প্রাকৃতিক ভূগোল কি?
বাস্তব্যবিদ্যা পাঠের মূল লক্ষ্য কি?
মানচিত্রাঙ্কন বিদ্যা কি?


 ভ‚গোল ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি;
 বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের প্রকৃতি সম্পর্কে।
ক. পারিসরিক রূপাদর্শ বা প্যাটার্নসমূহ
সাধারণত: ভ‚গোলে নি¤œলিখিত তিনটি মৌলিক মাত্রা নিয়ে আলোচনা করা হয়:
১. বিন্দুসমূহ (০ ব্যাপ্তি বা মাত্রা)
২. রেখা সমূহ (১ মাত্রা)
৩. এলাকা সমূহ (দ্বিমাত্রিক)
৪. তল বা পৃষ্ঠ সমূহ (ত্রিমাত্রিক)
৫. সময়
এ পর্যায়ে ভ‚গোলবিদরা সচরাচর উপরে বর্ণিত প্রথম তিনটির শিরোনাম অনুসারে পৃথিবী পৃষ্ঠের
প্রকৃত বিষয়বস্তুর পারিসরিক বিস্তরণ বর্ণনা করেন। উদাহরণ স্বরূপ, ২.৩.১ চিত্রের বাংলাদেশের
কোন একটি এলাকার বিন্দুবন্টন পদ্ধতিতে খামার, রেখা রৈখিক বন্টন পদ্ধতি দিয়ে রাস্তা, নদী
এবং আঞ্চলিক সীমানা এবং অঞ্চলের বৃহত্তর এলাকাব্যাপী দ্বিমাত্রিক তালি পদ্ধতিতে গ্রামসমূহকে
দেখানো হয়েছে।
১. বিন্দুরূপাদর্শ বা প্যাটার্ন: আমরা জানি যে, জাতীয় গ্রীড বা গ্রহ্নি অনুসরণ করে পৃথিবী পৃষ্ঠের
উপরিভাগে অবস্থিত প্রত্যেকটি বিন্দুর অবস্থান নির্ণয় করা যায়। বিন্দুমানচিত্র এক বিন্দুথেকে অন্য
বিন্দুর আপেক্ষিক অবস্থানও বর্ণনা করতে সাহায্য করে। এ জন্যে দুটি মৌলিক ধারণা “দূরত্ব”
এবং “দিক” ভৌগোলিক মতবাদের সাথে জড়িত।
গুচ্ছাকারের মাত্রা অনুসারে বিন্দুরূপাদর্শ বা প্যাটার্ণসমূহ বর্ণনা করা যায়- কোন একটি স্কেলে
অবস্থান সম্পূর্ন গুচ্ছাকার থেকে বিন্যাসকৃত অথবা সুষম আকার ধারণ করতে পারে (চিত্র ২.৩.২
এবং চিত্র ২.৩.৩)। অনেকসময় কোন বিশেষ প্যাটার্ন বা রূপাদর্শ সুষম বা গুচ্ছাকার বলে ধারণা
করতে অসুবিধা হয়। এ সব ক্ষেত্রে আমাদের নিশ্চিত হতে হবে যে, এই প্যাটার্নটি এলোমেলো বা
অক্রম নয়। একটি অক্রম বিন্দুপ্যাটার্ন এমন, যেখানে মানচিত্রের যে কোন অবস্থানে একটি
বিন্দুমাত্রের জায়গা ঐস্থানে হওয়ার সমপরিমাণ সম্ভাবনা থাকে (চিত্র ২.৩.৪)। উদাহরণ স্বরূপ
একটি শহরের কথা বলা যায়। দৈবচায়িতথেকে ব্যতিক্রমের সঠিক মূল্যায়নের জন্য প্যাটার্ন বা
রূপাদর্শ সম্পর্কিত আকারগত পরিমাপের ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়।
পারিসরিক বিস্তরণ, তালি
পদ্ধতিতে।
দূরত্ব ও দিক আপেক্ষিক
অবস্থান।
প্যাটার্নটি এলোমেলো বা
অক্রম নয়।

চিত্র ২.৩.১ : রূপাদর্শ বা প্যাটার্ন(বিন্দুবন্টন পদ্ধতি)
সূত্র: ভ‚গোল দৃষ্টিভঙ্গি ও দর্শন (আমিনুল ইসলাম, এম., পৃষ্ঠা ৫৪)



সূত্র: ভ‚গোল দৃষ্টিভঙ্গি ও দর্শন (আমিনুল ইসলাম, এম., পৃষ্ঠা ৫৩)
বিন্দুরূপাদর্শ বা প্যাটার্ণের উপকারীতা কি কি?
২. রৈখিক প্যাটার্ন বা রূপাদর্শ: রাস্তা, রেলপথ, নদী প্রভৃতি দৃশ্যমান বিষয়সমূহ তুলে ধরার উদ্দেশ্যে
একক হিসাবে রেখা ব্যবহৃত হয়। এ ক্ষেত্রেও স্কেল সম্পর্কিত সমস্যা লক্ষ্য করা যায় এই কারণে
যে, অনেক নদী বেশ কয়েক মাইল/কিলোমিটার প্রশস্ত হতে পারে বিধায় স্থানীয় মানচিত্রে
“এলাকা” হিসেবে প্রতিভাত হতে পারে। পদ্ধতিগতভাবে একজন বিন্দুঅবস্থানের পরিমাপনের
সদৃশ পন্থায় রেখার অবস্থান পরিমাপ করতে পারেন, কিন্তুরেখা যদি মোটামুটি সাধারণ আকৃতির
না হয়, অথবা যদি সোজা না হয়, তাহলে অনুশীলনের ক্ষেত্রে দুরূহ হতে পারে। রেখার দৈর্ঘ্য
পরিমাপ সহজতর হয় বিধায় মানচিত্রে অথবা বাস্তবজগতে নির্দিষ্ট করা যায়।
রৈখিক প্যাটার্ণ বলতে কি বোঝেন?
স্কেল সম্পর্কিত সমস্যা,
স্থানীয় মানচিত্র, আবস্থান
পরিমাপ।

৩. স্থানিক রূপাদর্শ বা প্যাটার্ন: ভৌগোলিক গবেষণার একটি বড় অনুপাত এলাকা বা স্থানসমূহকে
এক একটি একক হিসাবে ব্যবহার করা। এককসমূহ স্বাভাবিকভাবে সীমা নির্দেশিত হতে পারে,
যেমন, দ্বীপসমূহের বেলায়; আবার রাজনৈতিক একক হিসাবে যারা ভ‚গোলবিদ নন, তাদের দ্বারা
বিশেষভাবে সংজ্ঞায়িত হতে পারে, অথবা গবেষণার উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ভ‚গোলবিদদের দ্বারা
অন্যভাবে সংজ্ঞায়িত হতে পারে। সে যাই হোক, ভ‚গোলবিদগণ স্থানিক বা এলাকাভিত্তিক
এককগুলোর অবস্থান, আয়তন এবং আকার সম্পর্কে আগ্রহী। যদিও এসবই বলতে গেলে
প্রাত্যহিক ধারণা, তবুও তাদের প্রয়োজনীয় পরিমাপনের বিকাশ সাধন করা খুব সহজ নয়।
স্থানসমূহের একক বলতে কি বুঝেন?
আয়তন সম্পর্কে অনুশীলন সবচেয়ে সহজ বলে আমরা জানি এবং একর/হেক্টর বা বর্গমাইল/বর্গ
কিলোমিটার প্রভৃতি পরিমাপ করা বহুদিন ধরে ভ‚গোলবিদদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত। এছাড়াও
এলাকার আয়তনের পরিমাপসমূহ নানাবিধ বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিশেষ বিশেষ ধারণার সৃস্টি
করেছে: যেমন- ঘনত্ব (লোকসংখ্যা প্রতি বর্গমাইল/কিলোমিটার); সড়ক ঘনত্ব (মাইল/কিলোমিটার
রাস্তা প্রতি বর্গমাইল/কিলোমিটার)। বাস্তব অনুশীলনের ক্ষেত্রে এলাকাটি নিয়মিত আকৃতি বিশিষ্ট
হয় (ত্রিভুজাকার, আয়তাকার বা বৃত্তাকার) তখনই ভ‚মিপৃষ্ঠে আয়তনের পরিমাপন সহজ হয়।
কেবলমাত্র এরূপ ক্ষেত্রেই দৈর্ঘের পরিমাপ আয়তনের পরিমাপে রূপান্তরিত করা সম্ভবপর হয়। যদি
এলাকাটি অনিয়মিত আকৃতি বিশিষ্ট হয়, সেক্ষেত্রে এই এলাকার আয়তন আরো সুবিধাজনকভাবে
পরিমাপ করা যায়।
আয়তন এবং এলাকার এককসমূহ কি কি?
খ) ভ‚গোল ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি
১. তত্ত¡, কল্পনা ও নিয়ম : তত্তে¡র পরম লক্ষ্য হল দৃশ্যমান বিষয়সমূহের ব্যাখ্যা প্রদান করা ও
তাদের সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করা। অন্য কথায় বলা যায় তত্ত¡ আসলে চলকসমূহের সম্বন্ধের এক
প্রস্থ আনুপূর্বিক বর্ণনা যা কিছুমাত্রার আস্থায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তুএকটি তত্ত¡ অবশ্যই সম্বন্ধসমূহ
ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হবে এবং ভবিষ্যৎবাণী করার মানসম্পন্ন হবে।
তত্তে¡র বিপরীতে প্রকল্পনাকে অনেক বেশী সাময়িক বলে ধারণা করা হয়। প্রকল্পনাকে দুই বা
ততোধিক চলকের মধ্যে সম্বন্ধ বিবেচনাকারী “অনুমানমূলক বক্তব্য” হিসাবে দেখা যায়। আমরা
প্রকল্পনাকে দুই বা ততোধিক দৃশ্যমান বিষয়ের মধ্যে সম্বন্ধের বক্তব্য হিসেবে ধরে নিতে পারি এবং
এই বক্তব্যকে এমনভাবে শব্দে প্রকাশিত করা সম্ভব যাতে সম্বন্ধের দিক ও শক্তি পরীক্ষা করা যায়।
কল্পনা কি?
গ) বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের প্রকৃতি
১. আরোহ ও অবরোহ: বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান জ্ঞান তিনভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে।
প্রথমত: পূর্ববর্তী সঞ্চিত জ্ঞানের উপর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি স্থাপন করে; দ্বিতীয়ত: নতুন জ্ঞানের
সংযোজন করে; এবং তৃতীয়ত: আরও দূর কল্পনা ও অনুসন্ধানের জন্য প্রশ্নসমূহ উত্থাপন করে।
স্বাভাবিকভাবে সীমা
নির্দেশিত। দ্বীপ, রাজনৈতিক
একক, গবেষণার উদ্দেশ্য।
স্থানিক বা এলাকাভিত্তিক
একক।
বাস্তব অনুশীলন, দৈর্ঘ্যরে
পরিমাপ আয়তনের পরিমাপে
রূপান্তর।
তত্ত¡, কল্পনা, নিয়ম ব্যাখ্যা ও
ভবিষ্যতবাণী।
বৈজ্ঞানিক ভিত্তি, নতুন জ্ঞান,
দূরকল্পনা ও অনুসন্ধান।

তত্ত¡ স্থাপনের জন্য দুই প্রকারের যুক্তি প্রস্তাব করা হয়। আরোহ (প্রস্তাবনা) এবং অবরোহ
(সিদ্ধান্ত)। সিদ্ধান্ত বা অবরোহ একটি প্রক্রিয়া যা সর্বজনীন অথবা সাধারণীকরণ থেকে একটি
নির্দিষ্ট উদাহরণে উপনীত হওয়ার যুক্তি যোগায়- অর্থাৎ অমূর্ত থেকে মূর্ততে উপনীত হয়। উদাহরণ
হিসাবে বলা যায়, প্রকল্প সমূহ তত্ত¡ থেকে সিদ্ধান্ত অনুমান করে। পক্ষান্তরে আরোহ একটি প্রক্রিয়া
যা নির্দিষ্ট থেকে সার্বজনীনে উপনীত হওয়ার যুক্তি যোগায় অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে বাস্তব বা মূর্ত থেকে
অমূর্ত প্রক্রিয়া বোঝায়। প্রকল্পসমূহ পর্যবেক্ষন থেকে যেমন অন্তর্ভুক্ত করা যায়। সেরকম তত্ত¡ সমুহ
থেকে ও অনুমান করা যেতে পারে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, কেবলমাত্র আরোহ
পদ্ধতিতে তত্ত¡সমূহে উপনীত হওয়া যায়।
ঘ) পর্যবেক্ষন, প্রকল্পনা ও তত্তে¡র মধ্যে সম্পর্কসমূহ
চিত্র ২.৩.৫ তে পর্যবেক্ষণ, প্রকল্পনা ও তত্তে¡র মধ্যে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। বিভিন্ন প্রকার
প্রকল্পনা পরীক্ষার জন্য পর্যবেক্ষন সমূহ ব্যবহার করা যেতে পারে যা পালাক্রমে একটি তত্ত¡ নিশ্চিত
করতে সহায়ক হতে পারে। ধারাবাহিক পর্যবেক্ষনসমূহের বিবেচনার জন্য আরোহীমূলকভাবে
প্রকল্পসমূহ উদ্ভুত হতে পারে; অথবা অবরোহী মূলক ভাবে, যদি প্রস্তাবিত তত্ত¡ প্রকৃতপক্ষে সঠিক
হতো তাহলে আগে থেকে আশানুরূপ ফলশ্রæতির ভিত্তিতে প্রকল্প নির্ধারণ করা যেতে পারে। আরোহ
ও অবরোহ প্রক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ে এটি একটি ত্রট্টটি যা উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করা যেতে
পারে, বিশেষ করে একটি পদ্ধতিতে যা উভয় প্রকার যুক্তির সমন¦য়ের জন্য পরিকল্পনা করা হয়
তাতে, এ ত্রæটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
চিত্র ২.৩.৫ : পর্যবেক্ষন, প্রকল্প ও তত্তে¡র পারস্পরিক স্পর্শকসমূহ
সূত্র: ভ‚গোল দৃষ্টিভঙ্গি ও দর্শন (আমিনুল ইসলাম, এম., পৃষ্ঠা ৬৪)
পাঠ সংক্ষেপ
ভৌগোলিক পরিমাপের একক সমূহকেই প্যাটার্ন বা রূপাদর্শ বলে। ভ‚গোল শিক্ষার মানগত ও
গুনগত উৎকর্ষ সাধনই পারিসরিক রূপাদর্শের উদ্দেশ্য। কোন একটি বিশেষ এলাকার বা
অঞ্চলের সম্যক ধারণা পাওয়া যায় এই রূপাদর্শ বা প্যাটার্নের মাধ্যমে।
প্রস্তাবনা, সিদ্ধান্ত, মূর্ত,
অমূর্ত।
বিভিন্ন প্রকার প্রকল্পনা
পরীক্ষার জন্য পর্যবেক্ষণসমূহ
ব্যবহার করা যায়।

নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
১. সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন (সময়- ৫ মিনিট) ঃ
১.১ ভ‚গোলে কয়টি মৌলিক মাত্রা নিয়ে আলোচিত হয়
ক. ৪টি খ. ৩টি
গ. ২টি ঘ. ৫টি
১.২ পৃথিবী পৃষ্ঠের প্রত্যেকটি বিন্দুর অবস্থান নির্ণয় করা যায় কিসের সাহায্যে
ক. রেখাদর্শ খ. ক্যামেরায়
গ. গ্রীডের ঘ. ছবি এঁকে
১.৩ বিন্দুর রূপাদর্শ প্রকাশ করা হয়ক. গুচ্ছাকারে খ. সজ্জিতভাবে
গ. বিচ্ছিন্নভাবে ঘ. কোনভাবে
১.৪ কল্পনা কি?
ক. ভাবনা খ. অনুসন্ধানমূলক বক্তব্য
গ. অনুমানমূলক বক্তব্য ঘ. পরীক্ষার ফল
১.৫ বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান কয়ভাবে সাহায্য করেক. ৩ ভাবে খ. ৪ ভাবে
গ. ৫ ভাবে ঘ. ১০ ভাবে
সংক্ষিপ্ত উত্তর দিন (সময় ৬ মিনিট) ঃ
১. পারিসরিক রূপাদর্শ বা প্যাটার্নসমূহ কি কি?
২. বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান জ্ঞান কিভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে।
৩. বিভিন্ন প্রকার প্রকল্পনা পরীক্ষার জন্য কি ব্যবহার করা যায়?
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
৩. পারিসরিক বিশ্লেষন দৃষ্টিভঙ্গির মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে আলোচনা করুন।

এই পাঠ শেষে যা যা জানতে পারবেন-
 ভ‚-বিজ্ঞান দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ;
 ভ‚-বিজ্ঞান দৃষ্টিভঙ্গির উপাদানসমূহ;
 মানচিত্র পঠন;
 মানচিত্র অংকনের ইতিহাস সম্পর্কে।

ক) ভ‚-বিজ্ঞান দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ: সুদূর অতীতে ভ‚-বিজ্ঞানের সূত্র নিহীত রয়েছে। মানব-পরিবেশ
ঐতিহ্যের সাথে এই দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্টভাবেই সম্পর্কযুক্ত ছিল। ১৯২০-এর দশকের দিকে
ভ‚গোলবিদদের দৃষ্টি পরিবেশবাদ থেকে ভিন্নপথে প্রবাহিত হয়। পরিবেশবাদের সূত্রপাত হয়েছিল
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে বিশ দশকের আগে এবং ঘটনাক্রমে ১৯৩০ দশকের দিকে সম্পূর্ণভাবে
পরিত্যাজ্য হয় এবং মানবিক ও প্রাকৃতিক ভ‚গোলবিদরা ক্রমান¦য়ে ভিন্ন স্রোতে প্রবাহিত হতে
থাকেন। ১৯৪০ ও ১৯৫০-এর দশকে সম্পূর্ণ সংযোগচ্যুত হয়ে পড়েন।
১. পরিবেশগত বিপ্লব: উন্নয়ন প্রচেষ্টায় পরিবেশের বিভিন্ন ব্যবহার সম্পর্কিত মানুষের সিদ্ধান্ত জ্ঞাত
অথবা অজ্ঞাতসারে যেভাবেই হোক না কেন প্রতিক‚ল পরিবেশের/প্রভাবের সৃষ্টি করেছিল। সুতরাং
এসব পরিস্থিতির কারণে ১৯৬০ দশকের শেষে একটি বিপ্লব বা আন্দোলনের সূত্রপাত হয় যা
“ঈৎঁংধফব” নামে অভিহিত।
ঊহারৎড়হসবহঃধষ ঈৎঁংধফব বলতে কি বোঝেন?
পরিবেশগত বিশৃংখলা অথবা ভারসাম্যহীনতার বিরুদ্ধে শাণিত ঈৎঁংধফব-এর অংশ হিসাবে এবং
অধিকতর সুনির্দিষ্টভাবে পরিবেশগত কাঠামো পরিবর্তনকারী ভ‚-প্রক্রিয়া সমূহ সম্পর্কে অধিকতর
জ্ঞান অর্জনের জন্য ভ‚গোলবিদরা ভ‚-বিজ্ঞান গবেষণার বিশেষজ্ঞসুলভ জ্ঞান বিকাশে ক্রমবর্ধমান
হারে উৎসাহিত হন।
২. ভ‚-বিজ্ঞান দৃষ্টিভঙ্গির প্রকৃতি: মানুষ এবং পৃথিবী উভয়ের অন্তভর্‚ক্তিসহ অধিকতর সমনি¦ত একটি
কাঠামো ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিবেশের অংঙ্গসমূহকে একটি সিস্টেম হিসাবে অধ্যয়ন শুরু হয়। আরো
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, এ সময় থেকেই ভ‚-বিজ্ঞান দৃষ্টিভঙ্গি প্রাকৃতিক ও মানবিক ভ‚গোলের
মধ্যে ক্রমবর্ধমান ভিন্নমুখীতা পূরণ করতে সমর্থ হয়েছে। জাতীয় স্বার্থ চরিতার্থের প্রয়োজনে
অতীতে যারা পাঠক্রম পরিকল্পনা অথবা গবেষণা পরিচালনার সচেষ্ট হয়েছিলেন, তাঁদের জন্য
প্রাকৃতিক এবং মানবিক ভ‚গোলের মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্য অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরিবেশ
সম্পর্কিত বিষয়সমূহে ভ‚-তত্ত¡বিদ এবং বাস্তব্যবিদগণ ভ‚গোলবিদগণের সঙ্গে একযোগে কাজ করা
ফলদায়ক বলে মনে করেন। পরিবেশগত সমস্যায় ভ‚তত্ত¡বিদ এবং ভ‚গোলবিদদের মধ্যে একটি
নিবিড় কার্যকর সম্পর্ক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া সম্পর্কিত অনুসন্ধানের উপর গুরুত্বারোপ করে। এই
ফলশ্রæতিতে পরিবেশগত বিজ্ঞান ধারণার উ¤েœষ ঘটে। এরূপ দৃষ্টিভঙ্গিসহ কাজের দ্রæত সংখ্যা বৃদ্ধি
পরিবেশগত মূখ্য বিচার্য বিষয়াদির প্রাকৃতিক স্থিতিমানের পুন: পরীক্ষার দ্বার উদ্ঘটিত হয়।
ভ‚-বিজ্ঞান দৃষ্টিভঙ্গিটি কি?
১৯২০ দশকের দিকে।
পরিবেশগত ধারণার
সূত্রপাত।
ঈৎঁংধফব বিশেষজ্ঞ সুলভ
জ্ঞান বিকাশ।
ভ‚তত্ত¡বিদ, “পরিবেশগত
বিজ্ঞান ধারণা”

খ. ভ‚-বিজ্ঞান দৃষ্টিভঙ্গির উপাদানসমূহ
১. প্রাকৃতিক ভ‚গোল: গ্রীক ভাষা থেকে উদ্ভুত “ভ‚গোল” শব্দটির অর্থ “পৃথিবী সম্পর্কে লেখা”
হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। যদিও ভ‚গোল শব্দটির যথার্থ পদ্ধতিগত সংজ্ঞা প্রদান করা সম্ভব
নয়। ভ‚গোলবিদরা পৃথিবীর পটভ‚মিতে ভ‚মিরূপ, নিষ্কাষণ, জলবায়ু, উদ্ভিদ, মৃত্তিকা প্রভৃতির সাথে
কোন নিদিষ্ট এলাকার মিথষ্ক্রিয়া কিভাবে সাধিত হয় এবং ভ‚-পৃষ্ঠব্যাপী এই সমগ্র প্রাকৃতিক পরিবেশ
কিরূপে স্থানভেদে বিভিন্ন হয় তা অধ্যয়নের জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এই বিষয়টি ভ‚-আকৃতি
হিসাবে পরিচিত ছিল। সময়ের পরিবর্তনে বহু প্রাকৃতিক ভ‚গোলবিদকে পরিবেশের উপাদানসমূহের
সাথে জড়িত প্রক্রিয়াসমূহে অধিকতর দৃষ্টি দিতে দেখা যায়। পরিবেশের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াসমূহ এ
ক্ষেত্রে একটি বিশেষ ধারণার কেন্দ্র হিসাবে পরিগণিত হয়।
প্রাকৃতিক ভ‚গোল কি?
২. বাস্তব্যবিদ্যা মতবাদ: প্রাণীক‚ল ও প্রাণী জগতের সাথে পরিবেশের মিথষ্ক্রিয়া বাস্তব্যবিদ্যার
মূলকথা। পরিবেশকে জানা পরিবেশ থেকে শিক্ষা গ্রহণ এবং সর্বোপরি পরিবেশকে সম্পদ হিসাবে
গড়ে তোলার বিভিন্ন প্রক্রিয়াসমূহ বাস্তব্যবিদ্যা পাঠের মূল লক্ষ্য।
বাস্তব্যবিদ্যা পাঠের মূল লক্ষ্য কি?
বাস্তব্য বিদ্যার সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলো হলর. বাস্তব্যরীতি ধারণা বা মতবাদ;
রর. বাস্তব্যরীতিতে শক্তি সংবহন;
ররর. বাস্তব্যরীতিতে ভ‚জৈব-রাসায়নিক চক্র;
রা. পরিবেশের ধারণ ক্ষমতা এবং স্বাভাবিক আবাস;
া. প্রজাতির গণসংখ্যা বৃদ্ধি;
ার. সহনশীলতার পরিসর এবং সীমাবদ্ধ নিয়ন্ত্রকসমূহ;
ারর. পরিবেশগত সংরক্ষণ ইত্যাদি।
গ. মানচিত্র পঠন: পূর্বে ভ‚-বিজ্ঞান দৃষ্টিভঙ্গির অন্তর্নিহিত বিষয়সমূহে যা উল্লেখ করা হয়েছে তার
সঙ্গে মানচিত্রের বিশ্লেষণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। মানচিত্রসমূহ
ভৌগোলিক বিশ্লেষণের প্রারম্ভিক পর্যায় হিসাবে গণ্য করা যায়, কারণ মানচিত্রের ভাষা ও তার
গুনাগুন উপলব্ধি ছাড়া ভৌগোলিক অনুসন্ধান সম্পূর্ণ হয় না। সামগ্রিকভাবে মানচিত্রাঙ্কনবিদ্যা
ভ‚গোলের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
মানচিত্রাংকনবিদ্যা কি?
ঘ. মানচিত্র অংকনের ইতিহাস: এ পর্যন্ত জানা মানচিত্রগুলোর মধ্যে প্রাচীনতম হচ্ছে আনুমানিক
খ্রীষ্টপূর্ব ৩৮০০ অব্দের কর্দম ফলক যা “ব্যবিলনীয় কর্দম ফলক মানচিত্র” নামে খ্যাত। খ্রীষ্টপূর্ব
৩০০০ অব্দেরও পূর্বে ভ‚মি পরিমাপ এবং জরিপ সংক্রান্ত কলাকৌশল মিশরে ব্যবহৃত হত এবং
নিয়মিত ব্যবধানে নীলনদের বন্যার প্রভাবে ভ‚-সম্পত্তির সীমানা চিহ্ন বিধৌত হলে সেগুলোর
সীমানা পুনরায় চিহ্নিত করার প্রয়োজনে মানচিত্র তৈরি করা হতো। চৈনিক ইতিহাসে খ্রীষ্টপূর্ব ২২৭
“পৃথিবী সম্পর্কে লেখা” ভ‚-
আকৃতি।
মিথস্ক্রিয়া, বাস্তববিদ্যা।
মানচিত্রের ভাষা ও তার
গুণাগুন উপলব্ধি।
খ্রীষ্টপূর্ব ৩৮০০ অব্দের
কর্দমফলক।

অব্দে প্রাচীনতম মানচিত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়। মানচিত্র অংকনের ইতিহাসকে দুইভাবে ভাগ করা
যায়। যথা১. মধ্যযুগ: মুসলমানদের বিদ্যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল ১১৫৪ সালে তৈরি “আল
ইদ্রিসীর” মানচিত্র। মানচিত্রটি প্রায় আয়তক্ষেত্রাকার অভিক্ষেপের উপর ভিত্তি করে অংকন করা
হয়েছিল। তথ্যের দিক দিয়ে এই মানচিত্রটির এশিয়া অংশ যথেষ্ট নির্ভুল ছিল। এতে কাস্পিয়ান ও
আরব সাগরদ্বয় সঠিকভাবে দেখানো হয়েছিল। মুসলমানদের মানচিত্রসমূহের সাধারণ বৈশিষ্ট্য
অনুসরণ করে এই মানচিত্রটির উপরের দিক দক্ষিণ এবং নিচের দিকে উত্তর প্রদর্শিত হয়েছিল।
২. আধুনিক যুগ: আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক মানচিত্রাংকনের উৎস সপ্তদশ শতাব্দীতে নিহিত রয়েছে।
রেনেসাঁ যুগে বহু বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিকাশের ধারায় সঠিক মানচিত্রাংকন প্রণালী উদ্ভাবনের প্রচুর
উৎসাহের সৃষ্টি হয়। প্রসংগত উল্লেখ্য যে, রেনেসাঁ যুগে, অর্থাৎ ১৪শ-১৬শ শতাব্দীতে প্রাচীন
(বিশেষত, প্রাচীন গ্রীক ও ল্যাটিন) সাহিত্য ও শিল্পের পুনরভ‚্যদয়ের প্রভাবে ইউরোপীয় সাহিত্য ও
শিল্পের নবজীবন লাভ ঘটে।
যে ঘটনাসমূহ মানচিত্রাংকনবিদ্যার উৎকর্ষ সাধন করে তার মধ্যে (ক) মুদ্রণ এবং খোদাই কার্যের
কলাকৌশলের উন্নতি বিধান (খ) টলেমির প্রশ্নের (এবড়মৎধঢ়যরধ) পুন: আবিষ্কার যা আরবরা
সযতেœ ধারণ করেছিল; এবং (গ) আবিষ্কারের মহাভিযান সমূহের দ্বারা কতিপয় উদ্ভাবনের সৃষ্টি
(বিশেষ করে ১৪৯২ খ্রীষ্টাব্দে মার্টিন বেহাইমের তৈরি ভ‚-গোলক, যার অনুসরণপূর্বক কলম্বাসের
আমেরিকা আবিস্কার সম্ভব হয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য)। এছাড়াও দূরবর্তী অঞ্চলে সমুদ্রাভিযানের
ক্ষেত্রে কলম্বাসের উদ্ভাবন যথেষ্ট প্রেরণাদায়ক হয়।
কি কি কারণে মানচিত্রাংকন বিদ্যার উৎকর্ষ সাধিত হয়?
পাঠ সংক্ষেপ
প্রকৃতপক্ষে মানব পরিবেশ বিদ্যার সাথেই ভ‚বিজ্ঞানের ধারণাসূহ বিস্তার লাভ করে। আর ভ‚-
বিদদের মধ্যে ভ‚বিজ্ঞানের জ্ঞান বিশ দশকের শেষের দিক থেকেই বেশী বিকাশ লাভ করতে
থাকে। তখন থেকেই পরিবেশগত বিপ্লব, প্রাকৃতিক ও মানবিক ভ‚গোলের তারতম্য এবং
বাস্তব্যবিদ্যার মত ভিন্নমূখী বিষয়সমূহ ভ‚বিদদের চিন্তার বিষয়ে পরিণত হয়। উক্ত
বিষয়সমূহের ধারাবাহিক সচিত্র জ্ঞান আহরণের জন্য ভ‚বিদগণ প্রাগঐতিহাসিক চৈনিক
মানচিত্রবিদ্যার প্রতি আকৃষ্ট হন এবং ক্রমাগতভাবে এখন ভ‚গোল, মানব-উন্নয়ন এবং
মানচিত্রবিদ্যা অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত হয়ে পড়ে। আর ভৌগোলিক দৃষ্টিভঙ্গিসমূহও দিনে দিনে
মানুষের কাছে স্পষ্টতর হয়ে ওঠে।
“আল ইদ্রিসীয় মানচিত্র”আয়তক্ষেত্রাকার অভিক্ষেপ।
রেনেসাঁ যুগ ১৪শ-১৬শ
শতাব্দী। আধুনিক
মানচিত্রাংকন এর উৎস
সপ্তদশ শতাব্দীতে।
মুদ্রণ এবং খোদাই, টলেমির
প্রশ্ন, উদ্ভাবনের সৃষ্টি।

পাঠোত্তর মূল্যায়ন ঃ
১. সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন (সময়- ৪ মিনিট) ঃ
১.১ ভ‚গোলবিদদের দৃষ্টি কখন পরিবেশবাদ থেকে ভিন্ন পথে প্রবাহিত হয়?
ক. ১৯২০ দশকের দিকে খ. ১৯৩০ দশকের দিকে
গ. অষ্টাদশ শতকে ঘ. বিংশ শতকে
১.২ মানবিক ও প্রাকৃতিক ভ‚গোল-এর পার্থক্য
ক. বেশি খ. কম
গ. কোন পার্থক্য নেই ঘ. মাঝামাঝি
১.৩ ভ‚গোল শব্দের অর্থ-
ক. নিজেকে জানা খ. পৃথিবীকে জানা
গ. পৃথিবী সম্পর্কে লেখা ঘ. সাগরকে প্রদক্ষিণ করা
১.৪ মানচিত্রের উৎপত্তিক. মিশরীয় সভ্যতায় খ. ব্যাবিলনীয় সভ্যতায়
গ. ইংরেজ সভ্যতায় ঘ. ভারতীয় সভ্যতায়
সংক্ষিপ্ত উত্তর দিন (সময় ১০ মিনিট) ঃ
১. কোন সময় "ঈৎঁংধফব" হয়?
২. প্রাকৃতিক ভ‚গোল কি?
৩. বাস্তব্যবিদ্যা পাঠের মূল লক্ষ্য কি?
৪. মানচিত্রাঙ্কন বিদ্যা কি?
৫. কি কি কারণে মানচিত্রাঙ্কনবিদ্যার উৎকর্ষ সাধিত হয়?
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১. ভ‚-বিজ্ঞান দৃষ্টিভঙ্গির মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]