মৃত্তিকা কি? মৃত্তিকা গঠনের উপাদান ও গঠন প্রক্রিয়া
মৃত্তিকা বিজ্ঞান কাকে বলে?


 মৃত্তিকার সংরক্ষণ সম্পর্কে।
ভ‚গোল পাঠের সাথে মৃত্তিকা পাঠের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ভ‚-পৃষ্ঠ এবং তার গঠন
উপাদানগুলির মধ্যে মৃত্তিকা অন্যতম। তাই ভ‚গোল পাঠের বিষয়বস্তুগুলির মধ্যে মৃত্তিকাকে অন্তর্ভুক্ত
করা হয়। আমরা এই পাঠে মৃত্তিকা সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পেতে চেষ্টা করব।
পৃথিবীতে তিনটি শ্রেষ্টতম প্রাকৃতিক উৎস হল মাটি, পানি এবং বায়ু। এই তিনটি প্রাকৃতিক উৎস
মানুষের প্রতি প্রকৃতির আশীর্বাদস্বরূপ। সুতরাং ৩টি প্রাকৃতিক উৎসের যথার্থ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এবং
তাদের সম্পর্কে মানুষের প্রকৃত বিশেষ জ্ঞান না থাকলে এগুলির ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা
মানুষের জন্য কঠিন হবে। মৃত্তিকা এমন একটি প্রাকৃতিক সম্পদ যার উপর গোটা পৃথিবী দন্ডায়মান
অবস্থায় আছে। এই মৃত্তিকার সৃষ্টি রহস্য, সৃষ্টি প্রক্রিয়া, তার বিভিন্ন উপাদান, মৃত্তিকার প্রকারভেদ,
তার ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে বিজ্ঞানের একটি পৃথক বিষয়ের নাম হল “মৃত্তিকা
বিজ্ঞান”। অত্যন্ত সংগত কারণে এই মৃত্তিকা বিজ্ঞানের সাথে অন্যান্য মৌলিক বিষয় যেমনÑ পদার্থ
বিজ্ঞান, রসায়ন শাস্ত্র, খনিজ বিদ্যা, উদ্ভিদ বিজ্ঞান প্রভৃতির সাথে সম্পর্ক খুব গভীর। তাই মৃত্তিকা
বিষয়ের জ্ঞান একটি বিশাল ব্যাপার। কিন্তুআমরা আলোচ্য পাঠে শুধুমাত্র মৃত্তিকা সম্পর্কে সাধারণ
আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকব।
মৃত্তিকা কি?
মৃত্তিকা বিজ্ঞান কাকে বলে?
মৃত্তিকা কি?
মৃত্তিকা হল ভ‚-পৃষ্ঠের ওপর একটি আচ্ছাদন। শিলা হতে মৃত্তিকার উৎপত্তি। ভ‚-ত্বকের শিলাগুলি
বৃষ্টি, রৌদ্র, তুষার, হিমবাহ প্রভৃতির প্রভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সুক্ষè ধূলিকণায় পরিণত হয়। এইসব
শিলাচূর্ণ আবার জৈব ও উদ্ভিজ্জ পদার্থের সাথে মিশ্রিত হয়ে মৃত্তিকার সৃষ্টি করেছে।
এই মৃত্তিকাই প্রতিটি দেশে কৃষি কাজের একটি অতি মূল্যবান উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
মৃত্তিকা পথ-ঘাট, রাস্তা, ইমারত, প্রভৃতি নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে। কাজেই ফসল এবং
উদ্ভিদ জ¤œানো, বাসগৃহ ও আসবাবপত্র প্রস্তুতিতে, পথ-রাস্তা-ইমারত নির্মাণে মৃত্তিকার প্রত্যক্ষ
প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
মৃত্তিকা কাকে বলে?
মৃত্তিকার প্রয়োজনীয়তা কি?
মৃত্তিকা গঠনের উপাদান
ভ‚গোল পাঠের সাথে
মৃত্তিকা পাঠের
সম্পর্ক
ওতপ্রোতভাবে
মৃত্তিকা বিজ্ঞানের
সাথে অন্যান্য
মৌলিক বিষয় এর
সম্পর্কে গভীর।
শিলা, হিমবাহ,
জৈবপদার্থ।
কৃষিকাজে মূল্যবান
উপাদান।

প্রধানত: শিলাচূর্ণ ও জৈব পদার্থের সংমিশ্রণে মাটির সৃষ্টি হয়। প্রাকৃতিকভাবে (পার্শ্বচিত্র ৩.৯.১)
বিভিন্ন স্তর সৃষ্টিকে মাটির গঠন বলে। একটুব্যাপক অর্থে, শিলার মাটির কণায় রূপান্তরকে মাটির
গঠন বলে। শিলার ক্ষয়ক্রিয়ার সাথে সাথে মাটির গঠনকাজ শুরু হয়। মাটি গঠনে নিচের পাঁচটি
উপাদান প্রধানত কাজ করে। যেমনÑ
উৎসবস্তু, জলবায়ু, সজীববস্তু, ভ‚-প্রকৃতি ও সময়।
ক) উৎস বস্তু (চধৎবহঃ গধঃবৎরধষ)ঃ যেহেতুশিলা থেকেই মাটির উৎপত্তি তাই শিলাকেই উৎস বস্তু
বলে। মৃত্তিকার গঠন প্রক্রিয়া ও তার গুণাগুণ প্রধানত মূল শিলার গুণাগুণের উপর নির্ভরশীল।
যেমন: বালুময় শিলা থেকে উৎপাদিত মাটি বেলে মাটি এবং চুনাপাথর থেকে উৎপত্তি লাভকারী
মাটি কাঁদামাটি হিসেবে পরিচিত।
খ) জলবায়ু(ঈষরসধঃব)ঃ মৃত্তিকা গঠনে জলবায়ুর প্রভাব সর্বাপেক্ষা অধিক। জলবায়ুর বিভিন্ন
উপাদানের মধ্যে বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা সর্বাধিক প্রভাব বিস্তার করে। কারণ বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার
তারতম্যে শিলার উপর যান্ত্রিক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে মৃত্তিকা গঠন করে।
গ) সজীব বস্তু (খরারহম ঙৎমধহরংস)ঃ বৃহৎ বৃক্ষরাজি শিলার অভ্যান্তরে শেকড় বিস্তার করে
শিলাকে চূর্ণ ক'রে শিলাকে মৃত্তিকায় রূপান্তরিত করে। আবার মস্, তৃণ, গুল্ম, উদ্ভিদের শাখাপ্রশাখা, পত্র ইত্যাদি পচে মৃত্তিকায় জৈব পদার্থ হিসেবে মিশ্রিত হয়ে মৃত্তিকা গঠনে সাহায্য করে
এবং মৃত্তিকার উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি করে। গর্ত খননকারী প্রাণী কেঁচো, উঁই, পিপঁড়া, ইঁদুর ইত্যাদিও
শিলাকে সুক্ষè কণায় পরিণত ক'রে মৃত্তিকা গঠনে সহায়তা করে।
ঘ) ভ‚-প্রকৃতি (ঞড়ঢ়ড়মৎধঢ়যু ড়ৎ জবষরবভ)ঃ ভ‚-প্রকৃতির উপরও মাটির সৃষ্টি অনেকাংশে নির্ভরশীল।
বৃষ্টিবহুল পার্বত্য ভ‚মির ঢালে বৃষ্টির পানি দাঁড়ায় না বলে তথায় জঙ্গল সৃষ্টি হতে বিলম্ব হয়। অথচ
সমতল ও গর্তযুক্ত শিলাতে অধিক পরিমাণ বৃষ্টির পানি সঞ্চিত হওয়ায় দ্রæত গতিতে উদ্ভিদ জ¤েœ
থাকে। এ কারণে দেখা যায় সমতল অঞ্চলে মৃত্তিকা উৎপন্ন হয় অপেক্ষাকৃত দ্রæতগতিতে এবং
পার্বত্য অঞ্চলের মৃত্তিকা গঠনের গতি ধীরে।
ঙ) সময় (ঞরসব)ঃ মৃত্তিকার উৎপত্তি মাত্র কয়েকদিন বা কয়েক মাস বা কয়েক বছরের ব্যাপার
নয়। ৫Ñ১০ বছরের মধ্যেই শিলা হতে লাইকেন, মস্ প্রভৃতি জ¤œানোর উপযোগী মৃত্তিকা উৎপত্তি
হয়। কিন্তুএকটি পরিণত বা সম্পূর্ণ মৃত্তিকা গঠিত হতে দু'শ হতে কয়েক হাজার বছর সময় লাগে।
মৃত্তিকা তৈরি ধ্বংসাতœক ও গঠনমূলক এ যুগপৎ নিয়মে চলে। প্রথমে প্রাকৃতিক শক্তি, যেমনÑ তাপ,
বৃষ্টি, হিমবাহ, তুষার প্রভৃতি দীর্ঘ সময় ধরে শিলাকে চুর্ণ-বিচূর্ণ করে। এসব পদার্থ কালক্রমে বাহিত
হয়ে সঞ্চিত হতে হতে মৃত্তিকায় পরিণত হয়। এ কারণেই মৃত্তিকা গঠনে দীর্ঘ সময়ের দরকার।
মৃত্তিকার গঠন প্রক্রিয়া (ঝড়রষ ঋড়ৎসরহম চৎড়পবংং)
মৃত্তিকা গঠনের বিভিন্ন উপাদান সমনি¦ত ক্রিয়ার মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থানীয় পরিস্থিতিতে বিশেষ বিশেষ
মৃত্তিকা গঠন প্রক্রিয়া স্থায়ী থাকতে সাহায্য করে। মৃত্তিকা গঠনের শেষ পর্যায়ে মাটিতে একটি
পার্শ্বচিত্র (চিত্র ৩.৯.১) সৃষ্টি হয়। মৃত্তিকা গঠনের প্রধান প্রধান প্রক্রিয়া নি¤œরূপ:
১. জৈবকরণ (ঐঁসরভরপধঃরড়হ) ঃ যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মৃত্তিকার উপরের স্তরের জৈববস্তু সৃষ্টি হয়
তাকে জৈবকরণ বা ঐঁসরভরপধঃরড়হ বলে। মৃত্তিকার উপর কি ধরনের জৈবপদার্থ জমা হয়, কি
প্রকারে তা বিয়োজিত হয় এবং বিয়োজিত পদার্থ কি কি যৌগ সংশ্লেষণ করে প্রভৃতি বিষয়গুলোর
উপর জৈবস্তরের গুণাগুণ নির্ভর করে। মৃত্তিকার জৈব পদার্থের প্রধান উৎস উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহের
শিলাচ‚র্ণ ও জৈব
পদার্থ।
শিলা উৎসবস্তু।
বৃষ্টিপাত ও
তাপমাত্রা
শেকড় বিস্তার।
উৎসবস্তু, জলবায়ু,
সজীববস্তু, ভ‚-
প্রকৃতি, সময়।
দু’শ হতে কয়েক
হাজার বছর।
জৈববস্তু, বিয়োজিত, উদ্ভিদ ও
প্রাণীদেহের পচনশীল
ধ্বংসাবশেষ।

পচনশীল ধ্বংসাবশেষ। আর্দ্র-উষ্ণ অঞ্চলের মৃত্তিকার উপরের স্তরে তীব্র অনুজীব ও জৈব কার্যাবলীর
ফলে সাধারণত: ‘জৈব পদার্থ' সঞ্চিত হয় না। মৃত্তিকার উপরের স্তরের মাধ্যমে পানি চুয়ানী বৃদ্ধি
পেলে মৃত্তিকার সামান্য পরিমাণ জৈব এসিড দ্রবীভ‚ত হয়। এ এসিডই নিচের দিকে গিয়ে মৃত্তিকার
‘ক' ও ‘খ' স্তর গঠনে সহায়তা করে (চিত্র ৩.৯.১ দেখুন)।
২. চুয়ীসরণ ও চুয়ীক্ষেপন (ঊষাঁরধঃরড়হ ধহফ ওষষাঁরধঃরড়হ) ঃ যে প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকার উপরের স্তর
হতে বিভিন্ন দ্রব্য অনুস্রবণের মাধ্যমে নি¤œস্তরে চলে যায় তাকে চুয়ীসরণ বলে। যে স্তর হতে বিভিন্ন
দ্রব্য অপসারিত হয় তাকে চুয়ীক্ষেপন (ঊষাঁরধষ) স্তর বলে। এটাই ‘ক' স্তর। চুয়ানো দ্রব্যসমূহ যে
স্তরে গিয়ে জমা হয় তাকে চুয়ানো স্তর বা ‘খ' স্তর বলে। ভৌত চুয়ীক্ষেপনের ফলে উপরের স্তর
হতে নিচের স্তরে ক্ষুদ্রাকার কঠিন কণাসমূহ জমা হলে উপরের স্তর কিছুটা বেলে-প্রধান হয়ে ওঠে।
কিন্তুরাসায়নিক চুয়ীকরণের ফলে প্রধানত: জৈব পদার্থ, সিলসিক এসিড, লবণ, বিনিময়যোগ্য
ক্ষারক, সোদক ফেরিক অক্সাইড ইত্যাদি নি¤œস্তরে সঞ্চিত হয়। চুয়ীসরনে অপসারিত রাসায়নিক
পদার্থের দ্বারা মৃত্তিকার গুণাবলী স্থির করা হয়।
৩. পড্জলীকরণ (চড়ফুড়ষরুধঃরড়হ) ঃ এটি এক প্রকার চুয়ীসরন প্রক্রিয়া। উপরের স্তরের
জৈবপদার্থ পঁচে প্রচুর জৈব এসিড তৈরি হয়। এ জৈব এসিড উপরের স্তরে বিদ্যমান লৌহ,
এ্যালুমিনিয়াম, খনিজ দ্রব্য দ্রবীভ‚ত করে নিচের স্তরে জমা হয়। এই প্রক্রিয়াকে পড্জলীকরণ বলে
জঙলময় বৃষ্টি বহুল অঞ্চলে মাটি গঠনের এ প্রক্রিয়া বেশি দেখা যায়।
৪. লেটারীকরণ (খধঃবৎরুধঃরড়হ) ঃ এ প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকার সিলিকা প্রধান কর্দম দ্রবীভ‚ত হয়ে নিচের
স্তরে চলে যায়। উপরের ‘ক' স্তরে কেবলমাত্র লৌহ ও এ্যালুমিনিয়াম বিদ্যমান থাকে এবং তারা
লালচে বর্ণের গুটি তৈরি করে। পরিমিত আর্দ্রতার উপস্থিতিতে অধিক তাপমাত্রা ও উৎস শিলার
তীব্র বিয়োজন সংঘটিত হলে এ প্রক্রিয়া অধিক কার্যকর হয়।
৫. কেলসিকরণ (ঈধষপরভরপধঃরড়হ) ঃ এ প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকার বিভিন্ন স্তরে চুন জাতীয় পদার্থ জমা
হয়। প্রাকৃতিক ও ভ‚তাত্তি¡ক পদার্থ হতে প্রাপ্ত ঝিনুক, শামুক, চুনাপাথর, ডলোমাইট ইত্যাদি ক্ষয়
হয়ে মৃত্তিকাতে চুনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। জলবায়ুচূনীকরণ প্রক্রিয়া সংঘটনে সাহায্য করে। এই
প্রক্রিয়ায় চুনা মৃত্তিকা তৈরি হয়।
মৃত্তিকা গঠনের বিভিন্ন প্রক্রিয়াগুলো কি কি।
মৃত্তিকার পার্শ্বচিত্র (ঝড়রষ চৎড়ভরষব)
নৈসর্গিক, রাসায়নিক এবং জৈবিক পদ্ধতির ফলে সম্পূর্ণরূপে গঠিত এবং অনালোড়িত মৃত্তিকায়
বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কতিপয় স্তর দেখতে পাওয়া যায়। এ স্তর বিন্যাসকে
মৃত্তিকার পার্শ্বচিত্র বলে। মৃত্তিকার উর্ধ্ব ভ‚মি অক্ষ বরাবর উপর স্তর হতে নি¤œস্তরের উৎস দ্রব্য পর্যন্ত
কেটে ছেদ করলে স্তর বিন্যাস দেখতে পাওয়া যায়।
চুয়ীক্ষেপন,
বিনিময়যোগ্য ক্ষারক,
সোদক ফেরিক
অক্সাইড।
চুয়ীসরণ প্রক্রিয়া।
সিলিকা প্রধান কর্দম।
চুন জাতীয় পদার্থ জমা হয়।
প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক
বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্তর।

চিত্র ৩.৯.১ : মৃত্তিকার পার্শ্বচিত্র
ক-স্তর: মৃত্তিকার উপরের স্তরকে ‘ক' স্তর বলে। এই স্তরে প্রচুর জৈব পদার্থ থাকে বলে এই স্তর
খুব উর্বর। এই স্তর সাধারণত: ২৫.৪Ñ৫০.৮ সে.মি. পুরু হয়।
খ-স্তর: ‘ক' স্তরের নিচের স্তরই খ-স্তর। এখানে জৈব পদার্থ থাকে, এই স্তর কৃষ্ণ বর্ণের হয়।
এতে পানি কম থাকে।
গ-স্তর: একে তৃতীয় স্তর বলে। এতে কাঁদা বেশি এবং প্রথম স্তর অপেক্ষা অধিক আর্দ্র। এতে
খনিজের পরিমাণ বেশি থাকে।
ঘ-স্তর: এ স্তরে অল্প বিকৃত শিলা থাকে। এবং এটি উদ্ভিদের বিশেষ কোন কাজে লাগে না।
ঙ-স্তর: এই সর্বশেষ স্তরের মৃত্তিকা কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত।
কোন স্তর সর্বাপেক্ষা উর্বর এবং কেন?
মৃত্তিকার সংরক্ষণ (ঝড়রষ ঈড়হংবৎাধঃরড়হ)
মৃত্তিকা মানুষের একটি মৌলিক সম্পদ। মৃত্তিকার গুণাগুণের উপর দেশের কৃষিকার্যের উন্নতি
নির্ভরশীল। তাই এ মৌলিক সম্পদকে সযতেœ রক্ষা করা একান্ত কর্তব্য। বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ,
হিমবাহ, মানবক‚ল দ্বারা যাতে মৃত্তিকা স্থানান্তরিত হতে না পারে এবং মৃত্তিকার উর্বরা শক্তি যাতে
সর্বদা ঠিক থাকে, এ উদ্দেশ্যে নি¤œলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। যেমনÑ
ক. অরণ্যরোপন (অভভড়ৎবংঃধঃরড়হ) ঃ বৃক্ষরোপন করে মৃত্তিকার ক্ষয়রোধ করা যায়।
খ. নিয়ন্ত্রিত পশুচারণ (ঈড়হঃৎড়ষষবফ এৎধুরহম) ঃ একই ভ‚মিতে পশুচারণ না করে পর্যায়ক্রমে
বিভিন্ন ভ‚মিতে পশুচারণ করলে মৃত্তিকা কম ক্ষয় হয়।
ক-স্তর : জৈব পদার্থ
খ-স্তর : কৃষ্ণবর্ণ,
গ-স্তর : কাঁদাবেশী
ঘ-স্তর : অল্পবিকৃত শিলা,
ঙ-স্তর : কঠিন শিলা।
মৌলিক সম্পদ, কৃষিকার্যের
উন্নতি।

গ. ঘাস লাগানো (ঞঁৎভরহম) ঃ ঘাস লাগিয়ে মৃত্তিকা ধৌতকরণ রোধ করা যায়।
ঘ. আবরণ শস্য রোপন (ঈড়াবৎ পৎড়ঢ়ং) ঃ মূল শস্য কাটার পর কলাই, ডাল, মটর ইত্যাদি
লাগালে মৃত্তিকা ক্ষয় কম হয়।
ঙ. বায়ুপ্রবাহ রোধক পর্দা (ডরহফ ংপৎববহ) ঃ এক্ষেত্রে ভ‚মির পাশ দিয়ে বৃক্ষরোপন করা হয়।
চ. উপযুক্ত ঢাল রক্ষা (গধরহঃধরহরহম ঢ়ৎড়ঢ়বৎ ংষড়ঢ়ব) ঃ রাস্তা বা বাঁধ নির্মাণ করার সময় উপযুক্ত
ঢাল রাখলে মৃত্তিকা কম ক্ষয় হয়।
ছ. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ (ঝপরবহঃরভরপ গবঃযড়ফ ড়ভ ঈঁষঃরাধঃরড়হ) ঃ এই উপায়ে চাষাবাদ
করলে মৃত্তিকা কম ক্ষয় হয়। এভাবে মৃত্তিকা রক্ষা করা সম্ভব।
পাঠ সংক্ষেপ
আজকের পাঠের মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর প্রাকৃতিক উৎসের মধ্যে অন্যতম মৃত্তিকা সম্পর্কে
একটি সাধারণ ধারণা পেলাম। মৃত্তিকা এমন একটি প্রাকৃতিক সম্পদ যার ওপর গোটা পৃথিবী
দাঁড়িয়ে আছে। এই মৃত্তিকার সৃষ্টি রহস্য, সৃষ্টির উপাদান, সৃষ্টির প্রক্রিয়া, মৃত্তিকার পার্শ্বচিত্র,
এছাড়াও মৃত্তিকার সংরক্ষণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটি ধারণা পাবার চেষ্টা করেছি।
মৃত্তিকা ভ‚-পৃষ্ঠের ওপর একটি আচ্ছাদন, শিলা হতে মৃত্তিকার উৎপত্তি। মৃত্তিকা গঠনে কিছু
উপাদান কাজ করে যেমন উৎস বস্তু, জলবায়ু, সজীব বস্তু, ভ‚-প্রকৃতি ও সময়। মৃত্তিকার গঠন
প্রক্রিয়া কতগুলো ধাপ মেনে চলে যেমন জৈবকরণ, চুয়ীসরন ও চুয়ীক্ষেপন, পডজলীকরণ,
লেটারীকরণ, কেলাসিকরণ। মৃত্তিকার গঠনে নৈসর্গিক, রাসায়নিক এবং জৈবিক পদ্ধতির ফলে
সম্পূর্ণরূপে গঠিত এক অনালোড়িত মৃত্তিকায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কিছু
স্তর দেখা যায়। এরাই মৃত্তিকার পার্শ্বচিত্র। এছাড়াও মৃত্তিকার যথাযথ সংরক্ষণ না হলে এই
অমূল্য সম্পদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কাজেই এর যথাযথ সংরক্ষণ প্রয়োজন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন ৩.৯
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
১. শূন্যস্থান পূরণ করুন
১.১ --------- বিজ্ঞানের সাথে অন্যান্য মৌলিক বিষয় যেমন পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন শাস্ত্র,
খনিজবিদ্যা, উদ্ভিদ বিজ্ঞান প্রভৃতির সাথে সম্পর্ক খুব গভীর।
১.২ -------- হতে মৃত্তিকার উৎপত্তি।
১.৩ মৃত্তিকার গঠন প্রক্রিয়া ও তার গুণাগুণ প্রধানত ------ গুণাগুণের ওপর নির্ভরশীল।
১.৪ মৃত্তিকার জৈব পদার্থের প্রধান উৎস ----- ও ------- এর পচনশীল ধ্বংসাবশেষ।
১.৫ যে স্তর হতে বিভিন্ন দ্রব্য অপসারিত হয় তাকে --------- স্তর বলে।
১.৬ যে প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকার বিভিন্ন স্তরে চুন জাতীয় পদার্থ জমা হয় তাকে ------ বলে।
অবণ্য রোপন, নিয়ন্ত্রিত
পশুচারণ, ঘাস লাগানো,
আবরণ শস্যরোপন, বায়ু
প্রকাহ রোধক পর্দা, উপযুক্ত
চাল রক্ষা, বৈজ্ঞানিক
চাষাবাদ।

২. সঠিক উত্তরটির পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন (সময় ৪ মিনিট)ঃ
২.১ মৃত্তিকা একটিÑ
ক. কৃত্রিম খ. মৌলিক গ. প্রাকৃতিক সম্পদ
২.২ মৃত্তিকার উপরে তৈরি করা হয়Ñ
ক. বাড়ি-ঘর খ. বিমান বন্দর গ. সবগুলি
২.৩ দেশের উন্নতি নির্ভর করেÑ
ক. মৃত্তিকার উর্বরাশক্তির উপর
খ. মৃত্তিকার ব্যবহার না করার উপর
গ. মৃত্তিকা প্রতিনিয়ত ক্ষয়ে যাবার উপর।
২.৪ মৃত্তিকা গঠনের উপাদান কোনটি?
ক. শিলা ও জলবায়ু খ. সময় ও সজীব বস্তু গ. উপরের সবগুলি
সংক্ষিপ্ত উত্তর দিন (সময় ৫ী২=১০ মিনিট)ঃ
১. মৃত্তিকার প্রয়োজনীয়তা কি?
২. কিভাবে মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়?
৩. মৃত্তিকার উর্বরাশক্তি বলতে কি বুঝেন?
৪. মৃত্তিকা গঠনের বিভিন্ন প্রক্রিয়াগুলো কি কি?
৫. মৃত্তিকার পার্শ্বচিত্র আঁকুন।
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১. মৃত্তিকা কি? মৃত্তিকা গঠনের উপাদান ও গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে লিখুন।
২. মৃত্তিকার পার্শ্বচিত্রের বর্ণনা দিন ও মৃত্তিকা সংরক্ষণ সম্পর্কে লিখুন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]