প্রাকৃতিক পরিবেশ কাকে বলে?
প্রাকৃতিক পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো কি কি?


ভ‚-মন্ডলের যে অবস্থা, শক্তি এবং বস্তুসমূহের সামগ্রিক জীব-জগৎকে তথা মানুষকে প্রভাবিত করে তাই
পরিবেশ বা প্রাকৃতিক পরিবেশ (চযুংরপধষ ঊহারৎড়হসবহঃ)। পক্ষান্তরে, মানুষের যে কর্মকান্ড ভ‚-
মন্ডলের অবস্থা, শক্তি এবং বস্তুসমূহকে প্রভাবিত করে তাকে সাংস্কৃতিক (ঈঁষঃঁৎধষ) বা সামাজিক
পরিবেশ (ঝড়পরধষ ড়ৎ ঐঁসধহ ঊহারৎড়হসবহঃ) বলে। প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশকে যৌথভাবে
ভৌগোলিক পরিবেশ (এবড়মৎধঢ়যরপ ঊহারৎড়হসবহঃ) বলা যেতে পারে। মানুষের কার্যাবলী তথা প্রযুক্তি,
ঐতিহ্য, আচরণগত ও প্রথাগত প্রতিষ্ঠান বা সে বংশ পরম্পরায় বহন এবং লালন করে, নিজে শেখে
এবং অপরকে শেখায় তা প্রকৃতপক্ষে ভৌগোলিক পরিবেশের ফলাফল।
প্রাকৃতিক পরিবেশ
প্রকৃতির সৃষ্ট বস্তু যেমন, ভ‚মির বন্ধুরতা, পানি, বায়ু, উদ্ভিজ, মৃত্তিকা প্রভৃতির সমম্বয় যা মানুষের কর্মকান্ড
ও আচার-আচারণ প্রভাবিত করে তাকে ‘প্রাকৃতিক পরিবেশ' বলে। আদিমযুগেও একমাত্র প্রকৃতির উপর
মানুষ র্নিভরশীল ছিল। অরণ্য, নদী-নালা বা জলাশয় থেকে মানুষ খাদ্য সংগ্রহ করত। তারপর সে পশু
শিকার শিখল, আরও পরে শিখল কৃষিকাজ ও পশুপালন। প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতিবন্ধকতা সত্তে¡ও
মানুষের সংস্কৃতি বিকাশের সাথে সাথে সামাজিক পরিবেশের বিবর্তন ঘটছে এবং মানুষের কার্যাবলী
প্রাকৃতিক পরিবেশকেও প্রভাবিত করছে। উদাহরণ স্বরূপ, যান্ত্রিক যানবাহনের আবিষ্কারের ফলে মানুষ
দূরত্ব জয় করেছে, আবহাওয়াগত প্রতিকূল অবস্থাকেও সে প্রযুক্তির সাহায্যে সহনশীল করে নিজের
আওতায় এনেছে। এই পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়া মানুষের সভ্যতার সাথে চলমান এবং পরিবর্তনশীল। তবে
প্রাকৃতিক পরিবেশ কোনভাবেই নিষ্ক্রিয় নয়। মানুষ এবং মানুষের কর্মকান্ডের প্রতিভ‚সমূহ ব্যতীত একটি
অঞ্চলে যা কিছু বিদ্যমান তার সব কিছূই প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান। এখানে নির্বাচিত কিছু
গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।
ভ‚মি বন্ধুরতা: ভ‚-পৃষ্ঠের বন্ধুরতার তারতম্য অত্যধিক। এর ফলে বিভিন্ন ভ‚মিরূপের সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে
বিশাল উচ্চ ভ‚মিÑ
- পাহাড় পর্বত এবং গভীর নি¤œভ‚মি
- নদী-নালা, হ্রদ, জলাশয় (বিল, হাওর ইত্যাদি) থেকে গভীর সমুদ্র উল্লেখযোগ্য। এরূপ অঞ্চলসমূহের
ধরণ অনুযায়ী মানুষের কার্যাবলীর পার্থক্য দেখা যায়।
সমূদ্র উপক‚ল রেখা স্থল ও জলের সংযোগস্থল। এই উপক‚লরেখা মানুষের কর্মকান্ড ও প্রতিবন্ধকতা
-উভয় ভ‚মিকা পালন করে। বিভিন্ন দেশের মধ্যে যাতায়াত ও সংযোগ, সমুদ্র ভিত্তিক আর্থনীতিক
কর্মকান্ড -মৎস্য আহরণ থেকে কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্য এবং নগর ও বন্দরের বিকাশ সবই সমুদ্র উপক‚ল
ভিত্তিক দেখা যায়।
অভগ্ন উপক‚ল রেখা অপেক্ষা ভগ্ন উপক‚লরেখা অনেক বেশী সুবিধাজনক। কারণ ভগ্ন উপক‚ল পোতাশ্রয়
ও বন্দর গড়ে ওঠার পক্ষে সুবিধাজনক। সুইডেন, যুক্তরাজ্য, গ্রীস প্রভৃতি দেশ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
পক্ষান্তরে, ভারত বা যুক্তরাষ্ট্রের প্রধানত অভগ্ন উপক‚ল রেখার মাত্র সীমিত সংখ্যক নৌবন্দর গড়ে
ওঠেছে। অপর দিকে উপক‚ল ভ‚মি পর্বতময় হলে বন্দর ও পশ্চাদভ‚মির যোগাযোগ দূরহ হয়ে পড়ে।
ব্রাজিলের তীরভ‚মি এই অসুবিধার সম্মুখীন। অন্যত্র যেমন, জাপান এবং চীনে প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে
মানুষ এই প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করেছে।
পর্বত ও সমভ‚মি: পর্বত ও সমভ‚মিতে মানুষের কর্মকান্ডের পার্থক্য সর্বাধিক। মানুষের আদি এবং
বর্তমানে বহুল প্রচলিত কৃষিকার্য প্রধানত: সমভূমিতেই সাধিত হয়। এছাড়া শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং
অধিকাংশ মাধ্যমিক এবং তৃতীয় পর্যায়ের কর্মকান্ড বিশেষ করে পানি-শক্তি, পার্বত্য ও মালভূমি অঞ্চল
থেকে হয়ে থাকে। এছাড়া পৃথিবীর প্রায় ৯০ শতাংশ লোক সমভূমিতে বাস করে। রাস্তা-ঘাট, জলপথ
এবং রেলপথের প্রসার প্রধানত সমভ‚মিতে দ্রæত ঘটে। পার্বত্য অঞ্চলের ভ‚-সংস্থানে অসমতল মৃত্তিকার
আস্তরণ অগভীর, ও কাকরময় হয়। পানি ধারণ ক্ষমতা পার্বত্য অঞ্চলে কম। ফলে এ অঞ্চলে
কৃষিকার্যের প্রবণতা অনুকূলে নয়। তবে পার্বত্য অঞ্চলের ঢালে নানাবিধ বৃক্ষ জন্মে। এই সমস্ত বৃক্ষের
বাণিজ্যিক ও ব্যবহারিক মূল্য যথেষ্ট। অপেক্ষাকৃত অনুক‚ল জলবায়ুতে পাহাড়ী ঢালে বেশ কিছু অর্থকরী
ফসল উপনিবিষ্ট কৃষি ব্যবস্থায় উৎপাদিত হয়, যেমন, চা, কফি, রবার, বাদাম, জলপাই, আঙ্গুর ইত্যাদি।
যে সকল স্থানে পাহাড়ের ঢাল অপেক্ষাকৃত খাড়া কিন্তু তৃণময় সেখানে মেষ ও ছাগল পালন সম্ভব। চারণ
বৃত্তিকা যাযাবরগণ এই পালন পেশায় যুক্ত।
নদী ও হ্রদ : প্রাচীন যুগ থেকেই মানুষের খাদ্য আহরণের জন্য নদী ও হ্রদ উৎকৃষ্ট স্থান। পৃথিবীর বহু
অঞ্চলে, বিশেষ করে নদী অধ্যুষিত অঞ্চলে, মানুষের প্রধান পেশা মৎস্য শিকার। এ ছাড়া নদী ও হ্রদ
সহজ ও অপেক্ষাকৃত সস্তা যাতায়াত পথ হিসাবে বিবেচিত। মানুষের প্রযুক্তি বিকাশের সাথে সাথে নদী
ও হ্রদ কৃষির সহায়ক পানি সেচের উৎস হিসাবে কাজ করে। নদীকে ভিত্তি করে বাঁধ নির্মান করে
পৃথিবীর অনেক দেশে যেমন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, ইত্যাদি ব্যাপক জলসেচ, নালা নির্মিত হয়েছে এবং
ফলে কৃষির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। নদী অনেক সময় প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।
যাতায়াত পথে এই বাধা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে নিরসন সম্ভব। কিন্তু নদীবহুল দেশে, যেমন বাংলাদেশ,
ভারত, চীনে, অস্বাভাবিক বন্যা ব্যাপক ভাবে কৃষি, আর্থনীতিক প্রতিষ্ঠান, জনবসতির ক্ষয় ক্ষতি সৃষ্টি
করে থাকে। এক্ষেত্রে এই দুর্যোগের উপর মানুষের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
জলবায়ু: জলবায়ু প্রাকৃতিক পরিবেশের একটি প্রধান উপাদান এবং মানুষের কর্মকান্ডকে নানাভাবে
প্রভাবিত করে। মানব কর্মকান্ডের প্রধান এবং সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কর্মকান্ড কৃষিকাজের উপর এর
প্রভাব সর্বাধিক। জলবায়ু কর্ষণ উপযোগী এলাকার সীমানা নির্ধারণ করে। আমরা জানি যে, অতি
চরমভাবাপন্ন জলবায়ু, যেমন- অতি উষ্ণ যথা শুষ্ক মরু অঞ্চলে এবং অতি শীতল-বরফময় যথা মেরু
অঞ্চলে কৃষি কাজের জন্য উপযোগী নয়। আবার কোন অঞ্চলে কি ধরণের চাষাবাদ হবে তা জলবায়ুর
মাত্রা ও ধরণ নির্ধারণ করে দেয়। যেমন, আর্দ্র বিষুবীয় অঞ্চল ধান চাষের জন্য উপযোগী। গম চাষের
জন্য নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল উপযোগী। অন্যান্য ফসলের ঋতুভিত্তিক বপন কালের বৈশিষ্ট্যের মধ্যেই কৃষি
কর্মকান্ডের উপর জলবায়ুর প্রভাব সহজ প্রত্যক্ষ করা যায়। চাষাবাদের সাথে সম্পর্কযুক্ত মানব বসতের
উপর জলবায়ুর প্রভাব আমরা ইতিপূর্বে লক্ষ্য করেছি।
শিল্প অবস্থানের উপর জলবায়ুর বেশ প্রভাব রয়েছে। যেমন, তুলাবয়ন শিল্পের জন্য আর্দ্র জলবায়ু বিশেষ
উপযোগী। আটা-ময়দা শিল্পের জন্য শুষ্ক জলবায়ু, চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য সূর্য করজ্জোল জলবায়ু খুবই
প্রয়োজন। যোগাযোগ বা যাতায়াত ব্যবস্থাও জলবায়ু দ্বারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রিত। মরু ও
নিরক্ষীয় অঞ্চলে সমুদ্রবায়ু এবং নিয়ত বায়ুপ্রবাহ নৌযানের যাতায়াত নিয়ন্ত্রিত করতো। এখনোও
সমুদ্রপথগুলি ঝঞ্জাবহুল বিষুবীয় অঞ্চল পরিহার করে চলে।
মানুষের স্বাস্থ্য, শক্তি ও সামর্থ জলবায়ু দ্বারা অনেকাংশ নিয়ন্ত্রিত। বেশ কিছু মহামারী রোগ যেমন,
কলেরা, ম্যালেরিয়া, ডাইরিয়া আর্দ্র নিরপেক্ষীয় অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। ঠিক তেমনি
টি. বি. ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমনিয়া ও অন্যান্য শ্বাসযন্ত্র সংক্রান্ত রোগ শীত প্রধান অঞ্চলে স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি
করে। অপরদিকে, জলবায়ু অবস্থার কারণে বন্যা, নদী ভাঙ্গন, পাহাড়ী ঢল, ভ‚মি ধ্বস, খরা ইত্যাদি
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানব কর্মকান্ড, উৎপাদন এবং সভ্যতাকে সর্বকালে প্রভাবিত করেছে। তবে
জলবায়ুগত অনেক প্রতিক্রিয়া মানুষ প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত করতে পেরেছে।
উদ্ভিজ: উদ্ভিজ্জের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের কর্মকান্ডও পরিবর্তন হয়। নিরক্ষীয় অঞ্চলের গভীর
অরণ্য কাঠ-চেরাই, রবার সংগ্রহ ও বনজ দ্রব্যাদি এবং ফলমূল আহরণ ব্যতীত অন্যান্য কাজের জন্য
প্রধানত: অনুপযোগী। এরূপ অঞ্চলে কাঠ যেমন শক্ত বৃদ্ধিও তেমন দ্রæত। ফলে ভ‚মি পরিস্কার করে
অন্যান্য কর্মকান্ড, বিশেষ করে কৃষিকাজ সহজসাধ্য নয়। অপরদিকে, এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অনুন্নত
যাতায়াত ব্যবস্থা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও স্বাপদ সঙ্কুল হওয়াতে জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বসত খুবই কম।
পরিবেশগত বাধ্যবাধকতা কিছু নমনীয় হওয়ার কারণে নাতিশীতোষ্ণ চিরহরিৎ অরণ্যে কাঠ শিল্পের
বিকাশ ঘটেছে এবং অনেক স্থানে এই শিল্পের উপর নির্ভর করে জনবসত গড়ে উঠেছে।
কৃষিকাজ ও বাণিজ্যিক পশুপালনের জন্য নাতিশীতোষ্ণ তৃণভ‚মি অঞ্চল বিখ্যাত। বিস্তীর্ণ সমতলভ‚মি,
উর্বর কৃষ্ণ মৃত্তিকা, সুষম বৃষ্টিপাত এই অঞ্চলকে গম, ভুট্টা ও বিবিধ ফলমূল চাষের জন্য উপযোগী করে
তুলেছে। অপরদিকে পর্যাপ্ত তৃণভ‚মির জন্য এই অঞ্চল পশুপালনের জন্য বিখ্যাত। মরু অঞ্চল প্রধানত
বৃক্ষ শূণ্য। স্থানীয় কাঁটাজাতীয় গুল্ম ও ঝোপ-ঝাড় কৃষিকাজের জন্য উপযোগী নয়। তবে যেখানে
তৃণভ‚মি রয়েছে সেখানে চারণ বৃত্তিক যাযাবরদের পশুপালন দেখা যায়।
উপরোক্ত অবস্থাসত্তে¡ও মানুষ যেখানে প্রাকৃতিক উদ্ভিজ্জের ধ্বংস সাধন করেছে সেখানে নানাবিধ
প্রাকৃতিক বিপর্যের সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন অঞ্চলের তৃণভ‚মির অংশ বিশেষ ধ্বংস
করায় সেখানে ভ‚মি ধ্বংস, মৃত্তিকাক্ষয় এবং বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণ এশিয় দেশসমূহের
উজানে হিমালয় পাদদেশীয় এলাকায় প্রাকৃতিক অরণ্য নিধনের ফলে নি¤œ অঞ্চলে বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি
পেয়েছে বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে চকরিয়া-কক্সবাজার উপক‚লে গরাণ অরণ্য
ধ্বংস করে বাণিজ্যিক চিংড়ি চাষ করায় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে ঠিকই কিন্তু সেখানে জনবসতি সমুদ্র
ঝঞ্জা থেকে রক্ষা প্রাপ্তির জন্য বনভ‚মির অভাবে প্রতিবছর ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
মৃত্তিকা: কৃষিকাজে মৃত্তিকার প্রভাব অত্যাধিক। যে স্থানে মৃত্তিকা উর্বর বা উর্বর করা সম্ভব কেবল সে
স্থানেই চাষাবাদ সম্ভব। অনুর্বর মৃত্তিকা সম্পন্ন এলাকায় অন্যান্য অনুক‚ল উপাদান থাকা সত্তে¡ও
সন্তোষজনক চাষাবাদ সম্ভব নয়। বিশ্বের অধিকাংশ পার্বত্য এলাকা এইরূপ। অপরদিকে মৃত্তিকার
ধরণের উপর কি ফসল উৎপন্ন হবে তা অনেকটা নির্ভর করে। সমুদ্র উপক‚লের লবণাক্ততা ভ‚মি বা
লোহিত মৃত্তিকা চাষের জন্য অনুকূল নয়। আবার মৃত্তিকা সহজে প্রবেশ্য না হলে পানি সঞ্চালন ও গাছের
বা ফসলের শিকড় প্রবেশ করতে পারে না। এ কারণে পার্বত্য অঞ্চলে ও উচ্চ মালভ‚মি চাষাবাদের জন্য
সুবিধাজনক নয়। মরু অঞ্চলের ক্ষারযুক্ত বালিমাটিও চাষাবাদের অনুক‚ল নয়। নদী অববাহিকার পলি
মাটি ও দোঁ-আশ মাটি কৃষিকাজের জন্য বিশেষ উপযোগী।
উপরে বর্নিত প্রধান প্রাকৃতিক উপাদান ছাড়াও কোন স্থানের অবস্থান, অপরাপর স্থান হতে দূরত্ব, গম্যতা
ইত্যাদি প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে এবং তদানুযায়ী মানুষের কর্মকান্ড
প্রভাবিত হতে পারে।
পাঠসংক্ষেপ:
প্রকৃতির সৃষ্ট বস্তু যেমন, ভ‚মির বন্ধুরতা, জলবায়ু, উদ্ভিজ, মৃত্তিকা প্রভৃতির সমম্বয় যা মানুষের কর্মকান্ড ও
আচার-আচারণ প্রভাবিত করে তাকে ‘প্রাকৃতিক পরিবেশ' বলে। আদিমযুগেও একমাত্র প্রকৃতির উপর
মানুষ নির্ভরশীল ছিল। অরণ্য, নদী-নালা বা জলাশয় থেকে মানুষ খাদ্য সংগ্রহ করত। তারপর সে পশু
শিকার শিখল, আরও পরে শিখল কৃষিকাজ ও পশুপালন। প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতিবদ্ধকতা সত্তে¡ও
মানুষের সংস্কৃতি বিকাশের সাথে সাথে সামাজিক পরিবেশের বিবর্তন ঘটছে এবং মানুষের কার্যাবলী
প্রাকৃতিক পরিবেশকেও প্রভাবিত করছে। উদাহরণ স্বরূপ, যান্ত্রিক যানবাহনের আবিষ্কারের ফলে মানুষ
দূরত্ব জয় করেছে, আবহাওয়াগত প্রতিকূল অবস্থাকেও সে প্রযুক্তির সাহায্যে সহনশীল করে নিজের
আওতায় এনেছে। এই পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়া মানুষের সভ্যতার সাথে চলমান এবং পরিবর্তনশীল। তবে
প্রাকৃতিক পরিবেশ কোনভাবেই নিষ্ক্রিয় নয়। মানুষ এবং মানুষের কর্মকান্ডের প্রতিভ‚সমূহ ব্যতীত একটি
অঞ্চলে যা কিছু বিদ্যমান তার সব কিছুই প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান। এই পাঠে নির্বাচিত কিছু
গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সংক্ষেপ আলোচনা করা হয়েছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন: ১.৫
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন:
১. শূন্যস্থান পূরণ করুন:
১.১. ভ‚-মন্ডলের যে অবস্থা, শক্তি এবং বস্তুসমূহের সামগ্রিক জীব-জগৎকে তথা মানুষকে প্রভাবিত করে
তাই পরিবেশ বা ---- প্রাকৃতিক পরিবেশ (চযুংরপধষ ঊহারৎড়হসবহঃ)।
১.২. প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশকে যৌথভাবে ---- (এবড়মৎধঢ়যরপ ঊহারৎড়হসবহঃ) বলা যেতে
পারে।
১.৩. প্রকৃতির সৃষ্ট বস্তু যেমন ভ‚মির বন্ধুরতা, পানি, বায়ু, উদ্ভিজ, মৃত্তিকা প্রভৃতির সমম্বয় যা মানুষের
কর্মকান্ড ও আচার-আচারণকে প্রভাবিত করে তাকে ---- বলে।
১.৪. সমূদ্র উপক‚ল রেখা স্থল ও জলের ----।
১.৫. অভগ্ন উপক‚ল রেখা অপেক্ষা ভগ্ন উপক‚লরেখা অনেক বেশী ---- ।
১.৬. পৃথিবীর প্রায় ---- শতাংশ লোক সমভূমিতে বাস করে।
১.৭. নদী অনেক সময় প্রাকৃতিক ---- সৃষ্টি করতে পারে।
২. সত্য হলে ‘স' মিথ্যা হলে ‘মি' লিখুন:
২.১. পানি ধারণ ক্ষমতা পার্বত্য অঞ্চলে বেশী।
২.২. প্রাচীন যুগ থেকেই মানুষের খাদ্য আহরণের জন্য নদী ও হ্রদ উৎকৃষ্ট স্থান।
২.৩. জলবায়ু প্রাকৃতিক পরিবেশের একটি প্রধান উপাদান।
২.৪. গম চাষের জন্য নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল উপযোগী।
২.৫. শিল্প অবস্থানের উপর জলবায়ুর প্রভাব নেই।
২.৬. উদ্ভিজ্জের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের কর্মকান্ডও পরিবর্তন হয়।
২.৭. কৃষিকাজ ও বাণিজ্যিক পশুপালনের জন্য নাতিশীতোষ্ণ তৃণভ‚মি অঞ্চল উপযোগী নয়।
২.৮. কৃষিকাজে মৃত্তিকার প্রভাব অত্যাধিক।
২.৯. মরু অঞ্চলের ক্ষারযুক্ত বালিমাটি চাষাবাদের অনুক‚ল।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন:
১. প্রাকৃতিক পরিবেশ কাকে বলে?
২. প্রাকৃতিক পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো কি কি?
রচনামূলক প্রশ্ন:
১. প্রাকৃতিক পরিবেশ কাকে বলে? প্রাকৃতিক পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সম্পর্কে বর্ণনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]