কোন জনগোষ্ঠীর প্রযুক্তিগত দক্ষতা, ধর্ম, প্রথা, সংস্কার বা কুসংস্কার, আবিষ্কার ও উদ্ভাবন, শহর-নগর
প্রভৃতি মানুষের সৃষ্টি করা উপাদানসমূহের মাধ্যমে মানুষের অভিজ্ঞানই সংস্কৃতি। নির্দিষ্ট মানব সংস্কৃতি
পরিচালিত জ্ঞান ও জীবন যাত্রার বহি:প্রকাশ হলো সামাজিক পরিবেশ।
স্মর্তব্য যে, প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব নির্ভর করে মানুষের সামাজিক-সাংস্কৃতিক পর্যায় ও তার বোধ
শক্তি বা প্রত্যক্ষণের (চবৎপবঢ়ঃরড়হ) ওপর। সংস্কৃতি এবং সামাজিক ব্যবস্থাপনা মানুষের সৃষ্টি। নির্দিষ্ট
প্রাকৃতিক পরিবেশে এগুলোই নিয়ন্ত্রিত করে মানুষের জীবন যাত্রা এবং কর্মকান্ড। এগুলোর আওতায়
মানুষ নানাবিধ সম্পদ ব্যবহার করে। মানুষ তার আদি জীবনে ছিল সংগ্রহকারী এবং শিকারী। আদিতে
অন্যান্য জীব জন্তুর সাথে মানুষের জীবন যাত্রার বড় বেশী পার্থক্য ছিল না। সাংস্কৃতিক ও সামাজিক
বিবর্তন ও বিকাশের ফলে মানুষের কর্মকান্ড ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে।
তবে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পার্থক্যের কারণে সব জনগোষ্ঠীর সমরূপ বিবর্তণ ও বিকাশ ঘটে নাই বা
সকলে সমানভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ করে সম্পদ ব্যবহার করতে পারে নাই। আবার কোন
কোন জনগোষ্ঠীর এই বিকাশ নির্দিষ্ট পর্যায়ে ঘটেছে প্রাকৃতিক পরিবেশের সীমাবদ্ধতা বা নিয়ন্ত্রণের
ফলেই। এতে প্রকারান্তরে মানুষের সংস্কৃতি ও সমাজ প্রকৃতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। তাই প্রাকৃতিক
সম্পদ তথা প্রকৃতির সুযোগ গ্রহণ করতে হলে প্রযুক্তিগত দক্ষতা কাজে লাগানো অপরিহার্য। নির্দিষ্ট
কোন জনগোষ্ঠীর এই দক্ষতা কাজে লাগানো হচ্ছে কি না বা কাজে লাগানোর জন্য প্রযুক্তিগত পর্যায় কি
ধরণের তা নির্ভর করে সেই গোষ্ঠীর রাজনীতি, অর্থনীতিক দর্শন, ধর্মীয় চিন্তাধারা, শিক্ষার মান এবং
সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ বা সামগ্রিকভাবে তার সামাজিক পরিবেশের ওপর। যে সকল স্থান পাট চাষের
উপযোগী নয় সে সকল স্থানে পাট চাষের জন্য প্রচেষ্ঠার পেছনে ভারত ও পাকিস্থানের রাজনীতি ও
অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে পাটজাত কাঁচামালে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া। মুসলিম দেশসমূহে মদ ও শুকর
উৎপাদন না হওয়ার পেছনে রয়েছে ধর্মীয় অনুশাসন ও মূল্যবোধ। সুতরাং বলা যেতে পারে যে কেবল
প্রযুক্তিগত বিদ্যা এবং সঙ্গতিই মানুষের কর্মকান্ডকে নিয়ন্ত্রণ করে না, সামাজিক নিয়মাবলী এবং প্রথাকে
উপেক্ষা করা সম্ভব নয়।
প্রাকৃতিক বনাম সামাজিক পরিবেশ: মানুষ-পরিবেশ সম্পর্ক
প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষের কর্মকান্ডকে প্রভাবিত করে না, মানুষও প্রকৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে
পারে - এই বিতর্ক সমসাময়িক ভ‚গোল শাস্ত্রের প্রারম্ভ থেকে চলে আসছে। প্রকৃতপক্ষে ভ‚-পৃষ্ঠের
পরিবেশ এবং মানব কর্মকান্ড ও তৎপরতা বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, মানবজীবন ও
প্রাকৃতিক পরিবেশ একে অপরের সাথে ঘনিষ্টভাবে যুক্ত। জীবনে কোন পরিবর্তন আসলে তা পরিবেশকে
যেমন পরিবর্তন করে তেমনি পরিবেশের পরিবর্তন মানব জীবনে প্রভাব বিস্তার করে। পরিবেশ মানুষকে
তার জীবিকার পথ নির্দেশ করে এবং মানুষ তার সংস্কৃতির মাধ্যমে পরিবেশের সাথে পরিবেশের
পারস্পরিক সম্পর্ক বা মিথষ্ক্রিয়া ভ‚গোলবিদগণ বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস পেয়েছেন,
যেমন:
প্রাকৃতিক নিমিত্তবাদ (চযুংরপধষ উবঃবৎসরহরংস);
সম্ভাব্যতাবাদ (চড়ংরনরষরংস); এবং
নব্য-নিমিত্তবাদ (ঘবড়-উবঃবৎসরহরংস)
প্রাকৃতিক নিমিত্তবাদ
প্রাকৃতিক নিমিত্তবাদ ১৮-১৯ শতকে বিশেষ গুরত্ব লাভ করে। এই তত্ত¡ অনুযায়ী মনে করা হয় যে,
মানুষের সকল কর্ম তৎপরতা প্রাকৃতিক পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত হয়। পরিবেশ দ্বারা
নিয়ন্ত্রণাধীন ভ‚মিকার জন্য এই মতবাদকে প্রাকৃতিক বা পারিবেশিক নিমিত্তবাদ বা নিয়তিবাদ বলা হয়।
এই মতবাদের প্রধান উপাদানসমূহ হলোÑ
Ñ প্রাকৃতিক পরিবেশের কার্য-কারণ সম্পর্ক;
Ñ শক্তিশালী বাস্তবগত প্রভাব;
Ñ প্রাকৃতিক নির্বাচন; এবং
Ñ সংস্কৃতি ও পরিবেশের মধ্যে অবধারিত সম্পর্ক।
প্রকৃতি মানুষকে কার্যকরণ সম্পর্ক দ্বারা আবদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করছে। যেমন, মরুভ‚মিতে উষ্ণ ও বিরূপ
আবহাওয়ার জন্য যাযাবর জনগোষ্ঠীর উদ্ভব হয়েছে। একইভাবে প্লাবন ভ‚মি অঞ্চলে কৃষকক‚ল এবং
উপক‚লীয় অঞ্চলে মৎস্যজীবিগণ বসবাস এবং জীবিকা অর্জন করছে।
পরিবেশ মানুষের জীবিকা, পোষাক-পরিচ্ছেদ, তথা মানব সংস্কৃতির উপর প্রভাব বিস্তার করে। যেমন,
মরু অঞ্চলে মানুষ ঢিলা পোষাক পরিধান করে কারণ এরূপ পোষাক আরামপ্রদ, আবার শীত প্রধান
অঞ্চলে মোটা এবং সেলাই করা পোষাক-আশাক ব্যবহৃত হয়। তাতে ঠান্ডা কম লাগে। বৃষ্টিবহুল
জলবায়ু অঞ্চলে সহজে পানি অপসারণের জন্য উচ্চ ঢালযুক্ত বাড়ীর ছাদ নির্মিত হয়। শূষ্ক মরু অঞ্চলে
তার প্রয়োজন হয় না, বরং হাল্কা উপকরণ বা তাঁবু নির্মিত আবাস ব্যবহার হয়।
প্রাকৃতিক নির্বাচন ডারইউনের মতবাদশ্রয়ী। পৃথিবীতে মানুষ বিভিন্ন বৈপরীত্ত ও বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে
টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত। যেমন, সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞান ও উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সে প্রতিনিয়ত
বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রামে লিপ্ত। এই সংগ্রামে নতি স্বীকার করলে পরিবেশই নিয়ন্ত্রক
হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে।
র্যাটজেল, সেস্পেল, হান্টিংটন প্রমুখ ভ‚গোলবিদগণ মনে করেন যে, সংস্কৃতি ও পরিবেশের মধ্যে এক
ঘনিষ্ট সম্পর্ক বিদ্যমান। এর প্রমান পাওয়া যায় মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ডে পরিবেশের সাথে খাপ
খাওয়ানোর প্রচেষ্টার মাধ্যমে এবং এই প্রচেষ্ঠার প্রতিভ‚ হিসাবে সাংস্কৃতিক প্রলক্ষণ বা অভিজ্ঞান নির্মাণ
করা। ফলে, উদাহরণস্বরূপ, বিভিন্ন জলবায়ু ভেদে বসতবাড়ী, চাষাবাদ পদ্ধতি ইত্যাদি তৈরী হয়েছে।
মতবাদসমূহ
মানুষের উপর পরিবেশের প্রভাব সম্পর্কে যারা প্রাচীনকালে আলোচনা করেছেন তাঁদের মধ্যে
হিপোক্রেটেস (৪২০ খৃ.পূ.) উল্লেখযোগ্য। তাঁর ‘ঙহ অরৎ, ডধঃবৎ ধহফ চষধপবং' নামক গ্রন্থে এশিয়া ও
ইউরোপের অধিবাসীদের জীবন-যাত্রার মধ্যে বৈপরীত্য উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে পরিবেশগত
পার্থক্যের জন্য এই বৈপরীত্য। পার্বত্য ইউরোপের মানুষ লম্বা, ভদ্র ও সাহসী; শুষ্ক অঞ্চলের কৃশ বলিষ্ট
ও সাহসী এবং এশিয়ার মানুষের মধ্যে খাটো, কিছুটা খর্বকায় এবং অলস বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করেছেন।
এরিষ্টটল (৩৮৪-৩২২ খৃ: পূ) তাঁর 'চড়ষরঃরপং' শীর্ষক গ্রন্থেও অনুরূপ বৈশিষ্ট্যযুক্ত বৈষম্যের কথা উল্লেখ
করেছেন। তিনি আরও দেখিয়েছেন যে, শীত প্রধান উত্তর ইউরোপীয় জনগোষ্ঠীর কর্মশক্তি, কিন্তু তাদের
বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতার অভাব রয়েছে, ফলে তারা স্বাধীন হলেও রাজনৈতিক সংগঠন ও সাম্রাজ্য বিস্তারে
তারা যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারে নাই। অন্যদিকে দক্ষিণের গ্রীষ্ম প্রধান এশিয়াবাসীরা বুদ্ধিমান, দক্ষ
কিন্তু তাদের কর্মশক্তির অভাবহেতু পরাধীনতা বা দাসত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। উপরোক্ত দুই অঞ্চলের
মধ্যবর্তী গ্রীকগণ উভয় অঞ্চলের উত্তম গুনাবলীর অধিকারী এবং সেজন্য তারা পৃথিবীর সেরা জাতি।
তার স্বাক্ষর দেশ শাসন, ব্যবসা বানিজ্য এবং সাংস্কৃতিক বিকাশের মাধ্যমে প্রকাশিত। একইভাবে
স্ট্রাবো রোমের উত্থান ও গৌরব, ইতালীর আকৃতি, ভ‚-প্রকৃতি, জলবায়ু ইত্যাদি দ্বারা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা
করেছেন। বোদিন (১৬ শতক) মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের উপর পরিবেশের প্রভাব বিশ্লেষণ করতে
গিয়ে দেখিয়েছেন যে, উত্তরাঞ্চলের লোকেরা পাশবিক, বর্বর, নিষ্ঠুর-নৃশংস এবং দু:সাহসিক কাজে
উৎসাহী। পক্ষান্তরে, দক্ষিণ অঞ্চলের অধিবাসীরা প্রতিহিংসা পরায়ন, চতুর ও মিথ্যা থেকে সত্যকে
আলাদা করে দেখার ক্ষমতা সম্পন্ন। এই দুইয়ের মধ্যবর্তী নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের অধিবাসীরা উপরোক্ত
দুই অঞ্চলের থেকে বেশী কম শক্তিপূর্ণ এবং কম-ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন।
পরবর্তীকালে ফরাসী মানবতাবাদী মঁতেস্কু তাঁর লেখায় মানুষের চরিত্রের উপর জলবায়ু ও মৃত্তিকার
প্রভাব উল্লেখ করে দেখিয়েছেন যে শীত প্রধান অঞ্চলের মানুষ দক্ষিণের আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলের মানুষের
চাইতে অধিক শক্তিশালী, সাহসী, মনখোলা, স্থিরসংকল্প এবং কামাতুর। পক্ষান্তরে দক্ষিণের
অধিবাসীগণ উদ্দীপনাক্ষন, অলস ও কর্মবিমুখ এবং তারা দ্রæত প্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলে। তিনি আরও
বলেন যে, মৃত্তিকার উপর জলবায়ুর প্রভাবের ফলে মাটির অনুর্বরতা মানুষকে দৃঢ়চেতা করে এবং গণতন্ত্র
প্রতিষ্ঠা করে। অপরদিকে, মাটির উর্বরতা ভ‚স্বামী ও অভিজাত শ্রেণীর উদ্ভব ঘটায়। সাম্রাজ্যের বিস্তার
এবং সামুদ্রিক অভিযানের জন্য মহাদেশীয় ভ‚ভাগের অধিবাসীদের চাইতে দ্বীপাঞ্চলের ও উপক‚লীয়
জনগোষ্ঠী অধিকতর তৎপর। ইউরোপীয় উপনিবেশিক শক্তিগুলির বিশ্বব্যাপী তৎপরতা এর উদাহরণ।
ইম্যানুয়েল কান্ট মানুষের উপর পরিবেশগত প্রভাব দেখাতে গিয়ে বলেছেন যে, নিউইংল্যান্ড উপক‚লের
অধিবাসীরা অর্ধমুদ্রিত চক্ষুবিশিষ্ট এবং তাদের মাথা পেছনের দিকে না হেলিয়ে বেশী দূরে তাকাতে পারে
না। উষ্ণ অঞ্চলের অধিবাসীরা অতিমাত্রায় অলস ও ভীরু। তাদের অলসতা ও ভীরুতা আবার তাদের
দলবদ্ধ করেছে। এর ফলে তারা অতিপ্রাকৃত শক্তিতে বিশ্বাসী এবং শাসক হিসাবে রাজাদের উপর অতি
নির্ভরশীল।
পরবর্তীকালে, বিশেষ করে ১৯ শতকে মানুষ পরিবেশ সম্পর্ক নির্ণয়ে দৃষ্টিভঙ্গির যথেষ্ট পরিবর্তন
ঘটেছে। এই পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিভ‚ হচ্ছেন কার্ল রিটার, আলেকজান্ডার ফন হামন্সেবাল্ড, হ্যাকেল,
বাকেল, সেম্পল প্রমুখ ভ‚গোলবিদগণ।
রিটার (১৭৭৯-১৮৫৯) সর্বপ্রথম পরিবেশ সম্পর্কীয় ধারণার পরিবর্তন ঘটান। একজন সাবধানী
পর্যবেক্ষক হিসাবে তিনি (ক) মানুষের উপর মৃত্তিকার প্রভাব, এবং (খ) মৃত্তিকার উপর মানুষের
কার্যকলাপ - উভয়েরই গুরুত্বারোপ করেন। ‘ঊঁৎড়ঢ়ধ' নামক দুই খন্ডের পুস্তকে তিনি উপক‚লীয়
পরিবেশের প্রভাবের ফলে নিরাপদ সংস্কৃতি বিকাশের ছোট ছোট লালনকেন্দ্র হিসাবে ভ‚মধ্যসাগরীয়
দ্বীপগুলির গুরুত্ব তিনি সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন। অপরদিকে তিনি লক্ষ্য করেছেন যে, মানুষের অঙ্গ
প্রত্যঙ্গের উপর মরু পরিবেশের প্রভাবের ফলে তুর্কীদের চোখ সংকীর্ণ এবং চোখের পাতা ভারী।
হামবোল্ড (১৭৬৯-১৮৫৯) অধিকতর বৈজ্ঞানিক রীতিতে মানুষ-পরিবেশ সম্পর্কে পর্যালোচনা করেছেন।
তিনি উপলব্ধি করেছেন যে, পরিবেশ মানুষকে প্রভাবিত করে কিন্তু প্রাপ্ত তথ্য একটিমাত্র মতবাদ গঠনে
যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন যে, কোন এলাকার প্রাকৃতিক গঠন তথাকার অধিবাসীদের রীতিনীতির উপর
প্রভাব বিস্তার করে না। পার্বত্য এলাকার এবং সমভ‚মি এলাকার অধিবাসীদের চোখ যথেষ্ট ভিন্নতর নয়।
তিনি ‘ঈড়ংসড়ং' নামক গ্রন্থে এরূপ সুবিচারপূর্ণ বহু মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তিনি লক্ষ্য করেছেন যে,
সমুদ্রের প্রভাবের ফলেই ক্রমশ ফনেসীয়দের এবং পরবর্তীকালে হেলেনিক জাতিসমূহের শক্তি এবং
প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। হামবোল্ডের এহেন দৃষ্টিভঙ্গি ছিল রিটারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রায়
একই সময়ে লিখিত হলেও হামবোল্ডের চিন্তাধারা যথেষ্ট বিস্তারলাভ করতে সমর্থ হয়নি। তবে তাঁর
মতামতগুলি নিজস্ব গতিবেগ লাভ করেছিল।
হান্টিনটন প্রাকৃতিক পরিবেশের কতিপয় বিশেষ উপাদান (যেমন জলবায়ু, ভ‚-রূপ. মৃত্তিকা, খনিজ,
উদ্ভিজ, জীবজন্তু) নির্বাচন করেন এবং ঐগুলির প্রত্যেকটি মানুষের সংস্কৃতির উপর কিরূপ শর্তাধীন
প্রভাব বিস্তার করে তার ব্যাখ্যা প্রদান করেন। তাঁর ‘চৎরহপরঢ়ষবং ড়ভ ঐঁসধহ এবড়মৎধঢ়যু'- গ্রন্থে তিনি
এই ধরণের বহু উদাহরণ প্রদান করেছেন। এই পুস্তকে তিনি মানুষ ও পরিবেশ সম্পর্ক পর্যালোচনা
করতে গিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এই সম্পর্কের ব্যতিক্রমের কারণ লক্ষ্য করেছেন। তিনি উল্লেখ
করেছেন যে, ০º ফা তাপমাত্রার কম মধ্য এশিয়ার অধিবাসীরা মেষ বা অন্য কোন প্রাণীর চামড়া দিয়ে
তৈরী পোষাক ব্যবহার করে কিন্তু ৭০º ফা: উত্তাপ বিশিষ্ট মধ্য আফ্রিকার অধিবাসীরা অতি স্বল্প পোশাক
ব্যবহার করে। পোষাক- এই লক্ষণীয় পার্থক্য জলবায়ুগত উপাদানের পার্থক্যের জন্যই ঘটেছে। বাক্ল
তাঁর ‘ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ঈরারষরুধঃরড়হ রহ ঊহমষধহফ' গ্রন্থে মানুষের কার্যকলাপ পর্যালোচনায় সচেষ্ট হয়ে
পারিবেশিক প্রভাব লক্ষ্য করেছেন। তাঁর মতে পরিবেশগত প্রভাবের ফলে মানুষের বিবিধ উদ্দেশ্য ফুটে
ওঠে। তিনি জলবায়ু, খাদ্য ও মৃত্তিকা একটি দেশের সম্পদ একত্রিকরণের ও বন্টনের ওপর কিরূপ
প্রভাব বিস্তার করে তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দেখিয়েছেন যে, মানুষের কার্যকলাপ প্রতিনিয়তই তার
প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। এতে প্রকাশ পেয়েছে যে সম্পদ প্রাপ্তি ও
বন্টনের উপর রাশিয়া ও আফ্রিকার মাটির উর্বরতা এবং ইউরোপের জলবায়ুর প্রভাব যথেষ্ট শক্তিশালী।
অপরদিকে হ্যাকেল তাঁর ‘ঊপড়ষড়মু' পুস্তকে বাক্ল্ এর তত্ত¡ আরও প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অনুরূপ দৃষ্টিভঙ্গি
ডেমলিন্স-এর লেখায়ও প্রকাশ পেয়েছে।
ডেমলিন্স বাক্ল এর পরবর্তী পরিবেশপন্থী ব্যক্তিত্ব। তিনি তাঁর শিক্ষক ফ্রেডারিক লিপ্লে (১৮০৬-
১৮৮২)-র এবং তাঁর সমসাময়িক হেনরি দ্য তুরতিল-এর ধারণাকে বিকশিত করেন। এ কাজে স্তেপভ‚মি
পর্যালোচনার মাধ্যমে তিনি পরিবেশ নিমিত্তবাদকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে,
স্তেপভ‚মির জলবায়ু তৃণভূমি বিকাশের সহায়ক হওয়ায় ঘোড়া বা বাইসন প্রাণী অধ্যুষিত ছিল।
অপরদিকে এই সমস্ত প্রাণী মানুষকে যথাক্রমে গতিশীলতা ও খাদ্য সরবরাহ করে। অনেকস্থানে
মেষপালন বিকাশ লাভ করে। এই এলাকার অধিবাসীদের মধ্যে ধর্মীয় ঐক্যবোধ লক্ষণীয়। মধ্য
এশিয়ার উদাহরণ টেনে তিনি সমাজ যে প্রাকৃতিক পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত তা প্রতিপন্ন করেছেন।
ফ্রেডারিক র্যাটজেল ও তাঁর অনুসারিরা (বিশেষ করে সেমপেল) ভ‚ পৃষ্ঠের জনসংখ্যার বন্টন কিভাবে
প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত তিনি তাঁর দঅহঃযৎড়ঢ়ড়মবড়মৎধঢ়যু' পুস্তকে ব্যাখ্যা করেছেন।
সমালোচনা
প্রাকৃতিক নিমিত্তবাদ আপাত দৃষ্টিতে যুক্তিগ্রাহ্য মনে হলেও আলোচিত উদাহরণ সমূহের মধ্যে বহু
ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। যেমন, একই রকম পারিবেশিক অবস্থায় ভিন্ন ভিন্ন মানব সংস্কৃতির উদ্ভব ও
বিকাশ ঘটতে পারে। পরিবেশ নি:সন্দেহে মানুষকে প্রভাবিত করলেও মানুষ তার পরিবেশকে পরিবর্তিত
করতে পারে। এই পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়া এতই জটিল যে, কখন একটির শুরু এবং অপরটির শেষ তা
নিরূপন করা কষ্টকর, বিশেষ করে পরিবেশগত উপাদানগুলি জনসংখ্যা বন্টনের কারণ ব্যাখ্যায় যথেষ্ট
নয়। অপরদিকে, নগরের অবস্থান সব সময় পরিবেশগত উপাদানের উপর নির্ভরশীল নয়। সাংস্কৃতিক,
আর্থনীতিক এমন কি আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক উপাদান নগর বিকাশে অত্যন্ত ক্রিয়াশীল। বর্তমান
বিশ্বের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা, সহযোগিতা এবং প্রযুক্তিগত বিকাশের ফলে বহু পারিবেশিক শক্তি
প্রভাবহীন হয়ে পড়েছে।
সম্ভাব্যতাবাদ
সম্ভাব্যতাবাদের মূল কথা হলো প্রকৃতির সর্বব্যাপী প্রভাবের ক্ষেত্রে কোন কিছু নির্বাচনে মানুষের
স্বাধীনতা বা পছন্দের উপর গুরুত্ব প্রদান করা। প্রাকৃতিক শক্তিগুলির কাঠামোর মধ্যে মানুষের সক্রিয়
উদ্যোগ গ্রহণ, ব্রতী হওয়া এবং গতিময়তার ফলই হচ্ছে ভ‚-পৃষ্ঠে মানুষের কর্মকান্ডের ধরণ। প্রাকৃতিক
সীমাবদ্ধতার উপর গুরুত্ব না দিয়ে মানুষের কার্যকলাপের উদ্দেশ্যের উপর সম্ভাব্যতাবাদীরা অধিকতর
গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন। সম্ভাব্যতাবাদীগণ মনে করেন যে, সব শেষে মানুষই একমাত্র সিদ্ধান্ত
গ্রহণকারী এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপাদানগুলি প্রকৃতির সাথে সম্পর্কযুক্ত। স্থান ও কাল ভেদে মানুষ নিজ
পছন্দমত বিকল্প হিসাবে উপাদানগুলির যুক্তিসম্মত ব্যবহার করতে পারে - একে সম্ভাব্য নির্বাচন বলা
যেতে পারে। নির্বাচনটি চূড়ান্ত হলে নির্দিষ্ট পরিবেশে মানুষ তা অভিযোজন (অফধঢ়ঃধঃরড়হ) হিসাবে
ব্যবহার করে। এই দৃষ্টিভঙ্গিই সম্ভাব্যতাবাদ নামে পরিচিত। ভিদাল দ্য লা বøাশ, ব্রæনে, বোথ্যান, কার্ল-
ও-সাওয়ার প্রমুখ ভূগোলবিদ আঞ্চলিক পরিচালনায় সম্ভাব্যতাবাদ মতবাদের উন্নয়ন সাধন করেছেন।
ভ‚পৃষ্ঠের দুই বা ততোধিক অংশের সমরূপতা থাকতে পারে না। প্রত্যেক অঞ্চলের ভিন্নতর প্রাকৃতিক ও
মানবিক বিষয়াদির অনুপম সমম্বয় রয়েছে। এরূপ বিভিন্ন পরিবেশের আওতায় কার্যাবলীর একাধিক
সম্ভাবনা রয়েছে এবং এর মধ্যে সর্বোত্তম সম্ভাবনাটিই মানুষ বেছে নেয়।
ভিদাল দ্য লা বøাশ (১৮১৫-১৯১৮) প্রাকৃতিক নিমিত্তবাদ অস্বীকার করে তিনি তাঁর মতবাদ উপস্থাপন
করেন। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষকে একাধিক সম্ভাবনাসমূহ (চড়ংংরনরষরঃরবং) এবং
অন্তরায়সমূহ (খরসরঃধঃরড়হং) প্রদান করে থাকে। তিনি এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক পরিবেশকে ‘ভৌগোলিক
পরিবেশ' বলে অভিহিত করেছেন। এই পরিবেশ সম্ভাব্যতার একটি পরিধি সরবরাহ করে, যার আওতায়
মানুষ তার প্রয়োজন, ইচ্ছা এবং স্বার্থের সর্বোত্তম ব্যবহার করে। এই মতবাদ পরবর্তিতে ফরাসী
ইতিহাসবিদ লুমিয়েঁ ফেবরে তাঁর ‘এবড়মৎধঢ়যরপধষ ওহঃৎড়ফঁপঃরড়হ ঃড় ঐরংঃৎড়ৎু' গ্রন্থে পূর্ণ রূপে প্রতিষ্ঠা
করেন। তিনি ‘সম্ভাব্যতা' বলতে ভ‚-পৃষ্ঠে মানুষের কর্মকান্ডের দ্বারা একটি বাঁধাধরা প্রাকৃতিক শক্তিদ্বারা
চালিত মানুষের উদ্যম ও গতিশীলতার ফলাফলকে বুঝিয়েছেন। তাঁর মতে, মানুষ একটি গুরুত্বপূর্ণ
শক্তি। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তার অভিলব্ধ শ্রম ও সাহসিকতা এবং কোন কাজ করার সিদ্ধান্ত
গ্রহণের ক্ষমতা তাকে ভ‚-পৃষ্ঠে সবচেয়ে শক্তিশালী শক্তিরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
সম্ভাব্যতাবাদীরা পার্থিব, সামগ্রীক এবং ভ‚-পৃষ্ঠের সব কিছুর আন্ত:সম্পর্কের বিষয় বিবেচনা করে থাকে।
নিমিত্তবাদীদের চেয়ে সম্ভাব্যতাবাদীরা মানুষের কাজের উপর বেশী গুরুত্ব প্রদান করেছে। ব্রæনে আরও
উল্লেখ করেন যে, মানুষের ইতিহাস পৃথিবীর প্রাকৃতিক উপাদানগুলির সাথে গভীরভাবে আবদ্ধ।
স্থানভেদে এবং সময়ের ব্যবধানে প্রকৃতির সীমাবদ্ধতার জন্য মানুষের কার্যকলাপে বিভিন্নতা দেখা দেয়।
সে তার নিয়ন্ত্রণের ক্রম বর্ধমান পন্থা দ্বারা প্রাকৃতিক বাধা অতিক্রম করে এবং নিজের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা
করে। ভ‚-পৃষ্ঠের সব কিছুই মানুষের জন্য অভ্যাসের ব্যাপার - প্রাকৃতিক বিষয়াদি দৃঢ়ভাবে উপলব্ধি করা
এবং ঐ সব বিষয়ের যৌক্তিক অভিযোজনের মাধ্যমে সে সহজেই প্রাকৃতিক সীমাব্ধতা অতিক্রম করতে
পারে।
মার্কিন ভ‚গোলবিদ বোম্যান (১৭৭৮-১৯৫০) দক্ষিণ আমেরিকা ও ইউরোপে ভ্রমণ করে পরিবেশের
উপর মানুষের নিয়ন্ত্রণের বহু উদাহরণ লক্ষ্য করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে, কলম্বাসের পূর্ববর্তী ফ্রান্সে
আলু, ভ‚ট্টা, টমেটো প্রভৃতি ফসল অজ্ঞাত ছিল। কমপক্ষে দুইটি জলবায়ুর জ্ঞান ইউরোপীয় অর্থনীতিকে
ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত করেছে। অর্থাৎ প্রকৃতি মানুষকে কোন একটি নির্দিষ্ট পথে চালিত করে না। ইহা
কতিপয় সুযোগ-সুবিধা দান করে এবং মানুষ সেগুলি থেকে সর্বোত্তমটি বেছে সম্ভাব্যতাবাদীরা মানুষের
কার্যকলাপের ক্ষেত্রে তার অভ্যাস বা আচরণের উপর জোর দিয়েছেন। এই আচরণ একবার প্রতিষ্ঠিত
হলে তা পরিবেশের অংশে পরিণত হয় এবং তা পরবর্তী বিকাশের উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে।
এক্ষেত্রে মানুষের পরিবেশগত প্রত্যক্ষণও (ঊহারৎড়হসবহঃধষ চবৎপবঢ়ঃরড়হ) তীক্ষè হয় এবং পরবর্তী
সিদ্ধান্ত গ্রহণে তা সহায়ক হয়।
নব্য নিমিত্তবাদ
নব্য নিমিত্তবাদ প্রাকৃতিক নিমিত্তবাদ অপেক্ষা অনেকটা নমনীয় মতবাদ। এখানে নিমিত্তবাদীদের
নিয়েন্ত্রণের (ঈড়হঃৎড়ষ) স্থলে প্রভাব (জবংঢ়ড়হংব) বা সাড়া এবং ফলশ্রæতিতে খাপ খাওয়ানোর
(অফলঁংঃসবহঃ) প্রতি নব্য নিমিত্তবাদীরা গুরুত্ব প্রদান করেছেন। একে গ্রিফিথ টেইলর ‘আস ও যাও'
(ঝঃবঢ় ধহফ মড়) নিমিত্তবাদ নামে অভিহিত করেছেন।
তাঁর মতে মানুষ কোন দেশের উন্নয়ণকে দ্রæততর করতে, ধীর করতে বা বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু
চূড়ান্ত বিবেচনায় কোন দেশের উত্তম অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিরাট অংশ প্রকৃতি দ্বারা নির্ধারিত হয়। মানুষ
যদি বিজ্ঞ হয় তবে সে অবশ্যই প্রাকৃতিক পরিবেশের নির্ধারিত পথ থেকে বিচ্যুত হবে না। প্রসঙ্গতে বলা
যায় যে, বন্যা প্রবণ অঞ্চলে একটি মাত্রা বা পর্যায় পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কিন্তু একটি পর্যায়ে
প্রাকৃতিক পরিবেশ নিজস্ব নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করে এবং গৃহিত ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
একইভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ নির্দেশিত পথ বিচ্যুতির ফলাফল হিসাবে গ্রীন হাউস ইফেষ্টসহ বিভিন্ন
মানব সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ উদাহরণ হিসাবে দেখা যায়।
নব্য নিমিত্তবাদীদের মতে মানুষ একটি নগরের যানবাহন নিয়ন্ত্রকের মত যানবাহনের সংখ্যা বা হার
পরিবর্তন করতে পারে কিন্তু পরিকল্পনাকে বা উন্নয়নের দিক পরিবর্তন করতে পারে না। নব্য নিমিত্তবাদী
মতবাদ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে মানুষের চাহিদাসমূহ প্রকৃতির সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত।
যেমন, সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে যেখানে পর্যাপ্ত মাছের সরবরাহ আছে সেখানে বিক্রেতা ইচ্ছা করলেই
নির্দিষ্ট দামের বেশী মূল্যে মাছ বিক্রি করতে পারবে না এবং ক্রেতাও তা কিনতে চাইবে না। এখানে
চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সবচেয়ে বড় সমম্বয়কারী প্রকৃতি নিজেই।
পাঠসংক্ষেপ:
প্রাকৃতিক নিমিত্তবাদ ও সম্ভাব্যতাবাদ দুইটি পরস্পর বিরোধী মতবাদ। নিমিত্তবাদে মানুষকে প্রাকৃতিক
পরিবেশের আজ্ঞাবহরূপে চিত্রিত করা হয়। সম্ভাব্যতাবাদে পরিবেশগত শক্তিকে স্বীকার করে মানুষের
সাংস্কৃতিক ও প্রযুক্তিগত শক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে, নব্য নিমিত্তবাদে মানুষ তার কর্মকান্ডের
নিয়ন্ত্রক তবে নির্দিষ্ট পরিবেশে এই নিয়ন্ত্রণের একটা সীমারেখা আছে। এই সীমারেখা অতিক্রম করা
বিপর্যয়মূলক হতে পারে। আধুনিক ভ‚গোলে প্রাকৃতিক পরিবেশকে প্রতিবন্ধক বলে মনে করা হয় না;
বরং মানব পরিবেশ মিথষ্ক্রিয়াকে অধিকতর গুরুত্বপ্রদান করা হয়, যেখানে মানুষ এবং পরিবেশের মধ্যে
একটা আন্ত:সম্পর্কে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১.৬:
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন:
১. শূন্যস্থান পূরণ করুন:
১.১. নির্দিষ্ট মানব সংস্কৃতি পরিচালিত জ্ঞান ও জীবন যাত্রার বহি:প্রকাশ হলো -----পরিবেশ।
১.২. সংস্কৃতি এবং সামাজিক ----- মানুষের সৃষ্টি।
১.৩. মানুষের সংস্কৃতি ও ----- প্রকৃতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে।
১.৪. মুসলিম দেশসমূহে মদ ও ----- উৎপাদন না হওয়ার পেছনে রয়েছে ধর্মীয় অনুশাসন ও
মূল্যবোধ।
১.৫. মানবজীবন ও ----- পরিবেশ একে অপরের সাথে ঘনিষ্টভাবে যুক্ত।
১.৬. প্রাকৃতিক নিমিত্তবাদ ----- শতকে বিশেষ গুরত্ব লাভ করে।
১.৭. প্রকৃতি ----- কার্যকরণ সম্পর্ক দ্বারা আবদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করেছে।
১.৮. প্রাকৃতিক নির্বাচন ----- মতবাদশ্রয়ী।
২. সত্য হলে ‘স' মিথ্যা হলে ‘মি' লিখুন:
২.১. হিপোক্রেটেস (৪২০ খৃ.পূ.) তাঁর ‘ঙহ অরৎ, ডধঃধৎ ধহফ চষধপবং' নামক গ্রন্থে এশিয়া ও আফ্রিকার
অধিবাসীদের জীবন-যাত্রার মধ্যে বৈপরীত্য উল্লেখ করেছেন।
২.২. এরিষ্টটল এর গ্রন্থের নাম 'চড়ষরঃরপং'।
২.৩. স্ট্রাবো রোমের উত্থান ও গৌরব স্পেনের আকৃতি ভ‚-প্রকৃতি, জলবায়ু ইত্যাদি দ্বারা ব্যাখ্যা করার
চেষ্টা করেছেন।
২.৪. বোদিন (১৬ শতক) মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের উপর পরিবেশের প্রভাব বিশ্লেষণ করতে গিয়ে
দেখিয়েছেন যে, উত্তরাঞ্চলের লোকেরা পাশবিক, বর্বর, নিষ্ঠুর-নৃশংস এবং দু:সাহসিক কাজে
উৎসাহী।
২.৫. মানবতাবাদী মঁতেস্কু শীত প্রধান অঞ্চলের মানুষ দক্ষিণের আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলের মানুষের চাইতে
অধিক শক্তিশালী, সাহসী, মনখোলা, স্থিরসংকল্প এবং কামাতুর।
২.৬. ইম্যানুয়েল কান্ট এর মতে শীত প্রধান অঞ্চলের অধিবাসীরা অতিমাত্রায় অলস ও ভীরু।
২.৭. রিটার (১৭৭৯-১৮৫৯) সর্ব প্রথম পরিবেশ সম্পর্কীয় ধারণার পরিবর্তন ঘটান।
২.৮. হামবোল্ড উপলব্ধি করেছেন যে, পরিবেশ মানুষকে প্রভাবিত করে।
২.৯. হান্টিনটন এর গ্রন্থের নাম ‘চৎরহপরঢ়ষবং ড়ভ ঐঁসধহ এবড়মৎড়ঢ়যু'।
২.১০. বাক্ল এর গ্রন্থের নাম 'ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ঐঁসধহ ঈরারষরুধঃরড়হ রহ ঊহমষধহফ'।
২.১১. ভিদাল-দ্য-লা-বøাশ (১৮১৫-১৯১৮) প্রাকৃতিক নিমিত্তবাদ অস্বীকার করে তিনি তাঁর মতবাদ
উপস্থাপন করেন।
২.১২. নব্য নিমিত্তবাদ প্রাকৃতিক নিমিত্তবাদ অপেক্ষা অনেকটা নমনীয় মতবাদ।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন:
১. পরিবেশ কাকে বলে? পরিবেশের শ্রেণীভাগ করুন।
২. সামাজিক পরিবেশের বৈশিষ্টাবলী আলোচনা করুন।
৩. সংস্কৃতি ও সামাজিক পরিবেশের মধ্যে সম্পর্ক নির্দেশ করুন।
৪. মানুষ-পরিবেশ সম্পর্ক বলতে কি বুঝেন?
৫. প্রাকৃতিক নিমিত্তবাদ মতবাদ কি?
৬. সম্ভাব্যতাবাদ মতবাদ কি?
রচনামূলক প্রশ্ন:
১. সামাজিক পরিবেশ কাকে বলে? প্রাকৃতিক বনাম সামাজিক পরিবেশ বর্ণনা করুন।
২. মানুষের উপর পরিবেশের প্রভাব সংক্রান্ত মতবাদ সমূহের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করুন।
৩. প্রাকৃতিক নিমিত্তবাদ মতবাদ সমালোচনাসহ আলোচনা করুন।
৪. সম্ভাব্যতাবাদ মতবাদ সমালোচনাসহ আলোচনা করুন।
৫ নব্য নিমিত্তবাদ মতবাদ আলোচনা করুন।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ