বায়ুমন্ডল কাকে বলে?
বায়ুর প্রধান গঠন উপাদান সমূহ কি?


বায়ুমন্ডল
বায়ুমন্ডল পৃথিবীর অবিচ্ছেদ্য অংশ। পৃথিবীকে বেষ্টন করে যে বিশাল পুরুত্বের গ্যাসীয় আবরণ
রয়েছে সেটিই বায়ুমন্ডল। ভ‚পৃষ্ঠ থেকে ১০,০০০ কিলোমিটার উর্ধ্বাকাশব্যাপী বায়ুমন্ডল বিস্তৃত।
পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষন জনিত বলের প্রভাবে বায়ুমন্ডল ভ‚পৃষ্ঠের সাথে আবদ্ধ থাকে। বিজ্ঞানীদের মতে
বায়ুমন্ডলের বয়স ৩৫০ কোটি বছর, ভ‚-অভ্যন্তরের নির্গত গ্যাস থেকে এর সৃষ্টি বলে অনুমান করা
হয়। জীবজগৎ মূলত বায়ুমন্ডল (ঐুফৎড়ংঢ়যবৎব), বারিমন্ডল (খরঃযড়ংঢ়যবৎব) ও ভ‚ত্বকের সংযোগ
স্থলে অবস্থিত। বায়ু সমুদ্রের তলদেশেই প্রাণের উদ্ভব, সমুদ্র সমতলে বায়ুর ঘনত্ব সর্বাধিক,
উচ্চতার সাথে এর ঘনত্ব হ্রাস পায়। মাত্র ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে বায়ুমন্ডলের ৯০ শতাংশ
অবস্থান করছে।
বায়ুমন্ডলের সৃষ্টি (ঙৎরমরহ ড়ভ অঃসড়ংঢ়যবৎব)
পৃথিবীর জ¤েœর প্রাথমিক পর্যায়ে এটি একটি উত্তপ্ত গলিত শিলা পিন্ডের ন্যায় ছিল। ধীরে ধীরে
পৃষ্ঠদেশ শীতল ও কঠিনাকার ধারণ করলে অভ্যন্তরীন গলিত ম্যাগমা ফাটল দিয়ে উৎক্ষেপিত হতে
থাকে। এ সমস্ত অগ্নুৎপাতের রাসায়নিক ও ভৌত গঠন মোটামুটি বর্তমান সময়ের নির্গত লাভার
মতই ছিল বলে অনুমান করা যায়। ফলে, বায়ুমন্ডলও ঐ গ্যাসীয় উপাদানের মত ছিল বলে ধরে
নেওয়া হয়। বায়ুমন্ডলের তখনকার গ্যাসীয় উপাদান মাত্রা:
জলীয় বাস্প ৬০-৭০ শতাংশ
কার্বন-ডাই-অক্সাইড ১০-১৫ শতাংশ
নাইট্রোজেন ও সালফার যৌগ ৮-১০ শতাংশ
শীতলতার ফলে জলীয় বাস্পের এ বিশাল পরিমাণ মেঘে পরিনত হয়। এ সব মেঘ থেকে সৃষ্ট
বৃষ্টিপাত অতিউচ্চতাপমাত্রায় ভ‚ত্বকের কিম্বা তার কাছাকাছি আসার আগেই আবার বাস্পীভ‚ত হয়ে
যেত। দীর্ঘ দিনের এ অব্যাহত প্রক্রিয়ার ফলে পুরোমেঘের স্তর পৃথিবীর হাজার হাজার বছর
আচ্ছাদিত থাকে। পৃথিবী যখন যথেষ্ট শীতল হয় কেবল তখনই অবিশ্রান্ত বারিপাত শুরু হয় এবং
তা প্রায় ৪০,০০০ বছর ব্যাপী স্থায়ী ছিল বলে অনুমান করা হয়। বায়ুমন্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইড
(ঈঙ২
) এ বারিপাতের সাথে ভ‚পৃষ্ঠে পতিত হয়।
ভ‚তাত্তি¡কদের মতে, অক্সিজেনের আগমন হয়েছে অনেক পরে। অজৈব মহাযুগের (অৎপযধবড়ুড়রপ
ঊৎধ) শেষভাগে জৈব মহাযুগের (চযধহবৎড়ুড়রপ ঊৎধ) সূচনায় কিছুকিছুজীবের অস্তিত্ত¡ সমুদ্র বক্ষে
বায়ুমন্ডলীয় গ্যাসের উৎস, ভ‚-
অভ্যন্তর থেকে নির্গত গ্যাস।

ছিল যারা অক্সিজেন গ্রহণ করত না বরং অক্সিজেনের সংস্পর্শে মৃত্যু বরণ করত। এসব থেকে
অনুমান করা হয় যে ব্যাপক ভাবে অক্সিজেন তখন বাতাসে অনুপস্থিত ছিল। কার্বনিফেরাস যুগে
(ঈধৎনড়হরভবৎরড়ঁং চবৎরড়ফ) পৃথিবীতে বিশালায়তন বনভ‚মির অবস্থান ছিল বলে ধারণা করা হয়।
এর আগেই অক্সিজেনের উদ্ভব হয়েছে বলে ধারণা করা যায়। ব্যাপকভাবে বাতাসে অক্সিজেনের
উপস্থিতি ও পরিমাণগত আধিক্যের জন্য ঐ বিশালায়তনের বনভ‚মিই ভ‚মিকা রেখেছিল বলে মনে
হয়। তবে অক্সিজেনের আদি জ¤œ হয়েছে পৃথিবীর প্রাথমিক পর্যায়ের জলীয় বাস্প সূর্যালোকের অতি
বেগুনী রশ্মির সাহায্যে বিশ্লেষণের মাধ্যমে, অক্সিজেন পরমাণু(২ঐ২
০ = ২ঐ২

) থেকে এর অণুর
সৃষ্টি হয়। বিজ্ঞানীগণ মনে করেন বিগত ২০০ কোটি বছর অক্সিজেনের পরিমাণ সামান্য বৃদ্ধি ছাড়া
বায়ুমন্ডলের তেমন পরিবর্তন হয়নি।
বায়ুমন্ডলের গুরুত্ব (ওসঢ়ড়ৎঃধহপব ড়ভ অঃসড়ংঢ়যবৎব)
বায়ুমন্ডলের দুটি মূলস্তর রয়েছে যথা- সমস্তর (ঐড়সড়ংঢ়যবৎব) ও অসম স্তর (ঐবঃবৎড়ংঢ়যবৎব)।
সমস্তরের উপাদান সমূহ প্রায় একই রকম থাকে। ফলে প্রাণের অস্তিত্তে¡র জন্য ঐড়সড়ংঢ়যবৎব
গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখে। অন্যদিকে ঐবঃবৎড়ংঢ়যবৎব মহাবিশ্বের ক্ষতিকর রশ্মি সমূহ থেকে পৃথিবীকে
এক ধরনের আচ্ছাদন দিয়ে আগলে রাখে। সমস্তর ও অসমস্তরের মধ্যরেখা প্রায় ৮০ থেকে ১০০
কিলোমিটার উচ্চতার বলে ধরা হয়।
ঐড়সড়ংঢ়যবৎব এ স্থানভেদে বিভিন্ন উপাদানগত (উষ্ণতা, আর্দ্রতা) তারতম্য জীবের কর্মকান্ডকে
বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। বায়ুমন্ডলীয় উপাদানের সামান্য পরিবর্তন জীবের অস্তিত্তে¡র জন্য হুমকি
স্বরূপ। পরিবেশীয় সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে বিগত কয়েক দশকে পানি ও মাটির সঙ্গে
বায়ুমন্ডল ও ব্যাপকভাবে দূষিত হয়েছে। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, কারখানার বিষাক্ত গ্যাস নির্গমন ও
ধোয়া, প্রাকৃতিক গ্যাসের অতিমাত্রায় ব্যবহার বায়ুমন্ডলকে দূষিত করে তুলেছে। বায়ুমন্ডলে কার্বন
ডাই অক্সাইড বৃদ্ধির ফলে উষ্ণতা বৃদ্ধি হচ্ছে। কার্বন যৌগ বায়ুস্তরের ওজোন স্তরকে ধ্বংস করে
ক্ষতিকর রশ্মি আগমনকে প্রতিহত করতে অক্ষম করে তুলছে, অন্যদিকে উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে মেরু
অঞ্চলের বরফাচ্ছাদন ও হিম শিখরের বরফ গলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কার ফলে,
সমুদ্রতলের স্ফিতি, ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছ¦াস, বন্যা, খরা (ঊ১ ঘরহড়-খধ-ঘরহড়) ইত্যাদির মত প্রাকৃতিক
দুর্যোগ সীমাহীন আকার ধারণ করতে পারে।
বায়ুর উপাদান (ঈড়সঢ়ড়ংরঃরড়হ ড়ভ অঃসড়ংঢ়যবৎব)
সমস্তরের (ঐড়সড়ংঢ়যবৎব) বায়ুর রাসায়নিক গঠন প্রায় একই রকম, বিভিন্ন গ্যাসীয় অবস্থা ও
পরিমাপ সাধারনত অপরিবর্তনীয় হয়। এ গঠনের মধ্যে থাকে নির্দিষ্ট কিছু গ্যাস (ঈড়হংঃধহঃ
মধংবং), অনির্দিষ্ট চলক গ্যাস (ঠধৎরধনষব মধংবং) এবং কিছুধূলিকণা (ওসঢ়ঁৎরঃরবং)।
বায়ুর গঠনের জন্য দুটি উপাদানই ৯৯ শতাংশ স্থান দখল করে আছে, নাইট্রোজেন ৭৮ ভাগ ও
অক্সিজেন ২১ ভাগ প্রায়। নিষ্ক্রিয় গ্যাস (অৎমড়হ) ও এ দুটি উপাদান কে নির্দিষ্ট গ্যাসের আওতায়
ধরা হয়। অনির্দিষ্ট বা চলক গ্যাস গুলির মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড, জলীয় বাস্প ও ওজোন
(ঙুড়হব) অন্যতম। অতি সামান্য মাত্রার হলেও এই গ্যাস সমূহ বায়ুমন্ডলের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রনে
বিশেষ ভ‚মিকা রাখে। ৩.১০.১ সারণিতে বায়ুমন্ডলের নি¤œ স্তরে এই উপাদান সমূহের আয়তনগত
বিন্যাস দেখানো হলো।
কার্বনিফেরাস যুগ, সূর্যের অতি
বেগুনী রশ্মি।
বায়ুমন্ডলের দুটি মূল স্তর :
সমস্তর ও অসমস্তর।
উষ্ণতা বৃদ্ধি, ওজোন স্তর।
বায়ুর প্রধান গঠন উপাদান
নাইট্রোজেন (৭৮%) এবং
অক্সিজেন (২১%)।

সারণি ৩.১০.১ : বায়ুস্থ বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদানের শতকরা হার (আয়তন অনুযায়ী)।
উপাদান আয়তন (%) স্বল্পমাত্রায় গ্যাসীয় উপাদান
নাইট্রোজেন (ঘ২
) ৭৮.০৮ নিয়ন (ঘব) ওজোন (ঙ৩
)
অক্সিজেন (ঙ২
) ২০.৯৫ হিলিয়াম (ঐব) সালফার ডাই অক্সাইড (ঝঙ২
)
আর্গন (অৎ) ০.৯৩ মিথেন (ঈঐ৪
) নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড (ঘঙ২
)
কার্বন ডাই অক্সাইড ০.০০৩ ক্রিপটন (কৎ) আয়াডিন (ও২
)
নাইট্রাস অক্সাইড (ঘ২ঙ) অ্যামোনিয়া (ঘঐ৪
)
হাইড্রোজেন (ঐ২
) কার্বন মনোক্সাইড (ঈঙ)
জেনন (ঢব)
ধ্রæব গ্যাস (ঈড়হংঃধহঃ এধংবং)
ধ্রæব গ্যাস অপরিবর্তনীয় এবং এটি ক্ষতিকর ও সক্রিয় নয়। বায়ুমন্ডলের নাইট্রোজেন অক্সিজেনের
দ্রাবক হিসাবে কাজ করে; এটি দ্বারা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার ক্রিয়ার পরিবর্তিত ও যৌগ গঠিত হয়, যা
খাদ্য উৎপাদন ও অঙ্গজ গঠনে উদ্ভিদক‚লে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখে।
বাতাসের অক্সিজেন সহজেই অন্য মৌলের সাথে যৌগ গঠন করে, ফলে এটিকে সক্রিয় বলে ধরা
হয়। আমাদের জীবন ধারণের জন্য অক্সিজেন অপরিহার্য। শ্বসনের মাধ্যমে গৃহীত অক্সিজেন দেহ
কোষে খাদ্য উপাদান বিশ্লেষন করে রক্তের মাধ্যমে শক্তি পরিবহনে সহায়ক ভ‚মিকা পালন করে।
এভাবে বিপাক ক্রিয়া সম্পাদনে অক্সিজেন ব্যবহৃত হয়। শক্তি উৎপাদনে জ্বালানীর প্রজ্বলনে ও
অক্সিজেন অপরিহার্য।
জ্বালানী গ্যাস তেল ইত্যাদি দ্রæত জারিত (ঙীরফরুবফ) হলেই শক্তির অবমুক্তি হয় এবং তা ব্যবহার
যোগ্য হয়। অন্যদিকে ধীর গতির জারন এ লোহা জাতীয় দ্রব্যে মরিচা (জঁংঃ) ধরে। কার্বন ও
হাইড্রোজেনের সাথে অক্সিজেন যৌগ গঠন করে যা জৈব গঠনের মূল একক।
নাইট্রোজেন ও অক্সিজেনর পরই বায়ুর উপাদান হচ্ছে নিষ্ক্রিয় গ্যাস। নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলির অন্যতম
হচ্ছে আর্গন, হিলিয়াম, নিয়ন, ক্রিপটন, জেনন ইত্যাদি। শুষ্ক অবস্থায় বায়ুতে এগুলোর মিশ্রণ
একটি মাত্র গ্যাসের মত আচরণ করে। কোন কোন নিষ্ক্রিয় গ্যাসের বাণিজ্যিক ভ‚মিকা থাকলে ও
এদের পরিবেশীয় গুরুত্ব কম।
অপরিবর্তনীয় এবং ক্ষতিকর।
শ্বসন, শক্তি পরিবহণ, বিপাক
ক্রিয়া।

অনির্দিষ্ট / চলক গ্যাস (ঠধৎরধনষব এধংবং)
স্বল্প মাত্রার উপস্থিতি হলেও চলক গ্যাসসমূহ বায়ুমন্ডলের অবস্থাও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য রক্ষায় বিশেষ
গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। মানুষের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় উপাদান হচ্ছে ১. কার্বন ডাই অক্সাইড,
২. জলীয় বাস্প বা বায়ুর আর্দ্রতা ও ৩. ওজোনস্তর।
১. কার্বন ডাই অক্সাইড (ঈঙ২
)
যদিও শুষ্ক বায়ুতে মাত্র ০.০০৩ শতাংশ থেকে ০.০৪ শতাংশ কার্বন ডাই-অক্সাইড থাকে তবুও এর
ভ‚মিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কার্বন ডাই অক্সাইড মূলত: দুটি বিশেষ কার্যে অবদান রাখেক. সালোক সংশ্লেষণ ও
খ. তাপশক্তি শোষণ।
সালোক সংশ্লেষণ উদ্ভিদ কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ ও ব্যবহার করে কার্বোহাইড্রেট
(ঈধৎনড়যুফৎধঃবং) গঠন করে যা জীবের কোষ কলা গঠন ও খাদ্য উৎপাদনে গøুকোজ তৈরী করে
সরবরাহ করে। সকল জীবের খাদ্য প্রকৃত পক্ষে এভাবেই তৈরী হয়।
পৃথিবীর কিছুবিকিরিত তাপ শক্তি তথা সৌর বিকিরণের তাপশক্তি শোষণ করে কার্বন ডাই
অক্সাইড বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা স্থিত রাখে, বর্তমানে এর মান প্রায় ১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস, জীবের
প্রাণ রক্ষায় যা বিশেষ ভাবে প্রযোজ্য।
কার্বন ডাই অক্সাইডের অন্যান্য ভ‚মিকার মধ্যে বিচুর্ণীভবন অন্যতম। চুনাপাথরের (খরসবংঃড়হব)
ক্ষয় ও ভ‚মিরূপ নিয়ন্ত্রনে এটি ভ‚মিকা রাখে। বায়ুতে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ১৯৬০
সালের পর দ্রæত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধির (এষড়নধষ ধিৎসরহম) ফলে মারাতœক অবস্থা সৃষ্টি
হতে পারে।
২. বায়ুর আর্দ্রতা (ডধঃবৎ ঠধঢ়ড়ঁৎ)
বায়ুর আর্দ্রতা হচ্ছে বায়ুস্থ জলীয়বাস্প (ঐ২ঙ)। স্থান ভেদে জলীয়বাস্পের তারতম্য পরিলক্ষিত
হয়। মরুদেশে এর পরিমাণ মাত্র ০.০২ শতাংশ, অন্যদিকে নিরক্ষীয় আর্দ্র বা উষ্ণ সমুদ্র পৃষ্ঠে এর
পরিমাণ ৪ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। স্বল্প মাত্রার হলেও বায়ুমন্ডলের ভৌতিক অবস্থা নিয়ন্ত্রনে এটি
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জলীয়বাস্প জলবায়ুও আবহাওয়াকে নি¤œলিখিত উপায়ে প্রভাবিত করে।
ক. জলীয়বাস্প বায়ুমন্ডলের একমাত্র উপাদান যা স্বাভাবিক বায়ুমন্ডলীয় তাপমাত্রায় ঘনীভ‚ত হয়।
জলীয়বাস্প সবধরনের ঘনীভবন (ঈড়হফবহংধঃরড়হ) ও বারিপাতের (চৎবপরঢ়রঃধঃরড়হ) একমাত্র
উৎস। জলীয় বাস্পের তাপমাত্রা ও ধরনের উপর নির্ভর করে বারিপাতের ধরন (বৃষ্টিপাত, তুষার,
শৈলপাত) ও পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত হয়।
খ. সূর্যালোকের বিকিরণ শক্তি শোষণ করে এটি একটি তাপীয় আচ্ছাদন হিসাবে কাজ করে, বায়ু
প্রবাহের ফলে এ তাপ পৃথিবীব্যাপী বন্টনেও কার্যকরী অবদান রাখে, ফলে সহনীয় তাপমাত্রা
জীবজগতকে রক্ষা করে।
গ. সুপ্ত তাপ ও সঞ্চিত শক্তির উৎস হিসাবে জলীয় বাস্প অনন্য। পানির বাস্পীভবনের লীনতাপ
৬০৭ ক্যালরী অন্যদিকে ঘনীভবন/বিগলনের লীনতাপ ৭৯ ক্যালরী। বাস্পীভবনের ফলে লীনতাপটি
স্থিতিশক্তি অবমুক্ত করে। ফলে বায়ুমন্ডলের ঘুর্ণিঝড়, টর্নেডো, বজ্রপাত কিম্বা প্রবাহের মূল উৎস
হচ্ছে বাস্পীয় স্থিতিশক্তি। বায়ুমন্ডলের পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া ও চরিত্র মূলত: জলীয় বাস্পই নিয়ন্ত্রন
করে। বায়ুমন্ডলের জলীয় বাস্পের শতকরা ৫০ ভাগই থাকে মাত্র দুই কিলোমিটার উচ্চতার মধ্যে।
নিষ্ক্রিয় গ্যাস।
চলক গ্যাস, কার্বন-ডাইঅক্সাইড, জলীয় বাষ্প ও
ওজোন স্তর।
মরু এলাকায় বায়ুর আর্দ্রতা
সর্বনি¤œ (০.২%) এবং
নিরক্ষীয় এলাকায় এর
পরিমাণ সর্বোচ্চ (৪%)
জলীয় বাষ্প, সূয্যালোকের
বিকিরণ শক্তি, সুপ্ততাপ ও
সঞ্চিত শক্তি।
এস.এস.এইচ.এল বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি পৃষ্ঠা # ১০৭
৩. ওজোন স্তর (ঙুড়হব)
অক্সিজেন অণুর (ঙ২
) গঠনের সদৃশ হলেও ওজোন তিনটি অক্সিজেন পরমাণুনিয়ে গঠিত হয়।
ওজোন বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তর নামক স্তরে বিন্যস্ত থাকে। এ স্তরটি ভ‚পৃষ্ঠ থেকে ১৫ থেকে ৫০
কিলোমিটার উচ্চতার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে বেশীর ভাগ ওজোনই ২০-২৫ কিলোমিটার উচ্চতায়
পাওয়া যায়।
বায়ুমন্ডল এ উচ্চতায় বা তারও উপরে সূর্যের অতিবেগুনী (টষঃৎধ ারড়ষবঃ) রশ্মি শোষনের ফলে
অক্সিজেন অণু(ঙ২
) ভেঙ্গে যায়। এ অবস্থায় একটি অক্সিজেন পরমাণুঅন্য একটি নিরপেক্ষ অণুর
উপস্থিতিতে অক্সিজেন অণুর সাথে মিলিত হয়ে ওজোন (ঙ৩
) গঠন করে। ওজোনের পরিমাণ
বায়ুমন্ডলে খুবই কম মাত্রায় (০.০০০১ শতাংশ) পাওয়া যায়।
বায়ুস্থ ওজোন স্তর জীব জগতের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় বিষয়। কারণ সূর্যের থেকে অতিবেগুনী
রশ্মির বেশীর ভাগই ওজোন স্তরে শোষিত হয়। অতি বেগুনী রশ্মি জীবদেহের জন্য ক্ষতিকর,
ক্যান্সার ও বিবিধ রোগের সৃষ্টি করে এটি জৈব জগতকে ধ্বংস করে দিতে পারে। ওজোন স্তর ধ্বংস
হয় প্রধানত প্রাকৃতিক ভাবে উৎপাদিত নাইট্রিক অক্সাইড (ঘঙ) (দ্বারা ৫০-৭০%); মুক্ত অক্সিজেন
পরমাণুওজোনের সাথে মিশে অক্সিজেন তৈরী করে (১৮% উৎপাদিত ওজোন), ক্লোরিনের সাথে
মিশে (১১%) এবং অন্যান্য ভাবে (২০%)।
অন্যান্য চলক গ্যাস (ঙঃযবৎ ঠধৎরধনষব এধংবং)
বাতাসের অন্যান্য স্বল্পমাত্রার উপাদানগুলির মধ্যে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, সালফার ডাই অক্সাইড,
নাইট্রোজেন অক্সাইড, এ্যামোনিয়া, মিথেন ও কার্বন মনোক্সাইড অন্যতম। এগুলো মিলিয়নের এক
ভাগ বা তার বেশী হলে ক্ষতিকর হয়।
ধূলিকণা (ওসঢ়ঁৎরঃরবং)
বায়ুমন্ডলের নি¤œ স্তরে প্রচুর ধূলিকণা বিদ্যমান থাকে। শিল্প বা নগর এলাকায় ধূলিকণার পরিমাণ
অনেক বেশী হয়, আবার অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বাতাসে প্রচুর ধুলিকণা মিশে যেতে পারে। বাতাসে
ধূলিকণা সাধারণত ভাসমান অবস্থায় কুয়াশা বা ধোঁয়া (অবৎড়ংড়ষং) আকারে থাকে।
বায়ুমন্ডলে ধূলিকণার বিভিন্ন ধরনের প্রভাব লক্ষ করা যায়।
১. সূর্যালোকের প্রতিফলন ও বিচ্ছুরন ঘটিয়ে স্বল্প তরঙ্গ দৈর্ঘের (ঝযড়ৎঃ ধিাব ষবহমঃয) আলো
ছড়িয়ে দেয়। এজন্য আকাশ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রং এ পরিলক্ষিত হয়। রং বৈচিত্রে কখনো
নীলচে আবার সূর্যাস্তের সময় লাল রং দৃষ্টি গ্রাহ্য হয়।
২. ধূলিকণায় অনেক সময় বৃষ্টিকণা জমে বৃষ্টিপাতে সাহায্য করে, কুয়াশা সৃষ্টি করে ও মেঘাচ্ছন্ন
পরিবেশ তৈরী করে।
৩. অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্ট ধূলিকণা এবং বৃহৎ নগরীর ধূলিকণা আকাশে ধোঁয়ার সষ্টি করলে
সূর্যালোকের স্বল্পতা হেতুস্থানীয় তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে।
ধূলিকণা (ওসঢ়ঁৎরঃরবং) এর মধ্যে ধোয়া, মাটির কণা, সমুদ্র ঢেউয়ের ভেঙ্গে পড়ায় সৃষ্ট লবন কণা,
নি¤œবায়ু স্তরে উদ্ভিদের পরাগ (চড়ষষবহ ধহফ ঝঢ়ড়ৎবং) এবং ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
একটি মেট্রোপলিটন এলাকায় বাতাসে প্রতি ঘন মিলিমিটারে ২০০টি কণা এবং শিল্পোন্নত এলাকায়
প্রায় ৪০০০ কণা থাকতে পারে। অতিরিক্ত ধুলিকণা পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
ওজোন স্তর ভ‚-পৃষ্ঠ থেকে ১৫
থেকে ৫০ কিলোমিটার
উচ্চতার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
জৈব জগত, নাইট্রিক
অক্সাইড, ক্লোরিন, অক্সিজেন।
কুয়াশা বা ধোঁয়া।
রং-এর বৈচিত্র, মেঘাচ্ছন্ন
পরবেশ, স্থানীয় তাপমাত্রার
হ্রাস।

বায়ুর প্রধান গ্যাসীয় উপাদান কি কি এবং এদের আয়তন কত?
পাঠসংক্ষেপ
ভ‚-অভ্যন্তরের নির্গত গ্যাস থেকে বায়ুমন্ডলের সৃষ্টি। সমস্তর ও অসমস্তর - এ দুই ধরনের স্তর
নিয়ে বায়ুমন্ডল গঠিত। সমস্তরে বায়ুমন্ডলের গঠন উপাদানে কোন তারতম্য থাকে না; যা
অসমস্তরে দেখা যায়। নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, আর্গন ও কার্বন ডাই অক্সাইড বায়ুমন্ডলের
প্রধান গ্যাসীয় উপাদান।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন ৩.১০
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
১. সঠিক উত্তরটির পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন (সময় ৪ মিনিট) ঃ
১.১ বায়ুমন্ডলের ৯০ শতাংশ অবস্থান করছে ভ‚ত্বক থেকে
ক. ৫ কি.মি
খ. ১৫ কি.মি
গ. ৩০ কি.মি.
ঘ. ১০০ কি.মি. এর মধ্যে
১.২ ওজোন স্তরকে ধ্বংস করে
ক. নাইট্রোজেন পার অক্সাইড
খ. নাইট্রিক এসিড
গ. জলীয় বাস্প
ঘ. কার্বন ডাই অক্সাইড
১.৩ বায়ুতে সবচেয়ে বেশী মাত্রায় আছে
ক. অক্সিজেন
খ. ধুলিকণা
গ. নাইট্রোজেন
ঘ. মেঘ
১.৪ ওজোন স্তর সবচেয়ে বেশী পাওয়া যায় যে উচ্চতায়
ক. ১০-১৫ কি.মি
খ. ১৫-২০ কি.মি.
গ. ১৫-৫০ কি.মি.

ঘ. ২০-২৫ কি.মি.
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (সময় ৪ মিনিট) ঃ
১. বায়ুমন্ডল কাকে বলে?
২. বায়ুর প্রধান গঠন উপাদান সমূহ কি?
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১. বায়ুমন্ডল কাকে বলে? কিভাবে বায়ুমন্ডল গঠিত হয়েছে? বায়ুমন্ডলের গুরুত্ব বর্ণনা
করুন।
২. বায়ুমন্ডলের উপাদান কি কি? উপাদানগুলোর আয়তনিক হার ও কার্য বর্ণনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]