বায়ুচাপ কি?উষ্ণতার সাথেবাযুচাপের সম্পর্ক
বায়ুচাপের সাথে উচ্চতার সম্পর্ক এবং বায়ুচাপ পরিমাপ প্রক্রিয়া বর্ণনা করুন।
পৃথিবীর বায়ুচাপ বন্টন কিরূপ?


 তাপবলয় কিভাবে পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে এবং তা পৃথিবীর জলবায়ুকিভাবে নিয়ন্ত্রন
করে।
পৃথিবীর তাপমাত্রা বন্টন (ডড়ৎষফ ফরংঃৎরনঁঃরড়হ ড়ভ ঞবসঢ়বৎধঃঁৎব)
জানুয়ারী ও জুলাই মাসে কোনো স্থানের তাপমাত্রা সর্বনি¤œ ও সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে। ফলে এ দুই
মাসের তাপমাত্রা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের জন্য চরম সীমা। এ দুই মাসের সমোষ্ণ রেখা বিশ্লেষন
করলে তাপমাত্রার বন্টন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে (চিত্র ৩.১৭.১)। কোন স্থানের
তাপমাত্রাকে বিশ্ব মানচিত্রের সমোষ্ণ রেখায় সমতা বিধানের পূর্বে তাপের ভিন্ন ভিন্ন উচ্চতা থেকে
সমুদ্রপৃষ্টের সমতুল্যে নিয়ে আসা হয়।
১. উভয় সময়ে সমোষ্ণ রেখা বিশ্লেষণে দেখা যায়, রেখাগুলো পূর্ব পশ্চিমে বিস্তৃত এবং নিরক্ষীয়
অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলে তাপমাত্রা হ্রাস পায়। সূর্যালোকে প্রাপ্তির ভিন্নতার জন্য অক্ষাংশ
পরিবর্তনের সাথে তাপমাত্রা ও পরিবর্তিত হয়। আবার ঋতুকালীন সূর্যের অবস্থান পরিবর্তনের
সাথে সাথে তাপমাত্রা ও সমোষ্ণ রেখারও অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে থাকে।
২. স্থলভাগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয়। ঋতুপরিবর্তনের সাথে সমোষ্ণ রেখার উত্তরে বা
দক্ষিণে সরে যাওয়া স্থলভাগ জলভাগ বা সমুদ্রভাগের তুলনায় বেশী হয়। দক্ষিণ মেরুতে
স্থলভাগ কম ও উত্তর মেরুতে স্থলভাগ বেশী বলে তাপমাত্রার পরিবর্তন উত্তর মেরুতে বেশী
এবং সমোষ্ণ রেখার স্থান পরিবর্তন এরকম হয় গ্রীষ্মকালে উত্তর দিকে আর শীতকালে দক্ষিণ
দিকে সরে আসে।
৩. তাপের বন্টনে সমুদ্র স্রোতের প্রভাব ও বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। উষ্ণ সমুদ্র স্রোতের ফলে
সমোষ্ণ রেখা মেরুর দিকে, আর শীতল স্রোতের জন্য বিষুবরেখার দিকে বেঁকে যায়।
৪. মেরু অঞ্চলে সূর্য সব সময়ই তীর্যকভাবে কিরণ দেয় বলে তাপমাত্রার পরিবর্তন সীমা বাৎসরিক
হিসাবে খুব কম কিন্তুমধ্যবর্তী অক্ষাংশে পার্থক্যটা বেশী হয়, কেননা দিন রাত্রির ব্যবধান বেশ
উল্লেখযোগ্য।
৫. স্থল মহাদেশীয় (ঈড়হঃরহবহঃধষ) ভাগের তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালে অধিক উষ্ণ ও শীতকাল অধিক
শীতল হয়; বাৎসরিক সীমা (অহহঁধষ ৎধহমব) অনেক বেশী ও তিব্রতা স্থানের মহাদেশীয়
অবস্থানের উপর নির্ভর করে।
সমোষ্ণ রেখা পূর্ব-পশ্চিমে
বিস্তৃত এবং নিরক্ষীয় অঞ্চল
থেকে মেরু অঞ্চলে তাপমাত্রা
হ্রাস পায়।

পৃথিবীর তাপমাত্রা বন্টন কিরূপ?

পৃথিবীর তাপ বলয়সমূহ
সৌরভাগের তারতম্যের ভিত্তিতে উভয় গোলার্ধকে ৭টি করে মোট ১৪টি তাপ বলয়ে ভাগ করা
যায়।
ভ‚-পৃষ্টের কোন একটি নির্দিষ্ট এলাকা কতখানি সূর্যালোক পাবে তা সূর্যরশ্মি কতখানি খাড়া/লম্বভাবে
বা তির্যকভাবে কিরণ দিচ্ছে তার উপর নির্ভর করে। পৃথিবীব্যাপী সূর্যরশ্মির এ আপতনে তারতম্য
আছে, ফলে সৌরভাগের বন্টনেও তা সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। এ ধারণার ভিত্তিতে পৃথিবীকে কতগুলো
তাপ বলয়ে ভাগ করা যায় (চিত্র ৩.১৭.২)। নিরক্ষরেখা থেকে উভয় গোলার্ধে ৭টি করে মোট ১৪টি
ভৌগোলিক বলয় ধরা হয়েছে।
চিত্র ৩.১৭.১ : পৃথিবীর তাপ বলয় সমূহ।
নিরক্ষরেখার উভয় পাশের প্রথম বলয়টির নাম নিরক্ষীয় বলয় যা নিরক্ষরেখার উভয় পার্শ্বে ১০ক্ক
অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। এ বলয়ে সূর্য সারা বছর সমানভাবে কিরণ দেয় এবং রাত ও দিনের দৈর্ঘ্য
প্রায় সমান থাকে। এ বলয়ের পরেই উভয় গোলার্ধের ১০ক্ক থেকে ২৫ক্ক অক্ষাংশের মধ্যে ক্রান্তিয়
বলয় অবস্থিত। এ অংশে এক বিষুবকালে সূর্য মধ্য গগনে উপস্থিত হয়, আবার বিপরীত বিষুবকালে
সূর্য হেলে কিরণ দেয়। ফলে, ঋতুপরিবর্তন খুব স্পষ্ট ।
ক্রান্তীয় এলাকা থেকে মেরুর দিকে (২৫ক্ক থেকে ৩৫ক্ক উত্তর ও দক্ষিণ) উপক্রান্তীয় বলয় অবস্থিত।
এর পরপরই মধ্য অক্ষাংশ বলয় (৩৫ক্ক থেকে ৫৫ক্ক উত্তর ও দক্ষিণ) অবস্থিত। এ বলয়ে
সূর্যালোকের আপতনে অপেক্ষাকৃত বড় ধরনের পরিবর্তন হয়। ফলে, এ অংশে সৌরতাপ প্রাপ্তির
ঋতুভিত্তিক পরিমাণগত তারতম্য খুবই উল্লেখযোগ্য। ক্রান্তীয় বলয়ের তুলনায়, এ এলাকার বিভিন্ন
ঋতুতে রাত ও দিনের দৈর্ঘ্যে অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
সৌরভাগের তারতম্যের
ভিত্তিতে উভয় গোলর্ধকে ৭টি
করে মোট ১৪টি তাপ বলয়ে
ভাগ করা যায়।
নিরক্ষীয় বলয়, বিষুবকাল।
ক্রান্তীয় এলাকা, উপক্রান্তীয়
বলয় উপমেরু বলয়।

মধ্য অক্ষাংশ বলয়ের পরই উভয় গোলার্ধে ৫০ক্ক থেকে ৬০ক্ক অক্ষাংশে উপমেরু বলয় অবস্থিত।
এটি উত্তর গোলার্ধে উপসুমেরু ও দক্ষিণ গোলার্ধে উপকুমেরু বলয় নামে পরিচিত। সুমেরু ও
কুমেরু বৃত্তের উভয় পাশেই সুমেরু ও কুমেরু বলয় অবস্থিত। এ বলয়ে সবচেয়ে বেশী দিন ও
রাতের দৈর্ঘ্যরে বার্ষিক পরিবর্তন হয়। সূর্যের উত্তরায়ণের সময় উত্তর গোলার্ধের সর্বক্ষণ দিন এবং
দক্ষিণ গোলার্ধের রাত থাকে। সূর্যের দক্ষিণায়ণের সময় এর বিপরীত অবস্থা হয়। মেরু বলয় উভয়
গোলার্ধের ৭৫ক্ক অক্ষাংশ থেকে মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত। এ গোলাকৃতির এলাকায় বছরের ৬ মাস রাত
ও ৬ মাস দিন থাকে।
চিত্র ৩.১৭.২ : পৃথিবীর তাপমাত্রা বন্টন।
তাপমাত্রা চক্র (ঈুপষবং ড়ভ ঞবসঢ়বৎধঃঁৎব)
কোন স্থানের অবিরত তাপমাত্রার পরিমাপ থেকে স্পষ্ট হয় যে প্রাত্যহিক তাপমাত্রার একটি নির্দিষ্ট
ছন্দ আছে। সূর্যোদয়ের পর তাপমাত্রা বাড়তে থাকে এবং দুপরের পর বিকালে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ
পর্যায়ে পৌঁছে, তারপর আবার কমতে থাকে এবং তা সকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এ চক্রকে বলে
উপকুমেরু বলয়। ৬ মাস রাত
ও ৬ মাস দিন।
সূর্যোদয়ের পর তাপমাত্রা
বাড়তে থাকে এবং দুপুরের
পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে।
তারপর আবার কমতে থাকে।

তাপমাত্রার প্রত্যাহিক ক্রম (উধরষু গধৎপয ড়ভ ঞবসঢ়বৎধঃঁৎব)। বাৎসরিক তাপমাত্রায় ও এ ধরনের
ক্রম-চক্র পরিলক্ষিত হয়। যদিও বিকিরণ মাত্রার সাথে এর সম্পর্ক কম, কেননা, তাপমাত্রা
পরিবর্তনের নিয়ামক (বায়ু প্রবাহ, উচ্চতা, সমুদ্র স্রোত ইত্যাদি) সমূহ ক্রিয়াশীল থাকে বলে
বাৎসরিক চরম ও পরম তাপমাত্রা সব সময় একই দিনে হয় না। তবে মোট চক্রের অনুপাতটা
মোটামুটি একই থাকে। এ পরিক্রমার নাম হচ্ছে তাপমাত্রার বাৎসরিক চক্র বা ক্রম (অহহঁধষ
গধৎপয ড়ভ ঞবসঢ়বৎধঃঁৎব) জলবায়ুবিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণে এদের গুরুত্ব রয়েছে।
তাপমাত্রা চক্র এবং এর ব্যবহার কি?
পাঠ সংক্ষেপ
তাপ শক্তির একটি রূপ এবং তাপমাত্রা বস্তুর তাপীয় অবস্থার নির্দেশক। তাপ পরিমাপক যন্ত্র
থার্মোমিটার। পৃথিবীর তাপমাত্রা বন্টনের একটি গড় চিত্র পাওয়া যায়। জানুয়ারী ও জুলাই
মাসের সমোষ্ণ রেখা বিশ্লেষণে দেখা গেছে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলে তাপমাত্রা
হ্রাস পায়। স্থল ভাগে সমুদ্রভাগের তুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন ৩.১৭
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
১. সঠিক উত্তরটির পাশে টিক (√) চিহ্ন দিনÑ (সময় ৪ মিনিট) ঃ
১.১ কোন স্থানের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ থাকে -
ক. জুলাই খ. জানুয়ারি
গ. জুন ঘ. এপ্রিল মাসে
১.২ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয় -
ক. জলে খ. বায়ুতে
গ. স্থলভাগে ঘ. প্লেনে
১.৩ ভৌগোলিক বলয় কয়টিক. ১৩টি খ. ১৪টি
গ. ১৫টি ঘ. ১৬টি
১.৪ তাপমাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়ক. সকালে খ. দুপুরে
গ. বিকেলে ঘ. রাতে
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (সময় ৬ মিনিট) ঃ
১. মেরু অঞ্চলে দিন-রাত্রীর পার্থক্য বেশি কেন?
২. তাপমাত্রার প্রাত্যহিক ক্রম কি?

রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১. পৃথিবীর তাপমাত্রা বন্টন ও তাপ বলয় চিত্রসহ বর্ণনা করুন।
পাঠ ৩.১৮ : বায়ুচাপ (অরৎ ঢ়ৎবংংঁৎব)

গ্যাসের ধর্ম ও বায়ুচাপ (চৎড়ঢ়বৎঃরবং ড়ভ মধংবং ধহফ অরৎ ঢ়ৎবংংঁৎব)
গ্যাসীয় অণু, কঠিন বা তরল পদার্থের অণূর মত সঙ্গবদ্ধ বা অবিচল নয়। গ্যাসীয় অনুসমূহ সতত
ইতস্তু ছোটাছুটি করে এবং মুক্ত চলাচল করতে পারে। আবদ্ধ পাত্রে ছোটাছুটির ফলে প্রতি একক
পৃষ্ঠে গ্যাস চাপের সৃষ্টি করে। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে পৃষ্ঠস্থ বায়ু ভ‚-ত্বকের সাথে
লেপটে থাকে। এ আকর্ষণের ফলে গ্যাস মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে না। অর্থাৎ বায়ুনিæে সমুদ্র বা
স্থলভাগ এবং উর্দ্ধে মহাকর্ষীয় বল দ্বারা পৃথিবীর উপরে আবদ্ধ অবস্থায় আছে। বায়ুর চাপ হচ্ছে ভ‚-
পৃষ্ঠে প্রতি একক জায়গায় গ্যাসের (বায়ুর) অণুগুলোর সংঘর্ষের ফলে প্রদত্ত বল।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে গ্যাসীয় অণুর গতি বৃদ্ধি পায়, ফলে বায়ুর চাপ বৃদ্ধি পাবে, অর্থাৎ চাপ
তাপমাত্রা বৃদ্ধির সমানুপাতিক; আবার চাপ বৃদ্ধি পেলে আয়তন হ্রাস পায় অথবা ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়
(ঘনত্ব = ১/আয়তন); অর্থাৎ চাপ ও ঘনত্ব সমানুপাতিক। সুতরাং সাধারণ আদর্শ গ্যাসের
সূত্রানুযায়ী বলা যায়চাপ = তাপমাত্রা * ঘনত্ব * ধ্রæব
গ্যাসের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা মাপা হয় পরম (অনংড়ষঁঃব ড়ৎ কবষারহ) এককে। বায়ুর চাপের
তাপমাত্রার পরিবর্তন ও ঘনত্বের উপর নির্ভর করে পরিবর্তীত হয়। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে আয়তন
বৃদ্ধি পায় বলে চাপ কমে যেতে পারে। ফলে বায়ুর চাপ পরিমাপের জন্য ঘনত্বের মান বেশী মাত্রায়
প্রভাব ফেলে; তাপমাত্রার বৃদ্ধির সাথে চাপের কি পরিবর্তন হবে তাও ঘনত্বের মান থেকেই জানা
যায়।
বায়ুচাপ কি?
হিপসোমেট্রিক সম্পর্ক (ঞযব ঐুঢ়ংড়সবঃৎরপ জবষধঃরড়হ)
বায়ুতে জলীয় বাস্পের উপস্থিতিতে তার ঘনত্ব হ্রাস পায়। জলীয় বাস্পের আণবিক আয়তন বায়ুস্থ
মৌলের আয়তন থেকে বেশী হয়, ফলে ঘনত্ব কম থাকে। তাপমাত্রার সাথে ঘনত্বের মাত্রা ও
পরিবর্তিত হয়। যদি বায়ুতে জ্ঞাত পরিমাণ জলীয়বাস্প থাকে, তবে পদার্থের অবস্থার সূত্র দিয়ে
ব্যাখ্যা করতে কল্পিত পূরণ তাপমাত্রা ব্যবহার করা হয়। একে কার্য (ঠরৎঃঁধষ ঞবসঢ়বৎধঃঁৎব)
তাপমাত্রা বলা হয়। এ অবস্থা এ মর্মে গৃহীত হয় যে কার্য তাপমাত্রা কখনোই মূল বা প্রকৃত
তাপমাত্রার (জবধষ ঞবসঢ়বৎধঃঁৎব) ২ক্ক বা ৩ক্ক সে. এর অধিক হয় না। পদার্থের অবস্থার সূত্র
চাপ ও ঘনত্ব সমানুপাতিক।
গ্যাসীয় অণুর গতি বৃদ্ধি পায়।
পরম একক।
কার্য তাপমাত্রা।

(ঊয়ঁধঃরড়হ ড়ভ ঝঃধঃব) ব্যবহার করে কার্য তাপমাত্রা নির্ণয়ের পদ্ধতিকে বলে হিপসোমেট্রিক সম্পর্ক
(ঐুঢ়ংড়সবঃৎরপ জবষধঃরড়হ)।
বাতাসের প্রতিটি স্তরের পুরুত্ব হিপসোমেট্রিক সম্পর্ক থেকে নির্ণয় করা যায়, কেননা প্রতিটি স্তরের
তাপমাত্রা, চাপ এবং জলীয় বাস্পের প্রভাব পরিমাপ সম্ভব। কাক্সিক্ষত স্তর সংখ্যা ও তাদের পুরুত্বের
পরিমাণ হতে কোন আদর্শ অভিসম্বন্ধ (জবভবৎবহপব) সমতলের (যেমন সমুদ্র সমতলের) উচ্চতা যে
কোন সমতল থেকে পরিমাপ করা যায়।
বায়ুচাপে হিপসোমেট্রিক সম্পর্ক কি?
বায়ুচাপের সাথে উচ্চতার (অষঃরঃঁফব) সম্পর্ক
বায়ুপ্রবাহ অণূর উপর বলের অসমতার সাথে সম্পর্কিত। উচ্চচাপ স্থান হতে বায়ুনি¤œচাপ অঞ্চলের
দিকে প্রবাহিত হয়। বায়ুচাপ অনুভ‚মিক (ঐড়ৎরুড়হঃধষ) দিক অপেক্ষা লম্বভাবে (ঠবৎঃরপধষ) বেশি
পরিবর্তীত হয়। সমুদ্র সমতলে বায়ুর চাপ ১০১৩ মিলিবার (১৪.৭ পাউন্ড/বর্গইঞ্চ), হিমালয়
পর্বতের শিখরে (৮৮৪৮ মি. উচ্চতার) ৩২০ মিলিবার।
১ মিলিবার = ১০০ নিউটন/বর্গমিটার
১ নিউটন = ১ কিলোগ্রাম - মিটার/বর্গ সেকেন্ড
বায়ুর চাপ যেহেতুঅণুসমূহের গতির উপর নির্ভর করে তাই ধরা যায় যে ভ‚-পৃষ্ঠের কাছাকাছিই
অণুর বিচরণ সর্বপেক্ষা বেশী। চিত্রের সাহায্যে বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায়চিত্র ৩.১৮.১ : উচ্চতার সাথে বায়ুচাপের সম্পর্ক। বায়ুর চাপ ভরের উপর নির্ভরশীল, যা উচ্চতার সাথে হ্রাস পায়।
বায়ুচাপের সাথে উচ্চতার সম্পর্ক কি?

বায়ুচাপ পরিমাপ (গবধংঁৎরহম অরৎ চৎবংংঁৎব)
বায়ুচাপ পরিমাপের জন্য যে যন্ত্র ব্যবহার করা হয় তাকে বলা হয় ব্যারোমিটার (ইধৎড়সবঃবৎ)।
দুই ধরনের ব্যারোমিটার ব্যবহৃত হয়, যদিও দ্বিতীয় ধরনের ব্যারোমিটার প্রথম ধরনের
ব্যারোমিটারেরই সংস্করণ।
১. পারদ ব্যারোমিটার (গবৎপঁৎরধষ ইধৎড়সবঃবৎ)
২. তরলহীন ব্যারোমিটার (অহবৎড়রফ ইধৎড়সবঃবৎ)
১. পারদ ব্যারোমিটার (গবৎপঁৎরধষ ইধৎড়সবঃবৎ): ১৬৪৩ সালে বিজ্ঞানী গ্যালিলীও-এর ছাত্র
টরিসেলী (ঞড়ৎৎরপবষষর) পারদ ব্যারোমিটার তৈরি করেন। পারদ ব্যারোমিটারের সরল প্রস্তুত প্রণালী
হচ্ছে- একটি পারদপূর্ণ কাঁচের একমুখ খোলা নলকে (ঞবংঃ ঞঁনব) আরেকটি পারদপূর্ণ পাত্রে
উপুড় করে ডুবিয়ে রাখলে পারদ নলের মাঝে কিছুটা নীচে নেমে আসে। নলের মধ্যে পারদেরস্তম্ভ
খোলা পাত্রে প্রদত্ত বায়ু চাপের সমানুপাতিক। বায়ুচাপ বাড়লে পারদস্তম্ভের উচ্চতাও বাড়ে।
স্বাভাবিক বায়ুচাপে সমুদ্র সমতলে এ স্তম্ভের উচ্চতা হয় ৭৬০ মিলিমিটার বা ৭৬ সেন্টিমিটার।
পারদের ঘনত্ব ও অভিকর্ষের মানের সাথে এ উচ্চতা গুণ করলে প্রতি একক ক্ষেত্রফলে বায়ুর চাপ
পরিমাপ করা যায়।
২. তরলহীন ব্যারোমিটার (অহবৎড়রফ ইধৎড়সবঃবৎ): সহজে বহনযোগ্য ও ছোট আকারের গঠনের
জন্য এ ধরনের ব্যারোমিটারের গঠন হয় একটি স্পর্শকাতর ধাতব পাত্র, যা আংশিকভাবে বায়ুশুন্য
করা হয়। এর মাঝখানে একটি স্প্রীং (ঝঢ়ৎরহম) থাকে যা একে বিকৃতি থেকে রক্ষা করে।
স্পর্শকাতর ধাতব পাত্রটির আয়তন বায়ুচাপ কমলে বৃদ্ধি পায় এবং চাপ বাড়লে হ্রাস পায়। অবিরাম
চাপ মানের জন্য তরলহীন ব্যারোমিটার ব্যবহার করে চাপ পাত্র (ইধৎড়মৎধঢ়য) তৈরি করা যায়।
তরলহীন ব্যারোমিটার সাধারণত উচ্চতা মাপক যন্ত্র হিসাবে এবং বিমান চলাচলের কাজে ব্যবহৃত
হয়।
ব্যারোমিটারে বায়ুচাপের পরিমাণ স্বাভাবিক চাপের চেয়ে ৩০ মিলিবার পর্যন্ত বেশি বা ৬০
মিলিবার পর্যন্ত হতে পারে। এর অন্যথা হলে ঘুর্ণিঝড় বা দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া
যায়।
কিভাবে বায়ুচাপ পরিমাপ করা হয়?
বিভিন্ন ধরনের ব্যারোমিটার কি কি?
পৃথিবীর বায়ুচাপ বন্টন (এষড়নধষ ফরংঃৎরনঁঃরড়হ ড়ভ রিহফ ঢ়ৎবংংঁৎব)
সমচাপীয় (ওংড়নধৎরপ) রেখা থেকে প্রতীয়মান হয় যে পৃথিবীর বিষুব রেখার উভয় পার্শ্বে অর্থাৎ
নিরক্ষীয় অঞ্চলে বায়ুচাপ স্বাভাবিক বায়ুচাপের চেয়ে কম। স্বাভাবিক বায়ুচাপ ভ‚-পৃষ্ঠে ১০১৩
মিলিবার ধরা হয়। সেক্ষেত্রে নিরক্ষীয় নি¤œচাপ অঞ্চলে চাপের মান মাত্র ১০১১ থেকে ১০০৮
মিলিবার। এ নি¤œচাপ অঞ্চলকে (চিত্র ৩.১৮.২) নিরক্ষীয় ফাঁদ (ঊয়ঁধঃড়ৎরধষ ঞৎড়ঁময) বলে।
৩০ক্ক উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে বায়ুচাপ উচ্চ মাত্রার, ১০২০ মিলিবার। এ উচ্চ চাপীয় অঞ্চলকে
উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ অঞ্চল (ঝঁন ঃৎড়ঢ়রপধষ যরময ঢ়ৎবংংঁৎব) বলে। দক্ষিণ গোলার্ধে এ উচ্চচাপের
কেন্দ্র রয়েছে যাকে উচ্চচাপ সেল (ঐরময ঢ়ৎবংংঁৎব পবষষ) বলে।
দক্ষিণ গোলার্ধে উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয়ের দক্ষিণে আর্কটিক (অৎপঃরপ) বলয় পর্যন্ত একটি
নি¤œচাপ অঞ্চল রয়েছে যাকে উপমেরুদেশীয় নি¤œচাপ বলয় (ঝঁন-ধৎপঃরপ/ঝঁন-ঢ়ড়ষধৎ ষড়/িষড়ি
ঢ়ৎবংংঁৎব নবষঃ) বলে। এটি ৬৫ক্ক দক্ষিণ অক্ষাংশ বরাবর অবস্থিত। এখানকার চাপ প্রায় ৯৮৪
বায়ুর চাপ পরিমাপক যন্ত্রের
নাম ব্যারোমিটার।
ভ‚-পৃষ্ঠে স্বাভাবিক বায়ুচাপ
১,০১৩ মিলিয়ন।

মিলিবার। মেরু অঞ্চলে সব সময়ই বায়ুউচ্চচাপে থাকে, এ অবস্থাকে মেরুদেশীয় উচ্চচাপ অঞ্চল
বলে।
চিত্র ৩.১৮.২ : পৃথিবীর বায়ুচাপ বন্টন।
উত্তর গোলার্ধের চাপ কেন্দ্র (ঘড়ৎঃযবৎহ যবসরংঢ়যবৎব ঢ়ৎবংংঁৎব পবহঃবৎ)
উত্তর আমেরিকা ও ইউরেশিয়ার মত বিশাল ভ‚-ভাগ, উত্তর আটলান্টিক ও উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের
মত বিশাল জলরাশি উত্তর গোলার্ধের বায়ু চাপের উপর বিশেষ প্রভাব ফেলে। এ জন্য দক্ষিণ
গোলার্ধের সমচাপ বলয়ের চেয়ে উত্তর গোলার্ধে ভিন্ন ধরনের চাপীয় অবস্থা পরিদৃষ্ট হয়।
শীতকালে বিশাল ভ‚খন্ডে উচ্চচাপের কেন্দ্র গঠিত হয়, অন্যদিকে উষ্ণ সমুদ্র বক্ষে নি¤œচাপ কেন্দ্র
গঠিত হয়। উত্তর মধ্য এশিয়ায় সাইবেরিয়াতে উচ্চচাপ (ঝরনবৎরধহ যরময) ১০৩০ মিলিবার পর্যন্ত
হয়। উত্তর আমেরিকায় অপেক্ষাকৃত কম উচ্চচাপ সমৃদ্ধ কানাডিয়ান উচ্চচাপ (ঈধহধফরধহ যরময)
সৃষ্টি হয়। সমুদ্রে অ্যালেউশিয়ান নি¤œচাপ (অষবঁঃরধহ ষড়)ি এবং আইসল্যান্ড নি¤œচাপ (ওপবষধহফরপ
ষড়)ি দেখা যায়। এ নি¤œচাপ অঞ্চল সমূহে শীতকালে মেঘাচ্ছন্ন, ঝড়ো হাওয়া বিরাজ করে।
গ্রীষ্মকালে ঠিক বিপরীত অবস্থা সৃষ্টি হয়, সমুদ্র ভাগে উচ্চচাপ সৃষ্টি হয়। এশিয়াতে নি¤œচাপ
অপেক্ষাকৃত তীব্র হয়, আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে নি¤œচাপ আবর্তিত হয়। আটলান্টিক ও প্রশান্ত
মহাসাগরে দুটি ভিন্ন উচ্চচাপ কেন্দ্র তৈরি হয়। এগুলো তাদের শীতকালের অবস্থান থেকে উত্তরে
সরে যায় এবং প্রসারিত হয় যা এ্যাজোর‘স উচ্চচাপ (অুড়ৎব’ং যরময) অথবা বারমুডা উচ্চচাপ
(ইবৎসঁফধ যরময) এবং হাওয়াইয়ান উচ্চচাপ (ঐধধিরধহ যরময) নামে পরিচিত।
উত্তর গোলার্ধের বায়ুচাপ কেন্দ্র কেমন?
উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপিয়
সমচাপ বলয়।
কানাডিয়ান উচ্চচাপ,
অ্যালেউশিয়ান নি¤œচাপ ও
আইসল্যান্ড নি¤œচাপ।
এ্যাজোর্স বারমুড়া/হাওয়াইন
উচ্চচাপ।

পাঠ সংক্ষেপ
বায়ুর চাপ হচ্ছে ভ‚-পৃষ্ঠে প্রতি একক জায়গায় গ্যাসের (বায়ুর) অণুর সংঘর্ষের ফলে প্রদত্ত
বল। বায়ুর চাপ তাপমাত্রা বৃদ্ধির সমানুপাতিক। ব্যারোমিটারের সাহায্যে বায়ুর চাপ পরিমাপ
করা হয়। বায়ুর সমতলীয় চাপের পার্থক্য থেকে বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়। বায়ুপ্রবাহের চালিকা
শক্তি হচ্ছে শোষিত সৌরশক্তি। পৃথিবীব্যাপী বায়ুর চাপের বন্টনে স্থানভেদে পার্থক্য দেখা
যায়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন ৩.১৮
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
১. সঠিক উত্তরটির পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন (সময় ৩ মিনিট) ঃ
১.১ তাপমাত্রার বৃদ্ধির ফলে গ্যাসের অণুর -
ক. শীতল খ. গতিবৃদ্ধি
গ. গরম ঘ. উষ্ণ হয়
১.২ স্বাভাবিক বায়ুচাপে পারদ স্তম্ভ-এর উচ্চতা -
ক. ১৮ সে.মি. খ. ৭০ সে.মি;
গ. ৭৬ সে.মি ঘ. ১০৪ সে.মি
১.৩ বিমানে ব্যবহৃত হয়ক. স্পিডোমিটার খ. ফ্যাদোমিটার
গ. টনোমিটার ঘ. তরলহীন ব্যারোমিটার
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (সময় ১০ মিনিট) ঃ
১ বায়ুচাপ কি?
২ আদর্শ গ্যাসের সূত্রটি কি?
৩ কার্য তাপমাত্রা বলতে কি বুঝ?
৪ বায়ুচাপে হিপসোমেট্রিক সম্পর্ক কি?
৫ কিভাবে বায়ুচাপ পরিমাপ করা হয়?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. বায়ুচাপ কি?উষ্ণতার সাথেবাযুচাপের সম্পর্কে বর্ণনা করুন।
২. বায়ুচাপের সাথে উচ্চতার সম্পর্ক এবং বায়ুচাপ পরিমাপ প্রক্রিয়া বর্ণনা করুন।
৩. পৃথিবীর বায়ুচাপ বন্টন কিরূপ? চিত্রসহ বিশদ আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]