বিভিন্ন প্রকার হিমবাহের এবং হিমবাহের কাজের বর্ণনা দিন।
মহাদেশীয় হিমবাহ
উপত্যকা হিমবাহ
হিমবাহের কার্য কি কি?


হিমবাহের প্রকারভেদ
উৎস ও অবস্থান অনুসারে হিমবাহকে চার শ্রেণীতে ভাগ করা যায় :
১। মহাদেশীয় হিমবাহ (ঈড়হঃরহবহধঃধষ এষধপরবৎ বা ওপব ঝযববঃ)
২। উপত্যকা হিমবাহ (ঠধষষবু এষধপরবৎ)।
৩। তুষার মুকুট (ওপব ঈধঢ়)।
৪। পাদদেশীয় হিমবাহ (চরফসড়হঃ এষধপরবৎ)।
১. মহাদেশীয় হিমবাহ : সুমেরু-সন্নিহিত গ্রীনল্যান্ড ও কুমেরু-সন্নিহিত এন্টার্কটিকা মহাদেশের
চারি পার্শ্বে পর্বত বেষ্টিত বিশাল অঞ্চল ব্যাপী যে বরফস্তুপ দেখা যায়, তাকে মহাদেশীয়
হিমবাহ বলে। এ মহাদেশীয় হিমবাহ পৃথিবীর স্থল ভাগের প্রায় ১/১০ ভাগ অঞ্চল অধিকার
করে আছে এবং সমুদ্রের এক বিশাল জলরাশিকে ভ‚-ভাগে আটকে রেখেছে। তা না হলে এ
বিশাল পরিমাণ জলরাশি সমুদ্রে অবস্থান করে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা আরও ৫৫ মিটার বেড়ে
যেত। এ মহাদেশীয় বরফ স্তুপ পূর্বে কোয়ার্টারনারী বরফ যুগে (ছঁধঃবৎহধৎু ওপব অমব) আরও
অধিক বিস্তৃত হয়ে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশের উত্তর দিকের এক বিশাল
অংশকে আবৃত করেছিল। বর্তমানে গ্রীণল্যান্ড ও আন্টার্কটিকা মহাদেশের বরফ স্তুপ
কোয়ার্টারনারী বরফ-যুগের অবশিষ্টাংশ রূপে অবস্থান করছে।
্আণ্টর্কটিকা (অহঃধৎপঃরপধ) : মহাদেশীয় হিমবাহ গ্রীনল্যান্ডের মহাদেশীয় হিমবাহ অপেক্ষা
প্রায় ৮ গুণের অধিক এলাকায় বিস্তৃত। এটি বরফের একটি সুউচ্চ মালভ‚মিরূপে ৪,২৫৪ মি.
অধিক উঁচু হয়ে প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ বর্গ কি.মি. স্থান ব্যাপী অবস্থান করছে। প্রান্তদেশে
কোনো কোনো স্থানে পাহাড় বা উপক‚ল ভ‚মি ভিন্ন এ বরফ স্তুপ উপক‚ল ভাগ অতিক্রম করে
সমূদ্রের জলরাশির মধ্যে ভাসমান বরফের তাক বা শেলফের (ঋষড়ধঃরহম ওপব ঝযবষভ) ১৫০০
থেকে ১৫০০
পঃ দ্রাঘিমার মধ্যে বিস্তার লাভ করেছে।
গ্রীনল্যান্ড (এৎববহষধহফ) : গ্রীনল্যান্ডের প্রায় ১৫ লক্ষ বর্গ কি.মি. অঞ্চলে মহাদেশীয় হিমবাহ
পর্বত বেষ্টিত হয়ে অবস্থান করছে। এ হিমবাহের মধ্যভাগে বরফের গভীরতা প্রায় ৩,০৪৮
মিটার। ফলে বরফাবৃত এলাকাটির মধ্যভাগ বরফ রাশির প্রচন্ড চাপের ফলে সমূদ্র পৃষ্ঠের নিচে
নেমে গিয়ে সরার ন্যায় চার পাশ উঁচু এবং মধ্য ভাগ নিচু হয়ে অবস্থান করছে।
২. উপত্যকা হিমবাহ : হিমবাহ যখন উঁচু পর্বত গাত্রে উৎপন্ন হয়ে পাহাড়ের উপত্যকার ভেতর
দিয়ে নিচের দিকে নামতে থাকে, তখন তাকে উপত্যকা হিমবাহ বলে। উপত্যকার মধ্য দিয়ে
প্রবাহিত হয় বলে এ জাতীয় হিমবাহকে উপত্যকা হিমবাহ বলা হয়। আবার এ প্রকার হিমবাহ
সর্ব প্রথম আল্পস পর্বতে দৃষ্ট হয়েছিল বলে একে আলপাইন (অষঢ়রহব) হিমবাহ বলে। এ
হিমবাহ অধিক বড় আকৃতির হয় না। এদের দৈর্ঘ্য সাধারণত ৪ বা ৫ কি.মি. মধ্যে সীমাবদ্ধ
থাকে এবং গভীরতা ৩-৫ মি. পর্যন্ত হয়।
পাঠ-৫.১১
৩. তুষারমুকুট : পর্বতের মাথার ওপরে বিভিন্ন চ‚ড়ায় ক্রমাগত তুষারপাতের ফলে বরফে আবৃত
থাকে। এগুলো বরফের টুপি পরে আছে বলে মনে হয়। তাই অনেক ভ‚-বিজ্ঞানী এ স্বল্প
বিস্তৃতি বরফাচ্ছাদিত পর্বত চ‚ড়াকে তুষারমুকুট (ওপব ঈধঢ়) বলে অভিহিত করেছেন।
৪. পাদদেশীয় হিমবাহ : পর্বত্য অঞ্চল হতে হিমবাহ যখন নিম্নদিকে পর্বতের পাদদেশ অঞ্চলে
সঞ্চিত হয়, তখন তাকে পাদদেশীয় হিমবাহ বলে। পাদদেশীয় হিমবাহের অগ্রভাগকে লোব
(খড়নব) বলা হয়। আলাস্কার সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত একটি বৃহৎ আকৃতির লোব রয়েছে। এর
উপরিভাগ বেশ সমতল, তবে তুষার রাশি কোনো কোনো স্থানে ৩০০ মি. পর্যন্ত গভীর।
আলাস্কার বিখ্যাত মালাসপিনা হিমবাহ (গধষধংঢ়রহধ এষধপরবৎ) গ্রীনল্যান্ডের পাদদেশীয়
হিমবাহের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এটি প্রায় ৩,৭৫০ বর্গ কি.মি. স্থান ব্যাপী বিস্তৃত। এছাড়া
আইসল্যান্ড, আন্টাটিকা প্রভৃতি শীতল পার্বত্য অঞ্চলেও এ জাতীয় হিমবাহ দেখতে পাওয়া
যায়।
হিমবাহের কার্য (ডড়ৎশ ড়ভ এষধপরবৎং) : নদী ও বায়ুর ন্যায় হিমবাহ ক্ষয়সাধন, বহন ও
অবক্ষেপন- এ তিন প্রকার কার্য করে থাকে। পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়কার্য সর্বাপেক্ষা
অধিক। বহন ও অবক্ষেপন কার্য এর নিম্নাংশে সাধিত হয়। বিভিন্ন অবস্থায় হিমবাহের সমস্ত
কার্যকে গøাসিয়েশন (এষধপরধঃরড়হ) বলে।
ক্ষয়কার্যের মাধ্যমে (অমবহঃং ড়ভ ঊৎড়ংরড়হ) : হিমবাহ সাধারণত কয়েকটি নিয়মে ভ‚-পৃষ্ঠের
ক্ষয়সাধন করে। যথা:
১) ঘর্ষন (অনৎধংরড়হ) : হিমবাহের ঘর্ষণে ভ‚-পৃষ্ঠের শিলারাশি চ‚র্ণ-বির্চর্ণ হয়। এ ক্রিয়া
হিমবাহের ওজন ও উর্ধ্বস্থ হিমাগারে চাপের দ্বারা সংঘটিত হয়।
২) আঁচড় কাটা (ঝপৎধঃপযরহম) : চলমান হিমবাহের তলদেশে বরফের সাথে সংযুক্ত যে
প্রস্তরখন্ডগুলো থাকে তাদের ঘর্ষণে উপত্যকার শিলারাশির ওপর ক্রমাগত আঁচড় পড়তে
থাকে। এরূপ আঁচড় পড়তে পড়তে শিলাসমূহ ক্ষয় হয়। হিমবাহের এ প্রকার ক্ষয়
ক্রিয়াকে ঘর্ষণ ক্রিয়া বলে।
৩) মসৃণ করা (চড়ষরংযরহম) : হিমবাহের তলদেশে সংযুক্ত প্রস্তরখন্ডসমূহ ভ‚-ক্ষয় এবং ঘর্ষণ
প্রক্রিয়ায় হিমবাহের উপত্যকার শিলা ক্রমাম্বয়ে মসৃণতা লাভ করে।
৪) উৎপাটন (চষঁপশরহম) : হিমবাহ বিধৌত অঞ্চলে দিন ও রাত্রির তাপমাত্রার বিরাট
পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। দিনের বেলায় বরফ গলে পানি ফাটলে প্রবেশ করে রাতে পানি
ফাটলের মধ্যে বরফে পরিণত হয়ে আয়তনে বৃদ্ধি পায়। ফলে পর্বতের ফাটল বা ছিদ্র
হতে পস্তরখন্ড বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রবাহিত হিমবাহের সাথে বহুদূরে নীত হয়, একে উৎপাটন
বলে।
উপরোক্ত পদ্ধতিসমূহের মাধ্যমে হিমবাহের দ্বারা ভ‚-পৃষ্ঠের ক্ষয় হয়। কিন্তু এ ক্ষয়সাধরন
আবার নিম্নোক্ত উপাদানসমূহের (নিয়ামক) ওপর অনেকাংশ নির্ভরশীল :
ক) হিমবাহের আকার : হিমবাহের আকারের ওপর ক্ষয়সাধন ক্রিয়া নির্ভরশীল। হিমবাহের
স্তুপ অধিক বড় হলে ক্ষয়সাধনও বেশী হবে। কিন্তু হিমবাহের আকার ছোট হলে
ক্ষয়সাধন খুবই কম হয়।
খ) হিমবাহের বহনকৃত পদার্থের পরিমাণ : চলমান হিমবাহের তলদেশে বরফের সঙ্গে
সংযুক্ত যে প্রস্তর খন্ডসমূহ থাকে তাদের ঘর্ষণে ভ‚-পৃষ্ঠ ক্ষয় হয়। এ প্রস্তরখন্ডসমূহের
পরিমাণ অধিক হলে এর ক্ষয়সাধন প্রবল হয়।
গ) হিমবাহের গতি : হিমবাহের গতি মন্থর হলে ক্ষয় খুবই কম হয়। কিন্তু পর্বত গাত্রে এর
গতি একটু বেশী বিধায় ক্ষয়সাধনও অনুরূপভাবে বৃদ্ধি পায়।
ঘ) হিমবাহের তলদেশের শিলার অবস্থা : হিমবাহ যে ভ‚মির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় সেই
ভ‚মি নরম শিলা দ্বারা গঠিত হলে এর ক্ষয়সাধন খুব বেশী হয়। কিন্তু ঐ শিলা কঠিন হলে
হিমবাহের দ্বার ক্ষয়সাধন খুবই কম হয়।
পাঠসংক্ষেপ:
উৎপত্তি ও অবস্থান অনুযায়ী হিমবাহকে চার শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। মহাদেশীয়
হিমবাহ স্থলভাগের প্রায় শতকরা ১০ ভাগ অঞ্চল অধিকার করে আছে। বর্তমানে
আন্টার্কটিকা ও গ্রীনল্যান্ড কোয়ার্টারনারী বরফ যুগের অবশিষ্টাংশরূপে অবস্থান করছে।
পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়কার্য সর্বাপেক্ষা অধিক। হিমবাহ ঘর্ষণ, আঁচড়ান, মসৃন
করা ও উৎপাটন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভ‚-পৃষ্ঠের ক্ষয়সাধন করে থাকে। হিমবাহের ক্ষয়সাধন
নিম্নোক্ত উপাদান সমূহের ওপর নির্ভর করে। যথা-(১) হিমবাহের আকার, (২) বহনকৃত
পদার্থের পরিমাণ। (৩) হিমবাহের গতি ও (৪) হিমবাহের তলদেশে শিলার অবস্থা।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন: ৫.১১
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন :
১. শূণ্যস্থানপূরণ করুন :
১.১. উৎপত্তি ও অবস্থান অনুযায়ী হিমবাহকে ..........শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে।
১.২. আন্টার্কটিকা মহাদেশীয় হিমবাহ গ্রীনল্যান্ডের মহাদেশীয় হিমবাহ অপেক্ষা প্রায় ........
গুণের অধিক এলাকায় বিস্তৃত।
১.৩. পার্বত্য অঞ্চল হতে হিমবাহ যখন নিম্নদিকে পর্বতের পাদদেশ অঞ্চলে সঞ্চিত হয়, তখন
তাকে ........... হিমবাহ বলে।
১.৪. হিমবাহ বিধৌত অঞ্চলে দিন ও রাত্রির ......... বিরাট পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
১.৫. হিমবাহের গতি মন্থর হলে ........... খুবই কম হয়।
১.৬. পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়কার্য সর্বাপেক্ষা................।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :
১. হিমবাহকে কয় ভাগে ভাগ করা হয়?
২. মহাদেশীয় হিমবাহ কাকে বলে?
৩. উপত্যকা হিমবাহ কাকে বলে?
৪. হিমবাহের কার্য কি কি?
৫. হিমবাহর দ্বারা ক্ষয়সাধন যে সমস্ত নিয়ামকের উপর নির্ভর করে সেগুলো কি কি?
৬. হিমবাহ কি কি কাজ করে থাকে?
৭. পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহ কোন কাজটি সর্বাধিক করে থাকে?
রচনামূলক প্রশ্ন :
১. বিভিন্ন প্রকার হিমবাহের এবং হিমবাহের কাজের বর্ণনা দিন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]