প্রাক্-পুঁজিবাদী সমাজ বলতে কী বোঝায়? শিকারী-সংগ্রহকারী সমাজের মৌলিক বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

আগের পাঠ থেকে আপনারা জানেন নৃবিজ্ঞানে আর্থব্যবস্থা বলতে কি বোঝানো হয়ে থাকে। এখানে মুখ্য
বিষয় হচ্ছে বিভিন্ন সমাজের উৎপাদন, বণ্টন এবং ভোগের আলোচনা করা। এগুলোর ভিত্তিতে নানান
সমাজের আর্থব্যবস্থা ভিন্ন হয়ে থাকে। অর্থাৎ, নানান সমাজে উৎপাদন করবার উপায়, বণ্টনের নিয়ম
এবং ভোগের ধরন এক ও অভিন্ন নয় Ñ এই চিন্তাই নৃবিজ্ঞানীদের উৎসাহিত করেছে আর্থব্যবস্থা অধ্যয়ন
করতে। কিন্তু এখানে আবারও খেয়াল রাখা দরকার যে, প্রাথমিকভাবে ইউরোপীয় নৃবিজ্ঞানীরাই বিশ্বের
বিভিন্ন অঞ্চলে গবেষণা করতে গেছেন। আর তাঁদের চিন্তায় ইউরোপের ব্যবস্থাই স্বাভাবিক ছিল। যে
সময়কালে এই সকল নৃবিজ্ঞানীরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেগেছেন সেই সময়কালে ইউরোপের আর্থব্যবস্থা
গভীরভাবে পুঁজিবাদী বৈশিষ্ট্যের ছিল। এবং নৃবিজ্ঞানীরা সেটাকেই সকল সমাজের জন্য স্বাভাবিক মনে
করেছেন। ফলে অপরাপর যে সকল আর্থব্যবস্থা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত ছিল সেগুলোকে কিভাবে
আলোচনা করা যাবে সেটা একটা গভীর মনোযোগের বিষয় হিসেবে দেখা দেয়। এর ধারাবাহিকতায়
আমরা দেখতে পাই, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তেঅবস্থিত নানান আর্থব্যবস্থা নিয়ে তুলনামূলক আলাপআলোচনা গড়ে উঠতে। এ সকল ক্ষেত্রে নৃবিজ্ঞানীদের ভাবনা-চিন্তা নিছক একই রকম ছিল না। কিন্তু
সকল ক্ষেত্রেই পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থাকে স্বাভাবিক ও ‘এখন পর্যন্তসর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট’ ধরে নেয়া হয়েছে।
এটা আমরা নামকরণ থেকেই বুঝতে পারি। লক্ষ্য করে দেখুন, প্রাক্-পুঁজিবাদী আর্থব্যবস্থা বলার মধ্য
দিয়েই পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে কাম্য ও স্বাভাবিক হিসেবে দেখা হয়েছে।
নৃবিজ্ঞানীদের মধ্যে প্রাক্-পুঁজিবাদী আর্থব্যবস্থা পাঠ করবার ক্ষেত্রে দুটি ধারা লক্ষ্য করা যায়। এই দুই
ধারার মধ্যে অমিলের মতো মিলও প্রচুর Ñ সে কথা আগের আলোচনাতেই পরিষ্কার। একটি ধারা
অনুযায়ী প্রকৃতি, পরিবেশ এবং সেই অনুযায়ী প্রযুক্তির ভেদে আর্থব্যবস্থা ভিন্ন হয়ে থাকে। অর্থাৎ,
এখানে আর্থব্যবস্থার ভিন্নতার জন্য মূলত পরিবেশকে দায়ী করা হয়। কোন একটি অঞ্চলের পরিবেশের
ভিন্নতায় সেখানকার মানুষজন ভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং অবলম্বন করে থাকেন, ফলে সেখানে
আর্থব্যবস্থা অন্য অঞ্চলের চেয়ে ভিন্ন হয়ে থাকে Ñ এই হচ্ছে মূল যুক্তি। এই ধারাকে মোটামুটি
পরিবেশকেন্দ্রিক ক্রিয়াবাদী ধারা বলা যেতে পারে। অন্য ধারাতে মূল যুক্তি হচ্ছে: মানুষের মধ্যে বিভিন্ন
সমাজে বিভিন্ন আর্থব্যবস্থা চালু থাকলেও সেগুলো কালক্রমে বদলাতে থাকে। একটি ব্যবস্থা থেকে আর
একটি ব্যবস্থা উৎকৃষ্ট এবং সেই উৎকৃষ্ট ব্যবস্থার দিকে আর্থব্যবস্থা যেতে থাকে। এই ধারাকে বিবর্তনবাদী
ধারা বলা যেতে পারে। নৃবিজ্ঞানীদের মধ্যে অনেকেই অনুসারী প্রথম ধারার। কিন্তু একটা বিষয় খেয়াল
রাখা দরকার যে, এই দুই ধারার একটা প্রধান মিল হচ্ছে উভয় ক্ষেত্রেই আর্থব্যবস্থা বিবেচনা করার সময়
সমাজে খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পরিবেশ ও প্রযুক্তিকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে
কয়েকটি ভাগে আর্থব্যবস্থাকে ভাগ করা হয়েছে। এই ভাগগুলি বিবর্তনবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করে
থাকে। অর্থাৎ, ধরে নেয়া হয় কোন একটি আর্থব্যবস্থা কালক্রমে অন্য আর্থব্যবস্থার দিকে ধাবিত হয়।

শিকারী-সংগ্রহকারী সমাজ
এই সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে খাদ্য সংগ্রহের জন্য শিকার ও সংগ্রহের উপর ভরসা করা হয়ে
থাকে। নৃবিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে এটা পরিষ্কার যে, পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে অধিক সময় ধরে এই
ধরনের আর্থব্যবস্থা ছিল বলে নৃবিজ্ঞানীরা অভিমত দিয়েছেন। তাঁদের মতে ইতিহাসের ৯৯% সময় কাল
ধরে খাদ্য সংগ্রহের এই ধরনের ব্যবস্থা ছিল। নৃবিজ্ঞানী লী এবং ডেভোর ১৯৬৮ সালে মত প্রকাশ
করেছেন যে বেঁচে থাকার জন্য মানুষের আবিষ্কারের মধ্যে শিকার-সংগ্রহ প্রণালী পরিবেশের সাথে খাপ
খাওয়ানোর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী পদ্ধতি। কারণ, পরিবেশের বিপর্যয় কিংবা যুদ্ধবিগ্রহে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার
মত নানাবিধ অনিশ্চয়তা আছে কৃষিভিত্তিক এবং শিল্পভিত্তিক সমাজের ক্ষেত্রে। এখানে একটা বিষয়ে
সতর্কতার দরকার আছে। যদিও কিছু নৃবিজ্ঞানী খুবই গুরুত্বের সাথে শিকার-সংগ্রহ সমাজ নিয়ে কাজ
করেছেন, কিন্তু বর্তমান দুনিয়ার কোন শিকারী-সংগ্রহকারী সমাজের সঙ্গে প্রাচীন কালের শিকারীসংগ্রহকারী সমাজকে গুলিয়ে না ফেলা খুবই জরুরী। নৃবিজ্ঞানীরা স্পষ্ট করেই বলেছেন যে বর্তমান
কালের কোন শিকারী-সংগ্রহকারী দল কৃষিভিত্তিক মানুষজনের সাথে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন নেই, থাকতে
পারে না। একই সঙ্গে তাঁরা বলছেন, বর্তমান কালের শিকারী-সংগ্রহকারী সমাজের তথ্য দিয়ে
প্রাগৈতিহাসিক সমাজের কোনও প্রমাণ হাজির করা ঠিক নয়।

একটা সময়ে এই ধরনের সমাজকে কেবল শিকারী সমাজ বলা হ’ত। পরবর্তী কালে নৃবিজ্ঞানীরা
অনেকেই পরিষ্কার করে বলেছেন, যে সকল সমাজে শিকার খাদ্য যোগাড়ের একটা প্রধান বৈশিষ্ট্য সে
সকল সমাজে একই সাথে সংগ্রহ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এর মানে হ’ল: কেবলমাত্র পশু-পাখি
শিকার করে প্রয়োজনীয় খাদ্য যোগাড় হয় না, ফলমূলও সংগ্রহ করতে হয়। বরং, কেবলমাত্র শিকারী
সমাজ বললে নারীদের শ্রমকে গুরুত্বহীন করে ফেলা হয়। কারণ, এরকম সমাজে এই নজির খুবই
স্পষ্টভাবে পাওয়া গেছে যে, নারীরা সাধারণত ফলমূল সংগ্রহের কাজ করে থাকেন। খাদ্যের প্রধান
যোগান উদ্ভিজ্জ সংগ্রহের মধ্য দিয়েই আসে। সা¤প্রতিক কালের দুনিয়ায় শিকারী-সংগ্রহকারী সমাজের
জন্য প্রকৃতি-পরিবেশ খুবই সীমিত হয়ে এসেছে। নৃবিজ্ঞানী মারডক গত শতকের মাঝামাঝি সারা
পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা শিকারী-সংগ্রহকারী সমাজের একটা সম্ভাব্য তালিকা প্রকাশ করেন। তাতে দেখা
যায় Ñ ক) আফ্রিকা: বুশমেন, কোরোকা, পিগমি, পূর্ব আফ্রিকার শিকারী সমাজ, ইথিওপীয় শিকারী
সমাজ; খ) এশিয়া: সাইবেরীয় শিকারী সমাজ, ভারতীয় শিকারী সমাজ, ভেদ্দা শিকারী সমাজ, দক্ষিণপূর্ব এশীয় শিকারী সমাজ, নেগরিটো; গ) ওশেনিয়া: অস্ট্রেলীয় আদিবাসী; ঘ) উত্তর আমেরিকা:
এস্কিমো, উত্তর-পূর্ব এ্যালগোনকোয়ান্স, উত্তর-পশ্চিম আথাপাসকান্স, ল্লেটো ইন্ডিয়ান, ক্যালিফোর্নিয়া
ইন্ডিয়ান, গ্রেট বেসিন, গাল্ফ ইন্ডিয়ান, এ্যাপাচি, সেরি; ঙ) দক্ষিণ আমেরিকা: ওয়ারাউ, দক্ষিণ
ভেনেজুয়েলার গহীন আদিবাসী, আমাজনের শিকারী সমাজ, পূর্ব ব্রাজিলের শিকারী সমাজ ইত্যাদি।
সাধারণভাবে বিবর্তনবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে শিকারী-সংগ্রহকারী সমাজের সঙ্গে ব্যান্ড ব্যবস্থার সমাজ
মিলিয়ে দেখা হয়। কিন্তু এই হিসেবটা সব সময় অর্থবহ নয়। এই ধরনের সমাজে কি ধরনের স্বচ্ছলতা
ছিল তা বোঝা যায় নৃবিজ্ঞানী মার্শাল সাহলিন্সের একটা মন্তব্য থেকে। তিনি এই ধরনের সমাজকে
‘সত্যিকার সমৃদ্ধ সমাজ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এখানে একটা তর্ককে খেয়াল রাখা দরকার। অনেক
নৃবিজ্ঞানীই শিকারী-সংগ্রহকারী সমাজকে দুর্দশাগ্রস্তএবং প্রকৃতির বৈরিতার সম্মুখীন কার্টুন
হিসেবে দেখিয়েছেন। কিন্তু পৃথিবীতে কৃষিব্যবস্থার বিস্তারের পর প্রকৃতির উৎকৃষ্ট অংশ এই ব্যবস্থার
অধীন হয়ে গেছে। ফলে নৃবিজ্ঞানীরা এমন একটা পরিস্থিতিতে শিকারী-সংগ্রহকারী সমাজও আবিষ্কার,
করেছেন যখন প্রকৃতির চমৎকার জায়গাগুলো আর তাঁদের আয়ত্তে নেই, তাঁরা কোণঠাসা হয়ে
পড়েছেন। সাহলিনস বিভিন্ন রকম ঐতিহাসিক এবং জাতিতাত্তি¡ক তথ্য-উপাত্ত ঘাঁটাঘাঁটি করে যুক্তি দেন
যে, এই ধরনের সমাজের সদস্যরা তাঁদের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য খুবই অল্প সময় কাজ করে
থাকেন। ফলে তাঁদের জীবন যাপনে অনেকটা অবসর পেয়ে যান। তিনি আরও বলেন, শিকারীসংগ্রহকারী সমাজ প্রধানত যাযাবর ধরনের এবং এদের জীবনে খুব সামান্যই ব্যক্তিগত দখলী জিনিস
আছে। সাধারণভাবে ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণাই তেমন কাজ করে না। একই সাথে সঞ্চয় বা জমিয়ে
রাখারও বালাই নেই। এভাবে সাহলিনস মনে করেন এই সমাজগুলোই সত্যিকার সমৃদ্ধ সমাজ। বর্তমান
কালের শিকারী-সংগ্রহকারী সমাজের উপর যে সমস্তগবেষণা হয়েছে তাতে দেখা যায় আসলেই এ সকল
সমাজের মানুষজন খুবই অল্প সময় কাজ করে তাঁদের প্রয়োজন মিটিয়ে থাকেন। দৈনিক ২ থেকে ৪
ঘণ্টা তাঁরা কাজ করে থাকেন এবং বাড়তি যে খাদ্যের যোগান থাকে সেগুলো ধ্বংস করে থাকেন।
এখানে এ কথা মনে রাখারও প্রয়োজন আছে, বর্তমান কালের বহু শিকারী-সংগ্রহকারী সমাজ পরিবেশ
ও প্রকৃতির নিদারুণ চাপের মধ্যে আছেন। সেটা ঘটেছে কৃষিভিত্তিক সমাজ এবং রাষ্ট্রের চাপে। তবুও
সাহলিনসের ভাবনা-চিন্তা ও যুক্তির গুরুত্ব আছেই। পশুপালক সমাজ
পশুপালক সমাজ বলতে বোঝায় তাঁদের যাঁরা খাদ্য উৎপাদনের জন্য পশু পালনের উপর অতি মাত্রায়
নির্ভরশীল থাকেন। পালন করা এ সমস্তপশুর মধ্যে আছে গরু-মহিষ, ভেড়া, ছাগল, ঘোড়া, ইয়াক,
উট ইত্যাদি। যে সকল পশু একাধারে দুধ এবং মাংস সরবরাহ করতে পারে সেগুলোই পশুপালন সমাজে
প্রতিপালিত হয়। সাধারণভাবে নির্দিষ্ট পরিবেশের সঙ্গে পশুপালনের সম্পর্ক রয়েছে। যেমন, ঘাসী-জমি,
পাহাড়, মরুভূমি ইত্যাদি। অর্থাৎ, যে সমস্তএলাকাতে কৃষি বা উদ্যান-কৃষির কোন বন্দোবস্তকরা সম্ভব
হয় না। কিন্তুনৃবিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন যে, এই ধরনের খাদ্য-উৎপাদনের সমাজগুলো চলে ফিরে
বেড়াবার জন্য বিস্তর একটা এলাকা পেয়ে থাকে। তাছাড়া তাঁদের পোষ মানানো পশুর জন্য ঘাস
পাওয়ার ব্যবস্থা ঐ জমি থেকেই হয়। পোষা জীবজন্তুর যে নামগুলো বলা হ’ল তার প্রায় সবই পুরানো মার্শাল সাহলিন্স শিকারীসংগ্রহকারী সমাজকে ‘সত্যিকার সমৃদ্ধ সমাজ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।... বিভিন্ন রকম ঐতিহাসিক এবং জাতিতাত্তি¡ক তথ্য-উপাত্ত ঘাঁটাঘাঁটি করে যুক্তি দেন যে, এই ধরনের সমাজের সদস্যরা তাঁদের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য খুবই অল্প সময় কাজ করে থাকেন।
দুনিয়ার। নতুন দুনিয়া, মানে অতলান্তিক মহাসাগরের ওপারে (উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ)
তেমন কোন জন্তু পোষ মানাতে পারেনি মানুষ। ব্যতিক্রম হচ্ছে পেরুতে লামা এবং আলপাচা নামের
দুইটি প্রাণী। ফলে পশুপালন সমাজ পুরানো দুনিয়া থেকেই পাওয়া যায় বলে নৃবিজ্ঞানীদের কেউ কেউ
মনে করেছেন। পশুপালন সমাজের উল্লেখযোগ্য যে উদাহরণ পাওয়া যায় তা হচ্ছে: পূর্ব আফ্রিকা Ñ
গবাদিপশু বা গরু-মহিষ পালন করা হয়, উত্তর আফ্রিকা Ñ উট পালন করা হয়, দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া Ñ
ছাগল ও ভেড়া পালন করা হয়, মধ্য এশিয়া এবং উপ-সুমেরু এলাকায় (ংঁন ধৎপঃরপ) Ñ কারিবু এবং
বল্গা হরিণ পালন করা হয়। তবে এই হিসেব নিকাশের সময় খেয়াল রাখা প্রয়োজন নৃবিজ্ঞানীরা এ
সকল সমাজ-আবিষ্কার, করেছেন এমন একটা সময়কালে যখন ইউরোপে শিল্পভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত
হয়েছে। এই সব সমাজের উদাহরণ দিয়ে প্রাচীন কালের কোন সমাজকে বুঝতে চাওয়া ঠিক হবে না।
সতর্ক থাকা দরকার এই কারণে যে, অনেক নৃবিজ্ঞানীই শিকারী সমাজের পর পশুপালন সমাজকে একটা
বিবর্তনবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চেয়েছেন। অর্থাৎ তাঁরা মনে করেছেন যে, শিকারী-সংগ্রহকারী
সমাজ থেকে কৃষিভিত্তিক সমাজের দিকে রূপান্তরিত হবার পথে এই ধাপটি দেখা দিয়েছে।
পশুপালন সমাজ এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় বিচরণ করে থাকে যাকে আমরা যাযাবর সমাজ বলে
থাকি। তবে কোন কোন নৃবিজ্ঞানীর মতে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় যাবার ব্যাপারটা দুই
ভাবে ঘটে: স্থানান্তর এবং যাযাবরী। কোন পশুপালক সমাজ সারা বছর ধরে বিভিন্ন এলাকায় পশুর
দলকে চরিয়ে নিয়ে বেড়ালে তাকে স্থানান্তর বলা হয়। যে এলাকায় যখন ঘাসী জমি পাওয়া যায় সেখানে
পশুর দলকে নিয়ে যান তাঁরা। সাধারণত পুরুষেরা চরানোর কাজ করে থাকেন। পূর্ব আফ্রিকার মাসাই
জাতি এই ধরনের উদাহরণ। পক্ষান্তরে, যে সকল পশুপালক সমাজ সকল সদস্য, পালিত জন্তু-জানোয়ার
সমেত এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে বিচরণ করে থাকে তাদেরকে যাযাবর বলা হয়। পশ্চিম ইরানের দক্ষিণ জাগরোস পর্বতমালায় বাখতিয়ারি জাতি এরকম উদাহরণ।
উদ্যান-কৃষি সমাজ
কৃষিভিত্তিক সমাজ থেকে উদ্যান-কৃষি সমাজের মূল পার্থক্য হচ্ছে প্রযুক্তিতে। যদিও কখনো কখনো কৃষি
বলতে সাধারণভাবে যে কোন ধরনের চাষকেই বোঝায় Ñ এমনকি উদ্যান-কৃষিও, কিন্তু উদ্যান-কৃষিকে
কৃষিভিত্তিক সমাজ থেকে আলাদা রাখা হয়ে থাকে। উদ্যান-কৃষির বৈশিষ্ট্য হ’ল: এই ব্যবস্থায় কোন জমি
নিরন্তর কিংবা চিরস্থায়ী হিসেবে চাষাবাদে ব্যবহৃত হয় না। বরং, একবার চাষ হবার পর কিছুকাল তা
অনাবাদী বা পতিত জমি হিসেবে ফেলে রাখা হবে। নৃবিজ্ঞানীরা এই বৈশিষ্ট্যকে গুরুত্ব দিয়ে দেখেছেন।
ফলে উদ্যান-কৃষির আরেকটি নাম হচ্ছে বি¯তৃত কৃষি বা বীঃবহংরাব ধমৎরপঁষঃঁৎব। সেক্ষেত্রে
কৃষিভিত্তিক সমাজের নামকরণ করা হয় নিবিড় কৃষি বা রহঃবহংরাব ধমৎরপঁষঃঁৎব। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে
আরেকটি পার্থক্য জোর দিয়ে বলা হয়ে থাকে। এই ধরনের খাদ্য উৎপাদন সমাজগুলোতে চাষাবাদের
জন্য নিড়ানি এবং খোদন কাঠির মত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ, কৃষিভিত্তিক সমাজে
উৎপাদনের জন্য গৃহপালিত গবাদিপশু, সেচ কিংবা লাঙ্গলের উপর যে নির্ভরশীলতা তার থেকে এই সমাজ একেবারেই ভিন্ন।
সাধারণভাবে নিবিড় কৃষির তুলনায় এই ব্যবস্থায় জমি প্রতি ফসলের পরিমাণ কম হয়ে থাকে। কিন্তু এ
সকল সমাজের সদস্যদের খেয়ে পরে বাঁচার মত যথেষ্ট পরিমাণ খাবার তাঁরা উৎপাদন করেন বলে
নৃবিজ্ঞানীদের বক্তব্য। তাঁরা নিজেদের খেয়ে বাঁচার মত পরিমাণ খাদ্যই সাধারণত উৎপাদন করেন,
বাজারে বিক্রি করার মত বাড়তি উৎপাদন করেন না। ধারণা করা হয় যে, এ ধরনের সমাজে বর্গ মাইল
প্রতি ১৫০ জনের মত মানুষজন থাকেন। তবে নিউ গিনিতে মিষ্টি আলুর উৎপাদন দিয়ে বর্গ মাইল প্রতি
প্রায় ৫০০ লোকের খাদ্য সরবরাহ হয়ে থাকে। শুকনো এলাকায় এরকম সমাজের নজির পাওয়া গেছে,
যেমন: উত্তরপূর্ব আরিজোনার হোপি ইন্ডিয়ান। তবে গ্রীষ্মীয় বনভূমি অঞ্চলে এরকম সমাজ আরও বেশি
দৃষ্টিগোচর হয়। যেমন: দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, সাব-সাহারা আফ্রিকা, কিছু প্রশান্তমহাসাগরীয় দ্বীপ এবং এই ব্যবস্থায় কোন জমি নিরন্তর কিংবা চিরস্থায়ী হিসেবে চাষাবাদে ব্যবহৃত হয় না। বরং, একবার চাষ হবার পর কিছুকাল তা অনাবাদী বা পতিত জমি হিসেবে ফেলে রাখা হবে।
দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের আমাজন বেসিন। উদ্যান-কৃষিতে চাষের একটা ধরন হচ্ছে সুইডেন
(ংরিফফবহ) বা ¯ø্যাশ এন্ড বার্ন (ংষধংয ধহফ নঁৎহ) পদ্ধতি। কোন একটা ভূমিখন্ডের গাছ কেটে
পরিষ্কার করে ফেলা হয় এবং সেখানকার ঝোপঝাড়ে আগুন দেয়া হয়। পোড়া গাছগুলি জমিতে ফেলে
রাখা হয় যাতে রোদে জমি শুকিয়ে না যায়। এই ছাই সার হিসেবে কাজ করে এবং জমিতে প্রাণসঞ্চার
করে। এর পরে এখানে চাষ করা হয়। কোন জমিতে কয়েক বছর চাষাবাদ করার পর আবার কয়েক
বছর এইভাবে ফেলে রাখা হয়। বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় জুমচাষ নামে যে চাষাবাদ প্রচলিত
তাকেও এই ধরনের পদ্ধতি বলা হয়। একটা ব্যাপার মনে রাখা দরকার। তা হচ্ছে: এই ব্যবস্থায়
মানুষের শ্রম খুবই অল্প ব্যবহৃত হয়। উদ্যান-কৃষি ব্যবস্থা ক্রমাগত কমে আসছে দুনিয়া ব্যাপী কৃষির
বিস্তারের চাপে। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় পলিসি এবং ভূমির মুনাফাকেন্দ্রিক ব্যবহার জুমচাষকে বিলোপ
করছে।
নিবিড় কৃষি সমাজ এবং উৎপাদন ব্যবস্থায় বদল
কৃষিভিত্তিক সমাজকে অনেক সময়ে নিবিড় কৃষির সমাজও বলা হয়ে থাকে। এ ধরনের সমাজে কৃষিজ
প্রযুক্তি উদ্যান-কৃষির থেকে ভিন্ন। প্রধান পার্থক্য আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। নিবিড় কৃষিতে সেচ,
লাঙ্গল ব্যবহার করা হয় এবং চাষও হয় নিয়মিতভাবে যা উদ্যান-কৃষিতে হয় না। এছাড়া আরেকটা
বিরাট পার্থক্য হচ্ছে মানুষের প্রদত্ত শ্রমের ক্ষেত্রে। নিবিড় কৃষিতে মানুষের অনেক শ্রম দিতে হয়। এটা
ঠিক যে, প্রাক্-পুঁজিবাদী ব্যবস্থা হিসেবে অনেক সমাজেই কৃষির প্রচলন থাকতে পারে। কিন্তু, বর্তমান
পৃথিবীর পুঁজিবাদী প্রক্রিয়া লক্ষ্য করলে কৃষিকে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা হিসেবে দেখা যেতে পারে। নৃবিজ্ঞানীরা
অবশ্য এই প্রশ্নকে সামনে রেখে বিস্তর তর্ক করেছেন। তা হ’ল: কৃষির সঙ্গে পুঁজিবাদের সম্পর্ক কি?
অনেক নৃবিজ্ঞানীই মনে করেছেন যে কৃষিভিত্তিক আর্থব্যবস্থা একটা স্বতন্ত্র ব্যবস্থা; যেমন, ফার্থ, বেইলী,
পোল্যানয়ি প্রমুখ। এ ব্যাপারে আপনারা কৃষক আর্থব্যবস্থা পাঠে আলোচনা পাবেন। ফলে এখানে এই
ধরনের উৎপাদন ব্যবস্থার পরিচয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হচ্ছে না।
একটা কথা প্রায়ই বলা হয়ে থাকে যে, বর্তমান দুনিয়া হচ্ছে প্রযুক্তির দুনিয়া এবং প্রযুক্তি যত অর্জিত হয়
ততই মানুষের শ্রমের গুরুত্ব এবং প্রয়োজন কমে। শ্রমিকদের জীবনে এই কথাটার তেমন কোন অর্থ
নেই বিশেষত বর্তমান দুনিয়ার কৃষিজ শ্রমিক যাঁরা তাঁদের জীবনে। মার্শাল সাহলিনস এবং অন্যান্য
নৃবিজ্ঞানীদের কাজ থেকে এটা পরিষ্কার হয় যে, প্রাক-পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থায় মানুষের শ্রমের
প্রয়োজন পড়ে কম। তাছাড়া তাঁরা এও বলেছেন যে, এ ধরনের সমাজে পরিপূর্ণতা ছিল কিংবা আছে।
বর্তমান দুনিয়ার কৃষিতে নিয়োজিত মানুষজনের ফসল ফলাবার জন্য অনেক বেশি শ্রম দিতে হয়।
যেহেতু নিবিড় কৃষিতে ফসল ফলে গড়ে বেশি তাই এই শ্রম দেবার একটা অর্থ রয়েছে। কিন্তু এখানে
আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে কৃষিক্ষেত্রে শ্রম দিচ্ছেন যে সকল কৃষক-কিষাণী তাঁরা এই সকল উৎপাদিত
ফসলের কতটুকু হিস্যা পান। কিংবা উৎপাদন ব্যবস্থায় বদল আসাতে তাঁদের জীবনের মৌলিক বদল কি
ঘটেছে। এই কথা বিশেষত গরিব বিশ্বের কৃষকদের বেলায় আরও খাটে। বর্তমান দুনিয়ার উৎপাদন
ব্যবস্থার একটা বৈশিষ্ট্যের কথা আমাদের সকলেরই খেয়াল রাখা দরকার। যদিও কৃষির প্রধান বৈশিষ্ট্য
বলা হয়ে থাকে অপরাপর উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে এতে অন্নসংস্থান হয় বেশি, কিন্তু লাভজনক ফসল
ফলিয়ে মুনাফা অর্জনই বর্তমান কৃষিব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুনাফা অর্জনের এই হিসাব
নিকাশ কৃষকের হাতে থাকে না। বরং বৃহত্তর ব্যবস্থার মধ্যে মুনাফার ব্যাপারটা জড়িত থাকে। তাছাড়া,
শিল্পভিত্তিক সমাজের উৎপাদন ব্যবস্থা চালু রাখবার জন্য কৃষিব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল থাকতে হয়।
কৃষিভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা এখানে কাঁচামালের যোগান দিয়ে থাকে। এভাবে পুঁজিবাদী উৎপাদন
ব্যবস্থায় কৃষিক্ষেত্রে নিয়োজিত মানুষজনের শ্রম মজুরি শ্রমে পরিণত হয়। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শ্রমিকের
সকল শ্রম কিনে নেবার ব্যবস্থা থাকে। সেটা প্রাক্-পুঁজিবাদী সমাজে সম্ভব নয়। এই কারণেই প্রাক্-
পুঁজিবাদী আর্থব্যবস্থার তুলনায় পুঁজিবাদী সমাজের শ্রম ও শ্রমিককে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে বোঝা
প্রয়োজন। শ্রমের সাথে উৎপাদনের সম্পর্ক নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে ভেবেছেন মার্ক্সবাদী নৃবিজ্ঞানীরা অবশ্য এই প্রশ্নকে সামনে রেখে বিস্তর তর্ক করেছেন। তা হ’ল: কৃষির সঙ্গে পুঁজিবাদের সম্পর্ক কি? অনেক নৃবিজ্ঞানীই মনে করেছেন যে কৃষিভিত্তিক আর্থব্যবস্থা একটা স্বতন্ত্র ব্যবস্থা।
তাত্তি¡কেরা। নৃবিজ্ঞানেও তাঁদের একটা প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন সমাজের উৎপাদনের বৈশিষ্ট্য
নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা করবার জন্য উৎপাদন পদ্ধতি (সড়ফব ড়ভ ঢ়ৎড়ফঁপঃরড়হ) বলে একটা
ধারণা তাঁরা প্রয়োগ করেন। উৎপাদন পদ্ধতি বলতে কোন সমাজের প্রযুক্তি এবং অন্যান্য বস্তুগত
আয়োজন যেমন বোঝায়, তেমনি একই সাথে তা উৎপাদনকারী এবং ভোগকারীদের মধ্যকার সামাজিক সম্পর্কও বোঝায়।
সারাংশ
বিভিন্ন সমাজের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ে গবেষণা করেছেন নৃবিজ্ঞানীরা। উৎপাদনের ধরন দেখতে
গিয়ে সাধারণভাবে খাদ্য সংগ্রহের উপায়ের উপর জোর দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের অনেকের
চিন্তা-ভাবনার কেন্দ্রে রয়েছে: পুঁজিবাদী ব্যবস্থাই সবচেয়ে স্বাভাবিক এবং গ্রহণযোগ্য। এভাবেই পৃথিবীর
সকল উৎপাদন ব্যবস্থাকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন তাঁরা: প্রাক্-পুঁজিবাদী এবং পুঁজিবাদী। পৃথিবীর
বিভিন্ন অঞ্চলের আবহাওয়া, পরিবেশ এবং প্রযুক্তির কলা কৌশল ভিন্ন ভিন্ন উৎপাদনের ধরন সৃষ্টি
করেছে বলে কিছু নৃবিজ্ঞানী মনে করেছেন। সেই ভিত্তিতে ৪ ধরনের উৎপাদন ব্যবস্থা চিহ্নিত করা
হয়েছে: শিকারী-সংগ্রহকারী সমাজ, পশুপালক সমাজ, উদ্যান-কৃষি সমাজ এবং নিবিড় কৃষি সমাজ।
তবে সেক্ষেত্রেও ‘প্রাক্-পুঁজিবাদী’ লেবেল দেয়া হয়েছে সেই সমাজগুলোকে। তবে অনেক নৃবিজ্ঞানীরই
অভিমত হচ্ছে, বর্তমান দুনিয়ার কৃষি ব্যবস্থা পুঁজিবাদ এবং শিল্পভিত্তিক উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন -
১। নৃবিজ্ঞানী মার্শাল সাহলিন্স কোন ধরনের সমাজকে সত্যিকার সমৃদ্ধ সমাজ বলে আখ্যায়িত
করেছেন?
ক. পশুপালক সমাজ খ. উদ্যান-কৃষি সমাজ
গ. শিকারী-সংগ্রহকারী সমাজ ঘ. নিবিড় কৃষি সমাজ
২। মাসাই জাতি আফ্রিকার কোন অংশে বাস করে?
ক. পূর্ব আফ্রিকা খ. পশ্চিম আফ্রিকা
গ. উত্তর আফ্রিকা ঘ. দক্ষিন আফ্রিকা
৩। পশ্চিম ইরানের দক্ষিন জাগরোস পর্বতমালার বাখতিয়ার জাতি কোন সমাজের সাথে সম্পর্কিত?
ক. উদ্যান-কৃষি সমাজ খ. পশুপালক সমাজ
গ. নিবিড় কৃষি সমাজ ঘ. শিকার-সংগ্রহকারী সমাজ
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। প্রাক্-পুঁজিবাদী সমাজ বলতে কী বোঝায়?
২। শিকারী-সংগ্রহকারী সমাজের মৌলিক বৈশিষ্ট্য কী ছিল?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। উদ্যান-কৃষি এবং পশুপালন আর্থব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করুন।
২। প্রাক্-পুঁজিবাদী আর্থব্যবস্থার তুলনায় পুঁজিবাদী আর্থব্যবস্থায় শ্রমিকের গুরুত্ব ব্যাপক। এই বক্তব্যের
সাথে কী আপনি একমত? আপনার বক্তব্য তুলে ধরেন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]