নগ্নীভবন অর্থ কি?
নগ্নীভবন কি কি প্রক্রিয়ায় কাজ করে।
টেলাস স্ক্রী বলতে কি বোঝায়?
এক্সফলিয়েশন কাকে বলে?


বিচ‚র্ণীভবন
বিচ‚র্ণীভবন, নগ্নীভবনের তিনটি প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রথম প্রক্রিয়া। তাই বিচূর্ণীভবন সম্পর্কে
আলোচনার পূর্বে নগ্নীভবন সম্পর্কে আলোচনা করা প্রয়োজন। নগ্নীভবন অর্থ উন্মুক্ত করা।
ভ‚-অভ্যন্তরস্থ শক্তি ভ‚ত্বকে বিভিন্ন ধরনের ভ‚মিরূপ গড়ে তোলে। অপরদিকে নগ্নীভবন এ সমস্ত
ভ‚মিরূপকে ক্ষয় করে সমুদ্র সমতলেই নিয়ে আসার কাজে লিপ্ত থাকে এবং ভ‚-ত্বকের ক্ষয়
সাধনের মাধ্যমে ভ‚মির উচ্চতা কমায়। তাই, সাধারণভাবে বলা যায়, যে প্রক্রিয়ায় ভ‚-পৃষ্ঠের
শিলা চ‚র্ণ-বিচ‚র্ণ হয় এবং ক্ষয়প্রাপ্ত শিলা অন্যত্র অপসারিত হয় তাই নগ্নীভবন।
(১) নগ্নীভবন, (২) ক্ষয়ীভবন ও
(৩) অপসারণ (৪) ক্ষয়সাধন
নগ্নীভবনের যে চারটি প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে তন্মধ্যে বিচ‚র্ণীভবন শিলার ক্ষয়সাধন
প্রক্রিয়ার তিনটি প্রথম পর্যায় হিসেবে কাজ করে।
পাঠ-৫.২
বিচুর্ণভবন,
নগ্নীভবনের একটি
অংশ। নগ্নীভবন
চার ধরনের
প্রক্রিয়ায় কাজ
করে। যথাক) বিচুর্ণীভবন,
খ) স্তুপ অপসারণ,
গ) ক্ষয়সাধন এবং
ঘ) পরবহণ
চিত্র : ৫.২.১ : গগ্নীভবন প্রক্রিয়া
বিচ‚র্ণীভবন (ডবধঃযবৎরহম) :
বিচ‚র্ণীভবন কথার অর্থ শিলা চ‚র্ণ-বিচ‚র্ণ হওয়া। বিচ‚র্ণীভবন ভ‚-পৃষ্ঠের নগ্নীভবন প্রক্রিয়ার একটি
গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যে প্রক্রিয়ায় ভ‚-পৃষ্ঠের শিলা প্রাকৃতিকভাবে ছোট ছোট খন্ডে ভাগ হয় অথবা
চ‚র্ণ-বিচ‚র্ণ হয় অথবা রাসায়নিকভাবে দ্রবীভ‚ত হয় তাকে বিচূর্ণীভবন বলে। বিচ‚র্ণীভবনকে
আবহিক বিকার বলা হয় কারণ আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান বিশেষ করে উত্তাপ, আর্দ্রতা,
সূর্যালোক, বৃষ্টিপাত প্রভৃতির তারতম্য ভ‚-পৃষ্ঠের শিলাসমূহকে চ‚র্ণ-বিচ‚র্ণ করে। সুতরাং
আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান দ্বারা যান্ত্রিক উপায়ে শিলাস্তর ফেটে (গবপযধহরপধষ ঋৎধপঃঁৎরহম)
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিলাখন্ডে পরিনত হয়ে অথবা রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় শিলাস্তর বিয়োজিত হয়ে
(ঈযবসরপধষ উবপড়সঢ়ড়ংরঃরড়হ) মূল শিলার উপরই যদি থেকে যায়, তখন তাকে বিচ‚র্ণীভবন
(ডবধঃযবৎরহম) বলা হয়। এই সকল শিলা খন্ডের অপসারণকে ক্ষয়ীভবন (ঊৎড়ংরড়হ) বলে।
সুতরাং বিচ‚র্ণীভবন ও ক্ষয়ীভবনের মধ্যে পার্থক্য হল এই যে, ক্ষয়ীভবন শিথিল শিলাখন্ডসমূহ
দূর দেশে অপসারিত (ঞৎধহংঢ়ড়ৎঃবফ) হয়। কিন্তু বিচ‚র্ণীভবনে মাধ্যকর্ষণ শক্তির দ্বারা শিলাখন্ড
সামান্য স্থানচ্যুত হয়। কিন্তু শিলাখন্ডের অপসারণ হয় না। নগ্নীভবন প্রক্রিয়ায় বিচুর্ণীভবনের
অবস্থান নিচে দেখানো হলো :
ছক ৫.২.১ থেকে লক্ষ্য করুন, বিচ‚র্ণীভবন প্রক্রিয়া তিন ভাবে সম্পন্ন হয়ে থাকে। যথা-যান্ত্রিক
বা প্রাকৃতিক, রাসায়নিক ও জৈবিক। বিচূর্ণীভবনের এ প্রক্রিয়া যে ভাবেই সম্পন্ন হোক না কেন
নিম্নোক্ত চারটি কাজ এর দ্বারা সম্পাদন হয়ে থাকে :
ক) শিলা/মাটির ক্ষয়সাধনে কাজ করে;
খ) ভ‚মির উচ্চতা কমাতে নিয়ামক হিসেবে কাজ করে;
গ) ভ‚মিরূপের পরিবর্তনে সরাসরি অংশগ্রহণ করে; এবং
ঘ) রেগোলিথ ও মাটি গঠনে সক্রিয় ভ‚মিকা রাখে।
বিচ‚র্ণীভবনের শ্রেণীবিভাগ :
১। যান্ত্রিক বা প্রাকৃতিক বিচ‚র্ণীভবন (গবপযধহরপধষ ড়ৎ চযুংরপধষ ডবধঃযবৎরহম) যেখানে ভ‚-
পৃষ্ঠের শিলাসমূহ উত্তাপের তারতম্যে, তৃষার কার্য এবং আংশিকভাবে গাছপালা ও
জীবজন্তুর ক্রিয়াকলাপে ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে যায়।
২। রাসায়নিক বিচ‚র্ণীভবন (ঈযবসরপধষ ডবধঃযবৎরহম) : যেখানে বায়ুমন্ডলে অবস্থিত পানি,
অক্সিজেন, কার্বন-ডাই অক্সাইড এবং জৈব পদার্থ ও এগুলোর অবশিষ্ঠাংশের দ্বারা শিলার
খনিজ দ্রব্যসমূহ বিয়োজিত ও দ্রবীভ‚ত হয়ে আলগা হয়ে পড়ে।
৩। জৈবিক বিচ‚র্ণীভবন (ইরড়ষড়মরপধষ ডবধঃযবৎরহম) : জীবজন্তু ও বিভিন্ন জৈব পর্যায়ের দ্বারা
সংঘটিত বিচ‚র্ণীভবনকে অনেক সময় জৈবিক বিচ‚র্ণীভবন নামে অভিহিত করা হয়।
জৈবিক বিচ‚র্ণীভবন যান্ত্রিক এবং রাসায়নিক উভয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই কাজ করে থাকে।
বিচ‚র্ণীভবনকে প্রধানত দুটো ভাগে ভাগ করা হলেও একটিকে অপরটি থেকে সম্পূর্ণরূপে
পৃথক করা একেবারেই অসম্ভব। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে সামান্যতম জলীয়বাষ্পের অবস্থান,
রাসায়নিক বিচ‚র্ণীভবনকে পৃথিবীর সর্বত্র কাজ করতে সাহায্য করে থাকে। তবে সুবিধার
জন্য আমরা যান্ত্রিক এবং রাসায়নিক বিচ‚র্ণীভবনকে পৃথিবীর সর্বত্র কাজ করতে সাহায্য
করে থাকে। তবে সুবিধার জন্য আমরা যান্ত্রিক এবং রাসায়নিক বিচ‚র্ণীভবনের বিভিন্ন
বিষয় সম্বন্ধে পৃথক ভাবে আলোচনা করেছি। তবে একথা মনে রাখতে হবে যে, এ দুই
প্রকার বিচ‚র্ণীভবন একত্রেই কাজ করে থাকে।
বিচুর্ণীভবন কথার
অর্থ শিলা চুর্ণ-বিচুর্ণ
হওয়া।
বিচুর্ণীভবন পক্রিয়া
তিন ভাবে সম্পন্ন
হয়ে থাকে। যথাপ্রাকৃতিক,
রাসায়নিক ও
জৈনিক। চারটি
কাজ করে থাকে।
যেমন (১) শিলার
ক্ষয়সাধন (২)
ভূমির উচ্চতা হ্রাস
(৩) ভূমিরূপের
পরিবর্তন ও (৪)
রেগোলিথ ও মাটি
গঠনে ভূমিকা।
ভূপেষ্ঠের কঠিন
শিলা আবরণ যে
প্রাকৃতিক প্রকিয়ায়
ভেঙ্গে ছোট ছোট
খন্ডে বিভক্ত হয়
তাই প্রাকৃতিক বা
যান্ত্রিক বিচূর্ণীভবন
যান্ত্রিক বা প্রাকৃতিক বিচ‚র্ণীভবন (গবপযধহরপধষ ড়ৎ চযুংরপধষ ডবধঃযবৎরহম) :
যান্ত্রিক বিচ‚র্ণীভবন উত্তাপের দ্রæত পরিবর্তনে এবং কেলাসন প্রক্রিয়ার (ঈৎুংঃধষষরংধঃরড়হ) দ্বারা
ঘটে থাকে। মরু অঞ্চলে মেঘ মুক্ত থাকার দরুন দিবা ভাগ খুবই উত্তপ্ত এবং রাত্রি ঐ একই
কারণে খুব শীতল হয়ে থাকে। ফলে মরু অঞ্চলে উত্তাপের দ্রæত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
আবার উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে অথবা উচ্চ অক্ষাংশে অধিক শৈত্যের জন্য পানি কেলাসিত হয়ে
বরফে পরিণত হয়। সুতরাং মরু অঞ্চল এবং উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল ও উচ্চ অক্ষাংশে যান্ত্রিক
বিচ‚র্ণীভবনের ক্রিয়া অধিক লক্ষ্য করা যায়।
ভ‚-পৃষ্ঠের কঠিন শিলা আবরণ যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় ভেঙ্গে ছোট ছোট খন্ডে বিভক্ত হয় তাই
প্রাকৃতিক বিচ‚র্ণীভবন বলে। শিলাখন্ডের আয়তন বড় পাথর থেকে পলিকণা পর্যন্ত বিভিন্ন রকম
হতে পারে।
১। তাপমাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমে :
সূর্যতাপের প্রভাবে ভ‚-পৃষ্ঠের শিলারাশি খন্ডবিখন্ড হয়ে যান্ত্রিক বিচ‚র্ণীভবনে সহায়তা করে
থাকে। মরুভ‚মি এলাকায় দিনের প্রচন্ড সূর্যতাপে শিলার খনিজসমূহ আয়তনে বাড়ে,
ঠান্ডায় তা সঙ্কুচিত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে খনিজসমূহ শিলা থেকে বিচ্ছিন্ন
হয়ে যায়। শিলা স্তুরের উপরেই স্বাভাবিকভাবে সূর্যরশ্মি পতিত হয় তখন শিলা উত্তপ্ত
হয়ে পার্শ্ব বা নিচের দিকে প্রসারিত হতে না পেরে উপরের দিকে প্রসারিত হয়। এর ফলে
শিলার উপরের স্তর নিচের শীতল স্তর থেকে পৃথক হয়ে স্তরে স্তরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এটা অনেকটা পেঁয়াজের খোসার ন্যায় খুলে যায়। শিলার এরূপ বিচ্ছিন্ন হওয়ার
প্রক্রিয়াকে শিলার স্তর মোচন (ঊীভড়ষরধঃরড়হ) বলা হয়। এভাবে শিলার উপরের অংশ
আলগা হয়ে খন্ড-বিখন্ড হতে থাকে এবং কালক্রমে গোলাকার রূপ ধারণ করে। এ
জাতীয় বিচ‚র্ণীভবনকে গোলাকৃতি বিচ‚র্ণীভবনও (ঝঢ়যবৎড়রফধষ ডবধঃযবৎরহম) বলা হয়।
এভাবে সৃষ্ট গোলাকার শিলাখন্ডকে অবশিষ্ট শিলা (জবংরফঁধষ ইড়ঁষফবৎ) বলে। এটি
গ্রানাইট শিলায় অধিক দৃষ্ট হয়।
যেহেতু শিলাসমূহ বিভিন্ন খনিজের সমম্বয়ে গঠিত, সেহেতু শিলায় অবস্থিত বিভিন্ন খনিজ
বিভিন্ন ভাবে প্রসারিত ও সংকুচিত হয়। এর ফলে শিলায় বিভিন্ন টান (ঝঃৎধরহ) সৃষ্টি হয়ে
শিলা হঠাৎ ফেটে যায়। মরু-অঞ্চলে সূর্যাস্তের কিছু পরে অনেক সময় এরূপ শিলা ফেটে
যাওয়ার শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। এভাবে শিলা বিভিন্ন খনিজের মধ্যস্থিত সংযোগ সাধক
পদার্থের (ঈবসবহঃরহম গধঃবৎরধষ) মধ্য দিয়ে ফাটল তা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়
বলে একে কণা বিশরণ (এৎধহঁষধৎ উরংরহঃবমৎধঃরড়হ) বলে। সূর্যতাপে শিলার উপরের
স্তর উত্তপ্ত হলে তা আয়তনে বৃদ্ধি পায়। যেহেতু শিলাস্তর তাপের উত্তম পরিবাহী নয় বলে
তার ঠিক নিচের স্তরটি বিশেষ বৃদ্ধি পায় না। এর ফলে শিলাসমূহের উপরের স্তর এবং
তার ঠিক নিচের স্তরের মধ্যে টানের সৃষ্টি হয় বলে শিলাস্তরের মাঝে সমান্তরালে ফাটলের
সৃষ্টি হয়। এর কিছু দিন পরে ঐ ফাটল বরাবর শিলার উপরের স্তরটি মূল শিলা থেকে
বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরূপ অবস্থাকে প্রস্তর চাঁই-এর বিচ্ছিন্নকরণ বা খন্ডীকরণ বা
খন্ডীকরণ (ইষড়পশ উরংরহঃবমৎধঃরড়হ) বলা হয়। পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত অঞ্চলে এ
প্রকার বিচ‚র্ণীভবন দেখা যায়।
২। তুষারের মাধ্যমে :
অধিকাংশ শিলায় ফাটল ও জোড়ন (ঈৎধপশং ধহফ ঔড়রহঃং) দেখতে পাওয়া যায়। এইসব
ফাটল বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে থাকে। রাত্রিতে পানি শীতল হয়ে বরফে পরিণত হলে
আয়তনে শতকরা ১০ ভাগ বৃদ্ধি পায়। শীতল জলবায়ু অঞ্চলে অথবা উচ্চ অক্ষাংশে বা
উচ্চ পর্বত গাত্রে গ্রীষ্মকালে বরফ গলে অথবা বর্ষাকালে শিলাস্তরের ফাটলের মধ্যে পানি
সঞ্চিত হলে তা পরে অত্যধিক ঠান্ডায় জমে বরফে পরিণত হয়। তার ফলে ফাটলের
মধ্যস্থিত পানি বরফে পরিণত হয়। ফাটলের দুই পার্শ্বের দেয়ালে প্রচন্ড চাপের সৃষ্টি হয়
(প্রতি বর্গ সে.মি. প্রায় ১৪ কিলোগ্রাম)। এই চাপের ফলে ফাটল ক্রমশ : বৃদ্ধি পায় এবং
শিলাস্তর ফেটে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রস্তর খন্ডে পরিণত হয়। এই প্রস্তর খন্ডগুলো পর্বতগাত্র বেয়ে
পর্বতের পাদদেশে এসে জমে। এরূপ কোনো বিশিষ্ট ক্ষুদ্রাকার শিলাখন্ডের দ্বারা আবৃত
অঞ্চলকে ফেলসেনমার বা বøকস্পেড (ঋবষংবহসবৎ বা ইষড়পশংঢ়ধফ) বলে। পর্বত গাত্রে
কোণাকৃতি এরূপ প্রস্তর খন্ড সঞ্চিত হলে তাকে স্ক্রী (ঝপৎববং) বা ট্যালাস (ঞধষষঁং)
বলে। সচ্ছিদ্র (চড়ৎড়ঁং) মৃত্তিকার মধ্যেও পানি বরফে পরিণত হলে মৃত্তিকা ফেটে যায়।
শীত প্রধান দেশে কৃষিক্ষেত্রের বড় বড় মাটির ঢেলা (ঈড়ষফং ড়ভ ঊধৎঃয) তুষারের ক্রিয়ায়
ফেটে যায়। এতে পরবর্তী কৃষিকার্যের সুবিধা হয়।
৩। পানির মাধ্যমে :
পানি তিন প্রক্রিয়ায় বিচ‚র্ণীভবন করে থাকে। যেমন, (ক) বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে পানি বছরের
পর বছর ধরে শিলা খন্ডগুলোকে আঘাত করে দুর্বল করে ফেলে এবং এতে
শিলাখন্ডগুলো ক্রমশ : খন্ড-বিখন্ড হয়ে যায়। (খ) কখনো কখনো পানি নরম পাললিক
শিলা এবং ছিদ্রযুক্ত রূপান্তরিত শিলার মধ্যে প্রবেশ করে এবং শিলাস্তরকে আর্দ্র করে
ফেলে। পরে সূর্যের তাপে ঐ পানি বাষ্পে পরিণত হয় এবং শিলা খন্ডগুলো পুনরায়
শুকিয়ে যায়। শিলাস্তরের অভ্যন্তর ভাগ এরূপে ক্রমাগত আর্দ্র ও শুষ্ক হবার দরুন তা
ভেঙ্গে গিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিলা খন্ডে পরিণত হয় এবং যান্ত্রিক বিচ‚র্ণীভবন ঘটায়। (গ)
আবার শিলাস্তরে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে শিলাস্তরকে আর্দ্র করে। এতে শিলার মধ্যস্থিত
খনিজ দ্রব্যগুলো আয়তনে বৃদ্ধি পেয়ে শিলাস্তরকে ফাটিয়ে দেয়। এভাবেও যান্ত্রিক
বিচ‚র্ণীভবন ঘটে। উপক‚ল অঞ্চলে জোয়ারÑভাটার প্রভাবে এ ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হয়।
৪। চাপ হ্রাসের মাধ্যমে :
ভ‚Ñঅভ্যন্তরে সৃষ্ট আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা ওপরের পাললিক শিলা স্তরের চাপে
সংকুচিত অবস্থায় থাকে। ওপরের শিলাস্তর অপসারিত হলে ভ‚-অভ্যন্তরের শিলার উপর
চাপ হ্রাস পায়। ফলে এ সমস্ত শিলা কিছুটা স¤প্রসারিত হয়। এ অবস্থায় শিলার ওপরের
স্তর নিচের মূল শিলা থেকে ধীরে ধীরে আলাদা হয়ে যায়। গ্রানাইট জাতীয় শিলায় এ
ধরণের বিচুর্ণীভবন দেখা যায়।
৫। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে :
উচ্চ পর্বত গাত্রের খাড়া ঢালে কোনো প্রকান্ড শিলাখন্ড কোনো প্রকারে ভেঙ্গে আলগা হলে
মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে নিচে পড়ে চ‚র্ণ-বিচ‚র্ণ হয়। পতিত শিলার আঘাতে পাদদেশের
শিলাও চ‚র্ণ-বিচূর্ণ হয়। আবার চলার পথে ভ‚-পতিত শিলা অন্যান্য উচ্চ স্থানের
শিলাগুলো সদা চ‚র্ণ-বিচ‚র্ণ হচ্ছে। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এভাবে সর্বদা যান্ত্রিক
বিচ‚র্ণীভবন ঘটাচ্ছে।
৬। লবন কেলাস গঠনের মাধ্যমে :
শিলার ফাটলে বরফ কেলাস গঠনের ন্যায় লবন কেলাস সৃষ্টিও একটি প্রক্রিয়া, যার
মাধ্যমে শুষ্ক এলাকায় ব্যাপক ভাবে শিলা বিচ‚র্ণীভ‚ত হয়। দীর্ঘ শুষ্ক মৌসুমে শিলার ফাটল
বরাবর ভেতরের পানি কৈশিক শক্তির (ঈধঢ়রষষধৎু ঋড়ৎপব) টানে উপরে উঠে আসে। এ
পানির সঙ্গে লবন দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। পানি বাষ্পীভ‚ত হওয়ার পর শিলার ফাটলে
অবশিষ্ট হিসেবে এ লবন থেকে যায়। ধীরে ধীরে এ লবনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে
শিলার বর্হিভাগ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানাকৃতিতে ভেঙ্গে যায়। আমাদের দেশে ইটের দালানে এ
ধরনের প্রক্রিয়া দেখা যায়, যা সাধারণভাবে ‘লোনাধরা’ নামে পরিচিত।
বৃষ্টিপাত দ্বারা সৃষ্ট বিচ‚র্ণীভুত পদার্থগুলো অপসারিত হলে তা বিচ‚র্ণীভবনের পর্যায় পড়ে
না। তবে এটি তুষারের কার্যে সহায়তা করে থাকে। এছাড়া বায়ু, নদী, হিমবাহ, সমুদ্রের
তরঙ্গ প্রভৃতির শিলা অপসারণ হয় বলে এদের কার্যও বিচ‚র্ণীভবনের পর্যায়ে পড়ে না।
পাঠসংক্ষেপ :
বিচ‚র্ণীভবন, নগ্নীভবনের একটি অংশ। নগ্নীভবন অর্থ উন্মুক্ত করা। ভ‚-অভ্যন্তরস্থ শক্তি
ভ‚ত্বকে বিভিন্ন ধরনের ভ‚মিরূপ গড়ে তোলে। নগ্নীভবন ভ‚-ত্বকের ক্ষয় সাধনের মাধ্যমে
ভ‚মির উচ্চতা কমায়। নগ্নীভবন চার ধরনের প্রক্রিয়ায় কাজ করে। যেমন, (১)
বিচ‚র্ণীভবন, (২) স্তুপ অপসারণ, (৩) ক্ষয়সাধন ও (৪) পরিবহন। এই চারটির মধ্যে
বিচ‚র্ণীভবন শিলার ক্ষয়সাধনে না হওয়া। বিচ‚র্ণীভবন প্রক্রিয়া তিন ভাবে সম্পন্ন হয়ে
থাকে। যেমন- (১) প্রাকৃতিক বা যান্ত্রিক, (২) রাসায়নিক ও (৩) জৈবিক প্রক্রিয়ায়।
বিচ‚র্ণীভবন চারটি কাজ সম্পাদন করে থাকে। যথা-(ক) শিলার ক্ষয়সাধন, (খ) ভ‚মির
উচ্চতা হ্রাস, (গ) ভ‚মিরূপের পরিবর্তনও (ঘ) রেগোলিথ ও মাটি গঠনের ভ‚মিকা।
ভ‚-পৃষ্ঠের কঠিন শিলাবরণ যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় ভেঙ্গে ছোট ছোট খন্ডে বিভক্ত হয়
তাকে প্রাকৃতিক বা যান্ত্রিক বিচ‚র্ণীভবন বলে। শিলার যান্ত্রিক বিচ‚র্ণীভবনে তাপমাত্রা,
তুষার, পানি, চাপের হ্রাস, মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ও লবন কেলাস গঠনের মাধ্যমে হয়ে থাকে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন : ৫.২
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন :
১। শূণ্যস্থান রূরন করুন:
১.১. বিচ‚র্ণীভবন ..................একটি অংশ।
১.২. নগ্নীভবন ভ‚-ত্বকের ক্ষয় সাধনের মাধ্যমে ভ‚মির উচ্চতা ........... করে।
১.৩. নগ্নীভবন ............... ধরনের প্রক্রিয়ায় কাজ করে।
১.৪. বিচ‚র্ণীভ‚ত শিলাখন্ডের .......... কে ক্ষয়ীভবন বলে।
১.৬. যান্ত্রিক বিচ‚র্ণীভবন প্রক্রিয়া .................. ভাবে সম্পন্ন হয়ে থাকে।
১.৭. রাসায়নিক বিচ‚র্ণীভবন প্রক্রিয়া ................... কাজ সম্পাদন করে থাকে।
১.৮. মরু অঞ্চল, উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল ও উচ্চ অক্ষাংশে .......... বিচ‚র্ণীভবনের ক্রিয়া অধিক
লক্ষ্য করা যায়।
১.৯. শিলা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় ভেঙ্গে ছোট ছোট খন্ডে বিভক্ত হওয়াকে ...... বিচ‚র্ণীভবন
বলে।
১.১০........... এলাকায় দিন ও রাত্রির তাপমাত্রার পার্থক্য সর্বাধিক।
১.১১.শিলা বিভিন্ন .......... সমম্বয়ে গঠিত।
১.১২.বিভিন্ন খনিজ বিভিন্ন ভাবে প্রসারিত ও সংকুচিত হয় বলে শিলায় বিভিন্ন .....সৃষ্টি হয়ে
শিলা হঠাৎ ফেটে যায়।
১.১৩.পানি শীতল হয়ে বরফে পরিণত হলে আয়তনে শতকরা ........ভাগ বৃদ্ধি পায়।
১.১৪.পর্বত গাত্রে শিলাখন্ড ভেঙ্গে ...........শক্তির প্রভাবে নিচে পড়ে চ‚র্ণ-বিচ‚র্ণ হয়।
১.১৫.বৃষ্টিপাতে বিচ‚র্ণীভবন পদার্থ অপসারিত হলে তা ........... পর্যায়ে পড়ে না।
১.১৬.দীর্ঘ শুল্ক মৌসুমে শিলার ফাটল বরাবর ভেতরের পানি ...... শক্তির টানে উপরে উঠে
আসে।
সংক্ষিপ্ত উত্তর দিন :
১. বিচ‚র্ণীভবন বলতে কি বোঝেন?
২. বিচ‚র্ণীভবনকে কেন আব হীবকার বলা হয়?
৩. বিচ‚র্ণীভবন যে চারটি কাজ করে সেগুলো কি কি?
৪. যান্ত্রিক বিচ‚র্ণীভবন, রাসায়নিক বিচ‚র্ণীভবন ও জৈবিক বিচ‚র্ণীভবনের মধ্যে পার্থক্য কি?
৫. ক্ষয়ীভবন ও বিচ‚র্ণীভবনের মধ্যে পার্থক্য কি?
৬. নগ্নীভবন অর্থ কি?
৭. নগ্নীভবন কি কি প্রক্রিয়ায় কাজ করে।
৮. টেলাস স্ক্রী বলতে কি বোঝায়?
৯. এক্সফলিয়েশন কাকে বলে?
রচনামূলক প্রশ্ন :
১. বিচ‚র্ণীভবন ও নগ্নীভবনের মধ্যে পার্থক্য কি? যান্ত্রিক বিচ‚র্ণীভবন প্রক্রিয়া আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]