ভূমিরূপের ওপর বিচ‚র্ণী ভবন ও স্তুপক্ষয়ের প্রভাব বর্ণনা করুন।


ভ‚মিরূপ ও মৃত্তিকা গঠনে বিচ‚র্ণীভবন ও স্তুপক্ষয়ের প্রভাব
 স্তুপ ক্ষয় কি এবং প্রকারভেদ ও স্তুপ ক্ষয়ের কারণসমূহ ব্যাখ্যা করতে পারবেন; এবং
 ভ‚মিরূপের ওপর স্তুপ ক্ষয়ের প্রভাব জানতে পারবেন।
বিচ‚র্ণীভবন ভ‚মিরূপ গঠনে প্রত্যক্ষভাবে তেমন জড়িত না থাকলেও পরোক্ষভাবে স্তুপ ক্ষয় ও
ক্ষয়কার্যকে ত্বরান্বিত করে। শেষোক্ত প্রক্রিয়াগুলোই ভ‚মিরূপ গঠনে প্রত্যক্ষভাবে ভ‚মিকা গ্রহণ
করে। বিচ‚র্ণীভবনের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা হলো যে এটি ভ‚-পৃষ্ঠে আলগা পদার্থের
সংস্থান করে মৃত্তিকা গঠনে সহায়তা করে। বিচ‚র্ণী আলগা পদার্থই মৃত্তিকা গঠনের প্রথম ধাপ।
ভ‚মিরূপ গঠনে বিচ‚র্ণীভবন সরাসরি দুই ভাবে অংশ গ্রহণ করে। যথা (১) দ্রবণ জনিত পদার্থের
অপসারণ সম্পর্কিত উচ্চতা হ্রাস; ও (২) বৈষম্যমূলক আচরণ করে ক্ষুদ্র ভ‚মিরূপের উৎপত্তি।
প্রকৃতপক্ষে বিচ‚র্ণীভবনের প্রত্যক্ষ ফল স্থল ভ‚মিরূপের ওপর পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপদানের মধ্যেই
সীমাবদ্ধ থাকে।
বৈষম্যমূলক বিচ‚র্ণীভবনে সৃষ্ট গৌণ ভ‚মিরূপ :
১। ভ‚পৃষ্ঠের উচ্চতা হ্রাসকরণ : চুনাপাথর, ডলোমাইট, জিপসাম প্রভৃতি শিলাগঠিত অঞ্চলের
উচ্চতা ক্রমাগত দ্রবণের ফলে হ্রাস পায়।
২। ভ‚মিরূপের সৃষ্টি ও পরিমার্জন : বৈষম্যমূলক বিচ‚র্ণীভবনের ফলে কিছু কিছু গৌণ ভ‚মিরূপ
যেমন শিলা সোপান, মৌচাকের মতো গর্তযুক্ত শিলা পৃষ্ঠ, পাঁজর ইত্যাদি সৃষ্টি হয়।
পাতলা শিলাস্তর দিয়ে গঠিত অঞ্চলে বিভিন্ন স্তরের ওপর বৈষম্যমূলক বিচ‚র্ণীভবনের ফলে
স্তরীয় শিলা পাঁজর (ঝঃৎধঃরভরপধঃরড়হ জরন) সৃষ্টি হয়। অনুরূপ প্রক্রিয়ার ফলে শিলাময়
খাড়াতলে গর্ত, অল্প উদগত শিলা, খাঁজ প্রভৃতি অতি সূ² রূপের সৃষ্টি হয়।
চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে দ্রবণের ফলে সোয়ালো হোল, ডোলিন প্রভৃতি বিভিন্ন আকারের ও
আয়তনের গর্তের সৃষ্টি হয়। গ্রানাইট বা অনুরূপ শিলায়ত এই ধরনের বৃত্তাকার বা উপবৃত্তাকার
গর্ত বিচ‚র্ণীভবনের ফলে সৃষ্টি হয়ে থাকে বলে মনে হয়। দক্ষিণ ক্যারোলিনায় পর্বতের
পাদদেশে প্রধানত সমতল অংশে স্মিত (ঝসরঃয) এই ধরনের গর্ত লক্ষ্য করেন। এলগি ও মস
এরকম গর্ত সৃষ্টিতে প্রধান ভ‚মিকা পালন করে বলে অনুমান করা হয়। কোনো কারণে একটি
স্থান ঈষৎ নিচু হলে ঐ অংশে পানির সংস্থান বেশী থাকে বলে এলগি, মস উদ্ভিদ জন্মে। এই
সমস্ত উদ্ভিদের একটি বৈশিষ্ট্য হলো যে এরা যথেষ্ট পানি ধারণ করতে পারে ও কার্বন-ডাইঅক্সাইড পরিত্যাগ করে। ফলে এই অশে রাসায়নিক বিচ‚র্ণীভবন বৃদ্ধি পায় ও গর্তের আয়তন
বেড়ে বিচ‚র্ণীভবন গর্তের (ডবধঃযবৎরহম ঢ়রঃ) সৃষ্টি হয়। লবন কেলাসন প্রক্রিয়ায় অ্যালভিওল,
ট্যাফোনির মতো ক্ষুদ্র গর্ত সৃষ্টি হয়।
পাঠ-৫.৫
বিএ/বিএসএস প্রোগ্রাম এসএসএইচএল
উঁচু পর্বত অঞ্চলে তুষারের ক্রিয়ায় প্রস্তর খন্ড সমম্বিত ভ‚পৃষ্ঠের সৃষ্টি হয় এদেরকে
ফেলসেনমিয়ার (ঋবষংবহসববৎব) বলে। এরকম বড় শিলাখন্ডগুলো বিচ‚র্ণীভবনের ফলে
গোলাকার রূপ ধারণ করে।
অনেক সময় পাতালিক আগ্নেয় শিলার ভার লাঘব জনিত প্রসারণের ফলে বল্কমোচনী গম্বুজের
(ঊীভড়ষরধঃরড়হ উড়সব) সৃষ্টি হয়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্টোন মাউন্টেন এরকম বল্কমোচন
গম্বুজের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
চিত্র : ৫.৫.১ : বিভিন্ন ধরনের পূঞ্জিত ক্ষয় (গধংং গড়াবসবধঃ)
উঁচু পর্বতের খাড়া ঢালে তুষারের ক্রিয়ায় সৃষ্ট শিলাখন্ড গড়িয়ে এসে ঢালের পাদদেশে ক্রমাগত
সঞ্চিত হয়ে ত্রিভ‚জাকৃতি ট্যালাস শঙ্কু (ঞধষঁং ঈড়হব) সৃষ্টি হয়।
প্রকৃতপক্ষে শুধুমাত্র বিচ‚র্ণীভবনের সাহায্যে কোনো ভ‚মিরূপের গঠন ব্যাখ্যা প্রায় অসম্ভব। কারণ
বিচ‚র্ণীভবনের যথার্থ সংজ্ঞা অনুসারে ভগ্নপ্রায় শিলার স্থানান্তর ঘটে না। ওপরে যে সমস্ত ক্ষুদ্র
ভ‚মিরূপের কথা বলা হলো ক্ষয়কার্য ছাড়া শুধুমাত্র বিচ‚র্ণীভবনের সাহায্যে এর পূর্ণ ব্যাখ্যা হয়
না তবে একথা ঠিক যে এই সব ভ‚মিরূপ সৃষ্টিতে বিচ‚র্ণীভবনের ভ‚মিকাই প্রধান।
স্তুপ ক্ষয় (গধংং ডধংঃরহম) :
শার্প (ঝযধৎঢ়ব) -এর বিস্তৃত গবেষণার ফলে ডেবরিস ও মৃত্তিকা স্থানান্তরে স্তুপ ক্ষয়ের গুরুত্ব
উপলব্ধি করেছেন। এ প্রসঙ্গে স্তুপ ক্ষয় ও ক্ষয়ের পার্থক্য নির্দিষ্ট করা প্রয়োজন যদিও সব সময়
এটা খুব সহজে করা যায় না। সরাসরি অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে ভ‚মির ঢাল বেয়ে ডেবরিস ও
মৃত্তিকার স্থানান্তরকে স্তুপ ক্ষয় বলে। পানির উপস্থিতি স্তুপ ক্ষয়কে সাহায্য করতে পারে কিন্তু
পানির পরিমান এমন বেশী হবে না যে তাকে পরিবহনের মাধ্যমে বলা যায়। অপরপক্ষে
ক্ষয়ের ক্ষেত্রে একটা গতিশীল মাধ্যম থাকে যা প্রবাহ পথের ওপর বা তার বাইরের বিচ‚র্ণী
পদার্থ সংগ্রহ ও পরিবহন করে অপসারণ করে। যেমন, সমুদ্র তরঙ্গ ও ভ‚গর্ভস্থ পানির ক্ষেত্রে
পানি হিমবাহের ক্ষেত্রে বরফ ও বাতাসের ক্ষেত্রে বায়্ ুএরূপ পদার্থের অপসারণ ঘটায়।
সাধারণভাবে বলা যায় যে, ক্ষয় প্রক্রিয়ায় পরিবহণ মাধ্যমের ঘোলা নদী (গঁফফু ঝঃৎবধস) ও
কর্দম প্রবাহের (গঁফ ঋষড়)ি মধ্যে সীমারেখা টানতে যাই তখন সমস্যার সৃষ্টি হয়। শর্প-এর
মতে ডেবরিস (উবনৎরং) স্থানান্তর প্রক্রিয়াকে অবিচ্ছিন্ন শ্রেণীর মতো যার এক প্রান্তে রয়েছে
নদী, হিমবাহ প্রভৃতি ক্ষয়কারী শক্তিগুলো ও অন্য প্রান্তে রয়েছে স্তুপ ক্ষয়ের বিভিন্ন
প্রক্রিয়াগুলো। এদের মধ্যে সীমারেখা টানা অনেক ক্ষেত্রেই অসুবিধাজনক। অনুরূপভাবে স্তুপ
ক্ষয়ের বিভিন্ন প্রক্রিয়াগুলোও ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে একে অন্যের সঙ্গে মিলে যায়।
যেমন-কর্দম প্রবাহ, মৃত্তিকা প্রবাহ, ডেবরিস স¤প্রপাত ও ধস প্রভৃতি বিভিন্ন স্তুপ ক্ষয়
প্রক্রিয়াগুলো একটা ধারাবাহিক শ্রেণী তৈরী করে।
স্তুপক্ষয়ের শ্রেণীবিভাগ :
শার্প স্তুপ ক্ষয়কে চারটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করেছেন। যথা-ধীর প্রবাহ, ধ্রæত প্রবাহ, ধস ও
অধোনমন (ঝঁনংরফবহপব) । শার্প স্তুপ ক্ষয়কে চারটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করেছেন। যথা-ধীর
প্রবাহ, দ্রæত প্রবাহ, ধস ও অধোনমন (ঝঁনংরফবহপব)। এই প্রধান বিভাগগুলেকে আবার
কতকগুলো উপবিভাগে ভাগ করেছেন।
ক) ধীর প্রবাহ (ঝষড়ি ঋষড়)ি : ভ‚মিপাত (ঈৎববঢ়) ঢাল বেয়ে মাটিও শিলাচ‚র্ণের ধীর চলন।
দীর্ঘায়িত পর্যবেক্ষণের ফলেই এরকম চলন বোঝা যায় :
১) মৃত্তিকা পাত (ঝড়রষ ঈৎববঢ়) : ঢাল বরাবর মাটির চলন।
২) ট্যালাস পাত (ঞধষঁং ঈৎববঢ়) : ঢাল বরাবর ট্যালাস বা স্ক্রী এর চলন।
৩) শিলা পাত (জড়পশ ঈৎববঢ়) : ঢাল বরাবর শিলাখন্ডের একক চলন।
৪) শিলা-হিমবাহ পাত (জড়পশ-এষধপরবৎ ঈৎববঢ়) : ঢাল বরাবর চ‚র্ণশিলা সঞ্চয়ের প্রান্ত
ভাগের চলন।
৫) সোলিফ্লাক্সান (ঝড়ষরভষঁপঃরড়হ) : সুনির্দিষ্ট খাত ছাড়া পানি সম্পৃক্ত অবস্থায় ঢাল
বরাবর ডেবরিসের সঙ্ঘবদ্ধ চলন।
খ) দ্রæত প্রবাহ (জধঢ়রফ ঋষড়)ি :
১) কর্দম প্রবাহ (গঁফ গষড়)ি : নদীমঞ্চ ও পাহাড়ের নিম্ন ঢালযুক্ত অঞ্চলে পানি সম্পৃক্ত
অবস্থায় কর্দম ও পলি সমৃদ্ধ মাটির চলন।
২) মৃত্তিকা প্রবাহ (ঊধৎঃয ঋষড়)ি : সুনির্দিষ্ট খাত বেয়ে পানি সম্পৃক্ত শিলা ডেবরিস দ্রæত
বা ধীর চলন।
৩) ডেবরিস প্রবাহ বা স¤প্রপাত (উবনৎরং আধষধহপযব) : খাড়া ঢালে সংকীর্ণ খাতের
মধ্য দিয়ে পাতের আকারে শিলা ডেবরিস চলন।
গ) ভ‚মিধ্বস (খধহফ ঝষরফব) : অপেক্ষাকৃত শুষ্ক প্রকৃতির মাটি ও শিলা ডেবরিস এমন চলন
যা সহজেই বোঝা যায়।
১) স্খলন (ঝষঁসঢ়) : কোনো এক বা একাধিক বক্রতল বরাবর ডেবরিস সংস্থানের
পতন।
২) ডেবরিস পাত (উবনৎরং ঈৎববঢ়) : কোনো দুর্বল তল বরাবর শিলা মৃত্তিকা নিম্ন ঢাল
বরাবর অগ্রসর হওয়া।
৩) ডেবরিস প্রপাত (উবনৎরং ঋধষষ) : উল্লম্ব বা ঝুঁকে থাকা তল থেকে প্রায় অবাধ
ডেবরিস পতন।
৪) শিলাখন্ড ধস (জড়পশ ঝষরফব) : স্তরায়ন, ফাটল বা চ্যুতি তল বরাবর শিলা সংস্থানের
গড়িয়ে পড়া।
৫) শিলা প্রপাত (জড়পশ ঋধষষ) : খাড়া তল থেকে শিলাখন্ডের অবাধ পতন।
ঘ) অধোগমন বা অধোনমন (ঝঁনংরফবহপব) : নিম্নস্থিত পদার্থের সমৃদ্ধকরণ বা গহŸরের
ছাদের ধস জনিত কারণে শিলা ও মাটির উপরিভাগ ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে ধসে যাওয়া।
চুনাপাথর যুক্ত সমভ‚মি বা পাহাড়ী অঞ্চল এবং পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
স্তুপ ক্ষয়ের কারণ : যখন কোনো ঢাল বরাবর ডেবরিস সঞ্চয় থাকে তখন এর উপর যে
অভিকর্ষ বল কাজ করে তাকে দুটো উপভাগে ভাগ করা যায়। এর একটি উপভাগ ভ‚মির
ঢালের অভিলম্ব দিকে ও অপর উপভাগ নিম্ন ঢাল বরাবর কাজ করে। স্থিতিশীল ডেবরিস
চলনের উপযোগী অবস্থা তখনই সৃষ্টি হবে যখন ডেবরিস অভিলম্বিক পীড়ন ও ভ‚মির ঢাল বাড়ে
বা শিলার সহনশীলতা কমে।
নিম্নে স্তুপ ক্ষয়ের বিশেষ কারণগুলো তালিকার আকারে প্রকাশিত হলো :
ক) ভ‚মির ঢাল নানা ভাবে বাড়তে পারে। যথা
১) নদী, হিমবাহ, সমুদ্র তরঙ্গের কার্যের ফলে ঢালের নিম্ন অংশে ক্ষয় বেশী হলে।
২) বিচ‚র্ণীভবনের ফলে;
৩) ধ্বস, অধোনমন, শিলা প্রপাতের ফলে;
৪) প্রস্তর খনি, খাল খনন, রাস্তা তৈরির ফলে;
৫) হ্রদ বা কৃত্রিম জলাধারে জলতলের পরিবর্তনের ফলে।
খ) ঢালের ওপর বোঝার চাপ নিম্নলিখিত কারণে বাড়তে পারে, যথা,
১) বৃষ্টি ও তুষারপাত, পানির পাইপ লাইন, পয়ঃপ্রণালী এবং খাল নির্মাণ;
২) ট্যালাস সঞ্চয়;
৩) উদ্ভিদ ও বৃক্ষের বৃদ্ধি;
৪) নিম্ন প্রবাহী ভ‚-গর্ভস্থ জলের পরিমাণ বৃদ্ধি;
৫) গৃহ নির্মাণ, আবর্জনা নিক্ষেপ ইত্যাদি।
গ) উপরিস্থ শিলা অপসারণের কারণগুলো নিম্নরূপ হতে পারে, যেমন,
১) নদী ও সমূদ্র তরঙ্গের মাধ্যমে নিম্ন ভাগ বসে যাওয়া;
২) চুনাপাথর ও অন্যান্য দ্রব্য শিলার গহŸরীকরণ, ভ‚-নিম্নস্থ খনি;
৩) নিম্নস্থিত অবক্ষেপের সহশীলতা হ্রাস;
৪) নিম্নস্থিত অস্থিতিস্থাপক পলির সমৃদ্ধি।
ঘ) শিলার সহনশীলতা নিম্নলিখিত কারণে কমতে পারে, যেমন,
১) কাদার ফাটলে পানি ঢুকে একে নরম করে দিতে পারে;
২) শিলার যান্ত্রিক বিচ‚র্ণীভবন, নিরেট শিলা থেকে ভাঙ্গা শিলার সহনশীলতা কম হয়;
৩) পানির অধিশোষণের ফলে কর্দম খনিজের সংযুক্তি হ্রাস, স্ফীত;
৪) কর্দম ও সেলে শুষ্ককরণভাঙ্গনসংযুক্তি হ্রাসপানির অণুপ্রবেশ ও কোমলতা
প্রাপ্তি;
৫) দ্রবণের ফলে পাললিক শিলার সিমেন্টের অপসারণভাঙ্গনসংযুক্তি হ্রাসপানির
অনুপ্রবেশ ও কোমলতা প্রাপ্তি।
৬) আয়ন বিনিময় রাসায়নিক বিক্রিয়াজনিত ভৌত ধর্মের পরিবর্তন;
৭) পানি সম্পৃক্তির ফলে প্লাবতা বৃদ্ধি। আন্তঃকণা চাপ ও ঘর্ষণ হ্রাস, কৈশিক পানি
সম্পর্কিত সংযুক্তি হ্রাস।
৮) পানি শোষণের ফলে ডেবরিসের স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস;
৯) জীবজন্তুর খোড়াগর্ত ও উদ্ভিদ শিকড়ের পচনের ফলে ডেবরিসের ভৌত ধর্মের
পরিবর্তন।
ওপরোক্ত কারণগুলো সক্রিয়ভাবে স্তুপ ক্ষয়ে প্রভাব বিস্তার করলেও শিলা স্তারায়ন ও গঠন
সংক্রান্ত কতকগুলো কারণ সময় বিশেষ স্তুপ ক্ষয়ে বিশিষ্ট ভ‚মিকা গ্রহণ করে। তবে বিভিন্ন
ধরনের স্তুপ ক্ষয় প্রক্রিয়ার মধ্যে বেশ স্বতন্ত্র লক্ষ্য করা যায় (চিত্র-৫.৫.১)। নিম্নে ক্ষয়ের
প্রধান প্রক্রিয়াগুলোর বৈশিষ্ট্য ও কারণ বিশ্লেষণ করা হলো।
মৃত্তিকা পাত (ঝড়রষ ঈৎববঢ়) : ঢাল বেয়ে অতি ধীর কিন্তু অব্যাহত হারে বিচ‚র্ণীভবন পদার্থ,
মাটি প্রভৃতির স্থানান্তরকে মৃত্তিকা পাত বা ক্রীপ বলে। ক্রীপ হলো ভ‚-পৃষ্ঠের কাছাকাছি অংশে
সংঘটিত প্রক্রিয়া। ক্রীপ নানা ভাবে হতে পারে। যেমন১) অভিকর্ষের প্রভাবে যে পীড়নের উদ্ভব হয় তা শিলা সহনশীলতা অতিক্রম করলে সূ²
ব্যবধানে বহু সংখ্যক কৃন্তন তলের সৃষ্টি হয় ও পদার্থ কণার চলন ঘটে।
২) তাপমাত্রাজনিত প্রসারণ ও সংকোচনও ক্রীপে সাহায্য করে। দিনের বেলা তাপমাত্রা
বাড়ার ফলে কোনো আলগা শিলা বা মৃত্তিকা কণা ঠেলা খেয়ে ঢালের লম্ব দিকে উঠে যায
কিন্তু ঠান্ডা হবার সময় একই পথে না ফিরে উল্লম্ব পথে ফিরে আসে। এর মোট ফল
হলো ঐ কণার ঢাল বরাবর অল্প চলন।
কর্দম প্রবাহ ও সোলিফ্লাক্সান : সছিদ্র ডেবরিস যখন পানি সম্পৃক্ত হয় তখন এটা সাস্ত্র তরলের
মত প্রবাহিত হতে থাকে। সুমেরু অঞ্চলে এই ধরণের ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। নাতিশীতোষ্ণ
মন্ডলে আলগা ডেবরিস যুক্ত অঞ্চলের নিচে অপ্রবেশ্য কাদা বা অন্য কোনো অপ্রবেশ্য শিলা
থাকলে একই ভাবে শীতের পর তুষার গলা পানিতে সম্পৃক্ত হয়ে ডেবরিস প্রবাহ হতে পারে।
সোলিফ্লাক্সান থেকে আরও বড় আকারের পানি সম্পৃক্ত অবস্থায় ডেবরিস প্রবাহকে কর্দম প্রবাহ
বলে। মুষলধারে বৃষ্টি বাড়ার সময় ডেবরিস ফাঁকে ফাঁকে পানি ঢুকলে এর সহনশীলতা কমে
যায় ও কর্দম প্রবাহের উপযোগী অবস্থার সৃষ্টি হয়। সোলিফ্লাক্সান ও কর্দম প্রবাহ বছরে কয়েক
সে.মি. থেকে কয়েক মিটারের ও বেশী হতে পারে। মৃত্তিকা প্রবাহ কর্দম প্রবাহ থেকে দ্রæততর
হয়। বেশ খাড়া তলে এক দিনের প্রবাহ কয়েক মিটার হতে পারে।
ধ্বস : কোন দুর্বল অংশ যেমন স্তরায়ন তল, শিলা তল বরাবর স্খলিত হয়ে সুসংবদ্ধ শিলা ও
ডেবরিস সংস্থানের নিম্ন ঢাল বরাবর বিসর্পণকে ধস বলে। পরে অবশ্য ধস প্রাপ্ত পদার্থ
চলনকালে টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে যায়।
¯øাম্প ধ্বসের মতোই এক ধরনের ধীর সঞ্চরনশীল প্রক্রিয়া। তবে এখানে স্খলিত তল ধসের
মতো সমতল না হয়ে বক্র হয়। ভ‚মিকম্প, আগ্নেয় বা কৃত্রিম বিস্ফোরণে যে কম্পনের সৃষ্টি হয়
তা দুর্বল তলের ঘর্ষণজনিত বলকে অতিক্রম করতে সাহায্য করে ও ধস বা ¯øাম্পের সৃষ্টি
করতে পারে।
পাঠসংক্ষেপ :
বিচ‚র্ণীভবন ভ‚মিরূপ গঠনে প্রত্যক্ষ ভাবে তেমন জড়িত না থাকলেও পরোক্ষভাবে স্তুপক্ষয়
ক্ষয়কার্যকে ত্বরাম্বিত করে। বিচ‚র্ণীভ‚ত আলগা পদার্থই মৃত্তিকা গঠনের প্রধান ধাপ।
ভ‚মিরূপ গঠনে বিচ‚র্ণীভবন দুই ভাবে সরাসরি অংশ গ্রহণ করে। যেমন- দ্রবণজনিত
পদার্থের অপসারণ সম্পর্কিত উচ্চতা হ্রাস ও বৈষম্যমূলক আচরণ করে ক্ষুদ্র ভ‚মিরূপের
গঠন। তবে একথা ঠিক যে ভ‚মিরূপের গঠনে বিচ‚র্ণীভবনের ভ‚মিকাই প্রধান।
স্তুপক্ষয় ও ক্ষয়ের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় খুবই কঠিন ব্যাপার। সরাসরি অভিকর্ষজ বলের
প্রভাবে ভ‚মির ঢাল বেয়ে ডেবরিস ও মৃত্তিকার স্থানান্তরকে স্তুপক্ষয় বলে। স্তুপক্ষয়কে ৪টি
প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। যেমন, ধীর প্রবাহ (ঝষড়ি ঋষড়)ি, দ্রæত প্রবাহ
(জধঢ়রফ ঋষড়)ি, ভ‚মি (খধহফ ঝষরফব) ধ্বস ও অধোনযন বা অধোগমন।
পঠোত্তর মূল্যায়ন : ৫.৫
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন:
১. সঠিক উত্তরের পাশে টিক () দিন:
১.১. ভ‚মিরূপ গঠনে বিচ‚র্ণীভবন সরাসরি কত ভাবে অংশগ্রহণ করে?
ক) ৪ খ) ২ গ) ৫ ঘ) ৩
১.২. চুনাপাথর, ডলোমাইট প্রভৃতি শিলাগঠিত অঞ্চলে উচ্চতা ক্রমাগত হ্রাসের কারণক) জৈবিক ক্ষয়সাধন খ) যান্ত্রিক ক্ষয়সাধন
গ) দ্রবণ ঘ) কোনটিই নয়।
১.৩. এলগি, মস প্রভৃতি কোন জাতীয় বিচ‚র্ণীভবনকে বৃদ্ধি করে?
ক) যান্ত্রিক খ) রাসায়নিক গ) জৈবিক ঘ) কোনটিই নয়।
১.৪. বৈষম্যমূলক বিচ‚র্ণীভবনের ফলে ভ‚-পৃষ্ঠে স্তম্ভ ও নানা আকৃতির শিলাকে সম্মিলিতভাবে
কি বলে?
ক) গম্বুজ খ) হুড (ঐড়ড়ফ)
গ) ফেলসেনমিয়ার ঘ) কোনটিই নয়।
১.৫. শিলার নগ্নীভবনে কোনটির পরে কোন প্রক্রিয়া কার্যকর হয়?
ক) বিচ‚র্ণীভবন ও নগ্নীভবন খ) ক্ষয়সাধন ও নগ্নীভবন
গ) বিচ‚র্ণীভবন, নগ্নীভবন ও ক্ষয়সাধন ঘ) যে কোনটি প্রথম হতে পারে।
১.৬. চুনাপাথর অঞ্চলে দ্রবণের ফলে সোয়ালো হোল, ডোলিন প্রভৃতি গর্তের সৃষ্টির কারণক) অবক্ষেপন খ) বিচ‚র্ণীভবন
গ) নগ্নীভবন ঘ) স্তুপ ক্ষয়
১.৭. মৃত্তিকা গঠনের জন্য আলগা পদার্থের সরবরাহের প্রথম ধাপ হলোক) ক্ষয়সাধন খ) সঞ্চয়ন
গ) বিচ‚র্ণীভবন ঘ) স্থানান্তকরণ
১.৮. কোনটি স্তুপ ক্ষয়ের শ্রেণীবিভাগের অন্তভর্‚ক্ত নয়?
ক) ধীর প্রবাহ খ) ধস ও অধোনমন
গ) দ্রæত প্রবাহ ঘ) উর্ধ্ব প্রবাহ
১.৯. নিম্নের কোনটি স্তুপ ক্ষয়ের জন্য সহায়ক নয়?
ক) ভুমির ঢাল বৃদ্ধি খ) ঢালের উপর বোঝার চাপ বৃদ্ধি
গ) শিলার সহনশীলতা হ্রাস ঘ) ভ‚মির ঢাল হ্রাস
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :
১। ভ‚মিরূপ গঠনে বিচ‚র্ণীভবন পরোক্ষভাবে যে ধরনের ভ‚মিকা রাখে ও যে সকল ভ‚মিরূপ
গঠন করে সে সম্পর্কে আলোচনা করুন।
২। স্তুপ ক্ষয় বলতে কি বোঝায়? স্তুপ ক্ষয়ের শ্রেণীবিভাগ করে সেগুলোর সংক্ষিপ্ত আলোচনা
করুন।
৩। স্তুপ ক্ষয়ের কারণসমূহ তালিকা আকারে লিখুন। স্তুপ ক্ষয়ের প্রধান প্রক্রিয়াগুলোর বৈশিষ্ট্য
ও কারণ বিশ্লেষণ করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন :
১. ভ‚মিরূপের ওপর বিচ‚র্ণী ভবন ও স্তুপক্ষয়ের প্রভাব বর্ণনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]