বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদসমূহ উল্লেখপূর্বক বিবরণ প্রদান করুন।


প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদকে সহজ কথায় প্রাকৃতিক সম্পদ নামে আখ্যায়িত করা হয়। প্রাকৃতিক সম্পদ প্রকৃতির
দান। এই সৃষ্টিতে মানুষ হস্তক্ষেপ করতে পারেনা। স্বাভাবিক ভাবেই প্রাকৃতিক সম্পদের সৃষ্টি হয়। মৃত্তিকা,
জলবায়ু, খনিজ সম্পদ, মৎস্য, বনভূমি, পাহাড় পর্বত, নদ-নদী, সাগর-হ্রদ ও জলাশয় প্রভৃতি প্রাকৃতিক
সম্পদের অন্তর্ভূক্ত। এ সকল প্রাকৃতিক সম্পদের উপর মানুষের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নির্ভরশীল। নিম্নে
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের বিবরণ ও তাদের অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
মৃত্তিকাঃ
মৃত্তিকা প্রাকৃতিক সম্পদের অন্তর্ভূক্ত। মৃত্তিকার উর্বরা শক্তির উপর কৃষির উন্নতি সম্পুর্ণ নির্ভরশীল। বাংলাদেশের
মৃত্তিকা উর্বর বলে এখানে প্রচুর পরিমাণে নানা ধরনের ফসল উৎপন্ন হয়। এটেল, দোঁআশ, কাদা, বালি মাটি
প্রভৃতি নানা ধরনের ফসল উৎপাদনে সহায়তা করে। কৃষিজাত দ্রব্য দেশের জনগনের খাদ্যের সংস্থান এবং
শিল্পের সহায়তা করে।
জলবায়ুঃ
দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি জলবায়ুর উপর নির্ভরশীল। বৃষ্টিপাত, তাপ ইত্যাদি জলবায়ুর প্রধান নিয়ামক। তাই
প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার উপর কৃষি কাজ সম্পূর্ণ রূপে নির্ভরশীল। বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ধরনের
ফসল প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়ে থাকে। জলবায়ুও প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদ। তাই জলবায়ুর উপর দেশের কৃষি
তথা সামগ্রিক উন্নতি নির্ভশীল।
খনিজ সম্পদঃ
স্বাভাবিকভাবে সৃষ্টি হয় বলে খনিজ সম্পদ প্রাকৃতিক সম্পদের অন্তর্ভূক্ত। ভারী শিল্পের উন্নয়নের জন্য প্রচুর
খনিজ সম্পদের প্রয়োজন। ভোগ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী শিল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং পরিবহন, যোগাযোগ
প্রভৃতির যন্ত্রপাতিও ভারী শিল্প সরবরাহ করে থাকে। অতএব ভারী শিল্পের উপর দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি
বিশেষভাবে নির্ভরশীল। তাই খনিজ সম্পদের ওপর ভারী শিল্প নির্ভর করে বিধায় দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির
ক্ষেত্রে খনিজ সম্পদের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত বেশী। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সঞ্চিত খনিজ সম্পদগুলো হলোকয়লা, খনিজ তেল, চুনাপাথর, চীনামাটি, তামা, কঠিন শিলা, সিলিকাবালি, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি। তাই
সর্বপরি খনিজ সম্পদের সঠিক সদ্ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
মৎস্য সম্পদঃ
মৎস্যও প্রাকৃতিক সম্পদের অন্তর্গত। নদী মাতৃক বাংলাদেশের নদ-নদী, খাল-বিল এবং সমুদ্রে প্রচুর মৎস্য
পাওয়া যায়। মাছ বাঙ্গালীদের প্রিয় খাদ্য। প্রচুর প্রোটিন থাকে এ সকল মৎস্যে। আবার মৎস্য রপ্তানীকরে
বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। আবার এই মৎস্য থেকে মৎস্য তেল, সার, সিরিশ ইত্যাদি তৈরী
হয়। দেশে আমিষের চাহিদা পূরণ, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ব্যাপক কর্মসংস্থানের
সুযোগ সৃষ্টি পূর্বক দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে মৎস্য খাত উল্লেখযোগ্য
ভূমিকা পালন করে। ২০০১-২০০২ অর্থবছরে ৪২৪৮২ মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পন্য রপ্তানি করে
১৬৭৩.১৪ কোটি টাকা আয় হয়েছে।
বনজ সম্পদঃ
বনজ সম্পদও প্রাকৃতিক সম্পদ। বন হতেই শিল্পের নানা প্রকার কাঁচামাল সংগ্রহ করা হয়। বাংলাদেশের
কাগজ, রেশম, দিয়াশলাই প্রভৃতি শিল্পের কাঁচামাল বনভূমি থেকে পাওয়া যায়। তাছাড়া বন দেশের বৃষ্টিপাত
নিয়ন্ত্রন করে এবং বন্যা ও ঝড়ের তীব্রতা আংশিক রোধ করে। গাছের ঝরাপাতা ভূমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করে।
দেশের বনজসম্পদ জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন ছাড়াও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ
অবদান রাখছে।
পাহাড়-পর্বতঃ
পাহাড়-পর্বতও প্রাকৃতিক সম্পদরূপে গন্য হয়। কারণ পাহাড়-পর্বতের প্রভাবে দেশে বৃষ্টিপাত হয় এবং নানা
ধরনের ফসল জন্মে। এছাড়া পাহাড় -পর্বতে বহু মূল্যবান বৃক্ষ জন্মে এবং এদের ঢালু ভূমি চা, রাবার ও
আনারস চাষের জন্যে আদর্শ স্থান। তাই পাহাড় -পর্বত প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর
ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। সর্বপরি পাহাড়-পর্বতকে ব্যাপকভাবে উজার হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব।
নদ-নদী, জলাশয় ও সমুদ্রঃ
নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয়, সমুদ্র প্রভৃতিও প্রাকৃতিক সম্পদের অন্তর্গত। নদ-নদীর পলি সঞ্চয়ের মাধ্যমে
পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের কৃষিকার্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এগুলো মৎস্য সম্পদের উৎস। বাংলাদেশের
নদীগুলো অভ্যন্তরীন যোগাযোগ ও পরিবহনের প্রধান উপায় হিসাবে কাজ করে। তাই প্রাকৃতিক সম্পদ হিসাবে
নদ-নদী, জলাশয়, সমুদ্র ইত্যাদি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। সর্বপরি
নদ-নদী, জলাশয়, সমুদ্রকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। এবং প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে এর সঠিক
রক্ষণাবেক্ষণ ও সদ্ব্যবহার করতে হবে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে সহজেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রাকৃতিক সম্পদের গুরুত্ব অনুধাবন করা
যায়।
প্রাকৃতিক স¤পদের উপর মানুষের
অর্থনৈতিক অগ্রগতি নির্ভরশীল।
প্রাকৃতিক স¤পদ প্রকৃতির
দান।
বন দেশের বৃষ্টিপাত নিয়ন্ত্রণ করে।
পাঠ সংক্ষেপঃ
প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদকে প্রাকৃতিক সম্পদ নামে আখ্যায়িত করা হয়। মৃত্তিকা, জলবায়ু, খনিজ সম্পদ, মৎস্য,
বনভূমি, পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী, সাগর-হ্রদ, জলাশয় প্রভৃতি প্রাকৃতিক সম্পদের অন্তর্ভুক্ত। প্রাকৃতিক সম্পদের
উপর মানুষের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নির্ভরশীল। মৃত্তিকার উর্বরা শক্তি এবং প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার
উপর কৃষির উন্নতি সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। ভারী শিল্পের উপর দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি বিশেষভাবে
নির্ভরশীল। তাছাড়া বন দেশের বৃষ্টিপাত নিয়ন্ত্রন করে এবং বন্যা ও ঝড়ের তীব্রতা আংশিক রোধ করে।
পাঠোত্তর মূল্যায়নঃ ৩.৪
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নঃ
১. শূন্যস্থান পূরণ করুনঃ
১.১ মৃত্তিকা ---- সম্পদের অন্তর্ভুক্ত।
১.২ প্রাকৃতিক সম্পদ --- দান।
১.৩ প্রাকৃতিক সম্পদের উপর মানুষের --- অগ্রগতি নির্ভরশীল।
১.৪ স্বাভাবিকভাবে সৃষ্টি হয় বলে খনিজ সম্পদ ---- সম্পদের অন্তর্ভূক্ত।
২. সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√ ) চিহ্ন দিনঃ
২.১ প্রাকৃতিক সম্পদসমূহ কি ধরণের?
ক) মনুষ্য সৃষ্ট খ) প্রকৃতির সৃষ্ট
গ) মনুষ্য ও প্রকৃতি উভয়ের সৃষ্ট ঘ) কোনটিই নয়।
২.২ মৃত্তিকার উর্বরা শক্তির উপর কিসের উন্নতি নির্ভরশীল?
ক) কৃষির খ) পাহাড়-পর্বতের
গ) মৎস্য সমূহের ঘ) কোনটিই নয়
২.৩ বাংলাদেশের মৃত্তিকা কি ধরণের?
ক) উর্বর প্রকৃতির খ) অনুর্বর প্রকৃতির
গ) উভয়ই ঘ) কোনটিই নয়।
২.৪ বন দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ কি পরিমাণ রোধ করে?
ক) সম্পূর্ণরূপে খ) আংশিকরূপে
গ) রোধ করেনা ঘ) কোনটিই নয়
সংক্ষিপ্ত উত্তর দিনঃ
১. বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ সমূহ কি কি?
২. প্রাকৃতিক সম্পদের অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে কিনা?
রচনামূলক প্রশ্নঃ
১. বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদসমূহ উল্লেখপূর্বক বিবরণ প্রদান করুন।
২. বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]