উদ্ভিদ ও প্রাণী জগৎ
উদ্ভিদ, প্রাণী ও অনুজীব এই তিন ধরনের প্রাণ নিয়ে জীবজগত গঠিত। মানুষ প্রাণীজগতের একটি
অংশ। জীবজগতের প্রাণের এই ধরনসমূহ পরস্পর থেকে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যে আলাদা। যেমন, উদ্ভিদ
খাদ্য উৎপাদনের কাজে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে অজৈব যৌগ ব্যবহার করে থাকে। অপরদিকে,
প্রাণী খাদ্যের জন্য জৈব পদার্থের উপর নির্ভর করে এবং সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া সংগঠনে
অপারগ। তবে, উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়েই বেঁচে থাকা, বেড়ে উঠা এবং প্রজননের জন্য প্রয়োজনীয়
শক্তি শ্বাস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পেয়ে থাকে; যেখানে অক্সিজেন গ্রহণ করে, জৈব যৌগ বিশ্লেষিত হয়
এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে।
অনুজীব, উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে আলাদা, এদের সালোক সংশ্লেষণের ক্ষমতা নেই; খাবারের জন্য
এরা পুরোপুরি অন্য প্রাণী বা বস্তুর মৃত জৈব পদার্থের উপর নির্ভরশীল। এসব অনুজীবদের খালি
চোখে দেখা যায় না। পৃথিবীর সর্বত্রই এদের উপস্থিতি আছে, এমনকি অক্সিজেন বিহীন অবস্থায়ও,
যেখানে অন্য প্রাণী টিকে থাকতে পারে না সেখানেও।
উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়ই অনুজীবের ওপর নির্ভরশীল। অনুজীব ব্যতীত প্রাণের অস্তিত্ত¡ টিকিয়ে রাখা
সম্ভব নয়। কারণ, অনুজীব সমূহ জৈব ক্ষয়সাধন, পচন ও রাসায়নিক পরিবর্তনের প্রধান মাধ্যম
হিসাবে কাজ করে। অনুজীব ব্যতীত জৈব-ভ‚রাসায়নিক চক্র (ইরড়মবড়পযবসরপধষ ঈুপষব) কার্যকর
হবে না; মৃত জৈব পদার্থকে পুনরায় রাসায়নিক ভাবে অজৈব যৌগে পরিবর্তন করে মাটিতে মিশিয়ে
দেয় এবং অনুজীব এই কাজে প্রয়োজনীয় মৌল সরবরাহ করে থাকে।
জীবজগতের গঠন উপাদান কি কি?
উদ্ভিদ ও প্রাণীর পার্থক্য
পুষ্টিগত দিক থেকে উদ্ভিদ ও প্রাণীর পার্থক্যে তাদের স্বস্ব কাঠামো পরিলক্ষিত হয়। উদ্ভিদের
অন্যতম প্রয়োজনগুলো হলো, সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার জন্য সূর্যালোক, কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও
পানি; শ্বাসের জন্য অক্সিজেন এবং প্রোটোপ্লাজম গঠনকারী প্রধান সরল রাসায়নিক যৌগ। উদ্ভিদের
এ প্রধান চাহিদাসমূহ বায়ু, পানি ও মৃত্তিকা মিটিয়ে থাকে; ফলে উদ্ভিদ জীবনের শুরু থেকে থেকে
শেষ পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে স্থায়ীভাবে বাস করে।
উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়
অনুজীবের উপর।
সালোক সংশ্লেষণ কি উপকার
করে।
নি¤œবর্গের উদ্ভিদ ছাড়া মাটি ভিত্তিক সব উদ্ভিদের শিকড় আছে। এই শিকড় গাছকে মাটিতে
দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ করে রাখে এবং মৃত্তিকা থেকে পুষ্টিরস গাছের কান্ড ও শাখা প্রশাখায় যোগান দেয়।
উদ্ভিদের একটি অবস্থান থাকায় এর প্রজনন ব্যবস্থাও এমনভাবে গড়ে উঠেছে যে যার মাধ্যমে
সহজেই অন্যত্র এর বিস্তরণ ঘটতে পারে। ভ‚মি ভিত্তিক প্রায় সব উদ্ভিদেরই বীজ ও স্পোর থাকে
যার মাধ্যমে এর বংশধারা অন্যত্র বিস্তার লাভ করে। নি¤œ বর্গের বা আদিম উদ্ভিদের কিছুকিছু
অবশ্য বংশ বিস্তারে এ ধরনের কোন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি।
প্রাণীর ক্ষেত্রে বিশেষ করে উন্নত বর্গের ক্ষেত্রে পুষ্টি বিষয়ে সুস্পষ্ট পার্থক্য আছে। প্রাণী খাদ্যের
জন্য হয় উদ্ভিদের উপর নতুবা অন্য জীবের উপর নির্ভরশীল। ফলে, তাদের সর্বদা খাদ্য
সন্ধান/যোগাড় করতে হয়। আবার কিছুপ্রাণী বেশি নড়াচড়া না করে স্থানীয় ভাবে খাদ্য যোগাড়
করে থাকে। ফলে তাদের দেহে এমন ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে যার মাধ্যমে স্থান পরিবর্তন না করে,
আহার জুটানো যায়। প্রাণীর খাদ্য সন্ধানের প্রয়োজনে তার দেহে প্রয়োজনীয় চলাচল উপযোগী
দৈহিক শক্ত কাঠামো গড়ে উঠেছে।
তাছাড়া, খাবার খাওয়া, হজম ও পুষ্টি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কাজের সমন¦য় সাধন, বংশ বৃদ্ধির
জন্য প্রয়োজনীয় অঙ্গ এবং আরো অনেক দরকারী অঙ্গ দৈহিক পদ্ধতিকে সহায়তা দিয়ে থাকে।
উদ্ভিদ ও প্রাণীর এই বৈচিত্র্যময় দৈহিক কাঠামোগত তারতম্য থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট তাহলো জৈব
জীবনের চাহিদা (পুষ্টি, শ্বাস-প্রশ্বাস ও প্রজনন) পূরণে উভয় ক্ষেত্রে ব্যাপক পদ্ধতিগত পার্থক্য
আছে।
উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রধান পার্থক্য সমূহ কি কি?
বিবর্তন মতবাদ (ঞযব ঃযবড়ৎু ড়ভ বাড়ষঁঃরড়হ)
প্রাচীনকাল থেকেই উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৈচিত্র্যের কথা জানা গেছে। মানুষ প্রাণীর উৎপত্তি নিয়ে বহু
আগে থেকেই জানতে আগ্রহী। এ বিষয়ে বিভিন্ন মতবাদ ব্যক্ত হয়েছে। কেউ দাবী করেছে প্রাণের
উৎপত্তি একটি মহাজাগতিক সৃষ্টি, আবার কারো কারো মতে জৈব প্রাণ স্বত:ষ্ফুর্ত ভাবেই মৃত বা
অজৈব পদার্থ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। এইসব মতবাদ অবশ্য বর্তমানে আর গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রাণের উদ্ভব কিভাবে হয়েছে, এ নিয়ে প্রথম সুস্পষ্ট মতবাদ দেন ল্যামকি (১৭৪৪-১৮২৯)। তিনিই
প্রথম প্রজাতির আবদ্ধতা সম্পর্কিত মতবাদ সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেন এবং প্রাণীকে একটি নির্দিষ্ট অঙ্গ
আছে কি নাই, এ ভিত্তিতে শ্রেণী বিভাগ করেন। পরবর্তীতে, উনিশ শতকের শেষার্ধে চার্লস ডারউন
(১৮০৯-৮২) এবং আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস (১৯২৩-১৯১৩) জীবনের বিবর্তন বিষয়ক মতবাদ
দেন। এ বিষয়ে ডারউইনের বিখ্যাত বই ঙৎরমরহ ড়ভ ঝঢ়বপরবং (১৮৫৯) বিবর্তনের বিভিন্ন পর্যায়
সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। ওয়ালেস এর মত ডারউন ও মনে করেন ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন'
প্রক্রিয়ায় অথবা যোগ্যতর প্রাণী শুধুটিকে থাকবে এ নীতিতে প্রজাতি সমূহের উদ্ভব হয়েছে।
ডারউইন এ মতের স্বপক্ষে বলেন, একই প্রজাতির মধ্যে পার্থক্য থাকে এবং সে পার্থক্য যত ক্ষুদ্রই
হোক তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; কারণ কিছুপার্থক্যময় বৈশিষ্ট্যই তাকে অন্যদের থেকে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এবং
যোগ্যতর করে তোলে। ফলে, অন্যদের তুলনায় সে সহজেই প্রয়োজনীয় মুহুর্তে টিকে থাকার
সংগ্রামে জয়ী হয়। কোন প্রাণীর কিছুবাড়তি সুবিধাজনক বৈশিষ্ট্য সে প্রাণীকে সংগ্রামে টিকে থাকা
ও প্রজনন ধারা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করে। এ সুবিধাজনক বৈশিষ্ট্য তার সন্তান সন্ততির
মাধ্যমে যদি হস্তান্তর করা যায় তাহলে পরবর্তী প্রজ¤œ ও দক্ষতার সাথে বেঁচে থাকার সংগ্রামে
সফলতা লাভ করবে। অন্যদিকে, কোন ত্রট্টটিপূর্ণ প্রাণী এ সংগ্রামে হেরে যাবে। ডারউইনের মূল
উদ্ভিদ ও প্রাণীর পারস্পরিক
নির্ভরশীলতা।
ডারউইনবাদের স্বপক্ষে যুক্তি।
বক্তব্য হলো, সব জীবিত প্রাণী নিয়ত পরিবর্তন ধারা মেনে চলে বা পরিবর্তন ধারার মাধ্যমে অগ্রসর
হয়। এছাড়া, বিবর্তনের এইস্বত:সিদ্ধতায় বহু প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী স্বল্প সংখ্যক প্রজাতি থেকে
সৃষ্টি হয়েছে, যেগুলি একই নিয়মে আরও স্বল্প সংখ্যক প্রজাতির ফসল।
ডারউইনের মতবাদ অনুসারে প্রাকৃতিক নির্বাচন ও প্রকৃতির সাথে খাপ খাওয়ানো এ দুই প্রক্রিয়াই
জীবের ক্রম রূপান্তর ও বৈচিত্র্যতা ঘটেছে। এ ধীর প্রক্রিয়া দীর্ঘ ভ‚তাত্তি¡ক সময়কাল থেকেই ঘটে
আসছে। ডারউইন অবশ্য এ উত্তরাধিকার সূত্রের (ওহযবৎরঃধহপব) বংশগতি ও এর পরিবর্তন ধারা
কিভাবে কার্যকর হয় তার কোন ব্যাখ্যা দেননি। স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য তারতম্য থেকেই
পার্থক্যের সূচনা হয় - যা পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে আরো সুস্পষ্ট পার্থক্যে রূপ নেয়, ডারউইনের
এ ধারণা ডাচ উদ্ভিদবিদ ডিভ্রাইজ ও সমর্থন করেন। ডিভ্রাইজ এই ধরনের স্বত: পরিবর্তনকে
মিউটেশন নাম দেন এবং দাবি করেন এ রকম পরিবর্তন একক পুরুষেই ঘটতে পারে। এ
মিউটেশনের কারণে বংশানুক্রমিক তারতম্য সমূহ বেড়ে যায় যা দুই আন্ত:প্রজননের
(ওহঃবৎনৎববফরহম) মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
বিবর্তনের মতবাদ মেনে নেওয়ার অর্থ হল কোন জীব আর স্থায়ী এবং পরিবর্তনাতীত
(ওসসঁঃধনষব) নয় বরং স্বত:পরিবর্তনযোগ্য। মূল গোত্র থেকে পরিবর্তিত ও ভিন্ন রূপে কোন বর্গে
নতুন এক প্রজাতির আবির্ভাব হতে পারে। এ ক্ষেত্রে মূল গোত্র ও তার স্বগোত্রীয়দের উৎস মূল
সহজেই বের করা যায়। এভাবে, একটি প্রজাতির মূল বর্গ, তার পরিবার ও পরিবারের উৎস খুঁজে
পাওয়া সম্ভব।
বিবর্তন মতবাদ কি?
প্রাণের বিবর্তন
প্রাণের শুরু সমুদ্রে এ ধারণা স্বীকৃত, তবে কখন শুরু হয়েছে তা অজানা রয়ে গেছে। প্রায় ৬০
কোটি বৎসর পূর্বে কোন প্রাণের অস্তিত্ত¡ ছিল কিনা তার প্রমাণ পাওয়া যায় নাই। কেউ কেউ অবশ্য
দাবি করেন ২০০ কোটি বৎসর আগে ও প্রাণের অস্তিত্ত¡ ছিল, এর স্বপক্ষে উদাহরণ দেওয়া হয়
কানাডার ও নারিও শিলায় পাওয়া বহুকোষী শৈবাল ও চুনাজাতীয় ফ্লাজেলেট এর। এগুলোর বয়স
প্রায় ১৯০ কোটি বৎসর। ধারণা করা হয়, ক্যাম্ব্রিয়ান যুগের পূর্বে সম্ভবত সাধারণ উদ্ভিদের আকারে
কিছুশৈবাল, ফাঞ্জি এবং এককোষী জৈব পদার্থের অস্তিত্ত¡ ছিল। একটি সারণির সাহায্যে ভ‚তাত্তি¡ক
সময়ব্যাপী পৃথিবীতে যে সমস্ত উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবির্ভাবের প্রমাণ পাওয়া গেছে তা দেওয়া হলো
(সারণি ৩.৩১.১)।
ক্যামব্রিয়ান যুগ থেকে উদ্ভিদ ও প্রাণীর সুস্পষ্ট অস্তিত্ত¡ প্রমাণিত। তবে ওরডোভিসিয়ান থেকে
সিলুরিয়ান যুগে ভ‚মি ভিত্তিক উদ্ভিদ এবং চোয়াল বিহীন মাছের আবির্ভাব হয়েছে। ডেভোনিয়ান যুগ
ও কার্বনিফেরাস যুগের মধ্যে জীব ভিত্তিক উদ্ভিদও হাড়যুক্ত প্রাণীর উদ্ভব হয়েছে। এই সময়ে বিপুল
বৃক্ষরাজির সৃষ্টি হয় যা পরে ভ‚-তাত্তি¡ক বিপর্যয়ের কারণে মাটির নিচে চাপা পড়ে কয়লায় পরিণত
হয়। পারমিয়ান (৫ কোটি ৫০ লক্ষ বৎসর পূর্বে) থেকে জুরাসিক (৫ কোটি ৭০ লক্ষ বৎসর পূর্বে)
যুগে কোনিফেরাস, হর্সটেইলস, ফার্ণ এবং সম্ভবত প্রথম খোলসযুক্ত বীজের গাছের আবির্ভাব হয়।
এই সময় সরীসৃপ, ডাইনোসর এবং আদিম স্তন্যপায়ী প্রাণীর উদ্ভব হয়।
ক্রিটাসিয়াস (৭ কোটি বৎসর পূর্বে) থেকে মাইয়োসিন যুগে (১ কোটি ৯০ লক্ষ বৎসর পূর্বে)
সপুস্পক উদ্ভিদ, গুল্ম ও ঘাসের আবির্ভাব হয় (চিত্র ৩.৩১.১)। প্রাণীকুলে এ সময় যেমন বেশ কিছু
নতুনের আবির্ভাব হয় তেমন কিছুপ্রজাতির বিলুপ্তিও ঘটে। যেমন, এ সময় পাখি, সাপ ও ছোট
প্রাকৃতিক নির্বাচন ও প্রকৃতির
সাথে খাপ খাওয়ানো।
স্তন্যপায়ী প্রাণীর উদ্ভব।
আকৃতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর আবির্ভাব হয়। তাছাড়া, আধুনিক স্তন্যপায়ী প্রাণীর ব্যাপক বিকাশ ঘটে।
আবার, বৃহৎ বহু ধরনের সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী ধ্বংস হয়ে যায়। যেমন, ডাইনোসর উল্লেখযোগ্য।
প্লাইয়োসিন (৫০ লক্ষ বৎসর পূর্বে) থেকে প্লাইষ্টোসিন (২০ লক্ষ বৎসর পূর্বে) যুগের উচ্চ অক্ষাংশে
উদ্ভিদের আবির্ভাব হয়। এ সময়ের বরফে বহু প্রজাতির উদ্ভিদ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আফ্রিকায় বন্য-
মানুষের আবির্ভাব হয় এবং শেষাবধি আধুনিক মানুষের যাত্রা শুরু হয়। বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণী লোপ
পায়।
সময়ের সাথে প্রাণের বিবর্তন কিভাবে হয়েছে?
চিত্র ৩.৩১.১ : বিভিন্ন ভ‚-তাত্তি¡ক সময়ে প্রাণের বিবর্তন। আদিযুগে সরল ও অনুন্নত জীবের আবির্ভাব হয়। সময়ের
সাথে বিবর্তনের মাধ্যমে জটিল গঠনকাঠামো সম্বলিত উন্নত জীবের আবির্ভাব ঘটে।
ভ‚-তাত্তি¡ক সময়ব্যাপী জীবের বিবর্তন ধারা কেমন ছিল?
সরিসৃপ জাতীয় প্রাণী ধ্বংস
হয়ে যায়।
সারণি ৩.৩১.১ : ভ‚-তাত্তি¡ক সময়ব্যাপী উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিবর্তন ধারা
ভ‚-তাত্তি¡ক যুগ স্থায়িত্বকাল
(মিলিয়ন বর্ষে)
উদ্ভিদের বিবর্তন প্রাণীর বিবর্তন
প্লাইষ্টোসিন ২ সম্ভবত বহু উদ্ভিদ বরফে নিশ্চিত হয়ে গেছে। আধুনিক মানুষের আবির্ভাব।
প্লিয়োসিন ৫ আধুনিক উচ্চ-অক্ষাংশিয় উদ্ভিদের বিকাশ লাভ
করে।
আফ্রিকার মনুষ্য বানরের আগমন ঘটে। বৃহৎ
স্তন্যপায়ী প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটে।
মাইয়োসিন ১৯ বনভ‚মি ঘাসাচ্ছাদিত হতে শুরু করে। উন্নত প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী বিকাশ লাভ করে
ক্রান্তীয় অঞ্চলে বানরের প্রাচুর্যতা দেখা দেয়।
অলিগোসিন ১২ গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। আধুনিক স্তন্যপায়ী প্রাণীর বিকাশ হয়।
ইয়োসিন ২৭ গুল্মজাতীয় উদ্ভিদের চেয়ে বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদের
প্রধান্য দেখা দেয়।
আদিম স্তন্যপায়ী প্রাণীর উদ্ভব ঘটে। সাপের
আবির্ভাব হয়।
ক্রিটাসিয়াস ৭০ সম্পুস্পক উদ্ভিদের উন্নয়ন ও বিকাশ লাভ করে। সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীর বিশেষায়ন ঘটে এবং এসব
লাভ করে। বৃহৎ প্রাণী এ যুগের শেষের দিকে
বেশির ভাগই বিলুপ্ত হয়। প্রথম পাখি দেখা যায়।
ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী বিকাশ লাভ করে।
জুরাসিক ৫৭ সাইকাডস, ফার্ণস ও কোণিফার (পর্নমোচী)
উদ্ভিদের বিকাশ ঘটে। সম্পুস্পক উদ্ভিদের সম্ভবত
আগমন হয়।
বহু প্রজাতির সরীসৃপের আগমণ ঘটে এবং বেশ
কিছু সমুদ্র থেকে ভ‚মি ও আকাশে উঠে আসে।
ছোট ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীর আবির্ভাব ঘটে।
ট্রাইয়োসিক ৩২ হর্সটেইলস, ফার্ণ, সাইকাডস ও কোনিফারের
আবির্ভাব হয়।
বড় আকৃতির সমুদ্রিক সরীসৃপ, যেমনডাইনোসরের আগমণ ঘটে।
পারমিয়ান ৫৫ এ সময়ের প্রথম দিকেই কোণিফার উদ্ভিদের
আবির্ভাব ঘটে। পুরাতন কোনিফারের বিলুপ্তি
নবীনের আগমন ঘটে।
সামুদ্রিক প্রজাতির ধরন ও সংখ্যা উভয়।
উল্লেখযোগ্য হ্রাস পায়, বিশেষ করে অগভীর
পানিতে ও সরীসৃপের বিকাশ ঘটে।
কার্বনিফেরাস ১৩০ ফার্ণ, বৃহৎ 'ক্লাব মস‘ জাতীয় উদ্ভিদের ব্যাপক
প্রসার ঘটে। তাছাড়া, খোসাবিহীন বীজের ও
আদিম উদ্ভিদের সূচনা হয়।
প্রথম উভচর প্রাণীর আবির্ভার ঘটে। এই যুগের
শেষের দিকে সরীসৃপেরও সূচনা হয়। কীট পতঙ্গের
বিবর্তন এবং ব্যাপক বিস্তার ঘটে।
ডেভেনিয়ান ৫০ প্রথম সত্যিকার বীজ বিশিষ্ট উদ্ভিদের আবির্ভাব
হয়। বৃহৎ আকৃতির স্পোর বিশিষ্ট ফার্ণেরও সুচনা
হয়। ভ‚মিতে ফাঁপা নলাকৃতির উদ্ভিদ বিস্তার লাভ
করে।
প্রচুর অস্থি বিশিষ্ট মাছের আবির্ভাব হয়। উভচর
বিশিষ্ট শ্বাস গ্রহণকারী মাছের উদ্ভব ঘটে। প্রথম
কীট পতঙ্গের আবির্ভাব ঘটে।
সিলুরিয়ান ৪০ প্রচুর শৈবালের উদ্ভব হয়। এ যুগের শেষের দিকে
ভ‚মিতে নলাকৃতির উদ্ভিদের আবির্ভাব ঘটতে শুরু
করে।
চোয়ালবিহীন মাছের প্রাচুর্য্যতা ঘটে,
ইউরিপটারিডস। তাদের চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকে এবং
গ্রাফটোলাইটসের বিলুপ্তি ঘটতে থাকে।
অরডোভিসিয়ান ৬৫ উদ্ভিদ বলতে শুধুমাত্র শৈবালই প্রধান ছিল। এ
সময় ভ‚মিতে উদ্ভিদের সূচনা হয়।
চোয়ালবিহীন মাছের আবির্ভাব ঘটে।
গ্রোফটোলাইটস ও ব্রাকিওপড্স ব্যাপকভাবে দেখা
যায়।
ক্যামব্রিয়ান ৭০ শৈবাল ছিল, ভ‚মিতে উদ্ভিদ ছিল বলে ধারণা করা
হয়।
অমেরুদন্ডী গোত্রভ‚ক্ত প্রাণীর প্রায় সব ধরনের
প্রজাতির আবির্ভাব হয়। ট্রাইলোবাইটস প্রধান্য
পায়। প্রথম কোরাল এবং গ্রাফটোলাইটসের সূচনা
হয়।
প্রিক্যামব্রিয়ান --- বিশেষ কিছু জানা যায়নি তবে ধারণা করা হয় এ
সময় আদিম শৈবাল, ফানজি ও এককোষী
উদ্ভিদের অস্তিত্ত¡ ছিল।
প্রাণের অস্তিত্ত¡ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে কিন্তু অনুমান
করা হয় নরমদেহের প্রাণী যেমন, এ্যানালিডস,
জেলি-ফিস, অকোষিজীব এবং স্পনজের উপস্থিতি
ছিল।
উদ্ভিদ, প্রাণী ও অনুজীব এই তিন ধরনের প্রাণ নিয়ে জীব জগত গঠিত। উদ্ভিদ ও প্রাণী
উভয়ই অনুজীবের ওপর নির্ভরশীল। অনুজীব ব্যতীত জৈব ভ‚-রাসায়নিক চক্র
(ইরড়মবড়পযবসরপধষ ঈুপষব) কার্যকর হবে না। বিবর্তন মতবাদের মাধ্যমে প্রাণের উদ্ভদের
সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে। এই মতবাদের মূল বক্তব্য হলো জীব স্থায়ী নয়; স্বত:
পরিবর্তনশীল। মূলগোত্র থেকে পরিবর্তিত ও ভিন্ন রূপে কোন বর্গে নতুন এক প্রজাতির
আর্বিভাব হতে পারে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন ৩.৩১
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
১. সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন (সময় ৫ মিনিট) ঃ
১.১ উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়েই বেঁচে থাকা, বেড়ে ওঠা ও প্রজননের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি
পেয়ে থাকেক. খাদ্য হতে খ. শ্বাস প্রক্রিয়ায়
গ. সালোক সংশ্লেষণে ঘ. অলৌকিক ভাবে
১.২ ডারউইনের বিখ্যাত গ্রন্থের নামক. ঞযব ঙৎরমরহ ড়ভ ষরভব খ. ঞযব ঊাড়ষঁঃরড়হ ড়ভ ংঢ়বপরবং
গ. ঞযব ঊাড়ষঁঃরড়হ ড়ভ ষরভব ঘ. ঞযব ঙৎরমরহ ড়ভ ঝঢ়বপরবং
১.৩ ভ‚মিভিত্তিক উদ্ভিদ ও চোয়াল বিহীন মাছের আবির্ভাব যে যুগের মধ্যে হয়েছেক. অরডোভিসিয়ান-সিলুরিয়ান খ. সিলুরিয়ান-ডেভোনিয়ান
গ. ক্যাম্ব্রিয়ান-অরডোভিসিয়ান ঘ. ডেভোনিয়ান-মিসিসিপিয়ান
১.৪ সপুস্পক উদ্ভিদের আবির্ভাব ঘটেক. ৭ কোটি - ১ কোটি ৯০ লক্ষ বছর পূর্বে খ. ১ কোটি - ৯০ লক্ষ বছর পূর্বে
গ. ৭ কোটি - ৭.৫ কোটি বছর পূর্বে ঘ. বিগত দুই হাজার বছরে
১.৫ ডাইনোসরের বিলুপ্তি ঘটেক. ট্রায়াসিক যুগে খ. জুরাসিক যুগে
গ. জুরাসিক যুগে ঘ. ক্রিটাসিয়াস যুগে
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (সময় ২ী৫ = ১০ মিনিট) ঃ
১. জীবজগতের গঠন উপাদান কি কি?
২. উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রধান পার্থক্য সমূহ কি কি?
৩. বিবর্তন মতবাদ কি?
৪. সময়ের সাথে প্রাণের বিবর্তন কিভাবে হয়েছে?
৫. ভ‚-তাত্তি¡ক সময়ব্যাপী জীবের বিবর্তন ধারা কেমন ছিল?
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১. উদ্ভিদজগত ও প্রাণীজগত বলতে কি বুঝায়? এদের পার্থক্য কি?
২. বিবর্তন মতবাদ কি? বিবর্তন মতবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করুন।
৩. প্রাণের বিবর্তন ধারা আলোচনা করুন।
৪. বিভিন্ন ভ‚-তাত্তি¡ক সময়ব্যাপী উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিবর্তন ধারা লিপিবদ্ধ করুন।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ