মানচিত্র অভিক্ষেপের সংজ্ঞা ও শ্রেণীবিভাগ বর্ণনা করুন।


মানচিত্র অভিক্ষেপের সংজ্ঞাঃ
মানচিত্র হচ্ছে হ্রাসকৃত স্কেলে সমতল কাগজের ওপর সম্পূর্ণ পৃথিবীর বা এর অংশবিশেষের প্রতিভূ বা অবিকল প্রতিচ্ছবি।
পৃথিবী বর্তুলাকার। ফলে বর্তুলাকার পৃথিবীকে হুবহু সমতলে বিছানো সম্ভব নয় এবং স্বাভাবিকভাবেই কোন সমতল কাগজে
আঁকা যাবে না। তবে বর্তুলাকার পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের অবস্থান নির্দেশ করার জন্য অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমা রেখা রয়েছে।
পৃথিবী বা এর অংশবিশেষের মানচিত্র সমতল পৃষ্ঠে আঁকতে হলে আমাদেরকে পূর্ব পশ্চিমে বিস্তৃত কাল্পনিক অক্ষরেখা এবং
উত্তর দিকে বিস্তৃত কাল্পনিক দ্রাঘিমা রেখাগুলোর সাহায্য নিতে হবে। অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমা রেখাগুলোকে ভূগোলক থেকে
বিভিন্ন পদ্ধতিতে সমতল পৃষ্ঠে বিন্যস্ত করে সঠিক ও নির্ভুলভাবে মানচিত্র আাঁকা সম্ভব। অতএব, ভূগোলকের অক্ষরেখা ও
দ্রাঘিমা রেখাগুলোকে সমতল পৃষ্ঠে স্থানান্তরিত করার বিভিন্ন পদ্ধতিকে মানচিত্র অভিক্ষেপ বলে। মানচিত্র অভিক্ষক্ষেপে
অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমা রেখাগুলো জালের মত ছক তৈরি করে। এই ছককে ইংরেজীতে ‘গ্রাটিকুল’ বলে। মানচিত্র অভিক্ষেপ
বলতে মূলত এই জালের মত ছককেই বোঝায়।
সমগ্র পৃথিবী বা পৃথিবীর অংশবিশেষের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক মানচিত্র সঠিকভাবে আাঁকার জন্য মানচিত্র অভিক্ষেপ ব্যবহার
করা হয়। বৃহৎ স্কেলে অনেক বড় পরিধির ভূগোলক বহন বা নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক অসুবিধা হতো। এ ছাড়া ভূগোলকের
কোন অংশের বা অঞ্চলের কোন বিষয় সম্বন্ধে বিস্তারিত জানা বা দূরত্ব পরিমাপ করাও সম্ভব নয়। কাজেই মানচিত্রের
উদ্দেশ্য ও স্কেল অনুসারে বিভিন্ন প্রকার মানচিত্র অভিক্ষেপ পদ্ধতি বিকাশ লাভ করেছে এবং মানচিত্র অংকনে ব্যবহৃত
হচ্ছে।
মানচিত্র অভিক্ষেপের শ্রেণীবিভাগ (ঈষধংংরভরপধঃরড়হ ড়ভ গধঢ় চৎড়লবপঃরড়হ)
সমগ্র পৃথিবী বা পৃথিবীর অংশবিশেষ অথবা বিশেষ কোন উদ্দেশ্যে মানচিত্র আঁকার জন্য একই মানচিত্র অভিক্ষেপ সব
ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় না। কারণ একই মানচিত্র অভিক্ষেপে পৃথিবীর সব অঞ্চলের এবং বিভিন্ন উদ্দেশ্য অংকিত মানচিত্র
সঠিকভাবে আসে না। এই কারণে বিভিন্ন মানচিত্র অভিক্ষেপ পদ্ধতির উদ্ভাবন হয়েছে। তবে একটা বিষয় মনে রাখা
দরকার যে, গাণিতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোন অভিক্ষেপই শুদ্ধ নয়।
কাঁচ, প্লাস্টিক বা অনুরূপ অপর কোন স্বচ্ছ পদার্থ দ্বারা সৃষ্ট ভূগোলকের মধ্য দিয়ে আলোক প্রক্ষেপ করেই ভূগোলকের
ওপর কোন সমতল অথবা সমতলে প্রকাশ করা যায় এমন বস্তু স্থাপন করলে তার ওপর ভূগোলকের অক্ষ ও দ্রাঘিমা
রেখাগুলো সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠে। এভাবে প্রাপ্ত অভিক্ষেপকে চিত্রানুপাত বা দৃশ্যানুপাত (চবৎংঢ়বপঃরাব) বা জ্যামিতিক
(এবড়সবঃৎরপধষ) অভিক্ষেপ বলা হয়। চিত্রানুপাত অভিক্ষেপগুলোই স্বাভাবিক অভিক্ষেপ। কিন্তু অক্ষ ও দ্রাঘিমা
রেখাগুলোর পরিকল্পনা গানিতিক হিসাবের সহায়তায় পরিবর্তিত করলে অভিক্ষেপটি কতিপয় বিশেষ গুণ লাভ করে এবং
এর ফলে তা বিশেষ প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়। এইরূপ অভিক্ষেপকে অ-চিত্রানুপাত (ঘড়হ-চবৎংঢ়বপঃরাব) বা অ-জ্যামিতিক
(ঘড়হ-এবড়সবঃৎরপধষ) অভিক্ষেপ বলা হয়। অভিক্ষেপগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এই শ্রেণী বিন্যাস ভূগোলকের
ওপর সমতল কাগজ স্থাপনের ওপর নির্ভর করে। এ ছাড়াও গাণিতিক হিসেবের সহায়তায় অন্য এক শ্রেণীর অভিক্ষেপ
অংকন করা হয়। সুতরাং অভিক্ষেপ প্রধানত ৪ প্রকার।
১. বেলনাকার অভিক্ষেপ: (ঈুষরহফৎরপধষ চৎড়লবপঃরড়হ) ভূগোলকটিকে কোন বেলনের মধ্যে স্থাপন করে বেলনের
ওপর ভূগোলকের ছায়া প্রতিফলিত করে যে অভিক্ষেপ অংকন করা হয় তাকে বেলনাকার অভিক্ষেপ বলে।
২. শাঙ্কব অভিক্ষেপ: ভূগোলটিকে যখন কোন কাগজের শাঙ্কবের ভিতর স্থাপন করে অভিক্ষেপ অংকন করা হয়,
তখন তাকে শাঙ্কব অভিক্ষেপ (ঈড়হরপধষ চৎড়লবপঃরড়হ) বলে।
৩. শীর্ষদেশীয় অভিক্ষেপ: (তবহরঃযধষ চৎড়লবপঃরড়হ) যখন ভূগোলকের কোন এক বিন্দুতে সমতল কাগজ স্পর্শ করে
অভিক্ষেপ অংকন করা হয়, তখন তাকে শীর্ষদেশীয় অভিক্ষেপ বলে। এ কাগজ ভূগোলকের যে কোন স্থানে
স্থাপন করে অভিক্ষেপ অংকন করা যায়। সাধারণত মেরু বিন্দুতে, নিরক্ষীয় রেখা বরাবর অথবা মেরু বিন্দু এবং
নিরক্ষরেখায় মধ্যবর্তী কোন বিন্দুতে কাগজ সমতলভাবে স্থাপন করা হয়। ফলে মেরু বিন্দুতে কাগজ স্থাপন
করলে (ক) মেরু দেশীয়, নিরক্ষরেখা বরাবর কাগজ স্থাপন করলে প্রাপ্ত অভিক্ষেপকে (খ) নিরীক্ষয় এবং উভয়ের
মধ্যবর্তী যে কোন বিন্দুতে কাগজ স্থাপন করলে (গ) তীর্যক অভিক্ষেপ হবে।
অভিক্ষেপে আলোকের অবস্থান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমা রেখাগুলোর পরস্পরের মধ্যে
দূরত্ব নির্ভর করে যে বিন্দুতে কাগজটি সমতলভাবে অবস্থান করে তার ওপর এবং আলোকরশ্মির অবস্থানের
ওপর। আলোক রশ্মি ভূগোলক কেন্দ্রে, নিরক্ষীয় রেখা বরাবর বা তার বাইরে কোন একটি বিন্দুতে অবস্থান
করতে পারে। আলোক রশ্মির এ তিন অবস্থানের জন্য শীর্ষদেশীয় অভিক্ষেপকে আবার তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা
যায়:
ক. নমোনিক বা কেন্দ্রীয় (ঘড়সড়হরপ): যখন আলোক রশ্মি ভূগোলকের কেন্দ্রে অবস্থান করে।
খ. স্টেরিওগ্রাফিক (ঝঃবৎবড়মৎধঢ়যরপ): যখন আলোকরশ্মি ভূগোলকের ওপর যে কোন বিন্দুতে, বিশেষত
সমতলভাবে স্থাপিত কাগজটির ঠিক বিপরীত দিকে অবস্থান করে।
গ. অর্থোগ্রাফিক (ঙৎঃযড়মৎধঢ়যরপ): আলোকরশ্মি যখন অনন্ত শূন্য থেকে আসে, যার রশ্মিগুলো পরস্পরের
সমান্তরালে অবস্থান করে।
৪. গাণিতিক পদ্ধতি ভিত্তিক অভিক্ষেপ (ঈড়হাবহঃরড়হধষ চৎড়লবপঃরড়হ): গাণিতিক পদ্ধতি অবলম্বন করে প্রতিটি
অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমা রেখার দৈর্ঘ্য এবং ব্যাসার্ধ নির্ণয়পূর্বক এই ধরনের অভিক্ষেপ অংকন করা হয়।
ভূপৃষ্ঠের সঠিক মানচিত্র অংকন করার জন্য অভিক্ষেপগুলোর আয়তন, আকৃতি, স্কেল, দিক বজায় রাখা হয়। তবে সব
গুণাগুণ বা বৈশিষ্ট্য সব অভিক্ষেপে একসাথে পাওয়া সম্ভব নয়। এই সমস্ত বৈশিষ্ট্যের নির্দিষ্ট একটির উপর ভিত্তি করে
অভিক্ষেপকে আবার তিনটি ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা:
ক. সমআয়তন বিশিষ্ট অভিক্ষেপ (ঊয়ঁধষ-অৎবধ ড়ৎ ঐড়সড়ষড়মৎধঢ়যরপ চৎড়লবপঃরড়হ)
খ. সঠিক আকৃতি বিশিষ্ট অভিক্ষেপ (ঙৎঃযড়সড়ৎঢ়যরপ চৎড়লবপঃরড়হ)
গ. সঠিক দিক বিশিষ্ট অভিক্ষেপ (অুরসঁঃযধষ চৎড়লবপঃরড়হ)
বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ভিত্তিক অভিক্ষেপের বিভিন্ন প্রকারের শ্রেণীবিভাগ নিচে দেয়া হল:
বিভিন্ন ভিত্তি অনুসারে মানচিত্র অভিক্ষেপের শ্রেণীবিভাগ
ক. অঙ্কনের পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে
(র) চিত্রানুপাত বা দৃশ্যানুগ অভিক্ষেপ;
(রর) অ-চিত্রানুপাত অভিক্ষেপ।
খ. ব্যবহৃত বিকাশযোগ্য তলের ওপর ভিত্তি করে
(র) বেলন বা বেলনাকার অভিক্ষেপ;
(রর) শাঙ্কব অভিক্ষেপ;
(ররর) শীর্ষদেশীয় বা জেনিথাল অভিক্ষেপ;
(রা) ব্যবহার সিদ্ধ অভিক্ষেপ।
গ. সংরক্ষিত গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করে
(র) সম-আয়তনিক বা হোমোলোগ্রাফিক অভিক্ষেপ;
(রর) সঠিক আকৃতি বিশিষ্ট বা অর্থোমরফিক অভিক্ষেপ;
(ররর) সঠিক দিক সম্পন্ন অভিক্ষেপ বা অ্যাযিম্যুথাল।
ঘ. স্পর্শক তলের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে
(র) মেরুস্থানীয় অভিক্ষেপ;
(রর) স্বাভাবিক বা নিরক্ষীয় অভিক্ষেপ;
(ররর) তির্যক অভিক্ষেপ।
ঙ. দৃষ্টিবিন্দু বা আলোর অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে
(র) নমোনিক অভিক্ষেপ;
(রর) ষ্টেরিওগ্রাফিক অভিক্ষেপ;
(ররর) অর্থোগ্রাফিক অভিক্ষেপ।
চ. জ্যামিতিক আকৃতির ওপর ভিত্তি করে
(র) আয়তক্ষেত্রাকার অভিক্ষেপ;
(রর) বৃত্তাকার অভিক্ষেপ;
(ররর) ডিম্বাকার অভিক্ষেপ;
(রা) প্রজাপতি আকারের অভিক্ষেপ।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন ১.১
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন:
১.সঠিক উত্তরটি লিখুন :
১.১. গাণিতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোন অভিক্ষেপই শুদ্ধ নয়।
১.২. চিত্রানুপাত অভিক্ষেপগুলোই স্বাভাবিক অভিক্ষেপ।
১.৩. ভূগোলটিকে যখন কোন কাগজের শাঙ্কবের ভিতর স্থাপন করে অভিক্ষেপ অংকন করা হয়, তখন তাকে শাঙ্কব
অভিক্ষেপ (ঈড়হরপধষ চৎড়লবপঃরড়হ) বলে।
১.৪. অভিক্ষেপে আলোকের অবস্থান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নয়।
১.৫. ভূপৃষ্ঠের সঠিক মানচিত্র অংকন করার জন্য অভিক্ষেপগুলোর আয়তন, আকৃতি, স্কেল, দিক বজায় রাখা হয়।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন:
১. মানচিত্র অভিক্ষেপের সংজ্ঞা দিন।
২. মানচিত্র অভিক্ষেপের শ্রেণীবিভাগ বর্ণনা করুন।
৩. অভিক্ষেপের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ভিত্তিক শ্রেণীবিভাগের ছকটি লিখুন।
রচনামূলক প্রশ্ন:
১. মানচিত্র অভিক্ষেপের সংজ্ঞা ও শ্রেণীবিভাগ বর্ণনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]