পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদসমূহের তালিকার মধ্যে খনিজ সম্পদ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ দিক বিবেচনায়
আনলে বাংলাদেশে খনিজ সম্পদ পর্যাপ্ত নয়। আমাদের প্রয়োজনীয় চাহিদার তুলনায় খনিজ সম্পদের পরিমান
কম থাকার কারণে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশে যে সকল খনিজ সম্পদ সঞ্চিত রয়েছে
তার বর্ণনা নিম্নে দেয়া হলোঃ
কয়লাঃ
কয়লাকে শক্তির প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয় । কলকারখানা, রেলগাড়ি, জাহাজ প্রভৃতি চালনা করার
জন্য কয়লা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। জ্বালানী হিসেবেও কয়লা ব্যবহৃত হয়। কয়লা সম্পদে বিশ্বের অন্যান্য দেশের
মতো বাংলাদেশ তত উন্নত নয়। আমাদের দেশের ফরিদপুরের বাঘিয়া ও চান্দা বিল , খুলনার কোলাবিল এবং
সিলেটের কিছু অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে পীট জাতীয় কয়লার সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়া রাজশাহী, বগুড়া,
নওগাঁ এবং সিলেট জেলায় উৎকৃষ্টমানের বিটুমিনাস ও লিগনাইট কয়লার সন্ধান পাওয়া গেছে।
খনিজ তেলঃ
বিশেষজ্ঞগনের ধারনা অনুযায়ী উল্লেখকরা যায় যে, বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল অঞ্চলে খনিজ তেল মজুদ
রয়েছে। ১৯৮৬ সালে সিলেট জেলার হরিপুরে প্রাকৃতিক গ্যাসের সপ্তম কূপে তেল পাওয়া গেছে। এ কূপ থেকে
দৈনিক প্রায় ৬০০ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল তোলা হচ্ছে। এ অপরিশোধিত তেল চট্টগ্রামের তেল
শোধনাগারে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। অশোধিত তেল থেকে পেট্টোল, কেরোসিন, বিটুমিন ও অন্যান্য দ্রব্য পাওয়া
যায়। মৌলভীবাজার জেলার বরমচালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় তেলক্ষেত্রটি অবস্থিত। এ ক্ষেত্র থেকে দৈনিক প্রায়
১২০০ ব্যারেল তেল উত্তোলিত হয়।
চুনাপাথরঃ
সিলেট জেলার জাফলং, জকিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ জেলার ভাঙ্গারঘাট, বাগলিবাজার, লালঘাট এবং চট্টগ্রাম জেলার
সীতাকুন্ড ও কক্সবাজার জেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপে চুনাপাথর পাওয়া যায়। রাজশাহী বিভাগে জয়পুরহাট জেলার
জামালগঞ্জ ও জয়পুরহাটে চুনাপাথর পাওয়া যায়। সিমেন্টের জন্য কাঁচামাল হিসেবে চুনাপাথর ব্যবহার করা
হয়। এছাড়া গাস, বিচিং পাউডার, সাবান, কাগজ প্রভৃতি শিল্পে চুনাপাথর ব্যবহার হয়ে থাকে।
চীনামাটিঃ
রাজশাহী, নওগাঁ ও ময়মনসিংহে চীনামাটি পাওয়া গেছে। এটি তৈজসপত্র তৈরীতে এবং বৈদ্যুতিক ইনস্যুলেটর
ও স্যানিটারী সরঞ্জাম প্রভৃতি তৈরীতে ব্যবহৃত হয়।
তামাঃ
রংপুর জেলার রানীপুকুর ও পীরগঞ্জ এবং দিনাজপুর জেলার মধ্যপাড়ায় কঠিন শিলার সঙ্গে তামার সন্ধান পাওয়া
গেছে।
]
কঠিন শিলাঃ
রেলপথ, রাস্তাঘাট, গৃহ, সেতু ও বাঁধ নির্মান এবং বন্যা নিয়ন্ত্রন প্রভৃতিকাজে কঠিনশিলা ব্যবহৃত হয়। রংপুর
জেলার রানীপুকুর ও শ্যামপুরে এবং দিনাজপুর জেলার মধ্যপাড়ায় কঠিন শিলার সন্ধান পাওয়া গেছে। রংপুরের
রানীপুকুর থেকে বৈদেশিক সহযোগিতায় শিলা উত্তোলনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের তথ্য মতে, এই
পাঠ-৩.৫
এসএসএইচএল বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
ইউনিট-৩: বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সম্পদসমূহ পৃষ্ঠা - ৭৯
স্থান থেকে বছরে প্রায় ১৭ লক্ষ টন শিলা উত্তোলন করা যাবে। দিনাজপুরের মধ্যপাড়া থেকে শিলা উত্তোলন
করার জন্য বৈদেশিক সহযোগিতা গ্রহণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
সিলিকাবালিঃ
সিলিকাবালি সাধারনত কাঁচ নির্মানে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া রং, রাসায়নিক দ্রব্য ইত্যাদি তৈরিতেও
সিলিকাবালি ব্যবহৃত হয়। সিলেট জেলার নয়াপাড়া, শাহজীবাজার, কুলাউড়া, শেরপুর জেলার বালিজুরি, চট্টগ্রাম
এর দোহাজারীতে সিলিকাবালির সন্ধান পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার বর্গফুট
সিলিকাবালি উৎপাদিত হয়ে থাকে।
পারমানবিক খনিজ পদার্থঃ
পারমানবিক খনিজ পদার্থ সাধারনত ভারি ধাতব শিল্পে ব্যবহৃত হয়। কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া থেকে
টেকনাফ পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় প্রচুর খনিজ বালির সন্ধান পাওয়া গেছে। পারমানবিক খনিজ পদার্থগুলো হল
জিরকন, মোনাজাইট, ইলমেনাইট, ম্যাগনেটাইট, লিউকক্সেন প্রভৃতি। এ খনিজ সংগ্রহের জন্য অষ্ট্রেলিয়া
সরকারের সহায়তায় একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
গন্ধকঃ
গন্ধক সাধারনত রাসায়নিক শিল্পে ব্যবহার করা হয়। বারুদ, কীটপতঙ্গ নাশক ঔষধ তৈরী, এসিড, পেট্রোলিয়াম
পরিশোধন, দিয়াশলাই, আতশবাজি প্রভৃতি তৈরীতে গন্ধক ব্যবহার করা হয়। কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া
দ্বীপে গন্ধক পাওয়া গেছে।
প্রাকৃতিক গ্যাসঃ
বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যান্য সকল দেশের তুলনায় খনিজ সম্পদে পিছিয়ে রয়েছে। তবে প্রাকৃতিক গ্যাসের
ক্ষেত্রে সমৃদ্ধ রয়েছে এ দেশ। প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ন জ্বালানী সম্পদ, যা সমগ্র দেশের
মোট জ্বালানী ব্যবহারের শতকরা ৭০ ভাগ চাহিদা পূরণ করে থাকে। ফেব্রæয়ারী, ২০০৩ পর্যন্ত দেশের
আবি®কৃত মোট গ্যাস ক্ষেত্রের সংখ্যা ২২ টি। বর্তমানে ১২টি ক্ষেত্রের ৫৪ টি কূপ হতে গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে।
নিম্নের প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ সারনীতে দেয়া হলোঃ
সারণী ঃ প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ (বিলিয়ন ঘনফুট)
সাল উৎপাদনের পরিমাণ (বিলিয়ন ঘনফুট)
২০০১-০২ ৩৯২
১৯৯৮--৯৯ ৩০৮
১৯৯৭-৯৮
উৎসঃ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০০৩। (পৃষ্ঠা - ৮৫)
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদের পরিমাণ প্রায় ২৪.৭৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। বাংলাদেশের গ্যাস
ক্ষেত্রগুলো হল সিলেট, ছাতক, রশীদপুর, হবিগঞ্জ, কৈলাশটিলা, বাখরাবাদ, তিতাস, বেগমগঞ্জ, কুতুবদিয়া,
কামতা, সেমুতাং. ফেনী, বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, জালালাবাদ, মেঘনা, নরসিংদী, শাহবাজপুর, সাঙ্গু, বিবিয়ানা,
মৌলভীবাজার প্রভৃতি।
সর্বোপরি বলা যায় যে, খনিজ সম্পদগুলো সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যদি উত্তোলন ও এর সদ্ব্যাবহার করা যায়
তবে তা দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে বলে আশা করা যায়।
নি¤েœ বাংলাদেশের খনিজ ক্ষেত্রগুলোর অবস্থান মানচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হলো ঃ
সিমেন্টের জন্য কাঁচামাল হিসেবে চুনাপাথর ব্যবহার
করা হয়।
প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি
সম্পদ।
দিনাজপুর জেলার মধ্যপাড়ায় কঠিন শিলার সন্ধান
পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশের সমুদ্র উপকুল অঞ্চলে খনিজ তেল মজুদ
রয়েছে বলে ধারনা করা হয়।
অপরিশোধিত তেল চট্টগ্রামের শোধনাগারে প্রক্রিয়া
জাত করা হয়।
পাঠ সংক্ষেপঃ
পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদসমূহের মধ্যে খনিজ সম্পদ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে যেসব খনিজ সম্পদ
সঞ্চিত রয়েছে তা হলো- কয়লা, খনিজ তেল, চুনাপাথর, চীনামাটি, তামা, কঠিনশিলা, সিলিকা বালি,
পারমাণবিক খনিজ পদার্থ, গন্ধক, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি। প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ
জ্বালানি সম্পদ। সিলেট, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মনবাড়িয়া, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, মৌলভী বাজার,ভোলা প্রভৃতি জেলায়
প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায়। বাংলাদেশের রাজশাহী, বগুড়া, নঁওগা এবং সিলেট জেলায় উৎকৃষ্ট মানের
বিটুমিনাস ও লিগনাইট কয়লার সন্ধান পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল অঞ্চলে খনিজ তেল মজুদ
রয়েছে। সিমেন্টের জন্য কাঁচামাল হিসেবে চুনাপাথর ব্যবহার করা হয়। পারমাণবিক খনিজ পদার্থ সাধারণত
ভারী ধাতব শিল্পে ব্যবহার করা হয়।
১. শূণ্যস্থান পূরণ করুনঃ
১.১ বাংলাদেশের প্রাপ্ত কয়লা তত বেশী ---------- নয়।
১.২ ধারণা করা যাচ্ছে বাংলাদেশের ----------------- অঞ্চলে খনিজ তেল মজুদ রয়েছে।
১.৩ সিলেটের হরিপুরের তেল ক্ষেত্র থেকে ---------------- উত্তোলন করা হয়।
১.৪ দিনাজপুর জেলার মধ্যপাড়ায় --------------- সন্ধান পাওয়া গেছে।
১.৫ কক্সবাজার জেলার ---------------- দ্বীপে গন্ধক পাওয়া গেছে।
১.৬ বাংলাদেশে মোট আবি®কৃত গ্যাস ক্ষেত্রের সংখ্য ---------------- টি।
২. সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√ ) চিহ্ন দিনঃ
২.১ বিটুমিনাস কি জাতীয় খনিজ পদার্থ?
ক) কয়লা খ) চুনাপাথর
গ) কঠিন শিলা ঘ) চীনামাটি
২.২ বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে ব্যাপক পরিমাণ খনিজ তেল মজুদ আছে বলে ধারণা করা হয়?
ক) সোপান এলাকা খ) টারশিয়ারী পাহাড় এলাকা
গ) পাবণ সমভূমি এলাকা ঘ) সমুদ্র উপকূল এলাকা
২.৩ চুনাপাথর থেকে নিচের কোন জিনিষটি তৈরী করা যায় না?
ক) গাস খ) বিচিং পাউডার
গ) স্যানিটারী সরঞ্জাম ঘ) সাবান
২.৪ পারমানবিক খনিজ পদার্থ নীচের কোন স্থানে পাওয়া যায় না?
ক) কুতুবদিয়া খ) টেকনাফ
গ) কুমিল্লা ঘ) কক্সবাজার
২.৫ নীচের কোন দ্বীপে গন্ধক পাওয়া গেছে?
ক) কুতুবদিয়া খ) ভোলা
গ) হাতিয়া ঘ) স›দ্বীপ২
২.৬ বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাস জ্বালানী ব্যবহারে কত শতাংশ চাহিদা পূরণ করছে?
ক) ৫০ ভাগ খ) ৬০ ভাগ
গ) ৭০ ভাগ ঘ) ৮০ ভাগ
২.৭ বাংলাদেশে কয়টি কুপ থেকে গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে?
ক) ৫১ টি খ) ৫২ টি
গ) ৫৩ টি ঘ) ৫৪ টি
সংক্ষিপ্ত উত্তর দিনঃ
১. বাংলাদেশের খনিজ সম্পদসমূহ কি কি?
২. বাংলাদেশে কঠিন শিলা কোথায় পাওয়া গেছে?
৩. বাংলাদেশে কি পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস সঞ্চিত আছে?
৪. বাংলাদেশের কোথায় কোথায় প্রাকৃতিক গ্যাস আবি®কৃত হয়েছে?
রচনামূলক প্রশ্নঃ
১. বাংলাদেশের প্রধান প্রধান খনিজ সম্পদসমূহের ভৌগোলিক বন্টন সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখুন।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ