বাংলাদেশে কি কি শিল্প কারখানা আছে?
বাংলাদেশের পাট শিল্প গড়ে উঠার পেছনে প্রধান কারণ কি কি?
পোষাক শিল্পকে কেন “বিলিয়ন ডলার” শিল্প বলা হয়?


বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রধানত কৃষি র্নিভর। কৃষিনির্ভর দেশ হলেও উন্নয়নশীল দেশের বিবেচনায় এ দেশে
শিল্পের গুরুত্বও অপরিসীম। বাংলাদেশ শিল্পক্ষেত্রে এখনও সমৃদ্ধশালী নয়। শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা চাহিদার
তুলনায় অপ্রতুল। বাংলাদেশের শিল্পসমূহ হলোঃ পাটশিল্প, বস্ত্রশিল্প, কাগজ শিল্প,সারশিল্প, চিনিশিল্প,
পোশাকশিল্প, রাসায়নিক শিল্প, ঔষধ শিল্প, কৃষি-সম্পর্কিত শিল্প এবং অন্যান্য ক্ষুদ্রমাত্রার শিল্প প্রভৃতি।
বেশীরভাগ শিল্পগুলোর অবস্থান হলোঃ বৃহত্তর ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং খুলনা। বৃহত্তর ঢাকার মধ্যে শিল্প গুলোর
অবস্থান হলো তেজগাঁও, হাজারীবাগ, ডেমরা, টঙ্গি, জয়দেবপুর, নরসিংদী এবং নারায়নগঞ্জ। চট্টগ্রামের মধ্যে
এর অবস্থান হলো কালুরঘাট, নাসিরাবাদ, ষোলশহর, পতেঙ্গাঁ, কাপ্তাই, ভাটিয়ারী, বাড়বকুন্ড এবং
ফৌজদারহাট। খুলনার মধ্যে এলাকাগুলো হলো শিরমণি, খালিসপুর, বয়রা এবং রুপসা উল্লেখযোগ্য। এ
শিল্পগুলোর বেশীরভাগ অবস্থানই হলো নদী তীরবর্তী এলাকাসমূহে এবং নগরীর উপকণ্ঠ সমূহে। বাংলাদেশের
প্রধান শিল্পসমূহের বর্ননা নিম্নে প্রদান করা হলোঃ
পাট শিল্পঃ
পাটশিল্প গড়ে ওঠার পিছনে যে সকল ভৌগোলিক কারণ রয়েছে সেগুলো হল জলবায়ু, ভূ-প্রকৃতি, মৃত্তিকা ও
শক্তি সম্পদ প্রাপ্তি। অর্থনৈতিক দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে- কাঁচামাল প্রাপ্তি, দক্ষ ও সূলভ শ্রমিক, বাজার, মূলধন,
উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা, সরকারের শিল্পনীতি ইত্যাদি। ১৯৫০সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে কোন পাটকল গড়ে উঠেনি।
১৯৫১ সালে ১০০০ তাঁত নিয়ে নারায়নগঞ্জের আদমজীনগরে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম পাটকল। এটি ছিল পৃথিবীর
বৃহত্তম পাটকল। বর্তমানে আদমজী পাটকল অলাভজনক হওয়ার কারণে বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। বাংলাদেশের
বেসরকারী খাতে মোট ৯৯ টি পাটকল রয়েছে। বর্তমানে এগুলোর মধ্যে ৭৩টি চালু রয়েছে (উৎসঃ বাংলাদেশ
অর্থনৈতিক সমীক্ষা,২০০৩, পৃঃ ১৬২)। নারায়নগঞ্জ, খুলনা ও চট্টগ্রাম প্রধান তিনটি পাটশিল্প কেন্দ্র। এছাড়া
ডেমরা, ঘোড়াশাল, নরসিংদী, ভৈরববাজার, গৌরীপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর সিরাজগঞ্জ, হবিগঞ্জ প্রভৃতি স্থানেও
পাটকল রয়েছে। এ পাটকলে সাধারণত চট, বস্তা, কার্পেট, দড়ি প্রভৃতি প্রস্তুত হয়ে থাকে। এছাড়াও পাট থেকে
বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, স্যান্ডেল, শো-পিস প্রভৃতি তৈরী করা হয়। নিম্নে সারনীতে বিগত কয়েক বছরের পাটজাত
দ্রব্যের উৎপাদনের পরিমাণ এবং রপ্তানীর মাধ্যমে অর্জিত আয় দেখানো হলোঃ
সারণীঃ ৩.৮.১ : বাংলাদেশের পাটজাত দ্রব্যের উৎপাদন ও আয় (১৯৯৭-২০০২)
সাল উৎপাদন (মেট্রিক টন) অর্জিত আয় (মিলিয়ন ইউ,এস ডলার)
১৯৯৬-৯৭ ৪০৫.০০ ৩১৮
১৯৯৭-৯৮ ৪১১.০০ ২৮১
১৯৯৮-৯৯ ৩৬৭.৯৩ ৩০৪
১৯৯৯-০০ ৩৩৯.০০ ২৬৬
২০০০-০১ ৩৪০.৩৭ ২৩০
২০০১-০২ ২৯৩.২২ ২৪৪
উৎসঃ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০০৩, সারণী- ২৭, সারণী- ৪২
পাটক্রয়কৃত দেশসমূহঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, মিশর, রাশিয়া, পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, ইতালি, জার্মানি,
জাপান, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশ বাংলাদেশ থেকে পাট ও পাটজাত দ্রব্য ক্রয় করে। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে
ব্যাপকভাবে কৃত্রিম তন্তুজাত দ্রব্য ব্যাবহার শুরু হওয়ায় বিশ্বের বাজারে পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা বহুলাংশে হ্রাস
পেয়েছে। যার ফলস্বরুপ বাংলাদেশে পাট শিল্পজাত দ্রব্যের উৎপাদন যথেষ্ট কমে গেছে।
বস্ত্রশিল্পঃ
বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান শিল্প হচ্ছে বস্ত্র। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে মৌলিক চাহিদা রয়েছে তার মধ্যে
খাদ্যের পরেই বস্ত্রের প্রয়োজন। বাংলাদেশ বস্ত্রশিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। বস্ত্রশিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল
হলো তুলা যা বাংলাদেশে খুব কম পরিমাণে উৎপন্ন হয়। বাংলাদেশে বাৎসরিক বস্ত্রের চাহিদা ৮২৩ মিলিয়ন
মিটার, কিন্তু দেশীয় বস্ত্রশিল্পের বাৎসরিক উৎপাদন ৪৫০ মিলিয়ন মিটার। তাছাড়া প্রয়োজনীয় তুলার উৎপাদন
বাংলাদেশে খুবই কম এবং নিম্নমানের। এজন্য বস্ত্রশিল্পকে তুলা আমদানির উপর নির্ভর করতে হয়। ১৯৪৭
সালে বাংলাদেশে মোট বস্ত্র কলের সংখ্যা ছিল মাত্র ৮টি। এসব বস্ত্রকলে তাঁতের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৭১৭ টি।
বস্ত্রকলের সংখ্যা ১৯৬৯-৭০ সালে ছিল ৪৪টি। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ৬৩ টি বস্ত্র ও সুতাকল চালু রয়েছে।
বর্তমানে ২৫ টি কল বেসরকারি খাতে পরিচালিত হচ্ছে। বস্ত্রশিল্পে প্রায় ১০ লক্ষ শ্রমিক কর্মরত অবস্থায়
রয়েছে। তবে এদের অধিকাংশ বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে তাঁত শিল্পে নিয়োজিত আছে। বস্ত্রকলে প্রায় ৭৫ হাজার
শ্রমিক কর্মরত আছে। বস্ত্রশিল্পের উৎপাদন নিম্নে সারনীতে উপস্থাপন করা হলোঃ
সারণী ঃ ৩.৮.২ :বস্ত্র শিল্পের উৎপাদন, বাংলাদেশ, ১৯৯২-২০০২
সাল সুতা উৎপাদন
(মিলিয়ন কে.জি
কাপড় উৎপাদন
(মিলিয়ন মিটার)
সাল সুতা উৎপাদন
(মিলিয়ন কে.জি)
কাপড় উৎপাদন
(মিলিয়ন মিটার)
১৯৯২-৯৩ ৬০.৬০ ৪৫.১০ ১৯৯৭-৯৮ ৫২.৮৮ ১০.২৬
১৯৯৩-৯ ৫৭.৩০ ৩১.৬০ ১৯৯৮-৯৯ ৫৪.৮০ ১১.১৫
১৯৯৪-৯৫ ৪৯.১০ ১৭.০০ ১৯৯৯-০০ ৫৮.০০ ১১.৪১
১৯৯৫-৯৬ ৪৯.৯০ ১০.২৮ ২০০০-০১ ৬০.৮২ ১৪.৭৩
১৯৯৬-৯৭ ৫০.১৬ ১০.৯০ ২০০১-০২ ৬৫.৫৮ ১৬.১৪
উৎসঃ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০০৩, সারণী - ২৭।
বাংলাদেশের ঢাকা, কুমিল্লা, নোয়াখালি, চট্টগ্রাম প্রভৃতি অঞ্চলে বস্ত্রশিল্প গড়ে উঠেছে। ঢাকা অঞ্চলে ঢাকা এবং
এর আশেপাশে প্রায় ২৪টি বস্ত্রশিল্প স্থাপিত হয়েছে। টঙ্গি, ফতুল্লা, নারায়নগঞ্জ, কাঁচপুর, ডেমরা, সাভার প্রভৃতি
অঞ্চলে বস্ত্র ও বয়নশিল্প গড়ে উঠেছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের ফৌজদারহাট, ষোলশহর, পাঁচলাইশ, হালিশহর প্রভৃতি
উল্লেখযোগ্য বস্ত্র শিল্প কেন্দ্র। চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় প্রধান বস্ত্রশিল্প অঞ্চল। কুমিল্লা-নোয়াখালি অঞ্চলের
দুর্গাপুর, দৌলতপুর হালিমা নগর, ব্রাহ্মনবাড়িয়া, দেবীদ্বার, ফেনী প্রভৃতি স্থানে বস্ত্রকল রয়েছে। এ অঞ্চলটি
বাংলাদেশের তৃতীয় প্রধান বস্ত্র শিল্পাঞ্চল। বর্তমানে বাংলাদেশে যে বস্ত্র উৎপাদিত হয় তা চাহিদার তুলনায় খুবই
অপর্যাপ্ত। বাংলাদেশ প্রতি বছর জাপান, সিঙ্গাপুর, হংকং, কোরিয়া, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ
তুলা, সুতিবস্ত্র ও সুতা আমদানি করে থাকে।
কাগজ শিল্পঃ
কাগজ শিল্প বাংলাদেশের একটি অন্যতম বৃহৎ শিল্প। ১৯৫৩ সালে বাংলাদেশে প্রথম কাগজের কল স্থাপিত হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে ৬টি কাগজকল, ৪ টি বোর্ডমিল ও ১টি নিউজপ্রিন্ট কারখানা আছে। কাগজের কলগুলো
হলো রাঙ্গামাটি জেলার চন্দ্রঘোনায় কর্ণফুলী কাগজকল, পাবনা জেলার পাকশীর উত্তরবঙ্গ কাগজকল, ছাতকের
সিমেন্ট মন্ড ও কাগজ কল এবং নারায়নগঞ্জের মেঘনা ঘাটের নিকট বসুন্ধরা, মাগুড়া ও শাহজালাল কাগজকল।
এছাড়া নিউজপ্রিন্ট কারখানার মধ্যে খুলনা নিউজপ্রিন্ট কারখানা উল্লেখযোগ্য। বোর্ড মিলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ
হার্ডবোর্ড মিলস্, আদমজী পাটকল বোর্ড মিলস, কাপ্তাই ও টঙ্গির বোর্ড মিলস উল্লেযোগ্য। কাগজ উৎপাদনের
কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় বাঁশ, নরমকাঠ, নলখাগড়া, আখের ছোবড়া, পাটকাঠি প্রভৃতি। এছাড়া বর্তমানে
কাঁচাপাট দিয়েও কাগজ তৈরীর উন্নত প্রযুক্তি আবিস্কৃত হয়েছে। কাগজকলগুলোতে প্রধানত লেখার কাগজ,
ছাপার কাগজ, প্যাকিং ও অন্যান্য কাগজ এবং প্রচুর নিউজপ্রিন্ট উৎপন্ন হয়। নিম্নে সারনীতে বিগত কয়েক
বছরের কাগজ ও নিউজপ্রিন্ট এর উৎপাদন দেখানো হলোঃ
সারণীঃ ৩.৮.৩ : কাগজ ও নিউজপ্রিন্ট উৎপাদন, বাংলাদেশ, ১৯৯০-১৯৯৯।
সাল কাগজ
উৎপাদন (মে.ট.)
নিউজপ্রিন্ট
উৎপাদন (মে.ট.)
সাল কাগজ
উৎপাদন (মে.ট.)
নিউজপ্রিন্ট
উৎপাদন (মে.ট.)
১৯৯০-৯১ ৪৩০৯৩ ৪৭০০৫ ১৯৯৫-৯৬ ৪১৮২৯ ৪৩৯৭২
১৯৯১-৯২ ৪১২৯৩ ৪৭০৬৮ ১৯৯৬-৯৭ ৩৯৮৪০ ২৭৬৭৫
১৯৯২-৯৩ ৪৩৪৫৫ ৪৬২৯০ ১৯৯৭-৯৮ ৩৮২০৮ ৭৬৭৩
১৯৯৩-৯৪ ৪৪২৮৮ ৪৬৫২৭ ১৯৯৮-৯৯ ৩৮২৮৯ ২১৫৭৩
১৯৯৪-৯৫ ৩৯৭৩৬ ৪৩০৬২ -- -- --
উৎসঃ বাংলাদেশ পরিসংখ্যাণ বর্ষগ্রন্থ, ২০০০, সারণী ৫.১৩।
বাংলাদেশ কাগজ ও কাগজ জাতীয় দ্রব্য উৎপাদন করে দেশের অধিকাংশ চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরে কিছু
নিউজপ্রিন্ট রপ্তানি করে থাকে। ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, মায়ানমার, নেপাল, ইরাক প্রভৃতি দেশে কাগজ
রপ্তানী করে থাকে। কাগজ শিল্পে কাঁচামাল, রাসায়নিক দ্রব্য, শক্তি সম্পদ প্রভৃতির অভাব বিরাজমান রয়েছে।
এ শিল্পের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন কাঁচামালের সুষ্ঠ সরবরাহ, পর্যাপ্ত ও নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিশ্ববাজার
সৃষ্টি প্রভৃতি।
সার শিল্পঃ
বাংলাদেশ প্রধানত কৃষিপ্রধান দেশ। জমির উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যে সারের গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রয়েছে।
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা পূরনের জন্য প্রয়োজন অতিরিক্ত ফসল আর এর জন্যই ভুমির একর
প্রতি ফসল বৃদ্ধির জন্য সারের প্রয়োজন রয়েছে। জমিতে জৈব সার ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে রাসায়নিক সারের
ব্যবহারও অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সারশিল্প গড়ে উঠার জন্য যে সকল নিয়ামক প্রয়োজন রয়েছে সেগুলো
হলো কাঁচামালের পর্যাপ্ততা, শক্তি সম্পদের প্রাপ্তি, বাজার, সুলভ শ্রমিক ও সুষ্ঠ পরিবহন ব্যবস্থা। ১৯৬১ সালে
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে বাংলাদেশের প্রথম সার কারখানা স্থাপিত হয়। বর্তমানে ৮টি সারকারখানা থেকে সার
উৎপাদিত হচ্ছে। সারকারখানাগুলো হলো ঘোড়াশাল সারকারখানা, আশুগঞ্জ জিয়া সার কারখানা, পলাশ
ইউরিয়া সার কারখানা, চট্টগ্রাম ট্রিপল সুপার ফসফেট সার কারখানা, চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা ও যমুনা
সার কারখানা ও ফেঞ্চুগঞ্জ অ্যামোনিয়াম সালফেট সার কারখানা। নিম্নের সারণীতে বাংলাদেশের বিগত কয়েক
বছরের সারের উৎপাদন দেখানো হলোসারণী: ৩.৮.৪: সার উৎপাদন, বাংলাদেশ ১৯৯২-২০০২
সাল উৎপাদন (‘০০০মেট্রিকটন) সাল উৎপাদন (‘০০০মেট্রিকটন)
১৯৯২-৯৩ ২০৫০.৬০ ১৯৯৭-৯৮ ২০৩০.৬৭
১৯৯৩-৯৪ ২৩৬৬.১০ ১৯৯৮-৯৯ ১৭৯৯.৩৬
১৯৯৪-৯৫ ২১৪৪.৯০ ১৯৯৯-২০০০ ২০৩০.৬৭
১৯৯৫-৯৬ ২২৪৮.০০ ২০০০-২০০১ ১৭৯৯.৩৬
১৯৯৬-৯৭ ১৭৭২.৬৬ ২০০১-২০০২ ১৯০৪.০২
উৎস: বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা - ২০০৩, সারণী-২৭।
সার উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ন না হওয়ায় বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রচুর সার আমদানি করে। ২০০১-০২ সালে
বাংলাদেশ প্রায় ৬১৫ কোটি টাকা মূল্যের সার আমদানি করে (উৎস: বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা; ২০০৩,
সারণী-৪৩)। বাংলাদেশের বৃহৎ শিল্পের মধ্যে সার অন্যতম। প্রাকৃতিক গ্যাসের সহজলভ্যতার জন্য সারশিল্প
উন্নয়নের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।
চিনি শিল্পঃ
চিনি শিল্প বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য শিল্প। চিনি খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ১৯৪৭ সালে
বাংলাদেশে ৫ টি চিনির কল ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৭টি চিনির কল রয়েছে। বাংলাদেশের চিনিকলগুলোর
মধ্যে অন্যতম হলো শ্যামপুর চিনির কল , সেতাবগঞ্জ চিনির কল, ঠাকুরগাঁও চিনির কল, দর্শনা চিনির কল,
ফরিদপুর চিনির কল প্রভৃতি। চিনি উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল আখ। উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় আখের
উৎপাদন ভাল হয়। তাই আবহাওয়া ও মৃত্তিকাজনিত কারনে বাংলাদেশে চিনি শিল্প গড়ে উঠেছে। চিনির
কলগুলো বেশির ভাগই দেশের উত্তর ও পশ্চিমে অংশে অবস্থিত। ১৯৯৪-৯৫ সালে চিনিকলগুলোতে চিনি
উৎপাদনের পরিমান ছিল ২.৭০ লক্ষ মেট্রিক টন। ১৯৯২-২০০২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের চিনি উৎপাদনের
পরিমাণ নিম্নের সারণীতে প্রদান করা হলোঃ
সারণীঃ ৩.৮.৫: চিনি উৎপাদন, বাংলাদেশ ১৯৯২-২০০২
সাল উৎপাদন (‘০০০মেট্রিকটন) সাল উৎপাদন (‘০০০মেট্রিকটন)
১৯৯২-৯৩ ১৮৭.৫০ ১৯৯৭-৯৮ ১৬৬.৪৬
১৯৯৩-৯৪ ২২১.৪০ ১৯৯৮-৯৯ ১৫২.৯৮
১৯৯৪-৯৫ ২৭০.১০ ১৯৯৯-২০০০ ১২৩.৪৩
১৯৯৫-৯৬ ১৮৪.০০ ২০০০-২০০১ ৯৭.৮২
১৯৯৬-৯৭ ১৩৫.৩২ ২০০১-২০০২ ২০৪.৩৩
উৎসঃ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০০৩, সারনী -২৭।
বাংলাদেশের চিনি শিল্পের প্রধান সমস্যা হল আখ সরবরাহের অনিশ্চয়তা। আখ উৎপাদনের স্বল্পতার জন্য
একদিকে যেমন চিনিকলগুলো পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছে না অপরদিকে তেমনি আর একটি
সমস্যা হল মাঠেই গুড় উৎপাদনের প্রবণতা।
পোশাকশিল্পঃ
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ন শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে। অভ্যন্তরীন বাজারে বিক্রির
জন্য ষাটের দশকের প্রথম দিকে বাংলাদেশে পোশাক শিল্প উৎপাদন শুরু করে ক্রমান্ময়ে এ শিল্পে রপ্তানী মুখী
উৎপাদন শুরু হয়েছে। ১৯৮৩ সালের শেষ নাগাদ সারাদেশে মাত্র ৯২ টি রপ্তানীমুখী পোশাক শিল্পের যাত্রা শুরু
হয়। এর পরবর্তীতে এ শিল্প অতি দ্রæত বাংলাদেশের রপ্তানী বাণিজ্যের শীর্ষে নিজেদের স্থান করে নিয়েছে।
বাংলাদেশের তৈরী পোশাক কারখানাগুলি কাঁচামাল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক উপকরণের জন্য আমদানির ওপর
অধিক মাত্রায় নির্ভরশীল। এসব পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সামর্থ্য সীমিত। রপ্তনীযোগ্য তৈরী পোশাক
উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় তাঁত বস্ত্রের প্রায় ৯০ ভাগ এবং বুনন কাপড়ের শতকরা ৬০ ভাগ বিদেশ থেকে
আমদানী করতে হয়।কিন্তু বর্তমানে ২০০৫ সালের প্রারম্ভেই কোটামুক্ত গার্মেন্টস শিল্প চালু হওয়ায় এ শিল্পের
বিশ্ববাজারে রপ্তানীর ক্ষেত্রে এক হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। গুণগত মান বৃদ্ধির মাধ্যমেই বিশ্বের বাজারে এ
শিল্পের ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় এক হাজারের মতো রপ্তানীমুখী পোশাকশিল্প
ইউনিট রয়েছে। এগুলোর প্রায় ৭৫% ঢাকা মহানগরীতে অবস্থিত। অবশিষ্ট ইউনিটগুলোর প্রায় সবই চট্টগ্রাম
বন্দর নগরীতে এবং কিছু খুলনা এলাকায় রয়েছে। এ শিল্পে প্রায় ৭ লক্ষ শ্রমিক কর্মরত অবস্থায় আছে। এদের
শতকরা ৮৫ জনই মহিলা। ২০০১-২০০২ সালে এ শিল্পে বাংলাদেশ প্রায় ১৭৯৪৭ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা
অর্জন করে যা মোট রপ্তানীর আয়ের প্রায়৫২%। নিম্নের সারণীতে কয়েক বছরের পোষাক শিল্প হতে রপ্তানী
আয়ের তালিকা দেখানো হলোঃ
সারনীঃ ৩.৮.৬: পোশাক শিল্প হতে রপ্তানী আয়, বাংলাদেশ
সাল মোট রপ্তানী আয় (কোটি টাকায়) তৈরি পোষাকের রপ্তানীর আয়
(কোটি টাকায়)
মোট রপ্তানী আয়ে তৈরি
পোষাকের অংশ (শতকরা হার)
১৯৯০-৯১ ৬১২৯.৮২ ২৬২৬.০৪ ৪২.৮৪
১৯৯৫-১৯৯৬ ১৫৮৫৪.০৯ ৭৯৫৯.৭২ ৫০.২১
১৯৯৮-১৯৯৯ ২৫৫৮৭.১৪ ১৪৩৪৫.৯১ ৫৬.০৬
১৯৯৯-২০০০ ২৮৯৩৮.৩১ ১৫৫১০.৫৭ ৫৩.৫৯
২০০০-২০০১ ৩৪৮৯৫.৯৩ ১৮১৫২.১৪ ৫২.০১
২০০১-২০০২ ৩৪৩৩৭৭.৬০ ১৭৯৪৬.৮৮ ৫২.২০
উৎসঃ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০০৩, সারণী -৪২।
রপ্তানীকৃত দেশসমুূহঃ
বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশী পোশাক রপ্তানী হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এরপরে রয়েছে জার্মানীর অবস্থান।
এরপরে যথাক্রমে ফ্রান্স, ইতালি, ব্রিটেন, নেদারল্যন্ডস, কানাডা, বেলজিয়াম, স্পেন ও অন্যান্য দেশ।
বাংলাদেশে তৈরী পোশাক শিল্প বিকাশের অনুকুল পরিবেশ বিদ্যমান। অন্যান্য নিয়ামকের মধ্যে স্বল্প মজুরীতে
শ্রমশক্তির সহজলভ্যতা অন্যতম। পোশাক শিল্পকে বর্তমানে বলা হয় “বিলিয়ন ডলার” শিল্প।
বাংলাদেশের অধিকাংশ শিল্পের অবস্থান হলো নদী
তীরবর্তী এলাকা সমূহ এবং নগরীর উপকণ্ঠসমূহ।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান শিল্প হচ্ছে বস্ত্র
শিল্প।
বাংলাদেশের চিনি শিল্পের প্রধান সমস্যা হলো আখ
সরবরাহের অনিশ্চয়তা।
পোষাক শিল্পকে বলা হয় “বিলিয়ন ডলার”
শিল্প।
পাঠ সংক্ষেপঃ
বাংলাদেশে বিদ্যমান শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। বাংলাদেশের শিল্পসমূহ হলো- পাট
শিল্প, কাগজ শিল্প, বস্ত্রশিল্প, সার শিল্প, চিনি শিল্প, পোষাক শিল্প, রাসায়নিক শিল্প প্রভৃতি। পাট থেকে বিভিন্ন
ধরনের ব্যাগ, স্যান্ডেল, শোপিস প্রভৃতি তৈরী করা হয়। বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান শিল্প হচ্ছে বস্ত্র শিল্প।
বাংলাদেশের ঢাকা, কুমিল্লা, নোয়াখালি, চট্টগ্রাম প্রভৃতি অঞ্চলে বস্ত্র শিল্প গড়ে উঠেছে। কাগজ উৎপাদনের
কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় বাঁশ, নরম কাঠ, নলখাগড়া, আখের ছোবরা প্রভৃতি। বাংলাদেশ কাগজ ও কাগজ
জাতীয় দ্রব্য উৎপাদন করে দেশের অধিকাংশ চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরে কিছু নিউজপ্রিন্ট রপ্তানী করে।
পোষাক শিল্পকে বলা হয় “ বিলিয়ন ডলার ” শিল্প।
পাঠোত্তর মূল্যায়নঃ ৩.৮
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নঃ
১. শূণ্যস্থান পূরণ করুনঃ
১.১ বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রধানত ---------------- নির্ভর।
১.২ বাংলাদেশের অধিকাংশ শিল্প কারখানা -------------------- তীরবর্তী এলাকায় গড়ে উঠেছে।
১.৩ বাংলাদেশের প্রথম পাটকল স্থাপিত হয় ----------------------- নগরে।
১.৪ --------------------- সালে বাংলাদেশে প্রথম কাগজের কল প্রতিষ্ঠিত হয়।
১.৫ বাংলাদেশে বর্তমানে ---------------------- টি সারকারখানা আছে।
১.৬ চিনি শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হলো ----------------------।
১.৭ গত ২০০২ সালে পোষাক শিল্প মোট রপ্তানীতে ----------------- শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন
করে।
১.৮ বিলিয়ন ডলার শিল্প বলা হয় ----------------------- কে।
২. সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিনঃ
২.১ বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রধানত কি নির্ভর?
ক) কৃষি খ) শিল্প
গ) বাণিজ্য ঘ) রপ্তানী
২.২ বাংলাদেশের অধিকাংশ শিল্পকারখানা কোন এলাকায় গড়ে উঠেছে?
ক) উপকূলে খ) নদীর তীরে
গ) সমুদ্রের নিকট ঘ) গ্রাম এলাকায়
২.৩ পাট শিল্প গড়ে উঠার পেছনে নিচের কোন কারণটি বেশী ভূমিকা রাখে?
ক) জলবায়ু খ) ভূ-প্রকৃতি
গ) মৃত্তিকা ঘ) উপরের সবগুলোই
২.৪ বস্ত্র শিল্পের প্রধান কাঁচামাল কি?
ক) পাট খ) তুুলা
গ) সার ঘ) চিনি

২.৫ কাগজ উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে নীচের কোনটি ব্যবহৃত হয় না?
ক) বাঁশ খ) নরম কাঠ
গ) পাটকাঠি ঘ) সুন্দরী গাছ
২.৬ বাংলাদেশের প্রথম সার কারখানা কোথায় প্রতিষ্ঠিত হয়?
ক) ফেঞ্চুগঞ্জ খ) আশুগঞ্জ
গ) ঘোড়াশাল ঘ) চট্টগ্রাম
২.৭ বাংলাদেশের অধিকাংশ চিনিকলগুলো কোথায় অবস্থিত?
ক) উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে খ) উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে
গ) দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে ঘ) দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে
২.৮ বাংলাদেশের অধিকাংশ গার্মেন্টস শিল্প কোথায় অবস্থিত?
ক) ঢাকা শহর খ) চট্টগ্রাম শহর
গ) খুলনা শহর ঘ) বরিশাল শহর
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিনঃ
১. বাংলাদেশে কি কি শিল্প কারখানা আছে?
২. বাংলাদেশের পাট শিল্প গড়ে উঠার পেছনে প্রধান কারণ কি কি?
৩. বর্তমানে বাংলাদেশে কয়টি চিনি কল আছে?
৪. পোষাক শিল্পকে কেন “বিলিয়ন ডলার” শিল্প বলা হয়?
রচনামূলক প্রশ্নঃ
১. বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শিল্পসমূহ কি কি? জাতীয় উন্নয়নে এসব শিল্পের অবদান সংক্ষেপে বর্ননা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]