শুষ্ক ও শুষ্ক প্রায় অঞ্চলে ভ‚মিরূপ গঠনে বায়ুর প্রাধান্যের কারণ কি? পৃথিবীর মরু অঞ্চল


বায়ু ও বায়ুর ক্ষয়জাত ভ‚মিরূপ
শুষ্ক বা প্রায় শুষ্ক অঞ্চলে বায়ুর কাজ ভ‚মিরূপ সৃষ্টিতে অপেক্ষাকৃত বেশী গুরুত্ব অর্জন করে।
এর নানাবিধ কারণ রয়েছে। যেমন,
প্রথমত: আর্দ্র অঞ্চলে বেশী বৃষ্টিপাতের জন্য মৃত্তিকা অপেক্ষাকৃত ভিজে থাকে ও মৃত্তিকা কণা
পানির দ্বারা দৃঢ় সংঘবৃদ্ধ থাকে। ফলে বায়ু মৃত্তিকা বা বিচ‚র্ণীভ‚ত পদার্থ সহজে অপসারিত
করতে পারে না।
কিন্তু শুষ্ক অঞ্চলে মৃত্তিকা বা বিচ‚র্ণীভ‚ত পদার্থ সহজেই বায়ু অপসারিত করতে পারে।
দ্বিতীয়ত: আর্দ্র অঞ্চলে স্বাভাবিক উদ্ভিদ ও শস্যের আবরণ বেশী থাকে। ফলে উদ্ভিদের শিকড়
মাটিকে ধরে রাখে, কিন্তু মরুভ‚মি অঞ্চলে উদ্ভিদের বিরল আবরণের জন্য ভ‚-পৃষ্ঠে অবস্থিত
আলগা পদার্থ বায়ু সহজেই অপসারিত করতে পারে।
তৃতীয়ত: শুষ্ক অঞ্চলে স্বাভাবিক উদ্ভিদের অভাবে মাটিতে জৈব পদার্থের সংস্থান কম হয়।
এতেও মৃত্তিকা বন্ধনে অসুবিধার সৃষ্টি হয়।
চতুর্থত: উদ্ভিদ বা অরণ্য, লোকবসতি প্রভৃতির অভাবে মরুভ‚মিতে বায়ু অপেক্ষাকৃত কম
প্রতিরোধ বা প্রায় বাঁধাহীন বেগে প্রাবহিত হয়। ফলে বায়ুর অপসারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
শুষ্ক ও শুষ্ক প্রায় অঞ্চলে ভ‚মিরূপ সৃষ্টিতে বায়ুর কার্যের প্রাধান্যের কারণগুলো নিম্নরূপ:
১) শুষ্ক বিচ‚র্ণীভূত পদার্থ খুব সহজেই বায়ুর দ্বারা স্থানান্তরিত হয়;
২) মরু অঞ্চলে বিরল উদ্ভিদ আবরণের জন্য বায়ু সহজেই আলগা পদার্থ অপসারণ করতে
পারে;
৩) মাটিতে জৈব পদার্থের সংস্থান কম বিধায় মৃত্তিকা বন্ধনে অসুবিধা সৃষ্টি করে ও
৪) উদ্ভিদ ও লোক বসতি না থাকায় বায়ুর অপসারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
পৃথিবীর মরু অঞ্চলসমূহ (উবংবৎঃ জবমরড়হং উবংবৎঃ) :
বায়ুর কার্য মরু অঞ্চলেই সবচেয়ে বেশী দেখাতে পাওয়া যায়। পৃথিবীর প্রায় ১/৩ অংশ বা
শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ অঞ্চলে মরুরূপে চিহ্নিত। তাছাড়া মেরু ও মেরুবৃত্ত অঞ্চলেও বেশ কিছু
অঞ্চল শীতল মরু অঞ্চল (ঈড়ষফ উবংবৎঃ) রূপে অবস্থান করছে।
নিম্ন-অক্ষাংশীয় মরুভ‚মি (খড়-িষধঃরঃঁফব উবংবৎঃ) :
ক্রান্তীয় মরু-অঞ্চলগুলো এর অন্তর্গত, যা অনেক সময় ‘আয়ন বায়ু মরু অঞ্চল (ঞৎধফব ডরহফ
উবংবৎঃ) নামে পরিচিত। এই মরু-অঞ্চল নিরক্ষরেখা থেকে ২০০
থেকে ৩০০
উত্তর ও দক্ষিণ
অক্ষাংশের মধ্যে মহাদেশগুলোর পশ্চিম দিকে অবস্থান করে থাকে। উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার
মরক্কো থেকে সাহারা, আরব, বালুচিস্তান, থর মরুভ‚মি দেখতে পাওয়া যায় তাকে প্রাচীন
পৃথিবীর মরু বলয় (ঙষফ ডড়ৎষফ উবংবৎঃ ইবষঃ) নামে পরিচিত। উত্তর গোলার্ধে আমেরিকা
যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমে সোনারান মরুভ‚মি, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া, অ্যারিজোনা ও উত্তর-পশ্চিম
মেক্সিকো উপক‚ল পর্যন্ত বিস্তৃত । দক্ষিণ গোলার্ধে পশ্চিম অষ্ট্রেলিয়ার মরুভ‚মি সর্ববৃহৎ
মরুভ‚মি। এটি সমগ্র অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ স্থান জুড়ে অবস্থান করছে।
দক্ষিণ গোলার্ধে অন্যান্য মরু অঞ্চলগুলো হলো দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার কালাহারি মরুভ‚মি ও
দক্ষিণ আমেরিকার চিলি ও পেরুর অন্তর্গত আটাকামা মরুভ‚মি যা আন্দিজ পর্বতের পশ্চিমে
সংকীর্ণভাবে উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত (চিত্র-৫.১৫.১)।
মধ্য-অক্ষাংশীয় মরুভ‚মি (গরফ-ষধঃরঃঁফব উবংবৎঃ) :
মহাদেশগুলোর অভ্যন্তরভাগে মধ্য-অক্ষাংশীয় নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে (গরফ-ঞবসঢ়বৎধঃব
খধঃরঃঁফবং) পর্বত বেষ্টিত উচ্চ অববাহিক সমূহের বৃষ্টিচ্ছায়া অঞ্চলে (জধরহ ঝযধফড়ি অৎবধ)
অবস্থান করছে। এশিয়ার
গোবি, তাকলামাকান ও
তুর্কীস্থানের মরুভ‚মি এবং
উত্তর আমেরিকার কলোরাডো
মরুভ‚মি এর অন্তর্গত।
শুষ্ক মরু অঞ্চল ও আর্দ্র
অঞ্চলের মধ্যে পার্থক্য
(ঈড়হঃৎধংঃং ইবঃবিবহ
অৎরফ ধহফ ঐঁসরফ
জবমরড়হং) :
জলবায়ু ও ভ‚মিরূপের দিক
থেকে শুষ্ক, শুষ্ক প্রায় ও আর্দ্র
অঞ্চলের মধ্যে তেমন কোনো সুষ্পষ্ট সীমারেখা নেই। সাধারণভাবে এটি ধরে নেয়া হয় যে,
যেখানো বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১০ থেকে ২০ ইঞ্চির মধ্যে সে অঞ্চলকে শুষ্ক প্রায় অঞ্চল এবং যে
স্থানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১০ ইঞ্চিরও কম সেই অঞ্চলকে মরু অঞ্চল বলে। তবে আর্দ্র অঞ্চলে
প্রধান বৈশিষ্ট্যই পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত।
জলবায়ুর পার্থক্য (ঈষরসধঃরপ ঈড়হঃৎধংঃং) :
মরু অঞ্চলের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো বৃষ্টিপাত ও উদ্ভিদের একান্ত অভাব।
অধিকাংশ মরু অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের বৈশিষ্ট্য হলো অনিয়মিত বা অনিশ্চিত বৃষ্টিপাত। কবে, কখন
এবং কোন বছর বৃষ্টিপাত হবে তা সঠিকভাবে বলা খুবই দূরূহ ব্যাপার। কিন্তু বৃষ্টিপাত যখন
হয় তখন তা অত্যন্ত প্রবলভাবে (ঞড়ৎৎবহঃরধষ জধরহ) হয় বটে, তবে এটি অত্যন্ত স্বল্পস্থায়ী।
মরু অঞ্চলের জলবায়ুর অপর একটি বৈশিষ্ট্য হলো; দৈনন্দিন তাপমাত্রার বিরাট পার্থক্য
(ঐরমযবৎ উধরষু জধহমব ড়ভ ঞবসঢ়বৎধঃৎব)। সম্ভবতঃ মেঘমুক্ত আকাশ এবং আর্দ্রতার ও
গাছপালার অভাবের জন্য দিবা ভাগে ভ‚মিভাগ দ্রæত উত্তপ্ত এবং রাত্রিকালে দ্রæত শীতল হয়ে
দৈনিক তাপমাত্রার এক বিরাট পার্থক্য দেখা যায়। যেমন-লিবিয়ার ত্রিপলিতে দিনের বেলায়
সর্বোচ্চ ৯৯০
ফাঃ এবং রাত্রিতে সর্বনিম্ন ৩১০
ফাঃ উত্তাপের নজির রয়েছে। বাৎসরিক
শীতোষ্ণতার গড় (অর্থাৎ শীতকাল ও বৃষ্টিপাতের অভাব এবং অনিয়মিত বা অনিশ্চিত
বৃষ্টিপাতের জন্য উদ্ভিদ মন্ডলীর মধ্যেও যথেষ্ট পার্থক্য ও গাছপালার অভাবে বিস্তীর্ণ শিলাময়
অঞ্চলের অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। শুষ্ক ও শুষ্ক প্রায় অঞ্চলে মরুদ্যানের ন্যায় কাঁটা ও গুল্ম
জাতীয় বৃক্ষ লক্ষ্য করা যায়।
ভ‚তাত্তি¡ক পার্থক্য (এবড়ষড়মরপধষ উরভভবৎবহপবং) :
মরু অঞ্চলে সাধারণত অভ্যন্তরীণ পানি নির্গমন প্রণালী (ওহঃবৎহধষ উৎধরহধমব চধঃঃবৎহ) গড়ে
উঠে। তবে কিছু নদী এর ব্যতিক্রম। এরা মরু অঞ্চল অতিক্রম করে সমুদ্রে পতিত হয়।
আফ্রিকার নীল নদ ইথিওপিয়ার উচ্চ ভ‚মি অঞ্চলের বৃষ্টিপাত এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের
কলোরাডো নদী রকি পার্বত্য অঞ্চলের পৃষ্টিপাত দ্বারা পুষ্ট। এই নদীদ্বয় মরু অঞ্চল অতিক্রম
করে সাগরে মিলিত হয়েছে। এইরূপ নদীকে বিদেশীয় নদী (ঊীড়ঃরপ) বলা হয়।
চিত্র ৫.১৫.১ :ক্রান্তীয় মরু অঞ্চসমূহ
পৃথিবীর প্রায়
শতকরা ৩০ ভাগ
জুড়ে মরু অঞ্চল
অবস্থিত।
মরু অঞ্চলের প্রধান
বৈশিষ্ট্য হলো
বৃষ্টিপাত ও উদ্ভিদের
একান্ত অভাব।
মরু অঞ্চলের কয়েকটি নদী ভিন্ন অধিকাংশ নদী ক্ষুদ্রাকার, বিচ্ছিন্ন ও ক্ষণস্থায়ী। এদেরকে
সাধারণতঃ ওয়াদি (ডধফরং) বলা হয়। মরু অঞ্চলের নদীগুলো অধিকাংশ সময়ে শুষ্ক থাকে,
যদিও নদীগর্ভের বালু ও নুড়ির অভ্যন্তরে অন্তঃসলিলারূপে অনেক সময় হয়তো জলস্রোত
প্রবাহিত হয়। এই সকল শুষ্ক নদীতে স্থানীয় বৃষ্টিপাতের পরে অনেক সময় হঠাৎ বন্যা দেখা
দেয়। বিশিষ্ট ভ‚-তত্ত¡বিদ ডেভিস (উধারং) এগুলোকে নদী না বলে প্লাবনধারা (ঝঃৎবধস
ঋষড়ড়ফং) বলেছেন। শুষ্ক মরু অঞ্চলে নদীতে যেমন আকষ্মিক বন্যা ঘটিত তেমনি আকষ্মিক
নদীর পানি নেমে যায়। মরু অঞ্চলের ক্ষুদ্র নদীগুলোর ক্ষেত্রে এটি অধিক প্রযোজ্য।
মরু অঞ্চলে ভ‚তাত্তি¡ক দিক দিয়ে নদী বন্যা (ঝঃৎবধস ঋষড়ড়ফ) অপেক্ষা আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো
বিস্তৃত প্লাবন (ঝযববঃ ঋষড়ড়ফ) । মরু অঞ্চলে ঝড় ও ঝঞ্জার সময় বৃষ্টির পানি আর্দ্র অঞ্চলের
ন্যায় একটি নির্দিষ্ট নদী খাতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত না হয়ে জালের ন্যায় বিস্তৃত বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র
নদীর মধ্য দিয়ে পানির একটি চাদরের (ঝযববঃ) ন্যায় বিস্তারিত হয় একে ঝযববঃ ঋষড়ড়ফ বা
বিস্তৃত প্লাবন বলে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন ৫.১৫
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন :
১. শূণ্যস্থানপূরণ করুন :
১.১. শুষ্ক অঞ্চলে মৃত্তিকা বা বিচ‚র্ণীভ‚ত বা শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ অঞ্চলে মরুরূপে চিহ্নিত।
১.২. শুষ্ক অঞ্চলে মৃত্তিকা বা বিচ‚র্ণীভুত পদার্থ সহজেই ........অপসারিত করতে পারে।
১.৩. প্রায় ............অংশ বা শতকরা প্রায় ........... ভাগ অঞ্চলে মরুরূপে চিহ্নিত।
১.৪. অষ্ট্রেলিয়ার মরুভ‚মি ............ মরুভ‚মি।
১.৫. অষ্ট্রেলিয়ার মরুভ‚মি সমগ্র অষ্ট্রেলিয়া মহাদেশের শতকরা প্রায় ..........ভাগ স্থান জুড়ে
অবস্থান করছে।
১.৬. যে স্থানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত .......ইঞ্চিরও কম সেই অঞ্চলকে মরু অঞ্চল বলে।
১.৭. পৃথিবীর প্রায় শতকরা ..........ভাগ জুড়ে মরু অঞ্চল অবস্থিত।
১.৮. মরু অঞ্চলের নদীগুলো অধিকাংশ সময়ে ........ থাকে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :
১. মরু, মরূপ্রায় ও আর্দ্র অঞ্চল বলতে কি বুঝেন?
২. মরু ও মরূপ্রায় অঞ্চলে বায়ু ভ‚মিরূপ গঠনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম বলা হয় কেন?
রচনামূলক প্রশ্ন :
১. শুষ্ক ও শুষ্ক প্রায় অঞ্চলে ভ‚মিরূপ গঠনে বায়ুর প্রাধান্যের কারণ কি? পৃথিবীর মরু অঞ্চল
সমূহের বর্ণনা দিন।
২. শুষ্ক মরু অঞ্চল ও অনার্দ্র অঞ্চলের পার্থক্য কি?
৩. পৃথিবীর বিভিন্ন মরু অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা দিন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]