পৃথিবীর উষ্ণায়ন - গ্রীন হাউস প্রভাব
পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে গত প্রায় এক দশকেরও
অধিক সময় ধরে বিতর্কের শেষ নেই। বিতর্কের কারণ যদি সত্যিই উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে,
তাহলে এ জন্য মানুষের ভ‚মিকা কি? ধনী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী এ বৃদ্ধির জন্য পরস্পরকে দায়ী
করছে। উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণ নিয়ে যত বিতর্ক ও অনিশ্চয়তাই থাকুক না কেন, পৃথিবীর মানব
সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে বিষয়টিকে অবহেলা করা অত্যন্ত বিপদজনক হবে এ বিষয়ে সবাই
নিশ্চিত।
ভ‚-পৃষ্ঠের তাপমাত্রার ঐতিহাসিক রেকর্ড থেকে লক্ষ্য করা গেছে যে গত একশত বৎসরে পৃথিবীর
গড় উষ্ণতা প্রায় ০.৫º থেকে ০.৬º সে. বেড়েছে (চিত্র-৩.২৫.১)।
চিত্র ৩.২৫.১ : গত শতাব্দীতে পৃথিবীর গড় উষ্ণতার পরিবর্তন। তাপমাত্রা বৃদ্ধি সমান হারে ঘটেনি, লক্ষ্য করার মত যে
তাপমাত্রা ১৯১০ থেকে ১৯৪০ এর মধ্যে এবং ১৯৭০ দশক থেকে অবিরাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চিত্রের উষ্ণতার পরিবর্তন ধারা কতখানি গ্রহণযোগ্য? সময়ের মাপে একশত বছর খুব কম সময়;
এত অল্প সময়ের গড় উষ্ণতার পরিবর্তন নিশ্চিতভাবে পরিমাপ অসুবিধাজনক। কারন প্রতি বৎসর
অঞ্চল ও ঋতুভেদে উষ্ণতার যে তারতম্য ঘটে থাকে তার তুলনায় এ মাত্রা (৫º-৬º সে:) খুবই
নগন্য। ফলে উষ্ণতার এ হিসাবের নির্ভুলতা সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা দ্বিধানি¦ত। তাদের প্রশ্ন হলো:
উষ্ণতা বৃদ্ধির এ প্রবণতা যদি সঠিক হয় তাহলে এই বৃদ্ধি কি চলতেই থাকবে? পৃথিবী কতটুকুউষ্ণ
গত একশত বছরে পৃথিবীর
গড় উষ্ণতা ০.৫০
সে. থেকে
০.৬
সে. বেড়েছে।
হবে? পৃথিবীর উষ্ণতার সাথে বায়ুমন্ডলের রাসায়নিক গঠন উপাদানের কি সম্পর্ক? এ উষ্ণতা বৃদ্ধির
সাথে মানুষের কর্মকান্ড কিভাবে জড়িত? উষ্ণতা বৃদ্ধির পরিণতি কি? উষ্ণতা বৃদ্ধির এ ধারা কি
পরিবর্তন সম্ভব? পৃথিবীর উষ্ণায়ন সম্পর্কে জানার জন্য এ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরী। তাই এ
বিষয়ের প্রথমেই জানা প্রয়োজন বায়ুমন্ডল দ্বারা কি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় ভ‚-পৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়।
পৃথিবী কি উষ্ণ হচ্ছে?
পৃথিবী উষ্ণায়নে বায়ুমন্ডলের ভ‚মিকা (জড়ষব ড়ভ অঃসড়ংঢ়যবৎব রহ এষড়নধষ ডধৎসরহম)
পৃথিবীর জলবায়ুর প্রধান চালক বায়ুমন্ডল এবং এর শক্তি যোগায় সূর্য। সূর্যরশ্মি পৃথিবীর পৃষ্ঠে
পৌঁছার সময় মেঘমালা ও ধুলিকণা দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়, ফলে এর কিছুঅংশ প্রতিফলিত হয়ে
মহাশূন্যে হারিয়ে যায়। এ রশ্মির বাকি অংশের কিছুভ‚মি ও পানিতে শোষিত হয় এবং অবশিষ্টাংশ
ভ‚-পৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত হয়ে মহাকাশে ফিরে যায়। সূর্য রশ্মির এ আপতিত রশ্মি খাট তরঙ্গ
হিসাবে পৃথিবীতে পৌঁছে কিন্তু প্রতিফলিত রশ্মি অবলোহিত (ওহভৎধ-ৎবফ) দীর্ঘ তরঙ্গ আকারে
বায়ুমন্ডলে ফিরে যায়।
প্রতিফলিত এই দীর্ঘ তরঙ্গ (মূলত: তাপীয় শক্তি) বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান দ্বারা
বাধাপ্রাপ্ত হয় ফলে তা নি¤œ আকাশে থেকে যায়। এই অবস্থায় বায়ুমন্ডলের নি¤œাংশে ভ‚-পৃষ্ঠ সংলগ্ন
উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। কাছাকাছি মেঘ দ্বারাও অবলোহিত রশ্মি প্রতিফলিত করে ভ‚-মন্ডল শীতল রাখতে
সাহায্য করে এবং ভ‚-পৃষ্ঠের প্রতিফলিত রশ্মি আটকে রেখে নীচের বায়ুমন্ডল গরম রাখে। একটি
কাঁচের গ্রীন হাউসের সাথে বিষয়টিকে তুলনা করা যায়। কাঁচ ভেদ করে খাটো তরঙ্গের অতিবেগুনী
আলোকরশ্মি গ্রীন হাউসে প্রবেশ করে কিন্তুমেঘ ও গ্যাসের ন্যায় অবলোহিত রশ্মি কাচেঁর মাধ্যমে
বাইরে বের হতে পারে না। ফলে গ্রীন হাউসের ভিতরে তাপীয় শক্তি আটকা পড়ে এবং ফলশ্রæতিতে
তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। কাঁচের গ্রীন হাউসের বৈশিষ্ট্যই গ্রীন হাউস প্রভাব নামে পরিচিত। মূলত: গ্রীন
হাউস প্রভাবের কারণেই পৃথিবী বসবাসযোগ্য আছে। গ্রীন হাউস প্রভাব বিহীন ভ‚-পৃষ্ঠ সৌর
জগতের অন্য গ্রহের ন্যায় অব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠবে।
কি প্রক্রিয়ায় পৃথিবী উত্তপ্ত হয়?
গ্রীন হাউস গ্যাস সমূহ (এৎববহ ঐড়ঁংব এধংবং)
বায়ুমন্ডলীয় গ্যাসের যেগুলি অবলোহিত রশ্মি শোষণ করে সেগুলোই গ্রীন হাউস নামে পরিচিত।
যেমন, জলীয়বাস্প (ঐ২ঙ), কার্বন-ডাই-অক্সাইড (ঈঙ২), মিথেন (ঈঐ৪), ওজন (ঙ৩), নাইট্রাস
অক্সাইড (ঘ২ঙ), ক্লোরোফ্লোরো কার্বন (ঈঋঈং) এবং জেনন।
জলীয়বাস্প প্রাকৃতিক গ্রীন হাউস উষ্ণতার প্রায় শতকরা ৮০ ভাগই জলীয়বাস্প জনিত। তাই,
জলীয়বাস্প সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ গ্রীন হাউস গ্যাস। উষ্ণতার অবশিষ্ট ২০ শতাংশের জন্য অন্যান্য
অত্যন্ত স্বল্প মাত্রার গ্যাস সমূহ দায়ী। এ সমস্ত গ্যাসের মাত্রা এতই কম যে এদের আয়তন
পরিমাণে বায়ুতে প্রতি বিলিয়নে কত মাত্রায় আছে (পি.পি.বি.ভি) তার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
সারণি-৩.২৫.১ এ বায়ুমন্ডলীয় স্বল্প মাত্রার (ঞৎধপব) গ্যাস সমূহের মধ্যে অন্যতম গ্রীন হাউস গ্যাস
এবং এদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে।
গ্রীন হাউজের কাঁচভেদ করে
খাটো তরঙ্গের অতিবেগুনী
আলোকরশ্মি ভিতরে প্রবেশ
করে কিন্তু ভিতরের তাপ
বাইরে আসতে পারে না।
প্রায় ৮০ ভাগ জলীয়
বাষ্পজনিত।
সারণি ৩.২৫.১: গ্রীন হাউস প্রভাবে জড়িত বায়ুমন্ডলীয় স্বল্প মাত্রার গ্যাস সমূহ
বৈশিষ্ট্যাবলী কার্বন-ডাইঅক্সাইড (ঈঙ২)
মিথেন
(ঈঐ৪)
নাইট্রাস
অক্সাইড
(ঘ২ঙ)
ক্লোরোফ্লোরো
কার্বন (ঈঋঈং)
টোপোমন্ডলীয়
ওজোন (ঙ৩)
জলীয়বাস্প
(ঐ২ঙ)
গ্রীন হাউস ভ‚মিকা উষ্ণতা বৃদ্ধি উষ্ণতা বৃদ্ধি উষ্ণতা বৃদ্ধি উষ্ণতা বৃদ্ধি উষ্ণতা বৃদ্ধি বায়ু উত্তপ্ত
কওে মেঘ,
ঠান্ডা রাখে
স্ট্রেটোমন্ডলীয়
ওজনের প্রভাব
হ্রাস/বৃদ্ধি
ঘটাতে পারে
#NAME?
প্রধান মানবীয়
উৎস
জীবাশ্ম ভিত্তিক
জ্বালানী, বনের
ধ্বংস সাধন
ধান চাষ,
গবাদি পশু,
জীবাশ্ম
ভিত্তিক
জ্বালানী,
জৈব বস্তু
দহন
সার ও ভ‚মি
ব্যবহার
পরিবর্তন
রিফ্রেজারেন্টস
এ্যারোসোলস,
শিপের
কর্মকান্ড
হাইড্রোকার্বনস
(ঘঙ সহ),
জৈব
বস্তু পোড়ানো
ভ‚-পরিবর্তন,
পানি পরিবর্তন
প্রধান প্রাকৃতিক
উৎস
প্রকৃতিগতভাবে
ভারসাম্য
বজায়
থাকে
জলাভ‚মি, মৃত্তিকা
ক্রান্তীয়
বনাঞ্চল
নাই হাইড্রোকার্বনস বাস্পীয়
প্রস্বেদন,
বায়ুমন্ডলীয় বয়স ৫০-২০০ বছর ১০ বছর ১৫০ বছর ৬০-১০০ বছর কয়েক সপ্তাহ
থেকে কয়েক
মাস
কয়েকদিন
বর্তমানে বায়ুমন্ডলে
পরিমাণ (প্রতি
বিলিয়ন আয়তনে)
৩,৫৩,০০০ ১৭২০ ৩১০ ১১:০.২৮
ঈঋঈ
১২:০০.৫
২০-৪০ ৩০০০-৬০০০
(স্ট্রাটোমন্ডলে)
শিল্প বিপ্লবের পূর্বে
(১৭৫০-১৮০০)
বায়ুমন্ডলে
এরপরিমাণ (প্রতি
বিলিয়ন আয়তনে)
২,৪০,০০০ ৭৯০ ২৮৮ ০ ১০ অজানা
বর্তমান বার্ষিক বৃদ্ধি
হার
০.৫% ১.১% ০.৩% ৫% ০.৫-২.০% অজানা
মানবজনিত গ্রীন
হাউসের প্রভাব
৬০% ১৫% ৫% ১২% ৮% অজানা
সারণিতে লক্ষ্যণীয়, মানব প্রভাবজনিত গ্যাস সমূহের মধ্যে বায়ুতে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা
সর্বাধিক যার পরিমাণ প্রায় ৩,৫০,০০০ পি.পি.বি.ভি। অন্যান্য গ্রীন হাউস গ্যাসের মধ্যে মিথেন,
নাইট্রোজেন অক্সাইড, ওজোন ও বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত ক্লোরো-ফ্লোরো কার্বন (সিএফসি)
অন্যতম। বায়ুমন্ডলে এই সমস্ত গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত দশক থেকে বিজ্ঞানীরা এই
বিষয়ে জানতে বিশেষভাবে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
গ্রীন হাউস গ্যাস কি?
পৃথিবীর উষ্ণায়নের পরিবেশগত প্রভাব (ঊহারৎড়হসবহঃ ঊভভবপঃ ড়ভ এষড়নধষ ডধৎসরহম)
জলীয় বাষ্প, কার্বন-ডাইঅক্সাইড, মিথেন, ওজোন,
নাইট্রাস অক্সাইড
ক্লোরোফ্লোরো কার্বন এবং
জেনন গ্রীন হাউস গ্যাস নামে
পরিচিত।
পৃথিবীর উষ্ণায়ন মানব প্রভাবিত জলবায়ুপরিবর্তনের একটি উদাহরণ। জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত
প্রভাবের ভৌত ও জৈব বিষয়ক আরো অনেক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। যেমন, বারিপাতের
পরিবর্তন, উদ্ভিজ্জের বন্টন বিন্যাস পরিবর্তন, ক্রমবর্ধমান ঝঞ্ঝা বিক্ষুদ্ধ আবহাওয়া, হিমবাহ ও সমুদ্র
বরফের বন্টন, বরফাচ্ছাদিত ভ‚মির বরফ গলে যাওয়া, সমুদ্র সমতলে উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়া, পানি
চক্রের ব্যাপক পরিবর্তন, মৃত্তিকার জৈব পদার্থের পচন এবং গ্যাসের জলীয় কণার (ঐুফৎধঃবং)
ভাঙ্গন। এসব সম্ভাব্য পরিবর্তন সমূহের কিছুকিছুবিষয়ের সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হলো।
বারিপাতের পরিবর্তন
বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে মহাসাগর, হ্রদ, নদী, খাল, বিলের পানি আরো বেশি পরিমাণে
বাস্পায়িত হবে এবং তাতে আরো বৃষ্টিপাত হবে। তবে এ বৃষ্টিপাত বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম
হবে। এ অবস্থায় ক্রান্তীয় অঞ্চল বৃষ্টিবহুল হবে। মহাদেশীয় ভ‚-ভাগের অভ্যন্তর ভাগ আরো উত্তপ্ত
ও বৃষ্টিহীন হবে। উদ্ভিজ্জের পরিবর্তন বৃষ্টিপাতের পরিবর্তনের সাথে গাছপালার বন্টনেরও ব্যাপক
পরিবর্তন হবে। ফলে বাস্তু পদ্ধতির (ঊপড়ংুংঃবস) উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাত দ্বারা
প্রভাবিত হবে। কিছুকিছুকৃষি অঞ্চলে ঘন ঘন খরা ও মৃত্তিকার আর্দ্রতা হ্রাস পাবে ফলে কৃষি
উৎপাদন কমে যাবে। উচ্চ অক্ষাংশে অবশ্য দীর্ঘ গ্রীষ্ম হওয়ায় কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
ক্রমবর্ধমান সাইক্লোন/ঝড় তুফান
বায়ুমন্ডলীয় ক্রমবর্ধমান উষ্ণতার সাথে ক্রান্তীয় এলাকায় ঝড়, তুফান, সাইক্লোনের প্রবণতা বৃদ্ধি
পাবে। যে সমস্ত অঞ্চলে এগুলো প্রায়শঃ সংঘঠিত হয়, উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় তার প্রকোপ আরো
অনেক বেড়ে যাবে।
তুষার গলে যাবে (অথবা বরফ জমা হবে)
গ্রীষ্মকালীন অধিক উষ্ণতার কারণে নি¤œ ও মধ্য অক্ষাংশে তুষারের স্তুপের পুরুত্ব হ্রাস পাবে।
অপরদিকে উচ্চ অক্ষাংশে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে মহাসাগর অধিক মাত্রা বাস্পায়ন হবে এবং
নিকটবর্তী তুষার স্তুপের সাথে যোগ হবে। উচ্চ অক্ষাংশের মহাদেশীয় তুষার স্তুপের উপর অধিক
মাত্রায় তুষারপাত হবে, ফলে এর আয়তন সম্প্রসারিত হবে।
সমুদ্রের ভাসমান বরফ হ্রাস
বর্ধিত উষ্ণতা উত্তর গোলার্ধের সামুদ্রিক ভাসমান বরফ বহুলাংশে গলিয়ে দেবে। এর ফলে উত্তপ্ত
গোলার্ধে ভাসমান বরফ থেকে সূর্যালোকের প্রতিফলন মাত্রা হ্রাস পাবে যার কারণে ঐ অঞ্চলে গ্রীন
হাউস প্রভাব বেড়ে যাবে। জি.সি মডেল অনুযায়ী দক্ষিণ গোলার্ধের উচ্চ অক্ষাংশে উষ্ণতা বৃদ্ধি কম
হওয়ায় সামুদ্রিক ভাসমান বরফের তেমন পরিবর্তন হবে না।
চিরতুষার রাজ্যের বরফ গলে যাওয়া
বর্ধিত গ্রীষ্মকালীন বায়ুর উষ্ণতার কারণে উচ্চ অক্ষাংশের চিরতুষার এলাকার বরফ গলতে থাকবে।
ফলে এসব এলাকায় গড়ে উঠা শহরও অবকাঠামো এবং বাস্তু সংস্থান ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি
বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধি, বাস্তু
পদ্ধতির পরিবর্তন।
ক্রান্তীয় এলাকায়।
পৃথিবীর উষ্ণতার ফলে
বারিপাতের পরিবর্তন, তুষার
গলে যাওয়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের
উচ্চতা বেড়ে যাওয়া প্রভৃতি
বিপর্যয় ঘটবে।
মহাসাগরের উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে এর আয়তনও সম্প্রসারিত হবে, ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে
যাবে এবং সাথে মহাদেশীয় পার্বত্য তুষার গলা পানিও সমুদ্রের সাথে যোগ হয়ে সমুদ্র পৃষ্ঠের
উচ্চতা আরো বাড়িয়ে দেবে। সমুদ্র পৃষ্ঠের এ বাড়তি উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে উপক‚লীয় সমতল ভ‚মির
দেশসমূহ সামুদ্রিক জোয়ারের পানি দ্বারা প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করবে। বিশেষ করে
মালদ্বীপ ও দক্ষিণ প্রশান্ত মহাদেশীয় বেশি কিছুদ্বীপের অস্তিত্ত¡ লোপ পাবে।
বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বিস্তীর্ন এলাকা সমুদ্রের পানিতে প্লাবিত হবে। এক হিসাবে
দেখা গেছে সমুদ্র সমতলের উচ্চতা মাত্র ১ মিটার বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের প্রায় ১৭ শতাংশ
উপক‚লীয় সমভ‚মি সামুদ্রিক পানিতে ডুবে যাবে। ব্যাপক এলাকায় ভ‚মিক্ষয় প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পাবে,
সমুদ্রের লোনা পানির সংস্পর্শে আরো বিস্তীর্ণ এলাকা ক্ষতিগ্রস্থ হবে; বর্তমান সুন্দরবন পুরোপুরি
পানিতে তলিয়ে যাবে।
পৃথিবীর উষ্ণায়নের পরিবেশগত প্রভাব কি?
পৃথিবীর উষ্ণায়ন লাঘবে মানব জাতির সাড়া
পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির যাবতীয় গবেষণার নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে অনেকাংশে বিতর্ক থাকলেও সারা
বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীও সাধারণ জনমত সভ্যতার অস্তিত্ত¡ টিকিয়ে রাখার স্বার্থে নি¤œলিখিত বিষয়ে
একমত পোষণ করেন:
ক. এ বিষয়ে আরো ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন;
খ. বায়ুমন্ডলীয় পরিবর্তনে মানবজনিত কর্মকান্ডের অবদান যতখানি সম্ভব নিয়ন্ত্রণ করা;
গ. মানবজনিত অবদানে উন্নয়নশীল ও শিল্প সমৃদ্ধ দেশ সমূহে যথেষ্ট পার্থক্য থাকলেও উভয়
ক্ষেত্রেই ন্যায় সঙ্গত পদক্ষেপ নিতে হবে; এবং
ঘ. যে পদক্ষেপই নেওয়া হবে তা আন্তর্জাতিকভাবে সমন¦য় সাধিত হবে।
এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিকভাবে ১৯৯৯ সালে প্রথম বিশ্ব জলবায়ুপ্রোগ্রাম নামক একটি কর্মসূচি শুরু
হয়। পরবর্তীতে এ বিষয়ে আরো দুটি কর্মসূচি আন্তর্জাতিক ভ‚-মন্ডল ও জৈবমন্ডল প্রোগ্রাম
(ওহঃবৎহধঃরড়হধষ এবড়ংঢ়যবৎব ্ ইরড়ংঢ়যবৎব) ও বিশ্ব পরিবর্তনে মানবীয় সাড়া (ঐঁসধহ
জবংঢ়ড়হংব ঃড় এষড়নধষ ঈযধহমব) শুরু হয়। এসব কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় ১৯৮৯ সালে বিশ্ব
আবহাওয়া সংস্থা (ডগঙ), জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা (টঘঊচ) ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান
ইউনিয়ন পরিষদ (ওঈঝট) সম্মিলিতভাবে ৩৮টি দেশের বিজ্ঞানী ও নীতি নির্ধারণ পরামর্শকদের
নিয়ে (ওহঃবৎমড়াবৎহসবহঃধষ চধহবষ ড়হ ঈষরসধঃব ঈযধহমব (ওচঈঈ) গঠিত হয়। এ সংস্থা জলবায়ুর
পরিবর্তন বিষয়ক গবেষণা পরিচালনা, এর উন্নয়ন এবং ফলাফল সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে অবহিত
করবে। তার ফলশ্রæতিতে ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর মাসে জাপানের কিয়েটো শহরে আন্তর্জাতিক
সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কিয়োটো সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী কয়েক দশকে শিল্পোন্নত
দেশসমূহ ১০% গ্রীনহাউস গ্যাস উৎপাদন হ্রাস করবে। আশা করা যায় এভাবেই মানবজাতিসৃষ্ট
ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে হয়ত পরিত্রাণের পথ খুঁজে পাবে।
উষ্ণায়ন লাঘবে কি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন?
সামুদ্রিক জোয়ারের পানি।
সভ্যতার অস্তিত্ব টিকিয়ে
রাখার স্বার্থে।
পৃথিবীর উষ্ণাষন পদ্ধতির
ক্রমবর্ধিষ্ণুতার কারণে ১৯৯৯
সালে আন্তর্জাতিকভাবে প্রথম
বিশ্ব জলবায়ু প্রোগ্রাম নামক
একটি কর্মসূচি শুরু হয়।
১৯১৭ সালে জাপানের
কিয়োটা শহরে আন্তর্জাতিক
সম্মেলন।
ভ‚-পৃষ্ঠের উষ্ণতা গত একশত বছরে প্রায় ০.৫º থেকে ০.৬º সে. বেড়েছে। পৃথিবীর এ
উষ্ণায়নে বায়ুমন্ডলের ভ‚মিকা জানা প্রয়োজন। বায়ুমন্ডলীয় গ্যাসের যেগুলো অবলোহিত রশ্মি
শোষণ করে সে সব গ্যাসকে গ্রীন হাউস গ্যাস বলে। যেমন- জলীয়বাস্প, কার্বন-ডাইঅক্সাইড, মিথেন, ওজোন, সিএফসি ইত্যাদি।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন ৩.২৫
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
১. সঠিক উত্তরটির পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন (সময় ৪ মিনিট) ঃ
১.১ গত একশত বছরে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েছেক. ০.৫º-০.৭º সে. খ. ০.৪º-০.৬º সে.
গ. ০º-০.৫º সে. ঘ. ০.৫º-০.৬º সে.
১.২ কোনটি গ্রীনহাউস গ্যাসের সংকেত নয়ক. ঙ৩ খ. ঋব৩ঙ৪
গ. ঈঙ২ ঘ. ঘ২ঙ
১.৩ উষ্ণায়নে মানব প্রভাবজনিত কারণে সৃষ্ট গ্যাস সমূহের মধ্যে সর্বাধিকক. সীসা খ. সি এফ সি
গ. মিথেন ঘ. কার্বন-ডাই-অক্সাইড
১.৪ ১৯৯৭ সালে বিশ্ব পরিবেশ সংক্রান্ত সম্মেলন হয়ক. নিউইউর্কে খ. কিয়েটো
গ. প্যারিসে ঘ. ওয়াশিংটনে
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নÑ (সময় ২ী১০ = ১০ মিনিট) ঃ
১. পৃথিবী কি উষ্ণ হচ্ছে?
২. কি প্রক্রিয়ায় পৃথিবী উত্তপ্ত হয়?
৩. গ্রীণ হাউস গ্যাস কি?
৪. পৃথিবীর উষ্ণায়নের পরিবেশগত প্রভাব কি?
৫. উষ্ণায়ন লাঘবে কি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন?
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১. পৃথিবীর উষ্ণায়ন কি? উষ্ণায়নে বায়ুমন্ডলের ভ‚মিকা কি?
২. গ্রীনহাউস গ্যাস সমূহের বর্ণনা দিন।
৩. পৃথিবীর উষ্ণায়নে পরিবেশগত প্রভাব ও উষ্ণায়ন লাঘবে মানব জাতির সচেতনতা সম্পর্কে
বর্ণনা দিন।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ