পঙ্গপাল ও শস্যের রোগ সমূহ:
বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গের আক্রমনে আমাদের দেশে প্রতি বছর যথেষ্ট ফসল নষ্ট হয়। অজ্ঞতার জন্য
কীটনাশক ব্যবহার করার প্রবণতা কৃষকদের মধ্যে খুবই কম। অজ্ঞতার কারণে কৃষকরা সঠিক পরিমাণে জমিতে
কীটনাশক ব্যবহার করেন না।
মৃত্তিকা ক্ষয়:
ভুমি ক্ষয় ও কৃষিকার্যের এক বিরাট সমস্যা। প্রতি বছর নদীস্রোতের দ্বারা বাংলাদেশের বহু মূল্যবান আবাদি জমি
বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জমির লবনাক্ততা:
কৃষিতে লবনাক্ততা সমস্যা দেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে প্রায়ই দেখা যায়। এই লবনাক্ততা বাংলাদেশের
সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে কৃষির অন্তরায়।
প্রাকৃতিক দূর্যোগ:
বাংলাদেশের কৃষির আর একটি অন্যতম সমস্যা হলো বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কারণ বন্যা, ঘূর্নিঝড়,
সামুদ্রিক জলোচ্ছ¡াস প্রভৃতির ফলে বছরে প্রচুর ফসল নষ্ট হয়।
গবাদি পশুর অভাব:
পশু শক্তিই বাংলাদেশের কৃষির মূল ভিত্তি। কিন্তু বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় পশুর খুবই অভাব। আবার যা রয়েছে
তার বেশীরভাগই দূর্বল প্রকৃতির, এর ফলে কৃষির উন্নতি ব্যাহত হয়।
ভূমিহীনতা:
বাংলাদেশে কৃষিকার্যে নিয়োজিত প্রায় অর্ধেক লোকের কোনো নিজস্ব জমি নেই। তারা সকলে দিন মজুর
হিসেবে কাজ করে। জমির মালিক না হওয়ায় এরা কৃষির উন্নতির জন্য সঠিক মাত্রায় পরিশ্রম করতে চায় না।
আর ফলস্বরূপ জমিতে ফলন কম হয়ে থাকে।
শিক্ষার অভাব:
বাংলাদেশের অধিকাংশ কৃষক অশিক্ষিত। কৃষি বিষয়ক শিক্ষা না থাকায় সরকারী প্রচেষ্টা থাকা সত্তে¡ও কৃষির
আধুনিকায়ন বাধা প্রাপ্ত হচ্ছে।
ত্রæটিপূর্ণ বাজার:
বাজার ব্যবস্থার ত্রæটির জন্য বাংলাদেশের কৃষকেরা ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় না। দালাল, আড়তদার প্রভৃতি
যারা এ ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে তারা ফসলের মূল্যের এক বিরাট অংশ ভোগ করে এবং কৃষকরা তাদের
ন্যায্য হিস্যা হতে বঞ্চিত হচ্ছে। এর ফলে কৃষকদের অবস্থার তথা কৃষিকার্যের উন্নতি সাধন হয় না।
অন্যান্য সমস্যা:
কৃষির অন্যান্য সমস্যার মধ্যে স্বত্ব আইনের জটিলতা, অনুন্নত পরিবহন ব্যবস্থা, পন্যাগারের অভাব প্রভৃতি
প্রধান।
কৃষি সমস্যার প্রতিকার: ( জবসবফরবং ড়ভ অমৎরপঁষঃঁৎধষ চৎড়নষবসং)
বাংলাদেশর সমস্যা সংকুল কৃষির সঠিক প্রতিকার সাধন করা একান্ত প্রয়োজন। কৃষির বিরাজমান বিভিন্ন
সমস্যার প্রতিকারের মাধ্যমে কৃষির উন্নতি সাধন করা সম্ভব। নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলো অবলম্বনের মাধ্যমে
সঠিকভাবে কৃষি সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে:
ভূমি একত্রীভূতকরণ:
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জোত জমিগুলো একত্রিত করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে অধিক ফসল ফলানো সম্ভব। তাই
প্রয়োজনীয় আইন সংস্কারের মাধ্যমে অথবা স্বেচ্ছাকৃতভাবে জমি একত্রীভূতকরণ করতে হবে।
বৈজ্ঞানিক চাষপদ্ধতি:
কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি চালু হলে অধিক ফসল ফলানো সম্ভব। তাই প্রাচীন পদ্ধতি পরিহার করে
যান্ত্রিক ও বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষ করতে হবে।
সেচ ব্যবস্থা:
বর্তমানে কৃষিকাজ অনিশ্চিত বৃষ্টিপাতের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। তাই সেচ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করা
একান্ত প্রয়োজন।
কৃষিঋনের ব্যবস্থা:
সমবায় ঋনদান সমিতি ও কৃষি ব্যাংকের শাখা গ্রামে গ্রামে স্থাপন করে কৃষকদেরকে সহজ শর্তে ঋন প্রদানের
ব্যবস্থা করতে হবে।
শিক্ষা:
দেশে যথেষ্ট সংখ্যক কৃষিবিদ্যালয় , কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে কৃষকদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করতে
হবে এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা কার্যক্রম যাতে সামগ্রিক অর্থে কৃষির ক্ষেত্রে সঠিক উন্নতি বয়ে
আনতে পারে তার নিশ্চয়তার ব্যবস্থা করতে হবে।
বীজ ও সার প্রয়োগ:
একমাত্র ভাল বীজ ও সার প্রয়োগের মাধ্যমে জমির উৎপাদন শতকরা ১৫ ভাগ থেকে ২৫ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা
সম্ভব । তাই কৃষকদেরকে ভাল বীজ ও সার সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।
কীটনাশক সরবরাহ ও বালাই ব্যবস্থাপনা :
পোকা-মাকড়ের আক্রমনে প্রতি বছর প্রচুর ফসল নষ্ট হয়। ফসলকে পোকা-মাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করার
জন্য প্রয়োজনীয় কীটনাশক সরবরাহ করতে হবে। সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবে শস্য
নষ্টকারী কীটসমূহকে প্রতিরোধ করা যায়।
প্রাকৃতিক দূর্যোগ নিরোধ:
বন্যা, ঘূর্নিঝড়, সামুদ্রিক জলোচ্ছ¡াস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দূর্যোগের হাত থেকে ফসলকে রক্ষা করতে হবে। কৃষির
উন্নতির জন্য সরকারকে বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধান অবশ্যই করতে হবে। এ ছাড়াও সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে
বেড়ীবাঁধ নির্মান করে সামুদ্রিক জলোচ্ছ¡াসের হাত থেকে সেখানকার ফসলকে রক্ষা করতে হবে।
পানি নিষ্কাশন:
শীতকালে দেশের হাওড়-বাঁওড় ও বিল-ডোবা ইত্যাদিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে ব্যাপকভাবে বোরো ও
ইরি ধানের চাষ করতে হবে।
বাজারের সুবন্দোব্যস্ত নিশ্চিত করা:
কৃষকগনের ফসলের ন্যায্য মূল্য প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য বাজার ব্যবস্থার উন্নতি বিধান করতে হবে।
এ ছাড়া দেশের সর্বত্র একই ওজন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা উচিত।
আদর্শ খামারের ব্যবস্থা করা:
কৃষকদের উৎসাহ প্রদান করার জন্য গ্রামে গ্রামে আদর্শ খামার স্থাপন করা উচিত। এ সমস্ত খামারে কিরূপে
অধিক ফসল ফলায় তা দেখে গ্রামের কৃষকগণ শিক্ষা লাভ করতে পারবে। যা সামগ্রিকভাবে দেশের কৃষি
উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
উপরোল্লেখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহন করা হলে বাংলাদেশের কৃষি সমস্যা বহুলাংশে সমাধান করা সম্ভব হবে। এই
সফলতার উপর নির্ভর করে দেশের সামগ্রিক কৃষির উন্নতি।
বাংলাদেশের ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা অধিক। বাংলাদেশের কৃষির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সনাতন
পদ্ধতির চাষাবাদ।
বাংলাদেশের সেচ ব্যবস্থা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই
অপ্রতুল।
বাংলাদেশের কৃষি বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল।
পাঠ সংক্ষেপঃ
বাংলাদেশের একর প্রতি ফসল উৎপাদন খুবই কম। বাংলাদেশে ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা অধিক। এদেশের কৃষি
বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল। এদেশের কৃষিকার্যে জমির খন্ড-বিখন্ডতা একটি মারাত্মক সমস্যা। মৌসুমি বায়ুর
তারতম্যের কারণে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত আমাদের দেশের কৃষির অন্যতম প্রধান বাঁধা। বাংলাদেশের কৃষিকে
“মৌসুমি বায়ুর জুয়াখেলা” বলা হয়। সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবে শস্য নষ্টকারী
কীটসমূহকে প্রতিরোধ করা যায়। বন্যা, ঘুর্ণিঝড়, সামুদ্রিক জলোচ্ছাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে
ফসলকে রক্ষা করতে হবে।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
১. শূন্যস্থান পূরন করুনঃ
১.১ জমির উর্বরা শক্তি হ্রাস পাবার ফলে দেশের ------ উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
১.২ বাংলাদেশের কৃষিকাজে জমির ------ একটি মারত্মক সমস্যা।
১.৩ বাংলাদেশের কৃষি অধিকাংশ ক্ষেত্রে ------ উপর নির্ভরশীল।
১.৪ দেশের কৃষিতে শীতকালে ------ ব্যবস্থার দারুণ অভাব রয়েছে।
১.৫ কৃষিতে লবনাক্ততার সমস্যা দেশের ------- অঞ্চলে দেখা যায়।
১.৬ একমাত্র ------- ও------ প্রয়োগের মাধ্যমে জমির উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
২. সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√ ) চিহ্ন দিনঃ
২.১ বাংলাদেশের কৃষি জমিতে একর প্রতি ফসলের উৎপাদন কেমন?
ক) খুব বেশী খ) বেশী
গ) মাঝারী ঘ) খুবই কম
২.২ বাংলাদেশের কৃষি জমিতে প্রাকৃতিক উর্বরা শক্তি কেমন?
ক) হ্রাস পাচ্ছে খ) বৃদ্ধি পাচ্ছে
গ) অপরিবর্তিত আছে ঘ) এর কোনটিই নয়
২.৩ বাংলাদেশের কৃষিকে মৌসুমি বায়ুর জুয়া খেলা বলা হয় কেন?
ক) বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরতা খ) তাপমাত্রার উপর নির্ভরতা
গ) বায়ুর উপর নির্ভরতা ঘ) আর্দ্রতার উপর নির্ভরতা
২.৪ দেশের কৃষিতে লবনাক্ততা সমস্যা কোন অঞ্চলে দেখা যায়?
ক) নদী তীরবর্তী এলাকায় খ) পাহাড়ী এলাকায়
গ) সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় ঘ) সোপান এলাকায়
২.৫ ভাল বীজ ও সার প্রয়োগের মাধ্যমে জমির উৎপাদন শতকরা কতভাগ বৃদ্ধি করা সম্ভব?
ক) ১০ থেকে ১৫ ভাগ খ) ১৫ থেকে ২৫ ভাগ
গ) ২৫ থেকে ৩৫ ভাগ ঘ) ৪০ থেকে ৫০ ভাগ
২.৬ সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা কি?
ক) ক্ষতিকর কীট প্রতিরোধক ব্যবস্থা খ) উপকারী কীট প্রতিরোধক ব্যবস্থা
গ) ভাল বীজ সরবরাহ ঘ) ভালমানের সার সরবরাহ
২.৭ পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে কোন ফসল ব্যাপক উৎপাদন সম্ভব?
ক) আউস ধান খ) আমন ধান
গ) বোরো ধান ঘ) কোনটিই নয়
সংক্ষিপ্ত উত্তর দিনঃ
১. বাংলাদেশের কৃষি জমি গুলোর উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে কেন?
২. বাংলাদেশের কৃষিকে মৌসুমী বায়ুর জুয়াখেলা বলা হয় কেন?
৩. বাংলাদেশের কোন কোন এলাকায় কৃষিতে লবনাক্ততা সমস্যা দেখা যাচ্ছে?
৪. সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা কি?
৫. পানি নিষ্কাশনের কারণে কোন কোন ফসল উৎপাদন সম্ভব ?
রচনামূলক প্রশ্নঃ
১. বাংলাদেশের কৃষিতে যেসব সমস্যা রয়েছে তা উল্লেখপূর্বক এইসব সমস্যা কিভাবে সমাধান বা প্রতিকার
করা যায় তা সংক্ষেপে লিখুন।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ