মেঘনা নদীর গঠনগত ও পানিতাত্তি¡ক বৈশিষ্ট্যাবলী আলোচনা করুন।

বাংলাদেশের প্রধান প্রধান নদী ব্যবস্থার মধ্যে মেঘনা-সুরমা নদী ব্যবস্থা অন্যতম এবং দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের একটি
বৃহত্তম নদী ব্যবস্থা। পৃথিবীর বৃষ্টিবহুল চেরাপঞ্জির প্রায় কাছাকাছি স্থান এই নদী ব্যবস্থার উৎপত্তি স্থল এবং বাংলাদেশের
প্রায় ৯০% পানি এই মেঘনা-সুরমা নদী ব্যবস্থা দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়ে।
মানুষের জীবনযাত্রার উপর প্রভাব বিস্তারকারী নিয়ামক হিসাবে নদীর নাম উল্লেখযোগ্য। পৃথিবীর বড় বড় নদীগুলোর মধ্যে
তিনটি বড় নদী বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীগুলোর মধ্যে মেঘনা একটি বৃহত্তম নদীমালা। তবে সব
কয়টি বড় নদী এদেশে পরিণত অবস্থায় প্রবাহিত ফলে এদেশের সমভ‚মি গঠনে নদীগুলোর ভ‚মিকা সক্রিয়। নদীগুলোর
প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং পরিণত অবস্থা ভিন্ন ভিন্ন দেশে অবস্থিত হওয়ায় নদীগুলো নিয়ে চলছে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত।
মেঘনা নদী বাংলাদেশের বৃহত্তম নদী এবং পৃথিবীর বৃহৎ নদীগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি হিমালয় বহির্ভূত একটি নদী
ব্যবস্থা।
মেঘনা নদীর উৎপত্তিঃ মেঘনা মনিপুর রাজ্যের উত্তরদিকস্থ পর্বত থেকে উদ্ভ‚ত হয়ে কিছুদুর পর্যন্ত নাগাপাহাড় ও মনিপুর
রাজ্যের মধ্যে সীমারেখা রচনা করেছে। তবে বলা যায়, প্রকৃত পক্ষে মেঘনা আসামের নাগামনিপুর পাহাড়ে উৎপন্ন
জলবিভাজিকার দক্ষিণ ঢালে বিদ্যমান বরাক নদীর অংশবিশেষ। পরবর্তীতে এটি ভৈরববাজারের কাছে মারকুলি নামক
স্থানে মেঘনা নাম ধারণ করে এবং পদ্মার সাথে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়।
মেঘনা নদীর নামকরণঃ মেঘনা নদীর নামকরণ নিয়ে গল্প কথা প্রচলিত রয়েছে। এতে বলা হয়- আকাশে মেঘ দেখা দিলে
মেঘনা উত্তাল হয়ে যায়। এ সময় নৌযান চলাচল নিরাপদ নয়। তাই মেঘনা এর নামের ব্যাখ্যা দাড়ায় মেঘ+না অর্থাৎ
আকাশে মেঘ দেখা দিলে নাও ছাড়ো না। মেঘনা নামের এই কিংবদন্তী আজও মাঝি মাল্লাদের মনে সক্রিয়ভাবে জাগরুক
রয়েছে (ওয়াজেদ)।
মেঘনা নদীঃ উৎসস্থল থেকে মোহনা পর্যন্ত মেঘনা নদীকে নি¤েœাক্ত ২টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথাপ্রথম অংশ
পরবর্তী অংশ
নি¤েœ এগুলোর আলোচনা করা হলোঃ
প্রথম অংশঃ প্রথম অংশ বলতে বোঝায় মেঘনা উৎপত্তি লাভের পর সামান্য পথ অতিক্রম করা পর্যন্ত। অর্থাৎ বরাক নদী
ভারতের আসামরাজ্যের কাছাড় জেলার শিলচরের নিকট থেকে পশ্চিমদিকে প্রবাহিত হয়ে শ্রীহট্ট জেলার অমলশিদ নামক
স্থানে দুটো ধারায় বিভক্ত হয়। এই ধারা দুটি নি¤œরূপঃ
ক) সুরমা
খ) কুশিয়ারা
ক) সুরমাঃ সুরমা পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে সিলেট শহরে প্রবেশ করে। এরপর উত্তর পশ্চিম ও পশ্চিমে
প্রবাহিত হয়ে সুনামগঞ্জে আসে। এরপর দক্ষিণ-পশ্চিম হয়ে মদনার নিকট কুশিয়ারার সাথে মিলিত হয়। মেঘালয়ের
মালভ‚মি থেকে উৎপন্ন অনেকগুলি নদী ও পানি প্রবাহ উত্তর দিক থেকে সুরমার সাথে মিলিত হয়। পূর্ব থেকে উত্তর দিকে
এগুলো হলো- লুভা, হরি (কুশিয়া), গোয়াইন গাঙ্গ (চেঙ্গার খাল), পিয়াইন, বোগাপানি, যদুকাটা, সোমেশ্বরী এবং কংশ।
মোহনগঞ্জের দক্ষিণে মগরার নিকট সুরমা দুইভাগে বিভক্ত হওয়ার পূর্বে কংশ নদীর পানিকে ধারণ করে। পশ্চিমের এই
নদীটির উপরের অংশ ধানু, মাঝের অংশ বাউলি এবং নীচের অংশ ঘোড়াউতরা নামে পরিচিত। এই প্রবাহধারা কুলিয়ার
চর পর্যন্ত এসে মিলিত হয়।
খ) কুশিয়ারাঃ বরাক নদীর দক্ষিণ অংশ কুশিয়ারা নামে পরিচিত। এটা উত্তরে মৌলভীবাজারের দক্ষিণে উলিবাজারে এসে ২
ভাগ হয়। বিভক্ত হওয়ার পূর্বে কুশিয়ারা নদী মনু নদীর পানিকে ধারণ করে। কুশিয়ারার বিভাগগুলি নি¤œরূপঃ
* উত্তরের অংশ বিবিয়ানা।
* দক্ষিণের অংশ বরাক।
বিবিয়ানা কিছুদুর চলার পর কালনী নাম ধারণ করে। আজমীরিগঞ্জের নিকট কালনী সুরমার সাথে মিলিত হয়।
কুশিয়ারার অপর অংশ বরাক নদী পার্বত্য ত্রিপুরা থেকে আগত গোপলা এবং খোয়াই নদীর সাথে মিলিত হয় এবং এরপর
মদনার নিকট সুরমায় পতিত হয়।
পরবর্তী অংশঃ সুরমা ও কুশিয়ারার দুই অংশ মিলিত হওয়ার পর আজমীরিগঞ্জের নিচে মেঘনা নাম ধারণ করে এবং
পরবর্তীতে এই নদী হাওড় বেসিনে মিলিত হয়। এখানে পানি প্রবাহটি ২ ভাগে বিভক্ত হয়।
ক) আপার মেঘনা
খ) লোয়ার মেঘনা
ক) আপার মেঘনাঃ আপার মেঘনা কুলিয়ার চর থেকে ষাটনল পর্যন্ত অবস্থিত। এটি অপেক্ষাকৃত ছোট নদী।
খ) লোয়ার মেঘনাঃ এই নদীটি ষাটনল এর নিচ থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি পৃথিবীর অন্যতম প্রশস্ততম নদী
হিসাবে পরিচিত। লোয়ার মেঘনার সাথে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও গঙ্গার পানি এসে মিশেছে এবং এই প্রবাহ পরে বঙ্গোপসাগরে
পড়েছে।
মেঘনার শাখানদীঃ মেঘনার প্রধান প্রধান শাখা নদীগুলো নি¤œরূপঃ
পাগলী, উর্বমদি, কাঁঠালিয়া, ধনালিয়া, ধনাগদা, মতলব।
মেঘনা এবং উপরোক্ত শাখানদীগুলির সাথে ত্রিপুরার পার্বত্য এলাকা থেকে কিছু প্রবাহ এসে মিলিত হয়। এগুলো হলো-
গোমতী, বালুঝুরি, হান্দাছড়া, হাওড়া, কুরিলিয়া, জঙ্গোলিয়া, সোনাইবুড়ি, সোনাইছড়ি, দুরদুরিয়া। এসব পাহাড়ী নদীগুলো
মেঘনা নদীর কারণে যে আকষ্মিক বন্যা হয় সেক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে।
মেঘনা নদীর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থঃ বরাক-মেঘনার দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০৪ কিমি। ভৈরববাজার ব্রীজের নিকট এর প্রশস্ততা .৭৫ কিমি।
অপরদিকে ষাটনলের নিকট মেঘনার প্রশস্ততা ৫ কিমি। ষাটনল থেকে ১৬ কিমি দূরে গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুত্র যমুনা মেঘনার
সাথে মিলিত হয় তখন এর প্রশস্ততা দাড়ায় ১১ কিমি (বর্ষাকালে)। এই দৃষ্টিকোণ থেকে মেঘনার দক্ষিণভাগ পৃথিবীর বৃহৎ
নদীগুলির একটি।
সারনী ২.৪.১. সুরমা মেঘনা নদীর প্রকৃত দৈর্ঘ্য এবং অন্তভর্‚ক্ত এলাকা (মাইল) নি¤েœ (ছকের) মাধ্যমে উল্লেখ করা হলোঃ
মোট দৈর্ঘ্য অন্তভর্‚ক্ত এলাকা (মাইলে)
মাইল কিমি
৪১৬ ৬৬৯
সিলেট- ১৮০
কুমিল্লা - ১৪৬
বরিশাল-৯০
উৎসঃ ঝঃধঃরংঃরপধষ ণবধৎনড়ড়শ, ২০০০.
এছাড়াও আপার মেঘনার দৈর্ঘ্য ৯৪৯.৩ কিমি এবং লোয়ার মেঘনার দৈর্ঘ্য ১৬০.৯ কিমি (হারুনুর রশিদ, জিওগ্রাফি অব
বাংলাদেশ)।
মেঘনা নদীখাতঃ প্রাথমিক পর্যায়ে নদীখাত সংকীর্ণ ধরনের হলেও বার্ধক্য/পরিণত পর্যায়ে নদীখাত প্রশস্ত হয়। এক্ষেত্রে
বলা যায়, মেঘনা নদীতে প্রশস্ত খাত দেখা যায়। এর প্রকৃত কারণ হলো উৎপত্তিস্থল থেকে উৎপন্ন হয়ে বিভিন্ন খাত
অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগরে পতিত হওয়া। অর্থাৎ মেঘনা নদী একটি পরিণত পর্যায়ের নদী।
মেঘনা নদীর পানিতাত্তি¡ক বৈশিষ্ট্যাবলী
পানিতাত্তি¡ক বৈশিষ্ট্য বলতে সাধারণত পানির নির্গমন, পানি সমতল, লবণাক্ততা, বন্যা, অববাহিকার আয়তন ইত্যাদি বোঝায়। নি¤েœ এগুলোর বর্ণনা করা হলোঃ
পানি নির্গমনঃ সুরমা নদীতে ১৯৫০ এবং ১৯৫৮ সালে পানির নির্গমন পরিমাপ করা হয় সর্বোচ্চ ৫৩০০৮ কিউসেক (১৫
আগষ্ট, ১৯৫৮) এবং সর্বনি¤œ ৪৮৭ কিউসেক (২১মার্চ ১৯৫৪)। অপরদিকে কুশিয়ারায় বর্ষাকালে ১৫০০০ কিউসেক পানি
নির্গমন ঘটে। ভৈরববাজার ব্রীজের নিকট পানির নির্গমন পরিমাপ করা হয় প্রায় গড়ে ৭১০০ ঘনমিটার/সে (মে মাসের শেষ
থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত)।
সারনী: ২.৪.২ : সিলেট স্টেশনে ১৯৯৫-১৯৯৬ সালে সুরমা নদীর পানি নির্গমনের কালিক বন্টন (ঘন মিটার/ সেকেন্ড)
মাস নির্গমনের পরিমাণ
এপ্রিল ২.৮৫৫
মে ৬.৫৮৬
জুন ৯.৩৫২
জুলাই ১০.২৭৫
আগষ্ট ১০.৩৩৩
সেপ্টেম্বর ৯.২৩৫
অক্টোবর ৭.৪৮৫
নভেম্বর ৫.৬৯২
ডিসেম্বর ৩.৯৬৯
জানুয়ারী ২.৬৩৯
ফেব্র“য়ারী ২.২৫৭
মার্চ ৫.০৯০
বার্ষিক ৭৫.৭৬৮
উৎসঃ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পানি বছর এপ্রিল-মার্চ)
এছাড়া লোয়ার মেঘনা প্রতি বছর গড়ে ৮৭৫ মিলিয়ন একর ফুট পানি নির্গমন করে এবং আপার মেঘনা ৯২ মিলিয়ন একর
ফুট (গঅঋ) পানি নির্গমন করে।
পানি সমতলঃ ১৯৯৯ -২০০০ সালে যে তথ্য পাওয়া যায় সে প্রেক্ষিতে বলা যায়, সেই বছর মেঘনা নদীর পানি সমতল
এর পরিমাণ সর্বোচ্চ ছিল। তবে সর্বনি¤œ মানও সে নদীতে ছিল। অর্থাৎ বলা যায়, ১৯৯৯-২০০০ সালে ভৈরববাজার
স্টেশনে মেঘনা নদীর পানি সমতল এর পরিমাণ সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ ছিল।
সারনী: ২.৪.৩ : মেঘনা ও সুরমা নদীর পানি তল এর পরিমাণ
নদী স্টেশন সর্বোচ্চ সর্বনি¤œ
মেঘনা ভৈরববাজার ৪৯.৮০ ০.০০
সুরমা সিলেট ১১.২৫ ২.২৫
বন্যাঃ এই নদী ব্যবস্থায় বছরে ২ থেকে ৩ বার বন্যা হয়, যা সাধারণতঃ জুলাই, আগষ্ট ও সেপ্টেম্বর মাসসমূহে ঘটে থাকে।
তবে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে মে মাস থেকে বন্যা হয় (সারণী)।
সারণী ২.৪.৪ : বন্যার সময় (দিন), বিপদসীমার পূর্বে ১৯৮৮
নদী স্টেশন জুলাই আগষ্ট সেপ্টেম্বর মোট
মেঘনা ভৈরববাজার ২৫ ১৩ ২৫ ৬৩
লয়ার মেঘনা চাঁদপুর ২৬ ১৯ ৪৫
প্রধান নদীর সাথে অনেক ছোট ছোট পাহাড়ী নদীর জলধারা এখানে মিলিত হয়। এ কারণে পাহাড়ী ঢল নামে এবং হঠাৎ
বন্যা হয়। একে ঋষধংয ঋষড়ড়ফ বলে। মধুপুর গড় ব্যতীত প্রায় সমগ্র মেঘনা উপত্যকা বর্ষার সময় সম্পূর্ণ প্লাবিত হয় এবং
প্রতি বছর এ অঞ্চলের মৃত্তিকার একটি করে নতুন পলির আস্তরণ পড়ে। পানির রাসায়নিক গুণাগুণ
সুরমা-মেঘনা নদী ব্যবস্থার পানির রাসায়নিক গুণাগুণ পর্যালোচনা করার জন্য ভৈরববাজার স্টেশনের পানিকে নমুনা
হিসাবে গ্রহণ করা হয়। এখান থেকে পানির চ

, ঈঙ২
, ঈঅ, গএ, ঈঙ৩
, ঐঈঙ৩
, ঝঙ৪
, -এর মান বের করা হয়। নি¤েœ
(ছকের) মাধ্যমে দেখানো হলোঃ
সারনী: ২.৪.৫ : সুরমা-মেঘনা নদীর রাসায়নিক মান
নদীর নাম ও
স্টেশন


ঈঙ২ ঈধ গম ঈঙ৩ ঐঈঙ৩ ঝঙ৪ ঈষ ঝধষরহরঃু ঞঊজ
সুরমা-মেঘনা
ভৈরববাজার
মার্চ ১৯৮৩
৯.৯১ ২.৯৪ ১১.০০ ৮.২১ ২.৩৫ ৪৩.৬৩ ৩৭.৭৩ ৬.৯৫ ৪২.৫৪ ২৮০
উৎসঃ ঞবপযহরপধষ ঔড়ঁৎহধষ, জরাবৎ জবংবধৎপয ওহংঃরঃঁঃব (ঋধৎরফঢ়ঁৎ), ঠড়ষ. ০২, ঘড়. ০১, ঔধহ. ১৯৯৫.
সুরমা-মেঘনা নদীর উপরোক্ত সারণীতে প্রাপ্ত রাসায়নিক মান বিশেষত চ

মান দেখে বলা যায় এ নদীর পানিতে ক্ষারকত্ব
বেশি। এছাড়া পানি স্বচ্ছ প্রকৃতির।
লবণাক্ততাঃ পদ্মার সাথে মিলিত হবার পূর্ব পর্যন্ত মেঘনা লবণাক্ত পানি বহন করে। নীলকমল, দৌলতখান, চাঁদপুর,
ষাটনলে নদীর পানির লবণাক্ততা পরীক্ষা করা হয়। সুরমা-মেঘনা নদীর পানি ভৈরববাজারে যে লবণাক্ততার পরীক্ষা করা হয় তার মান ৪২.৫৪।
অববাহিকা আয়তনঃ মেঘনার অববাহিকা উপমহাদেশের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বৃষ্টিবহুল অঞ্চল এবং প্রবাহ মূলত বৃষ্টিপাতের
উপর নির্ভরশীল। উৎস হতে মেঘনা অববাহিকার আয়তন ৬৪৭৫০ বর্গকিলোমিটার এর মধ্যে ২০৭২০ বর্গকিলোমিটার
বাংলাদেশের অন্তর্গত।
সারনী: ২.৪.৬ : আপার মেঘনা এবং লোয়ার মেঘনার অববাহিকার আয়তন (মিলিয়ন একর)
নদী অববাহিকার আয়তন (মিলিয়ন একর)
আপার মেঘনা ২০
লোয়ার মেঘনা ৪১৬
উৎসঃ হারুনুর রশিদ,
উপরোক্ত দুটি নদীর অববাহিকার আয়তন লক্ষ্য করলে খুব সহজেই বোঝা যায় আপার মেঘনা অপেক্ষা লোয়ার মেঘনা নদী
বড় এবং প্রশস্ততম নদী। নদী দুটি বাংলাদেশে অন্তর্গত। এবং এই নদী দুটির অববাহিকার আয়তন তাই নাগাপাহাড় থেকে
পরিমাপ করা হয়নি। বরং বাংলাদেশের কুলিয়ারচর থেকে পরিমাপ করা হয়েছে।
এক নজরে সুরমা-মেঘনার অন্যান্য বৈশিষ্ট্যসমূহ
ক্স মেঘনা একটি বৃহৎ নদী। এ নদীর উদ্যোমে এখনও ভাটা পড়েনি। সুরমা-মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা-গঙ্গার মিলিত
স্রোতধারা এ নদীর সমৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
ক্স এ নদী বিপুল এলাকা দিয়ে প্রবাহিত। নদীটি ভাঙ্গন প্রবন।
ক্স মেঘনার নীচের দিকে প্রচুর চর রয়েছে।
ক্স মেঘনা অত্যন্ত গভীর ও নাব্য নদী, সারা বছর নৌ চলাচল করতে পারে।
ক্স ধলেশ্বরীর সাথে মিলিত হওয়ার স্থানে দুই নদীর পানির রং এ সুস্পষ্ট পার্থক্য দেখা যায়। এখানে মেঘনার পানি
পরিস্কার নীলাভ সবুজ। আর ধলেশ্বরীর বাদামী (ওয়াজেদ)।
ক্স মেঘনার তীরে প্রসিদ্ধ স্থানগুলি হলো- সিলেট, সুনামগঞ্জ, নরসিংদী, ভোলা, চাঁদপুর, বরিশাল প্রভৃতি।
ক্স উল্লেখযোগ্য নৌ ও বাণিজ্যবন্দর হলো- ভৈরববাজার, কুলিয়ারচর, কালুপুর, পুরাতন চাঁদপুর, মারকুলী, আজমীরিগঞ্জ,
মদনা, বৈদ্যের বাজার, রামদাসপুর।
ক্স কুলিয়ারচর পৃথিবীর অন্যতম মৎস বাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা ও আশুগঞ্জ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এ নদীর তীরে অবস্থিত।
মেঘনা নদী ব্যবস্থাপনা ও আন্তর্জাতিক ইস্যু
মেঘনা একটি আন্তর্জাতিক নদী। এই নদীর উৎসস্থল ভারতে হওয়ায় এই নদী নিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে একটি তিক্ত
সম্পর্ক বিদ্যমান। ভারত মেঘনার উজানে আসামের বরাক ও তুইড়ী নদীর সঙ্গমস্থলে টিপাইমুখ জলাধার নির্মাণের প্রস্তাব
দেয়। ড্যামটির উচ্চতা ১৬১ মি ও দীর্ঘ ৩৯০ মিটার যাতে ১৫.৯ হাজার মিলিয়ন ঘন মিটার পানি মজুদ রাখা যাবে। এই
পানি দিয়ে ভারত সেচ নৌ চলাচল ও শুকনা মৌসুমে পানি প্রবাহ বাড়ানোর কাজ চালাবে।
ভারতের নদী সংযোগ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে বন্যা কমবে না বরং উল্টো হবে। বর্ষার সময় জলাধারে পানি
আটকে দিলে বন্যার আশংকা কমবে না বাড়বে তা নির্ভর করবে সে বছরের বৃষ্টিপাতের উপর। বৃষ্টি বেশি হলে জলাধার
চাপ সামলাতে পারবে না। তখন জলাধার বাচাতে বিপুল পরিমাণ পানি এক সঙ্গে ছেড়ে দেয়া হলে মুহুর্তের মধ্যে ব্যাপক
এলাকা তলিয়ে যাবে।
এছাড়া ভ‚তত্ত¡বিদগনের মতে টিপাইমুখ বাধ এলাকা অত্যন্ত ভ‚মিকম্প প্রবণ এলাকা। এখানে বাধ দিয়ে তাই নদীর
স্বাভাবিক গতিপথ পরিবর্তন করা সমীচিন নয়। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় এই এলাকায় ভ‚মিকম্প আঘাত হানবে এবং ধ্বংসলীলা চলবে যার অনুমাণ ভবিষ্যতই।
আন্তর্জাতিক ইস্যুর সমাধানঃ উপরোক্ত সমস্যাগুলো শুধুমাত্র মেঘনা নদী ব্যবস্থার ক্ষেত্রেই নয় বরং তিস্তা, পদ্মা-যমুনার
ক্ষেত্রেও দেখা যায়। নদী ও দেশকে বাঁচানোর জন্য নি¤œলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবেঃ
ক্স স্থিতিশীল সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলা, সরকারী ও বিরোধী দলের মধ্যে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু সম্পর্কে কল্যাণমুখী
একমত পোষণ করা।
ক্স দক্ষ কর্মীর মাধ্যমে পানি সম্পদ উন্নয়ন ও নদী ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।
ক্স নির্দিষ্ট সময় পর পর সারা দেশের নদী ব্যবস্থা পর্যবেক্ষন করতে হবে।
ক্স স্থানীয় চিন্তাশীল ব্যক্তিদের মতামত গ্রহণের মাধ্যমে নদী ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটান।
ক্স নদীতে ধ্বংসাত্বক অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ করার জন্য জনমত গড়ে তুলতে হবে এবং আন্তর্জাতিক ভাবে এর স্বীকৃতি আদায় করতে হবে।
ক্স আমাদের দেশের নদীগুলি প্রতিনিয়ত গতিপথ পরিবর্তন করে এবং নতুন পলল গঠন করে। এই অবন্থার পরিবর্তন করা না গেলেও সঠিক ব্যবস্থাপনার দ্বারা পলল ভ‚মির ব্যবহার নিশ্চিত করা যেতে পারে।
পাঠসংক্ষেপ
একটি সীমান্তবর্তী নদী হিসাবে মেঘনা নদী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী। এছাড়া এদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক
কর্মকান্ড সবকিছুর সাথে এই নদী সম্পৃক্ত। তাই এই নদীর গুরুত্ব ও অবদান অনেক বেশি। এ কারণে এই নদী ব্যবস্থায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
১. শূন্যস্থান পূরণ করুনঃ
১.১. মানুষের জীবনযাত্রার উপর .... বিস্তারকারী .... হিসেবে .... নাম উল্লেখযোগ্য।
১.২. নদীগুলোর প্রাথমিক, .... এবং পরিণত অবস্থা ...... দেশে অবস্থিত হওয়ায় .... নিয়ে চলছে .... চক্রান্ত।
১.৩. মেঘনা মনিপুর রাজ্যের উত্তর দিকস্থ.... থেকে .... হয়ে কিছুদুর পর্যন্ত .... ও .... রাজ্যের মধ্যে সীমারেখা
রচনা করছে।
১.৪. বরাক নদী ভারতের .... .... জেলার .... নিকট থেকে পশ্চিমদিকে প্রবাহিত হয়ে শ্রীহট্ট জেলার .... নামক
স্থানে দুটো ধারায় বিভক্ত হয়।
১.৫. মেঘালয়ের .... থেকে উৎপন্ন অনেকগুলি .... ও .... উত্তর দিক থেকে .... সাথে মিলিত হয়।
১.৬. সুরমা ও .... দুই অংশ মিলিত হওয়ার পর .... নীচে .... নাম ধারণ করে এবং পরবর্তীতে এই .... ....
বেসিনে মিলিত হয়।
১.৭. লোয়ার .... সাথে ব্রহ্মপুত্রঃ .... ও .... পানি এসে .... এবং এই প্রবাহ পরে .... পড়েছে।
১.৭. উত্তরঃ মেঘনার, যমুনা, গঙ্গার, মিশেছে, বঙ্গোপসাগরে।
১.৮. প্রধান .... সাথে অনেক ছোট ছোট .... নদীর .... এখানে মিলিত হয়।
১.৯. মেঘনার অববাহিকা .... মধ্যে সর্বাপেক্ষা .... .... এবং প্রবাহ মূলতঃ ....
১.১০. আপার মেঘনা .... লোহার মেঘনা নদী .... এবং .... নদী।
১.১১. একটি .... নদী হিসেবে .... নদী অন্যতম .... নদী।
২. সঠিক উত্তরের পার্শে¦ ‘স’ এবং মিথ্যা উত্তরের পার্শে¦ ‘মি’ লিখুন।
২.১. মেঘনা হিমালয় বহির্ভূত একটি নদী ব্যবস্থা।
২.২. মেঘনা নদী একটি পরিণত পর্যায়ের নদী ব্যবস্থা।
২.৩. মেঘনা অত্যন্ত গভীর ও নাব্য নদী, সারা বছর নৌ চলাচল করতে পারে।
২.৪. মেঘনা একটি সীমান্তবর্তী নদী ব্যবস্থা।
২. ৫. মেঘনা একটি পাহাড়ীয়া নদী।
সংক্ষেপে উত্তর লিখুনঃ
১. মেঘনা নদী ব্যবস্থার উৎপত্তি, নামকরণ ও গতিপথ আলোচনা করুন।
২. মেঘনা নদী ব্যবস্থার শাখা নদীসমূহের একটি বিবরণ দিন।
৩. মেঘনা নদী ব্যবস্থার গঠনগত বৈশিষ্ট্যাবলী আলোচনা করুন।
৪. মেঘনা-সুরমা নদী ব্যবস্থার পানিতাত্তি¡ক বৈশিষ্ট্যাবলী আলোচনা করুন।
৫. মেঘনা নদী ব্যবস্থাপনা ও আন্তর্জাতিক ইস্যু বিষয়ে একটি নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ লিখুন।

রচনামূলক প্রশ্ন
১. মেঘনা-সুরমা নদী ব্যবস্থা আলোচনা করুন।
২. মেঘনা নদীর গঠনগত ও পানিতাত্তি¡ক বৈশিষ্ট্যাবলী আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]