নদীর ক্ষয়জাত ভ‚মিরূপ
ঊৎড়ংরড়হধষ ঋবধঃঁৎবং ড়ভ জরাবৎ
এই অংশটি পাঠ করে আপনি-
নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভ‚মিরূপ সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবেন।
পার্বত্য অবস্থায় নদীর ক্ষয়কার্য অত্যন্ত বেশী। পার্বত্য ভ‚-প্রকৃতি এবং প্রবল গতিবেগের জন্য
স্রোতে ক্ষয়সাধনের ক্ষমতা এ অংশে সর্বাংশে অধিক। সমভ‚মি অবস্থায় নদীর ক্ষয়সাধন কম
এবং শেষ অবস্থায় ক্ষয়সাধন প্রায় বন্ধ থাকে। নদীর উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত নদীর
কার্যাবলীর তারতম্যের কারণে বিভিন্ন ধরনের ভ‚মিরূপ গড়ে উঠে। নিম্নে নদীর উর্ধ্ব, মধ্য ও
নিম্ন অংশে গড়ে উঠা ভ‚মিরূপের বিবরণ দেয়া হলো।
১। নদীর উর্ধ্ব অঞ্চলের ভ‚মিরূপ (খধহফ ঋড়ৎসং রহ ঃযব টঢ়ঢ়বৎ ড়ৎ ণড়ঁহম ঝঃধমব) :
(র) নদী উপত্যকা (জরাবৎ
ঠধষষবু) : পার্বত্য অবস্থায়
নদীর ক্ষয় ক্রিয়াই সর্বাধিক।
পর্বত থেকে প্রবল বেগে
নামার সময় নদীর প্রবল
স্রোত বড় বড় শিলা খন্ড
বহন করে নিম্নদিকে অগ্রসর
হয়। এখানে নদীর পার্শ্বক্ষয়
অপেক্ষা উল্লম্ব ক্ষয় বেশী
হয়। এরূপে ক্রমশ ক্ষয়
পেতে পেতে নদী উপত্যকা অনেকটা ইংরেজী ‘ভি’ (ঠ) অক্ষরের মত হয়। ফলে এরূপ
উপত্যকাকে ভি-আকৃতি উপত্যকা (ঠ-ংযধঢ়বফ ঠধষষবু) বলা হয় (চিত্র-৫.৮.১)। কিন্তু নদীর
মধ্য গতিতে অর্থাৎ সমভ‚মি
অবস্থায় উপত্যকার
আকৃতির পরিবর্তন দৃষ্ট
হয়। এ অবস্থায় স্রোত ও
শিলারাশি দ্বারা উল্লম্ব
(ঠবৎঃরপধষ) ক্ষয় অপেক্ষা
পার্শ্বক্ষয় বেশী হয়। ফলে
নদী ক্রমশ প্রশস্থ হয়ে
কোনো কোনো স্থানে
ইংরেজি ‘ইউ’ (ট) আকৃতি
বা চ্যাপটা প্রশস্ত আকৃতি
ধারণ করে। নদী যতই
মোহনার দিকে অগ্রসর হয়,
ততোই এর উপত্যকার বিস্তৃতি ঘটে।
পাঠ-৫.৮
চিত্র : ৫.৮.১ : ঠ ও ট আকৃতির উপত্তকা
চিত্র : ৫.৮.২ : গিরিখাত
(রর) গিরিখাত ও ক্যানিয়ন (এবড়ৎমব ধহফ ঈধহুড়হ) :
প্রাথমিক গতিতে নদীর প্রবল স্রোত খাড়া পর্বত গাত্র বেয়ে নিম্নদিকে প্রবাহিত হয়। এতে
ভ‚-পৃষ্ঠে ক্ষয় হয় এবং ভ‚ত্বক থেকে শিলাখন্ড ভেঙ্গে পড়ে। পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষের দরুন
শিলাখন্ডগুলো মসৃণ ও
ক্ষুদ্রতর হয়ে পানির সাথে
বহুদুরে চলে যায়। এ সকল
পাথরের ঘর্ষণে নদীর খাত
গভীর ও সংকীর্ণ হতে
থাকে। নদীর দু-পার্শ্বের
শিলা যদি ক্ষয় না হয়
তাহলে এ সকল খাত খুব
গভীর হয়। তখন এ সকল
খাতকে গিরিখাত (এবড়ৎমব)
বলে (চিত্র-৫.৮.২)। সিন্ধু নদের গিরিখাত, আফগানিস্থানে কাবুল নদীর গিরিখাত, ভারতের
অরুণাচলে ব্রক্ষপুত্র নদীর গিরিখাত প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। গিরিখাতগুলো শুষ্ক কোমল
শিলা স্তরে হলে অতীব সংকীর্ণ ও গভীর হয়। ফলে নদীর উভয় পার্শ্ব অধিক উচ্চ ও খাড়া হয়।
এরূপ গভীর ও সংকীর্ণ
গিরিখাতকে ক্যানিয়ন
(ঈধহুড়হ) বলে। উত্তর
আমেরিকার কলরাডো নদীর
গিরিখাত-গ্রান্ড ক্যানিয়ন
(এৎধহফ ঈধহুড়হ) পৃথিবীর
বিখ্যাত। এ গিরিখাত ১৩৭
থেকে ৪৫৭ মি. পর্যন্ত
বিস্তৃত। প্রায় ২.৪ কি.মি
গভীর ও ৪৮২ কি.মি দীর্ঘ।
(ররর) স্পার (ঝঢ়ঁৎ) : উৎস থেকে নিম্ন ঢালে যাওয়ার পথে নদী এক পাড় থেকে অন্য পাড়
বদল করে অগ্রসর হয়। অবশ্য এ অবস্থায়ও এর তলদেশের ক্ষয়কাজ ঠিকই চলতে থাকে।
নদীর এ ধরনের গতি
ধারার ফলে পাহাড়ের
গাত্রসমূহ ঠিক দুটি করাত
মুখোমুখি রাখলে দাঁতসমূহ
যেভাবে পরস্পরের সঙ্গে
লেগে থাকে। তেমনি ভাবে
পাহাড়ের পার্শ্ব দেশসমূহ
পরস্পরের দিকে ঝুঁকে
থাকা ভ‚মিরূপ গড়ে
তোলে। এ ধরনের
ভ‚মিরূপকে স্পার বলে
(চিত্র-৫.৮.৩)।
(রা) র্যাপিডস্ ও কাসকেড (জধঢ়রফং ধহফ ঈধংপধফবং) :
পাহাড়ী খাড়া ঢালের ক্ষয় স্রোতকেই ‘র্যাপিডস’ বলে। অনেক সময় পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নদী
স্রোত নিচে চলতে থাকে। এরূপ ঢালু জায়গায় মাটি পর্যায়ক্রমে কঠিন ও কোমল থাকতে
পারে। ফলে নদীর স্রোতে নরম মাটি অল্প অল্প করে ক্ষয় হয় এবং ছোট ছোট জল প্রপাতের
সৃষ্টি হয়। এ জল প্রপাতগুলো সারিবদ্ধভাবে ওপর থেকে নিচের দিকে অবস্থান করে এবং
নদীস্রোত লাফাতে লাফাতে নিচে পড়তে থাকে। এরূপ প্রবহমান স্রোতকে বা সারিবন্ধভাবে
সৃষ্ট ছোট ছোট জল প্রপাতকে খরস্রোত বা র্যাপিডস (জধঢ়রফং) বলে (চিত্র-৫.৮.৪)। এ
অপেক্ষা আরও ক্ষুদ্র জল প্রপাতকে কাসকেড (ঈধংপধফবং) বলে। কিন্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জল
প্রপাতগুলো বেশী দিন স্থায়ী হয় না। মিসরের নীল নদের গতিপথে কাসকেড দেখা যায়।
বাংলাদেশে বান্দরবান এর পাহাড়ী নদীতে এবং ভারতের মেঘালয়ে চেরাপুঞ্জি অঞ্চলে এরূপ
ভ‚মিরূপ দেখা যায়।
(া) জলপ্রপাত (ডধঃবৎ ঞধষষ) :
জলপ্রপাত বিভিন্ন ভাবে হতে পারে। যেমন, পানি খাড়াভাবে একটি স্রস্ত উপত্যকার ওপর
অথবা হিমবাহ উপত্যকায় পতিত হলে এ ধরনের জল প্রপাতের সৃষ্টি হয়। বেশীর ভাগ জল
প্রপাতের ওপরে কঠিন শিলা এবং নিচে কোমল শিলা স্তর দেখা যায় (চিত্র-৫.৮.৫)। পার্বত্য
অবস্থায় নদীস্রোত কোনো কঠিন শিলাস্তর হতে কোমল শিলা স্তরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলে
কোমল শিলা স্তরটিকে বেশী পরিমাণে ক্ষয় করে ফেলে। ফলে কঠিন শিলা স্তর কোমল
শিলাস্তর অপেক্ষা অনেক উচ্চে অবস্থান করে এবং পানি ধারা খাড়াভাবে নিচে পড়তে থাকে।
পানির এইরূপ পতনকে জলপ্রপাত (ডধঃবৎভধষষ) বলে। ক্যানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে নয়াস্ত
একটি অতিকায় বাংলাদেশের মৌলভী বাজার জেলার মাধবকুন্ড জলপ্রপাতটি একটি
উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
নদী এভাবে কোমল শিলাস্তর ভেতরের দিকে ক্ষয় করতে থাকে। এক পর্যায়ে কঠিন শিলার
তলদেশের সমস্ত শিলা ক্ষয় হয়ে যাওয়ায় তা ওপর থেকে ঝুলতে থাকে। অবশেষে ঝুলতে
ঝুলতে কঠিন শিলাস্তর ভেঙ্গে পড়ে এবং জলপ্রপাত পশ্চাদপসরণ করে।
(ার) বর্তুলাকার গর্ত (চড়ঃ
ঐড়ষবং) : র্যাপিডস বা
জলপ্রপাতের পাদদেশে নদীর
পানিতে স্থানীয়ভাবে অনেক
আবর্তের সৃষ্টি হয়। এই
অংশে নদীর পানি পাক খেয়ে
খেয়ে আবর্তিত হতে থাকে
বলে নদী মধ্যস্থিত শিলাচ‚র্ণের
ঘর্ষণে নদীগর্ভের শিলার
গোলাকৃতি গর্তের সৃষ্টি হয়।
এগুলোকে বর্তুলাকার গর্ত
বলে। পর্বত বা মালভ‚মির
উভয় অংশেই এরূপ
বর্তুলাকার গর্ত দেখা যায় (চিত্র-৫.৮.৬)।
(ার) নদী বাঁক (গবধহফবৎ), বøাফস (ইষঁভভং) ও বাঁকের চর (ঝষরঢ়-ড়ভভ ঝষড়ঢ়বং, চড়রহঃ
ইধৎ):
নদীর সব গতিতেই বাঁক দেখা যায় এবং উর্ধ্ব গতিতে এ ধরনের বাঁক তুলনামূলকভাবে কম।
নদী প্রবাহ বাঁক ঘূরার সময় কেন্দ্রাভিগ বলের কারণে বাইরের দিকে ঝুঁকে গিয়ে পাড়ে আঘাত
করে। ফলে, পাড়ের ভিত্তি তল ক্ষয় সাধিত হয় এবং এক পর্যায়ে তা সহজে ধসে পড়ে। তখন
নদী পাড় প্রায় খাড়াভাবে অবস্থান করে। এ ধরনের ভ‚মিরূপকেই বøাফ বলে। বাঁকের ভেতর
পাড় বরাবর স্রোতের শক্তি কম থাকায় পলি সহজেই জমা হয়ে স্বল্প ঢাল বিশিষ্ট চরার সৃষ্টি
করে তাকে বাঁকের চর বলে। প্রকৃতপক্ষে এগুলি নদীর সঞ্চয় কাজের ফল হলেও উজানে
ক্ষয়কাজের পরিণতি।
২। নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলের ভ‚মিরূপ (খধহফ ঋৎড়সং রহ ঃযব গরফফষব ঝঃধমব) :
কিছু কিছু ভ‚মিরূপ যা নদীর উর্ধ্বাঞ্চলে দেখা গেছে তা মধ্যবর্তী অঞ্চলেও দেখা যায়। যেমন,
কিছু র্যাপিডস, জলপ্রপাত, নদী বাঁক ও বøাফস। এ ধরনের ভ‚মিরূপ তুলনামূলকভাবে কম
হলেও এর কিছু কিছু নমুনা দেখা যায়। নদী বাঁক এ অংশে আরও অনেক প্রশস্ত এবং বিশেষ
গুরুত্বপূর্ণ। প্রশস্ত ‘ভি’ আকৃতির উপত্যকা ও সংকীর্ণ প্লাবনভ‚মি পাহাড়ী অংশের নদীখাতের
চেয়ে এ অংশের খাত অনেক প্রশস্ত এবং স্পারসমূহ অনুপস্থিত। নদী নিজেই এ সকল স্পার
ক্ষয় করে উপত্যকার আয়তন বৃদ্ধি করেছে। তাছাড়া, এ অংশের শেষ পর্যায়ে নদীর উভয় পাড়
উপচে পার্শ্ববর্তী নিম্ন অংশে পলি সঞ্চয় করে প্লাবন ভ‚মি গড়ে তোলে। একাধিক নদী বাঁকের
অবস্থান থাকলে নদীটিকে সর্পিল (গবধহফবৎরহম জরাবৎ) বলা যাবে।
(র) প্লাবন ভ‚মি (ঋষড়ড়ফ চষধরহ) :
প্রাথমিক ভ‚মির অনিয়মতার জন্য
সর্বদাই নদীর কোনো কোনো
স্থান বাঁকের সৃষ্টি হয়। এ বাঁকের
বহিঃ প্রান্তদেশে নদীর জলস্রোত
সরাসরি আঘাত করে ও এর
সঙ্গে পাড়ের ক্ষয়ও সংযুক্ত হয়।
ফলে এ অংশে নদীর ক্ষয়কার্য
বেশী হয় ও বাঁকের বক্রতা
বাড়তে থাকে। স্বভাবতই এ
অংশে নদী যে ভ‚মি পরিত্যাগ
করে এসেছে সেই অংশে ঢাল
মৃদু হয় এবং বাঁকের বহিঃ প্রান্তদেশের ঢাল খাড়া হয়। ফলে নদীর পার্শ্বদেশে অপ্রতিসম ঢালের
সৃষ্টি হয়। যে ঢাল বরাবর নদী বাঁক নেবার সময় অগ্রসর হয় তাকে। পরিত্যক্ত নদী বাঁক ঢাল
(ঝষরঢ়-ড়ভভংষড়ঢ়ব) বলে। অপরপক্ষে, নদী বাঁকের বহিঃপ্রান্তদেশের খাড়া ঢালকে নিম্নকর্তিত
ঢাল (টহফবৎ-পঁঃ ঝষড়ঢ়ব) বলে। এভাবে ঢালের একদিকে প্রায় সমতল বা সামান্য ঢালযুক্ত
ভ‚মির সৃষ্টি হয়। প্লাবনের সময় এর ওপর পানির অনুপ্রবেশ ঘটে ও পানির বয়ে আনা পলি
ভ‚মির ওপর থিতিয়ে পলির এক আস্তরণ ফেলে। এর ফলে ঐ প্রায় সমভ‚মি আরও মসৃণ হয়ে
ওঠে। একেই প্লাবন ভ‚মি বলে (চিত্র-৫.৮.৭)।
(রর) খোদিত নদী বাঁক (ওহপরংবফ গবধহফবৎ) :
নদীর পুনঃ যৌবন প্রাপ্তি ঘটলে নদীর নিম্নক্ষয়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে ভ‚মি উজানের
ফলে নদীর বাঁক কেটে বসে যায় ও দুপাড় খাড়া থাকে। খোদিত নদী বাঁকের ক্ষেত্রে নদীর তল
পূর্বেকার প্লাবন ভ‚মির অনেক নিম্নে থাকে এবং প্লাবন পানি কখনোই অংশে উত্থিত হতে পারে
না। স্বভাবতই এ অবস্থা নদীর বর্ধিত নিম্নক্ষয় বা নদীর পুনঃযৌবন প্রাপ্তির ফলে সৃষ্টি হয়েছে
বলে মনে করা যেতে পারে। অপরপক্ষে, অসম পাড় বিশিষ্ট খোদিত বাঁকের (ওহমৎড়হি
গবধহফবৎ) ক্ষেত্রে নদীর নিম্নক্ষয় অপেক্ষাকৃত কম প্রবল থাকে। ফলে এরূপ ক্ষেত্রে নিম্নক্ষয়ের
চিত্র : ৫.৮.৭ : প্লাবন সমভূমি ও প্রাকৃতিক বাঁধ
সঙ্গে সঙ্গে নদী পার্শ্বদেশেও কিছুটা সরতে থাকে। ফলে নদী বাঁকের উভয় পার্শ্বের ভ‚মির
উচ্চতা একই প্রকার থাকে না। পরবর্তীকালে প্লাবন সমভ‚মিতে, যেমন, পরিত্যক্ত নদীবাঁক,
অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদের সৃষ্টি হয়, তেমন অসম পাড় খোদিত নদীর বাঁকের ক্ষেত্রেও একই ভাবে
এরূপ হ্রদের সৃষ্টি হতে পারে। একে বিচ্ছিন্ন নদী বাঁক (গবধহফবৎ ঈঁঃ ঙভভ) বলে।
(ররর) নদী মঞ্চ (জরাবৎ ঞবৎৎধপব) :
নদীর উভয় পর্শ্বে অনেক সময়
এক বা একাধিক ধাপ বা মঞ্চ
দেখা যায়। এ মঞ্চ পূর্ণযৌবন
লাভের পূর্ববর্তীকালের নদী
উপত্যকার তলদেশের সমতল
প্লাবন ভ‚মিকে উপস্থাপিত করে।
পূর্ণযৌবন প্রাপ্তির ফলে নদী নিচে
কেটে বসে যায় বলে পূর্বেকার
নদী উপত্যকার সমতল মেঝে
(প্লাবন ভ‚মি) নদীর দুই পাশে
কিছুটা উর্ধ্বে মঞ্চের আকার
বিরাজ করে। সিঁড়ির ন্যায় অবস্থিত এ ধাপগুলোকে নদীমঞ্চ বা নদী সোপান (চিত্র-৫.৮.৮)
বলা হয়। নদীর উচ্চ ও মধ্যগতিতে নদী মঞ্চের সৃষ্টি হয়। নদীর পূর্ণযৌবন লাভ ছাড়াও বিভিন্ন
ঋতুতে নদীর পানির উর্ধ্ব সমীনার পরিবর্তন ঘটলেও নদীমঞ্চের সৃষ্টি হয়। ব্রক্ষপুত্র, যমুনা,
তিস্তা ইত্যাদি নদীর গতিপথে এরূপ নদীমঞ্চ দেখতে পাওয়া যায়।
সাধারণত দুই প্রকারের নদীমঞ্চ দেখা যায়। যেমন, (১) শিলা মঞ্চ, ও (২) পলল মঞ্চ। নদীর
সমতল উপত্যকায় যদি পলির গভীরতা কম হয়ে থাকে, তবে আদি শিলা ক্ষয় হলে নদী মঞ্চের
সৃষ্টি হয়। এ জাতীয় মঞ্চকে শিলা-মঞ্চ (জড়পশ ঞবৎৎধপব) বলে। আবার পুরু পলল স্তর দ্বারা
গঠিত সমতল উপত্যকার ওপর নদী পূর্ব প্রক্রিয়ায় পূর্ণযৌবন লাভের মাধ্যমে নদী মঞ্চের সৃষ্টি
করলে এ জাতীয় মঞ্চকে পলল মঞ্চ (অষষাঁরধষ ঞবৎৎধপব) বলা হয়।
ক্ষয়চক্র (ঈুপষব ড়ভ ঊৎড়ংরড়হ) :
নদীর বিভিন্ন গতিতে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে নদীটি খুবই
খরস্রোতা ও ঢালযুক্ত হয়।
উপনদী ও শাখা নদীর সংখ্যা
খুবই কম থাকে। নদীর ক্ষয়
সাধনই এ পর্যায়ের প্রধান
কাজ। পরিণত অবস্থায় নদীর
উপনদী ও শাখা নদীর সংখ্যা
বৃদ্ধি পায়। নদীর ঢাল ক্রমেই
হ্রাস পায়। নদী বড় বাঁক নিয়ে
প্রবাহিত হতে পারে এবং নদী
সৃষ্ট প্লাবন ভ‚মিতে এ বাঁকগুলো
স্থান পরিবর্তন করে। পরবর্তী
পর্যায়ে বার্ধক্য অবস্থায় নদীর ঢাল আরও হ্রাস পায় এবং নদীর মধ্যে ও পাড়ে নদীবাহিত
তলানির সঞ্চয় ঘটে। নদী অগভীর ও অস্বাভাবিক প্রশস্থতা লাভ করে (চিত্র-৫.৮.৯)। নদীর
পার্বত্য গতির যৌবন অবস্থা থেকে বার্ধক্য অবস্থায় এসে পরিণতি লাভ করাকে ক্ষয় চক্র নামে
চিত্র : ৫.৮.৮ : নদী মঞ্চ
চিত্র : ৫.৮.৯: ক্ষয়চক্র চলাকালে ভূমি পরিবর্তনের বিভিন্ন অবস্থা
অভিহিত করেন। আমেরিকান ভ‚-বিজ্ঞানী এম ডেভিস প্রথম ক্ষয়চক্র ধারণা প্রবর্তন করেন।
তার বর্ণিত ক্ষয়চক্রে প্রক্রিয়া ভ‚মিরূপের বিবর্তনে বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে। নদী দ্বারা
ক্ষয়কার্যের ফলে যে ক্ষয়চক্রের ধারা নির্দিষ্ট হয় তাকে নদী ক্ষয়চক্র বা স্বাভাবিক ক্ষয়চক্র
বলে। নদী পার্বত্য অবস্থা থেকে পরিণত অবস্থা এবং শেষে বার্ধক্য অবস্থায় পৌঁছার পরে
আবার বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে নদীর প্রাথমিক গতিতে ফিরে যাওয়াকে নদীর পুনঃযৌবন
(জবলাঁরহধঃরড়হ) বলে।
পাঠসংক্ষেপ :
নদীর যৌবনাবস্থায় ঊর্ধ্বগতিতে ক্ষয়কার্য সবচেয়ে বেশী হয়ে থাকে। এ পর্যায়ে নদীর
ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট উল্লেখযোগ্য ভ‚মিরূপ হলো ‘ঠ’ও‘ট’ আকৃতির উপত্যকা, গিরিখাত
ও ক্যানিয়ন, স্পার, র্যাপিডস ও কাসকেডস, জলপ্রপাত, বর্তুলাকার গর্ত, নদীবাঁক,
ইত্যাদি। নদীর মধ্যম পর্যায়ের ক্ষয়জাত ভ‚মিরূপের মধ্যে খোদিত নদী বাঁক, নদী মঞ্চ,
ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
পঠোত্তর মূল্যায়ন ৫.৮
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন :
১. শূন্যস্থানপূরণ করুন:
১.১. পার্বত্য অবস্থার নদীর ........ক্রিয়াই সর্বাধিক।
১.২. ....... থেকে নিম্ন ঢালে যাওয়ার পথে নদী এক পাড় থেকে অন্য পাড়, এভাবে পাড় বদল
করে অগ্রসর হয়।
১.৩. পার্বত্য অবস্থায় নদীস্রোত কোনো কঠিন শিলাস্তর হতে কোমল শিলা স্তরের ওপর দিয়ে
প্রবাহিত হলে ............ শিলা স্তরটিকে বেশী পরিমাণে ক্ষয় করে ফেলে।
১.৪. র্যাপিডস বা জলপ্রপাতের পাদদেশে নদীর পানিতে স্থানীয় ভাবে অনেক ........সৃষ্টি হয়।
১.৫. প্রাথমিক ভ‚মির ......... জন্য সর্বদাই নদীর কোনো কোনো স্থানে বাঁকের সৃষ্টি হয়।
১.৬. আমেরিকান ভ‚-বিজ্ঞানী এম, ডেভিস প্রথম ...... ধারণা ভ‚মিরূপের বিবর্তনে বিশেষ
গুরুত্ব লাভ করে।
১.৭. নদী তার ভার চারটি প্রক্রিয়ায় বহন করে। যেমন- (১) দ্রবণ প্রক্রিয়ায়,
(২) ............অবস্থায় বহন, (৩) লম্ফ প্রক্রিয়ায় বহন ও (৪) আকর্ষণ বা টানের মাধ্যমে
বহন।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :
১. নদীর প্রাথমিক গতিতে কি কি ধরণের ভ‚মিরূপের সৃষ্টি হয়।
২. নদীর মধ্য ও নিম্ন গতিতে কি প্রকারের ভ‚মিরূপ গঠিত হয়।
৩. স্বাভাবিক ক্ষয়চক্র বলতে কি বোঝায়?
রচনামূলক প্রশ্ন :
১. বিভিন্ন গতিতে নদীর ক্ষয়জাত ভ‚মিরূপের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করুন।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ