বিভিন্ন নিয়ামকের প্রভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে জলবায়ুর উপাদানসমূহের বিভিন্নতা সৃষ্টি হয়।
কতকগুলো উপাদানের সমম্বয়ে এক একটি জলবায়ুর সৃষ্টি হয়, ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বিশেষ
জলবায়ু অঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবীর জলবায়ুর এই সকল বিন্যাস জলবায়ু বিজ্ঞানীগণ বিভিন্নভাবে
শ্রেণীবিভাগ করেছেন। শ্রেণীবিভাগের এই বিভিন্নতা জলবায়ুর নির্দিষ্ট উপাদানের উপর ভিত্তি করে এবং
বিশেষ প্রয়োজন লক্ষ্য করে তৈরী করা হয়েছে। যেমন, তাপমাত্রা ও বারিপাতের উপর ভিত্তি করে
জলবায়ুর যে শ্রেণীবিভাগ করা হয় তা উদ্ভিদের শ্রেণীবিভাগে সহায়ক হলেও আবহাওয়ার পূর্বাভাসে তার
প্রয়োজনীয়তা দেখা যায় না (আহমেদ ১৯৯৭)। বিগত প্রায় একশত বৎসর পৃথিবীর জলবায়ুকে
নানাভাবে শ্রেণী বিভাজন করা হয়েছে। এগুলিকে তিনটি প্রধান গোত্রে ভাগ করা যায় (আহমেদ,
১৯৯৭):
সারণী: আবহাওয়া ও জলবায়ুর নিয়ামক ও উপাদান:
নিয়ামক উপাদান
১। পৃথিবীর গতি ও ঋতু পরিবর্তন ১। বায়ুর তাপ ও চাপ
২। অক্ষাংশ ও সূর্যরশ্মির তির্যকতা ২। বায়ুপ্রবাহের দিক ও গতিবেগ
৩। জল ও স্থলভাগের অবস্থান ৩। বায়ুর আর্দ্রতা
৪। ভ‚মির উচ্চতা ও পাহাড়-পবর্তের অবস্থান ৪। মেঘাচ্ছন্নতা ও মেঘের প্রকার
৫। চাপ বলয়সমূহ ও বায়ুপ্রবাহ এবং ৫। বর্তমান আবহাওয়া
৬। সমুদ্র স্রোত ৬। বৃষ্টিপাতের পরিমান
(সূত্র: আহমেদ, ১৯৯৭)
পর্যবেক্ষণ ভিত্তিক বা উদ্ভিদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত শ্রেনীবিভাজন (এবহবৎরপ ঈষধংংরভরপৎধঃরড়হ): এই
গোত্রের বিশেষ উল্লেখযোগ্য কোপেন (১৯৩৬) -এর জলবায়ু শ্রেনীবিভাগ। গড় মাসিক ও বার্ষিক এবং
শীত ও গ্রীষ্মের তাপমাত্রা ও বারিপাত এবং শুষ্কতার অনুপাত বা সূচকের উপর ভিত্তি করে তিনি পৃথিবীর
জলবায়ুর আঞ্চলীকরণ করেছেন। এই ভিত্তি প্রাকৃতির উদ্ভিদকে সামগ্রিক জলবায়ুর বহি:প্রকাশ ধরা
হয়েছে। এ পদ্ধতিতে বিশ্ব জলবায়ু অঞ্চল ভ‚গোলে সর্বাধিক পঠিত।
এই পটভ‚মিকায় কোপেন (কস্খঢ়ঢ়বহ) নি¤œরূপ ভিত্তিতে বিশ্ব জলবায়ুর শ্রেণীবিভাজন করেছেন:
(ক) তাপমাত্রা ভিত্তি : নি¤œবর্নিত ছয়টির মধ্যে পাঁচটি মাসিক গড় তাপমাত্রা অনুযায়ী জলবায়ু শ্রেণীকরণ
করা হয়েছে:
অ - নিরক্ষীয় বৃষ্টিবহুল জলবায়ু। শীতলতম মাসের তাপমাত্রা ১৮০ সে (৬৪.৪০ ফা) -এর উপরে;
ই - শুষ্ক জলবায়ু;
ঈ - মৃদু উষ্ণতাযুক্ত বৃষ্টিবহুল জলবায়ু। শীতলতম মাসে -৩০ সে. এবং ১৮০ সে এবং উষ্ণতম মাসে
১০০ সে. (৫০০ ফা) তাপমাত্রা ;
উ - তীব্র শীতসম্পন্ন মধ্য মহাদেশীয় জলবায়ু। শীতলতম মাসে - ৩০ সে. এবং উষ্ণতম মাসে ১০০
সে. এর উপরে তাপমাত্রা।
ঊ - তুন্দ্রা জলবায়ু। উষ্ণতম মাসে তাপমাত্রা ০০ থেকে ১০০ সে.।
ঋ - স্থায়ী বরফাচ্ছন্ন জলবায়ু। উষ্ণতম মাসে তাপমাত্রা ০০ সে. এর নিচে।
এই শ্রেনীভাজনে তাপমাত্রা ভিত্তিক বিভিন্ন উপাদানের উপর ভিত্তি করে, বিশেষ করে উদ্ভিজ্জ
বিন্যাস শ্রেনী প্রধানত: বিবেচনা করা হয়েছে
শুষ্কতা ভিত্তি : এই ভিত্তি সংক্ষেপে নি¤œরূপ :
স্তেপসিন ভ‚মি (ইং) মরু সীমান্ত ইড অরণ্যভ‚মি স্তেপ সীমান্ত
প্রধান শীতকালীন বৃষ্টিপাত ৎ/ঃ=১ ৎ/ঃ =২
বারিপাত বন্টন সুবিন্যস্ত ৎ/(ঃ+৭)=১ ৎ/(ঃ+৭)=২
উষ্ণ গ্রীষ্মকালীন বারিপাত ৎ/(ঃ+১৪)=১ ৎ(ঃ+১৪)=২
যখন, ৎ= বার্ষিক বারিপাত (সে.মি.), ঃ = গড় বার্ষিক তাপমাত্রা (০০ সে.)
বৃষ্টিপাতের অনুপাত বন্টনের ভিত্তিতে অ, ঈ ও উ জলবায়ুর গোত্রসংখ্যাকে আরও কয়েকটি শ্রেণীতে
বিভক্ত করা হয়েছে :
ভ = সারা বছর ধরে বৃষ্টিপাত। কোন সময়ই শুষ্ক নয়।
ং = গ্রীষ্মকাল শুষ্ক এবং শীতকালে বৃষ্টি।
=ি শীতকাল শুষ্ক এবং গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাত।
স = গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী বায়ু প্রাবহজনিত বৃষ্টিপাত।
য = গড় বার্ষিক তাপমাত্রা ১৮০ সে. এর বেশী।
শ = গড় বার্ষিক তাপমাত্রা ১৮০ সে. এর কম।
হ = ঘন ঘন কুয়াশা।
ধ = উষ্ণ গ্রীষ্মকাল। উষ্ণতম মাসের গড় তাপমাত্রা ২২০ সে.-এর বেশী।
ন = শীতল গ্রীষ্মকাল। উষ্ণতম মাসের গড় তাপমাত্রা ২২০ সে.- এর কম।
এসএসএইচএল বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
ইউনিট-১: ভ‚গোল: একটি মানবিকী দৃষ্টিভঙ্গি পৃষ্ঠা-৪৯
উপরের প্রেক্ষিতে সারণী ২.৩.১ কোপেনের বিশ্ব জলবায়ু অঞ্চল নি¤œরূপ প্রধান শ্রেণীগত বৈশিষ্ট্য
দেখানো হয়েছে এবং এই বিন্যাস একটি আনুমানিক মহাদেশে চিত্র ২.৩.১ এ দেখানো হয়েছে।
সারণী ২.৩.১ কোপেন-এর বিশ্ব জলবায়ু অঞ্চলের শ্রেণীগত বৈশিষ্ট্য
অ = অঃ, অ,ি অস
ই = ইং, ইংয, ইংশ, ইংয,ি ইংযং, ইংহ, ই,ি ইযি, ইশি, ইহি
ঈ = ঈভধ, ঈভন, ঈধি, ঈংধ, ঈংন
উ = উভধ, উভন, উধি, উনি,উভপ.
ঊ = ঊঃ
ঋ = ঋ.
চিত্র ২.৩.১ অ জলবায়ুর শ্রেণীবিভাজন। কোপেন এর জলবায়ুর শ্রেণীবিভাজন; ই. ফ্লন এর
কোপেন-এর বিশ্ব জলবায়ুর আঞ্চলিক শ্রেণীবিভাজন মূলত: বারিপাত, বৃষ্টিপাতের ঋতুগত বন্টন ও
বায়ুর তাপমাত্রার ভিত্তিতে এবং প্রধান প্রধান উদ্ভিজ্জ অঞ্চলের সীমারেখাকে মনে রেখে তৈরী করা
হয়েছে। তাঁর মতে উদ্ভিজ্জের বিকাশ কেবল বৃষ্টিপাতের পরিমানের উপর নির্ভরশীল নয়, বাষ্পীভবন ও
প্রস্বেদনের উপরও তা নির্ভর করে। এই বিষয়াদি তিনি তাঁর শ্রেণীবিভাজনে গুরুত্বের সাথে ব্যবহার
করেছেন। কোন কোন জলবায়ুবিদদের মতে এই দৃষ্টিভঙ্গি অভ্রান্ত নয় এবং বিভিন্ন স্থানে জলবায়ু ও
উদ্ভিজ্জের বিকাশের সস্পর্কের মধ্যে ব্যতিক্রম দেখা যায়। অপরদিকে কোপেন এর এই শ্রেণীবিভাজন
উদ্ভিজের বিকাশের উপর নির্ভরশীল এবং পূর্বানুমান পক্ষপাতদুষ্ট।
জলবায়ুতে জলীয় উপাদান ভিত্তিক শ্রেনীবিভাজন (গড়রংঃঁৎব ইঁফমবঃ ঈষধংংরভরপধঃরড়হ)
এই শ্রেণীবিভাজন প্রধানত বায়ুতে জলীয় বাষ্প, তথা বৃষ্টিপাতের তারতম্য ভিত্তিক। বৃষ্টিপাতের
ফলপ্রসূতা, বায়ুতাপের কার্যকারিতা এবং বৃষ্টিপাতের ঋতুগত বন্টনের ভিত্তিতে থর্নওয়েট (১৯৪৮) এই
শ্রেণীবিভাজন করেন। প্রতিমাসের বৃষ্টিপাত ও সম্ভাব্য বাষ্পীভবন প্রস্বেদন এবং পানির-সঞ্চয় অপচয়
(ইঁফমবঃ) ভিত্তিতে এ শ্রেণীবিভাজন করা হয়েছে। মাটি থেকে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে এবং উদ্ভিজ্জ থেকে
প্রস্বেদনের মাধ্যমে জলীয় পদার্থের অবচয় হয়। ভ‚-পৃষ্ঠে পানির সরবরাহ অব্যাহত থাকলে সর্বোচ্চ
পরিমান পানি বাষ্পীভ‚ত ও প্রস্বেদিত হতে পারে। একে সম্ভাব্য বাষ্পীভবন প্রস্বেদন বলে। বাষ্পীয়প্রস্বেদনের পরিমান স্থানীয়ভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হলেও ব্যাপক এলাকার জন্য তা সম্ভব নয়। এজন্য
বায়ুর তাপমাত্রার ভিত্তিতে মাসিক বাষ্পীভবন-প্রস্বেদন প্রাক্কলনের জন্য থর্নওয়েট (১৯৪৮) একটি সূত্র
প্রদান করেন। এর দ্বারা বারো ঘন্টা দীর্ঘ দিবসের হিসাব ত্রিশ দিনের মাসের জন্য সম্ভাব্য বাস্পীভবনপ্রস্বেদনের প্রাক্কলন করা হয় :
চঊ = ১.৬(১০ঃ
/ও)ধ
যখন, চঊ = কোন মাসের সম্ভাব্য বাষ্পীভবন-প্রস্বেদন (ওস);
ঃ = একই মাসের গড় তাপমাত্রা (০০ সে.);
ও = বার্ষিক তাপসূচক, যা হলো বারো মাসে (ঃ/৫)১.৫২৪ - এর যোগফল, এবং
ধ = (০.৬৭৫১৩ - ৭৭.১১২ + ১৭.৯২০.ও + ৪৯২.৩৯০) ∞১০৬.
এখনো উল্লেখ্য যে, কোন মাসের দৈর্ঘ্য যদি ৩০ দিনের চাইতে ভিন্ন হয় তাহলে উপরোক্তভাবে লব্ধ চঊ-
কে ঐকিক নিয়মে সে মাসের দৈর্ঘ্যের (২৮, ২৯ বা ৩১ দিন) জন্য সমম্বয় করে নিতে হবে।
কোন মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমান, সম্ভাব্য বাষ্পীয়-প্রস্বেদনের পরিমান, মাটিতে অবস্থিত জলীয় পদার্থের
পরিমানের উপর ভিত্তি করে হিসাব-নিকাশ রক্ষণ পদ্ধতিতে প্রকৃত বাষ্পীভবন-প্রস্বেদনের পরিমান,
জলীয় পদার্থের উদ্বৃত্তি (ঝ) ও ঘাটতি (উ) নির্ণয় করা যায়। এর ভিত্তিতে বছরের মোট ঝ ও উ নির্ণয়
করে থর্নওয়েট জলীয় পদার্থের সূচক (গড়রংঃঁৎব ওহফবী, ওস) নির্ণয় করার জন্যে থর্নওয়েট যে ফর্মুলা
প্রদান করেন তা হলো:
ওস = (১০০ঝ - ৬০উ)/চঊ
থর্নওয়েট ও ম্যাথার (১৯৫৫) উপরের ফর্মূলাকে সংশোধন করে নিম্মোক্তভাবে প্রকাশ করেন :
ওস = ১০০ (ঝ - উ)/চঊ
উপরের বর্নিত পদ্ধতিতে পাওয়া জলীয় পদার্থের সূচকের বিস্তৃতিকে থর্নওয়েট নয়টি শ্রেণীতে বিভক্ত
করেন। সেগুলিকে তিনি সাংকেতিকভাবে (ইংরেজী বড় হাতের অক্ষর দিয়ে) ও বর্ননামূলকভাবে প্রকাশ
করেন (সারণী ২.৩.২)।
বৃষ্টিপাতের ঋতুগত বন্টনের ভিত্তিতে থর্নওয়েট তাঁর আর্দ্রতার শ্রেণীসমূহের প্রত্যেকটিকে চারটি
উপশ্রেণীতে বিভক্ত করেন। সেগুলি হলো :
ৎ = সারা বছর ধরে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত,
ং = গ্রীষ্মকালে অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত,
ি = শীতকালে অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত এবং
ফ = সারা বছর ধরে অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত।
সারণী ২.৩.২ জলীয় পদার্থের সূচকের ভিত্তিতে থর্নওয়েটকৃত জলবায়ুর শ্রেণীবিভাগ
জলীয় পদার্থের শ্রেণীভাজন জলাবায়ুর আর্দ্রতা শ্রেণীভাগ
সূচক (ওস) চিহ্ন
১০০''এর উপরে অ অতি আর্দ্র অঞ্চল
৮০ - ১০০ ই৪ আর্দ্র অঞ্চল-৪
৬০ - ৮০ ই৩ আর্দ্র অঞ্চল-৩
৪০ - ৬০ ই২ আর্দ্র অঞ্চল-২
২০ - ৪০ ই১ আর্দ্র অঞ্চল-১
০ - ২০ ঈ২ প্রায় আর্দ্র অঞ্চল
- ৩৩ - ০ ঈ১ প্রায় শুষ্ক অঞ্চল
- ৬৭ - - ৩৩ উ অর্ধ শুষ্ক অঞ্চল
-১০০ - - ৬৭ ঊ শুষ্ক অঞ্চল
(সূত্র : থর্নওয়েট, ১৯৪৮)
তাছাড়া, তাপমাত্রা ও দিবসের দৈর্ঘ্যরে ভিত্তিতে সম্ভাব্য বাষ্পীয়-প্রস্বেদন নির্ণয় করা হয় বলে একে
(অর্থাৎ চঊ কে) উত্তাপের দক্ষতার সূচক (ঞযবৎসধষ ঊভভরপরবহপু ওহফবী বা ঞঊ ওহফবী) হিসাবেও
ব্যবহার করা হয়। এ সূচকের বিস্তৃতিকেও (ঞঊ ওহফবী জধহমব) তিনি নয়টি শ্রেণীতে বিভক্ত করেন
(সারণী ২.৩.৩)।
জলীয় পদার্থের সূচক, বৃষ্টিপাতের ঋতুগত বন্টন এবং উত্তাপের দক্ষতার সমম্বয়ে তত্ত¡গতভাবে সারা
পৃথিবীকে ১২০ টি সম্ভাব্য জলবায়ু শ্রেণীতে বিভক্ত করা গেলেও থর্নওয়েট প্রকৃতপক্ষে মোট ৩২ টি
জলবায়ু শ্রেণী শনাক্ত করতে পেরেছেন (আহমেদ ১৯৯৯)।
সারণী ২.৩.৩. উত্তাপের দক্ষতা সূচকের ভিত্তিতে থর্নওয়েটকৃত জলবায়ুর শ্রেণীবিভাগ।
জলীয় পদার্থের সূচক (ঞঊ) শ্রেণীভাজন চিহ্ন উত্তাপ অঞ্চল
১১৪''র উপরে অ অতি উষ্ণ অঞ্চল
৯৯.৭ - ১১৪ ই৪ উষ্ণ অঞ্চল - ৪
৮৫.৫ - ৯৯.৭ ই৩ উষ্ণ অঞ্চল - ৩
৭১.২ - ৮৫.৫ ই২ উষ্ণ অঞ্চল - ২
৫৭.০ - ৭১.২ ই১ উষ্ণ অঞ্চল - ১
৪২.৭ - ৫৭.০ ঈ২ উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল
২৮.৫ - ৪২.৭ ঈ১ শীতল নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল
১৪.২ - ২৮.৫ উ তুন্দ্রা অঞ্চল
০ - ১৪.২ ঊ তুষার অঞ্চল
(সূত্র: থর্নওয়েট, ১৯৪৮)
থর্নওয়েটের সর্বপ্রথম সম্ভাব্য বাষ্পীয়-প্রস্বেদন (চড়ঃবহঃরধষ ঊাধঢ়ড়-ঃৎধহংঢ়রৎধঃরড়হ) শব্দটি প্রচলন
করেন। এ শব্দটির মধ্যে সন্নিহিত রয়েছে জলবায়ুর কয়েকটি প্রধান উপাদান, তাপমাত্রা দিবসের দৈর্ঘ্য
এবং উত্তাপের দক্ষতা। তাছাড়া বৃষ্টিপাতের পরিমান, সম্ভাব্য বাষ্পীয়-প্রস্বেদন ও মাটিতে অবস্থিত জলীয়
পদার্থের পরিমানের উপর ভিত্তি করে প্রকৃত বাষ্পীভবন, মাটিতে জলীয় পদার্থের পরিমানের উপর ভিত্তি
করে প্রকৃত বাষ্পীভবন, মাটিতে জলীয় পদার্থের উদ্বৃত্তি ও ঘাটতি নির্ণয়ের পদ্ধতিও তিনি প্রনয়ন করেন।
কোন স্থানের বৃষ্টিপাত ও সম্ভাব্য বাষ্পীভবন প্রস্বেদনের বার্ষিক চক্রকে (অহহঁধষ ঈুপষব) লেখ
(এৎধঢ়য)-এর উপর আঁকলে ঐ স্থানের প্রকৃত বাষ্পীভবন এবং মাটির জলীয় পদার্থের উদ্বৃত্তি ও ঘাটতি
নির্ণয় করা যায় (চিত্র-২.৩.২)। বছরের কোন সময়ে মাটিতে জলীয় পদার্থের ঘাটতি এবং কোন সময়ে
উদ্বৃত্তি ঘটে তাও এ লেখ থেকে দেখা যায়। বছরের পানি ঘাটতির সময়ে কোন মাসে কতটুকু পানি
ঘাটতি দেখা যায় সে ভিত্তিতে পানি সেচের পরিমান নির্ণয় করা যায়। জলবায়ুর কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ
উপাদান এবং মাটির জলীয় পদার্থের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে জলবায়ুর এ শ্রেণীবিভাগ করা
হয়েছে বলে থর্নওয়েট অতি যুক্তিসঙ্গতভাবেই এ শ্রেণীবিন্যাস “যুক্তিভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ” (জধঃরড়হধষ
ঈষধংংভরপধঃরড়হ) নামে আখ্যায়িত করেছেন।
চিত্র ২.৩.২ কতিপয় ষ্টেশনের বৃষ্টিপাত, বাষ্পীভবন-প্রস্বেদন এবং মাটির জলীয় পদার্থের উদ্ধত্তি ও ঘাটতি।
থর্নওয়েট জলবায়ুর শ্রেণীবিভাগ উত্তর আমেরিকার পূর্বাঞ্চলে অত্যন্ত সাফল্যজনকভাবে প্রয়োগ করা
হয়েছিল। এ অঞ্চলে আর্দ্রতা ভিত্তিক জলবায়ুর সীমারেখা এবং উদ্ভিদ অঞ্চলের সীমারেখার মধ্যে বেশ
সামঞ্জস্য রয়েছে। তবে উষ্ণমন্ডলে এবং অর্ধশুষ্ক অঞ্চলে এ শ্রেনীবিভাগ সাফল্যজনকভাবে প্রয়োগ করা
হয়নি।
উৎপত্তিগত শ্রেণীবিভাগ (এবহবঃরপ ঈষধংংরভরপধঃরড়হ)।
পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের যে সব জলবায়ু দেখা যায় সেগুলির উৎপত্তিগত কারণ এবং বায়ুমন্ডলের
সাধারণ সঞ্চালনের (এবহবৎধষ ঈরৎপঁষধঃরড়হ ড়ভ ঃযব অঃসড়ংঢ়যবৎব) সঙ্গে জলবায়ুর সম্পর্কের উপর ভিত্তি
করে জলবায়ুর যেসব শ্রেণীবিভাগ প্রকাশিত হয়েছে তার মধ্যে হারম্যান ফ্লনের (১৯৫০) শ্রেণীবিভাগ
অন্যতম।
সারণী ২.৩.৪: ফ্লনের পদ্ধতিতে জলবায়ুর শ্রেনীবিভাগ।
ফ্লনের জলবায়ুর শ্রেণী
বিভাগ
বৃষ্টিপাত বায়ুচাপ ও বায়ুপ্রবাহ বলয় বিপরীত
ঋতুর বায়ু
প্রবাহ
কোপেন-এর
শ্রেণী
বিভাজন
গ্রীষ্ম শীত
উষ্ণমন্ডলের অভ্যন্তর
অঞ্চল
সারা বছর ধরে
বৃষ্টিপাত
আট মাসের বেশী নিরক্ষীয়
পশ্চিমা প্রবাহ, অথবা
নিরক্ষীয় শান্ত বলয়।
ঞ ঞ অভ, অস
উষ্ণ মন্ডলের প্রান্তভাগ
বা ক্রান্তীয় অঞ্চল
গ্রীষ্মকালীন
বৃষ্টিপাত
আট মাসের কম নিরক্ষীয়
পশ্চিমা প্রবাহ, বাকি সময়
অয়ন বায়ু।
ঞ চ অি উচ্চ
ভ‚মিতে ঈি
উপক্রান্তীয় শুষ্ক অঞ্চল
+
সাধারণত: শুষ্ক উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বা
অয়ন বায়ুর উৎপত্তি স্থল।
চ চ ই,ি ইঝ
উপক্রান্তীয় শীতকালীন
বৃষ্টিপাত অঞ্চল +
শীতকালে বৃষ্টিপাত গ্রীষ্মকালে উপক্রান্তীয়
উচ্চচাপ, মধ্য অক্ষাংশের
পশ্চিমা বায়ুপ্রবাহ।
চ ড ঈং
আর্দ্রনাতিশীতোষ্ণ
অঞ্চল
সারা বছর ধরে
বৃষ্টিপাত
মধ্য অক্ষাংশের পশ্চিমা
বায়ুপ্রবাহ।
ড ড ঈভ. ঈি
বোরিয়াল অঞ্চল
(ইড়ৎরধষ তড়হব)
+ +
গ্রীষ্মে বৃষ্টি, শীতে
তুষার
মধ্য অক্ষাংশের পশ্চিমা
বায়ুপ্রবাহ, কোথাও কোথাও
শীতকালে মেরু বায়ু।
ড ঊ উভ. উি
উপমেরু অঞ্চল সারা বছর সামান্য
বৃষ্টিপাত
মেরু অঞ্চলের পূবালীও
উপমেরু অঞ্চলের নি¤œচাপ।
ড ঊ ঊঞ
মেরু অঞ্চল সারা বছর অতি
সামান্য বৃষ্টিপাত
মেরু অঞ্চলের পূবালী বায়ু। ঊ ঊ ঊঋ
ঞ- ঊয়ঁরঃধৎরধষ ডবংঃবৎষরবং ড়ৎ উড়ষফৎঁস, চ- ঞৎধফবং ধহফ ঝঁন- ঃৎড়ঢ়রপধষ ঐরমযং,
ড - গরফ-ষধঃরঃঁফব ডবংঃবৎষরবং; ঊ- চড়ষধৎ ঊধংঃবৎষরবং, + মহাদেশের পূর্ব প্রান্তে অনুপস্থিতি, ++
কেবল উত্তর গোলার্ধের মহাদেশে।
উৎস : ঞৎবধিৎঃযধ, এ.ঞ. ধহফ খ.ঐ. ঐড়ৎহ. ১৯৮০;
জলবায়ুর সাথে বায়ুচাপ ও বায়ু প্রবাহ বলয়গুলির এবং চরম ঋতুদ্বয়ের (ঞড়ি ঊীঃৎবসব ঝবধংড়হং)
সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে ফ্লন সারা পৃথিবীর জলবায়ুসমূহকে আটটি শ্রেণীতে বিভক্ত করেন। এ আট
প্রকারের জলবায়ুর মধ্যে চারটিতে সারা বছর ধরে একই ধরনের বায়ু প্রবাহ দেখা যায় এবং বাকি
চারটিতে বছরের দুটি চরম ঋতুতে (বা বিপরীত ঋতুতে) পর্যায়ক্রমে বিপরীত দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত
হয়। সারণী ২.২.৪ এবং চিত্র ২.২.৩ বৃষ্টিপাতের তারতম্যকে মূল ভিত্তি হিসাবে ব্যবহার করে বিভিন্ন
প্রকারের জলবায়ুর মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা হয়। ফ্লনের জলবায়ুর শ্রেণীসমূহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বায়ুচাপ
শ্রেণীসমূহের সঙ্গে কোপেনের জলবায়ুর শ্রেনীসমূহের সম্পর্কে সারণী ২.২.৪ -তে দেখানো হয়েছে।
ফ্লন জলবায়ুর শ্রেণীবিভাগের যে পদ্ধতি প্রণয়ন করেছেন সে ভিত্তিতে তিনি নিজে কোন মানচিত্র তৈরী
করেননি।
পাঠসংক্ষেপ:
বিভিন্ন নিয়ামকের প্রভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে জলবায়ুর উপাদানসমূহের বিভিন্নতা সৃষ্টি হয়।
কতকগুলো উপাদানের সমম্বয়ে এক একটি জলবায়ুর সৃষ্টি হয়, ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বিশেষ
জলবায়ু অঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবীর জলবায়ুর এই সকল বিন্যাস জলবায়ু বিজ্ঞানীগণ বিভিন্নভাবে
শ্রেণীবিভাগ করেছেন। শ্রেণীবিভাগের এই বিভিন্নতা জলবায়ুর নির্দিষ্ট উপাদানের উপর ভিত্তি করে এবং
বিশেষ প্রয়োজন লক্ষ্য করে তৈরী করা হয়েছে। যেমন, তাপমাত্রা ও বারিপাতের উপর ভিত্তি করে
জলবায়ুর যে শ্রেণীবিভাগ করা হয় তা উদ্ভিদের শ্রেণীবিভাগে সহায়ক হলেও আবহাওয়ার পূর্বাভাসে তার
প্রয়োজনীয়তা দেখা যায় না (আহমেদ ১৯৯৭)। বিগত প্রায় একশত বৎসর পৃথিবীর জলবায়ুকে
নানাভাবে শ্রেণীভাজন করা হয়েছে। এগুলিকে তিনটি প্রধান গোত্রে ভাগ করা যায় (আহমেদ, ১৯৯৭)।:
পাঠোত্তর মূল্যায়ন: ২.৩
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন:
১. শূন্যস্থান পূরণ করুন:
১.১. গড় মাসিক ও বার্ষিক এবং শীত ও গ্রীষ্মের তাপমাত্রা ও বারিপাত এবং শুষ্কতার অনুপাত বা
সূচকের উপর ভিত্তি করে ----- পৃথিবীর জলবায়ুর আঞ্চলীকরণ করেছেন।
১.২. কোপেন-এর বিশ্ব জলবায়ুর আঞ্চলিক শ্রেণীভাজন মূলত: বারিপাত, বৃষ্টিপাতের ---- বন্টন ও
বায়ুর তাপমাত্রার ভিত্তিতে।
১.৩. বৃষ্টিপাতের ফলপ্রসূতা, বায়ুতাপের কার্যকারিতা এবং ----- ঋতুগত বন্টনের ভিত্তিতে থর্নওয়েট
(১৯৪৮) এই শ্রেণীভাজন করেন।
১.৪. মাটি থেকে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে এবং উদ্ভিজ্জ থেকে ----- মাধ্যমে জলীয় পদার্থের অপচয় হয়।
১.৫. বৃষ্টিপাতের ঋতুগত বন্টনের ভিত্তিতে থর্নওয়েট তাঁর আর্দ্রতার শ্রেণীসমূহের প্রত্যেকটিকে -----
উপশ্রেণীতে বিভক্ত করেন।
২. সত্য হলে ‘স' মিথ্যা হলে ‘মি' লিখুন:
২.১. থর্নওয়েট প্রকৃতপক্ষে মোট ৩২ টি জলবায়ু শ্রেণী শনাক্ত করতে পেরেছেন।
২.২. থর্নওয়েটের সর্বপ্রথম সম্ভাব্য বাষ্পীয়-প্রস্বেদন (চড়ঃবহঃরধষ ঊাধঢ়ড়-ঃৎধহংঢ়রৎধঃরড়হ) শব্দটি প্রচলন
করেন।
২.৩. থর্নওয়েট জলবায়ুর শ্রেণীবিভাগ উত্তর আমেরিকার পূর্বাঞ্চলে অত্যন্ত সাফল্যজনকভাবে প্রয়োগ
করা হয়েছিল।
২.৪. উষ্ণমন্ডলে এবং অর্ধশুষ্ক অঞ্চলে থর্নওয়েটের জলবায়ু শ্রেনীবিভাগ সাফল্যজনকভাবে প্রয়োগ করা
হয়নি।
২.৫. ফ্লন সারা পৃথিবীর জলবায়ুসমূহকে আটটি শ্রেণীতে বিভক্ত করেন।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন:
১. পর্যবেক্ষণ ভিত্তিক বা উদ্ভিদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত শ্রেণী বিভাজন কি?
২. জলবায়ুতে জলীয় উপাদান ভিত্তিক শ্রেণীবিভাজন কি?
৩. জলবায়ুর উৎপত্তিগত শ্রেণীবিভাজন কি?
রচনামূলক প্রশ্ন:
১. পর্যবেক্ষণ ভিত্তিক বা উদ্ভিদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত শ্রেণী বিভাজন বর্ণনা করুন।
২. জলবায়ুতে জলীয় উপাদান ভিত্তিক শ্রেণী বিভাজন বর্ণনা করুন।
৩. জলবায়ুর উৎপত্তিগত শ্রেণীবিভাজন বর্ণনা দিন।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ