যে সব মানচিত্রে বিভিন্ন উপাত্তের বিন্যাস বা ঘনত্ব দেখান হয় সে মানচিত্রকে ক্লোরোপ্লেথ বা ছায়াপাত মানচিত্র বলে।
বিভিন্ন প্রকারের রেখা দ্বারা সৃষ্ট ছায়াপাত ব্যবহার করে এ ধরনের মানচিত্র তৈরী করা হয়। এক্ষত্রে উৎপাদনের প্রগাঢ়তা বা
ঘনত্বের ভিন্নতায় ছায়াপাতের প্রয়োগের ভিন্নতা হয়। এ পদ্ধতিতে বিভিন্ন ঘনত্বের জন্য ছায়া ঘনত্ব অনুসারে হালকা থেকে
গাঢ় করে দেখান হয়। কম ঘনত্ব অঞ্চলে হালকা ছায়া এবং উপাত্তের পরিমাণ বৃদ্ধিতে ঘনত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে ছায়া ক্রমশ
গাঢ় থেকে আরো অধিক গাঢ় করা হয়।
ছায়াপাত পদ্ধতি ব্যবহারের ক্ষেত্র ঃ
এ পদ্ধতির দ্বারা গড় বন্টনমূলক উপাত্ত প্রদর্শনী বিশেষ সুবিধাজনক। ছায়াপাত পদ্ধতি ব্যবহার করে জনসংখ্যার ঘনত্ব,
উৎপাদন ঘনত্ব, জনসংখ্যার পরিবর্তন, ভ‚মির ব্যবহার, মৃত্তিকার বন্টন, উদ্ভিদের বন্টন প্রভৃতি দেখান যায়।
ছায়াপাত অঙ্কন পদ্ধতি ঃ
ছায়াপাত বিন্যাসের সময় প্রশাসনিক বিভাগ (জেলা বা উপজেলা) অবলম্বন করতে হয়। কারণ উপাত্তগুলো প্রশাসনিক
বিভাগ অনুসারেই পাওয়া যায়। এ পদ্ধতিতে সমগ্র অঞ্চলটিকে কয়েকটি সুবিধাজনক এককে বিভক্ত করে প্রত্যেক এককের
জন্য আলাদা ছায়াপাত সূচক ব্যবহার করতে হয়। এ কাজের জন্য পছন্দমত পরিকল্পনা করে মানচিত্রের উপরের অংশ বা
যে কাগজে মানচিত্র অঙ্কন করা হয়েছে তার মানানসই কোন স্থানে এর সূচক বা সাংকেতিক চিহ্ন দেখাতে হয়। চিত্রঃ
ছায়াপাত মানচিত্র।
সুবিধা অসুবিধা ঃ ছায়াপাত পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। যেমনসুবিধাঃ
১. ছায়াপাতের সাহায্যে গড় বন্টনমূলক উপাত্ত প্রদর্শন খুবই সুবিধজনক।
২. বিভিন্ন উপাত্ত অত্যন্ত সুন্দর ও পরিষ্কারভাবে মানচিত্রে প্রদর্শন করা যায়।
৩. প্রশাসনিক বিভাগ অনুযায়ী ছায়াপাত করা হয় বলে এরূপ চিত্রের বৈশিষ্ট্য সহজেই বুঝা যায়।
৪. ছায়াপাত সূচক স্কেল প্রথমেই নির্বাচন করা হয় বলে এ পদ্ধতি ব্যবহারে কোন জটিলতা দেখা দেয় না।
অসুবিধাঃ
১. ছায়াপাত পদ্ধতি অভৌগোলিক। কারণ এতে রাজনৈতিক বিভাগ অনুসারে ছায়াপাত করা হয়। এতে ভৌগোলিক
এলাকার পরিবর্তে রাজনৈতিক এলাকার প্রধান্য বেশি প্রকাশ পায়। ফলে জনসংখ্যার ঘনত্বের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে
ঘনত্বের প্রকৃত অবস্থা নির্ণয় করা যায় না। আবার রাজনৈতিক অঞ্চলের সর্বত্র ঘনত্বের পরিমাণ সমান হয় না। ফলে
ছায়াপাত মানচিত্রে জনসংখ্যার ঘনত্বের আঞ্চলিক পার্থক্যের প্রকৃত রূপ প্রকাশ পায় না।
২. অঞ্চল ভিত্তিক ছায়াপাত করা হয় বলে এতে কোন স্থানের প্রকৃত ঘনত্ব বুঝা যায় না।
৩. ছায়াপাত করার সময় অধিক ধৈর্য্য ও একাগ্রতার প্রয়োজন হয়। আবার ছায়াপাত নির্বাচনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট যতœবান হতে
হয় যাতে ঘনত্বের ক্রমধারা বোঝা যায়।
ছায়াপাত পদ্ধতিঃ সমাধান ১
আজকের পাঠে ছায়াপাত পদ্ধতি ব্যবহার করে জনসংখ্যার বিস্তরণ ভিত্তিক মানচিত্র উপস্থাপন পদ্ধতি দেখব।
নিচের উপাত্তটির সাহায্যে ছায়াপাত পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশের মহিলা জনসংখ্যার বিস্তরণ দেখান হল।
: মানচিত্রে ভৌগোলিক উপাত্ত প্রদর্শনের বিভিন্ন পদ্ধতি পৃষ্ঠা - ৭৭
উপাত্তঃ
সারণি বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিস্তরণ ১৯৯১
জেলার নাম মহিলা
জনসংখ্যা %
জেলার নাম ঘনত্ব জেলার নাম ঘনত্ব
বান্দরবান ৪৪.১৭ খাগড়াছড়ি ৪৯.৯৯ রাঙ্গামাটি ৪৫.১৫
চট্টগ্রাম ৪৬.৭৭ কক্সবাজার ৪৭.৬৪ ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৪৯.১৩
কুমিল্লা ৪৯.৫০ চাঁদপুর ৪৯.৯৫ ফেনী ৪৯.৭২
লক্ষীপুর ৪৯.৬৯ নোয়াখালী ৫০.৪২ হবিগঞ্জ ৪৯.৩৪
মৌলভীবাজার ৪৯.৯৮ সুনামগঞ্জ ৪৮.৭৭ সিলেট ৪৮.৮২
ঢাকা ৪৪.৬৯ গাজীপুর ৪৭.৮৭ মানিকগঞ্জ ৪৯.৭০
মুন্সিগঞ্জ ৪৮.৬৫ নারায়ণগঞ্জ ৪৬.৪০ নরসিংদী ৪৮.২৪
ফরিদপুর ৪৮.৯০ রাজবাড়ী ৪৮.২৬ গোপালগঞ্জ ৪৯.৫৩
মাদারীপুর ৪৯.০২ শরিয়তপুর ৪৮.৫৯ জামালপুর ৪৮.৭২
শেরপুর ৪৮.৯৩ নওগাঁ ৪৮.৯৮ নাটোর ৪৭.৩৭
নবাবগঞ্জ ৪৮.৪২ রাজশাহী ৭৮৪ ময়মনসিংহ ৪৮.৯৫
কিশোরগঞ্জ ৪৯.১০ নেত্রকোনা ৪৮.৯৪ টাঙ্গাইল ৪৯.০৫
বরিশাল ৪৮.৮০ ঝালকাঠী ৪৯.৬৭ পিরোজপুর ৪৯.৫৮
ভোলা ৪৮.৩৭ পটুয়াখালী ৪৮.৫৬ বরগুনা ৪৯.৫৫
যশোর ৪৮.২৯ ঝিনাইদহ ৪৮.৪৮ মাগুরা ৪৮.৮৯
নড়াইল ৪৯.৩১ বাগেরহাট ৪৮.৭৭ খুলনা ৪৭.৫৫
মেহেরপুর ৪৮.৮৮ বগুড়া ৪৮.৮৬ জয়পুরহাট ৪৮.২৪
দিনাজপুর ৪৮.৩৭ ঠাকুরগাঁ ৪৮.৪৪ পঞ্চগড় ৪৮.৭৩
পাবনা ৪৮.৩১ সিরাজগঞ্জ ৪৮.৫৬ রংপুর ৪৮.৫৭
গাইবান্ধা ৪৯.৪৫ কুড়িগ্রাম ৪৯.৬৮ লালমনিরহাট ৪৮.৬০
নীলফামারী ৪৮.৬০ চুয়াডাঙ্গা ৪৮.৪৫ কুষ্টিয়া ৪৮.৩৪
সাতক্ষীরা ৪৯.১৪
অঙ্কন পদ্ধতিঃ
ছায়াপাতের সাহায্যে মহিলা জনসংখ্যার বিস্তরণ দেখাতে প্রথমে সর্বনি¤œ ও সর্বোচ্চ বিস্তরণ বের করতে হবে। এরপর
সুবিধামত শ্রেণীতে ভাগ করতে হবে। যেমন: এই উপাত্তের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক মহিলা নোয়াখালী জেলায়
৫০.৪২ দেখা যাচ্ছে এবং সবচেয়ে কম মহিলা বান্দরবান জেলায় ৪৪.১৭ দেখা যাচ্ছে। কাজেই ৪৪.১৭ থেকে ৫০ এর
মধ্যে উপযোগী শ্রেণীগুলো করতে হবে। যেমনঃ ৪৪-৪৫, ৪৫.১-৪৬, ৪৬.১-৪৭, ৪৭.১-৪৮, ৪৮.১-৪৯ এবং ৪৯.১-
৫০। এরপর উপরোক্ত শ্রেণীগুলোর প্রতিটির অন্তর্ভূক্ত জেলাগুলো বের করব। যেমন- ৪৪ থেকে ৪৫ শ্রেনীর মধ্যে যে
জেলাগুলো পড়ে সেগুলো খুজে বার করব। এভাবে একে একে সব শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত জেলাগুলো বের করে ফেলব।
পরবর্তী পর্যায়ে ছায়াগুলো ঠিক করব। যেমন- সবচেয়ে কম ঘনত্বের শ্রেণীটি কম ঘনত্বের ছায়াপাত এবং সবচেয়ে বেশী
ঘনত্বের বিস্তরণ উপস্থাপনকারী শ্রেণীটির ছায়াপাত সবচেয়ে ঘন বিস্তরণ হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে (চিত্র: ৩.৩.১)।
এভাবে এই ছায়াগুলো নির্দিষ্ট করে তৈরী করার পর মানচিত্রের যে সব অঞ্চলে যে সব ছায়ার প্রয়োজন হয় সেসব অঞ্চলে
ঐ নির্দিষ্ট ছায়াগুলো অঙ্কন করতে হয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন ৩.৩
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নঃ
১. শূন্যস্থান পূরণ করুন :
১.১. যে সব মানচিত্রে বিভিন্ন উপাত্তের------------- বা --------- দেখান হয় সে মানচিত্রকে ছায়াপাত মানচিত্র বলে।
১.২. কম ঘনত্ব অঞ্চলে---------- ছায়া ব্যবহার করা হয়।
১.৩. এ পদ্ধতির দ্বারা গড় -------------- উপাত্ত প্রদর্শনই বিশেষ সুবিধাজনক।
১.৪. ছায়াপাত বিন্যাসের সময় --------------- বিভাগ অবলম্বন করতে হয়।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নঃ
১. ছায়াপাত পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় এমন তিনটি ক্ষেত্র কি কি?
২. ছায়াপাত পদ্ধতির ক্ষেত্রে উপাত্তগুলো কি অনুসারে পাওয়া যায়?
রচনামূলক প্রশ্নঃ
১. ছায়াপাত পদ্ধতি কি? এই পদ্ধতি কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়?
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ