পাঠ ১.২ - ভ‚গোল ধারণার ক্রমবিকাশ (উবাবষড়ঢ়সবহঃ ড়ভ এবড়মৎধঢ়যরপ কহড়ষিবফমব)
এই পাঠ শেষে যা জানা যাবে–
ভ‚গোল ধারণার ক্রমবিকাশ সম্পর্কে।
ভ‚গোল ধারণার উদ্ভব ও বিকাশ যেমন সর্বত্র সমান নয় তেমনি সময়ভেদেও এর বিকাশে ব্যাপক
তারতম্য ঘটেছে। ভ‚গোল এর বিকাশকে কালক্রম, বিষয়ভিত্তিক এবং পর্যায়ভিত্তিক এই তিনভাবে
প্রকাশ করা যায়। তবে, কালক্রম অনুসারে বিবরণই তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক। কারণ, তাতে
সময় বিচারে ভূগোলের চিন্তার অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব। নি¤েœ কালক্রম অনুসারে
ভ‚গোলের বিকাশ আদি, মধ্য ও আধুনিক যুগ এই তিন পর্বে তুলে ধরা হলো।
আদিযুগ: ভ‚গোলের যাত্রা শুরু গ্রীক দার্শনিকদের জ্ঞানচর্চা থেকে। তাই শুরুতেই ভ‚গোল ধারণার
অগ্রগতিতে গ্রীক ও রোমানদের এসব অবদান সারণি-১.২.১ সংক্ষেপে দেওয়া হলো:
সার্বিকভাবে বলা যায়, গ্রীক যুগে ভ‚গোল বিষয়ক ধারণার যে উ¤েœষ ঘটে তা প্রধানত প্রাকৃতিক ও
গাণিতিক ভ‚গোলকে সমৃদ্ধ করে। গ্রীকদের প্রস্তাবিত পৃথিবীর তিনটি জলবায়ুঅঞ্চলের ধারণা-উষ্ণ,
নাতিশীতোষ্ণ ও শীতল অতিমাত্রায় সরলীকৃত হলেও আকর জ্ঞান হিসাবে বর্তমানেও এর
গ্রহনযোগ্যতা আছে।
গ্রীকদের দেওয়া জলবায়ুঅঞ্চলের
প্রধান ভাগগুলো কি কি।
১
চিত্র-১.২.১ : হেরোডোটাস-এর অংকিত পৃথিবীর মানচিত্র।
সারণি ১.২.১: গ্রীক ও রোমান ভ‚গোলবিদদের ভৌগোলিক অবদান
কালক্রম, বিষয়ভিত্তিক
এবং পর্যায়ভিত্তিক
ভূগোল এর বিকাশকে
কালক্রম অনুসারে বর্ণনা
করা তুলনামূলকভাবে
সুবিধাজনক।
গ্রীক যুগে প্রাকৃতিক ও
গাণিতিক ভূগোল জ্ঞান
সমৃদ্ধ হয়।
গ্রীকযুগ
সময়কাল ভ‚গোলবিদ ভৌগোলিক ধারণা
খ্রিস্টপূর্ব ৬০০-১৪০ সাল থেলেস ১. জ্যামিতিক চর্চার মাধ্যমে ভ‚পৃষ্ঠে অবস্থিত বিষয়সমূহের পরিমাপ ও অবস্থান
জানতে সক্ষম হন।
২. পৃথিবীকে পানিতে ভাসমান চাকতি আকৃতির বস্তু হিসাবে প্রথম ধারণা
দেন।
অ্যানাক্সিম্যান্ডার ১. খাড়া কাঠের দন্ডের সাহায্যে সূর্য-গ্রহ-তারা প্রভৃতির আপেক্ষিক অবস্থান
পরিমাপের উদ্যোগ নেন।
হেক্যাটিয়াস ১. ভ‚মধ্যসাগর, দ্বীপসমূহ, প্রণালী ও দূরবর্তী স্থান সম্পর্কে বর্ণনা দেন। তাঁর
মতে, পৃথিবীর আকার চ্যাপ্টা ও গোলাকার এবং গ্রীস এর কেন্দ্রে
অবস্থিত।
(৫০০) হেরোডোটাস ১. কৃষ্ণসাগর, রাশিয়ার স্তেপ তৃনভ‚মি ও পারস্য অঞ্চলের অধিবাসীদের
জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে বর্ণনা দেন।
২. প্রথম দ্রাঘিমা অংকন করেন।
৩. নীল নদ সৃষ্ট বদ্বীপ সম্পর্কে ধারণা দেন।
৪. পৃথিবীর মানচিত্র অংকন করেন (চিত্র-১.২.১)
(৩৮৪-৩২২) অ্যারিস্টটল ১. অক্ষাংশগত তারতম্য ভ‚-পৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশের মানুষের ব্যবহার নিয়ন্ত্রন
করে।
হিপোক্রেটাস ১. প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে কোনও অঞ্চলের মানুষের জাতীয় বৈশিষ্ট্যাবলীর
নিবীড় সম্পর্ক আছে।
(২৭৬) ইরেটোসথেনিস ১. পৃথিবীর আকৃতি গোলাকার নয় বলে তিনি দাবী করেন। তিনিই প্রথম
সঠিকভাবে পৃথিবীর আয়তন পরিমাপ করেন।
২. পৃথিবী থেকে সূর্য চন্দ্রের দূরত্ব পরিমাপের চেষ্টা করেন।
৩. অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা দ্বারা সঠিকভাবে কোন স্থানের অবস্থান নির্ণয় করেন।
৪. পৃথিবীর মানচিত্র অংকন করেন (চিত্র-১.২.২)
(১৪০) হিপারকাস ১. প্রথম অক্ষরেখার ভিত্তিতে পৃথিবীকে কয়েকটি জলবায়ু অঞ্চলে ভাগ করেন।
২. সমতল কাগজে গোলাকার পৃথিবীকে অংকন করার কৌশল আবিষ্কার
করেন।
রোমান যুগ
সময়কাল ভ‚গোলবিদ ভৌগোলিক ধারণা
খ্রিস্টপূর্ব ৬৪ সাল স্ট্রাে বা প্রধান গ্রন্থ ‘জিওগ্রাফিয়া'।
১. ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক ভ‚গোল সম্পর্কিত ধারণা দেন।
২. ভ‚গোল ও ইতিহাসের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা তুলে ধরেন।
৩. পৃথিবীর মানচিত্র তৈরী করেন (চিত্র-১.২.৩)
১৩৬ খ্রিস্টাব্দে ক্লডিয়াস টলেমি প্রধান গ্রন্থ - অ্যালমাগাষ্ট' ও ‘দি আউট লাইন অব জিওগ্রাফী'।
১. মানচিত্র প্রস্তুতকরণ।
২. পৃথিবীকে ৩৬০টি অংশে ভাগ করে অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা ব্যবহারের মাধ্যমে
যে কোন স্থানের সঠিক অবস্থান নির্নয়ের পদ্ধতি প্রচলন করেন।
৩. টলেমির প্রস্তুতকৃত মানচিত্রে প্রথম বঙ্গোপসাগর, গঙ্গা নদী ও তার উৎস
আদিযুগ।
৪. আরব উপদ্বীপ ও নীল নদের উৎস সম্পর্ক বর্ণনা দেন।
চিত্র-১.২.২ : ইরেটোসথেনিস এর অংকিত পৃথিবীর মানচিত্র।
ভ‚গোলে টলেমীর প্রধান
অবদান কি কি?
গ্রীক ও রোমান ভ‚গোলবিদদের অবদান সার্বিকভাবে ৪টি শাখায় ভাগ করা যায়। যথা:
ক) ভ‚গোল মূলত: অবস্থান ও বিভিন্ন স্থানের পারস্পরিক সংযোগ ও নির্ভরশীলতা বিষয়ক বর্ণনায়
সীমাবদ্ধ।
খ) কোরোগ্রাফি, প্রকৃতির বিভিন্ন বৈচিত্রময় অংশের মধ্যে মিল বা যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা।
গ) টোপোগ্রাফি, একটি পৃথক বিষয় বা এক ধরনের অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা।
ঘ) কসমোগ্রাফি, পৃথিবীর আকার, আয়তন ও এর বিভিন্ন অংশবিশেষের বর্ণনা।
গ্রীক ও রোমানদের সমসাময়িককালে চীন দেশেও ভ‚গোল জ্ঞানের বিকাশ ঘটে; বিশেষত ভ‚গোলে
তত্ত¡জ্ঞান ও সূ² পরিমাপ, শূন্যের ব্যবহার এবং দশমিক পদ্ধতি প্রচলন উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া,
চীনের স্থানভিত্তিক মৃত্তিকা, কৃষি উৎপাদন ও পানি পথের পরিবহন সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা, পানি
চক্রের ধারণা, অবাঞ্চিত বনভ‚মি ধ্বংসের কুফল সম্পর্কে আগাম সতর্কতা সেই সময়কার ভ‚গোল
ধারণার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ইঙ্গিত করে। এই সময়ে চীনের কাগজ আবিষ্কার, বই ছাপানোর
পদ্ধতি, বৃষ্টিমাপার যন্ত্র এবং সমুদ্রে ব্যবহার উপযোগী চুম্বকীয় কম্পাস উদ্ভাবন, ভ‚গোল জ্ঞানের
সম্প্রসারণে বিশেষভাবে অবদান রাখে।
গ্রীক ও রোমানদের
সমসাময়িক কালে
চীন দেশেও ভ‚গোল
জ্ঞানের বিকাশ
ঘটে।
চিত্র-১.২.৩ : ষ্ট্রাবোর অংকিত পৃথিবীর মানচিত্র
চিত্র ১.২.৪- ক্লডিয়াস টলেমির অংকিত পৃথিবীর মানচিত্র
আদিযুগে ভারতেও ভ‚গোল চর্চা হয়েছে। ধারণা করা হয় যে, ভারতীয় ভ‚গোলের উৎপত্তিতে ধর্ম
বিশেষ ভ‚মিকা রেখেছে। আদিযুগের ভারতীয় ধর্মগ্রন্থ ও পর্যটকদের ভ্রমনকাহিনী থেকে এই দেশের
ভ‚গোল জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়। তবে, জ্যোর্তিশাস্ত্র, গাণিতিক ভ‚গোল ও মানচিত্র অংকনে
ভারতীয়দের অবদানের কথা জানা যায়।
চৈনিক ভ‚গোলের
অবদান কি কি?
মধ্যযুগ
মধ্যযুগে ভৌগোলিক ধারণার বিকাশে এক ধরনের স্থবিরতা আসে। এই যুগের স্থায়িত্বকাল খ্রিস্টীয়
৩০০ সাল থেকে প্রায় ১৫০০ সাল পর্যন্ত। মধ্যযুগের ভ‚গোল ধারণার অন্যতম উৎস ছিল তীর্থযাত্রা
ও পর্যটকদের ভ্রমন বিবরণ। এই সব বিবরণে গ্রীক ও রোমানদের থেকে অর্জিত ভৌগোলিক
জ্ঞানকে সম্প্রসারিত করার কোন প্রয়াস ছিল না। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই নিরপেক্ষ তথ্যের অভাব।
ভারতীয় ভ‚গোলের
উৎপত্তিতে ধর্ম বিশেষ
ভ‚মিকা রেখেছে।
খ্রীঃ ৩০০-
১৫০০।তীর্থযাথা
ও পর্যটকদের ভ্রমণ।
তাছাড়া, মিশনারী বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ইতস্তু বিক্ষিপ্ত তথ্যাদি থেকেও কিছুকিছুভ‚গোল
বিষয়ক ধারণা পাওয়া যেত। তবে ভৌগোলিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলমানদের উল্লেখযোগ্য অবদানের
কথা স্বীকার করা হয়। মুসলমানদের এসব অবদানের কথা নিচের সারণী ১.২.২ এ উল্লেখ করা
হলো:
সারণী ১.২.২ : মুসলীম ভ‚গোলবিদদের অবদান (৭০০-১৫০০ সাল)
ভ‚গোলবিদ অবদান
ইবনে ইউকাল (৯০০ সাল) পৃথিবীর ক্রান্তীয় অঞ্চলে মানববসতি নাই এরূপ পুরাতন গ্রীক ধারণা ভ্রান্ত প্রমাণ করেন।
আল বলখি (৯২১ সাল) পৃথিবীর প্রথম জলবায়ুসম্বন্ধীয় মানচিত্র (পষরসধঃরপ ধঃষধং) তৈরী করেন।
আল মাসুদি (নবম শতাব্দীর শেষে) মৌসুমী বায়ুর বিশদ বিবরণ দেন।
আল মাকদিসি (৯৮৫ সাল) পৃথিবীকে ১৪টি জলবায়ুঅঞ্চলে ভাগ করেন।
আল বিরুনী ও ইবনে সিনা প্রাকৃতিক ভ‚গোল চর্চা করেন। ভারত ভ্রমন কিতাব আল হিন্দুপুস্তকে ভারত
উপমহাদেশ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক তথ্য প্রকাশিত হয়।
আল ইদ্রিসি (১১৫৪) রোমান পন্ডিত টলেমির অনেক ধারণাকে ভ্রান্ত প্রমানিত করেন।
ইবনে বতুতা মধ্য এশিয়া, ভারতবর্ষ ও চীন ভ্রমন করেন। ভ্রমনভিত্তিক বহু মূল্যবান ভৌগোলিক
তথ্যাদি প্রকাশ করেন।
ইবনে খালদুন মুসলিম রাজনৈতিক-ভৌগোলিক দর্শনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন।
মধ্যযুগের শেষভাগে শুরু হয় ইউরোপীয় দেশগুলোর সমুদ্র অভিযান। সমুদ্রের তটরেখা বরাবর
পর্তুগীজ নাবিকগণ সমুদ্র অভিযান শুরু করে। এ সব নাবিকদের মধ্যে কলম্বাস, ভাসকো-ডা-গামা,
বার্থোলোমিউ দিয়াজ, ম্যাগেলান উল্লেখযোগ্য। কলম্বাস নতুন দেশ আবিষ্কারের সাথে আটলান্টিকের
সমুদ্র স্রোত ও বায়ুপ্রবাহ সম্পর্কে বিস্তৃত তথ্য সংগ্রহ করেন। ভাসকো ডা গামা ভারতে পৌঁছবার
সহজতম সমুদ্রপথ আবিষ্কার করেন। নতুন দেশ আবিষ্কার এবং তা উপনিবেশ হিসাবে গড়ে
তোলার প্রক্রিয়া চলে প্রায় অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত। এ সব আবিষ্কারের মাধ্যমে পৃথিবী সম্পর্কে বহু
অজানা তথ্য জানার সুযোগ তৈরী হয়। এ সময় নৌ অভিযানের প্রয়োজনে মানচিত্র বিদ্যার ব্যাপক
উন্নয়ন সাধন হয়। তাছাড়া, সমুদ্রে দিক নির্দেশনার জন্য প্রথমে ক্রসস্টাফ, পরে অকট্যান্ট এবং তা
আরও পরিমার্জিত হয়ে সেক্সট্যান্ট নামক যন্ত্র আবিষ্কার হয়।
সমুদ্রে থাকা অবস্থায় সঠিক দ্রাঘিমাগত অবস্থান ও সময় নির্ণয়ের জন্য এ সময় জন হ্যারিসন নামক
একজন ব্রিটিশ নাবিক ১৭১৪ সালে পেন্ডুলাম ঘড়ি তৈরী করেন। ক্যাপ্টেন কুক ১৭৬৮ সালে ভারত
মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ অংশে অষ্ট্রেলিয়া ও অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের অস্তিত্বের
সঠিক অবস্থান গত ধারণা দেন।
মধ্যযুগের শেষভাগের সবচেয়ে বড় ভৌগোলিক আবিষ্কার হলো ভ‚কেন্দ্রিক ব্রহ্মাÐের দৃষ্টিভঙ্গির ভ্রান্ত
ধারণার পরিবর্তন। নিকোলাস কোপারনিকাস ১৪৯৭-১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে ধারণা দেন যে, সমস্ত গ্রহই
সূর্যের চারিদিকে ঘোরে। পরে কেপলার (১৬১৮ সালে) ও প্রমাণ করেন যে গ্রহগুলো সূর্যের
চারিদিকে উপবৃত্তাকার পথে ঘোরে। গ্যালিলিও (১৬২৩ সালে) কোপারনিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক মত
অভ্রান্ত বলে প্রমাণ দাখিল করেন।
সপ্তদশ শতাব্দীর শুরু থেকে ভ‚গোল এর বিজ্ঞানভিত্তিক নতুন ধ্যান ধারণার উ¤েœষ ঘটতে থাকে।
এইক্ষেত্রে ভ্যারেনিয়াস ও ক্যান্টের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ভ্যারেনিয়াসই প্রথম ভ‚গোল
‘সাধারণ' ও ‘বিশেষ' অংশে ভাগ করেন যা পরবর্তীতে ‘প্রণালীবদ্ধ' (ঝুংঃবসধঃরপ) ও ‘আঞ্চলিক'
(জবমরড়হধষ) ভ‚গোল হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। ‘সাধারণ' ভ‚গোল সমস্ত পৃথিবীকে ইউনিট
মধ্যযুগ
সমুদ্র অভিযান
নিকোলাস
কোপারনিকাস,
কেপলার,
গ্যালিলিও
হিসাবে পাঠ করে কিন্তু‘বিশেষ' ভূগোলে পৃথিবীর এক একটি অঞ্চল ও দেশকে আলাদাভাবে
জানার চেষ্টা করা হয়।
কান্ট প্রাকৃতিক ভ‚গোলকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে মানব
সভ্যতার উন্নতিতে প্রাকৃতিক ভ‚গোলের বিশেষ ভ‚মিকা আছে। তাছাড়া, কান্ট প্রকৃতির সাথে
মানুষের সম্পর্ককে অবিচ্ছেদ্য হিসাবে দেখেছেন। তাঁর মতে ইতিহাসের ভিত্তিভ‚মি পানি ভ‚গোল।
সমগ্র অষ্টদশ শতাব্দীব্যাপী ভুগোলে প্রণালীবদ্ধ পদ্ধতির চর্চা হতে থাকে এবং প্রাকৃতিক বিষয়াবলীর
প্রতি বেশী ঝোঁক দেখা যায়। এই সময়ের পূর্বে ভ‚মিরূপের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিপর্যয়বাদ
(ঈধঃধংঃৎড়ঢ়যরংস) দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে সামঞ্জস্যবাদ (টহরভড়ৎসরঃধৎরধহরংস) চালু হয়। এই
মতবাদ অনুযায়ী ভ‚মিরূপ আকস্মিক কোন ভ‚-আন্দোলনের কারণে নয় বরং ধীরে ধীরে নানান
প্রক্রিয়ার কার্যকারণের ফলে বর্তমান ভ‚মিরূপের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান যে সব প্রক্রিয়া কার্যরত
আছে, অতীতেও একই প্রাক্রিয়া কাজ করেছে। তাই, ‘বর্তমানই অতীতের চাবি”(চৎবংবহঃ রং ঃযব
শবু ঃড় ঃযব ঢ়ধংঃ)।
ভ‚গোল এর বিকাশ সাধনে অষ্টাদশ শতাব্দী গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সময় বিজ্ঞানের এক স্বতন্ত্র শাখা
হিসাবে ভ‚গোল স্বীকৃতি পায়। তাছাড়া, এই বিষয়ের আওতায় কি পাঠ করা হবে, তা কিভাবে হবে
এই নিয়েও যথেষ্ট অগ্রগতি সাধিত হয়। রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ভ‚গোল ও প্রাকৃতিক ভ‚গোল এর
পরিধি ও মিলনক্ষেত্র নিয়ে এই সময় বেশ বির্তক চলতে থাকে।
মধ্যযুগের মুসলমানদের ভৌগোলিক জ্ঞানের
প্রধান দিকগুলো কি কি?
আধুনিক যুগ
আধুনিক ভ‚গোলের গোড়াপত্তন হয় জার্মান ভ‚গোলবিদ আলেকজান্ডার ফন হুমবোল্ট ও কার্ল
রিটারের মাধ্যমে। ভ‚গোল পাঠের পদ্ধতি নিয়ে উভয়ে মনে করতেন যে, কোন স্থানের ভৌগোলিক
বিচার শুরু হবে সেই স্থানের প্রাকৃতিক পরিবশে এর বর্ণনা দিয়ে, তারপরে প্রধান উৎপন্ন দ্রব্য ও
অন্যান্য মানবীয় বিষয়াবলীর বর্ণনা দিতে হবে। উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এই পাঠ পদ্ধতি অনুসৃত
হয়। এই পদ্ধতির লক্ষ্য হলো পরিবেশের জৈব ও অজৈব বিষয়ের মধ্যে অর্থপূর্ণ সম্পর্ক খুঁজে দেখা
যা প্রাকৃতিক নিমিত্তবাদ হিসাবে চিহ্নিত হয়। ফলে, আধুনিক ভ‚গোলের শুরু থেকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়
প্রাকৃতিক বিষয়গুলোকে তাদের প্রাকৃতিক পরিপ্রেক্ষিতে রেখে এদের কার্যকারণ সম্বন্ধে জানার চেষ্টা
করা।
হুমবোল্ট ও রিটারের মৃত্যুর পর এদের মতবাদকে যারা সমুন্নত রাখার জন্য চেষ্টা করেছেন তম্মধ্যে
ফ্রেডরিক রাটজেল ও এলেন সেম্পল অন্যতম। এরা উভয়ই মানব সমাজের প্রকৃতি নির্ধারণে
পরিবেশের অপরিসীম নিয়ন্ত্রণ থাকে বলে রিটারের ধারণা সমর্থন করেন। এইভাবেই পরিবেশগত
নিয়ন্ত্রণ বাদ চালূু হয়। রাটজেল মনে করতেন, মানব সমাজকে বুঝতে প্রথমে ‘পরিবেশের
শক্তিগুলোকে ভালভাবে জানা সবচেয়ে জরুরী। বিংশ শতাব্দীর গোড়াতেই পরিবেশগত
নিয়ন্ত্রনবাদের বিপরীতে ভৌগোলিকদের দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় সম্ভাবনাবাদের (চড়ংংরনরষরংস) দিকে।
কিভাবে প্রকৃতির বৈরী/প্রতিক‚ল অবস্থাকে খাপ খাইয়ে মানুষ প্রকৃতির বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে
লাগিয়েছেন ভৌগোলিকগন তার ভিত্তিতেই সম্ভাবনাবাদ ধারণাকে এগিয়ে নিয়ে যান।
সাধারণ ও বিশেষ
প্রণালীদ্ধ
ও আঞ্চলক।
আলেকজান্ডার-ফনহুমবোল্ট
ও কার্ল রিটার
ফ্রেডরিক রাটজেল ও
এলেন
চার্চিল সেম্পল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভ‚গোলে শুরু হয় মাত্রিক বিপ্লব (ছঁধহঃরঃধঃরাব জবাড়ষঁঃরড়হ)। এ
বিপ্লবের প্রবক্তারা মনে করেন যে, ভ‚গোলকে আরো তাত্তি¡ক ভিত্তিতে দাঁড় করাতে হলে এতে আরও
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার প্রয়োজন এবং তত্তে¡র দিকটি সরলভাবে গড়ে তোলা দরকার।
সংখ্যাতাত্তি¡ক এ বিপ্লব ভূগোলকে ভাবমূলক (ওফবড়মৎধঢ়যরপ) শাস্ত্র থেকে রীতিমূলক
(ঘড়সড়ঃযবঃরপ) বিজ্ঞানে পরিণত করে। ভ‚গোলের এ মাত্রিক বিপ্লব সমীক্ষার পদ্ধতি ও উদ্দেশ্যে
মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। সংখ্যাতাত্তি¡ক কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে ভৌগোলিকরা
সাধারনীকরণ সূত্র ও তত্ত¡ গঠন, মডেল নির্মাণের এবং ক্ষেত্রবিশেষে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পূর্বাভাস
দেওয়ার প্রতি অধিকতর মনোযোগী হন। এ সব ভূগোলবিদদের মধ্যে চরলে, পিটার হেগেট,
উইলিয়াম বাংগে, ব্রায়ান ব্যারী অন্যতম। ভ‚গোলের এ ধারা এখনও অব্যাহত আছে।
আধুনিক ভুগোলে হুমবোল্ড ও রিটার
কি জন্য বিখ্যাত?
পাঠ সংক্ষেপ
ভূগোল বিষয়ের বিকাশকে কালক্রম, বিষয়ভিত্তিক ও পর্যায়ভিত্তিক এ তিনভাবে প্রকাশ করা যায়।
ভ‚গোল চর্চার আদি যুগে প্রাকৃতিক ও গাণিতিক ভ‚গোল জ্ঞান সম্বৃদ্ধ ছিল। মধ্যযুগে ভ‚গোল চর্চায়
স্থবিরতা আসে। এ সময় ভৌগোলিক জ্ঞান বিস্তারে মুসলমানগণ উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন।
বিশেষত: পৃথিবীর জলবায়ু, ক্রান্তীয় অঞ্চলের মানব বসতি সম্পর্কিত ধারণা ও মৌসুমী জলবায়ু
সংক্রান্ত ধারণার ব্যাপক অগ্রগতি হয়। আধুনিক যুগের শুরুতে প্রাকৃতিক নিমিত্তবাদ-এর প্রচলন
ঘটে। তবে, বিংশ শতাব্দীর শুরুতেই নিমিত্তবাদের বিপরীতে সম্ভাবনাবাদের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়।
এ সময় ভ‚গোল জ্ঞান চর্চা সংখ্যাতাত্তি¡ক বিপ্লবের দিকে অগ্রসর হয় এবং বর্তমানে তা আরও
পরিশীলিত হয়ে তত্ত¡গঠন ও মডেল নির্মাণের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি
ব্যবহার ও তত্তে¡র
সরল উপস্থাপনা
পাঠোত্তর মূল্যায়ন ১.২
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
১. সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন (সময়- ৩ মিনিট)।
১.১ ভ‚গোল যাত্রার শুরুক. গ্রীকদের খ. রোমানদের গ. মুসলমানদের থেকে
১.২ গ্রীকদের প্রস্তাবিত পৃথিবীর জলবায়ুঅঞ্চলক. ৩টি খ. ৪টি গ. ৫টি
১.৩ পৃথিবীর সঠিক আয়তন প্রথম পরিমাপ করেনক. হেরোডোটাস খ. ইরেটোসথেনিস গ. ক্লডিয়াস টলেমি
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (সময় ৬ মিনিট)ঃ
১. প্রাকৃতিক নিমিত্তবাদ বলতে কি বুঝায়?
২. সম্ভাবনাবাদের ধারণাটি কি বুঝায়?
৩. ভ্যারিনিয়াস এর প্রণালীবদ্ধ ও আঞ্চলিক ভ‚গোল ধারণাটি ব্যাখ্যা করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১. গ্রীক ও রোমান যুগের ভ‚গোল জ্ঞানের বিভিন্ন দিক আলোচনা করুন।
২. মধ্য যুগের ভ‚গোল সম্পর্কে ধারণা দিন।
৩. ভ‚গোলের আধুনিক যুগ সম্পর্কে লিখুন।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ