স্বাস্থ্য সংক্রান্তনৃবিজ্ঞান কী? জনস্বাস্থ্য বলতে কী বোঝেন?

আপনারা আগের দুটো পাঠ থেকেই জানেন কিভাবে উন্নত বিশ্বের লেখাপড়ার জগতে গরিব বিশ্বের
উন্নয়ন ধারণা গড়ে উঠেছে এবং সেখানে কি ধরনের বিতর্ক চলমান। উন্নয়ন ধারণাতে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত
ভাবনা একেবারে কেন্দ্রীয় জায়গায় রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই তৃতীয় বিশ্বের জনগণের স্বাস্থ্য
বিষয়ে নানান আলাপ আলোচনা হতে থাকে। এই সব দেশের সরকারকে স্বাস্থ্য বিষয়ে সুনির্দিষ্ট
নীতিমালার জন্য চাপ দেয়া হয়। আপাত দৃষ্টিতে মহান এই পদক্ষেপের ব্যাপারে কতকগুলো প্রশ্ন তোলা
জরুরী। সর্বপ্রথম যে ব্যাপারটা লক্ষ্যণীয় তা হচ্ছে, জনসংখ্যাকে গরিব বিশ্বের প্রধান সমস্যা হিসেবে
চিহ্নিত করা হ’ল। ফলে স্বাস্থ্য গবেষণার সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে জনসংখ্যা বিষয়ক গবেষণা। এর
পাশাপাশি কিছু রোগবালাই নিয়ে গবেষণা হতে থাকল। এখানেও লক্ষ্য করবার মত বিষয় হচ্ছে
পরিচ্ছন্নতার ধারণা। অর্থাৎ, কিছু রোগকে গরিব বিশ্বের ক্ষেত্রে বাছাই করা হ’ল যেগুলোর মূল কারণ
চিহ্নিত করা হয়েছে পরিচ্ছন্নতার (যুমরবহরপ) ধারণার অভাব। উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে
উদরাময় বা পেটের ব্যামো, আফ্রিকার ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়ার কথা উল্লেখ করা যায়। পরিবেশের প্রসঙ্গও
এসেছে, তবে এর সাথে পরিচ্ছন্নতার ধারণা সম্পর্কিত। রাসায়নিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পরিবেশের উপর
শিল্প-কল-কারখানার আক্রমণাত্মক প্রভাব কিংবা দারিদ্র্যের মত বিমূর্ত বিষয়াদির তুলনায় ব্যক্তিগত
পরিচ্ছন্নতার বোধ ও সচেতনতাকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
এসকল গবেষণায় নৃবিজ্ঞানীদের অংশগ্রহণ ছিল বিষয়গুলো আবিষ্কারের ক্ষেত্রে। এসকল বিষয়ে কিছু
আলোকপাত করা হবে এই পাঠে। তবে আরেকটি বিষয় না উল্লেখ করলেই নয়। তৃতীয় বিশ্বে
অনেকগুলো স্বাস্থ্য গবেষণা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সামরিক ভূমিকার মধ্য দিয়ে।
বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আইসিডিডিআর, বি - এর কথা। শুরুতে
এর নাম অবশ্য ভিন্ন ছিল। এই প্রতিষ্ঠানটি তৈরী হয় সিয়াটো (ঝঊঅঞঙ : সাউথ ইষ্ট এশিয়ান ট্রিটি
অর্গানাইজেশন)- এর প্রত্যক্ষ ভ‚মিকার মাধ্যমে। সিয়াটো একটি সামরিক জোট। এই বিষয়গুলো নিয়ে
গভীরভাবে না চিন্তা করলে বাংলাদেশের মত একটা গরিব দেশের স্বাস্থ্যনীতি নিয়ে কি ধরনের তৎপরতা
চলছে তা অনুমান করা সম্ভব নয়। সৌভাগ্যের বিষয়, কিছু নৃবিজ্ঞানীই আবার আমাদের এ সকল বিষয়ে
সতর্ক করে দিচ্ছেন। এই বিষয়গুলো নিয়ে গোড়াতেই আলাপ করে নেবার দরকার আছে। কারণ,
অনেকেই মনে করেন যে মেডিক্যাল এ্যান্থ্রোপলজি হচ্ছে আসলে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নৃবিজ্ঞান বা সংক্ষেপে
স্বাস্থ্য-নৃবিজ্ঞান, সেটা বাংলা নামকরণ থেকেই আপনারা বুঝতে পারছেন। ফলে স্বাস্থ্য সংক্রান্তধারণা
কিভাবে ক্রিয়াশীল তা বোঝা জরুরী হয়ে ওঠে। এখানে দুয়েকটি বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। এক,
কোনও একটা রাষ্ট্র বা সমাজে জনস্বাস্থ্যের (ঢ়ঁনষরপ যবধষঃয) ধারণা কাজ করছে মানেই এই নয় যে
সেখানে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত আছে। কিংবা কোনও একটা সরকার জনস্বাস্থ্যের ঘোষণা দিচ্ছে মানেই
এই নয় সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। দুই, স্বাস্থ্য সংক্রান্তনৃবিজ্ঞানের কাজ কেবলমাত্র জনস্বাস্থ্য প্রসঙ্গে নয়। এখানে জনস্বাস্থ্যের আলাপ এসেছে কারণ বিভিন্ন সমাজে Ñ বিশেষত গরিব দেশগুলোর
সমাজে Ñ উন্নয়ন প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য কেন্দ্রীয় একটা বিষয় হিসেবে দেখা দিয়েছে এবং এই সংক্রান্তগবেষণা
জরুরী হয়ে দেখা দিয়েছে। ফলিত নৃবিজ্ঞানী হিসেবে স্বাস্থ্য-নৃবিজ্ঞানীরা (কোথাও কোথাও বাংলায়
‘চিকিৎসা নৃবিজ্ঞান’ বলা হয়েছে) প্রাথমিকভাবে এই পটভূমিতেই তাঁদের কাজের বিস্তার ঘটিয়েছেন।
সংজ্ঞা এবং ইতিহাস
স্বাস্থ্য সংক্রান্তনৃবিজ্ঞানের পরিধি এতটা ব্যাপক এবং এত নানাবিধ বিষয় এতে পঠিত হয়ে থাকে যে এর
একটি একক সংজ্ঞা নির্ধারণ কঠিন। একদিকে অ-ইউরোপীয় সমাজের চিকিৎসা ব্যবস্থা বা ওষুধপাতি
থেকে শুরু করে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির ভূমিকা পর্যন্তস্বাস্থ্য সংক্রান্তনৃবিজ্ঞানের বি¯তৃতি।
অন্যদিকে, বিভিন্ন সমাজের মানুষের স্বাস্থ্য ও অসুস্থতা সংক্রান্তভাবনা থেকে শুরু করে আধুনিক দর্শনে
শরীর ও স্বাস্থ্য সংক্রান্তজ্ঞান কিভাবে তৈরি হয়ে চলেছে Ñ তার সবই স্বাস্থ্য-নৃবিজ্ঞানের অন্তর্গত। কারো
কারো গবেষণায় এসেছে গরিব শ্রেণীর উপর স্বাস্থ্যনীতির প্রভাব। এছাড়া স্বাস্থ্য-নৃবিজ্ঞানের বড় একটা
এলাকা জুড়ে রয়েছে বিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠান সংক্রান্তগবেষণা ও পড়াশোনা। এক্ষেত্রে ধারণা করা হয়
যে, বিভিন্ন সমাজ যেগুলো শিল্পভিত্তিক নয় Ñ সেখানে নানান ধরনের বিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠান
রোগবালাইয়ের সাথে সম্পর্কিত হয়ে আছে। সেই সমস্তসামাজিক বিষয়াদি নিয়ে গবেষকগণ আগ্রহী হয়ে
ওঠেন। এ কারণেই মেডিক্যাল এনথ্রপলজিকে অনেকে স্বাস্থ্য সংক্রান্তনৃবিজ্ঞান বলে থাকেন যা
ইতোমধ্যেই আপনারা জেনেছেন। কিন্তু সে আলোচনায় আমরা এখন যাব না। নামকরণ বিষয়ক সংকট
নিয়ে পরে কিছু কথা বলার সুযোগ আছে।
সাধারণভাবে মেডিক্যাল এ্যান্থ্রোপলজি বা স্বাস্থ্য সংক্রান্তনৃবিজ্ঞান বলতে বোঝানো হয়ে থাকে স্বাস্থ্য,
অসুস্থতা এবং ওষুধের সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট অধ্যয়ন। একাধারে একজন ডাক্তার এবং
নৃবিজ্ঞানীকে এই শাস্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা ভাবা হয়ে থাকে। তিনি হচ্ছেন ডবি- উ. এইচ. আর. রিভার্স।
যদিও ওষুধ নিয়ে তিনি যে গবেষণাকর্ম করেছেন তার থেকেই খুব রাতারাতি নৃবিজ্ঞানের একটা উপশাখা
দাঁড়ায়নি। রিভার্সের যুক্তি ছিল, ‘আদিম ঔষধ’কে একটা সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পাঠ করা যেতে
পারে। এক্ষেত্রে সেই একই সূত্রাবলী এবং পদ্ধতিমালা প্রয়োগ করা যেতে পারে যা কিনা সমাজের
অপরাপর প্রতিষ্ঠান অধ্যয়ন করার সময় নৃবিজ্ঞানীরা প্রয়োগ করে থাকেন। কিছু অনুশীলনের
সুসামঞ্জস্যপূর্ণ একটা সমগ্র হিসেবে ‘আদিম ঔষধ’কে বিবেচনা করা হয়েছে এখানে। আর এই অনুশীলন
গড়ে উঠেছে কোনও নির্দিষ্ট একটা সমাজের মানুষজনের মধ্যে রোগের কারণ সম্পর্কিত ধারণার উপর
ভিত্তি করেই। আবার, রোগের কারণ সম্পর্কিত এই ধারণাবলী ঐ বিশেষ সমাজের মানুষের বিশ্ব সম্পর্কে
ভাবনা-চিন্তার সাথে যুক্ত। রিভার্সের এই উদ্যোগের পর ৩০ ও ৪০ এর দশকে আরো কিছু গবেষণা
হয়েছে। ৬০ এর দশকে নৃবিজ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে মেডিক্যাল এ্যান্থ্রোপলজি দাঁড়ানোর পেছনে এ
সকল গবেষণা ব্যাপক প্রভাব রেখেছে। এই গবেষণাগুলোর একটা সুগভীর গুরুত্ব রয়েছে। কারণ এর
আগে পর্যন্তভাবাই হ’ত না যে ‘আধুনিক’ এবং ‘আদিম’ ওষুধের মধ্যে কোন প্রকার তুলনা চলতে পারে।
ভাবা হ’ত যে সাবেক কালের ওষুধপত্তর হচ্ছে যাদু-ধর্ম ধরনের বিষয়।
গোড়া থেকেই স্বাস্থ্য সংক্রান্তনৃবিজ্ঞানের সঙ্গে আধুনিক পশ্চিমা ওষুধের একটা গভীর যোগাযোগ ছিলই।
তা স্বপক্ষে বা বিপক্ষে যাই হোক না কেন। ১৯৬০ এবং ৭০-এর দশকে প্রধান বিতর্ক ছিল অপশ্চিমাদের চিকিৎসা-জ্ঞান ধর্ম এবং আচার-অনুষ্ঠান থেকে স্বতন্ত্র কিনা। তবে এই বিতর্ক ছিল মূলত
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের সঙ্গে নৃবিজ্ঞানীদের। নৃবিজ্ঞানীদের কেউ কেউ এই স্বাতন্ত্র্য দাবি করে আসছিলেন।
তাঁদের মতে অ-পশ্চিমা সমাজের মানুষজনের চিকিৎসা জ্ঞান যাদু, ধর্ম এবং আচার-অনুষ্ঠান থেকে
একেবারে স্বতন্ত্র বিষয় ছিল এবং আছে। কিন্তু কিছু নৃবিজ্ঞানীর কাছে কতক ধরনের বিষয় বরাবরই
আরো আগ্রহের থেকে গেছে। যেমন: জ্বিনে ধরা, আছর পড়া, মন্ত্র-তন্ত্র ইত্যাদি। এর ফলে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত
(বা চিকিৎসা) নৃবিজ্ঞানীদের পক্ষে তাঁদের যুক্তি প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হয়ে গেছিল। তবে দীর্ঘদিন বিতর্ক চলতে চলতে নৃবিজ্ঞানের এই শাখায় এখন এটা স্বীকৃত যে, আধুনিক পশ্চিমা ওষুধের ঐতিহ্যেরও নির্দিষ্ট
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট আছে। বিজ্ঞানের নামে একে সামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে আলাদা করা
যাবে না। সে কারণে বর্তমান কালের স্বাস্থ্য সংক্রান্তনৃবিজ্ঞান (সবফরপধষ ধহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মু) আধুনিক
পাশ্চাত্য চিকিৎসা বিজ্ঞান (সবফরপধষ ংপরবহপব) এবং চিকিৎসা জ্ঞান (সবফরপধষ শহড়ষিবফমব) নিয়েও
প্রশ্ন করতে শুরু করেছে। স্বাস্থ্য সংক্রান্তনৃবিজ্ঞানের এ সমস্তবিতর্ক তোলার কারণেই, আপনারা খেয়াল
করবেন, ‘আধুনিক’, ‘বিজ্ঞানসম্মত’ Ñ এ সমস্তশব্দের বদলে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি বানানো
ওষুধপত্তরকে এখন ‘জৈব-ওষুধ’ (নরড়সবফরপরহব) বলা হয়ে থাকে।
গত ত্রিশ বছরে বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মেডিক্যাল এ্যান্থ্রোপলজি শাখাটি দ্রæত এবং ব্যাপকভাবে
বিকাশ লাভ করেছে। অসুস্থতা সংক্রান্তনৃবৈজ্ঞানিক আলাপ-আলোচনা আরও সূ² হয়েছে Ñ সেটা স্বাস্থ্য-
নৃবিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহ বেড়ে যাবার একটা কারণ। তবে এর পাশাপাশি ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যনীতির
পরিকল্পনাকারীদের ভূমিকাও আছে। তাঁরাও সামাজিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গির দিকে ক্রমে ক্রমে আগ্রহ বাড়িয়েছেন।
নামকরণের সংকট
স্বাস্থ্য সংক্রান্তনৃবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটা নাম একই সাথে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর সবগুলোই
মেডিক্যাল এ্যান্থ্রোপলজি অর্থেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর কারণ হতে পারে এই শাখার পরিধির
ব্যাপকতা, আবার দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যও। যেমন আপনারা ইতোমধ্যেই জেনেছেন ‘ঝাড়-ফুঁক’, ‘জ্বিনে
ধরা’ ইত্যাদি বিষয়ের উপর কিছু নৃবিজ্ঞানীর বেশি বেশি ঝোঁক আছে। কখনো কখনো দেখা যায়,
এরকম বিষয়ের প্রতি আগ্রহের কারণে কোনও নৃবিজ্ঞানী নিজের গবেষণা কাজকে মেডিক্যাল
এ্যান্থ্রোপলজির অন্তর্ভুক্ত না করে অন্য কোন নামে অভিহিত করছেন। এক্ষেত্রে বোঝার সুবিধার্থে স্বাস্থ্য
সংক্রান্তনৃবৈজ্ঞানিক ভাবনা-চিন্তাকে স্বাস্থ্য-নৃবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু হিসেবে দেখা যেতে পারে।
মেডিক্যাল এ্যান্থ্রোপলজি ছাড়াও বেশ কয়েকটা নাম পাওয়া যায় : জাতি-ওষুধবিদ্যা
, ক্লিনিক্যাল নৃবিজ্ঞান ওষুধের নৃবিজ্ঞান
, স্বাস্থ্য সংক্রান্তনৃবিজ্ঞান ইত্যাদি।
অনেক লেখক এই সব নামের সাথে শাস্ত্রের মধ্যকার সূ² পার্থক্য দেখানোর চেষ্টা করেছেন। যেমন,
ইউরোপের বাইরের দুনিয়ায় বিভিন্ন জাতির মধ্যকার ওষুধ সংক্রান্তজ্ঞান অনুসন্ধানকে জাতি-ওষুধবিদ্যা
বলবার পক্ষপাতী তাঁরা। স্বাস্থ্য সম্পর্কে নৃবিজ্ঞানের অন্যান্য গবেষণা এবং ভাবনা-চিন্তাকে তাঁরা আলাদা
করে দেখতে চান। তেমনি ক্লিনিক্যাল এ্যান্থ্রোপলজিকে দেখতে চান এমন এক শাস্ত্র হিসেবে যা
ক্লিনিক্যাল কেস-এর, মানে দাওয়াইখানার রোগীর সংকট নিরসনে নৃবৈজ্ঞানিক জ্ঞান কাজে লাগাতে
চায়। তাঁদের যুক্তিতে ওষুধের নৃবিজ্ঞান হচ্ছে ‘বায়োমেডিসিন’কে আরও কার্যকরী করবার একটা প্রচেষ্টা।
নামকরণের এই সংকট ভাবনা-চিন্তা ও যুক্তির পার্থক্যের কারণে অনেক জটিল হয়ে পড়েছে। আপাতত
আপনাদের জন্য সে বিষয়ে আলোচনা বিস্তারিত করা হচ্ছে না। বাংলায় অনুবাদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা
বিশেষ আকার ধারণ করেছে। মেডিক্যাল এ্যান্থ্রোপলজির বাংলা অনেক নৃবিজ্ঞানী ইতোমধ্যেই করে
ফেলেছেন ‘চিকিৎসা নৃবিজ্ঞান’ হিসেবে। বাংলাতে স্বাস্থ্য সংক্রান্তনৃবিজ্ঞান কিংবা স্বাস্থ্যবিদ্যার নৃবিজ্ঞান
বললে মেডিক্যাল এ্যান্থ্রোপলজির আরও সন্নিকট হয়। ক্লিনিক্যাল নৃবিজ্ঞানের বাংলা হিসেবে চিকিৎসা
নৃবিজ্ঞান অর্থবহ হতে পারে বলে মনে হয়। যাই হোক, আগের অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা নামগুলোর
বাইরেও কিছু কিছু কাজ আছে যাকে একই ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত করে ভাবা হয়। উদাহরণ হিসেবে পরিবেশ
নিয়ে কিছু গবেষণা কাজের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আর্সেনিক নিয়ে
গবেষণা বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে। তবে এটাও নিশ্চিত হওয়া দরকার, আর্সেনিক বিষয়ক গবেষণাতে একেবারে বিরুদ্ধ দুইটি পক্ষ আছে। একটি পক্ষ স্পষ্ট করে দায়ী করছে অপরিকল্পিত
নলক‚প বসানোকে। অন্যপক্ষ তা করছে না। এই উদাহরণ দেবার উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বাস্থ্য সংক্রান্তগবেষণা
ও অধ্যয়নের মধ্যে যে বিতর্ক চলে সে বিষয়ে মনোযোগে রাখা।
স্বাস্থ্য-জ্ঞান ও নীতিমালাতে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ
এখানে অত্যন্তসংক্ষেপে স্বাস্থ্য সংক্রান্তনৃবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ একটা পরিচয় করিয়ে দেব। এর লক্ষ্য
হচ্ছে: ফলিত নৃবিজ্ঞানকে শক্ত ভিত্তি দান করাবার কাজে যাতে আপনারা ভাবনা-চিন্তা করবার ক্ষেত্র
পান। আপনারা এরই মধ্যে জেনেছেন স্বাস্থ্য সংক্রান্তনৃবিজ্ঞানের পরিধি অত্যন্তব্যাপক। এই পরিধিতে
বহু ধরনের প্রসঙ্গ এসেছে Ñ আধুনিক চিকিৎসা জ্ঞান, পশ্চিমা ওষুধ থেকে শুরু করে শিল্পবিহীন সমাজের
স্বাস্থ্য জ্ঞান এবং ওষুধ অবধি। কিছু কিছু নৃবিজ্ঞানী এই ব্যাপকতার মধ্যে কিছু জরুরী প্রশ্ন তুলেছেন।
তাঁরা স্বাস্থ্য সংক্রান্তপশ্চিমা আধুনিক জ্ঞানকে অনেক স্বাস্থ্য-সংকটের জন্য দায়ী মনে করছেন। কেউ
কেউ আবার ওষুধ বানানোর কারখানা বা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির আধিপত্যকেও শনাক্ত করছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় অনেক নৃবিজ্ঞানী অ-পশ্চিমের সমাজ থেকে কল্যাণকর চিকিৎসা বিদ্যা সামনে
নিয়ে আসছেন। সেগুলো সম্ভব হচ্ছে চিন্তাশীল ও প্রশ্নমনস্ক ফলিত নৃবিজ্ঞানের চর্চা থেকে।
দার্শনিক মিশেল ফুকোর একটা গ্রন্থে পশ্চিমা চিকিৎসা জ্ঞানকে জোরালো ভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে, নানান
শক্তিশালী যুক্তি দিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে। এরপর অনেক নৃবিজ্ঞানী বা অন্যান্য শাস্ত্রের গবেষক
সেই যুক্তিকে আশ্রয় করেছেন। আপনারা জেনেছেন প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়ে থাকে।
সেসব গবেষণার পেছনে প্রধানত জনসংখ্যা বিষয়ক দুর্ভাবনা কাজ করে Ñ এটা এখন অনেকেই যুক্তি
দিচ্ছেন। আধুনিক প্রজনন চিকিৎসা কিভাবে নারীর স্বাস্থ্যের প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে সেটা নিয়েও
নৃবৈজ্ঞানিক গবেষণা কাজ হচ্ছে। এরকম ধরনের কাজ ও তৎপরতা নৃবিজ্ঞানের সম্ভাবনাকে ধীরে ধীরে স্পষ্ট করে তুলছে।
সারাংশ
স্বাস্থ্য সংক্রান্তগবেষণা প্রতিষ্ঠিত হবার প্রেক্ষাপট হচ্ছে উন্নয়ন ভাবনার বিকাশ এবং গরিব বিশ্বের স্বাস্থ্য
প্রসঙ্গ এই ভাবনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া। এই প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য সংক্রান্তনৃবিজ্ঞান ফলিত নৃবিজ্ঞানের একটা
শাখা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। বাংলায় কেউ কেউ একে চিকিৎসা নৃবিজ্ঞান বলেছেন। এর পরিধি
ব্যাপক এবং এর বিষয় বহুবিধ। প্রধানত কয়েকটা শিরোনামে নৃবিজ্ঞানের অধ্যয়নে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা
সম্বন্ধে ভাবনা ধরা পড়ে: জাতি-ওষুধবিদ্যা, স্বাস্থ্য সংক্রান্তনৃবিজ্ঞান, ক্লিনিক্যাল নৃবিজ্ঞান, ওষুধের
নৃবিজ্ঞান ইত্যাদি। এই শাখার ভিতরে নানাবিধ বিতর্ক বিদ্যমান। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে: পশ্চিমা
চিকিৎসা জ্ঞান চূড়ান্তকিছু কিনা। সেই সূত্রে পশ্চিমা আধুনিক চিকিৎসা জ্ঞান নিয়ে এই শাখা ব্যাপক অনুসন্ধানী অধ্যয়ন চালাচ্ছে।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন -
১। সিয়াটো (ঝঊঅঞঙ) কী ?
ক. সাংস্কৃতিক জোট খ. অর্থনৈতিক জোট
গ. সামাজিক উন্নয়ন জোট ঘ. সামরিক জোট
২। নৃবিজ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে মেডিক্যাল এ্যান্থ্রোপলজি কখন প্রতিষ্ঠিত হয়?
ক. ৫০-এর দশকে খ. ৬০-এর দশকে
গ. ৭০-এর দশকে ঘ. ৮০-এর দশকে
৩। স্বাস্থ্য সংক্রান্তনৃবিজ্ঞান বলতে বোঝানো হয়ে থাকে---------------------- ।
ক. স্বাস্থ্য অধ্যায়ন
খ. অসুস্থতা অধ্যায়ন
গ. ঔষধের সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট অধ্যায়ন
ঘ. উপরের সবগুলোই
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। স্বাস্থ্য সংক্রান্তনৃবিজ্ঞান কী?
২। জনস্বাস্থ্য বলতে কী বোঝেন?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। স্বাস্থ্য সংক্রান্তনৃবিজ্ঞানের সংজ্ঞা নির্ধারণের জটিলতা আসলে এর বিরাট পরিধিকে নির্দেশ করে Ñ
ব্যাখ্যা করুন।
২। এই মুহূর্তে স্বাস্থ্য প্রশ্নে নৃবিজ্ঞানীরা কী ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]