অতি উন্নত অর্থনীতি অঞ্চল বলতে
প্রায় উন্নত অর্থনীতি অঞ্চল
বিকাশশীল অর্থনীতি অঞ্চল
কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি অঞ্চল


সাধারণ অর্থনৈতিক পঠন-পাঠনে মার্শাল (১৯৫২) অর্থনীতিকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন: “সাধারণ
ব্যবসায়িক জীবনে মানুষ সম্পর্কে চর্চা জ্ঞান অর্জন এবং কল্যানে বস্তুগত উপকরণের চাহিদার ব্যবহার।”
কিন্তু এই সাধারণ ব্যবসায়িক জীবন মঙ্গোলিয়ার চারণ ভ‚মির বা যুক্তরাষ্ট্রের গম উৎপাদন এলাকার
মানুষের নিকট যেমন উত্তর হল্যান্ডের কয়লা খনি এলাকা বা পদ্মা-ব্র²পুত্র-মেঘনা প্লাবন ভ‚মিতে হবে
না। এই পার্থক্যকরণ অংশত প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং বহুলাংশে সংস্কৃতিগত তথা প্রযুক্তিগত অবস্থার
উপর নির্ভরশীল। কোন অঞ্চল বা জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক অবস্থা ও বিকাশ বস্তুগত উপকরণের চাহিদার
ব্যবহারপ্রসূত বস্তুগত কল্যান অর্জনের উপর নির্ভরশীল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্বে মানুষের মধ্যে জাতীয়তাবাদ বিকাশের সাথে সাথে অর্থনৈতিক পশ্চাদপদতা
সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সচেতনতা বিশেষ করে এশিয়া, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন
আমেরিকার বিকাশশীল দেশসমূহে বিশেষ লক্ষ্যণীয়। একই সাথে সাম্প্রতিককালে পাশ্চাত্যের উন্নত
দেশসমূহের বিকাশশীল দেশসমূহ অর্থনৈতিক উন্নতি ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার
দায়ভার স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি যথেষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত হলেও
ইতিবাচক বটে।
উপরোক্ত পটভূমিকায় এই পাঠের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্ব অর্থনৈতিক অঞ্চল নিরূপনে উন্নয়নের
ভিত্তিসমূহ চিহ্নিতকরণ এবং এ সমস্ত ভিত্তিতে প্রধান অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলি নিরূপন করা।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তিসমূহ
বিভিন্ন দেশের বা এলাকার অর্থনৈতিক বিকাশের পর্যায় নিরূপনের বেশ কিছু পরিমাপ রয়েছে। এ সমস্ত
পরিমাপ একটি দেশের প্রযুক্তিগত বিষয়াদি অথবা জনমিতিক পরিস্থিতির সাথে সাধারণভাবে সম্পর্কযুক্ত
করা যায়। এখানে যে সমস্ত ভিত্তি ব্যবহার করা হয়েছে তা দ্বারা পৃথিবীর উন্নয়ন পর্যায়ের প্রধান
আঞ্চলিক ধারা প্রকাশ পেয়েছে। ভিত্তিগুলি হলো:
মাথাপিছু জাতীয় সম্পদ;
জনসংখ্যার পেশাগত বিন্যাস (কৃষিজীবির হার);
নগর- গ্রাম জনসংখ্যা অনুপাত;
জনসংখ্যার বয়:কাঠামো; এবং
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হার।
ফ্রায়ার (১৯৬৫) অনুসারে এই সমস্ত ভিত্তির পরিস্থিতিগত অবস্থা চিত্র ২.৫.১ (ক, খ, গ, ঘ) -তে
দেখানো হয়েছে। সর্বশেষ ভিত্তিটির (অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হার) প্রাপ্ত তথ্য অসম্পূর্ণ এবং কোন কোন
সময়ে ভ্রান্তিপূর্ণ হওয়ার কারণে মানচিত্রায়ন সম্ভব হয় নাই। তবে এ সম্পর্কে ব্যাখ্যাসূচক মতামত প্রকাশ
করা হয়েছে।
মাথাপিছু জাতীয় সম্পদ : জাতীয় সম্পদ বলতে একটি দেশের বা এলাকার জনসংখ্যা কর্তৃক এক
বছরের উৎপাদিত ও সে বছরের অর্থমূল্য। মূলধনী ব্যয় ও ব্যবহারগত অবস্থার মান বাদ দিয়ে এই
পরিসংখ্যানকে পরিশীলিত করা সম্ভব। একে নীট জাতীয় সম্পদ বলে। এটা মাথাপিছু জাতীয় সম্পদকে
মোট জনসংখ্যা দ্বারা ভাগ করে নির্ণয় করা হয়। মাথাপিছু আয় চলক ব্যবহার করার পরিবর্তে এই
পদ্ধতিতে সহজলভ্য উৎপাদন পরিসংখ্যান ব্যবহার করা সহজতর।
চিত্র ২.৫.১ক-এ সাতটি মাথাপিছু জাতীয় সম্পদ ভিত্তিক বিশ্ব অঞ্চল চিত্রিত হয়েছে। মাথাপিছু ৩০০
ডলারের নিচে তিনটি অঞ্চলে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের মাথাপিছু জাতীয় সম্পদ লক্ষ্য করা যায়। এই
দেশগুলি প্রধানত আফ্রিকা, এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকার অন্তর্ভুক্ত। এই অঞ্চলগুলি প্রধানত নানা
ধরনের স্বয়ংভোগী কৃষি কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত এবং হয়তো এদের জাতীয় সম্পদ মূল্যায়ন এক্ষেত্রে
পুরোপুরি নির্ভুল নাও হতে পারে। কেননা, এই ধরনের অর্থনীতিতে সমস্ত দ্রব্য ও সেবার অর্থমূল্যে
প্রকৃত মূল্যায়ন অনেক সময় দুষ্কর। এর পরেই মাথাপিছু ৩০০ থেকে ৬০০ ডলার সম্পন্ন তিনটি শ্রেণী
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অঞ্চল জুড়ে রয়েছে। এগুলি প্রধানত রাশিয়া, পূর্ব ইউরোপ, পশ্চিম ইউরোপ এবং
ভ‚-মধ্যসাগরীয় ইউরোপীয় দেশসমূহে দেখা যায়। সর্বোচ্চ মাথাপিছু জাতীয় সম্পদ উত্তর আমেরিকার
ক্যানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র, স্ক্যান্ডিনেভিয় দেশসমূহ, জাপান, সিঙ্গাপুর এবং অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে দেখা
যায়।
এই চিত্রে, বিশ্বে মাথাপিছু জাতীয় সম্পদের বিন্যাসের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় এর মধ্যে
যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ মাথাপিছু জাতীয় সম্পদ (২০০ ডলারের বেশী) লক্ষ্য করা যায়। এর কারণ দেশটির
প্রযুক্তিগত পর্যায় ও জনমিতিক অবস্থার সাথে জড়িত। দেশটি প্রায় ৬ শতাংশ বিশ্ব জনসংখ্যা ধারণ
করেও প্রায় ৪০ শতাংশ গড় বিশ্ব সম্পদ উৎপাদন করে থাকে। অপরদিকে, আফ্রিকা ও এশিয়ার এক
বিশাল অঞ্চল মাথাপিছু ১০০ ডলারের নিচে জাতীয় সম্পদ সম্পন্ন হয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বিশ্ব জনসংখ্যা
ধারণ করে আছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব (এশিয়া-সিঙ্গাপুর ব্যতীত) মাত্র ৫ শতাংশ বিশ্ব উৎপাদনের
সাথে জড়িত, কিন্তু এই অঞ্চলটি অতি জনবহুল। ল্যাটিন আমেরিকার অধিকাংশ দেশ এই দুই ধরণের
পরিস্থিতির মধ্য পর্যায়ে অবস্থান করছে। প্রধানত অপেক্ষাকৃত নি¤œ জনসংখ্যা পরিস্থিতি এবং খনিজ
তৈলসমূহ বিভিন্ন খনিজ দ্রব্যের উৎপাদন এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। ভ‚-মধ্যসাগরীয়
দেশসমূহও এই অঞ্চলভুক্ত। উচ্চ মাথাপিছু জাতীয় সম্পদ কেবল বৃহৎ দেশসমূহের বৈশিষ্ট্য এমন মনে
করা ঠিক নয়।
জার্মানী, সুইজারল্যাÐ, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, সিঙ্গাপুর ও জাপান বৃহৎ জনসংখ্যা সত্তে¡ও প্রযুক্তিগত ও
উন্নত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার কারণে উচ্চ মাথাপিছু জাতীয় সম্পদের অধিকারী। আবার বৃহৎ দেশের
মাথাপিছু জাতীয় সম্পদের বিন্যাসের মধ্যে অসমতা লক্ষ্য করা যায়। যেমন, দক্ষিণ ইউরোপীয়
দেশসমূহে মাথাপিছু জাতীয় সম্পদ পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের চাইতে কম। এইরূপ বৈষম্য কানাডার
কুইবেক ও বৃটিশ কলাম্বিয়া, স্পেনের ক্যাস্টিল ও ক্যাটালোনিয়া, পূর্ব ইউরোপীয় দেশসমূহের
মধ্যে,পশ্চিম ও পূর্ব রাশিয়া এবং পূর্ব ও পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে লক্ষ্যণীয়।
জনসংখ্যার পেশাগত বিন্যাস : কোন জনসংখ্যার বা এলাকার উচ্চ মাথাপিছু জাতীয় সম্পদ
সাধারণভাবে বিভিন্ন ধরনের ও বিভিন্ন ধর্মী পেশাগত সুযোগ-সুবিধা এবং নি¤œহারের কৃষি জনসংখ্যার
উপর নির্ভরশীল। অর্থনৈতিক বিকাশের সাথে সাথে উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি
পায় কিন্তু সেক্ষেত্রে কৃষি শ্রমিকের চাহিদাও কমতে থাকে। এই উদ্ধৃত্ত শ্রমিক বিবিধ অকৃষি কর্মকান্ডে
যেমন, শিল্প উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে যুক্ত হয়ে হয়ে পড়ে। পরিশেষে কৃষি খাতের
অবস্থান অকৃষিখাত দখল করে একটি জনসংখ্যা বা এলাকার পেশাগত কাঠামো পরিবর্তন করে ফেলতে
পারে। যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম ইউরোপীয় দেশসমূহ এবং জাপান এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তবে অতি শিল্পোন্নত
দেশে শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিক ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে অবস্থান করে এবং অপরাপর অকৃষি
পেশা, যেমন, পরিবহণ বাণিজ্য এবং প্রশাসন কর্মকান্ড বিকাশের সাথে সাথে এ সমস্ত খাতে শ্রমশক্তি
আরও প্রায় ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ নিয়োজিত হয় (চিত্র ২.৫.১ খ)।
এই পরিস্থিতি সব দেশে বিশেষ করে শিল্পোন্নত পাশ্চাত্য দেশসমূহের জন্য প্রযোজ্য। এই অর্থনৈতিক
দৃষ্টিভঙ্গিতে অতি উচ্চ কৃষি শ্রমশক্তি সম্পন্ন দেশ বা এলাকাকে পশ্চাদপদ বা দরিদ্র অর্থনৈতিক অবস্থার
প্রতিফলন মনে করা হয়। কেননা, এসমস্ত অঞ্চলে কেবল জীবন ধারনের জন্য খাদ্য উৎপাদনে
শ্রমশক্তির এক বিরাট অংশ নিয়োজিত থাকে। একারণে নি¤œ আয়সম্পন্ন অঞ্চল সমূহের প্রথমেই
প্রয়োজন তাদের কৃষি উন্নয়নকে জোরদার করা এবং তারপর উদ্বৃত্ত কৃষি শ্রমিককে অকৃষি খাতে
স্থানান্তরিত করা।
নগর-গ্রাম জনসংখ্যা অনুপাত : ইতিপূর্বে লক্ষ্য করা গেছে যে, অর্থনৈতিক বিকাশের সাথে সাথে
ক্রমাগতভাবে কৃষি শ্রমিক অকৃষি খাতে স্থানান্তরিত হতে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় জনসংখ্যার অভিগমন
ধারা শিল্পকেন্দ্র, স্থানীয় শহর এবং পরবর্তীতে বৃহৎ শহরে প্রবাহিত হয়। ফলে জনসংখ্যার বিস্তরণের বা
বন্টনের পরিবর্তন ঘটে। এরই ফলশ্রæতিতে মাথাপিছু জাতীয় সম্পদের সাথে সেই জনসংখ্যার শহর
এলাকায় বসবাসের হারের মধ্যে একটি ঘনিষ্ট সহসংস্রব লক্ষ্য করা যায় (চিত্র ২.৫.১ ক এবং
২.৫.১গ)। তবে শহুরে জনসংখ্যা সংজ্ঞায়িত করার বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী এই সম্পর্কের মধ্যে হয়তো
কিছুটা ব্যত্যয় লক্ষ্য করা যাবে। যেমন, সুইজারল্যান্ড (চিত্র ২.৫.১গ)। আবার, যুক্তরাজ্য যথেষ্ট শহুরে
হলেও সর্বোচ্চ মাথাপিছু জাতীয় সস্পদের অধিকারী নয়। অপরদিকে জাপানে যেমন নগরায়ন হার উচ্চ
পর্যায়ে তেমনি মাথাপিছু জাতীয় সম্পদও উচ্চ।
জনসংখ্যার বয়:কাঠামো: অর্থনৈতিক উন্নয়ন জনসংখ্যার ও বয়:কাঠামোর উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার
করে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা নগরায়নের প্রভাবে বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও জনমিতিক কারণে
নগরীয় জন্ম হার হ্রাস পায়। অর্থনৈতিক বিকাশের ফলশ্রæতিতে উন্নত জীবনযাত্রা মান, ক্রমবর্ধমান
আয়ুষ্কাল এবং নারী শ্রম ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে শিশু ও নি¤œ যুবা বয়স্ক জনসংখ্যার হার কমতে থাকে।
প্রকৃতপক্ষে, বিশ্ব পর্যায়ে জনসংখ্যার যুবা বয়:কাঠামোর সাথে মাথাপিছু জাতীয় সম্পদের একটি
নেতিবাচক সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায় (চিত্র ২.৫.১ ক এবং ২.৫.১ ঘ)। নি¤œ আয় সম্পন্ন বা বিকাশশীল
অঞ্চলের প্রায় সব দেশেই জনসংখ্যার এক বৃহৎ অংশ (৪০-৪৮ শতাংশ) ১৫ বৎসর বয়স সীমার নিচে
(চিত্র ২.৫.১খ)।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হার : অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হার সংক্রান্ত তথ্য একমাত্র উন্নত দেশসমূহে পাওয়া যায়।
এ কারণে অন্যান্য অঞ্চলের দেশসমূহের জন্য এ সম্পর্কে কেবলমাত্র অনুমান ভিত্তিক মন্তব্য করা সম্ভব।
উচ্চ মাথাপিছু জাতীয় সস্পদ সম্পন্ন প্রায় দেশেই মোট জাতীয় সম্পদের কিছু অংশ সঞ্চয় করে থাকে।
এই সঞ্চয় যত বেশী হবে অর্থনৈতিক বিকাশও তত দ্রæত হবে। নি¤œ মাথাপিছু জাতীয় সম্পদ সম্পন্ন
দেশসমূহে অর্থাৎ প্রায় সকল বিকাশশীল দেশে এর বিপরীত অবস্থা লক্ষ্য করা যায়। আবার মধ্যবর্তী
পর্যায়ের মাথাপিছু জাতীয় সম্পদভুক্ত বেশ কিছু দেশে যেমন, ইতালী, জাপান এবং সিঙ্গাপুরে অতি উচ্চ
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হার লক্ষ্য করা যায়। তবে সামগ্রিকভাবে ধনী ও দরিদ্রদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক
উন্নয়নের দূরত্ব ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পাঠসংক্ষেপ:
কোন অঞ্চল বা জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক অবস্থা ও বিকাশ বস্তুগত উপকরণের চাহিদার ব্যবহারপ্রসূত
বস্তুগত কল্যাণ অর্জনের উপর নির্ভরশীল। এই পাঠের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্ব অর্থনৈতিক অঞ্চল
নিরূপণে উন্নয়নের ভিত্তিসমূহ চিহ্নিতকরণ এবং এ সমস্ত ভিত্তিতে প্রধান অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলি নিরূপণ
করা।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন: ২.৫
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন:
১. শূন্যস্থান পূরণ করুন:
১.১. কোন অঞ্চল বা জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক অবস্থা ও বিকাশ বস্তুগত ----- চাহিদার ব্যবহারপ্রসূত
বস্তুগত কল্যাণ অর্জনের উপর নির্ভরশীল।
১.২. বিভিন্ন দেশের বা এলাকার অর্থনৈতিক বিকাশের পর্যায় নিরূপণের বেশ কিছু ----- রয়েছে।
১.৩. জাতীয় সম্পদ বলতে একটি দেশের বা এলাকার জনসংখ্যা কর্তৃক ----- বছরের উৎপাদিত ও সে
বছরের অর্থমূল্য। মাথাপিছু জাতীয় সম্পদকে মোট জনসংখ্যা দ্বারা ভাগ করে নীট জাতীয় সম্পদ
নির্ণয় করা হয়।
১.৪. মাথাপিছু ----- ডলারের নিচে তিনটি অঞ্চলে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের মাথাপিছু জাতীয় সম্পদ
লক্ষ্য করা যায়।
১.৫. ----- প্রায় ৬ শতাংশ বিশ্ব জনসংখ্যা ধারণ করেও প্রায় ৪০ শতাংশ গড় বিশ্ব সম্পদ উৎপাদন
করে থাকে।
২. সত্য হলে ‘স' মিথ্যা হলে ‘মি' লিখুন:
২.১. অতি শিল্পোন্নত দেশে শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিক ২৫ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে অবস্থান করে।
২.২. অর্থনৈতিক বিকাশের সাথে সাথে ক্রমাগতভাবে কৃষি শ্রমিক অকৃষি খাতে স্থানান্তরিত হতে থাকে।
২.৩. যুক্তরাজ্য যথেষ্ট শহুরে হলেও সর্বোচ্চ মাথাপিছু জাতীয় সস্পদের অধিকারী নয়।
২.৪. জাপানে যেমন নগরায়ন হার উচ্চ পর্যায়ে তেমনি মাথাপিছু জাতীয় সম্পদও উচ্চ।
২.৫. ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার নগরায়নে প্রভাবে বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও জনমিতিক কারণে
নগরীয় জন্ম হার হ্রাস পায়।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন:
১. অর্থনীতি কাকে বলে?
২. অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তিসমূহ কি কি?
৩. মাথাপিছু জাতীয় সম্পদ কাকে বলে?
রচনামূলক প্রশ্ন:
১. অর্থনৈতিক অঞ্চল বলতে কি বুঝায়? অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্ণয়ের ভিত্তিসমূহ নির্দেশ করুন।
২. অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিসমূহ পর্যালোচনা করুন।
এই পাঠ শেষে আপনি-
◆ পৃথিবীর প্রধান প্রধান অর্থনৈতিক অঞ্চল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
পূর্বের পাঠের ভিত্তিসমূহ পর্যালোচনা করে পৃথিবীকে চারটি প্রধান অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভাগ করা যায়:
১. উচ্চ মাত্রায় উন্নত বা শিল্প-বাণিজ্য ভিত্তিক অর্থনীতি - বিশ্বের মাত্র ১০ শতাংশ জনসংখ্যা এর
আওতাভুক্ত;
২. মধ্যম মাত্রার উন্নত বা মিশ্র শিল্প-কৃষি অর্থনীতি - বিশ্বের প্রায় ১৫ শতাংশ জনসংখ্যা এর
আওতাভুক্ত;
৩. অনুন্নত বা বিকাশশীল অঞ্চল - প্রধানত কৃষি নির্ভর অর্থনীতি, এক ব্যাপক অঞ্চল পরিব্যাপী এই
অর্থনীতিতে বিশ্বের প্রায় ৫০ শতাংশ জনসংখ্যা অন্তর্ভুক্ত; এবং
৪. কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি- সাধারণভাবে উপরোক্ত ২ অথবা ৩-এর শ্রেণীভুক্ত হতে পারে।
বিশ্বে প্রায় ২৫ শতাংশ জনসংখ্যা এই শ্রেণীভুক্ত।
অতি উন্নত অর্থনীতি অঞ্চল:
এই ধরনের অর্থনীতি প্রধানত উত্তর আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ দেশে দেখা যায়।
তবে এই দুই অঞ্চলের বাইরে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান এবং সিঙ্গাপুরকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
এই দেশসমূহ বিশ্ব আর্থনীতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অভিজাত শ্রেণীভুক্ত। যে কোন পরিমাপে এই অঞ্চল
কেবল ধনীই নয় বরং এদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হার এবং জীবন যাত্রার মান বিশ্বের যে কোন দেশ থেকে
উন্নততর। তবে এককভাবে দেশসমূহের অভ্যন্তরে অর্থনৈতিক বিকাশের ভিন্নতা দেখা যায়। বিশেষ
করে যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক উন্নয়নের মধ্যে যথেষ্ট অভ্যন্তরীণ পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
এই অঞ্চলের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো অতি উচ্চ পর্যায়ের শিল্প ও বাণিজ্যিক বিকাশ। মাত্র ২০ শতাংশেরও
কম জনসংখ্যা কৃষির সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত। অর্থাৎ এই অঞ্চলের দেশসমূহে কৃষি-নির্ভরতা
খুব কম। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে কৃষি পেশাজীবির হার মোট পেশাজীবির ১০ শতাংশের নিচে।
অপরদিকে, শিল্প ও উৎপাদনের সাথে জড়িত মোট জীবিকার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ লোক জড়িত।
যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানীতে এই হার প্রায় ৪০ শতাংশ। এর সাথে সেবামূলক তৃতীয় পর্যায়ের কর্মকান্ডে
যেমন, পরিবহন, বাণিজ্য, প্রশাসন। আরও ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পেশাজীবি জড়িত। অপর বৈশিষ্ট্য
হলো ব্যাপক নগরায়ন। অঞ্চলভুক্ত দেশসমূহের ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ জনসংখ্যা নগরবাসী এবং বিশ্বের
বেশ কিছু অন্যতম মহানগর এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এই অঞ্চলের মাথাপিছু আয় মাসিক ৩০০০
ডলারের উপরে। এই অঞ্চলভুক্ত দেশসমূহের মধ্যে উন্নয়নের কাঠামোগত পার্থক্য যথেষ্ট রয়েছে। যেমন,
পশ্চিম ইউরোপীয় দেশসমূহে মাথাপিছু জাতীয় সম্পদ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান ও সিঙ্গাপুরেরও নিæে।
অপরদিকে, পশ্চিম ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে যেমন ভারী শিল্প পরিবহন ও বাণিজ্য গত শতাব্দীতে বিকাশ
লাভ করেছে, তেমনি জাপান ও সিঙ্গাপুরের ক্ষুদ্র শিল্প, বিশেষ করে, ইলেকট্রনিকস্ ও নির্বাচিত ভারী
শিল্প এবং বাণিজ্যে গত অর্ধ শতাব্দীতে প্রভ‚ত উন্নতি লাভ করেছে। একইভাবে, এই অঞ্চলভুক্ত
দেশসমূহের মধ্যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টি, আয়ুষ্কাল ও সম্পর্কীয় বিষয়াদির মধ্যেও পার্থক্য রয়েছে (চিত্র২.৬.১)।
লক্ষ্যণীয় যে, এই অঞ্চলভুক্ত বেশ কিছু দেশের ঔপনিবেশিকতাবাদের পটভ‚মিকা রয়েছে, যার
উপনিবেশ-দেশসমূহ ও তৃতীয় বিশ্ব থেকে শিল্প বিপ্লবের সময় থেকে গত শতাব্দী পর্যন্ত সম্পদ স্থানান্তর
করে তাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তুলেছে। পরবর্তীকালে এই ভিত্তি সম্পদ প্রসারণে, বিশেষ করে
প্রযুক্তির বিকাশ, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, আর্থিক সুচারুতা ও বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক বিপণন
ব্যবস্থা, বিশেষ সহায়ক হয়েছে। এই অঞ্চলের নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশ যেমন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বিশ্বের
প্রধান খনিজ, বিশেষ করে খনিজ তৈল সম্পদ ও প্রধান উপনিবিষ্ট কৃষিপণ্য (কফি, চা, রবার) নিয়ন্ত্রণ
করছে।
প্রায় উন্নত অর্থনীতি অঞ্চল:
বিশ্বে এই অঞ্চলটি বিক্ষিপ্তভাবে বিন্যাসিত। এর মধ্যে বেশ কিছু দেশ অতি উন্নত পর্যায়ে পৌঁছানোর
পরিবৃত্তিকালে (ঞৎধহংরঃরড়হধষ ঝঃধমব) অবস্থান করছে। এদের প্রথম অঞ্চলের মত দীর্ঘ শিল্প বিকাশের
ইতিহাস থাকলেও কৃষি-ভিত্তিক অর্থনীতি এখনও গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান দখল করে আছে। এই অঞ্চলের
মধ্যে রাশিয়া, ইটালী, দক্ষিণ আফ্রিকা, আর্জেন্টিনা উল্লেখযোগ্য। এই অঞ্চলে এখনও ৩০ থেকে ৫০
শতাংশ জনসংখ্যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষি কর্মকান্ডের অর্থনীতির সাথে সম্পৃক্ত। নগর-জনসংখ্যা
৫০ থেকে ৬০ শতাংশের মধ্যে কিন্তু নগরায়ন প্রক্রিয়া দ্রæত ঘটছে।
এই অঞ্চলে মাথাপিছু জাতীয় সম্পদের হার এখনও কম এবং মাসিক মাথাপিছু আয় ১০০০ থেকে
২০০০ ডলারের মধ্যে। এতদসত্তে¡ও এই অঞ্চল কতকগুলি কারণে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ যেমন, দ্রæত
পরিবর্তনশীল শিল্পোন্নয়ন প্রক্রিয়া, কৃষি ভিত্তিক শিল্পের বিকাশ এবং বিশেষ ধরনের খনিজ উৎপাদন
(দক্ষিণ আফ্রিকার হীরক, আর্জেন্টিনায় টিন প্রভৃতি এবং বাণিজ্যিক কৃষি পণ্য) এ কারণে শিল্পে
নিয়োজিত জনসংখ্যা মোট শ্রমশক্তির ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ জুড়ে আছে এবং আরও অনুরূপ হার
পরিবহন বাণিজ্য ও বিপণন সেবার সাথে যুক্ত (চিত্র-২.৬.১)।
এই অঞ্চলভুক্ত বেশ কিছু দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিবন্ধক হিসেবে কতিপয় সামাজিক, অর্থনৈতিক
কারণকে চিহ্নিত করা হয় যেমন,দীর্ঘ কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতি, দীর্ঘ সামাজিক অস্থিতিশীলতা (যেমন,
রাশিয়া, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা) শিল্প বিপ্লবের প্রভাবে প্রভাবিত হওয়ায় বিলম্ব, প্রাকৃতিক সম্পদের
অভাব, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি ইত্যাদি সেবা-কার্যক্রমে ধীর অগ্রগতি ইত্যাদি। তবে সাম্প্রতিক দশকসমূহে
এ অবস্থাসমূহের যথেষ্ট পরিবর্তন ঘটেছে। এর ফলে বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নগরায়ন, এবং প্রযুক্তি
ব্যবহারের ধারার ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এই সমস্ত দেশে বিভিন্ন জনমিতিক উপাদানের,
বিশেষ করে জন্ম ও মৃত্যু হার আয়ুষ্কাল প্রভৃতির ইতিবাচক পরিবর্তন বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
এই অঞ্চলের অধিকাংশ দেশে নিজ উদ্যোগে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটলেও ইদানিং অতি উন্নত দেশসমূহ
থেকে বৈদেশিক পুঁজি বিনিয়োগের এবং বহুজাতিক পুঁজির দ্বারা শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিকাশের (যেমন,
আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা) ফলে ব্যাপক শিল্পোন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
বিকাশশীল অর্থনীতি অঞ্চল:
বিশ্বের এক ব্যাপক অঞ্চল বিকাশশীল (বা তথাকথিত অনুন্নত) অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত। দক্ষিণ আফ্রিকা
ব্যতীত সমগ্র আফ্রিকা, মধ্য ও দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার অধিকাংশ, রাশিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর ব্যতীত সমগ্র
এশিয়া এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। ইতিপূর্বে লক্ষ্য করা গেছে যে, এই ব্যাপক অঞ্চলে পৃথিবীর অর্ধেকের
বেশী জনসংখ্যা বাস করে। বিকাশশীল অর্থনৈতিক অঞ্চলের মাথাপিছু জাতীয় সম্পদ অতি নি¤œ এবং
মাসিক মাথাপিছু আয়ও কম (৫০০-১০০০ ডলার)। তবে এই পরিস্থিতি আফ্রিকা অঞ্চলে অতি নি¤œ
পর্যায়ে এবং পশ্চিম এশিয়ার দেশসমূহে অপেক্ষাকৃত উচ্চ (চিত্র ২.৬.১)।
এই অঞ্চলের প্রধান বৈশিষ্ট্যের মধ্যে কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতি, অধিকাংশ দেশে ঔপনিবেশিক শাসনের
ঐতিহাসিক পটভ‚মিকা, নি¤œ ও অতি ধীর অগ্রগতি সম্পন্ন শিল্পোন্নয়ন, নি¤œ নগরায়ন হার এবং
জনাধিক্যের কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সম্পদের উপর বৃদ্ধি প্রাপ্ত চাপ উল্লেখযোগ্য। এ সমস্ত কারণে
আফ্রিকা ও এশিয়ার অধিকাংশ দেশ দারিদ্র পীড়িত। এ ছাড়া এই অঞ্চলে উচ্চ বা নি¤œমুখী জন্ম হার ও
উচ্চ মৃত্যু হার, নি¤œ শিক্ষা হার, নি¤œ আয়ুষ্কাল, নবীন বয়কাঠামো, সীমিত স্বাস্থ্য সেবা, শিল্পোন্নয়নে
পশ্চাদপদতা, সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাপ্তি উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে, আফ্রিকায় এই সমস্ত
পরিস্থিতি প্রকটভাবে বিরাজমান। যদিও এশীয় দেশসমূহে একই পরিস্থিতি দেখা যায় তবুও বেশ কিছু
দেশে একটি পরিবর্তনের ধারা লক্ষ্যণীয়। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাম্প্রতিক শিল্পোন্নয়ন,
বৃদ্ধিপ্রাপ্ত শিল্পহার, নব প্রযুক্তির ব্যবহার প্রভৃতির প্রভাব এর কারণ। অপরদিকে, পশ্চিম এশীয়
তৈলসমৃদ্ধ দেশের উন্নতি মূলত: প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত অভিগমনকারী শ্রমশক্তি এবং পশ্চিমা দেশসমূহ থেকে
সেবা বা তৃতীয় পর্যায়ের কর্মকান্ড ধারকৃত প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। দক্ষিণ এশীয় দেশসমূহে এখনও
কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতির সাথে দেশীয় ও আঞ্চলিক উন্নয়ন জড়িত। এই দেশসমূহের মোট শ্রমশক্তির ৫৫
থেকে ৬০ শতাংশ এখনও কৃষি কর্মকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত।
সমগ্র অঞ্চলের মধ্যে ল্যাটিন আমেরিকার দেশসমূহে জনাধিক্য সমস্যা তুলনামূলকভাবে কম এবং সম্পদ
প্রাপ্তি ও প্রযুক্তি প্রয়োগের দিক দিয়ে সম্ভাবনাময়। এই সম্ভাবনা বর্তমানে বেশ কিছু দেশ, যেমন
মেক্সিকো, ব্রাজিল, ভেনিজুয়েলা এবং চিলি গ্রহণ করছে। এর কারণে ল্যাটিন আমেরিকার দেশসমূহে
মাথাপিছু জাতীয় সম্পদের হার বেশী।
বিকাশশীল অঞ্চলের দেশসমূহ এখনও বৈশিষ্ট্যগতভাবে গ্রামীণ। নগর জনসংখ্যার হার ২৫ থেকে ৩০
শতাংশ মাত্র। তবে অধিকাংশ দেশে অর্থনৈতিক কারণে গ্রাম-শহর অভিগমন হার অতি উচ্চ, ফলে
শহরাঞ্চলে অপ্রাতিষ্ঠানিক ও অকৃষি কর্মকান্ড অপরিকল্পিতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাসস্থানের অভাবে বস্তির
বিকাশ প্রতিটি শহরের কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। এ ধরণের সমস্যা বিশেষ করে ল্যাটিন
আমেরিকা, আমেরিকা ও দক্ষিণ এশীয় দেশসমূহে প্রকট।
এই অঞ্চলের দেশসমূহ দ্রæত অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে বৈদেশিক ঋণের উপর ক্রমাগত নির্ভরশীল হয়ে
পড়ছে এবং ফলে অনেক দেশে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিকল্পনা সম্প্রতি ঋণ প্রদানকারী
আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ এবং অতি উন্নত দেশসমূহের আঞ্চলিক নীতি নির্ধারণের স্বার্থ দ্বারা পরিচালিত
হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি অঞ্চল:
কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি মূলত: কৃষি-শিল্প অথবা কৃষি ভিত্তিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত কিন্তু উৎপাদন
ব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্রীয় দিক নির্দেশনার উপর নির্ভরশীল। মাত্র কয়েক দশক পূর্ব পর্যন্ত (৮০ দশক)
তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়া এই অঞ্চলের প্রধান প্রতিভ‚ ছিল। বর্তমানে এই অঞ্চলভুক্ত দেশসমূহের
মধ্যে চীন, কিউবা, ভিয়েতনাম এবং উত্তর কোরিয়া বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই সমস্ত দেশে পাশ্চাত্যের
উন্নত দেশসমূহ এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংস্থার উপর নির্ভরশীলতা পরিহার করার একটি সক্রিয়
নীতিগত অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। রাষ্ট্রীয়ভাবে এই সমস্ত দেশ সামাজিক উন্নয়নকে গুরুত্ব প্রদান করে
থাকে এবং এর জন্য খাদ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য ও সেবা কর্মকান্ডে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের প্রতি প্রশাসন
ব্যবস্থা প্রধান ভ‚মিকা পালন করতে যেয়ে সমগ্র উৎপাদন ব্যবস্থার লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়। এই
দেশগুলি প্রধানত: মাক্সীয় সমাজতন্ত্রের অনুসারী হলেও বর্তমানে পুঁজিবাদের আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি
সীমিতভাবে গ্রহণ করেছে। এই ধরণের নীতিগত পরিবর্তন চীন ও ভিয়েতনামে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা
যায়। অপরদিকে উত্তর কোরিয়া ও কিউবায় এখনও সনাতন কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয়
ব্যবস্থা মোটামুটি অক্ষুন্ন রয়েছে।
সোভিয়েত রাশিয়া কম্যুউনিজমের পথ পরিহার করলেও এর প্রভাবমুক্ত নিজে যেমন হতে পারে নাই
তেমনি বেশ কিছু পূর্ব ইউরোপীয় দেশও পারে নাই। ফলে এই উপ-অঞ্চলে পুঁজিবাদের বিকাশ ধীর
গতিতে এবং কখনও কখনও সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সংঘাতের মধ্যে ঘটছে। এ দিক দিয়ে বিচার করলে
এই দেশগুলি বর্তমানে একটি পরিবর্তনশীল পর্যায়ে অবস্থান করছে। অপরদিকে, বিশেষ করে চীন
অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং মুক্ত বাজারের অর্থনীতি গ্রহণ করাতে ক্রমাম্বয়ে একটি
বিশ্ব অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হচ্ছে (চিত্র ২.৬.১)। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির অঞ্চলভুক্ত
দেশসমূহের মাথাপিছু জাতীয় সম্পদ এবং মাথাপিছু আয় বিকাশশীল দেশের চাইতে বেশী। তবে
পেশাগত ও জনমিতিক কাঠামোগতভাবে বিকাশশীল দেশের কিছু বৈশিষ্ট্য এই অঞ্চলভুক্ত দেশে দেখতে
পাওয়া যায়। সাম্প্রতিক দশকে এই অঞ্চলে জনমিতিক বৈশিষ্ট্যের প্রভ‚ত পরিবর্তন নি¤œ ও অতি নি¤œ জন্ম
ও মৃত্যু হার, মধ্যম আয়ুষ্কাল ও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত নারী শ্রমের মাধ্যমে দেখা যায়। এ সমস্ত সম্ভব হয়েছে
জনমিতিক নীতির সফল প্রয়োগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সামাজিক বিকাশ এবং বিভিন্ন উৎপাদন ক্ষেত্রে
নারী শ্রমিকের নিয়োগের ফলে।
লক্ষ্যণীয় যে, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের ফলে এই অঞ্চলভুক্ত দেশসমূহে
অপরিকল্পিত নগরায়ন ও অভিগমনসৃষ্ট সমস্যাসমূহ সৃষ্টি হয় নাই বললেই চলে। অপরদিকে, অঞ্চলভুক্ত
দেশসমূহ উন্নয়ন ধারা ধীরে হলেও অগ্রগামী গতি লক্ষ্য করা যায়।
পাঠসংক্ষেপ:
এই পাঠে পৃথিবীর অর্থনৈতিক অঞ্চল সংক্ষেপে বর্ণিত হয়েছে। আপনারা বিশ্ব মানচিত্রে এই সমস্ত অঞ্চল
নির্দেশ করার চেষ্টা করবেন এবং তুলনার জন্য অঞ্চলভুক্ত বিভিন্ন দেশের প্রধান অর্থনৈতিক, জনমিতিক
ও সামাজিক বৈশিষ্ট্যসমূহ অনুসন্ধানে সচেষ্ট হবেন। এ জন্য জাতিসংঘ প্রণীত পরিসংখ্যান বর্ষপঞ্জী
সহায়ক হবে।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন:
১. শূন্যস্থান পূরণ করুন:
১.১. যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে কৃষি পেশাজীবির হার মোট পেশাজীবির ----- শতাংশের নিচে।
১.২. শিল্প ও উৎপাদনের সাথে জড়িত মোট জীবিকার যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানীতে এই হার প্রায় -----
শতাংশ।
১.৩. যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মাথাপিছু আয় মাসিক ৩০০০০ ডলারের উপরে।
১.৪. পশ্চিম ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে যেমন ভারী শিল্প পরিবহন ও বাণিজ্য গত শতাব্দীতে বিকাশ লাভ
করেছে।
১.৫. জাপান ও সিঙ্গাপুরের ক্ষুদ্র -----, বিশেষ করে, ইলেকট্রনিকস্ ও নির্বাচিত ভারী শিল্প এবং
বাণিজ্যে গত ----- শতাব্দীতে প্রভ‚ত উন্নতি লাভ করেছে।
২. সত্য হলে ‘স' মিথ্যা হলে ‘মি' লিখুন:
২.১. প্রায় উন্নত অর্থনৈতিক অঞ্চলে মাথাপিছু জাতীয় সম্পদের হার এখনও কম এবং মাসিক মাথাপিছু
আয় ১০০০ থেকে ২০০০ ডলারের মধ্যে।
২.২. বিশ্বের এক ব্যাপক অঞ্চল বিকাশশীল (বা তথাকথিত অনুন্নত) অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত।
২.৩. বিকাশশীল অর্থনৈতিক অঞ্চলের মাথাপিছু জাতীয় সম্পদ অতি নি¤œ এবং মাসিক মাথাপিছু আয়ও
কম।
২.৪. দক্ষিণ এশীয় দেশসমূহে মোট শ্রমশক্তির ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ এখনও কৃষি কর্মকান্ডের সাথে
সরাসরি জড়িত।
২.৫. কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি মূলত: কৃষি-শিল্প অথবা কৃষি ভিত্তিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন:
১. অতি উন্নত অর্থনীতি অঞ্চল বলতে কি বুঝায়?
২. প্রায় উন্নত অর্থনীতি অঞ্চল বলতে কি বুঝায়?
৩. বিকাশশীল অর্থনীতি অঞ্চল বলতে কি বুঝায়?
৪. কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি অঞ্চল বলতে কি বুঝায়?
রচনামূলক প্রশ্ন:
১. বিশ্ব অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলি মানচিত্রে নির্দেশ করুন এবং প্রতিটির প্রধান বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে
আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]