আর্দ্রতা
আর্দ্রতা শব্দটি বায়ুতে জলীয় বাস্পের উপস্থিতির পরিমাণ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। বায়ুতে অন্যান্য
গ্যাসের তুলনায় জলীয় বাস্পের পরিমাণ অতি নগন্য, আয়তন হিসাবে যা শূন্য থেকে শতকরা চার
ভাগের ও কম হয়ে থাকে, কিন্তুআবহাওয়া তথা জলবায়ুতে এ সামান্য পরিমাণ জলীয় কণার
ব্যাপক ভ‚মিকা রয়েছে।
নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপ, চাপ ও আয়তনের বায়ুতে সর্বোচ্চ যে পরিমাণ জলীয় বাস্প ধারণ করতে
পারে সেই পরিমাণ জলীয় বাস্পের উপস্থিতিকে সম্পৃক্ত (ঝধঃঁৎধঃরড়হ) অবস্থা বলে।
জলীয়বাস্পজনিত বায়ুচাপ জলীয়বাস্পচাপ নামে পরিচিত।
আর্দ্রতা কাকে বলে?
বায়ুর জলীয়বাস্প ধারণক্ষমতার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। যেমন,
১. চাপবৃদ্ধির সাথে হ্রাস পায়;
২. তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে বৃদ্ধি পায়।
স্বাভাবিক চাপে বায়ুর জলীয় বাস্প ধারণ ক্ষমতা নি¤œ সারণিতে প্রদর্শিত হলো:
সারণি ৩.২২.১ ঃ তাপমাত্রার সাথে বায়ুর জলীয়বাস্প ধারণ ক্ষমতার তুলনা।
তাপমাত্রা (ক্কসে) জলীয়বাস্প
(গ্রাম/কেজিতে)
তাপমাত্রা (ক্কসে) জলীয়বাস্প
(গ্রাম/কেজিতে)
-৪০ ০.১ ১৫ ১০.০
-৩০ ০.৩ ২০ ১৪.০
-২০ ০.৭৫ ২৫ ২০.০
-১০ ২.০ ৩০ ২৬.০
০ ৩.৫ ৩৫ ৩৫.০
৫ ৫.০ ৪০ ৪৭
১০ ৭.০
বাতাসের আর্দ্রতার সংখ্যাতাত্তি¡ক (ছঁধহঃরঃধঃরাব) মানে প্রকাশের কয়েকটি পদ্ধতি আছে, তম্মধ্যে
বিশেষ উল্লেখযোগ্য:
১. চরম আর্দ্রতা (অনংড়ষঁঃব ঐঁসরফরঃু)
২. তুল্য আর্দ্রতা (জবষধঃরাব ঐঁসরফরঃু)
বায়ুর জলীয় বাষ্প
ধারণক্ষমতা চাপ ও
তাপমাত্রার সঙ্গে সম্পর্কিত।
আপেক্ষিক আর্দ্রতা (ঝঢ়বপরভরপ ঐঁসরফরঃু)
আপেক্ষিক আর্দ্রতা হচ্ছে নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুতে কোনো সময়ে যে পরিমাণ জলীয়বাস্প আছে তার
পরিমাণ। এ মান একক আয়তনের বায়ুর মধ্যে উপস্থিত জলীয় বাস্পের পরিমাণকে বুঝায়। যেমন,
গ্রাম/কিলোগ্রাম, অর্থাৎ এক কিলোগ্রাম বায়ুতে এক গ্রাম জলীয় বাস্প আছে। আপেক্ষিক আর্দ্রতা
ওজনের তুলনা বলে নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুতে নির্দিষ্ট পরিমাণ জলীয় বাস্পের উপস্থিতিতে এর মান
চাপ বা তাপমাত্রা কোনটির পরিবর্তনেই পরিবর্তিত হয় না। তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে বায়ুর জলীয়
বাস্প ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ফলে আপেক্ষিক আর্দ্রতার মান জলীয় বাস্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া
সাপেক্ষে তাপমাত্রার বৃদ্ধির ফলে বৃদ্ধি পায়।
আপেক্ষিক আর্দ্রতা কাকে বলে?
তুল্য আর্দ্রতা (জবষধঃরাব ঐঁসরফরঃু)
নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বায়ুস্থ জলীয় বাস্প এবং ঐ তাপমাত্রায় জলীয় বাস্প সম্পৃক্তির জন্য যে পরিমাণ
জলীয় বাস্প থাকতে পারে তার অনুপাতকে তুল্য আর্দ্রতা বলা হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ২৫ক্ক
সে. তাপমাত্রায় সম্পৃক্ত ১ কিলোগ্রাম বায়ুতে ২০ গ্রাম জলীয় বাস্প থাকে। যদি কোন এক সময়ে
বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাস্পের পরিমাণ ১০ গ্রাম হয় তবে সেই সময়ের তুল্য আর্দ্রতা হবে ১০/২০
বা ৫০ শতাংশ। ১০০ ভাগ তুল্য আর্দ্রতার অর্থ হচ্ছে বায়ুজলীয় বাস্পে সম্পৃক্ত হয়েছে। তুল্য
আর্দ্রতার পরিবর্তন হয় দুটি কারণে১. নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় বায়ুতে জলীয় বাস্প যোগ হলে তুল্য আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়,
২. যখন জলীয় বাস্পের উপস্থিতি নির্দিষ্ট পরিমাণে হয় তখন তাপমাত্রা কমলে তুল্য আর্দ্রতা বৃদ্ধি
পায়। আবার, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে তুল্য আর্দ্রতা হ্রাস পায়।
তুল্য আর্দ্রতার সাথে শিশিরাঙ্ক (উবি ঢ়ড়রহঃ) সম্পর্কযুক্ত। যে তাপমাত্রায় বায়ুজলীয়বাস্পে সম্পৃক্ত
হয় তা শিশিরাঙ্ক নামে পরিচিত। অর্থাৎ বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাস্প দ্বারা ঐ বায়ুকে সম্পৃক্ত
করতে হলে যে তাপমাত্রা পর্যন্ত শীতল করা প্রয়োজন সেই তাপমাত্রাকে শিশিরাঙ্ক বলে।
শিশিরাংকের চেয়ে কম তাপমাত্রায় বায়ুস্থ জলীয় বাস্প শিশির হিসাবে জমতে শুরু করে।
তুল্য আর্দ্রতা কি?
আর্দ্রতার পরিমাপ (ঐঁসরফরঃু গবধংঁৎবসবহঃ)
আর্দ্রতার পরিমাপে সাধারণত তুল্য আর্দ্রতাই পরিমাপ করা হয়। তুল্য আর্দ্রতার পরিমাপ তুল্য
আর্দ্রতা পরিমাপের দুটি পদ্ধতি রয়েছেক. সাইক্রোমিটার (চংুপযৎড়সবঃবৎ)
খ. হাইগ্রোমিটার (ঐুমৎড়সবঃবৎ)
সাইক্রোমিটার
সাইক্রোমিটারের সাহায্যে আপেক্ষিক আর্দ্রতা পরিমাপের জন্য এ যন্ত্রে দুটি স্বাভাবিক থার্মোমিটার
কাছাকাছি অবস্থানে সংযুক্ত থাকে। থার্মোমিটার দুটির একটি শুষ্কভাল্ব (উৎু নঁষন) বা মুক্ত বায়ুতে
থাকে। অন্যটি পারদাধার বা বাল্ববটি একটি সুক্ষè সুতা দ্বারা তৈরী কাপড়ে আবৃত (গঁংষরহ রিপশ)
থাকে যার অপর প্রান্ত পানি পূর্ণ অবস্থানে থাকে; একে ভেজা বাল্ব (ডবঃ নঁষন) বলে। বাল্ববটিতে
ক্রমাগত বায়ুপ্রবাহ বা যন্ত্রটি ঘুর্ণনের ফলে পানি বাস্পীভ‚ত হয়। বাস্পীভ‚ত হতে পানি কিছুটা তাপ
হারায় যা সিক্তবালু থার্মোমিটারের পারদ স্তম্ভ সংকুচিত করে, এ অবস্থায় থার্মোমিটারদ্বয়ের
নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুতে কোন
সময় যে নির্দিষ্ট পরিমাণ
জলীয় বাষ্প আছে, তার
পরিমাণকে আপেক্ষিক আর্দ্রতা
বলে।
নির্দিষ্ট তাপে বায়ুস্থ জলীয়
বাষ্প এবং ঐ তাপমাত্রায়
জলীয় বাষ্প সম্পৃক্তির জন্য
যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প
থাকতে পারে তার অনুপাতকে
তুল্য আর্দ্রতা বলা হয়।
সাইক্রোমিটারের সাহায্যে
আপেক্ষিক আর্দ্রতা পরিমাপ
করা যায়।
তাপমাত্রা লিপিবদ্ধ করা হয়। শুষ্কবালুথার্মোমিটার বায়ুর তাপমাত্রা নির্দেশ করে (চিত্র ৩.২২.১)।
পানি বাস্পীভ‚ত হতে কি পরিমাণ তাপ প্রয়োজন তা নির্ভর করে বায়ুতে জলীয় বাস্পের উপস্থিতির
পরিমাণের উপর। বেশী জলীয় বাস্প সমৃদ্ধ বায়ুতে বাস্পীভবনের জন্য কম তাপের প্রয়োজন হবে
ফলে শীতল ক্রিয়া কম হবে। বায়ু যত শুষ্ক হবে শীতলতা তত প্রকট হবে। অর্থাৎ দুই
থার্মোমিটারের তাপমাত্রা পার্থক্য তত বেশী হবে। আর দুই থার্মোমিটারের তাপমাত্রার পার্থক্য যত
বেশী হবে তুল্য আর্দ্রতা তত কম হবে।
বায়ুযদি জলীয় বাস্পে সম্পৃক্ত হয় তবে মোটেই বাস্পীভবন হবে না, তখন থার্মোমিটার দুটি একই
পাঠ প্রদর্শন করবে, যার অর্থ বায়ুর তুল্য আর্দ্রতা শতকরা ১০০ ভাগ। সঠিক তুল্য আর্দ্রতার জন্য
একটি সারণী ব্যবহার করা হয়। শিশিরাংক নির্ণয়ের জন্য একই পদ্ধতিতে তাপমাত্রা নির্নয় করা হয়
তবে সে ক্ষেত্রে অন্য সারণী (শিশিরাংক সারণী) ব্যবহার করা হয়।
চিত্র ৩.২২.১ : সাইক্রোমিটারের সাহায্যে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাপ।
হাইগ্রোমিটার
হাইগ্রোমিটার থেকে সারণী ব্যবহার ছাড়াই সরাসরি বায়ুর তুল্য আর্দ্রতা পরিমাপ করা যায়। চুল বা
কিছুকৃত্রিম তন্তুআছে যেগুলোর দৈর্ঘ্য, তুল্য আর্দ্রতার সাথে পরিবর্তিত হয়। তুল্য আর্দ্রতা বৃদ্ধি
পেলে এগুলোর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি হয় আবার তুল্য আর্দ্রতা হ্রাস পেলে এদের দৈর্ঘ্য ও হ্রাস পায়। এক গুচ্ছ
তন্তর এ হ্রাস বৃদ্ধি একটি সূচকের সাহায্যে লিপিবদ্ধ করে তুল্য আর্দ্রতার পরিমাপ জানা যায় (চিত্র
৩.২২.২)। এ পদ্ধতিতে তুল্য আর্দ্রতা পরিমাপ করতে মাঝে মাঝে যন্ত্রটিকে সংশোধন
(ঈধষরনৎধঃরড়হ) করে নিতে হয়। নি¤œ তাপমাত্রায় এ হ্রাস-বৃদ্ধি এত ধীরে হয় যে প্রকৃত মান নির্নয়
করা সম্ভব হয় না।
হাইগ্রোমিটারের গঠন প্রণালী ও কাজ কি?
সিক্ত বালু ও শুল্কবালু
থার্মোমিটার।
হাইগ্রোমিটারের সাহায্যে তুল্য
আর্দ্রতা পরিমাপ করা যায়।
বিশেষ ধরনের বৈদ্যুতিক
হাইগ্রোমিটারের গঠন
প্রণালী হচ্ছে একটি
বিদ্যুৎ পরিবাহী বা
আর্দ্রতাগ্রাহী রাসায়নিক
দ্রব্য দ্বারা আচ্ছাদিত
থাকে। তুল্য আর্দ্রতার
পরিবর্তনের সাথে এ
পরিবাহী বস্তুর বিদ্যুৎ
পরিবাহীতার ও পরিবর্তন
হয়, এভাবে তুল্য আর্দ্রতা
লিপিবদ্ধ করা হয়।
চিত্র ৩.২২.২ : হাইগ্রোমিটারের সাহায্যে বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাপ।
পাঠ সংক্ষেপ
আর্দ্রতা বলতে বায়ুতে জলীয় বাস্পের উপস্থিতির পরিমাণ বুঝানো হয়। বায়ুর জলীয় বাস্প
ধারণ ক্ষমতা চাপ ও তাপমাত্রার সাথে সম্পর্কিত। পরম ও তুল্য আর্দ্রতা বাতাসের আর্দ্রতা
সংখ্যাতাত্বিক মানে প্রকাশের গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন ৩.২২
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
১. সঠিক উত্তরটির পাশে টিক (√) চিহ্ন দিনÑ (সময় ৩ মিনিট) ঃ
১.১ আর্দ্রতা শব্দটি বায়ুতে কিসের উপস্থিতির পরিমাণ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়ক. জলীয় বাস্প খ. জলবায়ুর
গ. কুয়াশার ঘ. ধূলিকণা ও শিশির বিন্দুর
১.২ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে বায়ুর জলীয়বাস্প ধারণ ক্ষমতাক. হ্রাস পায় খ. বৃদ্ধি পায়
গ. কখনো হ্রাস পায় কখনো বৃদ্ধি হয় ঘ. হ্রাস বৃদ্ধি কিছুই হয় না
১.৩ নির্দিষ্ট পরিমাণ জলীয় বাস্পের উপস্থিতিতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলেক. তুল্য আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায় খ. তুল্য আর্দ্রতা হ্রাস পায়
গ. আপেক্ষিক আর্দ্রতা হ্রাস পায় ঘ. তুল্য আর্দ্রতা অপরিবর্তিত থাকে
বিদ্যুৎ পরিবাহী বা আর্দ্রতা
গ্রাহী রাসায়নিক দ্রব্য দ্বারা
আচ্ছাদিত।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (সময় ২ী৬ = ১২ মিনিট) ঃ
১. আর্দ্রতা কাকে বলে?
২. আপেক্ষিক আর্দ্রতা কাকে বলে?
৩. তুল্য আর্দ্রতা কি?
৪. কিভাবে আর্দ্রতার পরিমাপ করা হয়?
৫. সাইক্রোমিটার কিভাবে কাজ করে?
৬. হাইগ্রোমিটারের গঠন প্রণালী ও কাজ কি?
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১. আর্দ্রতা বলতে কি বুঝায়? বিভিন্ন প্রকার আর্দ্রতার বর্ণনা দিন।
২. আর্দ্রতার পরিমাপ পদ্ধতির বর্ণনা দিন।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ