাদন ( ১৯৯২-৯৩ থেকে ২০০২-২০০৩ পর্যন্ত) লক্ষ মেট্রিক টন
খাদ্য
শস্য
৯২/৯৩ ৯৩/৯

৯৪/৯৫ ৯৫/৯

৯৬/৯

৯৭/৯

৯৯/০০ ০০/০১ ০১/০২ ০২/০৩
আউশ ২০.৭ ১৮.৫ ১৭.৯ ১৬.৮ ১৮.৭

১৮.৭

১৭.৩৪ ১৯.১৬ ১৮.০৮ ১৮.৫১
আমন ৯৬.৮ ৯৪.২ ৮৫.০ ৮৭.৯ ৯৫.৫

৮৮.৫

১০৩.

১১২.৫ ১০৭.২৬ ১১১.১৫
বোরো ৬৫.৯ ৬৭.৭ ৬৫.৪ ৭২.২ ৭৪.৬

৮১.৩

১১০.২

১১৯.২১ ১২৭.৬৬ ১২৪.২৮
মোট
ধন
১৮৩.৪ ১৮০.

১৬৮.৩ ১৭৬.

১৮৮
৮৩
১৮৮
৬২
২৩০.৬

২৫০.৮

২৪৩.০০ ২৫৩.৯৪
গম ১১.৮ ১১.৩ ১২.৫ ১৩.৭ ১৪.৫

১৮.

১৮.৭০ ১৬.৭০ ১৬.০৬ ১৫.০০
ভ‚ট্টা --- --- --- --- --- --- --- --- --- ---
মোট ১৯৫.২ ১৯১.

১৮০.৮ ১৯০.

২০৩
৩৭
২০৬
৬৪
২৪৯.

২৬৯.

২৬০.৫৮ ২৭০.৯৪
উৎসঃ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ২০০৩।
ধান উৎপাদন ও উৎপাদনকারী অঞ্চলঃ
বাংলাদেশের আবাদী জমির প্রায় ৭০% ভাগ জমিতে ধানের চাষ হয়ে থাকে। এদেশের মাটি ও জলবায়ু ধান
চাষের বিশেষ উপকারী হওয়ায় এর প্রায় সর্বত্রই ধানের চাষ হয়। ১৯৯৩-৯৪ সালে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ ৪০
হাজার টন ধান উৎপাদন হয় এবং ২০০০-২০০১ সালে এই উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ২ কোটি ৫০ লাখ ৮৭ হাজার
টনে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের সকল জেলায় ধান উৎপাদিত হলেও সবচেয়ে বেশী ধান উৎপন্ন হয় বৃহত্তর রংপুর,
কুমিল্লা, সিলেট, যশোর, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, বগুড়া, দিনাজপুর, ঢাকা ও নোয়াখালী
অঞ্চলে। তন্মেধ্যে আউশ ধানের উৎপাদনে বৃহত্তর যশোর প্রথম, সিলেট দ্বিতীয় এবং কুমিল্লা তৃতীয়। আমন ধান
উৎপাদনে বৃহত্তর রংপুর প্রথম, দিনাজপুর দ্বিতীয়, এবং রাজশাহী তৃতীয়। আবার বোরো ধান উৎপাদনে বৃহত্তর
কুমিল্লা প্রথম, কিশোরগঞ্জ দ্বিতীয় এবং ঢাকা তৃতীয়। এছাড়া উৎকৃষ্ট শ্রেণীর ধান হিসেবে বরিশাল ও পটুয়াখালী
অঞ্চলের বালাম, দিনাজপুর অঞ্চলের কাটারীভোগ, ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিরই ধান এবং নোয়াখালী ও কুমিল্লা
অঞ্চলের কালিজিরা ইত্যাদি ধান খুবই প্রসিদ্ধ।
গমঃ
বাংলাদেশে খাদ্যশস্যের মধ্যে ধানের পরেই গমের স্থান। গম নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলের ফসল। এ গম
উৎপাদনের জন্য মাঝারি ধরণের তাপ ও সামান্য বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়। এ কারণে বাংলাদেশে শীতকালে
গমের চাষ করা হয়। এটি এখন বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
গমের উৎপাদন ও উৎপাদনকারী অঞ্চলঃ
বর্তমানে খাদ্যশস্যের অভাবহেতু বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই গমের চাষ হয়। তবে উত্তরাঞ্চলের
জেলাগুলোতে গম চাষ বেশি প্রসার লাভ করেছে। ১৯৯৩-৯৪ সালে বাংলাদেশে ১১ লাখ ৩০ হাজার টন গম
উৎপন্ন হয়। এই উৎপাদন ২০০০-২০০১ সালে ১৬ লাখ ৭০ হাজার টনে এসে দাঁড়ায়। বর্তমানে দিনাজপুর,
পাবনা, রংপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা, যশোর, ফরিদপুর ,ঢাকা, বগুড়া প্রভৃতি অঞ্চলে অধিকাংশ গম উৎপন্ন
হয়। তবে এদের মধ্যে দিনাজপুর অঞ্চল প্রথম, পাবনা দ্বিতীয়, রংপুর তৃতীয় এবং রাজশাহী চতুর্থ। বর্তমানে
রাজশাহী বিভাগে অধিক গম উৎপন্ন হয়। এরপরে ঢাকা বিভাগের স্থান। রাজশাহী বিভাগে দেশের প্রায় ৫২%
ভাগ, ঢাকা বিভাগে প্রায় ২৪% ভাগ এবং খুলনা বিভাগে ১৫% ভাগ গম উৎপন্ন হয়। তবে চট্টগ্রাম ও বরিশাল
বিভাগে গমের চাষ অতি নগন্য।
অন্যান্য খাদ্যশস্যঃ
১. বার্লি বা যব (ইধৎষবু)ঃ
বার্লি গম জাতীয় খাদ্য। এ থেকে আটা প্রস্তুত হয়। দেশে উৎপাদিত বার্লির পরিমান অতি নগন্য। স্বল্প
বৃষ্টিপাত এবং সামান্য উর্বর জমিতে যবের চাষ হয়।
২. ভূট্টা (গধরুব) ঃ
ভূট্টা মানুষ ও পশুর খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। ভূট্টা চাষের জন্য ১০০ সে:মি থেকে ১৫০ সে:মি
বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন এবং ১০০ সে: থেকে ২২০ সে: উত্তাপ প্রয়োজন। এ জন্য বাংলাদেশে ভূট্টার চাষ
খুবই কম। এ দেশের রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে কিছু ভূট্টা জন্মে।
৩. ডাল (চঁষংবং) ঃ
বাংলাদেশে ডাল জাতীয় শস্যের মধ্যে মসুর, ছোলা, মটর, মুগ, মাষ কলাই, খেসারি প্রভৃতির নাম
উল্লেখযোগ্য। এগুলো রবিশস্যের অন্তর্গত এবং দোঁ-আশ মাটিতে ভাল জন্মে। বাংলাদেশে প্রায় ১৭ লাখ
১০ হাজার একর জমিতে বিভিন্ন ধরণের ডালের চাষ হয়। বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৬ লাখ ৩০ হাজার
টন। বালি মিশ্রিত দো-আঁশ মৃত্তিকায় ডালের চাষ ভাল হয় বলে বাংলাদেশের চর অঞ্চলগুলো ডাল চাষের
জন্য বিখ্যাত।
৪. তৈলবীজ (ঙরষ ঝববফং)ঃ
বাংলাদেশে উৎপন্ন তেল বীজের মধ্যে তিল, সরিষা, বাদাম, তিসি, রেঢ়ি প্রভৃতি প্রধান। এদের মধ্যে
সরিষা, তিল, চিনাবাদাম প্রভৃতি সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য। বালিযুক্ত দো-আঁশ মৃত্তিকায় তিলও তিসির চাষ
ভাল হয়। ঢাকা, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, দিনাজপুর অঞ্চলে প্রচুর তৈলবীজ জন্মে। ১৯৯৩-৯৪
সালে প্রায় ১৩ লাখ ১০ হাজার একর জমিতে প্রায় ৬ লাখ টন তৈলবীজ উৎপন্ন হয়। তেল উৎপাদনে
বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ন নয়। বাংলাদেশে বার্ষিক প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার টন ভোজ্য তেলের প্রয়োজন।
এর মধ্যে সরিষা ও অন্যান্য তেলবীজ থেকে ৬০ হাজার টনের মতো ভোজ্য তেল পাওয়া যায়। বর্তমানে
আমিষ ও ভোজ্য তেলের ঘাট্তি পূরণের জন্য রবি মৌসুমে অপেক্ষাকৃত নিম্নঅঞ্চলে সয়াবিনের চাষ করা
হয়।
৫. মসলা (ঝঢ়রপবং) ঃ
বাংলাদেশে উৎপাদিত মসলার মধ্যে মরিচ, হলুদ, পিঁয়াজ, রসুন, ধনে, জিরা, তেজপাতা ও আদা প্রভৃতি
প্রধান। আমাদের দেশের মাটি ও জলবায়ু নানা জাতীয় মসলা চাষের পক্ষে অনুকূল। ফলে দেশেই
অনেক মসলা জাতীয় দ্রব্য উৎপন্ন হয়। তবে এলাচি, দারুচিনি, লবঙ্গঁ প্রভৃতি বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা
হয়।
অর্থকরী শস্য/ ফসলঃ
যেসকল ফসল সরাসরি বিক্রির উদ্দেশ্য চাষ করা হয় তাদের অর্থকরী ফসল বলা হয়। বাংলাদেশের অর্থকরী
ফসল গুলোর মধ্যে পাট, চা, ইক্ষু, তামাক, নানা রকমের তেলবীজ, মরিচ, পিয়াঁজ, রসুন, ধনিয়া, তুলা, রাবার
প্রভৃতি প্রধান। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হবার কারণে বিভিন্ন ধরনের ফসলের মধ্যে অর্থকরী ফসলের গুরুত্বই
সবচেয়ে বেশী। বাংলাদেশের অধিকাংশ শিল্পের কাঁচামাল অর্থকরী ফসলের অন্তর্ভুক্ত। যেমন- পাট, চিনি, রেশম
প্রভৃতি শিল্পের কাঁচামাল আমাদের অর্থকরী ফসল থেকে আসে। পাট, চা প্রভৃতি অর্থকরী ফসলই বাংলাদেশের
প্রধান রপ্তানী দ্রব্য। এসব ফসল রপ্তানি করে বাংলাদেশ বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ও যন্ত্রপাতি
আমাদানি করে থাকে।
পাট (ঔঁঃব)ঃ
পাট বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী বা বাণিজ্যিক ফসল। যা বাংলাদেশের স্বর্ণতন্তু হিসেবে সুপরিচিত। পাট ও
পাটজাত দ্রব্য রপ্তানীর মাধ্যমে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে। বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম পাট
উৎপাদনকারী দেশ। বর্তমানে এদেশে পৃথিবীর মাত্র ২৬% পাট উৎপন্ন হয়। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই কিছু না
কিছু পাট জন্মে। তন্মধ্যে রংপুর, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, কুমিল্লা, যশোর, ঢাকা, কুষ্টিয়া, জামালপুর ,টাঙ্গাইল,
পাবনা, রাজশাহী প্রভৃতি অঞ্চলে বেশী পাট উৎপন্ন হয়। বর্তমানে পাট উৎপাদনে সাবেক রংপুর অঞ্চল প্রথম,
ফরিদপুর অঞ্চল দ্বিতীয়, যশোর অঞ্চল তৃতীয় এবং কুষ্টিয়া অঞ্চল চতুর্থ। তবে পাবত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম ও
পটুয়াখালী অঞ্চলে পাটের চাষ নেই বললেই চলে।
চা (ঞবধ)ঃ
বাংলাদেশের অর্থকরী ফসলের মধ্যে চা অন্যতম। বর্তমানে এটি দেশের ২য় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী
ফসল। দেশে উৎপাদিত চা এর প্রায় ৭০ ভাগ বিদেশে রপ্তানি হয়। চা উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে একাদশ
স্থানের অধিকারী। সাবেক সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা জেলায় চা এর চাষ হচ্ছে। তবে, সিলেট,
মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ জেলার পাহাড়িয়া অঞ্চলে দেশের প্রায় ৯০% ভাগ চা উৎপন্ন হয়। চা
বাংলাদেশের ২য় প্রধান রপ্তানি যোগ্য ফসল। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম চা রপ্তানীকারক দেশ।
যুক্তরাজ্য, পাকিস্তান, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের চা এর প্রধান ক্রেতা। এছাড়া
জাপান, পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানী, পোল্যন্ড, বুলগেরিয়া হাঙ্গেরী প্রভৃতি দেশও বাংলাদেশ হতে চা আমাদানী করে
থাকে।
তামাক (ঞড়নধপপড়)ঃ
বাংলাদেশে কিছু তামাক উৎপন্ন হয়। বাংলাদেশের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার একর জমিতে বার্ষিক প্রায় ৪০
হাজার টন তামাক উৎপন্ন হয়। বাংলাদেশের প্রায় সকল অঞ্চলেই কিছুনা কিছু তামাকের চাষ হয়। এদের মধ্যে
রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া প্রভৃতি অঞ্চল তামাক চাষের জন্য প্রসিদ্ধ। বর্তমানে যশোর ও
কুষ্টিয়া অঞ্চলেও তামাক চাষ প্রসার লাভ করেছে।
অন্যান্য অর্থকরী ফসলঃ
অন্যান্য অর্থকরী শস্যের মধ্যে রেশম, রাবার, বার্লি, সুপারি, আলু, নারিকেল প্রভৃতি প্রধান।
রেশম:
রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২০ হাজার একর জমিতে তুঁত গাছের চাষ করা হয়। বার্ষিক রেশম
উৎপাদনের পরিমান প্রায় ৪০ হাজার টন। এছাড়াও বগুড়া, ময়মনসিংহ এবং সিলেট অঞ্চলেও তুঁত গাছ থেকে
রেশম সুতা প্রস্তুত হয়ে থাকে।
পান:
পান বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য অর্থকরী ফসল। বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই পানের চাষ হয়ে
থাকে। এ দেশের সিলেট, ঢাকা, ফরিদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালি, রাজশাহী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলে
পানের চাষ বেশী হয়। বাংলাদেশে বার্ষিক সর্বমোট প্রায় ৩৩ হাজার একর জমিতে ৬৫ হাজার টন পান
উৎপাদিত হয়।
আলু:
বাংলাদেশে গোল ও মিষ্টি উভয় প্রকার আলুই জন্মে। ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, বগুড়া,
রংপুর, দিনাজপুর প্রভৃতি অঞ্চলে আলু চাষ হয়। আলু খাদ্য শস্যের অর্ন্তভূক্ত হলেও আলুকে অর্থকরী ফসল বলা
চলে। কারন এটি বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে চাষ করা হয়।
বাংলাদেশের অর্থকরী ফসলের মধ্যে পাট ও চা প্রধান। বাংলাদেশে নানা ধরনের ফসল উৎপাদিত হয়।
বাংলাদেশের খাদ্য শস্যের মধ্যে ধানই প্রধান বাংলাদেশে কৃষিজ ফসল ও খাদ্যশস্য হিসেবে
ধানের ব্যবহার ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব খুবই বেশী।
সুপারি ও নারকেল:
বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই সুপারি ও নারকেল জন্মে। তবে খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী , কুমিল্লা,
চট্টগ্রাম প্রভৃতি জেলায় এদের চাষ বেশী হয়ে থাকে।
পাঠ সংক্ষেপঃ
বাংলাদেশে নানা ধরনের ফসল উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশের ফসলকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ১.
খাদ্যশস্য ও ২. অর্থকরী শস্য। খাদ্য শস্যের মধ্যে ধান, গম, বার্লি, ডাল, তৈলবীজ প্রভৃতি অন্যতম এবং
অর্থকরী ফসলের মধ্যে পাট, চা, তামাক, ইক্ষু প্রভৃতি প্রধান। বাংলাদেশের কৃষিজ ফসল ও খাদ্যশস্য হিসেবে
ধানের ব্যবহার ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব খুবই বেশী। চাষের সময় অনুযায়ী ধানকে প্রধানত ৩টি শ্রেণীতে ভাগ করা
হয়। যেমন - আ্উশ, আমন ও বোরো ধান। সাধারণত উচ্চভূমিতে আউশ ধানের চাষ হয়ে থাকে। বাংলাদেশের
নীচু জমিতে আমন ধানের চাষ হয় সবচেয়ে বেশী। বোরো ধান খাল, বিল ও নদীর তীরবর্তী নীচু উর্বর পলিযুক্ত
মৃত্তিকায় উৎপন্ন হয়। যেসকল ফসল সরাসরি বিক্রির উদ্দেশ্যে চাষ করা হয় তাদের অর্থকরী ফসল বলা হয়।
বাংলাদেশের অধিকাংশ শিল্পের কাঁচামাল অর্থকরী ফসলের অন্তর্ভূক্ত। পাট, চা প্রভৃতি অর্থকরী ফসলই
বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানী দ্রব্য।
পাঠোত্তর মূল্যায়নঃ ৩.২
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নঃ
১.শূন্যস্থান পূরণ করুনঃ
১.১ বাংলাদেশের ফসলকে ------------- এবং ------------- ফসল হিসেবে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
১.২ ধান একটি ------------ফসল এবং পাট একটি ------------- ফসল।
১.৩ বাংলাদেশের মোট আবাদী জমির প্রায় ----------- শতাংশ জমিতে ধান চাষ করা হয়।
১.৪ ধান উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে -------------।
১.৫ বাংলাদেশে প্রায় ---------- ধরণের ধান দেখা যায়।
১.৬ দিনাজপুর অঞ্চলের ------------- ধান খুবই প্রসিদ্ধ।
১.৭ পৃথিবীর বৃহত্তম পাট উৎপাদনকারী দেশ হলো ---------------।
১.৮ চা উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে --------------- স্থানের অধিকারী।
১.৯ আলুকে অর্থকরী ফসলও বলা হয় কারণ এটি ----------------উদ্দেশ্যে চাষ করা হয়।
২. সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিনঃ
২.১ বাংলাদেশের ফসলকে কয়ভাগে ভাগ করা হয়েছে?
ক) ১ খ) ২
গ)৩ ঘ) ৪
২.২ গম কি ধরনের ফসল?
ক) খাদ্যশস্য খ) অর্থকরী ফসল
গ) রবিশস্য ঘ) কোনটিই নয়
২.৩ বাংলাদেশে কত ধরণের ধান উৎপাদিত হয়?
ক) ২০০ খ) ৩০০
গ) ৪০০ ঘ) ৫০০
২.৪ দেশের উৎপাদিত ধানের মধ্যে কোনটি সবচেয়ে বেশী হয়?
ক) আউশ খ) আমন
গ) বোরো ঘ) ইরি
২.৫ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী পাট উৎপাদিত হয় কোথায়?
ক) বাংলাদেশ খ) ভারত
গ) নেপাল ঘ) থাইল্যন্ড
২.৬ সরিষা কোন ধরণের ফসল?
ক) অর্থকরী জাতীয় খ) তৈলবীজ জাতীয়
গ) ডাল জাতীয় ঘ) সব্জী জাতীয়
২.৭ বাংলাদেশের নিম্নলিখিত কোন জায়গায় চা চাষ হয় না?
ক) চট্টগ্রাম খ) পার্বত্য - চট্টগ্রাম
গ) ফরিদপুর ঘ) সিলেট
সংক্ষিপ্ত উত্তর দিনঃ
১. বাংলাদেশের ফসলকে কয় ভাগে ভাগ করা হয়েছে এবং কি কি?
২. ডাল এবং তামাক কোন ধরণের ফসল?
৩. গম উৎপাদনের জন্য কোন ধরনের জলবায়ু প্রয়োজন?
বিএ/বিএসএস প্রোগ্রাম এসএসএইচএল
বাংলাদেশ ভ‚গোল ও সংখ্যাতাত্তি¡ক ভ‚গোল পৃষ্ঠা - ৭০
৪. বাংলাদেশের প্রধান প্রধান অর্থকরী ফসল সমূহ কি কি?
রচনামূলক প্রশ্নঃ
১. বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শস্য সমূহ কি কি? জাতীয় উন্নয়নে অর্থকরী ফসলসমূহের অবদান সংক্ষেপে
লিখুন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]