জরিপ কাকে বলে ? ধরণ ও উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে জরিপের শ্রেণীবিন্যাস করুন।

প্রয়োজনীয়তা, গুণগত মান এবং ব্যবহার ও প্রয়োগ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে আকাশ চিত্র ও উপগ্রহ চিত্র গবেষণার
কাজে বেশী ব্যবহৃত হলেও এতে উপস্থাপিত তথ্যাদি অনেক সময় যাচাইয়ের তাগিদে ভ‚মি-জরিপ প্রয়োজন হয়ে থাকে।
সুতরাং এর প্রয়োজনীয়তা থাকবে এবং কখনই কমবে না।
ভ‚-পৃষ্ঠের উপরিভাগে বিভিন্ন বস্তুর প্রকৃত অবস্থান আপেক্ষিক উচ্চতা দিক, রৈখিক ও কৌনিক দূরত্ব পরিমাপের মাধ্যমে
একটি স্কেল অনুসরণ করে সমতল কাগজে উপস্থাপন করার পদ্ধতিকে জরিপ বলে। জরিপ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং
ভ‚গোলবিদদের নিকট এর গুরুত্ব অপরিসীম। প্রত্যেক দেশে সরকারী পর্যায়ে ‘জরিপ বিভাগ‘ বলে একটি কার্যালয় থাকে
যাদের কাজ হল দেশের সীমারেখা নির্ধারন করা, প্রতিবেশী দেশের সাথে সীমারেখা নিয়ে কোন সমস্যা সৃষ্টি হলে তা
নিরসন করা, দেশের জন্য সময়ে সময়ে ভ‚মি জরিপের মাধ্যমে মৌজা, ভ‚-সংস্থানিক মানচিত্র তৈরী, নতুন তথ্য পুরাতন
মানচিত্রে সংযোজন ইত্যাদি পরিচালনা করা। বাংলাদেশের জরিপ বিভাগ ঢাকা তেজঁগাও এলাকায় অবস্থিত।
মূল শব্দ ঃ
জরিপ, রৈখিক ও কৌণিক পরিমাপ, ধরাকৃতি ও সমতল জরিপ, জরিপ ষ্টেশন, ভিত্তি রেখা, শিকল রেখা, অফসেট, পরীক্ষণ
রেখা, টাইরেখা এবং রেনজিং লাইন।
জরিপের গুরুত্ব ঃ
নি¤œলিখিত কারণে জরিপ গুরুত্তপূর্ণ ঃ
১. মানচিত্র ও নকশা তৈরী করা ;
২. পূর্বে তৈরী করা মানচিত্রে বা নকশায় কোন নতুন বস্তুর অবস্থান বা তথ্য সন্নিবেশ করা;
৩. মৌজা মানচিত্র ও ভ‚-সংস্থানিক মানচিত্র তৈরী করা (গবেষণা বা সামরিক কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে);
৪. বাঁধ, রাস্তা, রেলপথ, ইমারত, ভবন ইত্যাদি নির্মানের প্রাক্কালে এদের অবস্থা ও বিস্তার নিরুপন করা এবং
৫. প্রতœতাত্বিক, ভ‚-তাত্বিক এবং যে কোন উন্নয়নমূলক কাজে জরিপ পদ্ধতি ব্যবহার করা।
পরিমাপ (
জরিপ কার্যে সাধারণতঃ দুই ধরনের পরিমাপ ব্যবহার করা হয় যথা- (১) রৈখিক পরিমাপ
এবং (২) কৌণিক পরিমাপ দুই বা ততোধিক বস্তুর মধ্যে সরাসরি দূরত্ব নির্ণয় করাই
রৈখিক পরিমাপ। যেমন- ঢাকা হতে সাভার ৩৫ কিঃ মিঃ। আবার কোন এক বিন্দু হতে উলম্ব ও অনুভ‚মিক দুরত্ব
পরিমাপকে কৌণিক পরিমাপ বলে। এই দুই ধরনের পরিমাপের মাধ্যমেই জরিপ কার্য পরিচালনা করা হয়। জরিপের সব
রকম পরিমাপের কাজ মাঠেই করা হয়। বিভিন্ন পরিমাপ তাৎক্ষণিকভাবে ফিল্ড (ঋরবষফ ইড়ড়শ) বইতে লিপিবদ্ধ করতে
হয়। মাঠের কাজ শেষ হলে ঘরে বসে (প্রয়োজনবোধে) একটি সুনির্দিষ্ট স্কেলের মাধ্যমে ইতিপূর্বে লিপিবদ্ধ তথ্যের সাহায্যে
জরিপকৃত এলাকাকে সমতল কাগজের উপর উপস্থাপন করার পর আমরা মানচিত্র বা নকশা পেয়ে থাকি।
অতএব জরিপের চূড়ান্ত লক্ষ্য হল নিখুঁত মানচিত্র বা নকশা প্রস্তুত করা। কিন্তু জরিপ কার্যের সঠিকতা বা সূক্ষতা
সাধারণতঃ নির্ভর করে জরিপ পদ্ধতি এবং জরিপ কার্য পরিচালনাকারীর (ঝঁৎাবুড়ৎ) দক্ষতা, পারদর্শিতা, ধৈর্য,
অভিজ্ঞতা, সহিঞ্চুতা ইত্যাদির উপর। এ ছাড়াও সময় ও অর্থের সীমাবদ্ধতার উপরও জরিপের নির্ভুলতা বহুলাংশে নির্ভর করে।
শ্রেণীবিন্যাস
জরিপ কার্যকে জরিপ কার্যের সূক্ষতা, ধরন ও উদ্দেশ্য ব্যবহৃত পদ্ধতি এবং যন্ত্রপাতি প্রভৃতির উপর নির্ভর করে
শ্রেণীবিন্যাস করা হয়। ছকে শ্রেণীবিন্যাস দেখানো হল।
জরিপ কার্যের সূক্ষতা নির্ভর শ্রেণীবিন্যাস
আমরা জানি পৃথিবী গোলাকার অর্থাৎ ভ‚পৃষ্ঠে বক্রতা বিরাজ করছে। জরিপ কাজ বি¯তৃত এলাকা জুড়ে পরিচালিত হয়ে
থাকে। সুতরাং জরিপ কার্যে যদি পৃথিবীর বক্রতা বিবেচনাধীনে আনা না হয় তাহলে জরিপ কার্যের নির্ভুলতা বা সঠিকতা
ব্যবহৃত হবে। কিন্তু স্বল্প পরিসর স্থানের জন্য এর প্রয়োজন নেই কেন না স্বল্প স্থানের জন্য পৃথিবীর উপরিভাগের বক্রতার
প্রভাব খুবই নগণ্য। তাই জরিপ কার্যের সূক্ষতার উপর নির্ভর করে জরিপকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা১. ধরাকৃতি জরিপ (এবড়ফবঃরপ ঝঁৎাবু)
২. সমতল জরিপ (চষধহব ঝঁৎাবু)
ধরাকৃতি জরিপ ঃ
বৃহৎ এলাকা (১০০ বর্গ মাইল বা ২৫৯ বর্গ কিঃমিঃ এর উর্ধে) জরিপ করার সময় জরিপ কার্যের সূক্ষতা রক্ষার্থে পৃথিবীর
বক্রতা (পঁৎাধঃঁৎব) বিবেচনায় আনা হয়। সুতরাং যে জরিপ কার্যে পৃথিবীর বক্রতা হিসাব করা হয় তাকে ধরাকৃতি
জরিপ বলে। সাধারণত ১০০ বর্গ মাইল বা ২৫৯ বর্গ কিঃ মিঃ বা তার বেশী এলাকা জরিপ করতে হলে পৃথিবীর বক্রতা
হিসাব করতে হয়। সাধারণ নিয়মে প্রতি ৩৪.৫ মাইল বা ৫৫.৫ কিঃ মিঃ এর জন্য ১ ফুট বা ০.৩০৪৮ মিঃ পরিমাণ বক্রতা
বিরাজ করে। অতএব, জরিপকৃত এলাকার জন্য এই হিসাব অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে তা না হলে জরিপ কার্যের
সূক্ষতা ভীষণভাবে লোপ পাবে।
সমতল জরিপ ঃ
যে জরিপে পৃথিবীর বক্রতা হিসাব করা হয় না অর্থাৎ ১০০ বর্গ মাইল বা ২৫৯ বর্গ কিঃ মিঃ এর কম এলাকার জন্য যে
জরিপ পরিচালনা করা হয় তাকে সমতল জরিপ বলে। স্বল্প পরিসর স্থানে পৃথিবীর বক্রতার খুব একটা প্রভাব থাকে না
বিধায় সমতল জরিপে সূক্ষতা বজায় থাকে।
জরিপের উদ্দেশ্য ও ব্যবহার এবং ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও পদ্ধতির আলোকে জরিপকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করা যেতে
পারে।
ধরণ ও উদ্দেশ্য ভিত্তিক শ্রেণীবিন্যাস
জরিপের ধরণ ও ব্যবহারকারীর উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে জরিপকে নি¤œলিখিতভাবে শ্রেণীবিন্যাস করা হল।
ভ‚মি জরিপ (খধহফ ঝঁৎাবু) ঃ
কোন এলাকার আয়তন ও সীমানা নির্ধারণ, মানচিত্র ও নকশা অঙ্কন, পূর্বের মানচিত্রে বা নকশায় কোন নতুন তথ্য
সংযোজন, কোন এলাকাকে বিভক্তিকরণ ইত্যাদি কাজে এই ধরনের জরিপ অবলম্বন করা হয়। ভ‚মি জরিপকে আবার
বিভিন্ন ভাবে শ্রেণীবিন্যাস করা হয়।
ভ‚-সংস্থানিক জরিপ
কোন এলাকার প্রাকৃতিক বৈচিত্রসমূহ যথা- পাহাড়, পর্বত, উপত্যকা, মালভ‚মি, নদনদী, খালবিল ইত্যাদি এবং সাংস্কৃতিক
তথ্যাদি যেমন- রাস্তা, পথ-ঘাট, রেল লাইন, হাট-বাজার, দালান-কোঠা, গ্রাম-শহর ইত্যাদির অবস্থান নির্ণয় পূর্বক
সাধারণতঃ ১ ঃ ৫০,০০০ স্কেলে মানচিত্র প্রস্তুত করাই এই জরিপের উদ্দেশ্য। এই ধরনের মানচিত্র পাঠ করে সংশ্লিষ্ট
এলাকার মোটামুটি একটি ভৌগোলিক ধারণা লাভ করা যায় এবং গবেষণার কাজে এই প্রকার মানচিত্র বিশেষভাবে ব্যবহার
করা হয়।
মৌজা জরিপ
প্রত্যেক ভ‚মি খন্ডের সীমানা ও মালিকানা নির্ধারণ, রাস্তা, পথ-ঘাট, বাড়ীঘর, পুকুর ইত্যাদির সীমানাসহ অবস্থান
চিহ্নিতকরণ এই জরিপের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য। মৌজা মানচিত্র সাধারণতঃ বড় স্কেলের (অর্থাৎ ১৬″ = ১ মাইল) হয়ে থাকে।
এই স্কেলে প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বস্তুর বৈশিষ্ট্য সমূহকে বড় করে দেখান হয়। জমির ব্যক্তি মালিকানা, আয়তন এবং
খাজনা নির্ধারণের জন্য প্রত্যেক দেশের সরকার এইরূপ জরিপ কাজ পরিচালনা করে থাকে।
নগর জরিপ
নগরের উন্নয়নে রাস্তা, পথ-ঘাট, দোকান-পাট, বসতিস্থল, পানি সরবরাহ, পানি নিষ্কাষণ, পয়ঃপ্রণালী নির্মাণ, জমি
অধিগ্রহণ ইত্যাদি কাজে নগর জরিপ ব্যবহার করা হয়।
প্রকৌশল জরিপ
রাস্তা, রেল লাইন, জলাধার, বাঁধ, ইমারত ইত্যাদি নির্মাণ বা প্রকৌশল কাজে সহায়ক যে কোন উপাত্ত সংগ্রহের উদ্দেশ্যে
পরিচালিত জরিপকে প্রকৌশল জরিপ বলে।
নৌ-চালন ও পানিপথ জরিপ
নৌ-পরিবহনের জন্য নদী বা সমুদ্রপথের গভীরতা নির্ণয় পূর্বক নৌ-চার্ট তৈরী করা, নদী প্রবাহের পথে যে কোন স্থানে
প্রস্থচ্ছেদ (ঝবপঃরড়হ) পরিমাপ এমনকি সম্পূর্ণ নদী জরিপ, নদীতে পানি প্রবাহের পরিমাণ নিরূপণ ইত্যাদি পরিমাপের
জরিপ পদ্ধতিকে নৌ-চালন ও পানিপথ জরিপ বলে। বাংলাদেশে নৌ-পরিবহন দপ্তর এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড সাধারণতঃ
এই ধরনের জরিপ পরিচালনা করে থাকে।
প্রতœতাত্তি¡ক জরিপ
এই জরিপ কার্য সাধারণতঃ প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শন উদ্ধার ও খননকার্য বা তাদের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য পরিচালিত হয়ে
থাকে।
ভ‚-তাত্তি¡ক জরিপ
ভ‚-ত্বকের গঠন, স্তর বিন্যাস ও তাদের অবস্থান, ভ‚-অভ্যন্তরে খনিজের বন্টন ইত্যাদি নির্ণয়ের জন্য পরিচালিত জরিপকে ভ‚-
তাত্তি¡ক জরিপ বলে।
অনুসন্ধানী জরিপ
নতুন পাহাড়, পর্বত, দ্বীপ, মানব বসতি, নতুন এলাকা আবিষ্কার ইত্যাদি কাজে যে জরিপ পরিচালনা করা হয় তাকে
অনুসন্ধানী জরিপ বলে।
সামরিক জরিপ
সামরিক গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থানসমূহ নির্ধারণ বা চিহ্নিতকরণ, যুদ্ধকালে সামরিক বাহিনীকে পরিচালনা ইত্যাদি কাজে
যে জরিপ ব্যবহৃত হয়ে থাকে তাকে সামরিক জরিপ বলে।
ব্যবহৃত পদ্ধতি ভিত্তিক শ্রেণীবিন্যাস
বৃহৎ ও স্বল্প পরিসর স্থান বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে জরিপ করা হয়। অতএব, পদ্ধতি অনুসারে জরিপকে নি¤œরূপ
শ্রেণীবিন্যাস করা হল।
ত্রিভ‚জিকরণ জরিপ
এই পদ্ধতি বৃহৎ এলাকার জন্য প্রযোজ্য। এই পদ্ধতি নিখুঁত হলেও ব্যয় সাপেক্ষ। উপরন্তু, প্রচুর সময় ও দক্ষ জনবলের
প্রয়োজন হয়। প্রাথমিক জরিপের পর জরিপকৃত এলাকাকে কয়েকটি বড় বড় ত্রিভ‚জে
বিভক্ত করা হয় (চিত্র- ৫.১.১) অর্থাৎ কতকগুলি ত্রিভূজ দিয়ে সম্পূর্ণ জরিপকৃত এলাকাকে আবদ্ধ করতে হয়। এখন
এলাকার এক প্রান্ত হতে জরিপ কার্য পরিচালনা করতে হবে। এই জরিপ কার্যে বহুবিধ যন্ত্রপাতি যথা- থিউডোলাইট বা
ট্যাকোলাইট (, সেক্সট্যান্ট , বিম কম্পাস , বায়নোকুলার
স্টেশন পয়েন্টার ৎ) ইত্যাদি প্রয়োজন হয়। হিসাবের ক্ষেত্রে ৪টি ধাপে প্রাপ্ত তথ্য সংশোধন করা হয় ফলে নিখুঁত মানচিত্র বা নকশা পাওয়া সম্ভব।
চিত্র ঃ ৫.১.১ ঃ ত্রিভূজিকরণ
ত্রিভ‚জের প্রতিটি বিন্দু এক একটি জরিপ ষ্টেশন। প্রতিটি ষ্টেশনে থিউডোলাইট বা ট্যাকোলাইট যন্ত্রের সাহায্যে ত্রিভ‚জের
অন্তঃস্থ ও বহিঃস্থ কোন পরিমাপ করতে হয়। এই জরিপ পরিচালনার পূর্বে সমতল ভ‚মির উপর অবস্থিত ত্রিভূজের একটি
বাহুকে ভ‚মিরেখা হিসাবে চিহ্নিত করে খুব সাবধানতা ও সতর্কতার সাথে এর দৈর্ঘ্য পরিমাপ করতে হবে কেন না এই ভ‚মি
রেখার সাহায্যে অন্য ত্রিভ‚জের বাহু বা ভ‚মি রেখার দৈর্ঘ্য ত্রিকোণোমিতিক পদ্ধতিতে নিরূপণ করতে হয়। যথাঝরহঈ

ঝরহই

ঝরহঅ
ধ = =
যেখানে, ধ, ন, প = ত্রিভুজের বাহু।
∠অ, ∠ই, ∠ঈ = প্রতিটি বাহুর বিপরীত কোণ
অর্থাৎ ‘ধ’ বাহুর বিপরীতে অ কোণ ইত্যাদি।
সুতরাং একটি ভ‚মি রেখা দিয়ে ১০/১২টি ত্রিভুজের বাহুর দৈর্ঘ্য নিরূপনের পর আবার নতুন করে আর একটি ভ‚মি রেখা
পরিমাপ করা উচিৎ। কেননা একটি ভ‚মি রেখাতে কিছু ভুল থাকলে তা পরবর্তী বাহুতে গুণিতক হিসাবে ভুলের পরিমাণ
বৃদ্ধি পাবে। তাই কয়েকটি ত্রিভূজের পর আবার নতুন করে ভ‚মি রেখা পরিমাপ একান্ত প্রয়োজন। ত্রিভূজের ভিতরে ও
বাইরে এমনকি সীমা রেখাসহ যে কোন বস্তুর অবস্থান মানচিত্রে ও ভ‚মিতে চিহ্নিত তিনটি বস্তু সাপেক্ষে সেক্সট্যান্ট যন্ত্রের
সাহায্যে নির্ণয় করা হয়। ত্রিভ‚জের লিপিবদ্ধ করা বিভিন্ন কোণগুলি বিভিন্ন পর্যায়ে সংশোধন করার পর একটি নির্দিষ্ট স্কেলে
সমতল কাগজে অঙ্কনের পর একটি অবকাঠামো পাওয়া যাবে এবং পরবর্তীতে লিপিবদ্ধ অন্যান্য তথ্যাদি ষ্টেশন পয়েন্টার
এর মাধ্যমে অঙ্কন করলে মানচিত্র বা নকশা তৈরী হবে। ত্রিভ‚জের প্রাপ্ত কোণগুলি সংশোধন করে মানচিত্র অঙ্কিত হয় বলে
এটি নির্ভুল পদ্ধতি। হাইড্রোগ্রাফিক জরিপে (ঐুফৎড়মৎধঢ়যরপ ঝঁৎাবু) ও যে কোন বড় এলাকা যথা- জেলা, ইউনিয়ন,
গ্রাম ইত্যাদি এই পদ্ধতিতে জরিপ করা হয়ে থাকে। অতি সংক্ষেপে একটু ধারণা দেওয়া হল।
অনুপ্রস্থগমন জরিপ
স্বল্প পরিসর এলাকা দ্রæত জরিপ করার জন্য এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। ফলে জরিপ কার্য সম্পূর্ণ নির্ভুল নয়। এই
পদ্ধতিতে রৈখিক ও বিয়ারিংসহ কৌণিক দূরত্ব পরিমাপ করা হয়। অনুপ্রস্থগমণ জরিপ সাধারণতঃ কতকগুলি ভ‚মি রেখার
সমষ্টি এবং প্রত্যেকটি রেখা একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে কোণের সৃষ্টি করে (চিত্র ঃ ৫.১.২)।
এই ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি ভ‚মি রেখার দৈর্ঘ্য ও কোণগুলি পরিমাপ করে জরিপকার্য পরিচালনা করা হয়ে থাকে। সাধারণতঃ
কম্পাস ও থিউডোলাইট যন্ত্রের সাহায্যে কোণগুলি পরিমাপ করা হয়। থিউডোলাইট যন্ত্রের মাধ্যমে নিখুঁত ও নির্ভরযোগ্য
কৌণিক পরিমাপ পাওয়া যায়। কম্পাস দুই ধরনেরঃ (১) প্রিজমেটিক কম্পাস (চৎরংসধঃরপ ঈড়সঢ়ধংং) এবং (২)
জরিপকারকের কম্পাস প্রিজমেটিক কম্পাসের মাধ্যমে বিয়ারিং পরিমাপ করে জরিপ কার্য
পরিচালনা করা হয়। বর্তমানে জরিপকারকের কম্পাস ব্যবহার করা হয় না। জরিপকারকের কম্পাস দ্বারা যে জরিপ কাজ
পরিচালনা করা হয় তা খুব একটা নির্ভরযোগ্য নয়।
অনুপ্রস্থগমন জরিপকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় ঃ
১. উন্মুক্ত অনুপ্রস্থগমন () জরিপ;
২. বেষ্টনী অনুপ্রস্থগমন জরিপ।
উন্মুক্ত অনুপ্রস্থগমন জরিপ ঃ
যে জরিপ ষ্টেশন হতে জরিপ কাজ শুরু হয় এবং আর কখনও সে জরিপ স্টেশনে ফিরে আসা হয় না অর্থাৎ জরিপকারক
কাজ শুরু করে যাত্রার কেন্দ্রে ফিরে না এসে সম্মুখের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন তাকে উন্মুক্ত অনুপ্রস্থগমন জরিপ বলে
(চিত্র- ৫.১.৩)।

চিত্র- ৫.১.৩ঃ উন্মুক্ত অনুপ্রন্থগমন জরিপ
এই পদ্ধতিতে এলাকার আংশিক জরিপ সম্ভব হয় কিন্তু সম্পূর্ণ জরিপ কার্য সম্ভব হয় না।
বেষ্টনী অনুপ্রস্থগমন জরিপ ঃ
উল্লেখিত জরিপ পদ্ধতি হতে এই পদ্ধতি কিছুটা নিভর্‚ল। প্রথম জরিপ ষ্টেশন হতে জরিপ কাজ শুরু করে আবার যদি সেই
ষ্টেশনে ফিরে আসা হয় তখন তাকে বেষ্টনী অনুপ্রস্থগমন জরিপ পদ্ধতি বলে (চিত্রঃ ৫.১.৪) অর্থাৎ জরিপকৃত এলাকাকে
ভ‚মি রেখা কখ, খগ, গঘ, ঘঙ এবং ঙক দ্বারা আবদ্ধ করা হয়েছে। তবে আবদ্ধ এলাকার বাইরেও অবস্থিত কিছু কিছু বাস্তব
অবস্থান প্রয়োজনবোধে জরিপ করা যেতে পারে। সাধারণতঃ শিকল, সমতল টেবিল জরিপে উল্লেখিত উভয় পদ্ধতি এবং
কম্পাস জরিপে বেষ্টনী পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।

চিত্রঃ ৫.১.৪ ঃ বেষ্টনী অনুপ্রন্থগমন জরিপ
যন্ত্র নির্ভর শ্রেনীবিন্যাস
ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির উপর নির্ভর করে জরিপকে নি¤œরূপ শ্রেনীবিন্যাস করা হল।
১. শিকল ও ফিতা জরিপ
২. সমতল টেবিল জরিপ
৩. প্রিজমেটিক কম্পাস জরিপ
৪. থিউডোলাইট জরিপ
৫. লেভেলিং
৬. বিমান জরিপ
উল্লেখিত যন্ত্রভিত্তিক পদ্ধতিসমূহের মধ্যে আমরা ইউনিট-৫ এর আওতায় পাঠ-৫.৩ এ শিকল ও ফিতা জরিপ আলোচনা করব।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নঃ
১.সঠিক উত্তরে টিক () চিহ্ন দিন ঃ
১.১. ক. ভ‚মি জরিপকে ভ‚-সংস্থানিক, মৌজা, নগর, এবং প্রকৌশল জরিপে শ্রেণীবিন্যাস করা যায়।
খ. ভ‚মি জরিপকে বিমান, স্যাটেলাইট ইত্যাদি জরিপে শ্রেণীবিন্যাস করা যেতে পারে।
গ. ভ‚মি জরিপ কোন জরিপই নয়।
১.২. মৌজা মানচিত্রের স্কেলক. ১৬″ = ১ মাইল; খ. ১০″ = ৩ মাইল; গ. কোন স্কেল থাকে না।
১.৩. নদীর নাব্যতা ও গভীরতা পরিমাপ করার জন্য-
ক. নৌ-চালন ও পানিপথ জরিপ পরিচালনা করা হয়।
খ. ভ‚মি জরিপ করা হয়।
গ. থিউডোলাইট জরিপ করা হয়ে থাকে।
২. শূন্যস্থান পূরণ করুন২.১. অনুপ্রস্থগমন জরিপকে ........... ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ............ এবং ................।
২.২. পরিমাপকে সাধারণতঃ ........... ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- ....... এবং ...........।
২.৩. ধরাকৃতি জরিপ সাধারণতঃ ........... বর্গ কিঃ মিটারের ............. হলে পরিচালিত করতে হয়।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নঃ
১. জরিপের সংজ্ঞা দিন ও জরিপ কার্যের গুরুত্ব বর্ণনা করুন।
২. জরিপের প্রয়োজনীয়তা কি?
৩. জরিপ কার্যে ব্যবহৃত পরিমাপের ব্যাখ্যা প্রদান করুন।
৪. সমতল জরিপ কি এবং এর সীমাবদ্ধতা ব্যাখ্যা করুন।
৫. কি ধরনের জরিপে ভূমি জরিপ প্রয়োজন ?
৬. সংস্থানিক মানচিত্রের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করুন।
৭. মৌজা জরিপের উদ্দেশ্য আলোচনা করুন।
৮. নগর জরিপের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করুন।
৯. কি প্রয়োজনে প্রকৌশল জরিপ পরিচালনা করা হয়?
১০. নৌ-চালন ও পানিপথ জরিপের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা কর।
১১. প্রতœতাত্তি¡ক জরিপ কি ?
১২. ভ‚-তাত্তি¡ক জরিপের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করুন।
১৩. অনুসন্ধানী জরিপ কি?
১৪. সামরিক জরিপের উদ্দেশ্য কি?
১৬. ত্রিভূজিকরণ জরিপ পদ্ধতি কি?
১৭. অনুপ্রস্থগমন জরিপ আলোচনা করুন।
১৮. যন্ত্রপাতি নির্ভর জরিপ এর শ্রেণীবিন্যাস করুন।
সংজ্ঞা দিন ঃ
১. জরিপ ষ্টেশন;
২. ভ‚মি বা ভিত্তি রেখা;
৩. পরীক্ষণ বা টাই রেখা;
৪. অফসেট;
৫. রেনজিং লাইন।
রচনামূলক প্রশ্নঃ
১. জরিপ কাকে বলে ? ধরণ ও উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে জরিপের শ্রেণীবিন্যাস করুন।
২. যন্ত্রপাতি ভিত্তিক জরিপ এর শ্রেণীবিন্যাস করুন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]